“ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤ পর্ব_১

#ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ 🌸❤
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১
.
🌸
.
উমম….উমম….উমম….উমম

প্রকাশ: চুপ! একদম চুপ! একটা শব্দ করবি না আর! যদি করিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না,,,” উমম উমম ” করে আমার মাথাটা খারাপ করে দিলো (চিৎকার করে)

ইশারা চুপ করে গেলো প্রকাশের ধমক শুনে,,,প্রকাশ ও কিছুটা নিজেকে শান্ত করে ইশারা বেডে যেখানে বসে আছে সেখানে ইশারার কাছে গিয়ে বললো,,

প্রকাশ: আ’ম সরি ইশারা আসলে আমি ভাবিনি এমন কিছু করে বসবো তোমার সাথে,,,কিন্তু কি করবো বলো এটা না করলে তো তোমাকে আমি সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলতাম,,,যেটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়

ইশারা: আমি আপনাকে ভালবাসি না [ ইশারায় ]

প্রকাশ: তাতে আমার কিছু যায় আসে না,,,আমার ভালবাসাই এনাফ আমাদের সম্পর্কে,,

ইশারা কিছু বুঝতে পারল না এবার তাই প্রকাশের মুখের দিকে চেয়ে রইলো আর প্রকাশ সেটা দেখে মুচকি হেসে একটা পেপার নিয়ে এলো ইশারার কাছে আর বললো,,

প্রকাশ: সই করো এখানে [ আঙুল দিয়ে সই করার জায়গা দেখিয়ে ]

ইশারা ভালো করে কাগজ টা দেখতেই দেখতেই পেলো রেজিস্ট্রি পেপার,,,এর মানে প্রকাশ বিয়ে করতে বলছে ওকে,,,ও ততক্ষণাৎ বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় আর ইশারায় বলে,,

ইশারা: না আমি আপনাকে বিয়ে করবো না [হাত নাড়িয়ে ইশারায়]

প্রকাশ: বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে ইশারা তাও সেটা আমাকে,,,কি কমতি আছে আমার মধ্যে যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?? আমাকে এতটাই অপছন্দ তোমার যে তুমি ঐ মাঝবয়সি লোক টা বিয়ে করতে যাচ্ছিলে?? লিসেন কেয়ারফুলি ইশারা তুমি যদি আমাকে বাউট না করো তাহলে তোমার পুরো পরিবার কে আমি শেষ করে দেবো [ইশারার কাছে গিয়ে ওর বাহু ধরে]

ইশারা ধপ করে বেডে বসে পরলো,,,ইশারা কথা বলতে পারে না ইশারা করেই মানুষ কে কথা বোঝায় কিন্তু অনেকে তো বোঝে না তাই একটা খাতা পেন রাখে সব সময় নিজের কাছে যাতে ওটাতে লিখে বোঝাতে পারে,,,ইশারা জন্মগত বোবা নয় ইশারার যখন বয়স ১৪ তখন বাবা মায়ের অ্যাক্সিডেন্ট এর খবর শুনে শেষ একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় আর তারপর ডাক্তার বলে শকের কারণে এমনটা হয়েছে মেনে নিতে পারেনি ব্যাপার টা,,,ইশারা কথা না বলতে পারলেও কানে সব শুনতে পায় কিন্তু খুব বেশি জোরে সাউন্ড ওর কানের পক্ষে ক্ষতিকারক ডাক্তার বলেছেন তাই ইশারা কানে তুলো গুঁজে রাখে,,,আর সবার কথা মোটামুটি শুনতে ও পায়,,,

আজ প্রকাশের সব কথা ইশারা শুনতে পেয়েছে,,,ইশারা কি করবে বুঝতে পারছে না এখন যদি ইশারা বিয়ে না করে প্রকাশ কে তাহলে হয়তো প্রকাশ সত্যি ওর পরিবার কে মেরে ফেলবে,,,পরিবার বলতে শুধু ইশারার মামা মামি আর ওর নিজের ভাই,,,ইশারার ভাইয়ের বয়স ১২ বছর এখন আর ইশারার বয়স ২০,,,অনার্স শেষ বর্ষে পরছে ইশরা মামি এমনিতেই পড়তে দিতে চায় না ঘরের সব কাজ কর্ম দিয়ে কলেজ যেতে দেয়না আর সেই কারণেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল,,,আসল কারণ টা অবশ্য তা নয়,,,এর একটা অন্য কারন আছে,,,

প্রকাশ: সাইন করো ইশারা [ইশারার সামনে কাগজ টা রেখে]

ইশারা করুন চোখে প্রকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে পেন টা দিয়ে সাইন করে দিলো,,,প্রকাশ জানত ইশারা কে পরিবারের ভয় দেখালেই ইশারা রাজি হবে,,,ইশারার মামা-মামি যতই খারাপ হোক ইশারা ওদের খুব ভালোবাসে সেটা প্রকাশ ছাড়া ভালো কেউ জানে না [পরের পর্বগুলি তে বুঝতে পারবেন কারণ টা]

প্রকাশ কাগজ টা নিয়ে নিলো আর পাশের টেবিলে রেখে ইশারার দিকে ঝুঁকতে লাগলো বেডের উপর ভর করে ইশারা নড়াচড়া করছে না এক্ভবেই বসে আছে,,,কি বা করবে এখন তো প্রকাশের পুরো অধিকার আছে ইশারার উপর,,,প্রকাশ ইশারার কানের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে গেলো আর বললো

প্রকাশ: ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে ইশারা! আমি জানি তুমি আমায় পছন্দ করো না কিন্তু তুমি আমায় যতটা খারাপ ভাবো আমি ততটা খারাপ ও নই,,,তুমি কথা বলতে পারোনা এতে আমার কিছু যায় আসে না ইশারা তো করতে পারো! #ইশারায়_ভালোবাসার_প্রকাশ হবে আমাদের সম্পর্কে,,,

প্রকাশ কথা গুলো বলেই উঠে চলে গেলো পেপার টা নিয়ে আর দরজাটা লক করে দিতেই ইশারা দরজার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর প্রকাশ তা পাত্তা না দিয়েই ঘরে চলে গেলো,,,,

🌸 কিছুক্ষণ আগে ❤

ইশারা বিয়ের সাজে বসে রয়েছে নিজের ঘরে কিন্তু চোখ দিয়ে সমানে জল গড়িয়ে পরছে যার ফলে কাজল টা লেপ্টে গেছে,,,বেশী ভারী মেক আপ করেনি ইশারা সামান্য কয়েক টা হাল্কা গয়না পরেছে তাও সেগুলো সোনা নয় এমিটেশন এর,,,ইশারা কনের ভেসে বসে রয়েছে ঠিক সে সময় ওর মামা আর মামি ওর ঘরে প্রবেশ করলো

মামা: কি রে মা তুই এভাবে চোখের জল ফেলছিস কেনো?? (ইশারার মাথায় হাত দিয়ে)

ইশারা করুন চোখে মামার দিকে তাকালো আর মামা বললো,,

মামা: কষ্ট পাস না মা বিয়ে তো সব মেয়েরই একদিন না একদিন হয়

ইশান (ইশারার ভাই): এই বিয়েতে কেনো খুশি হবে আমার দিদিয়া,,,একটা বুড়ো লোকের সাথে কেনো বিয়ে দিচ্ছো তোমরা আমার দিদিয়া কে??

মামি: হাহ! বিয়ে না করলে তোর চিকিৎসা কে করাবে হ্যাঁ?? জানিস কতো খরচা হবে তোর অপারেশন করাতে?? ইশারা যদি গিরিশ বাবু কে বিয়ে করে তাহলে গিরিশ বাবু বলেছেন সব খরচ উনিই দেবেন,,তাই ইশারা বিয়ে করবে

ইশান: দরকার নেই অপারেশনের

ইশারা: ভাই তুই কষ্ট পাস না আমি ঠিক আছি [ইশারায়]

ইশান: কিন্তু…..

আত্মীয়: কনে কে ডাকছে গো বিয়ের জন্য

মামি: হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো যাচ্ছে

ইশারা কে নিয়ে গিয়ে বিয়ের আসরে বসিয়ে দিলো ওর মামি,,ইশারার পাশেই বসে রয়েছে ওর বর যার বয়স কিনা প্রায় ৫০ একবার বউ মরে গেছে এমনকি মেয়েও আছে একটা আর ইশারার বয়স এখন সবে ২০,,,ইশারা চুপচাপ নীচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,,,ওদের রেজিস্ট্রি হবে কোনো আচার আচরণ হবে না,,,উকিল এসে পড়েছেন অনেক আগে আর বরের সইও নেওয়া হয়ে গেছে বাকি এখন ইশারার সাইন,,,ইশারা যেই না পেন হাতে নিয়ে সই করতে যাবে তখনই বিকট এক শব্দ হলো,,,গুলি চলার শব্দ,,,সবাই তো ভয় পেয়ে গেছে ইশারা এবং সবাই সামনে তাকাতেই দেখলো,,

প্রকাশ হাতে একটা পিস্তল দিয়ে বাতাসে গুলি করে চোখ লাল আর চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে,,,ইশারার মামা-মামি প্রায় ভয় পেয়ে গেছেন প্রকাশের এমন রুপ দেখে,,,এলাকার সবাই জানে প্রকাশের রাগ কতটা ভয়ংকর তবুও সাহস করে ইশারার মামা বললো,,,,

মামা: এসব কি হচ্ছে?? এই বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে তুমি গুন্ডাগিরি কেনো করছো??

প্রকাশ কোনো কথা না বলে ইশারার কাছে চলে গেলো আর প্রকাশ এগোতেই ইশারার মামা-মামি পিছিয়ে গেলো কারণ প্রকাশের হাতে পিস্তল আছে,,,প্রকাশ গিয়ে ইশারার হাত ধরে ইশারা কে টেনে তুললো আর লোক তাকে বললো

প্রকাশ: আর কোনদিন যদি এই এলাকায় আপনাকে দেখেছি বা আপনার ছায়া আমার চোখে পরেছে তাহলে আপনি বেঁচে বাড়ি ফিরবেন না (দাঁতে দাঁত চেপে)

এই বলেই ইশারা কে সবার সামনে কোলে তুলে নিলো প্রকাশ আর ইশারা তো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে প্রকাশের দিকে,,,এদিকে ইশারার ভাই ইশান তো খুব আনন্দ করছে প্রকাশ কে দেখে,,,

প্রকাশ কে কেউ বাঁধা দিতে এলেই প্রকাশের সব লোকেরা সামনে চলে এলো আর কেউ কিছু বলতে পারলো না,,,প্রকাশ ইশারা কে গাড়িতে বসিয়ে সিধে নিজের ফার্ম হাউসে চলে এলো,,,

🌸 এখন ❤

প্রকাশ সিগারেটে টান দিচ্ছে আর বাতাসে ধোঁয়া ছাড়ছে,,,প্রকাশের চোখের কোণে জল জমেছে,,

প্রকাশ: ইশারা আমি জানি প্রথমে আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিনই একটা ভালো লাগা কাজ করেছে আর পরে তা ভালবাসায় পরিণত হয়েছে,,,আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি ইশারা,,,আমি যে বড্ড ভালোবাসার কাঙাল,,,

প্রকাশের চোখ থেকে টপ করে জল পরলো প্রকাশ সেটা মুছে সিগারেট টা ফেলে ইশারার ঘরের দিকে ইশারার জন্য খাবার নিয়ে হাঁটা ধরলো,,,প্রকাশ রূমের দরজা খুলতেই দেখলো ইশারা মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে কাঁদছে প্রকাশ কে দেখেই ইশারা মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো,,,প্রকাশ রূমের ভিতর এসে খাবার টা রাখলো সেন্টার টেবিলে আর ইশারা কে বললো,,

প্রকাশ: ইশারা খাবার টা খেয়ে নাও!!

ইশারা কোনো কথা না বলে প্রকাশ কে ধাক্কা দিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো,,,প্রকাশ রুমে ঢুকে দরজা টা লক করতে ভুলে গেছিল আর সেই ফাঁকেই ইশারা এমনটা করলো,,,

প্রকাশ: ইশারা!!!! (চিৎকার করে) পস্তাতে হবে তোমাকে এর জন্য!! তুমি কি ভাবছো এভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারবে তুমি আমর থেকে?? নাহহহহ!! কক্ষনো নাআআ!! তুমি শুধু আমার,,,তোমাকে নিজের তো আমি করেই ছাড়ব!!!
.

.
[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🥀]

আগের পর্বটি শুধুমাত্র সূচনা পর্ব ছিলো আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন 😇 কেমন হলো জানাবেন আর ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here