ঋণশোধ পর্ব ৯+১০

#ঋনশোধ
#পর্ব৯
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

অথৈ যেনো আবেগের কথা শুনতে পায় নি এমন একটা ভান করে বাথরুমে ঢুকে গেলো। ২০ মিনিট পর বাথরুমের দরজা খুলেই বের হতে নিতেই ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলো। দরজা সামনে আবেগ দাড়িয়ে ছিলো, এমন কিছু হবে সেটা তো অথৈ ভাবেনি তাই আচমকা সামনে কিছু একটার অস্তিত্ব দেখে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলো। এবং সেটা সামলে উঠে স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ পেলো না তার আগেই আবেগ ধরে ঘুরিয়ে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে হাতদুটো চেপে ধরলো।

আচমকা এমন আক্রমণে অথৈ ঘাবড়ে গেলো। পর পর এমনভাবে ঘটেছে যে কি ঘটছে বা কি ঘটতেছে সেটা ওর ব্রেন ক্যাচ করতে পারছিলো না। আবেগ অথৈয়ের হাত দুটো শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরলো তখন হাতে ব্যাথা অনুভব করে অথৈ “আহ” শব্দ করে উঠলো। আবেগ সেটাকে পাত্তাই দিলো না। আরও জোরে যেনো চেপে ধরা যায় সেই চেষ্টা করতে করতে বললো,

“এই দুই তিন দিন অনেক আরাম করেছো, অনেক শান্তি তে কাটিয়েছো। কি ভেবেছিলে? হাটিয়ে এনে শাস্তি দিয়েছি, বাথরুম পরিস্কার করতে বলেছি, ঘরের কাজ করতে বলেছি ব্যস এগুলো ই তোমার শাস্তি! এটাই ভেবেছো না?? এত ইজি শাস্তি দিবো এটা ভাবলে কি করে”

অথৈ আবেগের কথা বুঝতে না পেরে তাকিয়েই ছিলো। অথৈয়ের চাওনি উপেক্ষা করে বললো,
“তোমার কঠিন শাস্তির প্রথম ধাপ টা আজকের এই কঠিন ঠান্ডায় মেঝেতে শুয়েই কাটুক না। আমি এতটাও নির্দয় না যে বারান্দায় শুতে বলবো। এই যে ঘরের মেঝেতে শুবে তুমি। এ কয়েকদিন বেশ কায়দা করে বিছানায় ঘুমিয়েছো আজকে আর হচ্ছে না সেটা।”

“হাত ছাড়ুন”

“কেনো ব্যাথা করছে নাকি?”

” সেটা কি আপনার অজানা?”

” তোমার অনেক তেজ। অবশ্য আমার সাথে এসব চালাতে পারবে না। তোমার তেজ আমি বের করে দিবো”

“তেজ টা নাহয় পরে বের করবেন আপাতত আমাকে রুম থেকে বের করুন”

অথৈয়ের এই কথাতে কিভাবে জানি আবেগের হাত আলগা হয়ে গেলো। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিহ!”
অথৈ সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে আবেগের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজার কাছাকাছি চলে গেলো আর বললো,
“যা শুনলেন সেটাই বলেছি”।

কথা টা দরজার ছিটকিনি খুলতে খুলতে বলছিলো। বলা শেষ হলেই দরজার পাল্লা খুলে সোজা অনন্যার রুমের দিকে দৌড় দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আবেগ হতভম্ব হয়ে গেলো। এমন কিছু ঘটবে কল্পনাও করেনি। বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো তারপর ই মাথা গরম হয়ে গেলো।
আর দরজাতে একটা লাথি মেরে মনে মনে বলল,

“আবারও বেঁচে গেলো। এই মেয়েটা এত চালাক হবে ভাবি ই নি। এমন তো ছিলো না এত চেঞ্জ কিভাবে”

অথৈ দৌড়ে গিয়ে দ্রুত দ্রুত অনন্যার দরজা তে নক দিতে লাগলো পাছে না আবার আবেগ চলে আসে।
কিন্তু আবেগ তো আহাম্মক বনে গেছে দেখে আর পিছনে আসার কথা ভাবার সুযোগ পায়নি। তিনবার নক দিতেই অনন্যা দরজা খুলে বললো,
“একি ভাবি তুমি এখানে কি করছো? ভাইয়া কিছু করেছে।”
অনন্যাকে ঠেলে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“আগে ঢুকতে দাও তারপর শুনবে”
“ওকে”
“দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে এসো”

অনন্যা অথৈয়ের কথামতো দরজা বন্ধ করে এসে পাশে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে ভাবি এবার বলো”।

অথৈ মনে মনে ভাবলো সমস্যাটার বিষয় আপাতত কাউকে না জানানোই বেটার হবে। আর অনন্যা বাচ্চা মানুষ এসব কথা ওকে না বলাই ভালো। তাই জন্য লজ্জা পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে দু’হাতে মুখ ঢেকে বললো, “তোমার ভাইয়া….”। এটুকু বলে থামলো দেখে অনন্যা বললো,
” হ্যাঁ আমার ভাইয়া। কি করেছে?”

“বলতে লজ্জা লাগছে। যদি কিছু মনে না করো তাহলে আজকে তোমার কাছে থাকি?”

“আরে না, কি মনে করবো। বরং আমি তো আরও খুশি। তোমাকে আমার ভীষণ ভালোলাগে। ভাইয়ার চয়েস জোস”।

“হাহা তাই?”

“একদম”

“আচ্ছা চলো ঘুমাতে চলো”

“ভাবি একটা কথা বলি?”
কথাটা এমন মুখ করে বলেছে যেনো কোনো দোষ করে ফেলছে। অথৈ বললো, “কি কথা বলো”

“আসলে ভাবি আমার তেমন কোনো কাজিন বোন নেই। দুজন যারা আছে তারা অনেক বড় বিয়ে হয়ে গেছে দেশের বাইরে থাকে। ফ্রেন্ডসদের কাছে শুনি ওদের কাজিনদের সঙ্গে বা ওদের ছোট বোন বড়বোনদের সাথে ওরা রাত জেগে অনেক গল্প করে। তখন আমার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যেত। ভাবতাম ইস! আমারও যদি একটা কাজিন বা নিজের বোন থাকতো তাহলে আমার কথা গুলো ওদের সাথে শেয়ার করতে পারতাম। মজা করতে পারতাম। তুমি যেহেতু আমার সঙ্গে ঘুমাবে তাহলে আজকে আমরা একটু গল্প করি? তারপর ঘুমাবো, প্লিজ ভাবি।”

“আরে দূর বোকা মেয়ে প্লিজ বলার কি আছে। থাকবো ই যখন তখন গল্প করতে কি প্রব্লেম।
অবশ্যই গল্প করবো। শুধু আজকে না মাঝে মাঝে ই আমি এসে লুকিয়ে তোমার সাথে রাতে থাকবো আর গল্প করবো কেমন?”

অনন্যা খুশিতে টগবগ করে অথৈকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“থ্যাঙ্কিউ ভাবি। থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।”

অনন্যার এমন বাচ্চামি দেখে অথৈ হেসে ফেললো ওর নিজের কথা মনে পড়লো। একটা সময় এমন পাগলামি ও নিজেও তো করতো। আর এখন সেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আর এমন পাগলাটে স্বভাবগুলো নেই।

“আচ্ছা অনু শোনো”

“হ্যাঁ বলো ভাবি”

“আমি যে আজকে তোমার সাথে আছি এটা মাকে বোলো না কেমন? এরপরও যখন আসবো তখনও বলবে না”
“আচ্ছা ভাবি”।

আবেগ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো ভাবনা থেকে ফিরে যখন ঘরের বাইরে এলো আশেপাশে কোথাও অথৈকে খুঁজে পেলো না। সব যায়গাতে খুঁজে দেখলো পেলো না। অনন্যার রুমে যে যেতে পারে সেটা চট করে আর মাথায় আসেনি। যখন এলো তখন রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দুজনের কথা শুনতে পেলো। নক দিবে যখন ভাবছিলো সেই মুহূর্তে অনন্যার কথাগুলো শুনলো। যত যাই হোক আবেগ ওর বোনকে ভীষণ ভালোবাসে। নিজের ব্যস্ততার কারণে কখনও তেমন করে সময় দিতে পারে নি। অনন্যার যখন জন্ম হয় আবেগ ভীষণ খুশি ছিলো সারাক্ষণ অনন্যাকে নিয়েই খেলতে থাকতো। যখন থেকে বড় হতে লাগলো তখন থেকে বুঝতে লাগলো ভাইয়ের কেমন হওয়া উচিত। বাবার মতো ঢাল হওয়া উচিত, সমস্ত বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করা উচিত। তারপর হুট করে বাবা চলে গেলো। কাঁধে এসে পড়লো সংসারের দায়িত্ব বেড়ে গেলো ব্যস্ততা। সেটা ই বাধা হলো দুজনের ব্যস হয়ে গেছে দূরত্ব। তখন একদিকে লেখাপড়া একদিকে অফিস দুটোই একসাথে সামলাতে সামলাতে অনন্যাকে দেয়ার মতো সময় আর হয়ে উঠতো না। তারপর কেমন জানি খিটখিটে হয়ে গেলো সব কিছুতেই রেগে যেতো। অনন্যাকে সব কিছুতেই বকাবকি করতে লাগলো। তবে সেদিন, বৌভাতের দিন বকাবকি করে আবেগের ই খারাপ লেগেছে, এমন অকারণে অনন্যাকে ও কখনও বকে না। সেদিন অথৈয়ের জন্য বকা টা দিতে হয়েছে। তাই আজকে আর কিছু না করে রুমে ফিরে এলো। ভাবলো অথৈ যদি ওর সঙ্গে থাকলে ওর ভালো লাগে তাহলে থাক না একটুখানি।

রুমে ফিরে আসার মিনিট দশেক পর অথৈয়ের নাম্বার থেকে একটা এস,এম,এস এলো। এস,এম,এস টায় লেখা ছিলোঃ

” আমাকে শাস্তি দেয়া এত সহজ নয় মিস্টার আবেগ, দেখুন না আমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে আপনার ই শান্তি হারিয়ে যায়। সাবধানে, ওকে?”

আবেগ মেসেজ টা পড়ে মনে মনে বললো,

“সেটাতো একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছি পাটরানী। যতটা সহজ ভেবেছিলাম ততটা সহজ হচ্ছে না তোমাকে ঘায়েল করা। তবে ঘায়েল তুমি তো হবে ই হয় এভাবে নাহলে অন্যভাবে”
#ঋণশোধ
#পর্ব১০
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

সেদিন অথৈ অনেকরাত অব্দি অনন্যার সঙ্গে গল্প করলো। গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো দুজনের কেউই টের পায় নি। সকালের তীব্র আলো চোখে পড়লে অথৈয়ের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলো না কোথায় আছে। মনে পড়তে সময় লাগলো। কারণ অনন্যা আগেই উঠে গেছে। অথৈ উঠে যখন বসলো তখন অনন্যা বাথরুম থেকে বের হলো। বের হয়ে ই বললো,

“শুভ সকাল ভাবি।”

” শুভ সকাল। কখন উঠলে? আমাকে উঠাও নি কেনো?”

“তুমি আরামে ঘুমাচ্ছিলে তাই ডিস্টার্ব করিনি।”

“ক’টা বাজে?”

“সাড়ে সাত টা”

অথৈ বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে বললো,
“দেরী হয়ে গেছে”।

” কিসের দেরি ভাবি?”

” মা কে বলেছিলাম যে আমি নাস্তা বানাবো। মা তো আরও আগে উঠে যান। কি না কি ভাবছেন যাই তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নি”
” ওটা নিয়ে ভেবোনা মা তৈরি করেই ফেলবে তোমাকে কিছু করতে দিবে না। আর তাছাড়া খুব একটা দেরিও হয়নি। মা এই টাইম এ ই নাস্তা বানাতে শুরু করে আটটায় খেতে দেয়। ওইদিন তো বউভাত ছিলো ভেন্যুতে যাবে তাই সব কিছু তাড়াতাড়ি করছিলো”
“ওহ আচ্ছা। তাহলে তো ভালো, তুমি থাকো আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছি তুমিও এসো একটু পর”।
এটা বলেই অথৈ ওদের রুমের দিকে দৌড় দিলো।
সেটা দেখে অনন্যা বললো,
“ভাবি আস্তে যাও এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই”।

অথৈ দৌড়ে রুমে ঢুকেই শক্ত কিছু একটার সঙ্গে ধাক্কা খেলো। মুখ তুলে না তাকালে বুঝতোই না ওটা একটা মানুষ। ভেবেছিলো কোনো দেয়াল টেয়াল হবে। তো দেয়ালকে পাত্তা না দিয়ে যখন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো তখন দেয়ালটা ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এত তাড়া কিসের পাটরানী? কোন সুকাজে যাচ্ছেন?”
অথৈ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
“আপনার কথা শোনার চেষ্টাই তো করছি”

আবেগ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড তারপর বললো, “মানে?”

“আপনি ই তো বলেছিলেন আপনার মা যেন কাজ না করে সব কাজ যেনো আমি করি। সেটা করতেই যাবো বলে এত তাড়াহুড়ো করছি”

“আচ্ছা??”

“জ্বি হা। আমি মা কে বলেছিলাম আমি ই সব করবো কিন্তু উঠতে দেরি করে ফেলবো বুঝতে পারিনি। মা কি ভেবেছেন কে জানে।”

যখন শুনলো মায়ের ভাবনা নিয়ে ভেবে অথৈয়ের কেমন যেনো লাগছে। তখন ঠিক করলো ওর দেরি কে আরও বেশি দেরি করে দিতে তাই “ওহ আচ্ছা”
বলে হাত ছেড়ে দিলো অথৈ বাথরুমে ঢোকার পরে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো। অথৈ তাড়াহুড়ো করে ব্রাশ ট্রাশ করে যখন দরজা খুলে বের হতে গেল তখন টের পেলো দরজা বন্ধ। প্রথম কয়েক সেকেন্ড বুঝতে পারেনি কি ঘটেছে। বুঝতে পারার পর আবেগকে ডাকতে লাগলো। আবেগ বিছানার বসে বসে অফিসে জন্য রেডি হচ্ছিলো আর ওর ডাক শুনে যাচ্ছিলো। আটটা বাজার ঠিক ৫ মিনিট আগে দরজা খুলে দিয়ে বললো,
“আসুন পাটরানী খেতে যাই”

অথৈয়ের কেমন যে লাগছিলো সেটা শুধু ওই জানে।
কাউকে কথা দিয়ে সেটা না রাখতে পারলে ওর ভীষণ খারাপ লাগে। ভীষণ গিল্ট ফিল হয়। আবেগের দিকে তাকালো দেখলো আবেগ হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে ওর পিত্তি জ্বলে গেল। আবেগের বাড়ানো হাতটা ঠেলে সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। আবেগের সাথে কিছু বলার রুচি হচ্ছিলো না। নিচে গিয়ে দেখলো অনন্যা চেয়ারে বসে পা নাচিয়ে খাচ্ছে।
অথৈকে দেখেই বললো, “ওহ ভাবি এসেছ। বসো”

অথৈয়ের ইচ্ছে করছিলো মাটির সাথে মিশে যেতে।
শুধু যে শাশুড়িকে বলেছে সেটাও তো না অনন্যাকেও তো বলছে। ওই বা কি ভেবেছে। এসব ভাবতে ভাবতে আবেগও নিচে চলে এসেছে। খাবার টেবিল অব্দি যেতে যেতে অথৈয়ের গায়ে ধাক্কা দিয়ে গেল। অথৈয়ের ইচ্ছে করছিলো ওকে ল্যাং মেরে ফেলে দিতে কিন্তু অনেক কষ্টে ইচ্ছে টা দমন করলো। শাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে সরি বললো।
আর বললো কাল থেকে এমন যেনো আর না হয় সেই চেষ্টা করবে। অথৈয়ের শাশুড়ি মা হেসে জবাব দিয়ে বললো,
“এখনও তো তুমি নতুন তাই সময় নিয়ে করো সব। আমি তো তুমি আসার আগেও একাজ করতাম, এখনো করছি।”

অথৈয়ের খুব খারাপ লাগছিলো উনি কি ভেবেছেন।
তবে মনে মনে উনার ছেলেকে ধুয়ে দিলো। আর ঠিক করলো এর বদলা নিয়ে ই ছাড়বে। অসভ্য বাজে লোক একটা, এমন কি করছে অথৈ যেটা ওর ই মনে নেই আর উনার মনে আছে আর সেটার শাস্তি দিতে চাইছে। উনি যখন কিছু না বলে না আর অথৈকে শাস্তি দিতে চাইছে তাহলে ও ই বা কেনো চুপ করে থাকবে। তাই যা আবেগ দিবে অথৈও সেটা ফিরিয়ে দিবে। আবেগকে নাস্তা ওর মা ই দিলো। আর অথৈকে অনেক জোর জবরদস্তি করে ওর শাশুড়ী খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলেন। অথৈ বসতে চাইছিলো না কিন্তু অনেক জোর করলেন দেখে বাধ্য হয়ে বসলো কিন্তু ওই যে কথা রাখতে পারেনি তাই কেমন যেন লাগছিলো। আবেগ ওর দিকে আরচোখে তাকালো।

যেহেতু সামনা-সামনি বসা তাই অটো অথৈয়ের চোখও আবেগ এর দিক চলে গেলো। অথৈ মুখটা কঠিন করছে দেখে আবেগ মিটিমিটি হাসতে লাগলো। সেই হাসি দেখে আবারও অথৈয়ের পিত্তি জ্বলে গেল। আবেগের পায়ে একটা পাড়া দিলো গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে। আচমকা পায়ে পাড়া পেয়ে আবেগ ভরকে গেল। অবাক হয়ে অথৈয়ের দিকে তাকালো। অথৈ যেনো কিছু জানেই না এমন ভাব করে পরোটা চিবুতে লাগলো। আবেগ মনে মনে বললো, “এই মেয়ে তো বহুত ডেঞ্জারাস। ভুল করে অন্যকারো নিয়ে আসিনি তো। এই মেয়ে এমন কবে হলো”।

খাবার খেয়ে আবেগ অফিসে চলে গেলো, অনন্যা কলেজ চলে গেলো। বাসায় রইলো শাশুড়ী বউমা, তাই দুপুরের রান্না টা শাশুড়ি বউমা দুজন মিলে করলো। অনন্যা তিনটার দিকে কলেজ থেকে ফিরলো। অনন্যা ফিরে খেয়ে আবার কোচিং এ চলে গেলো। আবেগ অফিস থেকে ফিরল ৭ টায়।

অথৈ রুমে বসে বসে ভাবতে লাগলো কি করা যায়।
অথৈয়ের ভাবনার মধ্যে ই আবেগ রুমে এসে অথৈকে বসা দেখে বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো অথৈ ওভাবেই বসে আছে।
তখন এসে পানির ছিটে দিলো। আচমকা এমন করায় অথৈ লাফিয়ে উঠলো। তারপর তাকিয়ে দেখলো কে দিয়েছে। তখন জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কি আমাকে এক মুহূর্ত শান্তিতে থাকতে দেখতে পারেন না?”

আবেগ দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো, “না পারে না”।

অথৈ সেটা দেখে আবার বললো, ” তা পারবেন কেনো? আপনি তো মানুষের ভালো দেখতে পারেন না”

আবেগ তখন কাছে এসে হাতটা জোরে ধরে বললো, “একটু ভুল হয়েছে। ইডিট করে বলো আমি তোমার ভালো দেখতে পারিনা। তোমাকে শান্তিতে বসতে দেখলেও আমার গায়ে আগুন ধরে”

“কেনো ধরে? কি করেছি আমি? ”

” কি করেছো তুমি ই ভালো জানো”

“আমি জানলে আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম না-কি?”

“সেটাও তুমি জানো”

আবেগ অথৈয়ের ডান হাত ধরেছিলো। অথৈ ওর বাম হাত দিয়ে আবেগ এর হাতে জোরে একটা চিমটি দিলো। ডান হাতের চেয়ে ওর বাম হাতে জোর বেশি কাজেই আবেগ বেশ ভালো ব্যাথা পেলো। ব্যাথায় “উ” করে উঠে অথৈএর হাত ছেড়ে দিলো। অথৈ তখন ধাক্কা দিয়ে আবেগকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে রুম থেকে চলে গেলো। আবেগ আবারও বোকা বনে গেলো। যতবার ও কিছু করতে যাচ্ছে উল্টো ও ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here