ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ১৯+২০

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–১৯

” এক্সকিউজ মি। ”

” ইয়েস ম্যাম। ”

” আমাদের দুজন কে গরম খাবার সার্ভ করেন৷ ”

ওয়েটার খাবার আনতে চলে গেলো, কিছুক্ষন পর ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো। খাবার মুখে দিয়েই ওরিন বললো…

” এটা কি খাবার এনেছেন? ঠান্ডা খাবার। ”

তনু ওরিনের হাত চেপে ধরে বললো…
” দোস্ত রিয়েক্ট করিস না৷ মানুষ দেখছে। ”

” দেখুক। আর হ্যাঁ আপনাকে আমি গরম খাবার আনতে বলেছিলাম। এই ভাবে গেস্ট দের সার্ভ করেন? ”

দুই এক কথায় হটোগোল বেধে গেলো। আশে পাশের কয়েক টেবিলের মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

” সরি। ম্যাম আমি ঠিক খেয়াল করি নি। ”

” ঠিক আছে। আবার খাবার আনুন? ”

ওরিন রাগে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। অচেনা কেউ পেছন থেকে বললো..

” আপনারা বর পক্ষ নাকি কনে পক্ষ?”

ওরিন না দেখেই বললো…

” আমরা কনে পক্ষ৷ ”

বলেই ওরিন তাকিয়ে চারশো বিশ বোল্টের ঝটকা খেলো। কারন, পেছনে ফরিদ দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরিন মনে মনে কান্না পাচ্ছে, সারা দুনিয়া থাকতে এখানেই কেনো আসতে হলো তার৷ ওরিন ভয়ে ঢোক গিললো।
ফরিদ ব্লেজার টা ঠিক করে বললো…

” আপনারা কনের কি হন?”

ওরিন কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললো…

” ইয়েহ মানে। আমরা কনের ফ্রেন্ড হই! ”

ফরিদ না বুঝার ভান ধরে বললো..

” ও আচ্ছা। ”

ওরিন চুপ করে রইলো। ভেতরে ভেতরে ওরিনের বড্ড রাগ লাগছে। কেনো যে এখানে আসলো। পাশে থেকে তনু ওরিন কে খোঁচা মেরে বললো…

” ফরিদ ভাই এখানে আবার কি করছে? ”

ওরিন বিড়বিড় করে বললো..

” সেটা জানলে কি আমি আর এখানে আসতাম। ”

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েটার চলে এলো। ওরিন এবং তনু কে গরম খাবার প্লেটে দিলো। ওরিন এবং তনু দুজনেই স্ট্যাচুর মতো বসে আছে। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। ওরিনের লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।

ফরিদ দুজনের উদ্দেশ্য বললো..

” আপনারা হলেন কনের বান্ধবী আপনাদের তো স্পেশালি খাওয়া দাওয়া করা দরকার। প্লিজ খাওয়া শুরু করুন। ”

আমি একটু ওদিক টায় যাই। বলেই ফরিদ সরে গেলো। তনু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো…

” এবার কি হবে দোস্ত?”

” কি আর হবে? বিনা দাওয়াতে খেতে এসেছি। খেয়ে কেটে পড়বো। ”

বলেই ওরিন খাওয়া শুরু করলো। ফরিদ স্টেজে গেলো, মারিয়ার কানে ফিস ফিস করে বললো…

” পাঁচ নম্বর টেবিলে, ডান কর্নারে মেয়ে দুটো কে দেখছিস?”

” হুম দেখছি। কেনো?”

” মেয়ে দু টোকে চিনিস তুই?”

” না তো ছোট ভাইয়া। আমি ওদের এই প্রথম দেখলাম। ”

” আচ্ছা। ”

বলেই ফরিদ বাঁকা হাসি দিলো। মনে মনে বললো..’বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান৷ এবার ঘুঘু তোমার বধিবে পরাণ। ‘

ওরিন এবং তনু দুজনেই দ্রুত খেয়ে দেয়ে উঠলো। দুজনেই যখন বের হতে যাবে, ঠিক তখনি ফরিদ সামনে এসে দাঁড়ালো। বিনয়ের সুরে বললো…

” আরে, আপনারা চলে যাচ্ছেন যে, আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করবেন না?”

ওরিন কৃত্রিম হাসি হেসে বললো..
” আমাদের তাড়া আছে, ওর সাথে ফোনে কথা বলে নিবো।”

” আপমার ফ্রেন্ড কয়েক হাত দূরে বসে আছে, আর আপনি তাড়া দেখাচ্ছেন। এক্ষুনি চলুন। ”

” আরে হয়েছে কি, আমরা ওর সাথে আগেই দেখা করেছি। ”

” তাই বুঝি। ”

” আপনার কনে ফ্রেন্ডের নাম যেনো কি?”

ওরিন বিড়বিড় করে তনু কে বললো..” কি নাম?”

” জানি না দোস্ত। ”

” উফ গাঁধী একটা। ”

ফরিদ পকেটে হাত দিয়ে বললো..
” কি হলো বলুন?”

” হে হে তানিয়া,! ”

ফরিদ স্বাভাবিক গলায় বললো..

” ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, কনের নাম তানিয়া নয়। ”

” এ্যায়..”

” কনের নাম মারিয়া হোসাইন। অনার্স শেষ করেছে কিছুদিন আগেই। আর তোমরা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরো? ও তোমাদের ফ্রেন্ড হয় কিভাবে? আর ওর তো ভার্সিটি আলাদা। ”

ওরিন ঘাঁমছে। ওরিন তেতলাতে তেতলাতে বললো..

” আ আ আচ্ছা। ভালো। ”

বলেই তনুর হাত ধরে ভো দৌড় দিলো, ওরিন। দু জন ছুটছে তো ছুটছে। দারোয়ান ওদের পিছু নিতে চাইলে, ফরিদ না করে দিলো। গেটের সামনে ফরিদ হাসছে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।

এই দুনিয়াতে আর কত রকমের মানুষ দেখবো? উইথ আউট দাওয়াত, খেতে এসে সিনিয়ারের হাতে ধরা খেলো। বলেই আবার হো হো করে হাসলো।

ফরিদের কাধে বাধন হাত রাখলো।
” কি হইছে দোস্ত?”

” ওরিন আর তনু এসেছিলো।”

বাধন অবাক হয়ে, বললো..
” ওরা এখানে?”

“হ্যাঁ.. ” ( ফরিদ বাধন কে সব বললো)
বাধন হো হো করে হাসলো।


আয়শার শাড়িটা প্রায় খুলে গেছে। আধা ঘন্টা ধরে ওয়াশ রুমে আয়শা শাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছে৷ শাড়ি পড়ার সময় আঁচলের পেছনের পিন টা ঠিক মতো আটকানো হয় নি।
শাড়ি পড়ে ছবি তোলা, ভারি ক্যামেরা ওপরে তোলা বড্ড মুশকিল। আয়শার নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।

অন্তত আজকের দিনটায় শাড়ি না পড়লেই চলতো, কেনো যে নাছিমের মন রাখার জন্য শাড়িটা নিয়ে পড়লো। প্রতিটা মোমেন্ট আয়শা ছবিতে বন্দী করে রাখবে, একটা সুন্দর মূহুর্ত সংরক্ষণ করে রাখবে।
তার বদলে সে নিজেই, আটকা পড়ে আছে। আধা ঘন্টা ধরে এখানে।

–সবাই হই চই করছে। বর এসেছে বর এসেছে বলে। নাছিম চারিদিকে তাকালো। সবাই গেইটের কাছে যাচ্ছে। আয়শার ক্যামেরা স্টেম্প সব স্টেজের কাছে রাখা কিন্তু আয়শাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

নাছিম হাটতে হাটতে চারিদিকে আয়শা কে খুঁজলো। কিন্তু কোথাও আয়শা দেখলো না। নাছিম লেডিস ওয়শরুম টার কাছে গিয়ে আয়শা কে ডাক দিলো।

বাইরের শব্দে আয়শা কোন মতে শাড়ি টা পড়ে নিলো৷ ঠিক তখনি বাইরে থেকে নাছিমের গলার আওয়াজ পেলো। নাছিম বাইরে থেকে ডাক দিচ্ছে।

” মিস, আয়শা.. ”

আয়শা ভেতর থেকে সারা দিয়ে বললো…

” স্যার আমি ভেতরে। আমার শড়িটার পিন খুলে গেছে, শাড়ি ঠিক করছি। ”

” আচ্ছা ঠিক করুন। ”

বলেই নাছিম চলে আসবে ঠিক তখনি আয়শা ডাক দিয়ে বললো…

” স্যার..”

” বলুন মিস আয়শা?”

” আমি পিন টা আটকাতে পারছিনা। পেছনে আমার হাত যাচ্ছে না। প্লিজ কাউকে পাঠান। ”

” এখানে কেউ নেই। বর এসেছে, সবাই গেইটের কাছে। ”

” তাহলে আপনি আসুন।”

” কিহ? আমি? ”

” হ্যাঁ, তাছাড়া আর কাউকে তো পাচ্ছি না। ”

” আসছি।

বলেই। নাছিম আয়শার কাছে গেলো, আয়শা পিন আটকানোর চেষ্টা করছে, পারছে না। নাছিম পিন টা নিয়ে আঁচলটা ভাজ করে আটকে দিলো।

” ঠিক আছে এবার। ”

” হ্যাঁ। ”

” আচ্ছা আপনার মুখ দিয়ে থ্যাংকস কোন কৃতজ্ঞতার শব্দ বের হয় না? ”

” থ্যাংকস বলার কি আছে? শাড়ি দিয়েছেন ভালো কথা এতো পিছলা টাইপের শাড়িটা কেনো? খালি পিছলে যায়, সামলাতে পারছিনা। ”

” পছন্দ হয়েছে তাই কিনেছি৷ কেনার সময় এতো কিছু ভাবি নি। ”

” তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবুন৷ হুহ।”

বলেই আয়শা চলে গেলো নাছিম থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। হেল্প করার পরও মেয়েটা একটা থ্যাংক ইউ বললো না। কি অদ্ভুত!
নাছিম একটা থ্যাংক্সতো প্রাপ্য।

আয়শা ক্যামেরা নিয়ে গেইটের কাছে গেলো, সেখানে ভিডিও করলো৷ অতঃপর বরের খানা পিনা ভিডিও করবার পর আয়শা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে,ঠিক তখনি আকাশ এলো।

আয়শার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো…

” হায়! আয়শা! ”

আয়শা হ্যান্ড শেক করে বললো..
” হায়! আপনি এখানে?”

” হ্যাঁ। একচুয়ালি তুষার আমার কাজিন। বর পক্ষ থেকে এসেছি। তাছাড়া কনে পক্ষ থেকেও ইনভাইটেড ছিলাম। ”

” ও আচ্ছা। ”

” তুমি ফটোগ্রাফি করছ নাকি?”

” হ্যাঁ। কনে পক্ষ থেকে আমি ফটোগ্রাফি করছি। ”

” বাহ! ভালো!”

ঠিক তখনি নাছিম আকাশের কাছে এসে বললো..

” আকাশ খেয়েছো তুমি?”

” এখনো না। ”

” চলো, তুমি স্পেশাল গেস্ট প্লিজ কাম। ”

বলেই আকাশ কে নিয়ে চলে গেলো। মারিয়া -তুষারের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সন্ধ্যার পর মূহুর্তে মারিয়ার বিদায়ের পালা। দাদী কান্না কাটি করছে। দাদীর কান্না দেখে আয়শার মন খারাপ হচ্ছে। নাছিমের চোখ দুটো বেশ লাল হয়ে আছে, বুঝা যাচ্ছে নাছিম কেঁদেছে।

একমাত্র বোনকে বিদায় দিয়ে অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে যে, বিদায় লগ্ন যে বড্ড কঠিন!

————–
রাত প্রায় আটটা। আয়শা সব কিছু গুছিয়ে নিলো বাড়ি ফেরার জন্য। দাদী আয়শার রুমে এসলো, আয়শা ক্ষানিকটা অবাক হলো। দাদী আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

” তুমি থেকে যাও আয়শা। আজ আর বাড়ি ফিরো না। আগামীকাল বিকালে যেও। ”

” বিকালে কেনো দাদী?”

” আগামীকাল মারিয়ার বৌ-ভাত। তুমি থেকে গেলে, খুশি হতাম। ”

” বাবা কে দু দিনের কথা বলে এসেছি৷ উনি চিন্তা করবেন। ”

তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলে নিবো। তুমি আমার কাছে বসো। আয়শা দাদীর কাছে কিছুক্ষণ বসে রইলো।

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ- ২০

বাইরে থেকে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আসছে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । ঝড় শুরু হবে মনে হচ্ছে?
হুট করেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। সারা রুম অন্ধকার। আয়শা অন্ধকারে হাতরে রুম থেকে বের হলো৷ মা মারা যাবার পর থেকে আয়শা অন্ধকার এক দম সয্য করতে পারে না।

অন্ধকারে আয়শার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আয়শার শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। আয়শা ঘন ঘন ঘামছে। রুম থেকে বের হয়ে কোন শব্দ পেলো না। অন্ধকারে কিছু একটা তে পা লেগে আয়শা প্রচন্ড ব্যাথা পেলো৷ ‘ আউউউচ..’ শব্দ করলো। আয়শা ডাক দিয়ে, বললো…

” নাছিম স্যার?”

কোন শব্দ এলো না। ফ্লাটা বেশ বড় হওয়ার রুম গুলোর সাথে শব্দ বাড়ি খাচ্ছে। দূরে, জোরে শব্দ না করলে কেউ শুনতে পাবে না। আয়শা আবারো ডাক দিলো…

” স্যার আপনি কি শুনতে পারছেন? ”

বলেই পায়ে হাত দিলো আয়শা তরল কিছু অনুভব করলো। অন্ধকারে বুঝতে পারলো না কি।
অন্ধকারে আয়শা কারো পায়ের শব্দ পেলো, বিদ্যুৎ চমকানোর আলো কারো অবয়ব দেখে আয়শা জোরে চিতকার দিলো। এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো।

” কে কে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না বলে দিচ্ছি কে ওখানে। ”

‘বাসাটায় এতো গুলা মানুষ কেউ কি আমার কথা শুনতে পারছে না, আল্লাহ বাঁচাও আমাকে। ‘

পায়ে ব্যাথায় টন টন করছে। রান্না ঘরের দিকে খুটুরখাটুর শব্দ আসছে। আয়শা ভয়ে দো’য়া দূরুদ পড়া শুরু করলো। চোখ বন্ধ করে আয়শা জোরে জোরে দো’য়া পড়ছে।

চোখের সামনে আলোর আভা আসছে, আয়শা ভয়ে চোখ খুললো না। নাছিম মোমবাতি টা নিয়ে আয়শার সামনে হাটু গেড়ে বসলো…

” মিস,আয়শা.. ”

আয়শা তোতলাতে তোতলাতে বললো..

” ক ক কে?”

” চোখ খুলে তো দেখুন৷”

আয়শা আস্তে আস্তে চোখ খুললো। মোমবাতি হাতে নিয়ে নাছিম বসে আছে। আয়শা কান্না করে দিলো। কান্না জড়িত সুরে বললো…

” কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ? হ্যাঁ, ভয়ে আমার জান চলে যাচ্ছিলো। ”

” আহা কান্না করছেন কেনো? আর এতো রাতে রুম থেকে বেরিয়েছেন কেনো?”

” আম্মু চলে যাওয়ার পর, অন্ধকারে থাকতে পারি না। আমার শ্বাস আটকে আসে, কষ্ট হয়। ”

নাছিম আয়শার চোখ মুছে দিলো৷ কান্না করলে যে মেয়েদের ভয়ংকর সুন্দর লাগে, তা মাত্র প্রমান পেলো নাছিম। মোমবাতির আলোয় মায়াবী তরুনীর কান্না, নাছিমের ভালো লাগছিলো। আয়শার নাকের মাথা লাল হয়ে গেছে, এখনো আয়শা হেঁচকি তুলে কান্না করছে।

নাছিমের গালে হাত দিয়ে আয়শার কান্না দেখতে ইচ্ছে করছে। নাছিম পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি? এতো দিন এই এলিয়েন মেয়েটাকে পাগল বলছিলাম, এখন নিজেই পাগলাটে চিন্তা করছি৷ মাই গড। ‘

” উঠুন মিস আয়শা।”

আয়শা উঠতে গিয়ে ব্যাথায় আবারও আওয়াজ করলো। মোমবাতির আলো টা কাছে নিতেই নাছিম দেখলো আয়শার পায়ের আঙুল দিয়ে ক্ষানিক রক্ত, কোন কিছুর সাথে হোচট খেয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে আয়শা।

” আপনি ব্যাথা পেলেন কি ভাবে?”

” জানি না। ”

” এতো কেয়ারলেস হলে চলে? ”

” অন্ধকার এতো কিছু ভাবি নি৷ ”

“মোমবাতিটা ধরুন।”
বলেই আয়শার দিকে এগিয়ে দিলো। আয়শার মোমবাতি টা ধরলো। নাছিম আয়শা কে কোলে তুলে নিলো।

” এই কি করছেন।”

” আপনার ওজন এতো কেনো? কি খান বলুন তো?”

” কিহ। আপনার কোন সমস্যা। আপনি আমায় কোলে নিয়েছেন কেনো? নামান। ”

” বেশি কথা বললে ফেলে দিবো। পায়ের সাথে কোমড় ভেঙ্গে বসে থাকবেন৷ ”

” হুহ!”

গেস্ট রুমে, আয়শাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো নাছিম। পায়ের থেকে এখনো একটু রক্ত বেয়ে পড়ছে।

” আই থিংক ইটস ডিপ ইঞ্জিউরি। আমি মলম নিয়ে আসি৷”

” না। প্লিজ যাবেন না। অন্ধকারে থাকতে পারবো না৷”

” অন্ধকার কে নিজের শক্তি বানান, তাহালে অন্ধকার আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ”

বলেই নাছিম চলে গেলো। মোমবাতির নিভু নিভু আলোতে আয়শা চোখ বন্ধ করে রইলা। কিছু সময়ের মধ্যেই আয়শা ঘুমে তলিয়ে গেলো। অন্ধকার সয্য করার ক্ষমতা তার নেই৷

———————————-

সকাল বেলা আয়শার ঘুম ভাংগার পর, আয়শার পা টা আনইজি লাগছে। আয়শা ঠিক মতো পা নাড়াতে পারছে না। আয়শা কোন রকমে উঠে বসলো, পায়ের আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ করা। পা কে ব্যান্ডেজ করে দিলো৷ আয়শা আস্তে আস্তে উঠে বসলো।

নাছিম ছাড়া আর কেউ জানে না আয়শা পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। তাহলে কি নাছিম ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় আয়শা টের ও পায় নি। আয়শা শত ভাগ নিশ্চিত নাছিমই ব্যান্ডেজ করেছে।

আয়শা ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলো। নাছিমের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা আটকানো, আয়শা লকটা মোচড় দিতেই লকটা খুলে গেলো। আয়শা ভেতরে যাবে কি না, বুঝতে পারছে না।

আয়শার কেনো যেনো নাছিমের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে। কিছুক্ষণ ভাবাভাবির পর আয়শা দরজাটা ধীরে খুলে দিলো। যাতে শব্দ না হয়। আয়শা পা টিপে টপে ভেতরে ঢুকলো।

নাছিম কোলবালিশ জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে৷ আহা! লাটবাবুর কি ঘুম, মনে হচ্ছে বউ কে জরিয়ে ধরে আছে। নাছিমের চুল গুলো বরাবর আয়শার খুব ভালো লাগে। আধো ঘার্মাক্ত কপাল টাতে মিডিয়াম সাইজের সিল্কি চুল গুলো সব সময় লেপ্টে থাকে, আয়শার বড্ড ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

নাছিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের ইচ্ছা টাকে দমিয়ে আয়শা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। দেয়াল ঘড়িটায় তাকিয়ে দেখলো সকাল সাত টা সাতচল্লিশ মিনিট বেজে চলেছে।

আয়শা ফ্রেশ হয়ে, দু কাপ চা বানিয়ে দাদীর রুমে গেলো। দাদী বিছানার পাশে রকিং চেয়ারে বসে, তাসবী পড়ছেন৷ আয়শা দরজাটা হালকা খুলে বললো…

” দাদী আসবো?”

” হ্যাঁ এসো। ”

আয়শা একটা কাপ দাদীর হাতে দিয়ে, বললো..

” দাদী চা আপনার জন্য এনেছি। ”

দাদী কাপ টা হাতে নিয়ে বললেন..

” আমি তো চিনি ছাড়া চা খাই। ”

” চিনি দেই নি। আমার কেনো জানি মনে হয়েছিলো আপনার ডায়াবেটিস আছে। ”

দাদী হালকা হেসে, চায়ের কাপে চুমুক দিলেন৷

” শিলার মায়ের (বুয়া) হাতের পানসে চা, খেয়ে মুখ জম ধয়ে গেছে। তোমার হাতের চা খেয়ে ভালো লাগলো৷ ”

আয়শা হালকা হেসে, চায়ের কাপে চুমুক দিলো, দাদী চা খেতে খেতে বললেন…

” তোমরা ভাই বোন ক’জন?”

” আমি আর আমার একটা ছোট বোন আছে। ”

” ও আচ্ছা। তোমার বাবা কি করেন? ”

” কৃষি অফিসার ছিলেন, দু বছর আগে রিটায়ার্ড করেছেন৷ ”

” বাহ। তুমি কি ছোট বেলা থেকেই ছবি তোলোর শখ?”

” খুব ছোট বেলা থেকে না। জেএসসি পরীক্ষার পর বাবা একটা ক্যামেরা গিফট দিয়েছিলো। তার পর থেকেই,ছবি তোলার শখ।
আকাশ পাখি কোন কিছু আর বাদ ছিলো। ”

দাদী হাসলেন। দাদীর রুমের দরজা খুলে নাছিম ভেতরে এসে অবাক হলো, আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” চা কে বানিয়েছে?”

” আমি বানিয়েছি স্যার। ”

” চায়ে কিছু উলটা পালটা কিছু মেশান নি তো?”

দাদী নাছিম কে বললো…

” কি বলছিস এ সব? চা টা খুব ভালো হয়েছে। ”

” বাঁচা গেলো। মিস,আয়শা কি করেছে জানো দাদী?”

আয়শা লজ্জায় এদিকে সেদিক তাকাচ্ছে৷ দাদী মাথা ঝাকিয়ে না করলো।

” উনি আমার কফিতে আধা বয়াম কফি আর ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে দিয়েছিলো৷ কি বিশ্রী টেস্ট ভাবতেই এখনো ভয় লাগছে। ”

দাদী মুখ টিপে হাসলো।

————————–

মারিয়ার বউ-ভাতের যাবার জন্য সবাই কিছুক্ষণ আগেই রওনা দিয়েছে। আয়শা তার সব জিনিস পত্র গাড়িতে তুলে নিয়েছে। নাছিম গাড়ি ড্রাইভ করছে, ধানমন্ডি থেকে বনানী বিশাল ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে দুজন।

আয়শা মৃদু ঘামছে, নাছিম এসি টা অন করে দিয়ে, আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” পায়ের ব্যাথাটা কমেছে?”

” হুম। রাতে আপনি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলেন। ”

” হ্যাঁ। আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিল, তাই আর ডাক দেই নি। ”

আয়শা নাছিম কে যতো দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। এই লোকটা বড্ড অন্য রকম..



চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here