#ঋণশোধ
#পর্ব৫
#sadia_afrin_eva
আবেগ কয়েক সেকেন্ড পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিলো। তারপর হুস আসতেই নিজেকে সামলে নিলো। অথৈয়ের মনে হলো। ও যেটা চেয়েছে সেটাই ঘটেছে। তারমানে ঘায়েল করতে পারবে সহজেই, ব্যাপার টা মনে মনে ভেবে অথৈয়ের বেশ মজা লাগছিলো।
আবেগ নিজেকে সামলে নিয়ে অনন্যাকে ধমক দিয়ে বললো,
“ওকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিস কিসের জন্য? দেখছিস না কাজ করছি।”
অনন্যার হাসি হাসি মুখটা নিমেষেই কালো হয়ে গেলো। ও ভেবেছিলো ওর ভাই ভাবিকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকবে কিন্তু উল্টো ওকে ধমক দিয়ে দিলো। অথৈ দেখলেও অনন্যা ওই কিছু মুহূর্তের মুগ্ধ হয়ে তাকানো টা দেখতে পায়নি। ও ব্যাপার টা বুঝে উঠার আগেই খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়েছে। অনন্যা মুখ গোমড়া করেই অথৈকে নিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো। ওর ভাই এমন করে সবার সামনে ধমক দেয়াতে ওর মন খারাপ টা বেশি লাগলো। মনে মনে বললো, “ভাইয়া কি বোঝেনা আমি এখন আর সেই ছোটো অনন্যা নেই। সবার সামনে অপমান করলে এখন খুব গায়ে লাগে সেটা বুঝে না।”
আরও কিছুক্ষণ এমন মনমরা হয়ে ছিলো। অথৈ দেখে বুঝতে পারলো বেচারি শুধু শুধু বকা খেয়ে এমন গুম মেরে বসে ছিলো। তাই ওর মন ভালো করতে ওকে বললো,
“তুমি যা চাইছিলে সেটা কিন্তু পেরেছ”।
অনন্যা, অথৈয়ের কথার মানে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তখন অথৈ সেটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
” তুমি তোমার ভাইয়ের সামনে আমাকে নিয়ে তাকে চমকে দিতে চেয়েছিলে সেটা কিন্তু পেরেছ”
অথৈয়ের কথায় অনন্যা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, “সত্যি? কিন্তু তাহলে ওমন করেছে কেনো?”
“কারণ টা তোমার ভাই ই ভালো বলতে পারবে। আমরা শুধু ধারণা করতে পারি”।
” কি কারণ হতে পারে ভাবি?”
“সেটাই ভাবছি”
“ভাবো ভাবি ভাবো। ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে সেটা আমরা সবাই জানি তারপরও লুকাতে কেনো চাইছে!”
অথৈ মনে মনে বললো, “ভালোবাসে না ছাই বাসে। ওটা তো সাজ দেখে কাত হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা আমাকে বুঝতে দিতে চায়নি”।
কিন্তু অনন্যাকে বললো,
“সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম, তুমি খুঁজে বের করো।”
অনন্যা মুখ গোমরা করেই বললো, “আমি কি করে বের করবো?”
অথৈ অনন্যার গাল টিপে দিয়ে বললো,
” সেটা সময় হলে দেখা যাবে, আপাতত গোমরা মুখ টা হাসি মুখ করো”
অথৈয়ের কথা শুনে অনন্যা জোর করে মুখ টা হাসি হাসি বানালো। সেটা দেখে অথৈ বললো, “এমন মেকি হাসি হাসলে চলবে না, মন থেকে হাসো। সব ভাই ই তার বোনকে এমন করে বকে এটা কোনো ব্যাপার না। আমার ভাইয়াও একাজ করতো”
“তাই বলে পাব্লিক প্লেসে সবার সামনে?”
“ভাইগুলো এমন ই হয়। বোন কে এতই ছোট মনে করে যে কখন কোথায় দাঁড়িয়ে বকা দিলো তার হিসাব রাখে না।”
অনন্যা মুখ কালো করেই বললো, “আমার খুব অপমান ফিল হয়েছে।”
“অথৈ বললো চাইলে সেটার প্রতিশোধ নিতে পারো।”
অনন্যা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিভাবে?” তখন অথৈ কানে কানে কিছু একটা বললো সেটা শুনে অনন্যার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর অথৈকে জাপ্টে ধরে বললো, “থ্যাঙ্কিউ ভাবি, আইডিয়া জোস।”
অনন্যার কান্ড দেখে অথৈ হেসে ফেললো আর বললো, “যাক অবশেষে হাসি ফুটেছে মুখে”। অথৈয়ের এই কথা শুনে অনন্যা দাঁত বার করে দিলো সেটা দেখে অথৈও জোরে হেসে ফেললো। হাসিটা একটু বেশি জোরে হওয়ায় আশেপাশের কয়েকজন তাকালো। সেটা অথৈয়ের চোখে পড়তেই ওর হুস এলো যে ও নতুন বউ, আজ ওর বউভাত। ওর এভাবে হাসাটা চক্ষুশূল। তারাতাড়ি করে নিজেকে সামলে নিলো। আর অনন্যাকে বললো, “চলো মায়ের কাছে যাই”।
ওরা ভ্যেনুর বর কনের চেয়ারে বসে ছিলো। অনন্যা তখন অথৈয়ের কথার জবাবে বললো যে, ” না ভাবি তোমার এখান থেকে উঠা নিষেধ। মায়ের সঙ্গে কিছু বলতে চাইলে বলো আমি মাকে ডেকে আনছি।”
অথৈ এমনিই এখান থেকে সরে যেতে চাইছিলো বলে বলেছিলো। শাশুড়ীর সঙ্গে বলার মতো কোনো কথা নেই। তাই অনন্যাকে বারণ করে দিলো।
সারাক্ষণ অনুষ্ঠানের পুরো সময়টাতে আবেগ আর অথৈয়ের দিকে একবারও তাকায় নি। আর অনন্যাকে অথৈ যে বুদ্ধি দিয়েছিলো সেটার কথা ভেবে ও খুশিতে টগবগ করছে। আর অথৈয়ের এভাবে টানা বসে থেকে থেকে আর আত্নীয় স্বজন সামনে এলে প্লাস্টিকের হাসি দিতে দিতে প্রচুর বিরক্ত লাগছিলো। মনে মনে চাইছিলো ওখান থেকে উঠে চলে যায়।
অথৈয়ের বাড়ি থেকে যখন ওর বাবা-মা, বোন -দুলাভাই এলো তখন মনে মনে বললো, “এইতো এসেছে আমার শত্রুপক্ষ।”
যখন ওর বোন এসে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছিস? বাসররাত কেমন কাটালি।” তখন অথৈ বাটালি হাসি দিয়ে বললো, “দূরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছিস কেনো কাছে আয়।” যখন কাছে এসে দাড়ালো তখন অথৈ ওর বোনের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে হাসিহাসি মুখেই ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো, “আমি তোর কোন জন্মের শত্রু ছিলাম রে?”
হাতটা বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে ওর বোন ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে বললো, “আহ! লাগছে তো এতজোরে ধরছিস কেন! কি হইছে তোর?”
“লাগছে, না? আমি তো পারলে তোকে মেরেই ফেলতাম”
“কি হইছে তোর? এমন বিহেভ করছিস কেন”
“এখান থেকে না উঠে, না কিছু বলতে পারছি না কিছু করতে”
” আচ্ছা আচ্ছা পরে বলিস আপাতত আমার হাত টা তো ছাড়! ছিড়ে যাচ্ছে তো”
অথৈ ঝটকা দিয়ে হাত টা ছেড়ে দিলো। ওর বোন ব্যাথার জায়গা টা ধরে ডলতে ডলতে বললো, “তোর হাতে এত জোর কোথা থেকে এলো”।
অথৈ একটু ভাব নিয়ে বললো,
“মনের জোর থাকলে হাতের জোরও বাড়ে। যার মনে যত বেশি জোর তার হাতে তত বেশি জোর।”
“বাবা! অথৈ এসব কোথা থেকে শিখছিস। দুদিনেই তোকে এত বদলে দিলো। মাইরি কি ভালোবাসা রে তোদের।”
অথৈ ওর বোনের এই কথা শুনে তার পায়ে বেশ জোরে একটা পারা দিলো। তখন অথৈয়ের বোন বললো,
“তুই একটা আস্ত হস্তিনী হয়ে গেছিস রে অথৈ আরেকটু সময় তোর কাছে থাকলে তো তুই আমাকে মেরে ই ফেলবি”।
” হ্যাঁ। মেরে ফেলার আগে যা ভাগ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি এখানে আর এক মুহূর্ত দাড়াবো না।” বলেই মায়ের কাছে চলে গেলো।
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে অথৈ বাবা মা র সঙ্গে গেল। আবেগ বললো এদিকের কাজ গুছিয়ে সেও আসবে। সবাই বলছিলো আবেগের কাজ শেষ হলে একসঙ্গে ই যাবে। কিন্তু আবেগ রাজি হলো না বললো চলে যেতে। অথৈয়ের দুলাভাই যেহেতু আবেগ এর কাজিন তাই সে থাকতে চাইলো ওকে সাহায্য করতে কিন্তু তাকেও থাকতে দেয় নি । তাই বাধ্য হয়ে ওকে রেখে সবাই চলে গেলো। যদিও নিয়ম থাকে বর-বউ একসঙ্গে যায়। অথৈ বুঝতে পারলো কাজটা ইচ্ছে করে করেছে। আসলে আবেগ ওদের বাড়িতে যাবে না।
ভেন্যু থেকে বেরিয়ে সবাই গাড়িতে উঠলো, পিছনের সীটে অথৈ, ওর মা, ওর বোন আর বোনের কোলে তার ছেলে অন্তু উঠলো। সামনের সীটে অথৈয়ের বাবা। দুলাভাই পিছনের অংশে চেপে বসছে। অন্তুকেও দিতে চাইলো কিন্তু অন্তু যায়নি। অথৈ সেই গাড়িতে বসেই ওর বোনের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলো। হঠাৎ করে অন্ধকারে আচমকা চিমটি টা কাটায় অথৈয়ের বোন অন্যকিছু ভেবে বিকট একটা চিৎকার দিলো,
আর
“সাপ সাপ আমাকে সাপে কামড়েছে, ওমা গো ভাভা গো”। বলেই চিৎকার করতে থাকলো।
#ঋণশোধ
#পর্ব৬
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
“গাড়ি থামাও আমাকে সাপে কামড়েছে”।
” কি বলছিস গাড়ির মধ্যে সাপ কই থেকে আসবে”
“আমি কি জানি আম্মা । এই এই গাড়িটা থামাও না, মরে যাবো তো”
অথৈয়ের ভীষণ হাসি পেলো। অথৈ জানে ওর বোন সাপে ভীষণ ভয় পায়। তাই এমন ভাবে শিরশির করে আঙুল দিয়ে তার পায়ে চিমটি টা মেরেছে সেটাতেই সে এত ভরকে গেছে। তারপর আবার চলন্ত গাড়িতে কাজটা করায় ধরতে পারেনি। ওর বোনের চিৎকারে গাড়ি টা থামাতে বাধ্য হলো। গাড়ির মধ্যে লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে অন্তুকে সরিয়ে দিয়ে পা চেক করে দেখছিলো। ভালো করে দেখতে পারছিলো না বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে চেক করতে লাগলো আর সাথে গুন গুন আওয়াজে কান্না করতে লাগলো।
অথৈ তো মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে সাথে ৫ বছরের অন্তুও তার মায়ের কান্ড দেখে হেসে ফেললো। অথৈয়ের বাবা গাড়ি থেকে নেমে ওর বোন কে একটা ধমক দিয়ে বললেন,
“কোথায় তোমার সাপ! গাড়িতে আর কাউকে না কামড়ে তোমাকে ই কামড়ালো কেনো, কই দেখি পা দেখাও”
অন্তুর বাবাও বের হয়ে গেছে গাড়ি থেকে। সবাই বের হয়ে একটা জটলার মতো ঘিরে ধরে কামড় খুঁজলো, পেলো না। পিচ্চি অন্তুর সামনে তার মা আবার একটা ধমক খেলো। বাসায় পৌঁছে অথৈ নিজের রুমে ঢুকে ই একা একা হাসতে লাগলো।
অথৈয়ের হাসি শুনে অন্তু এসে বললো,
“খায়ামনি(খালামনি)আমি দেকতি তুমি আম্মুকে মেরেথো”
“হা হা হা তুই সেটা দেখে ফেলছিস?”
“হা দেকেতি তো”
” হ্যাঁ তোর মা বড্ড জব্দ হয়েছে। বহুদিন পরে বাবার ধমক খেলো”
“তুমি মা কে মাললে কেনো?”
“তোর মা আমাকে নরকে পাঠিয়ে দিয়েছে দেখে আমি ওকে মেরেছি”
“নলক কি খায়ামনি?”
অন্তু এটা জিজ্ঞেস করার পরে অথৈ উত্তর দেয়ার আগেই অন্তুর মা এসে গেলো। শেষ কথা গুলো শুনতে পেয়েছে। তাই এসেই জিজ্ঞেস করলো,
“তুই আমাকে কি করছিলি? আর আমি তোকে নরকে কিভাবে পাঠালাম!”
” কেনো তোর দেওরের সাথে বিয়ে দিয়ে পাঠালি যে”
” ও তো তোকে ভালোবাসে। তোর ভালো ই তো চেয়েছি”
” ছাই বাসে আর তোরা সবাই মিলে ছাই চেয়েছিস আমার। কত বার বললাম আমি বিয়ে করবো না। তোরা কেউ আমার কথা শুনলি না। আর কি ছেলে রে বাবা আমার বাপটাকে অব্দি বশ করে ফেলছে।”
“ওই তোর কি মাথা টা গেছে?”
” আমার মাথা ঠিক ই আছে। আমি ভাবছি তোদের সবার মাথা একত্রে কিভাবে গেলো”
“কাহিনি কি খুলে বল তো”
“অন্তু বাবাই তুমি তোমার নানাই এর কাছে যাও তোমার খালামনি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলবে”
“আত্তা”
“এবার বল তো কি হয়েছে। এসব পাগলের মতো কি কথা বলছিস”
অথৈ সবটা ওর বোন কে খুলে বললো কিন্তু ওর বোন বিশ্বাস করলো না বললো,
“যা তা বলছিস এসব হতে ই পারে না। তুই বিয়ে করতে চাস নি আমরা জোর করেছি বলে এসব বানিয়ে বলছিস। কোনো মানুষ কাউকে কিভাবে বাথরুমে আটকে রাখতে পারে। আর ও তো জানতো তোর ফোবিয়া আছে। ও তোকে সত্যি ভালোবাসে আমি নিজের চোখে দেখেছি।”
অথৈ এর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ওর বোনের কথা শুনে। বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন অকারণে মিথ্যা কথা ও কেনো বলবে! এইটুকু বোঝেনা ওর বোন না-কি। অথৈ ঝাঝালো গলায় বললো,
“আমার কথা তোর মিথ্যা মনে হচ্ছে? আমি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছি? তুই আমাকে ছোট থেকে চিনিস, বানিয়ে বলা স্বভাব কিন্তু তোর ছিলো আমার না। আর যদি বানিয়ে বলার ইচ্ছেই থাকতো তাহলে আমি তোকে কেনো বলবো? ডায়রেক্ট বাবা-মা কে বললো। তোর মাথায় বুদ্ধি কোনোদিন হবে না। তুই তো বোকা, বোকা-ই , আম্মাটাও একটা বোকা দুইজন মিলে আমাকে নরকে ঠেলে দিলি। ছেলেটা কি করেছে তোদের কে আল্লাহ মালুম। আর কেনো করেছে সেটাও।”
অথৈয়ের কথা তে অনুর থেমে যেতে হলো। আসলে ই অথৈ ছোট থেকে ই সব সময় গুছিয়ে কথা বলে। বানিয়ে কথা বলতে একদম ই পারে না। যতবার বলতে গিয়েছে ধরা পরে গিয়েছে। আর ধরা পরে ই কেঁদে ফেলতো। কিন্তু অনু খুব সুন্দর করে বলতে পারতো এতটাই যে মিথ্যা কথা বলছে সেটা সামনের জন বুঝতে পারলেও তার ইচ্ছে করবে ওর কথা বিশ্বাস করতে। তাই নরম হয়ে বললো,
“ও সত্যি ই তোকে ভালোবাসে রে।”
“এই তুই থাম তো। ওর সাপোর্ট একদম করবি না।”
“সাপোর্ট না রে সত্যি বলছি। আর ও কেনো এই সব করতে যাবে তোর সাথে বল”
” এই কেনো টার উত্তর টাই তো আমি জানি না। এটাকেই আমার খুঁজে বের করতে হবে। আচ্ছা উনি দুলাভাইয়ের কেমন কাজিন?”
“ওর ফুফুর দেবরের ছেলে”
” খুব ঘনিষ্ঠ আত্নীয়? মানে রেগুলার যাওয়া আসা হয়?”
” না। অতটাও না, কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান বিয়ে, জন্মদিন এসবে দেখা হয় ব্যস্ত না থাকলে। ব্যস্ত থাকলে তো আর হয় না। যেমন আমাদের বিয়েতে আসেনি।”
“ওহ আচ্ছা”
“হ্যাঁ। শোন বোন তুই এসব উল্টো পালটা জিনিস মাথা থেকে বের করে দে। আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। মানিয়ে নিতে শিখ, আর আম্মা বা আব্বাকে কিছু বলিস না।”
বোনের কথা শুনে অথৈ তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে মেজাজ খারাপ লাগছে যে শুধু শুধু বলে কতটা সময় নষ্ট করে ফেলেছে। ওর বোন বিশ্বাস করলো না। মনে মনে আবেগ কে গালি দিয়ে বলল, কি পট্টি পড়িয়েছে কে জানে,আমার ফ্যামিলি এখন আমার কথা বিশ্বাস করেনা।” তবে বুঝতে পারছে যা করতে হবে একাই করতে হবে। কেউ নেই সাহায্য করার মতো। মনে মনে বলল, “লাগবেও না কাউকে, আমার টা আমি ই বুঝে নিতে পারবো”
ওরা বাসায় এসে পৌঁছেছিলো পৌনে আটটার দিকে,
রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আবেগে আসলো এসেই প্রথম এ মাফ চাইলো দেরি হওয়ার জন্য। আবেগ যখন এসেছে তখন সবাই খাচ্ছিলো। সবাই অপেক্ষা করছিলো আবেগের জন্য কিন্তু আসছে না দেখে অথৈ শিওর হয়ে গেলো যে আসবে না। তাই সবাই কে জোর করে খেতে বসালো। আর ঠিক তখনই আবেগ এলো। যেহেতু অথৈ ভেবেছে আসবে না, তারপর দেরি দেখে শিওর হয়ে গেলো তখন আসায় ও অবাক হলো। আবেগ যখন কথা বলছিলো তখন অথৈ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।আবেগের চোখে চোখ পড়ে গেলো কিন্তু অথৈ চোখ নিচে নামালো না ওর বদলে আবেগ অন্যদিকে তাকালো
হাত মুখ ধুয়ে আবেগও খেতে বসালো। প্রথমে খেতে চাইছিলো না। সবাই জোরাজোরি করছিলো কিন্তু আবেগ বলেছিলো পেট ভরে আছে খাবেনা। অথৈয়ের বাবা বললেন, অল্প কিছু খাও। তার সঙ্গে অথৈয়ের মা ও তাল মিলিয়েছেন। আবেগ এর এমন বারবার না বলা আর ওর বাবা-মা চাপাচাপি দেখে ওর মেজাজ খারাপ হলো ও বললো,
“উনি যখন খাবে না বলছেন তারপরও এত জোর কেনো করছো। জোর করে খাইয়ে মারবে না-কি?”
ওর মা তখন ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর এসব অলক্ষুণে কথা বলবি না”।
তখন আবেগ অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে ই চোখে চোখ রেখে বললো, ” আচ্ছা আন্টি দিন তবে অল্প দিবেন”
অথৈ বুঝতে পারলো কাজ টা ইচ্ছে করে করেছে। মনে মনে আবেগের চোদ্দগুষ্টি উদ্দার করলো। আবেগ যেন সেটা বুঝে ফেলেছে এমন ভাবেই মুচকি একটা হাসি দিলো।
খাওয়া শেষে অথৈকে আর আবেগকে রুমে যেতে বলে ওর বাবা-মা তাদের রুমে চলে গেলেন। আর আবেগ আসছে না দেখে অনুরা ১০ঃ৩০ এর দিকে চলে গেছিলো। আবেগ কে কল করেছিলো কিন্তু কল রিসিভ করছিলো না। তাই ধরে নিয়েছে আসবে না।
রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে অথৈ আবেগকে বললো,
“বাহ! ভালো ই খেলেন দেখছি। দেখে মনে হলো প্রফেশনাল খেলোয়াড়। এক্সপ্রেরিয়েন্স আছে কোথায় কি করলে কি রেজাল্ট আসে”।
অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ বিছানায় বসে জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে একটা বাঁকা হাসি দিলো।
সেটা দেখে অথৈ বললো,”যত ভালো ই খেলোয়ার হন এটা আমার বাড়ি আমার রুম এখানে আপনার কতৃত্ব চলবে না। আমি বিছানায় ঘুমাবো আপনি নিচে।” অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ বাঁকা হাসিটা বিস্তৃত করে বসা থেকে উঠে ওর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“তাই!”
অথৈ দরজার কাছ থেকে এগুতে এগুতে কথা গুলো বলছিলো আবেগকে এগুতে দেখে ও আবার পিছুতে লাগলো……..
চলবে
চলবে