এই রাত তোমার আমার পর্ব ১৯

#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#১৯তম_পর্ব

দরজা খুলে ফিমাকে দেখে মাহিয়াত ভুত দেখার মত চমকে গেলো, তার বিশ্বাস হচ্ছে না ফিমা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার উপর সে আবার সাদা সেলোয়ার সুট পরেছে নাকে ছোট নাক ফুল আর হাতে চিকন চুড়ি।

একবার ভাবলো এটা ফিমা হতেই পারে না ফিমাতো হসপিটালে তার আরো দুদিন পর রিলিজ।আর গত কালও তাকে দেখে এসেছে।সে তো এখনো ভালো ভাবে সুস্থ হয়নি।এখনো কিছুটা দূর্বল।তাই ডাক্তার বলেছে আরো কিছুদিন থাকতে।

আসলে সে সবার অগোচরে রোজ একবার ফিমাকে দেখতে যায় তার খোঁজ খবর নেয়।এ কথা কেউ জানেনা।যদিও তার যাওয়া উচিত নয় কিন্তু কেনো যায় নিজেও বুঝতে পারে না।কাজ শেষ হলেই কিভাবে যেন সে একা একা আনমনেই ফিমার কাছে উপস্থিত হয়। তার কাছে মনে হয় তাকে দেখতে যাওয়ার জরুরি তাকে দেখতে হবে।নইলে মনের মধ্যে একটা খচখচানি রয়েই যায়।সে মনে করে যতদিন ফিমা হাসপাতালে আছে অন্তত ততদিন ফিমাকে দেখতে যাওয়া তার খোঁজ খবর নেয়া তার দায়িত্ব ‌। নুহাকেও এ কথা বলেনি সে কষ্ট পাবে তাই।আর ফিমার কাছ থেকেও কথাটা গোপন রেখেছে।

তাহলে কি ফিমা সব জেনে গেছে? এছাড়া তো তার আসার কথা নয়। সেদিন যেভাবে সে ফিমার সাথে কথা বলেছে আত্মসম্মান থাকলে সে আর কোনোদিন এমুখো হবে না।আর তাছাড়া ফিমা তো শাড়ি পরে সবসময়। এধরনের পোশাক পরে না। নিশ্চয়ই তার হ্যালুয়েশন হচ্ছে সারাদিন তার কথা ভেবে ভেবে মাথাটার সাথে সাথে চোখটাও বোধহয় গেছে।অন্যকাউকে ফিমা ভেবে নিচ্ছে।




আজ শুক্রবার ফিমা‌ জানতো আজ মাহিয়াত বাড়িতে থাকবে তাই আজই এসেছে কিছু জিনিস ফিরিয়ে দিতে আর তার বাচ্চাটাকে এক পলক দেখতে একটু বুকে জরিয়ে নিতে।যাকে প্রায় আট মাস গর্ভে রেখেছে তাকে একবার বুকে না নিয়ে কিভাবে শহর ছাড়বে?এত কঠোর সে হতে পারলো না।তাই তাকে একপলক দেখার জন্য ছুটে আসা।

আর মাহিয়াতকেও শেষ বারের মত দেখা। কিন্তু মাহিয়াতকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফিমা বিচলিত হয়ে গেলো।মাহিয়াতের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ফিমা হাত মুখের সামনে নিয়ে শব্দ করলো।মাহিয়াত নরেচরে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়ালো। তারপর আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,

—আপ আপনি ফিমা না?

মাহিয়াতকে এমন প্রশ্ন করতে দেখে ফিমা বোকা বনে গেলো।মাহিয়াত কি তাকে চিনতে পারছে না? তা না হলে সে কেনো তাকে জিজ্ঞেস করল সে ফিমা কিনা।এতো তাড়াতাড়ি তাকে ভুলে গেছে?সে নিজেকে সামলে নিয়ে বড়ই অবজ্ঞার সাথে উত্তর দিলো,
—এতো তারাতাড়ি ভুলে গেছেন? অবশ্য আমি মনে রাখার মত মানুষও নই।

ফিমার গলার আওয়াজ শুনে মাহিয়াত নিশ্চিত হয়ে গেলো এটাই ফিমা।সে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে।এ কয়েকদিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার চেহারা ফেকাশে হয়ে গেছে খানিকটা চিকন হয়ে গেছে চোখের চিনে কেমন দেবে গেছে।পেটের ফোলাও কমে গেছে এখন আর গলুমলু ভাবটা নেই। যে কেউ দেখলেই বলে দেবে সে অসুস্থ। কিন্তু চেহারার স্নিগ্ধ ভাবটা এখনো রয়েই গেছে।

মাহিয়াত আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ তাদের দেখছে কিনা। তার পর ফিমার হাত ধরে আড়ালে নিয়ে গিয়ে দাড়ায়‌ ফিমাও বিনা বাক্যে তার সাথে যায়,

—এখানে কেনো এসেছেন?

—আমার রাজপুত্র কে একটু এনে দেবেন?
ফিমার কন্ঠে মিনতি চোখে পানি স্পষ্ট।মাহিয়াতের তার কথা উপেক্ষা করার শক্তি নেই তবুও বললো,

—মাহিরকে দিয়ে আপনার কি কাজ? আপনি কি আমাদের চুক্তির কথা ভুলে গেছেন? সেখানে লিখা ছিলো ডিভোর্সের পর আপনার পথ আমার পথ আলাদা কেউ কাউকে চিনি না।আর না বাচ্চাকে নিজের বলে দাবি করতে পারবেন।তাহলে এখন এখানে এসে …

মাহিয়াতের কথা শেষ হওয়ার আগেই। ফিমা‌ তাকে আটকে দিলো,

—কিছুই ভুলিনি আমি কিচ্ছু ভুলিনি, আমার সবই মনে আছে। একবার শুধু দেখবো বিশ্বাস করুন আর কিছুই করবো না। একবার একটু নিয়ে আসুন আমি একটু ওকে ছুঁয়ে দেখবো আর কিছু না আর কোনো দিনই এমন আবদার নিয়ে আপনার কাছে আসবো না।এই শেষ। নিজেকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারিনি। প্লিজ আপনাকে আমি হাত জোর করে রিকোয়েস্ট করছি একবার শুধু বাচ্চাটাকে এনে দিন একটু আদর করতে দিন। একবার শুধু মাতৃত্বের স্বাদটা গ্রহণ করতে দিন তারপর আর জীবনেও এ মুখ আমি আপনাদের দেখাবো না।

ফিমা মাহিয়াতের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লো,

—দেখুন ফিমা আমার মনে হয় বাচ্চাকে না দেখাটাই আপনার জন্য ভালো হবে। একদিনের জন্য দেখে শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?আপনার আরো বেশি কষ্ট হবে।

—আমার কষ্ট নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনি শুধু এতটুকু উপকার করুন একটু দেখতে দিন আমি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো আপনার ঘরে যাব না কিন্তু না করবেন না।

—দেখুন…

আমি আপনার সামনে হাত জোড় করছি আমি অনেক দূরে চলে যাবো অনেক দূরে শুধু শেষ বারের মত বাচ্চাটাকে দেখতে দিন।

মাহিয়াত তাকে আর কি বলবে তার জানা নেই।এইটা তো সত্যিই যে ফিমা তার বাচ্চার জন্মদাত্রী তার তো এতটুকু হক আছেই।

কিন্তু চিন্তা এখানে নয় তার আসল চিন্তা হচ্ছে নুহা এখন বাড়িতে আছে ফিমাকে দেখলে উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে।কারণ মাহিরকে বাড়িতে আনার পর থেকেই সে তার একটু বেশিই রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। সারাদিন তাকে কোলে নিয়ে বসে থাকে,তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে।কথা বলতে থাকে।কেউ কোলে নিতে চাইলে সহজে দিতে চায় না‌ যদিও কেউ জোর করে তবে তাকে ভালোভাবে হাতমুখ ধুয়ে নিতে হয়। আবার বেশিক্ষণের জন্য দেয় না নানান বাহানায় নিজের কাছে নিয়ে নেয় দল ওর।সে নিজেও বাইরে থেকে এসে ফ্রেস হয়েও কোলে নিতে পারেনা‌।সে সারাদিন তাকে নিয়েই পরে থাকে ঘুমিয়ে গেলেও কোল ছাড়া করে না।আর মাহিয়াতকে দেখলেই শুধু একই প্রশ্ন বারবার করতে থাকে,”ও আমার ছেলে তাই না মাহি? আমি ওর মা।ওকে কেউ আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে না তো?”

মাহিয়াত তাকে আশ্বস্ত করে কিন্তু লাভ হয় না।সে বুঝতে পারে তার মনে ভয় ঢুকে গেছে আর এখন ফিমাকে দেখলে তা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে কিন্তু কি করবে সে? তার অনুরোধ ও তো ফেলতে পারছে না।মাহিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তার সাথেই কেনো এমন হলো তার একটা স্বাভাবিক সংসার থাকতে পারতো স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে পারতো।

মাহিয়াত ফিমাকে ঘরে বসতে বলে উপরে যায় ফিমা ঘরে ঢুকতে চায়নি মাহিয়াতই জোরাজুরি করে ঘরে বসতে বলেছে।বাইরে দাড় করিয়ে রাখাটা খারাপ দেখায়।ফিমা ডাইনিং রুমে বসে চারদিকে চোখ বুলায়।কত পরিচিত ছিল এই বাড়িটা, এইতো ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে কত রাত অপেক্ষা করছে মাহিয়াতের জন্য কত দিন একসাথে খেয়েছে, মাহিয়াত তাকে খাইয়ে দিয়েছে।এই সোফার বসে টিভি দেখে দেখে সময় কাটিয়েছে।এই সিড়ি দিয়ে কত বার উঠানামা করছে মাঝে মাঝে বিশেষ করে প্রেগন্সির সময় মাহিয়াত ধরে ধরে তাকে উপরে উঠিয়েছে নামিয়েছে। এ্যাকুরিয়ামের মাছ গুলোকে খাবার দিয়েছে।ফিমার চোখ ভিজে এলো আবার অতি দ্রুত তা আড়াল করে নিলো।সে অপেক্ষা করছে তার তার রাজপুত্রের জন্য তাকে একবার বুকে আগলে ধরার জন্য। তার পর চলে যাবে সব মায়ার বাঁধন ছেড়ে চিরদিনের জন্য।



‌।
—নুহা সোনা দরজা খুলো প্লিজ।এমন পাগলামি করে না।

—না খুলবো না আমি। তুমি বলেছো মাহির আমার সন্তান আর আমি ওর মা ও সবসময় আমার সাথে থাকবে তাহলে এখন তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছো কেনো?

নুহা ফিমাকে কোনো ভাবে ঘরে ঢুকতে দেখেছে।এক পলক দেখেই তাকে চিনে ফেলেছে কারণ হসপিটালে তাকে দুই একবার দেখেছিলো।সেই থেকেই সে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।তার ভয় হচ্ছে ফিমা তার বাচ্চাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে আসেনি তো?

—-কেউ তোমার সন্তান কে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে না নুহা। তুমি তো ওর মা কে ওকে নিতে আসবে? একটু বোঝার চেষ্টা করো মেয়েটা শুধু মাহিরকে একটু দেখতে চেয়েছে আর কিছু না।আমি তো ওর সাথে আছি কিছুক্ষণের জন্য ওকে দাও আমি নিজে ওকে নিয়ে আসবো।

—না না আমি আমার বাচ্চা কাউকে দিবো না।ও আমার বাচ্চা ছিনিয়ে নিতে এসেছে মাহি। তুমি বুঝতে পারছ না। তুমি ওকে নিয়ে গেলেই ঐ মেয়ে ওকে নিয়ে পালিয়ে যাবে।ও অবার কেনো এসেছে আমাদের জীবনে?আমরা শান্তিতে আছি তাই বলে ওর সহ্য হচ্ছে না।তুমি তুমি ওকে জিজ্ঞেস করো ও কি চায়?ওর আরো টাকা লাগলে ওকে দিয়ে তারাতাড়ি বিদায় করো।আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।

—নুহা জান তুমি দরজা খুলে একবার বেরিয়ে এসো।দেখো মেয়েটা অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে। শুধু বাচ্চাটাকে একপলক দেখবে বলে। অনেক কান্নাকাটিও করছে। দেখো তুমি বা আমি তো আর অস্বীকার করতে ‌পারবো না যে ফিমা মাহিরের জন্মদাত্রী তোমার যেমন ওর উপর মায়া ভালোবাসা আছে ফিমারও আছে। প্লিজ তুমি শান্ত হও তুমি বেরিয়ে এসে নিজে মাহিরকে নিয়ে যাও তবুও আজকে ওকে ফিরিয়ে দিও না। অনেক আশা নিয়ে এসেছে আমাদের কাছে। মেয়েটা কষ্ট পাবে, শেষ বারের মত দেখতে চাইছে। আজকের পর কোনোদিন আর এখানে আসবে না আমাকে প্রমিজ করেছে।

—আমি এতো কিছু শুনতে চাই না।ঐ মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক থাকতে পারে আমার নেই।ওর কষ্টে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি এক্ষন ঐ মেয়েকে বেরিয়ে যেতে বলো নয়তো নয়তো আম আমি আমিইই নিজেকে শেষ করে দেবো।হ্যা শেষ করে দেবো। বেড়িয়ে যেতে বলো, বেড়িয়ে যেতে বলোওও…

নুহার কথায় মাহিয়াত ঘাবড়ে গেলো। সত্যিই যদি সে উল্টো পাল্টা কিছু করে দেয় ইদানিং তার ব্যাবহার অন্য রকম হয়ে গেছে তাই তার উপর বিশ্বাস করা যায় না তাই আগে তাকে শান্ত করার চিন্তা করলো।ফিমাকে না হয় অন্য একদিন আসতে বলবে।

—নুহা রিলেক্স তুমি কিছু করবে না। ঠিক আছে তোমার বের হওয়ার দরকার নেই আমি ওকে বের করে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি নিজের কোনো ক্ষতি করো না।আমি এক্ষুনি বের করে দিচ্ছি। তুমি শান্ত হও কোথাও নেবো না মাহিরকে কোথাও না।তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো নুহা?

—হ্যা,

—ওকে তুমি কিছু করো না।আমি নিচে যাচ্ছি।

বলে সে নিচে নেমে এলো। কিন্তু একি ফিমা নেই কোথাও নেই। সে ভালো করে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো।এক পলক মায়ের ঘরে কিচেনে দেখলো কিন্তু নেই সে।হয়তো চলে গেছে। একদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেও সে চলে গেছে একটা ইচ্ছে অপুর্ণ রেখে, তার কাছে শেষ একটা আবদার করলো তাও রাখতে পারলো না ভেবেই আবার অপরাধ বোধ তাকে জেকে ধরলো।যাওয়ার সময় একবার বলেও গেলো না।তাহলে এখন তার সাথে যোগাযোগ কিভাবে করবে? আবার ভাবলো তার মায়ের বাড়িতে যেহেতু থাকবে নম্বর বের করতে বেশি বেগ পোহাতে হবে না।পরে এক সময় না হয় ফোন দিয়ে মাহিরকে দেখতে আসতে বলবে।

কিন্তু কেনো জানি তার মন তার কোনো বুঝই মানছে না।ফিমার এমন হঠাৎ চলে যাওয়ায় তার আফসোস হচ্ছে।সে কোনো রকম নিজেকে শান্ত করে উপরে চলে গেলো।ফিমার কথাগুলো হয়তো সে উপলব্ধি করতে পারে নি।নইলে সে বুঝত ফিমা অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।আর এটাই হয়তো ছিলো তাদের শেষ দেখা।




একবুক শূন্যতা আর হাহাকার নিয়ে ফিমা রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।ফাহিম এরই মধ্যে কয়েকবার ফোন দিয়ে দিয়েছে।মাহিয়াত আর নুহার প্রায় সব কথাই শুনেছে।সে চায় না তার জন্য আর কোনো ঝামেলা হোক।তাই মাহিয়াত কিছু বলার আগেই চলে এসেছে।সে পায়ে জোর পাচ্ছে না তাই ফুটপাতেই বসে পড়লো।মাথাটা কেমন জানি করছে, ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে,চোখে অন্ধকার দেখার আগেই দেখতে পেলো তার দা ভাইকে। সে দৌড়ে আসছে তার দিকে। তারপর আর কিছু মনে নেই।

পরে যখন চোখ খুললো সে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। পাশেই ফাহিম চোখ বন্ধ করে বসে আছে।সে তার হাতের উপর হাত রাখলো। সাথে সাথে সে চোখ খুললো,

—ঠিক আছিস তুই? কোথাও কষ্ট হচ্ছে ডাক্তার ডাক দেবো।

–না দা ভাই আমি ঠিক আছি। আমাদের ট্রেন কয়টায়?

—কিসের ট্রেন তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আজকে কোথাও যাচ্ছি না আমরা‌। একটু সুস্থ হ পরে যাবো।

—আমি তো এখন ঠিক আছি। শুধু শুধু দেরি করে লাভ কি? আমার এখানে দমবন্ধ হয়ে আসছে দা ভাই, আমাকে নিয়ে চলো।আর তাছাড়া তোমার চাকরিতেও সমস্যা হবে।

—সেসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।আর কথা কম বল। নিজের শরীরের এই অবস্থা আবার এতো দূর জার্নি করতে চাচ্ছে। বারবার নিষেধ করেছিলাম তোকে ঐ বাড়িতে যাওয়া লাগবে না। তারপরও গেলি দেখলি তো এবার কি হলো। শুধু শুধু আরো কষ্ট পেয়ে এলি।

—এসব কথা থাকনা।সব আমার ভাগ্যের দোষ। কপালে লেখা ছিলো তাই হয়েছে।আমি এগুলো আমার মনে রাখতে চাই না। তুমি শুধু আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।আমি আর কষ্ট পেতে চাই না।কেনই বা কষ্ট পাবো?এসব পাষাণ মনের মানুষের জন্য,আমি আর নিজেকে একা ভাববো না।এবার আমি চলবো আমার মতো।এবার থেকে কষ্ট পেয়ে পিছিয়ে যাবো না।এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে কিছু দিবে না,আমাকে আদায় করে নিতে হবে।এবার থেকে আমিও আদায় করে নিবো আমার প্রাপ্যটুকু। আমার প্রাপ্য সুখ সম্মান সব কিছু।

ফাহিম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। হাত গুলো শক্ত করে ধরলো।সে বুঝতে চাইছে সে সবসময় তার পাশে আছে।সে স্বীকার করে একমাত্র তার উদাসীনতার কারণে তার বোনের জীবনের আজ এই অবস্থা।সে যদি একজন দায়িত্বশীল ভাইয়ের মতো সব বিষয়ে জেনে বুঝে বোনকে বিয়ে দিতো। তাহলে তাকে আর কষ্ট পেতে হতো না।বাবা মায়ের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা করাটাই তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।



ফিমার জোরাজুরি তে সেদিন রাতেই তারা চিটাগাং রওনা দিলো।সিটের জায়গায় কেবিন বুক করলো যাতে ফিমার কোনো সমস্যা না হয়।ফাহিও তাদের সাথে আসতে চেয়েছিল কিন্তু বাবা-মা একা হয়ে যাবে তাই ফাহিম তাকে আনেনি। কিন্তু কিছুদিন পর নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিলো।

ট্রেনের জানায় মাথা রেখে নিজের অতীতকে ভুলে নতুন করে বাঁচার প্রতিজ্ঞা করলো ফিমা। এখান থেকে শুধু নিজের জন্য বাঁচবে। ভেঙ্গে পরলে চলবেনা। দুনিয়াতে নিজের পরিচয় গড়ে তুলবে। কিন্তু তবুও একটা পিছুটান রয়েই যাবে যা তাকে ক্ষনে ক্ষনে পোড়াবে। পেটের কাঁটা দাগটা তাকে বারবার মনে করিয়ে দিবে তার মাতৃত্বের কথা তবে সেটা তার দূর্বলতা হবে না বরং তার শক্তি হবে। এখান শুধু রাতের আঁধার কালিমা দূর করে নতুন সূর্যোদয়ের অপেক্ষা…

চলবে…

(মন থেকে কোনো লেখাই আসছিলো না। তবুও আন্দাজে লিখেছি।মনে মনে যেমনটা‌ চেয়েছিলাম তেমন হয়নি, আগামী কাল সকালে শেষ পর্ব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here