একই সুতোয় বাঁধা পর্ব ১১

#একই_সুতোয়_বাঁধা

পর্ব-১১

সপ্ত শীখা

পুষ্প হাঁপাতে হাঁপাতে দাদির কাছে এল। বাবা মা সকলেই আছেন। পেছন পেছন এল নীরাও…

— আব্বা ! দাদিকে কাল্কেই রিলিজ দিবেনা ?

— হু কাল্কেই দিবে।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পুষ্প। ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরে গেলে হয়। আর সায়নের মুখোমুখি হবে না। কি যে অস্বস্তি লাগে !

সকালে ডাক্তার এসে রিলিজের অর্ডার দিয়ে গেছেন। পুষ্প আর আছিয়া মিলে সব গোছগাছ সেরে নিয়েছেন। একটু পরে গাড়ি এলে রওনা হবে সবাই। অপেক্ষা না করে সবাই মিলে নাস্তা খেতে বসে গেল। খেতে খেতেই পুষ্পর মনে পড়তে লাগল সায়নের কথা। বেচারা অসুস্থ পড়ে আছে… কে জানে কি অবস্থা !

— আম্মা ! আমি একটু ঘুরে আসি ?

— হাসপাতালে তুই ঘুরার জাগা পাস কই ?

— আছে আম্মা… এই যাব আর আসব !

নিকাব টা বেঁধে নিয়ে ছুটতে ছুটতে উপরতলায় উঠে এল পুষ্প। সকাল বেলা… বেশিরভাগ রুগিই ঘুমে বিভোর। যারা জাগ্রত তারা রোগযন্ত্রণায় কাতর। পুষ্প সায়নের বেডের কাছে গেল। ঘুমাচ্ছে ও। সকালের আলো মুখের ওপর পড়ায় ঘুমের মধ্যেই মুখখানি কুঁচকে আছে। পুষ্পর চোখ জলে ভরে এসেছে। কতকাল পর কাছ থেকে দেখল ওকে ! একান্ত ভালবাসার মানুষটা কত দূরে সরে গেছে আজ…

— এই বোরকাওয়ালি ! হু আর ইউ ! এখানে কি চাই ?

পুষ্প চমকে চোখ মুছে ফিরে তাকাল। সাইকা এসেছে। পরনে ফিটিং একটা অফশোল্ডার টপ আর হাঁটু অব্দি স্কার্ট ।

— আমি… আমি…

— কে তুমি বল ? এখানে কি করছ ?

সাইকার চিলাচিল্লি তে সায়নের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আস্তে উঠে বসেছে ও। পাশে গতকালের সেই বোরকাওয়ালি কে দেখে বুঝতে বাকি থাকলনা কি হয়েছে এখানে। বিরক্ত স্বরে বলল…

— আহ সাইকা ! ঘুমুচ্ছিলাম আমি !

— সরি জান… কিন্তু এই মহিলা-

— সাইকা ! উনি কে জান ? উনিই তোমাকে এক্সিডেন্টের পর হসপিটালে নিয়ে গেছিলেন।

— সো হোয়াট ? এখানে তার কি কাজ ?

— ছি সাইকা !! ইয়ে…আপনি… এখানে কাজ আছে কোন ?

— না !

বলে পুষ্প এক ছুটে ওয়ার্ড ত্যাগ করল। অপমানিত হবার পরেও ওর মুখটা উজ্জ্বল। যাই হোক, আজ সায়নের দেখাতো পেল !

💛💛💛💛💛

বাড়ি আসার পর এক রাতে।

ঘুম আসছে না পুষ্পর। কোন রাতেই আসেনা হাসপাতাল থেকে আসবার পর থেকে। সায়নের করুণ অবস্থাটা নিজ চোখে দেখেছে ও। সাইকা ডাইনিবুড়ি সায়ন কে জীবিতই মেরে ফেলছে। আর সেদিনের ঘুমন্ত মুখটা… মরলেও কি ভুলতে পারবে পুষ্প !!

— অ দাদুমনি। ঘুমাও না ক্যান ?

— আসেনা ঘুম দাদি।

— আমি অসুস্থ হইছি… হাস্পাতাল ভর্তি হইছি… ঘুম আমার হারাম হউনের কথা। হইছেও কিসুডা… কিন্তু তর কি হইছে ? হাসপাতাল দিয়া আইসা থিকা দেখতাছি… ঘুমাস ই না !

— আসেনা যে দাদি !

— শুন মাইয়া… সত্য কইরা ক। তোর লগে সায়নের দেখা হইছে ?

পুষ্পর বুক কেঁপে উঠল একেবারে। ডিমলাইটের মলিন আলোয় দাদি দেখতে পেলেন শরীরের সব রক্ত যেন ওর মুখে ভর করেছে। লাল টুকটুকে মিষ্টি মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে… কি ভাল লাগছে দেখতে !

— হইছিল ?

— হু।

— কই ?

— একবার… যখন আব্বার সাথে ব্যাঙ্কে গেলাম… আর হাসপাতালে। জ্বরের জন্য ভর্তি ছিল… আজকে হয়ত রিলিজ দিবে।

— চিনছে তোরে ?

— 😢😢

— কান্দস ক্যান ? চিনবনা এইডাই ত স্বাভাবিক। নেকাব পইরা সামনে গেছছ নিশ্চই। ছাগল কুনহানের! পরিচয় দেস্নাই কেন অরে ? মাথায় তুইলা নাচত তরে…

— দাদি সে অন্য একজন কে ভালবাসে !

পুষ্পর কথা শুনে দাদি মূর্তির মত স্থির হয়ে গেলেন। একি শুনলেন ! তার নাতজামাই… তারই নাতনিকে রেখে অন্য মেয়ের পেছনে ঘুরছে !

পুষ্প অঝোরে কাঁদছে। দাদি জোর করে ওকে টেনে নিজের কোলে শুইয়ে মাথায় হাত বুলাতে শুরু করেছেন।

— দাদুমনি… অই মাইয়া কি সায়নের গালফেন ?

— দাদি গালফেন না গার্লফ্রেন্ড বলে। হু তাই। আর জানো কি যে শয়তান !

— মানে ?

পুষ্প সব খুলে বলল দাদিকে। মন কিছুটা হাল্কা হয়েছে ওর। দাদির কোলে মাথা রেখে মুখ গুজে পড়ে রইল অনেকক্ষন।

— পুষ্প !

— হুম।।

— আমরার ত সায়নের বাপরে একটা খবর দেওন দরকার। পোলাডা একে অসুস্থ তার উপর ডাইনিডার খপ্পরে পইড়া আছে…

— উহু। কোন দরকার নাই দাদি। এত যখন প্রেম একটু যন্ত্রনা ত সইতেই হবে !

— আরে এইডা প্রেমের যন্ত্রনা না ! এইডা নির্যাতন বুঝলি !

— আচ্ছা দাদি, আমি যে ওকে এত ইয়ে…

— ভালবাসছ। তারপরে ক ?

— হ্যাঁ ওই… আমার গুনাহ হচ্ছে না ?

— শুন দাদুমনি… সায়ন রে ভালবাসাডাই তোর সবচেতে বড় সোয়াবের কাজ বুজ্ঝস ? এইডা খালি মনে রাখবি… যেম্নেই হোক ওরে তর পাইতে হইব।

— দাদি ওর ভাগ্য যদি অন্য কারোর সাথে লেখা থাকে তাহলে ?

— অর ভাইগ্য তোর সাথে লিখা হইয়া গেসে বইন। তুই পড়াশুনা কইরা চাকরি বাকরি কর… লায়েক হ… কিন্তু এইডা মনে রাখিস যে অরে তোর পাইতেই হইব।

— দাদি তুমি এত্ত ভাল কেন ?

— আমি আমার সইয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম রে দাদুমনি… তরে আর সায়নেরে এক করমু।

— মানে… সায়নের দাদিজান ?

— হ। প্রতিজ্ঞা না রাইক্খা মরলে পরকালে আমারে অয় ছাড়ব নি ?

–🤣🤣

— ঘুমা সোনা। ঘুমা। আমি মাথা হাতায় দিতাসি।

— তুমি ঘুমাবানা ? শুয়ে পড়…

— ঘুম শেষরাইতে আইব আমার। তুই ঘুমা…

সূরা পড়ে নাতনির মাথায় ফু দিলেন বৃদ্ধা। ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে ততক্ষনে পুষ্প। বৃদ্ধা অবিশ্রান্ত ভাবে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন ওর। বাচ্চা মেয়েটা স্বামীকে স্বামী বলে জানেনা… তাতেই এত কষ্ট পাচ্ছে। জানলে আজ কি করত !

❤️❤️❤️❤️❤️

— হ্যাপি বার্থডে মা

— আব্বা ! আম্মা !

আজ পুষ্পর আঠার বছরের জন্মদিন। সক্কাল বেলা বাবামা শুভেচ্ছা । ফোনে নীরা আর অন্য বান্ধবিরা আগেই দিয়ে ফেলছে। কলেজ ও নেই। বেশ একটা রাজকন্যে রাজকন্যে ভাব হচ্ছে আজ পুষ্পর।

— পুষ্প ! এই পুষ্প !

— কি আম্মা ?

— তোর নামে পার্সেল আসছে। সাথে চিঠিও… কি এটা ?

— জানিনা… কে দিছে দেখনা ?।

— কই লিখা… আরে তোর সাদেক চাচা !

— কি পাঠাল চাচা ? খুল ত…

খুলল পুষ্পই। চিঠিটা প্রথমে। সংক্ষিপ্ত চিঠি। সারমর্ম হল পুষ্পের আঠারতম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সায়ন ওর জন্য গিফট পাঠিয়েছিল যা সাদেকুর রহমান এখানে পাঠাচ্ছেন।

সায়ন ! ও পুষ্পর জন্মদিন মনে রেখেছে ! আঠার তম জন্মদিন একটা স্পেশাল ব্যাপার এটা পুষ্প জানে… কিন্তু এতখানি ! সায়ন গিফট পাঠিয়েছে !!

[ গেস করেন সবাই… গিফট টা কি ? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here