ঋণশোধ পর্ব ৭+৮

#ঋণশোধ

#পর্ব৭

#writer:#Sadia_Afrin_Eva

অথৈ পিছিয়ে প্রায় আবার দরজার কাছাকাছি যখন চলে গেলো
তখন বাধা দিয়ে আবেগকে থামতে বললো,

“থামুন ১ মিনিট দাড়ান”

আবেগ থেমে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। অথৈ থামতে কেনো বললো সেটা বোঝার যেন চেষ্টা করছে। আবেগ কিছু বুঝে ওটার আগেই পাশ কাটিয়ে দৌড়ে বিছানায় শুয়ে গেল। আচমকা এমন কিছু করবে সেটা আবেগ বুঝতে পারেনি।
কয়েক মুহূর্তের জন্য বেচারা আহাম্মক হয়ে গেছে।

অথৈ শুয়েই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে মনে মনে হাসলো। আবেগ নিশ্চয়ই ভেবেছি সে এগিয়ে যাবে আর পিছিয়ে পিছিয়ে দরজার সাথে মিশে যাবে। কিন্তু ওর সে আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিতে পেরে অথৈয়ের মজা লাগছিলো। আবেগ বিছানার পাশে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“এই কাজের মানে কি?”
অথৈ যেন ঘুমিয়ে পড়েছে এমন ভাব নিয়েই চুপচাপ শুয়ে রইলো জবাব দিলো না। তখন আবেগ অথৈকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ও একটা ডাক এরও সাড়া দিলো না। আবেগ বুঝতে পারলো অথৈ ঘুমের ভান করে রয়েছে আর ইচ্ছে করেই জবাব দিচ্ছে না। এত তারাতাড়ি কেউ ঘুমাতে পারেনা, আর এটা অথৈয়ের বাবার বাড়ি দেখে কোনো ঝামেলা বাড়াতে চাইলো না। নাহলে এক্ষুণি টেনে নামাতো বিছানা থেকে, তবে মনে মনে ঠিক করে রাখলো এর শাস্তি সে অথৈকে দিবে ই।

পরদিন বিকেলেই ফিরে এলো। অথৈয়ের বাবা-মা আরেকটা দিন থাকতে বলেছিলেন কিন্তু আবেগ কিছুতেই রাজি হলো না। বললো অনেকদিন হয়ে গেছে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে আর থাকা সম্ভব না। আর আবেগ কোনো কিছু তে যখন “না” বলে তখন সেটা কে কেউ হ্যাঁ করতে পারে না। ভীষণ একরোখা ছেলে সে। তাই অথৈয়ের বাবা মা ও তেমন একটা চাপাচাপি না করে ছেড়ে দিলেন। অথৈয়ের মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। তার বড় মেয়ে তো তার কাছাকাছি ই থাকে কিন্তু ছোটো টা দূরে দেখে তার কান্না এসে গেল। যখন ইচ্ছে তখন তো আর দেখতে পাবে না।

বিয়ের দিনও কেঁদেছিলেন মেয়েটা শশুড়বাড়ি চলে যাচ্ছে সেজন্য, সেদিন অথৈও কেঁদেছিলো। কিন্তু আজকে আর কান্না এলো না বরং মায়ের কান্না দেখে বিরক্ত হলো মনে হলো ন্যাকা কান্না কাঁদছে।
ওকে তো দিয়েছে একটা জল্লাদের গলায় ঝুলিয়ে। কে জানে এখান থেকে গিয়ে ওর কি দশা হয়। আদোও বেঁচে থাকবে কি-না সেটাই তো জানে না।

আবেগদের বাসায় যেতে অথৈদের বাড়ি থেকে তিন ঘন্টা র মতো লাগে যদি না জ্যামে পড়ে। জ্যামে পড়লে ৫ ঘন্টাও লেগে যায়। বাসে করে ফিরছিলো কিন্তু বাস স্ট্যান্ড অব্দি যাওয়া আগেই বাস থেকে নেমে গেল। যেখানে নামলো সেখান থেকে বাসা প্রায় তিন মাইল দুরত্বে। অথৈ তখন আবেগকে জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে নামলেন কেনো?”

জবাবে আবেগ বললো, “আমার এখানে কাজ আছে সেজন্য নেমেছি তোমার কোনো সমস্যা?”

অথৈ ধীর আওয়াজে বললো, “আমার সমস্যা হলে তো আপনার ঈদ।”
অথৈ কি বললো সেটা আবেগ স্পষ্ট শুনতে পায় নি। তবে এটা বুঝতে পারছিলো কিছু একটা বলছে তাই জিজ্ঞেস করলো, “কি বললে?”
অথৈ জবাবে বললো, “কই কিছু না তো”।

” কিছু না হলেই ভালো। এবার চুপচাপ মুখ টা বন্ধ করে হাটো”

” আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য যেন মরে যাচ্ছি আমি”

” গুড। তোমার তো এত সহজে মরে গেলে চলবে না। সব হিসাব যে এখনও বাকি”

” মানে? কি বললেন”

” কিছু বলিনি, দয়া করে মুখ টা বন্ধ করে হাটো। ভরা রাস্তায় ঝামেলা শুরু করো না”

অথৈ হাটা থামিয়ে দিয়ে বলল,
“কিহ! আমি ঝামেলা করি? আর আপনি সাধু!”
আবেগ গলার আওয়াজ কড়া করে কড়া চোখে তাকিয়েই বললো, “তুমি কি চুপ করবে?”

অথৈ চুপ করে গেলো ঠিকই কিন্তু মনে মনে গালি দিতে ভুললো না। সাথে এটাও বললো,

“উনাকে যেনো আমি ভয় পাই, হুহ্! রাস্তায় দেখে কিছু বললাম না। বাসায় হলে দেখিয়ে দিতাম”

এভাবে ঝগড়া করতে করতে বাসার গলির কাছাকাছি চলে এলো তখন অথৈয়ের খেয়াল এলো যে আবেগ তো বলেছিলো কাজ আছে কিন্তু কোথাও তো যায় নি।
অথৈ থমকে দাঁড়িয়ে বললো,
“এই দাঁড়ান এক মিনিট”

অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ দাঁড়িয়ে বললো,
“কি সমস্যা তোমার?”

“আগে বলুন আপনার ঘটনা কি? আপনি না বললেন কাজ আছে বলে নেমেছেন!”

“হুম তো?”

“কই কোথাও তো থামিনি আমরা সোজা বাসার দিকেই চলে এসেছি। তাহলে আপনার কাজ?”
“এখন মুড নেই। পরে করলেও হবে। এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবো”

“মানে কি হ্যাঁ! আপনি মিথ্যা কথা বলে আমাকে এতটা রাস্তা হাঁটিয়ে আনলেন।
উফ পা টা ব্যাথা হয়ে গেলো”

“এটুকুই হেটেই হাপিয়ে গেছ? এ তো সবে শুরু!”

“কিহ”

” আস্তে আস্তে টের পাওয়া যাবে। এখন বাসায় চলো”

ওকে ইচ্ছে করে হাটিয়ে এনেছে শাস্তি দিতে সেটা বুঝে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো অথৈয়ের। মনে মনে বলল,
“আমি একবার চান্স পাই না। তারপর তোমাকে বুঝাবো মজা অথৈ কি চিজ। খারাপ বাজে লোক একটা। তোর মতো খারাপ আমি আর দেখিনি। আল্লাহ না করুক আর যেন দেখতেও না হয়। ”

গলি থেকে বাসায় যেতে ১০ মিনিটের মতো লাগে। কিন্তু এতখানি হেঁটে অথৈয়ের পায়ের অবস্থা এমন হলো তাতে এই ১০ মিনিট ওর কাজ ১০ ঘন্টা মনে হলো। অনেক কষ্ট করে ১৫ মিনিটে পৌছালো তাও জুতো হাতে। হাটতে হাটতে পায়ে ফোস্কা পরে গেছে। হাইহিল পরে এতটা রাস্তা হাটার অভ্যাস নেই ওর। তারপর আবার আবেগের সঙ্গে হেটে পারেনি প্রায় দৌড়ে দৌড়ে চলেছে সাথে। এজন্যও গালি খাওয়া মিস করেনি আবেগ। গালি খেয়ে পেট ভরার পদ্ধতি থাকলে অথৈয়ের গালিতে আবেগের পেট ভরে যেত।

কলিং বেলে চাপ টা আবেগ দিলো। আর দরজা খুলে দিলো অনন্যা। দরজা খুলে আবেগকে দেখেই একটা ভেঙচি দিলো। সেদিন এর পর তো আর কথা বা দেখা হয়নি। তাই সামনে দেখা মাত্রই ভেঙচি দিলো। আর আবেগ তো যেদিন বকা দিলো সেদিন ই ভুলে গেলো তাই অনন্যার এই ভেঙচি দেয়ার কারণ ধরতে পারলো না। আবেগ অনন্যাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে নিলো তখন অনন্যা অথৈকে দেখতে পেলো। দেখলো হাতে জুতো জোড়া নিয়ে ই খোড়াতে খোড়াতে আসছে। তখন অনন্যা জিজ্ঞেস করলো,
“একি ভাবি তোমার পায়ে কি হয়েছে। জুতো হাতে নিয়ে এভাবে হাটছো কেনো?”

“ও কিছু না। হাটার অভ্যাস নেই তো তাই আরকি”

“কেনো গলির কাছে থেকে বাসা অব্দি রিক্সায় করে আসো নি?”

মনে মনে বললো, কোথায় রিক্সা আর কোথায় গলি তোমার দজ্জাল ভাই তো আমাকে দিল্লি থেকে ই হাটিয়ে এনেছে। মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি আবেগ জবাব দিলো,
“তখন রাস্তায় রিক্সা পাইনি”।

অনন্যা যেনো আবেগের কথা শুনতেই পায়নি এমন একটা ভাব করে অথৈকে বললো,
“জানো ভাবি তোমাকে ভীষণ মিস করেছি।”

এটা শুনে আবেগ টিটক্যারির সুরে বললো,
“এহ! এসেছে দুই দিনও হয়নি এরমধ্যে মিস ও করছে। আজাইরা ঢং”।

অথৈ বা অনন্যা কেউই আবেগের কথাতে পাত্তা দিলো না। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো। অনন্যার কথার জবাবে জিজ্ঞেস করলো,

“সত্যি? সত্যি মিস করেছো”

“হ্যাঁ ভাবি সত্যি। এবার আসো ভিতর এ আসো”

” এই ময়লা পা নিয়ে আসবো?”

এটা শুনে আবেগ বললো, “খবরদার এই ময়লা পা নিয়ে আমার বাসায় আসবে না”।

অনন্যা বললো,
“১ মিনিট দাঁড়াও ভাবি আমি আসছি”

এটা বলেই ঘরের মধ্যে থেকে এক জোড়া জুতো এনে দিলো। সেটা পড়ে অথৈ বাথরুমে গিয়ে পা ধুয়ে ফেললো। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আবেগ সোফায় বসে পা নাচিয়ে টিভি দেখছে। এটা দেখে অথৈয়ের গা জ্বলে গেল। ” বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবেন উনি, মিথ্যাবাদি একটা”
অথৈয়ের ইচ্ছে করছিলো হয় গিয়ে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে নাহলে টিভি টা ভেঙে ফেলতে কিন্তু আপসোস এর কোনোটাই করতে পারছে না।
#ঋণশোধ
#পর্ব৮
#রাইটারঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
অথৈ গিয়ে শাশুড়ী মা এর সঙ্গে দেখা করলো। গিয়ে দেখলো তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। আবেগদের বাসা টা দোতলা। উপর তলায় বেডরুম দুটো আর নিচতলায়ও। ওর শাশুড়ী নিচতলার বেডরুমে থাকেন। অথৈ গিয়ে একটু দোটানায় পড়ে গেলো ঘুমিয়ে নাকি জেগে সেটা নিয়ে। ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে লাগলো। ভাবলো এমনিতে চোখ অন্ধ করে শুয়েও তো থাকতে পারেন তাই ছোট্ট করে একটা ডাক দিলো। যাতে যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে ডিস্টার্ব হবে না আর জেগে থাকলে সাড়া দিবে। অথৈ ডাক দিতেই তিনি চোখ মেললেন। অথৈকে দেখে বললেন,
“ওহ। এসেছো তোমরা, আমি একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। বয়স হয়েছে তো অল্পতেই হাপিয়ে উঠি। চলো তোমাদের কে খেতে দিই”।
অথৈ বাধা দিয়ে বলল,
” আপনার উঠতে হবে না মা। এখন থেকে সব কিছু আমি ই করতে চেষ্টা করবো। আর আপনি রেস্ট নিবেন।”
আর মনে মনে বলল,
“আপনার ছেলে তো আমাকে এনেছেও সেইজন্য”।

শাশুড়ী বাধা দিয়ে বলল,
“না না তুমি এখনও নতুন কিছু ই তো জানো না।”
“এভাবে নতুন ভাবলে আজীবন তাই থেকে যাবো পুরনো আর হবো না। আর আপনি নাহয় শিখিয়ে দিবেন যা পারিনা সেগুলো।”

অথৈয়ের কথা শুনে ওর শাশুড়ী হেসে ফেললেন। মনে মনে ভাবলেন, “মেয়েটাকে তো ব্যবহারে মিষ্টি মেয়েই মনে হয়। মনে ই হয়না এই মেয়ের জন্য কারোর জীবন নষ্ট হয়েছে।” ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠতে লাগলেন। এবারও অথৈ বাধা দিলো বললো,
“মা, মাত্রই এসেছি সবে আটটাই বাজে এত তারাতাড়ি খাব?, আপনি রেস্ট নিন। খাওয়ার সময় না হয় ডাকবো”।

অথৈয়ের শাশুড়ী মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন। অথৈ তার রুম থেকে বের হয়ে দেখলো আবেগ আগের মতো ই পা নাচিয়ে নাচিয়ে টিভি দেখছে। এবারএ ইচ্ছে করছিলো গলাটা টিপে ধরতে। কিন্তু কিছু না বলে উঠে গেলো দোতলায়। দোতলার দুই কর্ণারে দুটো রুম। একটা অনন্যার, একটা আবেগের। অথৈ অনন্যার রুমে গিয়ে দরজায় নক করলো। আগের বারের মতো আর হুট করে ডুকে গিয়ে চমকে দেয় নি। অথৈকে দেখে ই দাঁত বের করে হেসে দিলো আর বললো আসো ভাবি ভিতরে আসো। আজকে আর ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো না, আজকে অথৈ অনন্যাকে পড়ার টেবিলে পেলো। অনন্যা ইন্টারের স্টুডেন্ট সামনেই পরিক্ষা তাই পড়তে বসেছে। অথৈ রুমে ঢুকে বললো,

“আজকেও ডিস্টার্ব করে দিলাম না তো?”

“না না একদম না। সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুজে থাকতে ভালো লাগেনা। এখন তুমি এসেছো কিছুক্ষন তোমার সাথে গল্প করি।তারপর আবার পড়বো”

অথৈ হেসে বললো, “আচ্ছা”।

কিছুক্ষণ অনন্যার সঙ্গে গল্প করে আবার নিচতলায় গেলো। অনন্যাকে সাথে নিয়ে ই এলো কারণ এখনও অথৈ নতুন তাই কোথায় কি আছে ভালো করে কেনো একদম ই জানা নেই। অনন্যার সাহায্য নিয়ে খাবার গরম করে টেবিলে পরিবেশন করে শাশুড়ী কে ডাকতে গেলো। অনন্যাকে বললো যেন তার ভাইকে ডাকে। অনন্যা একটা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
” আমি পারবো না। তোমার জামাইকে তুমি ডাকো।”

“হাহাহা৷ আমার জামাইয়ের আগে সে তোমার ভাই কিন্তু”

“হোক গিয়ে তাও আমি ডাকতে পারবো না”

” আরে ডাকো ডাকো ভালোবেসে ডেকে এনে তারপর নাহয়…. ”.। এটুকু বলে অথৈ একটা চোখ টিপ দিলো। তখন অনন্যার মনে পড়লো অথৈয়ের দেয়া আইডিয়ার কথা। তার আগে মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে বললো, “এক্ষুণি ডেকে আনছি”।

অনন্যার কান্ড কারখানা দেখে অথৈয়ের মনে হয় মেয়েটা ভীষণ পাগলী টাইপের।

খেতে বসে অথৈ সবাইকে খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। শাশুড়ী বাধা দিয়ে বলেছিলো ওর করতে হবে না। তিনি ই করবেন। কিন্তু অথৈ বললো,

“এভাবে যদি সব কিছু তে বাধা দিতে থাকেন তাহলে আমি শিখবো কিভাবে?”

এরপর আর তিনি কিছু বললেন না। কিন্তু তার ছেলে বললো তার খাবার সে-ই বেরে খাবে। অথৈ যেনো তার কোনো বিষয় এ নাক না গলায়। অথৈ মনে মনে বলল,
“বয়েই গেছে, আমার এত ভালো নাকটা আমি তোর কাজ গলাতে যাবো”।
অনন্যা মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো,
” ঠিক আছে ভাইয়া কাল থেকে তোকে আমি বেরে খাওয়াবো।”

আবেগ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুই আমাকে বেরে খাওয়াবি?”

“হ্যাঁ রে ভাইয়া। ভাবি আমাকে আর মাকে খাওয়াবে আমি তোকে খাওয়াবো। এই যে নে আজকে থেকে ই খা”।

বলেই আবেগকে খাবার বেরে দিতে লাগলো। আবেগ এর একটু অবাক লাগলো কারণ ও ওর বোনকে ভালো করে চিনে। যার কাছে এক গ্লাস পানি চাইলে অব্দি দিতে চায় না। সে কিনা, খটকা লাগলো ভাবলো কোনো কাহিনি নিশ্চয়ই আছে। এত মিষ্টি করে কথাও তো বলে না। আর দিয়েছেও মিষ্টি টাই বেড়ে। তখন আবেগ বললো,

“এত ভালোবেসে খাওয়াচ্ছিস নে তুই এক চামচ পায়েস খা।”

কথা টা শুনে অনন্যার গলায় খাবার আটকে গেলো। খক খক করে কাশতে লাগলো। তখন আবেগও কোমল সুরে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে বোন? গলায় খাবার আটকে গেছে! এই নে পানি খা। তারপর মিষ্টি খা”

অনন্যা কাশতে কাশতেই বললো, “না না তু-তুই ই খা আমি খাবো না”

তখন আবেগ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তা বললে কি হয় বোন তুই এত ভালোবেসে খাওয়াচ্ছিস আর আমি তোকে ফেলে খাবো”।

অনন্যা নিরুপায় হয়ে অসহায় চোখে অথৈ এর দিকে তাকালো তখন অথৈ দ্রুত খাওয়ার জন্য ইশারা করলো যাতে আবেগ না দেখে ফেলে। বাধ্য হয়ে ওকে খেতে হলো।

মনোয়ারা বেগম চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলেন। ছেলেমেয়েদের মাঝখানে কথা তিনি খুব কম বলেন তাই জন্য চুপ করে রইলেন।

সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে অথৈ খেতে বসলো। আবেগ খেয়ে রুমে চলে গেছে। মনোয়ারা বেগম যাচ্ছিলেন না বলে অনন্যা অথৈকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছিলো না। তিনি চলে যেতে ই দৌড়ে এসে অথৈয়ের হাত ধরে টান দিয়ে বলল, ” ভাবিইই”।

আচমকা এমন করায় অথৈয়ের গলায় খাবার আটকে গেলো এবার ও কাশতে লাগলো। অনন্যা তখন পানি এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
“সরি সরি সরি। মাফ করে দাও আমি বুঝতে পারিনি। আসলে বেশি এক্সাইটেড ছিলাম তাই খেয়াল না করেই টান দিয়ে ফেলছি, সরি।”

অথৈ পানি পান করে স্বাভাবিক হয়ে বললো, “ইটস ওকে। আমি বুঝতে পারছি ইচ্ছে করে করোনি”।

মুখটা কালো করে বললো, “তাও তো করেছি। সরি”

“দূর পাগলী এতটুকু তে এত সরি বলতে নেই। স্বাভাবিক হও, কি জিজ্ঞেস করতে চাইছিলে

” পায়েস এ কিছু মিশাও নি?”

“না তো”

“তাহলে তখন যে দেখলাম কি যেনো ঢেলে মিশিয়ে নাড়ছিলে”

“হাহা। ওটা চিনি কম মনে হওয়াতে একটু চিনি বেশি দিয়েছিলাম”

“আমি তো ভেবেছিলাম ভাইয়াকে জব্দ করার ঔষধ”

অনন্যার গাল টা টিপে দিয়ে বলল, “ওটা তোমার কাজ আমার না। আর ভালো ই হলো যদি কিছু মেশাতাম তাহলে তো তুমি ধরা পরে যেতে”

“হ্যাঁ ঠিক। ভাগ্য ভালো নাহলে তো গিয়েছিলাম।”

“হ্যাঁ। এবার সত্যি সত্যি মিশানো হলে আর বুঝতে পারবে না।”

“এটা একদম ঠিক কথা বলছো ভাবি। আজকে প্রথম দিন দেখে চেক করেছে এরপর আর করবে না যখন তখন কাজ টা করবো। ব্যস কেল্লাফতে”

“হুম। আপাতত ভুলে যাও আর কিছু বলো না কখন শুনে ফেলে তার তো ঠিক ঠিকানা নেই।”

“ওকে ভাবি”

অথৈয়ের খাওয়া শেষ হলে দুজন একসাথে ই দোতলায় গেলো। ঘরে ঢুকে অথৈ দরজা বন্ধ করতেই আবেগ বলে উঠলো,
“এতক্ষণে আপনার আসার সময় হলো বুঝি পাটরাণি”

চলবে
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here