#ইতিপূর্বে [০৪]
পায়ের উপর পা তুলে সামনে থাকা টেবিলে হাতের কনুই ঠেকিয়ে এক হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে ইতি।অন্য হাত দিয়ে টেবিলের উপর থাকা পেপারওয়েট টা ঘোড়াচ্ছে। চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট,অবশ্য মুখ মাক্স দ্বারা ঢাকা তবুও বাহিরে থেকে তাই বোঝা যাচ্ছে।পরনে তার ব্লাক জিন্স,সিলভার শার্ট তার সঙ্গে ব্লাক জ্যাকেট।এটাই তাদের গ্রুপ এর ড্রেস।কোনো মিশন এ গেলে তারা এই ড্রেস এই যায়।
দড়জায় টোকার আওয়াজে ভ্রুযুগল কুচকে সেদিকে তাকালো ইতি।তখনি দেখলো সেখানে প্রিয়াঙ্কা দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ফাইল নিয়ে।
তার মুখেও মাস্ক,আসলে তাদের গ্রুপ এর সকলের মুখে সবসময় মাস্ক থাকে এবং তারা সকলেই ছদ্মনাম ইউজ করে।
প্রিয়াঙ্কা হলো ইতির পারসোনাল এসিস্টেন্ট এবং তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক।বলতে গেলে গ্রুপ এ ইতির পর ই তার স্থান।
ইতি এবার চোখের ইশারায় ওকে ভিতরে আসতে বললো।
প্রিয়াঙ্কা:ম্যাম,যতটুকু জানিতে পেরেছি আপনার সন্দেহ ই সঠিক।হি ইজ এ ক্রিমিনাল,কিন্তু এর মধ্যে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে যা এখন ও সলভ করতে পারছিনা।
ইতি:(বাকা হাসে একবার)সে খুব চালাক জানো তো প্রিয়াঙ্কা,তবে ইতির সঙ্গে শত চালাকি করলেও যে ফলাফল শূন্য ই হবে।
প্রিয়াঙ্কা:ম্যাম আমি ঠিক বুঝলাম না।
ইতি এবার নিজের ফোন বের করে একটা রেকর্ডিং অন করে,যা শোনা মাত্রই হাসি ফুটে ওঠে প্রিয়াঙ্কার ঠোটে।
প্রিয়াঙ্কা:ম্যাম আপনি কি করে?মানে হাউ ইজ দিস পসিবেল!
ইতি:অসম্ভব কে কিভাবে সম্ভব করতে হয় তা ইতি জানে।আর সে যত কিছুই জানুক না কেনো, আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা ওর ধারণার ও বাহিরে।
প্রিয়াঙ্কা:কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি ম্যাম?
ইতি:অভিয়াসলি,বলো কি বলতে চাও।
প্রিয়াঙ্কা:আপনাকে কেমন অদ্ভুত লাগে ম্যাম। এতদিনে আপনি এতো মানুষের প্রাণ বাচালেন কিন্তু একদম গোপনে।কেউ তার তিল পরিমাণ আন্দাজ ও করতে পারলো না আপনি আসলে কে।তবে অন্যদিকে নিউজ চ্যানেল,পেপার সবকিছুতে আপনার আর আমাদের গ্রুপ এর নাম কিন্তু আছেই। মাঝেমাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে আপনি কে!কে সেই ভাগ্যবতি মা যে আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছে!আপনি তো চাইলেই নিজের পরিচয় সামনে আনতে পারেন ম্যাম।শত্রুদের পক্ষেও আপনার ক্ষতি করা ইম্পসিবল।
ইতি:(মুচকি হাসলো)আমি কোনো মহান মানুষ নই প্রিয়াঙ্কা।আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো আমিও মেয়ে,আমার মা ও একজন সাধারণ মানুষকেই গর্ভে ধারণ করেছেন।প্রতিটা মানুষকেই স্মৃষ্টিকর্তা সমান ভাবে স্মৃষ্টি করেন কিন্তু তা কাজে লাগানো সম্পূর্ন ই নিজেদের হাতে। বাকিদের চেয়ে আমার মাঝে পার্থক্য একটাই।তারা নিজেদের সাহসি ভাবে গড়ে তুলতে পারেনি,যেটা আমি পেরছি,ইনফেক্ট তুমিও পেরেছো।
আর হ্যা,আমি নিজেকে সেদিন ই সকলের সামনে প্রকাশ করবো যেদিন আর পাঁচটা মেয়েকেও সাহসি করে তুলতে পারবো,রাতের আধারে লুকিয়ে থাকা জানোয়ার রুপি মানুষদের সমাজের সামনে আনতে পারবো,যেদিন আমার মধ্যে থাকা সকল ইচ্ছে পূরণ হবে সেদিন।হ্যা,হয়তোবা আমি সবাইকে বদলাতে পারবোনা,কিন্তু যদি নিজের দেশের ১ ভাগ মানুষকেও বদলাতে পারি!
আর তুমি বললে না আমি কেনো নিজের পরিচয় পাবলিক হতে দিয়েছি!এর কারণ একটাই,সকল কে জানানোর জন্য, একজন আছে।মুখোশ এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা দোষিদের আসল রুপ সামনে নিয়ে আনার জন্য একজন আছে। আর বেশিদিন সেই মুখোশ তাদের মুখে টিকতে পারবেনা কারণ ইতি তা হতে দেবেনা।
প্রিয়াঙ্কা:আপনাকে আমি এতদিনেও চিনতে পারলামনা ম্যাম।কিন্তু আপনার প্রতিটা কথা নতুন কিছু করার সাহস যোগায়,নিজেকে খুব ভাগ্যবতি মনে হয় আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। ইউ আর দা বেস্ট ইতি ম্যাম।
ইতি:হা হা হা..বেস্ট?আমার বেস্ট হওয়ার পিছনে তো অন্য কিছুও থাকতে পারে।
প্রিয়াঙ্কা:মানে?
ইতি:আমি কি করে এইধরনের নিখুঁত কাজ শিখলাম তা তোমার অজানা প্রিয়াঙ্কা।প্রতিটা মানুষ ই বেস্ট,যদি তার পাশে কারোর সাপোর্ট থাকে।
প্রিয়াঙ্কা:আপনার পাশেও বুঝি কারোর সাপোর্ট আছে ম্যাম?
ইতি:উহু..নেই,তবে ছিলো এক সময়।
প্রিয়াঙ্কা:সে যেই হোক না কেনো ম্যাম,আমি তার প্রতি ও অসংখ্য শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু নামের সাথে আপনার ব্যক্তিত্বের খুব মিল আছে ম্যাম।
ইতি:নামের সাথে মানে?
প্রিয়াঙ্কা:আপনার নামের অর্থ জানেন ম্যাম?
ইতি:না তো…
প্রিয়াঙ্কা: তুরফা ইতি। আর তুরফা নামের অর্থ হলো দুর্লভ,যা সহজে খুজে পাওয়া যায় না।আপনিও তেমন ই হাজারে এক পিস।
প্রিয়াঙ্কার কথায় হাসলো ইতি।ঘড়ির কাটায় রাত ২:৩০ বাজতেই ইতি মাস্ক এর উপর দিয়ে নিজের মুখে নাক বরাবর আরো একটি রুমাল বেধে নিলো।প্রিয়াঙ্কাও একই কাজ করলো।
নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের বিশাল হল রুমে চলে গেলো সে,সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা ও। প্রিয়াঙ্কার হাতের ইশারায় বাকিরাও মাস্ক এর উপোরে রুমাল বেধে নিজেদের রিভলভার নিয়ে তৈরি হলো।
ইতি: Are you ready girl’s?
সবাই: Yes mam.
ইতি:Will anyone be afraid?
সবাই:No mam.
ইতি:Can we go on a mission now?
সবাই:Yes mam.
ইতি:আমরা কি হেরে যাবো?
সবাই:No mam.আপনি সঙ্গে থাকলে আমাদের জিত নিশ্চিত ম্যাম।
ইতি:মনে করো আমি নেই তাহলে?
সবাই:আমরা আমাদের সম্পূর্ন দিয়ে চেষ্টা করবো,এবং আমাদের বিশ্বাস আমরাই জিতবো।
ইতি: I am proud of you girls. So,10 victims and 3 criminals. Can i understand you?
সবাই:Yes mam..
ইতি: Ok,let’s go..
কথাটা বলেই এক সেকেন্ড ও দেড়ি না করে বেড়িয়ে বাইক এ চেপে বসলো ইতি।এবং বাকিরা দুই জন করে ৩ টা বাইক এ বসলো। সঙ্গে ওদের আরো কিছু সরঞ্জাম রয়েছে।
ওরা ৭ জন মিলে ১০ জন মেয়েকে বাঁচাতে পারবে তা নিশ্চিত।কিন্তু টেনশন এর ব্যাপার একটাই, খবর পাওয়া গিয়েছে মেয়েদের যেই রুমে রাখা হয়েছে সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।তাই কিছুটা সাবধান থাকতে হবে।
_______🌿
প্রায় এক ঘন্টা ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করছে আরাধ্য,কিন্তু বরাবরেই সে ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করলেই সেই সুনয়নার ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
আরাধ্য এবার বাধ্য হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বিরক্তিকর লাগছে তার কাছে।
আরাধ্য:কি আছে সেই চোখে!যা এই আরিয়ান আরাধ্য কে এতো গভিরভাবে গ্রাস জরে ফেললো।সিরিয়াসলি?শেষে কিনা একটা মেয়ের চোখের মায়ায় পড়ে গেলি তুই আরাধ্য!ইজ ইট পসিবেল! ইজ দিস লাভ এট ফার্স্ট সাইট? কিন্তু আমি তো ওকে দেখিও নি।
কি এমন অদ্ভুত নেশা লাগিয়ে দিলে সুনয়না?যেই নেশা আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে?কাজটা তুমি মোটেই ভালো করলে না। You must pay for this..
________🌿
১০ জন মেয়েকেই তারা জীবিত অবস্থ্যায় উদ্ধার করতে পেরেছে।বাকি ৯ জন মোটামোটি সুস্থ ছিলো। ইতি সেই দিকে যায়নি এবং প্রিয়াঙ্কা ও ইতির সঙ্গেই আছে।এটাই ওদের নিয়ম,ইতি আর প্রিয়াঙ্কা ই ক্রিমিনাল দের ধরার জন্য যথেষ্ট।প্রয়োজন হলে আরো ১ জন সঙ্গে থাকে।আর বাকিরা মেয়েদের দিক টা সামলায়।৯ জন মেয়েকে তারা পাচ জন মিলে সুস্থ ভাবে বাড়ি পৌছোনোর ব্যাবস্থা করে দিয়েছে কিন্তু বাকি ১ জন মেয়ে সেন্সলেস অবস্থ্যায় ছিলো,তাকে দেখে যা আন্দাজ করা গিয়েছে তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে।তাই তাকে সঙ্গে নিয়ে এবং ঐ তিন জনকে নিয়ে ওরা চলে আসে নিজেদের জায়গায়।
রাইসা বর্তমানে সেই মেয়েটিকে চেক করছে।রাইসা এই গ্রুপ এর একজন মেম্বার এবং তার সঙ্গে মেডিকেল পড়ুয়া স্টুডেন্ট,এবার ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী সে।তাই এসব কাজ সেই করে থাকে।
তাদের গ্রুপ এর মেম্বার সংখ্যা ৩০ জন এবং তাদের প্রত্যেককে ইতি নিজে গার্ড দিয়েছে,তারা প্রত্যেকেই সাহসী এবং সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
ইতির সামনে বসে আছে সেই তিনজন লোক।বসে আছে বললে ভুল হবে কোনোরকম পরে আছে।ইতিমধ্যে মার খেয়ে তাদের বেহাল অবস্থা।ইতি একহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়াঙ্কা ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
ইতি:দেখ,তোদের মারার আর কোনো ইচ্ছে আমার নেই।সোজাসুজি তোদের লিডার এর নাম বলে দে।নইলে আমি কিছু করবো না।তোদের যা অবস্থা এখন পুড়োপুড়ি শেষ করতে প্রিয়াঙ্কাই যথেষ্ট। তাই না?
প্রিয়াঙ্কা:অবশ্যই। (কথাটা বলে হাতের কবজি কচলায়)
ছেলেগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে তবুও মাথা নেড়ে কিছু না বলার পরামর্শ নেয়।তা দেখে ইতি প্রিয়াঙ্কার দিকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করতেই প্রিয়াঙ্কা একটা হকিস্টিক হাতে নিয়ে ঘোড়াতে শুরু করে।তা দেখে একটা ছেলে ভয় পেয়ে বলে ওঠে,
ছেলেটি:আ আমি বলছি।
ইতি:এইতো ভেরি গুড।তো বল কে তোদের লিডার?
ছেলেটি:আ আহাদ স স্যার।
ইতি যেনো এই কথায় ভিষন বিরক্ত হলো।হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো,মুখ থেকে “চ” ধরণের আওয়াজ বের হলো তার।ঠিক পরক্ষনেই পা দিয়ে সজরে ফ্লোরে লাথি দেয়।
ইতি:এই তোদের কি মনে হয় রে?আমি বোকা? আমি একটা পাগল? তোদের এখনো মনে হয় ঐ শ** বাচ্চা আহাদ এখনো সুস্থ আছে?ভুল,ও বর্তমানে হসপিটাল এর বেডে পা ঝুলোন্ত অবস্থায় শুয়ে আছে।আমি লাস্ট বারের মতো বলছি।তোদের মেইন লিডার এর নাম বল নয়তো..
অন্য একটি ছেলে:এফ আর পি..আ আমাদের ম মেইন লিডার।
মুহুর্তেই মাথার রগগুলো ফুলে উঠলো ইতি।দাতে দাত চেপে সজ্য করলো সে।বিড়বিড় করে বললো,
ইতি:ফারহাদ রাফসান পূর্ব..তোমার দিন ঘনিয়ে এসেছে।তোমায় আমি নিজের হাতে মৃত্য দেবো, অপেক্ষায় থেকো..
ইতি এবার আর কথা না বাড়িয়ে ওদের সেখানেই
বেধে রেখে প্রিয়াঙ্কা কে নিয়ে সেই মেয়েটির কাছে চলে যায়।দড়জার সামনে যেতেই রাইসা সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।ইতি কে দেখেই সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে বলে,
রাইসা: I am sorry mam.she was raped.
চোখ বন্ধ করে নেয় ইতি।নিজেকে এখন দোষারোপ করছে সে।আর কিছুক্ষণ আগে গেলে হয়তো মেয়েটাকে এমন কিছু থেকে বাঁচাতে পারতো সে।
ইতি:জ্ঞান ফিরেছে মেয়েটার?
রাইসা:জি ম্যাম,আমরা যথাসাধ্য বুঝিয়েছি ওকে কিন্তু কেমন যেনো অদ্ভুত আচরণ করছে।আপনি একটু দেখুন প্লিজ।
ইতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পা বাড়ায় রুমের দিকে। কিন্তু রুমে ঢুকে বেডে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে পায়ের নিচের মাটি সরে যায় তার..
#চলবে
#লেখনীতে_সাদিয়া