ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ২১+২২

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ- ২১

সকাল বেলা এলার্ম-ঘড়ির শব্দে, আড়মোড়া হয়ে ঘুম ভাংলো। খুব একটা বেলা হয় নি কিন্তু বাইরে বেশ রোদের তাপ আসছে। আয়শা ফ্রেশ হয়ে, রান্না ঘরে গেলো। দু কাপ কফি বানিয়ে বাবা কে দিলো, এবং সে নিজে কফি খেতে খেতে কাজ শুরু করলো।

গত কাল সন্ধ্যায় আয়শা বাড়ি ফিরেছে। নাছিম আয়শা কে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেছে। নাছিমের দ্বায়িত্ব বোধ দেখে আয়শার বড্ড অবাক লাগে, এক জন ব্যাক্তিত্ববান মানুষ। আয়শার জায়গায় অন্য কেউ হলে কি? নাছিম এতোটা রেস্পন্সিবল নিতো?

আয়শাও কি উল্টো পাল্টা ভাবছে। নাছিম তো সবার বেলায়ই দ্বায়িত্ববান। একা তার বেলায় হবে কেনো। আয়শা তো সাধারণ এক জন এমপ্লয়ি মাত্র। তার জন্য আলাদা ভাবে করতে যাবে কেনো নাছিম৷

আয়শা মাথাটা জাস্ট চেপে ধরলো। এতো অশান্তি লাগছে কেনো তার? আয়শা মাথায় হাত দিয়ে সোফার এক কোনে বসে রইলো। আয়শার বাবার ডাকে আয়শার হুশ ফিরলো। আফজাল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন..

” কিরে মা, তুই ঠিক আছিস?”

” হ্যাঁ বাবা। ”

” সত্যি তো?”

” হুম। মাথাটা একটু ভার ভার লাগছে। ”

” এক কাজ কর। আজকে ছুটি নিয়ে নে৷ ”

” জয়েন করেছি, দু মাসও হয়নি এখনি ছুটি নিবো?”

” ছুটি নিলে সমস্যা হবে?”

” জানি না বাবা। গিয়ে তো দেখি। ”

আয়শা দ্রুত রান্না সেরে, নাস্তা করে, অফিসের জন্য রওনা দিলো। দশ বাজার পনেরো মিনিট আগে আয়শা অফিসে পৌছালো। অফিসের ভেতর ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
আয়শা রুমের দিকে যাচ্ছে ঠিক তখনি, মিলি আয়শাকে পিছু ডাক দিলো..

” আয়শা..”

” জ্বি মিলি?”

” কেমন আছো?”

আয়শা ঠোঁট টেনে হাসির ভান ধরে বললো..

” ভালো আছি। ”

মিলি, খোঁচা মেরে বললো..

” ভালো তো থাকবেনই হেড বসের বাসায়, না গিয়েছিলেন? ”

” মিলি আমি ওখানে বেড়াতে যাই নি৷ কাজে গেছিলাম। ”

” যাই বলেন না কেনো? হেড বসের বাসায় যাওয়াটা কিন্তু লাকের ব্যাপার। ”

” এখানে লাক এর কি আছে? আমার কাজ ছবি তোলা, আমি ওনার বোনের বিয়ের ছবি তুলতে গেছি। ”

মিলি অবাক সুরে বললো…

” দেখেছিস নিলা? আয়শা এর মধ্যেই ওনার, তেনার শুরু করে দিয়েছে। ”

নিলা মুখ বাঁকিয়ে বললো…

” তাই তো দেখছি। অফিসের বসের সাথে ভালোই ভাব জমিয়েছো। ”

” আশ্চর্য। এখানে ভাবের কি দেখছেন আপনারা? আর এ সব অবান্তর প্রশ্ন করার জন্য আমাকে ডেকেছেন? ”

মিলি হেসে বললো…

” বসের গাড়ি দিয়ে, বাসায় যাওয়া বুঝি অবান্তর না?”

” মিলি আপু আপনি আমার সিনিয়র বলে কিছু বলছিনা। ”

নিলা ধমক দিয়ে বললো…
” এই মেয়ে কি করবে তুমি?”

আয়শা কারো কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের ডেক্সের দিকে চলে গেলো। এদের সাথে তর্ক করলে তর্ক বাড়বে।

মিলি নিলা কে বললো..” মেয়েটার এটিটিউড দেখেছিস?”

” ওর একটা শিক্ষা দরকার। ”

বলেই নিলা হাসলো।

আয়শা গিয়ে নিজের ডেক্সের কম্পিউটার অন করে কাজ শুরু করলো ম্যানেজার স্যার আয়শা কে বললো…

” কেমন আছেন? ”

আয়শা হালকা হেসে বললো,

“ভালো আপনি কেমন আছেন স্যার?”

” ভালো। বিয়ের দিন গিয়ে দেখলাম বেশ ভালোই কাজ করছিলেন। ”

” জ্বি স্যার। নাছিম স্যারের ফ্যামিলি মেম্বারা খুব অমায়িক। ”

” তা ঠিক বলেছে। তিন দিনে কোন গরবর করেন নি তো?”

আয়শা হাসি ফিয়ে বললো…

” কি যে বলেন না স্যার। আমার মতো শান্ত স্থির মেয়ে আর আছে নাকি?”

ম্যানেজার স্যার কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলেন। তার পর মাথা দুলিয়ে চলে গেলেন। আয়শা নিজের কাজে আবার মন দিলো।

———————————-

ওরিন এবং তনু কলেজের বাগানের এক পাশে বসে আছে। তনু পড়া বলছে, এবং ওরিন নোট করছে। ওরিন লেখা থামিয়ে কলম কামড়াচ্ছে। তনু কলম টা কেড়ে নিয়ে বললো…

” কলম কামড়াইতেছিস কেন দোস্ত। ”

” কি আর করবো বল?”

” ফরিদ ভাইয়ে ব্যাপারে কিছু ভেবেছিস?”

” কি ভাববো?”

” এই যে…আমরা যে কান্ড টা করলাম। ”

ওরিন বিরক্তি দেখিয়ে বললো..

” বাদ দে তো দোস্ত। খাবার খাওয়ার জিনিস খেয়েছি। আমি না হয় আয়শা আপার বিয়েতে ফরিদ ভাই কে দাওয়াত দিবো। শোধবোধ। ”

তনু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো…

” আমি কি করবো রে দোস্ত? আমার তো কোন ভাই বোন নাই। ”

ওরিন তনুর মাথায় চাটি মেরে বললো…

” তুই তোর বিয়েতে দাওয়াত দিয়ে দিস। ”

তনু খুশি হয়ে বললো…

” গুড আইডিয়া। ”

” আপনাদের কে ফরিদ ভাই ডাক দিয়েছে। ”

কালো গেঞ্জি পড়া একটা ছেলে তনু আর ওরিনের উদ্দেশ্য বললো। ওরিন প্রশ্ন করলো.. “কেনো?

ছেলেটা কর্কশ গলায় উত্তর দিলো…

” গেলেই বুঝবেন। ”

তনু ভয়ে ভয়ে বললো…

” কি করবি এবার ওরিন। ”

ওরিন বিড়বিড় করে বললো..

” কুল, কুল। আমরা যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না। দেখা যাক কি হয়। ”

” তোর কি ভায় লাগছে না। ”

” হ্যাঁ দোস্ত৷ কিন্তু ভয় টাকে প্রকাশ করা যাবে না। ”

দুজনেই ছেলেটার পিছু পিছু গেলো কলেজের বাইরে। দামি রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকলো দুজন। ওরিন এবং তনুর হাত পা কাঁপছে। এখানে তাদের ডাকার কারন দুজনেরই অজানা।

দুজনেই ফরিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ফরিদের পাশে বাধন চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। ফরিদ স্বাভাবিক গলায় বললো…

” বসো তোমরা। ”

ওরিন, তনু চেয়ারে বসলো দুজন। তনু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো..

” আমাদের কেনো ডেকেছিলেন ভাইয়া? ”

বাধন বললো..” সেটা পরে বলা যাবে। ”

ফরিদ মেনু কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো…

” কি খাবে তোমরা বলো।”

তনু ওরিনের কানে ফিস ফিস করে বললো..

” কি অর্ডার দিবো?”

” দুই প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি। ”

” ধুর কি বলছিস। ”

” কেনো কি হয়েছে। ”

” কাচ্চি বিরিয়ানির কথা বললে কেমন দেখা যায়? ”

ওরিন বিড়বিড় করে বললো..

” ওনারা মনে হয় আমাদের ট্রিট দিতে চাচ্ছে। তাই খেলে কাচ্চি খাবো।”

” শুধু শুধু কেউ ট্রিট দেয়। ”

” দেয়। সে দিন বিয়ে বাড়িতে খেলাম না, কিছুই তো বললো না।..

” তাই বলে, এখন..”

” তো কি হইছে? ”

ফরিদ দু জনের কথার মাঝখানে বলে উঠলো..

” নিজের মধ্য কথা শেষ হলে, অর্ডার টা দেই। ”

ওরিন হালকা হেসে বললো..

” হ্যাঁ ভাইয়া। আমরা মাটন কাচ্চি খাবো।”

” ঠিক আছে, ওয়েটার দুটো কাচ্চি এবং দুটো হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি, চারটা কোক এবং চার টা চিকেন জালি কাবাব।”

” ওকে স্যার। ”

বলেই ওয়েটার লিস্ট নিয়ে চলে গেলো। ওরিন ফিস ফিস করে তনু কে বললো..
“এতো খাবারের নাম শুনে জ্বিভে জল আসছে। ”

” আমারো রে। কিন্তু হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা তুই খেয়েছিস?”

” হুম। খেয়েছি, তবে কাচ্চি বেশি মজা। কাচ্চি ইজ মাই লাভ। ”

” হুম। ফার্স্ট লাভ। ”

ফরিদ এবং বাধন কান পেতে দুজনের ফুসুরফাসুর শুনছে। ফরিদ মনে মনে বললো…’দাঁড়াও তোমাদের লাভ বের করছি। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি। ‘

কিছু ক্ষনের মধ্যেই খাবার চলে এলো। ওরিন, তনু, ফরিদ, বাধন সবাই খাওয়া শুরু করলো। পেট ভরে সবাই খাওয়া দাওয়া করলো। তনু খাবার শেষে ঢেকুর তুলে বললো…

” ভাইয়া কি উপলক্ষে ট্রিট দিলেন?”

বাধন টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো…

” আমরা তোমাদের ট্রিট দেই নি। ট্রিট তোমরা আমাদের দিয়েছো। ”

ফরিদ দঁড়িয়ে, শার্টের কলার ঠিক করতে করতে, ওরিন এবং তনু উদ্দেশ্য বললো…

” তোমরা দু’জন বিল টা দিয়ে দিও। ”

ওরিন ঘাবড়ে গিয়ে বললো..

“এ্যায়য়য়..”

ফরিদ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো..

“এ্যায়য় নয় হ্যাঁ। ”

বলেই ফরিদ, বাধন বেড়িয়ে গেলো। তনু বললো..

” দোস্ত আমার আগেই কেন জানি মনে হইছিলো কোন সমস্যা হবে? ”

ওরিন খাবারের বিলের কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখলো, তিন হাজার টাকা বিল এসেছে।

” চার জন খেলাম এতো বিল এলো কিভাবে?”

ওয়েটার হালকা হেসে জবাব দিলো…

” ম্যাম এটা এক্সপেন্সিভ রয়াল রেস্টুরেন্টে। দাম বেশি তো হবেই। ”

ওরিনের প্রচন্ড রাগ লাগছে, ইঁচড়েপাকা দুটো এভাবে ফাসিয়ে দিলো। রাগে ওরিনের গাঁ জ্বলছে।

তনু ওরিনের কানে ফিস ফিস করে বললো..
” দোস্ত এতো গুলা বিল দিবো কিভাবে? আমার কাছে মাত্র পাঁচশো টাকার মতো আছে।”

ওরিনের মাথা ভন ভন করছে…


“#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ- ২২

বেলা চার টা বাজে, রোদের তাপ ধীরে ধীরে কমে আসছে। ওরিন রিকশার হুডি টা নামিয়ে দিলো। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা তার চোখের সামনে ভাসছে। এবং রাগ চাওড়া হয়ে আসছে। ওরিন জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো।

তখন, তনুর কাছে সারে পাঁচশ টাকার মতো ছিলো। ওরিন তার ব্যাগ ঘেটে প্রায় এক হাজার টাকার মতো পেলো, দুজনের পনেরো-শ টাকা, কিন্তু বিল এসেছে তিন হাজার। ওয়েটার বিলের জন্য অপেক্ষা করছে, টেনশনে ওরিনের মাথা ধরে যাচ্ছে।

কি করবে ওরিন ভেবে পাচ্ছিলো না। ওরিন দ্রুতো বাবা কে ফোন দিলো। বিকাশে পনের-শ টাকা পাঠাতে বললো। অর্ধেক বিলের টাকা দিলো আর বাকি অর্ধেক বিকাশের মাধ্যমে পে করে দিলো।

তনু ওরিনের কাধে হাত দিয়ে বললো…

” দোস্ত? ”

” হুম।”

” কি ভাবছিস?”

” ভাবছি এই ইঁচড়েপাকা দুটো কে কি ভাবে শায়েস্তা করবো?”

” কি করবি? ”

” সেটাই তো ভাবছি। এদের এতো সহজে ছাড় দিবো না আমি। এতো বড় রয়াল রেস্টুরেন্ট বিল টা ঠিক মতো দিতে না পারলে, কি অবস্থা হতো বুঝতে পারছিস?”

” বুঝতে পারছি দোস্ত। আমাদের ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেতো, পাব্লিক প্লেসে।”

” হ্যাঁ। একটা সুক্ষ্ণ প্লান করতে হবে, যাতে ওদের ও শিক্ষা হয় আর আমরা ধরা না পরি।”

” ঠিক বলেছিস। সিনিয়ার বলে, যা ইচ্ছা তাই করবে নাকি? হুহ!”

” এখন মাথা চলছে না রে । ক্লান্ত লাগছে। বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিবো। এখন আসছি। ”

বলেই ওরিন বাড়ির সামনে নেমে গেলো। তনু রিকশা নিয়ে তার বাড়ির দিকে গেলো। ওরিনও নিজের বিল্ডিংয়ে ঢুকে গেলো।

——————-

“স্যার আসবো? ”

নাছিম কম্পিউটার থেকে মুখ উঠিয়ে, আয়শার দিকে তাকিয়ে বললো..

“জ্বি। আসুন। ”

আয়শা ভেতরে ঢুকলো। নাছিম ইশারা করে, আয়শাকে চেয়ারে বসতে বললো। আয়শা চেয়ার টেনে বসে বললো…

” বিয়ের ভিডিও গুলোর মধ্য কি কি গান এড করবো। জানতে পারলে ভালো হতো।”

” জানুন। কে না করেছে। ”

” কি ভাবে জানবো স্যার?”

নাছিম কম্পিউটারে টাইপ করতে করতে বললো..

“আপনি সময় করে একদিন আমাদের বাসায় অথবা বনানী যেতে পারেন। ”

” ফোন কলে জেনে নিলে, ভালো হতো না, স্যার? ”

” হ্যাঁ সেটাও করা যায়। আপনি মারিয়ার হুয়াট্স আপ নম্বর টা নিন। ”

“ধন্যবাদ স্যার। ”

আয়শা আনমনা হয়ে বসে রইলো। নাছিম আয়শার উদ্দেশ্য বললো…

” আর কিছু বলবেন?”

“হ্যাঁ। ”

” হুম বলুন। ”

” আমার এক দিন ছুটি লাগবে স্যার। ”

” কেনো? ”

” মেডিকাল চেক আপ করবো । ”

” কেনো? আপনি কি অসুস্থ?”

” ইয়ে মানে, আমার এলার্জির সমস্যা আছে এজন্য চেক আপ করবো। ”

” আচ্ছা। ঠিক আছে। ”

আয়শা খুশি হয়ে বললো..

” ধন্যবাদ স্যার৷

নাছিম অবাক হয়ে বললো..
“ওকে, ওকে। ”

মেডিকেল চেক আপের জন্য ছুটি পেয়ে এতো খুশি?নাছিমের ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগছে। নাছিম চেয়ার ঘোরাচ্ছে, আর ভাবছে আয়শার খুশি হবার কারন। আয়শা মিথ্যা বলে ছুটি নিলো না তো?

“”
সন্ধ্যায় আয়শা বাড়ি ফিরলো। সাথে কিছু খাবার সামগ্রি নিয়ে। আফজাল সাহেব দরজা খুলতেই, আয়শা হাসি হাসি মুখ করে বললো…

” আগামীকাল ছাদ পিকনিক হবে নাকি?”

আফজাল সাহেব খুশি খুশি হয়ে বললেন…

” অবশ্যই। কিন্তু তুই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিস?”

” হ্যাঁ বলেছি। আমার মেডিকেল চেক আপ করার আছে। ”

” মিথ্যা কথা কেন বলেছিস। এক দম উচিত হয় নি। ”

” বাবা সকাল বেলা, সত্যি ডক্টরের কাছে, যাবো তার পর বিকেলে ছাদ পিকনিক হবে। ”

আয়শার কথা শুনে,ওরিন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। খুশি খুশি হয়ে বলললো…

” ওয়াও ছাদ পিকনিক। অনেক দিন পর। ”

” হ্যাঁ । ”

” আচ্ছা। আমি তনু কে ইনভাইট করি? প্লিজ প্লিজ। ”

আয়শা এক গাল হেসে বললো..

” আচ্ছা কর। ”

বলেই রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। রাতে আয়াশা মারিয়াকে মেসেজ করলো। মারিয়া রিপ্লাই দিলো। দরকারি বিষয়ে কথা বলে৷ মারিয়ার টুক টাক মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে, আয়শা ঘুমিয়ে পড়লো।

———— পর দিন————

আয়শা সকাল বেলা সবার সাথে নাস্তা করে বেরিয়ে গেলো। মেডিকেল চেক আপ করে দুপুরের আগে বাড়ি ফিরলো।

আয়শার ছোট বেলা থেকে এজমার সমস্যা ছিলো৷ বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে গেছিলো, হঠাৎ মায়ের মৃত্যুর শোক আয়শা মানতে পারে নি। কান্নাকাটি সাথে আয়শা অসুস্থ হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হতো মাঝে মাঝে, তার পর থেকেই আয়শার রুটিন চেক-আপ করতে হয়।

বাসায় আসার সময়, আয়শা বেশ কিছু নাস্তা কিনে আনলো। ওরিনের দাওয়াতে তনু ও বাসায় এলো। সবাই এক সাথে রান্না-বান্নায় হেল্প করলো। বিকেল বেলা সবাই ছাদে উঠলো। বড় ছাদের চারিপাশে বিভিন্ন জাতের ডেইজি ফুল, সাদা বেলি, ফুলের বাগান বানিয়েছে, আফজাল সাহেব।

নানা রকম ফুলে সু-ঘ্রানে সবাই মাতোয়ারা হতে বাধ্য। ছাদের পরিবেশ টাই সম্পূর্ণ অন্য রকম। তনু হালকা বেগুনি রঙের ডেইজি ফুল গাছের সামনে দাঁড়িয়ে বললো…

” আংকেল এটা কি ফুল?”

” এটা এক ধরনের ডেইজি ফুল গাছ। ”

” সাদা-হলুদ ডেইজি তো অনেক বার দেখেছি। কিন্তু বেগুনি ডেইজি ফুল প্রথম দেখলাম। ”

আফজাল সাহেব হালকা হেসে বললেন…

” পার্পেল ডেইজি বীজ আমাদের দেশে এখনো আসে নি। বছর চার এক আগে এই ফুলের ব্যাপারে জেনেছি। ”

” ওয়াও আংকেল আপনি তো গ্রেইট। ”

আয়শা ছাদ টা ঘুরে ঘুরে দেখছে। চাকরিতে জয়েন করার পর ছাদে আসা হয় নি, আয়শার। ছাদের এক পাশে বাবা একটা শিউলি গাছ লাগিয়েছিলো, তিন মাস আগে। গাছ টা বেশ বড় হয়েছে। ফুলের মুকুল ও ছেড়েছে। কত গুলো মৌ -মাছি বেলীফুলের ওপর দিয়ে উড়ছে।

ওরিন বড় একটা কার্পেট বিছিয়ে দিলো। নাস্তা প্লেটে প্লেটে সাজালো, সাথে তনুও হেল্প করছে। আফজাল সাহেব চেয়ারে বসে আছেন। ওরিন আয়শা কে ডাক দিলো…

আয়শা ওরিনের পাশে এসে বসলো। গল্প, আড্ডার সাথে বিকেল টা কেটে গেলো। তনু বাড়ি চলে গেলো। ওরিন আয়শা সব কিছু গুছিয়ে রুমে এলো। আয়শা বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো৷ ওরিন ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, হঠাৎ করেই ওরিনের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো।



অফিস শেষে নাছিম ড্রাইভিং করে, আয়শার বাসার নিচে এলো। আয়শাদের বাসার দারোয়ান নাছিম কে দেখা মাত্রই, একটা হাসি দিয়ে নাছিমের কাছে গেলো।

” কেমন আছেন?”

দারোয়ান চাচা পান চিবুতে চিবুতে হাসি দিয়ে বললো..

” ভালা আছি সাব (সাহেব)। আন্নে (আপনি) কেমন আছেন? ”

” হুম। ভালো। আয়শার খবর বলতে পারবেন? ”

” কি খবর চান? ”

” এই ধরেন, আজ সারাদিন আয়শা কোথাও বেড়িয়েছে কি না?কত বার বেড়িয়েছে? কোথাও গিয়েছিলো…”

” বুঝছি সাব৷ সকাল বেলা আয়শা আপা রিকশার জন্য দাঁড়ায় ছিলো। রিকশাওয়ালা কে এক টা হাসপালের নাম কইলো। হাস্পাতালের নাম মনে পড়তেছেনা। ”

” আচ্ছা। তার পর? ”

” কয়ক ঘন্টা পর ফিরা আইলো। হাত ভর্তি নাস্তা নিয়া। আমি ওনার ব্যাগ ছয়’তলায় উঠায় দিয়া আইলাম। ”

” বাইরের ফুড কেনো?”

” কি জানি সাব। শুনলাম ছাদে নাকি পিকনিক করবো। আফজাল স্যার আবার ছাদটা খুব সুন্দর কইরা সাজাইছে। ”

” আচ্ছা। ধন্যবাদ। এই টাকাটা রাখেন। চা খাবেন।

বলেই নাছিম পাঁচশ টাকার নোট দারোয়ান রমিজের হাতে দিয়ে চলে গেলো। রমিজ মিয়া ফিক ফিক ফিক করে বললেন..
“এডা দিয়া শুধু চা না। মোরগ পোলাও খাওয়া যাইবো।”


চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here