#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#২০তম_পর্ব
রাত এগারোটা বাজে।এই মাত্র বাসায় এসেছে সে তাকে খুব বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে।আজ প্রায় এক মাস হলো ফিমার কোনো খোঁজ নেই। হঠাৎই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সেদিনের পর অভ্যাস বসত সে হসপিটালের পথে রওনা দেয়, কিন্তু মাঝপথেই মনে পরে সে তো চলে এসেছে,তাই আবার বাসায় চলে আসে। বিভিন্ন ব্যস্ততা নুহা আর মাহিরকে নিয়ে তার দিন গুলো চলে যায় ভালোই কিন্তু রাত হলেই অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করে সে। ফিমার শূন্যতা এমন কত রাতই তো তারা একসাথে জেগে কাটিয়েছে। চাইলেই কি সব ভোলা যায়।দুই দিন অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় কিন্তু তৃতীয় দিন আর পারে না।লোক দিয়ে ফিমার বাবার বাড়িতে খোঁজ লাগায় ফিমার নম্বার জোগাড় করার জন্য।সে ফোন দিয়ে তাকে বলবে মাহিরকে দেখে যেতে সুযোগে তার সাথে কথাও বলা যাবে।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো ফিমা তাদের সাথে থাকে না। তার বাবা মায়ের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই তার।তারা যতটুকু জানে ফিমা সম্ভবত চিটাগাং তার ভাইয়ের সাথে আছে। কিন্তু তার ঠিকানা তাদের জানা নেই।মাহিয়াত প্রচন্ড হতাশ হলো। পরের দিন গুলো ভালো কাটলেও রাত গুলো খুব মুমূর্ষু লাগতে লাগলো কোনো ভাবেই দু চোখের পাতা এক করতে পারে না।সবাই ঘুমিয়ে গেলেই মনের মধ্যে ফিমা নামক সত্তার উদয় হয়। নুহাও ইদানিং তাকে সময় দেয় না খুব ব্যাস্ত থাকে বাবুকে নিয়ে সারাদিন। তাই রাতে তার ঘুম সে নষ্ট করে না।নুহা পাশে থাকলে তার চাপা কষ্টটা বোধহয় কমে যেতো কিন্তু কিছু করার নেই তাই তার রাত গুলো পার করতে হয় ফিমার অগোচরে তোলা তার কিছু ছবি দিয়ে।
তবুও সে হাল ছাড়েনি অনেক কষ্টে প্রায় একমাস পর ফিমার ভইয়ের বর্তমান ঠিকানা জোগাড় করেছে সে। কিন্তু তার জন্য আরো বড় চমক অপেক্ষা করছিলো। সেখানে এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে জানতে পারে ফিমা এখন আর তার ভাইয়ের সাথে থাকে না। কিছুদিন আগেই সে অন্য কোথাও শিফ্ট হয়ে গেছে। কোথায় গেছে তা আর জানা যায়নি।এতো দিন নিজেকে সামলে রাখলেও আজ আর পারলো না সে।নুহা বাড়িতে নেই মাহিরকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে গেছে তার বাবার শরীর খুব একটা ভালো নেই তাই নুহা তার কাছে গিয়েছে।
তবে আজ নুহাকে তার দরকার ছিল খুব।সে কোনো ভাবেই শান্ত হতে পারছে না।ফিমার জন্য মনটা ছটফট করছে। তাকে এক নজর দেখার জন্য চোখটা তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। তার সাথে আগের মত সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে,তার জানতে ইচ্ছে করছে সে ঠিক আছে তো?নিজেকে সামলে নিয়েছে নাকি ভেঙ্গে পরেছে?সেই রাতে মাহিয়াত কান্না করলো কান্নার আওয়াজে আজমীন দৌড়ে এলো তার ঘরে।মা কে দেখে কষ্টগুলো যেনো আরো দলা পাকিয়ে উঠলো। মায়ের কোলে মাথা দিয়ে কষ্ট কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো,
ছেলের এমন কান্নার কারণ না জানলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে আজমীন।তাই আগে তাকে শান্ত হওয়ার সুযোগ দিলো।মাহিয়াতের কান্নার জোর কমে আসতেই আজমীন তাকে জিজ্ঞেস করলো,
—কি হয়েছে বাবু এমন বাচ্চাদের মত কান্না করছিস কেনো?ছেলে মানুষের কি এমন করে কাঁদতে হয় নাকি?কি হয়েছে বল আমাকে?
মাহিয়াত খুব কষ্টে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো,
—আমি আমি ফিমাকে খুঁজে পাচ্ছি না মা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।একমাস জাবৎ উনার কোনো খোঁজ খবর নেই।কোথায় আছে কেমন আছে কিছু জানতে পারছি না।আমি কি করবো মা তুমি বলো কি করলে কোথায় খুঁজলে তাকে পাবো?এক পলক দেখতে পারবো বলে দাও মা আমার কষ্ট হচ্ছে ভিশন কষ্ট হচ্ছে।
—কেনো কষ্ট হচ্ছে?আর কেনোই বা তুই ফিমাকে খুঁজছিস?কে হয় ও তোর।ও কেমন আছে কি করছে জেনে তুই কি করবি?ওকে দিয়ে তোর কি প্রয়োজন যে তুই ওর খবর জানতে চাচ্ছিস?
—প্রয়োজন নেই মা কোনো প্রয়োজন নেই আবার আছেও। আমি ঠিক মত ঘুমাতে পারি না বারবার ওনার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো মনে পরে যায়। ভিশন মিস করি ওনাকে। এটাকে কি ভালোবাসা বলে মা? একসাথে কি দুজন মানুষকে ভালোবাসা যায় বলো? নুহাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না।যে কোনো মূল্যে নুহাকে আমার প্রয়োজন আমার সাথে আমার পাশে সারাজীবনের জন্য প্রয়োজন আর ফিমা ওনাকে আমি আমার পাশে দেখতে না চাইলেও ওকে সুখে দেখতে চাই।আমি চাই উনি আমার সামনে থাকুক। উনার ভালো খারাপ সব কিছু জেনো আমি নিজের চোখে দেখতে পারি।কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে মা।আমি কেনো দোটানায় ভুগছি? এভাবে তো আমি নুহাকেও ঠকাচ্ছি।আমি তো এমন থাকতে চাই না মা কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারছি না মা।আমি কি করবো তুমিই বলে দাও।
বলে আবার কান্না করতে শুরু করলো তারপর দাঁত খিচে কান্না আটকে আবার বললো
—মা জানো শেষ দিন ফিমা বারবার বলছিলো তাকে ছেড়ে না দিতে। বাড়ির এক কোণে পারে থাকতে চাইছিলো কাজের লোক হয়ে থাকতে চাইছিলো ওনার চোখে যে কতটা মিনতি ছিলো তুমি দেখলে কখনো তাকে ফেরাতে পারতে না।আমি যে কষ্টে ওনাকে রিফিউজ করেছি শুধু আমি জানি। তুমিই বলো ওনাকে বাড়িতে রাখলে তো নুহা অনেক কষ্ট পেতো তাই না।আমি তো ওর কষ্টও সহ্য করতে পারতাম না,আর তা ছাড়া এখানে ওনাকে নিজের স্বার্থের জন্য আটকে কেনো রাখবো? ওনার সারাজীবন পরে আছে, সুন্দর একটা ভবিষ্যত আছে কি করে তা নষ্ট করবো? এমনিতেও তো কম ব্যবাহার করিনি আমরা তাকে।সবার যার যার মতো তাকে নিজের স্বর্সিথদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করেছে। প্রথমে তার বাবা-মা পরে তুমি আমি সবাই।
—তাইতো চলে যেতে দিয়েছি।আর আরো কারণ আছে আমি দিন দিন তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছিলাম। ভালো হয়েছে আমার থেকে আড়ালে চলে গেছে সে যদি আমার চোখের সামনে থাকতো তাহলে হয়তো এর পরিণাম খুব একটা ভালো হতো না। আর নুহা! নুহাকেই দেখো মেয়েটা বারবার কষ্ট পাচ্ছে আমাকে আর মাহিরকে হারানোর ভয়ে ওর আচরণ গুলো অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।আগে তো ও এমন ছিলো না।সব আমার জন্য হচ্ছে মা সব আমার জন্য।আমি সবার লাইফ নষ্ট করে দিচ্ছি।
আজমীন ও নিজের কষ্টকে চেপে রাখতে পারলো না হাউমাউ করে কান্নাকরে দিয়ে বললো,
—তোর কোনো দোষ নেই মাহি। তোর কোনো দোষ নেই। সব আমার জন্য হয়েছে।আমি নিজে তোদের তিন জনের জীবন নষ্ট করেছি। আজকে এই সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।বংশ রক্ষা করতে গিয়ে আমি সব সুখ শান্তি তছনছ করে দিয়েছি।আগে কিছু ছিলো আর না ছিল আমাদের সংসারে শান্তি ছিলো সুস্থ একটা পরিবার ছিলো। কিন্তু এখন কেউ ভালো নেই। আমার জেদ সবাইকে অস্বাভাবিক করে তুলেছে। আমাকে পারলে মাফ করে দিস বাবু।মাফ করে দিস,
বলে আজমীন বেগম কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেলেন।মাহিয়াতও উঠে পরলো এলোমেলো পায়ে বারান্দায় চলে গেলো,ফিমা ঠিক যে পাশটায় বসতো সেও সেখানে গিয়ে বসলো। চোখ বন্ধ করে তাকে অনুভব করার চেষ্টা করলো কিন্তু না তার কোনো অস্তিত্ব নেই এখানে। কিন্তু চোখে তার হাঁসি হাঁসি মুখটা ভেসে উঠছে।কানে তার কথা গুলো বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে তার অবদার,তার রাগ, অভিমান, অভিযোগ, আকুতি সব,মাহিয়াত আর সহ্য করতে পারলো না নিচের মাথা চেপে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
।
।
।
।
এর পর তাদের গল্প টা একেবারে সাধারণ, নুহার অস্বাভাবিক আচরণের জন্য তাকে সাইক্রেটিস্ট দেখানো হলো প্রচন্ড মানসিক চাপ ভালোবাসার মানুষগুলোকে হারানোর ভয় আর একাকিত্বের কারণে সে ধীরে ধীরে মানুসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে।তাই এই ভয় আর একাকিত্ব দূর করার জন্য তাকে প্রচুর সময় আর স্পেস দিতে হবে। মন আর মস্তিষ্ক থেকে সকল ধরনের চিন্তা দূর করতে হবে।
আর মাহিয়াতের মানুসিক অবস্থা ও খুব একটা ভালো না। তাই সে একটা লম্বা ছুটি নিলো।আর নুহার সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে লাগলো কিন্তু রাত হলেই তার অশান্তি শুরু হয়ে যায়। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো তাদের বাড়ি ছেড়ে দেয়ার আর নিজে দেশের বাইরে জব খুজার চেষ্টা চালিয়ে গেলো। ভালো কোয়ালিফিকেশন আর জব এক্সপেরিয়েন্স থাকার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই চিনের একটা কম্পানিতে তার চাকরি হয়ে গেলো। আর মাসখানেক এর মধ্যেই নুহা আর মাহির কে নিয়ে পারমানেন্টলি সেখানেই শিফট হয়ে গেল। আজমীনকেও সাথে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু সে তার দেশ ছেড়ে যেতে চায় না তাই সে তার মেয়ের কাছে চলে গেলো।
সেখানে গিয়ে নুহা কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করলো,সে বেশ শিক্ষিত আর মর্ডান হওয়ায় সেখানের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে বেশি সময় লাগলো না।প্রথম প্রথম নুহা অসুস্থ থাকায় খাবারের বেশ সমস্যা হয়েছিল কিন্তু তা কিছুদিনের মধ্যেই আবার ঠিক হয়ে যায়। আবার হাসি ভালোবাসা আর খুনসুটির মধ্যে দিয়ে তাদের দিন ভালোই চলছিলো আর তাদের ভালোবাসা কে আরো বেশি গাড় করেছে মাহির।
তার বসা, হামাগুড়ি দেয়া, হাটা আর বুদ্ধি মনে হয় বয়সের তুলনায় খুব বেশি ছিলো। কিন্তু একটাই সমস্যা তার এক বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও সে মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে নি।অথচ এই সময় বাচ্চারা মা,বাবা সহ নানান ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। এমনকি তারা আরো লক্ষ করে প্রচন্ড জোরে কোনো শব্দ হলে বা তা মুখে তার নাম নিলে সে কোনো রেসপন্স করে না কিন্তু ইশারা করার সাথে সাথে সেটা বুঝে নেয়।
তারা প্রথমে ভেবেছে হয়তো দেরি করে কথা বলবে। কিন্তু দের বছর হওয়ার পরও যখন কোনো পরিবর্তন হলো না তখন তারা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।আর তার সমস্যার কথা তুলে ধরলো।ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালো সে জন্ম গত শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী এটি নানান কারণে হয়ে থাকে জেনেটিক কারনে, পরিবেশের কারণে মায়ের অপুষ্টি, ভাইরাস জনিত সমস্যা করণে,আর ভুল ঔষধ সেবনের কারণেও হয়ে থাকে।এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে বাচ্চার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয় আবার গর্ভ অবস্থায় আঘাত পেলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ঘন ঘন খিঁচুনির কা্যণেও শিশুর শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।শিশু জন্মাবার পর পরই যদি সমস্যা চিহ্নিত করা যায় তাহলে শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।
কিন্তু তারা দেরি করে ফেলেছে যন্ত্রের সাহায্যেও এখন আর তার স্বাভাবিক হওয়ার চান্স খুব একটা নেই। অবশ্য এ সব কিছু চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণে হয়েছে।যেহেতু বাচ্চাটা প্রিমেচিউর আর জন্মের পূর্বে আঘাত পেয়েছে তাই তাদের উচিত ছিল সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা যে শিশু স্বাভাবিক আছে কিনা। কিন্তু তারা তা করে নি। জন্মের পর পর এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত থাকলে চিকিৎসা ও যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক করা যেত। এখনো তারা চেষ্টা করে দেখবে সব ঠিক করা যায় কিনা।
সেদিন চিকিৎসকের কথা শুনে নুহা অনেক ভেঙে পড়লো কিন্তু মাহিয়াত সামান্যও বিচলিত হয় নি।তারা তাদের সাধ্য মত চিকিৎসা করেছে কিন্তু লাভ হয়নি। অবশেষে তারা দুজনেই নিয়তি মেনে নিলো।আর মাহিয়াত মনে মনে হাসলো একেই বুঝি বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ যেই বাবা ডাক শোনার জন্য এত কিছু করলো আজ বাবা হয়েও সে বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত। অবশ্য কাউকে কষ্ট দিয়ে যে নিজে সুখি হওয়া যায় না তা আবার প্রমাণিত হলো।
ধীরে ধীরে মাহির বড় হতে লাগলো সে কথা বলতে না পারলেও সব দিক দিয়ে প্রচুর ফাস্ট। গেমিং, অ্যাথলেটিক, পড়ালেখা সব দিক দিয়েই ফাস্ট ছিলো।মাহিয়াত আর নুহার প্রচুর আদরের সন্তান সে।নুহা কখনো তাকে বুঝতে দেয়নি সে তার আসল মা না বা তার মধ্যে কোনো কমতি আছে তারা দুজনেই মাহিরকে প্রচুর সাপোর্ট করে।মাহির যখন হাসেঁ তাদের সব কষ্টে ম্যাজিকের মত গায়েব হয়ে যায়।নুহা তো সবসময়ই বলে মাহিরের হাঁসিতে জাদু আছে।মাহিয়াত কিছু বলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
তারা দেশ ছাড়ার চার বছর পর আজমীন মারা যায়।আর সৌভাগ্য বসত ফিমার সাথে তার দেখা হয়েছিল আর সে তার কাছে ক্ষমা ও চেয়েছে।ফিমা তাকে বলেছে সেসব কথা সে মনে রাখেনি।আর সে সবাইকে মাফ করে দিয়েছে।মাহিয়াত দেশে এসে আজমীন কে শেষ দেখা দেখতে পায়নি।আর ফিমা যে তার মায়ের কাছে এসেছিলো তা সে জানতে পেরেছিলো। কিন্তু তার কোন খোঁজ নেয়নি বরং অতি দ্রুততার সাথে আবার দেশ ছেড়েছে।
।
।
।
।
এর পর কেটে গেছে অনেক বছর মাহিরের বয়স এখন ১৭বছর কিছুদিন পর ১৮ তে পরবে।নুহা ঘুমিয়ে আছে আর মাহিয়াত অভ্যাস বসত তার ঘরের সাথে লাগোয়া খোলা বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে। কিছু কিছু অভ্যাস একবার লেগে গেলে আমৃত্যু যায় না।যেমন তার রাত জাগা ফিমা তো তাকে রাত জাগার সাথি করতে চেয়েছিল কিন্তু সে এখন তার রাত জাগার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার জীবনে রাতের একটা প্রহর শুধু ফিমার নামেই বরাদ্দ।
হ্যা শত চেষ্টা করেও তাকে ভুলতে পারিনি সে। কিছু কিছু মানুষ আছে যাকে আজীবন চাইলেও ভুলা যায় না ফিমা তাদেরই একজন। সারাদিন হাসি খুশি ব্যাস্ত মাহিয়াত নুহা আর মাহিরের হলেও। তার রাত টুকু শুধু ফিমার। ফোনের গোপন ফোল্ডারে অতি যত্নে রাখা ফিমার ছবি গুলোই তার সঙ্গি।কত কথা কত প্রশ্ন আর কত অভিযোগ তার সব বলে সে সেগুলোর সাথে। তার দুই তৃতীয়াংশই থাকে মাহিরের কথা আর বাকি টুকু তার না বলা কথা আর শত শত প্রশ্ন যার উত্তর হয়তো সে কোনো দিনও পাবে না।
আজও বেতিক্রম হয়নি নুহা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে বেলকুনিতে চলে গেলো।থাই লাগিয়ে পর্দা টেনে দিলো তারপর ফোনটা বের করে ফিমার ছবি সামনে আনলো ফিমা আকাশের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে কোনো আলো নেই চাঁদের আবছা আলোয় তার মুখ দেখা যাচ্ছে আর তার হাতের মুঠোয় মাহিয়াতের হাত,মাহিয়াত তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
—আজকেও আমার দিকে ফিরবেন না এতো অভিমান আপনার?বলুন তো আজ কত বছর আপনার দুই চোখ দেখি না! আচ্ছা যান তাকানো লাগবে না, বলুন তো কেমন আছেন? নিশ্চয়ই ভালো আছেন! বিশ্বাস করুন আমি সব সময় আপনার ভালো থাকার দোয়া করি। আমি মাহির নুহাও ভালো আছে শুধু আমার আপনার কথা খুব মনে পরে। দেখুন না আপনার কাছ থেকে পালানোর জন্য দেশে ছেড়ে আসলাম, নিজের বাড়ি ছেড়ে আসলাম, আপনার প্রিয় জায়গাটা ছেড়ে আসলাম কিন্তু আমি তো ভুলেই গেছি আপনি আমার সাথে মিশে আছেন,আপনার সন্তানের হাসিঁর সাথে মিশে আছেন, আকাশের সাথে মিশে আছেন ঐ চাঁদের মধ্যে লুকিয়ে আছেন।এতো কিছু থেকে আমি কিভাবে পালাবো বলুন তো?আর মাহিরের কথা কি বলবো ও যতবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসেঁ ততবার মনে হয় আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
—আচ্ছা আপনিও কি আমার মত বুড়ো হয়ে গেছেন না আগের মতই আছেন? আপনি কি আবার বিয়ে করেছেন?তাকে নিয়েও কি রাত বিরাতে এমন পাগলামি করেন?তার কোলে মাথা রেখে কি ঘুমান? তাকে কি খুব ভালোবাসেন যেমনটা আমাকে বাসতেন? আমার কথা কি আপনার মনে পরে না?আমাকে কি একটুও মিস করেন না?আমি আপনাকে অনেক মিস করি খুব দেখতে ইচ্ছে করে আপনাকে, আর কি কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না?
—আপনার জীবনে আমার অস্তত্ব আছে কিনা জানিনা কিন্তু আমার জীবনের একটা অংশ আপনি।আপনাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু ভুলতে পারিনি।কোনো দিনও পারবো না। আমার জীবনের রাত আপনি। হঠাৎ পিঠে কারো স্পর্শে মাহিয়াত ঘুরে তাকালো।তাকে দেখেই মাহিয়াত মুচকি হাসলো সে জানে কে এসেছে তার রাতগুলোর সাক্ষী যে সে,বুঝ হওয়ার পর থেকেই তার সাথে অনেক ভাব মাহিয়াতের। তার গোপন কষ্টের একমাত্র অংশীদার।মাহিয়াত তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস গুলো গোপনে রাখল হাত বাড়িয়ে দিলো তার দিকে,
ছেলে বাবার হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কিন্তু তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে না, সে জানে বাবা প্রত্যেক রাতে এখানেই থাকে,একা থাকে তার মধ্যে কিছু লুকানো কষ্ট আছে যা প্রকাশ করে রাতে। সে তার অন্য এক বাবাকে দেখে কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করে না কিসের এতো কষ্ট তার? কিন্তু তার মন বলে বাবা একদিন নিশ্চয়ই বলবে সব বলবে। ততদিন পর্যন্ত নাহয় না জানাই থাকুক সব।
সে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ইশারায় গান গাইতে বলে,বিনিময়ে মাহিয়াত হাসে।মাহির জানে সে কিছু শুনতে পারবে না কিন্তু বাবার কষ্টটা অনুভব করতে পারে তার গানের মধ্যে দিয়ে।মাহিয়াত গান ধরে মাহির তাকিয়ে থাকে তার বাবার মুখটার দিকে যেখানে রাত হলে হাজার কষ্ট ভির করে।অথচ সকালে তাকে চেনাই যায়না,
.
.
এই রাত তোমার আমার ।
ওই চাঁদ তোমার আমার ।
শুধু দু’জনের-
এই রাত শুধু যে গানের ।
এই ক্ষণ এ দু’টি প্রাণের ।
কুহূ কূজনের-
এই রাত তোমার আমার ।
ওই চাঁদ তোমার আমার ।
তুমি আছি আমি আছি তাই
অনুভবে তোমারে যে পাই
তুমি আছি আমি আছি তাই
অনুভবে তোমারে যে পাই
শুধু দু’জনের-
এই রাত তোমার আমার ।
ওই চাঁদ তোমার আমার ।
শুধু দু’জনের-
ইয়ে মানে ☺️চলবে আর কি😅 হি হি😆😆আর একটা পর্ব দেই ফিমার জীবনটাকে একটু গুছিয়ে দেই আর কি। কিছু মনে কইরেন না।আপনারা না চাইলে এহানোই খতম।