#ইতিপূর্বে [০৩]
“গাড়ি যেহেতু চালাতে পারেন না তাহলে রাস্তায় নেমেছেন কেনো?এক্ষুনি কতবড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো তার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে আপনার? আপনাদের মতো কিছু মানুষের জন্য আজকাল রাস্তায় বেড়িয়েও শান্তি নেই।আপনি জানেন প্রতিদিন কতো নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনাদের দোষের কারণে!ভাগ্যেস বাচ্চাদের সঙ্গে আমি ছিলাম।ডিসগাস্টিং…আগে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে শিখুন নয়তো দয়া করে রাস্তায় নামবেন না।”
কথাটা বলেই আবারো দু দিকে চার জন বাচ্চাদের নিয়ে হাটা শুরু করলো এক বোরখা পরিহিত নারী।নাক পর্যন্ত তার নিকাব এর মাধ্যমে ঢাকা।আরাধ্য এখন স্তব্ধ অবস্থায় সেই নারীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
অন্যকেউ হলে এতক্ষনে অনেক কিছুই বলে বসতো কিন্তু এই মেয়ের সামনে গলা থেকে কথাই বেড়োলো না।সে তো তার চোখের দিকে তাকিয়েই বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
কিছুক্ষণ আগে—-
ফোনে অপর পাশে থাকা ব্যাক্তির কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো আরাধ্যের।ফোন টা কেটে এক ঝটকায় পাশের সিটে ফেলে দিলো সে।মাথার রগগুলো খানিকটা ফুলে উঠেছে ইতিমধ্যে। দাতে দাত চেপে মাথার চুল টেনে রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে তবে তাতেও সে ব্যার্থ হয়। কিছুক্ষন পর নিজেকে সামান্য শান্ত করে ফুল স্পিড এ গাড়ি স্টার্ট দেয়।আশেপাশের কোনো খেয়াল ই ছিলোনা তার।
হঠাত করেই সামনে একজন মেয়ে এবং সঙ্গে চার জন বাচ্চা চলে আসে।মেয়েটি দ্রুত গতিতে বাচ্চাদের ধাক্কা দিয়ে পাশে সরে যায়।একটুর জন্য বেচে যায় ওরা।
আরাধ্য ও হুট করে এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায়।দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে।আসলে দোষ টা ওর ই কিন্তু যেহেতু এখন রেগে আছে তাই নিজের দোষটা বুঝতে পারলো না।গাড়ি থেকে নেমেই ধাক্কা দিয়ে দড়জা আটকে দেয়।কিন্তু যেই মেয়েটার সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি মেয়েটি বাচ্চাদের থেকে চোখ সরিয়ে তাকায় আরাধ্যের দিকে।
পরপর কতগুলো হার্টবিট মিস হয় আরাধ্যের। মেয়েটার চোখদুটো শুধুমাত্র দেখা যাচ্ছে।
টানাটানা হরিনী চোখজোড়া,তার সঙ্গে ঘন পাপড়ি।দেখলে মনে হয় যেনো কাজল দেওয়া, কিন্তু আসলে তা নয়।
এক অদ্ভুত অনুভূতির স্মৃষ্টি হয় আরাধ্যের মনের মাঝে।সে একদৃষ্টিয়ে তাকিয়ে আছে সেই সুনয়নার দিকে।চোখের পলক ও পড়তে চাইছেনা যেনো।
মেয়েটি এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো কিন্তু তার কিছুই যেনো কানে গেলো না আরাধ্যের।সে তো কথা বলার মাঝে মেয়েটির চোখে সৃষ্ট ভঙ্গিমা দেখতে ব্যাস্ত।
মেয়েটা চোখের আড়াল হয়ে যেতে নিলেই আরাধ্য ভ্রুযুগল কুচকে যেই দু কদম এগোলো তখন ই ধ্যান ভাঙলো তার।এতক্ষন যেনো একটি ঘোরের মধ্যে ছিলো সে।
একহাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়তে থাকে সে।এমন টা তো আগে কখনো হয়নি তার সাথে।তবে আজ কেনো এমন টা.. আর তাও একটি মেয়ের চোখের উপর!
কেমন যেনো পাগল পাগল লাগতে শুরু করলো আরাধ্যের।গলাটা শুকিয়ে এলো,দ্রুত গাড়িতে উঠে ঢকঢক করে আধা বোতল পানি খেয়ে নিলো সে।এ কেমন অদ্ভুত অনুভুতি!কেনো হচ্ছে এমনটা!
কোনো প্রশ্নের ই উত্তর পেলোনা আরাধ্য।
এতক্ষনের ঘটনায় ভুলেই গিয়েছিলো তার পূর্বের ঘটনা।পাশে থাকা ফোনের দিকে তাকাতেই আবারো রাগ চেপে বসলো মাথায়।
পরিশেষে আর কিছু না ভেবে নরমাল স্পিড এ গাড়ি স্টার্ট দিলো আরাধ্য।
________🌿
রঞ্জন মাহতাব কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। বেশি নয় রাত ৯ টার মতো বাজে,তবে তিনি তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে পরেন।
নিলাঞ্জনা এখন নিজের বইখাতা নিয়ে বসেছে। পড়ালেখার বিষয়ে মোটামোটি ভালোই সিরিয়াস সে।তার সপ্ন একজন সত্যবাদি বিচারক হওয়ার। এমন একজন যে সর্বদা অন্যায়কারী কে উপযুক্ত শাস্তি দেবে,যার হাত থেকে কোনো অপরাধি পালাতে পারবে না,যে কখনো নিরপরাধি কে শাস্তি দেবে না।
পিছনেই বেডে বসে নিলাঞ্জনার ফ্রেন্ড মমি বই এর ভিতর ফোন নিয়ে গেমস খেলছে।
নিলাঞ্জনা:মমি তোর হইছে?
মমি:হু (খেয়াল না করেই উত্তর দেয়)
নিলাঞ্জনা: রিক স্যার এর পড়া কমপ্লিট?
মমি: হু..
নিলাঞ্জনা: সাজেশন টা দে।
মমি:হু
নিলাঞ্জনা:ঐ হারামি কই তখন থেকে হু হু করতেছোস?থাপ্পড় মাইরা তোর দাত ফেলায় দিবো।
মমি:হু
নিলাঞ্জনা:মমিইইইইইইউউউরর বাচ্চায়ায়ায়ায়ায়া
মমি:(ধ্যান ভাঙে এবার) এহহহ,কিছু বললি?
নিলাঞ্জনা:খেয়াল কই থাকে তোর?
মমি:দোস্ত,,তুই বুঝবিনা,আজ আমার মনটা খুউউউউব খারাপ।
নিলাঞ্জনা:তোর আবার কি হইলো? (বিরক্তিকর ভাবে বলে)
মমি:দোওওওস্ত…আজ ২৩ নম্বর টার সাথেও ব্রেকাপ হইলো। একটা পোলাও ভালো না,সবডি প্লে বয়..
নিলাঞ্জনা:তাইলে তুই কি?😑
মমি:নিলুউউউউ…
দড়জায় কলিং বেল এর আওয়াজে দুজনেই চমকে উঠলো।পরক্ষনেই নিলাঞ্জনার মনে পড়লো সেই গেস্ট এর কথা।চশমা টা চোখে দিয়ে নিচে চলে গেলো।মমি ও পিছন পিছন গেলো।
দড়জা খুলতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে চোখ কপালে উঠে যায় নিলাঞ্জনার।
নিলাঞ্জনা:আরে আপনি.. (বলতে গিয়ে থেমে যায়)
আরাধ্য এবার ফোন থেকে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকায়।একবার নিলাঞ্জনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়।
আরাধ্য:আরিয়ান আরাধ্য..এটাই নিশ্চই রাজিব মাহতাব এর বাড়ি.. (রাজিব হলো নিলার বাবা)
নিলাঞ্জনা:হ হুম..আমি তার মেয়ে নিলাঞ্জনা মাহতাব।আপনি আসুন,আমি আপনার থাকার ঘড় দেখিয়ে দিচ্ছি..
মমি:কে এলো রে নি.. (আরাধ্য কে দেখা মাত্রই চোখ আটকে যায়।হা করে তাকিয়ে দেখতে থাকে)
ইতিমধ্যে রানু আর বাকিরাও উপস্থিত হয় সেখানে। নিলা আর তাদের পাত্তা না দিয়ে আরাধ্য কে একটি ঘড়ে নিয়ে যায় এবং সবকিছু দেখিয়ে দেয়।
নিলাঞ্জনা ফিরে আসা মাত্রই মমি বলে উঠলো,
মমি:ও এম জি…এটা কে রে নিলু!তোর কোনো খালাতো,মামাতো,চাচাতো,ফুফাতো,দুঃসম্পর্কের কিংবা পাতানো ভাই বুঝি!ও আল্লাহ গো, ইনি তো আমার ২৩২ নাম্বার ক্রাশ।
নিলাঞ্জনা:বাবার বিজনেস পার্টনার😒আর এই সাইকোর উপর তুই ভুলেও নজর দিবি না।
মমি:সাইকো বলিস কেন!
নিলাঞ্জনা: (রাস্তায় ঘটা সব ঘটনা খুলে বলে)
মমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখে আরাধ্য ব্লাক টি শার্ট আর সিলভার কালার ট্রাউজার পরে এদিকেই আসছে।চুলগুলো খানিকটা ভিজে, বোধ হয় শাওয়ার নিয়েছে।
নিলাঞ্জনা এবার ওকে টেবিল এ বসতে বলে এবং সঙ্গে মমি,নিধি,অরন্য এবং ও নিজেও বসে।রানু সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে থাকে।
আরাধ্য এবার প্রথম লোকমা মুখে দিতে যাবে তখন ই,
রানু:সাহেব আফনারে দেখলে না আমার একজনের কতা বহুত মনে আয়…
মমি:কার?
রানু:সিদরাথ ময়লা হাতরা (লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে)
আরাধ্য সবে মাত্র এক লোকমা মুখে দিয়েছিলো আর রানুর কথা শোনা মাত্রই বিষম লেগে গেলো। সঙ্গে অরন্য আর বাকিদের ও।সবাই পানি খেয়ে রানুর দিকে তাকায়।
রানু:আমার তো বহুত কান্দন আহে হের কতা মনে আনলে।আহারে,বেডা ডারে সিংহে এক্কেরে মাইরা লাইলো..
অরন্য:কিসের সিংহ!আর কিসের ময়লা?
রানু:ঐযে টিভিতে একহান নতুন সিরিয়াল আইছেনা হেইডা। ওনারা একহান ভুল করতে। ঐহানে সিদরাথ মালহাতরা দিয়া রাখছে। ঐহানে ময়লা হাতরাই হইবো।আমি বুঝছি।
নিলাঞ্জনা:ইউ মিন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা!
রানু:হয় হয় হেইডাই।থাউক আফামনি,মানষে তো ভুল করতেই পারে..
মমি:আমি বুঝেছি আমি বুঝেছি, ও সিদ্ধার্থ মালহোত্রার শেরশাহ মুভির কথা বলছে।
রানু:হয় হয় ঐ সিরিয়াল ডাই।
নিধি:ওটা সিরিয়াল না মুভি মুভি..
রানু:একডা হইলেই হইলো…
আরাধ্য এতক্ষন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে এদের কথা শুনছিলো।হঠাত করেই ওর ফোন এ একটা কল আসে।
ফোনের আওয়াজ শুনে আরাধ্যের ফোনের দিকে তাকাতেই আতকে ওঠে নিলাঞ্জনা…
#চলবে
[