একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব -০১+২+৩+৪

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ
লাবিবা_তানহা_লিজা
#Part_1+2+3+4

…ও আমার আল্লাহ গো ..মরে গেলাম গো ….ভেঙে সব গুড়া গুড়া হয়ে গেলো গো ..আমার কোমড়ে ফাটল ধরলো গো ..আমার আর বিয়ে হবে না গো ..কোমড় ভাঙা মেয়ে কেউ ঘরে নিবে না গো ..ব্যথায় মরে গেলাম গো …আমি আর বাচবো নাগো ..ও আম্মুনিগো আমায় ক্ষমা করো গো ..তুমি আর মেয়ে জামাইয়ের মুখ দেখতে পারবেনা গো ..😭😭
পেছন থেকে জেমি দৌড়ে এসে – খালামনি খালামনি কোথায় ব্যথা পেয়েছো ? উঠো উঠো ।
হাত ধরে টেনে তুলতে নিয়ে শক্তিতে না কুলাতে পেরে সেও ধপাস ।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এসে এক ধকম – hey little girl stop your non stop shout. দেখি কি হয়েছে ? কোথায় লেগেছে ? রাস্তার ভিতরে এইভাবে দৌড়াদৌড়ি করো কেনো fool girl ?😡
ধমক খেয়ে পিছিয়ে গিয়ে রসে ভরা টইটুম্বুর চোখে ভিতু ফেইস নিয়ে চুপসে গিয়ে তাকিয়ে থাকে । বড় পাপড়িসহ চোখের পাতা পড়তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে । উজ্জ্ল শ্যামা গায়ের রং । হালকা ঢেউ খেলানো এক গোছা লম্বা চুল ছড়িয়ে আছে কাধে পিঠে । মাথায় বিড়ালের কান ওয়ালা কিউট একটা round band . Yellow colour একটা round জামা পড়া । পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত black colour চুরি সেলোয়ার । হাতে একটা barbie doll . ভীষন মায়াবী এক জোড়া বড় বড় চোখ । সুন্দর একটা নাক, ছোট্ট একটা ঠোট । ঠোটের নিচে সুন্দর একটা কালো তিল।গুলুমুলু চেহারা। পুরোটা মিলিয়ে একটা doll মনে হয় বসে আছে। বাচ্চা ফেইসটা দেখেই প্রচুর মায়া হয়। ব্যথা পেয়েছে এটা সিউর ।
– উঠো দেখি হাটতে পারো নাকি?
জেমি হাত ধরে ঝাকিয়ে বলে উঠে – খালামনি উঠোনা …উঠতে পারো না তুমি ?
হাত ধরলে উঠে পড়ে দাড়িয়ে এক দুই তিন বলে তিনটা লাফ দিয়ে বলে – হি হি i am ok .কিচ্ছিকা নেহি হ সাকতা । ও আমার আল্লাহ .. লাভ ইউ উম্মাহহহহ😘😘। চল জেমি ।
– খালামনি তুমি না ব্যথা পেয়ে কাদলে এতোক্ষন ?(অবাক হয়ে )
– চুপ থাক। i am শক্তিশালী😎 । আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা☺ ।
এক দৌড়ে রাস্তা দিয়ে চলে যায় । একটু আগে রাস্তায় দৌড়া দৌড়ি করতে করতে হাত থেকে barbie dool পড়ে যায়। সেটা নিতে গিয়েই অল্প থেকেই তানভীর খানের car সাথে accident হয় না । পড়ে গিয়ে ব্যথা ঠাহর না করে ভয় পেয়ে shout করতে থাকে লাবিবা।
পরে দেখে ব্যথা করছেনা তাই লাফায় ।
এদিকে ভ্রু কুচকে এক ভ্রু আরের ভ্রু য়ের উপরে তুলে অবাক চোখে দেখে দৌড়ে যাওয়া লাবিবা আর জেমিকে দেখতে থাকে তানভীর । তানভীর খান- the most most most handsome, brilliant and active boy . এই এলাকার এমপি ফিরোজ খানের একমাত্র ছেলে । খান বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী ।
গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্জাসা করে – uncle, do you know this girls ? কে পিচ্চি দুটো ?
– বড় মেয়েটা হইলো মোল্লা বাড়ির মেয়ে । এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসমাইল মন্ডলের একমাত্র মেয়ে । ছেলেমানুষ বড্ড । ক্লাস এইটে পড়ে। আর ছোটটা হইলো সরকার বাড়ির মেয়ে । টনকী জোবেয়দা জব্বার হাই স্কুলের হেড টিচার মুক্তা মাষ্টারের মেয়ে । 4/5 এ পড়ে হয়তো । চেয়ারম্যানের ভাতিজিরে মুক্তা মাষ্টারের কাছে বিয়ে দিছে।
– ভালোই জানেন দেখছি ।
– হয়। এলাকার মানুষ এলাকার খোজ খবর তো জানতেই হয় । ছোট সাহেব আপনার দেড়ি হয়তাছে।
– oh, ok . চলেন।

ইস..সোহানা তোমার এই nonstop ফেস ফেস করা stop করবে please 🙏 . আমার ছেলেটা এসে যদি দেখে তোমার এই ফেস ফেস করা তাহলে তো আমার উপরেই এটোম বম টা ফেলবে । বলবে আমিই কিছু করেছি ।
-করেছো তো ।
– কি ?
– আমার ছেলেকে উপরে পাঠানোর যড়যন্ত্র। যখনি কোন গন্ডগোলের আবাশ পাও তখনি কেন আমার ছেলেকে নিয়ে আসো ? তুমি কি চাও আমার ছোট্ট ছেলেটা লোকের হাতে পরপারে চলে যাক আর আমি সন্তান শোক করি ?
– হা হা হা । তুমি ছেলেকে এখনো ছোট্ট ভাবো ? শোন ফিরোজ খানের একমাত্র ছেলে তানভীর খান কে কেউ ঘায়েল করতে পারে না । বিরোধী দলের ছেলেপুলে গুলো তানভীর খান এর কাছে হাতের মোয়া । ও একাই একশ জন কে ঘায়েল করতে পারে ।
মম ..পাপা..।
পেছন ঘুরে তাকায় সোহানা আর ফিরোজ । তানভীর কে বুকে জড়িয়ে পিঠে দু চড় দিয়ে বলে “মেরা বেটা” ।সোহানা এগিয়ে যায় ছেলের দিকে । বুকে জড়িয়ে নিয়ে অভিমানের স্বরে বলে – পাপা আসতে বললেই চলে আসতে হয় তাইনা ? বাপের সাথে রাজনীতি করার প্লেন করেছিস নাকি ? বিয়ে করিয়ে দিবো কিন্তু এই প্লেন করলে । বউ এলে দেখবি তখন মারামারির ভিতরে তোকে টেনেও নিয়ে যাওয়া যাবে না ।
সোহানাকে ছেড়ে তানভীর সোফায় বসে পা থেকে জুতো খুলতে খুলতে বলে
– মম , পাপা ডাকে বলে আসিনা ..কোন অসৎ দলের লিডার এমপি হয়ে সমাজের ক্ষতি যদি না করতে পারে তার জন্য সেই দলটাকে একটু সাইজ করতে আসি । আর আমার স্টাডির এখনো সিক্স ইয়ারস বাকি । ভিসা টা হয়ে গেলেই ফুস করে উডে একদম লন্ডন।
সোহানা আবার কাদতে শুরু করে । ফিরোজ ঝাঝিয়ে বলে – আবার তোমার ফেস ফেস করা শুরু হলো 😡
এদিকে তানভীর সোহানার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আজ সে দুই ধরনের কান্না দেখেছে ১.ভয়ে চিল্লানো কান্না ২. আবেগে ফেস ফেস করা কান্না । সোহানার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে
– পাপা, মম তো খুব সুন্দর করে কাদছে । সুন্দর লাগছে দেখতে । তুমি এইভাবে মমকে শুধু কাদাবে কেমন ?
ফিরোজের অবাকতার পালা 😯 । যে ছেলে মমকে কাদতে দেখেলেই পাপার উপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেয় সেই ছেলে বলছে কাদাতে ।
– তানভীর ……???
– really papa ,you look . Mom looks so pretty .
ফিরোজ খেয়াল করতেই সোহানা চুপ হয়ে যায় । গলা ঝাঝিয়ে বলে – সুন্দর লাগছে শুনে নজর দিতে আসছে হুহ..😏। তানভীরকে বলে – ফ্রেশ হয়ে আয় । টেবিলে খাবার দিচ্ছি ।

লাবিবা বাড়ি এসে হালকা পা বাকিয়ে বকিয়ে হাটতে হাটতে উহ আহ করতে করতে সাবিনার কাছে আসে ।সাবিনা মেয়ের a to z scan করে বলে
– উহ আহ করিস কেন ? তোর তো কিছুই হয় নাই । drama off দে ।
– আম্মুনি ..কি যে ব্যথা ..তোমায় আর কি বলবো ..একটা বড় সড় গাড়ি এসে আমার পায়ের উপর কোমড় এক হাত নিচে দিয়ে going .
– চুপ যা । বলছিনা drama off করতে ? একটা গাড়ি গেলে তোর পা এখনো জিবীতো আছে ? আমারে কি পাগলা কুকুর কামড় দিয়েছে যে তোর কথা বিশ্বাস করে নাচবো ?
– হুস হুস । তুমি কি নাচতে পারো নাকি ? নাচে তো আমার নানু । উফ যা সুন্দর করে নাচে না ..নানু ভাই তো হা হয়ে দেখে 😘 । তুমি তো কিচ্ছু পারো না
– হয়ছে আপনাকে আর কল্পনায় ডুব দিতে হবে না । সন্ধ্যা লাগছে গিয়ে পড়তে বসেন ।
– এমন করো ক্যা ? হুস হুস কেউ ভালুপাসে না ।

পড়ার টেবিলে বসে স্কুলের পড়া সব শিখে নেয় একঘন্টার মাঝে । but দশটার আগে তো টেবিল থেকে উঠা নিষেধ । এখন তো নয়টা বাজে । এই একঘন্টা কি করবে ? ভাবতে ভাবতে রাস্তার কথা মনে পড়ে যায় । ডায়রিটা বের করে লিখতে থাকে –
আজকে আমি আর এক ডলফিনের গাড়ি দুইসিডেন করেছি । বড় ব্যপার হলো গাড়িটি সুরক্ষিত আছে । কিন্তু আমার আত্মা উড়ে গিয়েছিলো । আত্মা টেনে ধরতেই ডলফিন টা সামনে চলে আসলো আর আমার ফুলানো আত্মা চুপসে নুইয়ে পড়েছিলো । ডলফিন তার রাগের এক সমুদ্র নোনা পানি আমার উপর ঢেলে দিয়েছিলো । ডলফিনটা দেখতে ইয়া বড় । শরীরে অনেক মাংস । হাড্ডিগুলা দেখতে খুব শক্ত। ডলফিনটার অনেক বয়স তাই দাড়ি গজিয়েছে । ডলফিনের চোখ দুইটা মাছের রক্ত খাইতে খাইতে লাল হয়ে গেছে । কচি কচি মাছ খেয়ে খেয়ে ডলফিন টার গায়ে প্রোটিনে ভরপুর । ডলফিনটার অনেক তেজ । ডলফিনটার মোটা মোটা চামড়ায় মোটা মোটা আইশ । ডলফিনটা অনেক স্টাইলিশ । ডিজিটাল ডলফিন । চোখে কালো চশমা পড়ে😎। ডলফিন টারে ভাল্লাগছে । কিউট ডলফিন ।
কাধে কারো ছোয়া পড়ে । লাবিবা সরিয়ে দেয় । আবার হাত পড়ে । সরিয়ে দিয়ে বলে – উফ distrub নষ্ট করো নাতো।
” ডলফিন টারে ভাল্লাগছে। কিউট ডলফিন ”
একলাফে উল্টা দাড়িয়ে পড়ে আমতা আমতা করে বলে – আব্বু …।
– হ্যা আব্বু। পড়তে বসে কি করা হচ্ছে এসব ? 😡
– লিখতেছিলাম তো ..ডলফিন । ডলফিনের composition . Home work .
– ডলফিনের composition কোন বইয়ে লেখা আছে দেখি ? আর composition এ কেউ লিখে ডলফিন টারে ভাল্লাগছে ??
– ওমা তুমি জানো না ? জানবে কি করে তোমাদের সময় তো এসব পড়াই আসে নাই । তাইতো তুমরা আধুনিক বিশ্বের invention don’t know. সমুদ্রের নিচ থেকে যে এত্তো বড় বড় ডলফিন তুলে বিদেশে বাড়ি গাড়ি করে দিচ্ছে সেই খবর কি রাখো ? ডলফিনদের আমেরিকা অনেক বড় বড় বাড়ি গাড়ি আছে । ডলফিনদের পেটের থেকে মানুষের বাচ্চা বের হয়। আর বাচ্চা গুলা বের হয়েই বিরিয়ানী খায় দশ প্লেট করে । ডলফিন গুলা খুব কিউট । পুতু নামের এক ডলফিনের জন্য বিল গেটস এর মেয়ে সাইসুইভ খাবো বলছিলো । কিন্তু পুতু রাজি ছিলো না তাই পুতুর ভাই ফুতু বিল গেইটসের মেয়েকে দিয়ে বিয়ে __
– shut up . 😡 ফাজলামি করস আব্বুর সাথে ?? পুতুর ভাই ফুতু ? ডলফিনের বাচ্চা মানুষ ? পড়া শেষ হলে খেয়ে ঘুমাবি এইগুলা কি লিখস ?? পাগলের ছানা কথাকার ।
লাবিবা চুপ ।
ইসমাইলের চিল্লানি শুনে সাবিনা তাড়াতাড়ি করে হাতে দুধের গ্লাসটা নিয়ে আসে । যদি মেয়েটা ভয় পেয়ে দুধ টুকু খায় ।ভাত তো খাবে না ভালো করেই জানে।সাবিনার হাতে দুধের গ্লাস দেখে এক দৌড়ে বাথরুমের দিক যেতে থাকে । কিন্তু ইসমাইল ধরে ফেলে । উয়ায়ন্তর না পেয়ে উয়াক উয়াক করে । ইসমাইল বলে
– ভাত খেয়েছো ?
– ভাত কি মানুষ খায় নাকি ? হুস হুস ..ছাড়ো না বমি আসতেছে তো । উয়াক ..
– ভাত মানুষ খায় না । গরু ছাগল খায় । বমি আসতাছে তো ..নাক বন্ধ কর ।
ইসমাইল মেয়ের নাক টিপি দিয়ে ধরে ছাবিনা মাথা টেনে মুখ উচিয়ে মুখে জোর করে দুধ ঢেলে দেয় ।
বেচারা লাবিবা😒
.
চলবে…

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২

🍁
ভোর সাড়ে পাচটায় সাবিনা এসে লাবিবাকে ডেকে গেছে নামায পড়ার জন্য । সাড়ে ছয়টায় এ এসে দেখে সেই অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে । কাথা টান দিয়ে বলে
– উঠ উঠ নয়টা বাজে স্কুলে কখন যাবি ?
– আর পাচ মিনিট ।
– হায়রে সাড়ে নয়টায় assembly . কখন কি করবি ? উঠ উঠ ।
চোখ ডলতে ডলতে ডুলতে ডুলতে বাথরুমে ডুকে লাবিবা । আধা ঘন্টা পরে সাবিনা খাবার এনে দেখে ঘরে নেই । বাথরুমের দরজা এখনো বন্ধ। এগিয়ে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে
– লাবিবা ..এই লাবিবা…এত্তোখন লাগে ফ্রেস হতে ? বাথরুমে কি রান্নাবারা করে খাইতে বসছিস ?
– আসতাছি ।
দরজা খুলে চোখ ডলতে ডলতে বের হলো লাবিবা । সাবিনা রেগে বলে
– বাথরুমে এতোক্ষন ঘুমালি তুই !! কাল থেকে সকালে উঠে ঘুম না ছাড়া পর্যন্ত তুই বাথরুমে ডুকবিনা । বাথরুম লক করে রাখবো আমি । চল তোকে ব্রাশ করাই ।
লাবিবাকে এক হাত ধরে টেনে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে যায় । ফ্রেশ করিয়ে এনে মুখে ব্রেড পুরে পুরে দেয় ।
– খাওয়া শেষ হলে পড়তে বসবি ।
– আজকে তাহলে স্কুলে যাবো না !! বাসায় থাকবো.. Uff lovely😍
– একঘন্টা পড়বি তারপর যাবি ।
-কয়টা বাজে ? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা পাচ বাজে । হাসিখুশি মুখটা চুপসে গিয়ে চোখ ছল ছল করে উঠে । খাবার ছেড়েই উঠে বলে – আরেকটু ঘুমোলে কি হতো ? একটু শান্তিতে ঘুমোতেও পারিনা । থাকবো না এখানে । কেউ ভালুপাসেনা । আব্বু কই ?
– কাজে গেছে । আসতে দেরি হবে আজ ।
– …uff lovely😍.
এক দৌড়ে uniform পড়ে নিয়ে রেড়ি হয়ে ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । পেছন থেকে সাবিনা চিল্লাচ্ছে – কোথায় যাচ্ছিস ? এতো সকালে স্কুলে গিয়ে কি করবি ? লাবিবার কোন উত্তরপায় না ।

পিচডালা রাস্তার পাশ দিয়ে লাফাতে লাফাতে হেটে যাচ্ছে লাবিবা । প্রত্যকটি পায়ের আঘাতে আঘাতে পাথর গুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হচ্ছে । মাঝারি পাথর গুলো বল বানিয়ে খেলতে খেলতে হাটছে । লম্বা কোমড় পর্যন্ত ঝুটি দুটোও লাফানোর সময় লাফিয়ে উঠছে । সকালের শিরশির করা বাতাস এক অদ্ভুত ভালোলাগায় মুড়িয়ে নিচ্ছে । হাটতে হাটতে লাবিবা চলে এসেছে অন্য পথে । স্কুলে আসার দুটো পথ । রেগুলার যে পথে যাতায়াত করা হয় সেই পথে হেটে স্কুলে পৌছতে সময় লাগে মিনিমাম পনের মিনিট । আরেক পথে সময় লাগে চল্লিশ মিনিটের মতো । এই লম্বা পথেই আজ এসেছে লাবিবা সময় পেয়েছে জন্যে । অবশেষে সে দাড়িয়ে পড়ে এক বিশাল বাড়ির সামনে যার জন্য কষ্ট করে এতোটা পথ তার হেটে আসা । মুগ্ধ চোখে রাস্তায় দাড়িয়ে নজর রাখে সেই বাড়ির দিকে । এই রাস্তায় যে কেউ এলেই কিছুক্ষনের জন্য এই বাড়ির দিকে তাকাবেই । বিশাল দুতলা বাড়ি , বাড়ির বাইরের পরিবেশ দেখেই লোকজন মুগ্ধ হয়ে যায় । সুন্দর ফুল ফলের বাগানে ঘেরা বাড়িটি । বাড়ির ডিজাইনিং গেইট , বাউন্ডারি ওয়ালগুলোর উপর হারিকেন লাইট , বাড়ির সামনের রাস্তার দু পাশে ফুলের বাগান , বসার জন্য বেঞ্চি সব মিলিয়ে অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা । কিন্তু লাবিবা কে এগুলোর কিছুই মুগ্ধ করে না । তাকে মুগ্ধতার আবেশে ছেয়ে নেয় বাড়িটির এক কর্নারে দু তলা সহ জুড়ে থাকা বিশাল সেই কালো গোলাপের গাছটি । যার প্রত্যেকটা আনাচে কানাচে ফুটে রয়েছে অজস্র কালো গোলাপ । যার সৌন্দর্য শুভ্রতা আজ টেনে এনেছে লাবিবা নামের ছোট মেয়েটিকে। অতি চঞ্চল মেয়েটি ও এই সৌন্দর্যে অবিভূত হয়ে ভুলে যায় তার সত্বাকে । শান্ত হয়ে যায় তার পৃথিবী । নিস্পলক চোখে শুষে নেয় #একগুচ্ছ_কালো_গোলাপের স্নিগতাপূর্ন সৌন্দর্যকে । সুযোগ পেলেই চলে আসে এই বাড়ির সামনে কালো গোলাপ বিলাস করার জন্যে। তার খুব ইচ্ছা সে এই ফুল গুলো নিবে । কিন্তু কখনো এই বাড়ির ভিতরে যেতে পারে না । কারন এটি এমপি ফিরোজ খানের বাড়ি । কড়া সিকিউরিটি । লাবিবার আব্বুর সাথে ফিরোজ খানের খুব ভালো সম্পর্ক তাই এই বাড়িতে তার ভালোই যাতায়াত আছে । কিন্তু লাবিবাকে নিয়ে আসা হয়নি কখনো । গেইটের সামনে দারোয়ান বসে ছিলো । লাবিবাকে হাতের ইশারায় ডাক দিলে লাবিবা এগিয়ে আসে সামনে । দারোয়ান আকবর মিয়া এক গাল হেসে বলে
– কি মা জননী ? কেমন আছো ? অনেকদিন পর তোমায় দেখলাম গো ।
– আলহামদুলিল্লাহ কাকা । আসবো কিভাবে বলো ..তুমি যেমন এই বাড়ি পাহারা দাও আমাকেও আব্বু পাহারা দেয় । আর এতোটুকু রাস্তা হেটে আসা যায় নাকি ?? পা ব্যথা করবে আমার ।
– তা কিভাবে এলে ? আব্বু কোথায় ?
– সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বু নেই । কোথায় নাকি গিয়েছে । আসতে দেড়ি হবে । সেই সুযোগে বেরিয়ে এলাম ।
– হা হা হা তাই নাকি ? গোলাপ দেখা হয়ে গেছে ? বাড়িতে গাছ লাগাতে পারোতো ।
– লাগিয়েছিলাম । অক্কা খাইছে । জিন্দা হইলেও কি এর মতো এত সুন্দর হবে ? শুধু দেখেই গেলাম । নিতে আর পারলাম না ।
– সে ঠিক বলেছো । এই গাছ অনেক বছরের । এই বাড়ির ছোট সাহেব যখন হাটতে শিখেছিলো তখন নাকি গাছ লাগানোর সময় ছোট ছোট হাতে এই গাছ লাগিয়েছিলো সেই দেড় বছর বয়সে । ছোট সাহেবের খুব প্রিয় যত্মের এই গাছ । ছোট সাহেব ছাড়া কেউই এই গাছ ফুল ছোয়ার সাহস পায় না ।
– ওওওওওও তাই নাকি 😱 । খুবি ডেন্ডেরাজ বিশয় আশয় । তোমাদের ছোট সাহেব বুঝি তেলাপোকা চচ্চরি , টিকটিকির কাবাব, মাকডসার রেজালা , ব্যঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ খেয়ে ডেন্ডেরাজ হয়েছে ?
– yackk.. কি বলো এসব ?
– তুমি বুঝবেনা । বুঝার বয়স হয় নাই এখনো । আমি গেলাম । আর শোন আব্বুকে ভুলেও বলোনা কিন্তু আমি এসেছিলাম কেমন ?
– আচ্ছা আচ্ছা ।

ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলো তানভীর । হটাৎ নিচের দিকে চোখ পড়তেই দেখে দারোয়ানের সাথে একটা uniform পড়া মেয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে । চেনা চেনা লাগে ভাবতে ভাবতেই চিনে ফেলে মেয়েটাকে । এতো সেই মেয়ে যার সাথে car accident হতে হতে বেচে গেছে । কিন্তু এখানে কি করে ? ভাবতে ভাবতে নিচেই চলে আসে তানভীর । দারোয়ানের কাছে গিয়ে দেখে লাবিবা নেই চলে গেছে। দারোয়ানকে বলে
– এখানে একটা মেয়ে দাড়িয়ে ছিলো uniform পরা ।
– লাবি মনি মা । ইসমাইল চ্যায়ারমেনের মেয়ে ।
– হুম । এখানে কি করছিলো ?
– আর বলবেন না ছোট সাহেব ..আপনার ঐ গোলাপ ফুলের গাছ দেখার জন্য আসে মাঝে মাঝে । ওর খুব প্রিয় কালো গোলাপ । লুকিয়ে আসে । চ্যায়ারম্যান সাহেব যেন না জানে ।
– ওহ আচ্ছা ।
– ও আচ্ছা ।

টেবিলে খেতে বসেছে সবাই । সোহানা ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে । তানভীর খেতে খেতে বলে – পাপা আমি কাল চলে যাচ্ছি । এই দুই দিনেও যেহেতু গন্ডগোল করেনি মনে হয়না আর করবে ।
ফিরোজ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে – তোমার কোন কাজ নেই ঢাকায় আপাদত । যে কয়টা দিন দেশে আছো এখানেই থাকো ।
– ওকে ভেবে দেখবো । বাট কাল যেতে হবে ।
– ঠিক আছে ।

পরদিন দুপুর বেলা স্কুল মাঠে দুই দলে কোন্দল শুরু হয় । ফিরোজ সাহেব শুনে দলের ছেলেদের কাছে খবর পাঠায় গন্ডগোল না করতে । শান্তি বিরাজ করতে । অযথা মারামারি না করে সরে আসতে সেখান থেকে । কিন্তু দলের ছেলেরা সরে আসতে চেয়েও সরে আসতে পারে না । উল্টো রিরোধীদলের প্রতিনিধী হাসান এর দল ফিরোজ দলের ছেলেদের আটকিয়ে উস্কিয়ে দেয় । শুরু হয় মারামারি । হটাৎ স্কুল খুলা টাইমে এইভাবে মারামারি শুরু হওয়াতে ছাত্ররা ভয় পেয়ে যায় । টিচার রা ছাত্রছাত্রীদের হল রুমে নিয়ে আসে তারাতাড়ি করে । হেডটিচার মুক্তার খেয়াল হয় তার শালিকা তো স্কুলে এসেছে । কোথায় ও ? খুজে খুজে বের করে দেখে বেস্ট ফ্রেন্ড নুপুরকে চেপে ধরে ভয়ে শুকনো মুখ করে দাড়িয়ে আছে । কাছে যেতেই লাবিবা এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে
– ভাইয়া কোন দল কোন দল মারামারী করছে ?
– ফিরোজ আর হাসানের দল ।
– আব্বু কি আসছে এখানে ? আমি সিউর আব্বু আসছে । আব্বু পরিষধেই ছিলো ।
– আরে না আসে নাই । তুই ভয় পাস না ।
বাইরের প্রত্যেকটি আওয়াজে লাবিবার বুক ধরফর করতে থাকে । ভয়ে কান্না চলে আসে । মুক্তাকে ছেড়ে জানালার পাশে এসে দাড়ায় । বাইরের লোকগুলো লাঠি দিয়ে মারামারি করছে । হটাৎ দেখে একটা গাড়ি এসে থামলো । গাড়ি থেকে তানভীর কে নামতে দেখেই চিনে ফেলে এইতো সেই ডলফিন । তানভীর নেমেই হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে এসে সামনের লোক গুলো কে ধোলাই করতে শুরু করে । কুস্তিগিরী বডির সাথে কেউ পেরে উঠে না । পুরো দলের অর্ধেকের বেশী লোক গুলোকে ধোলাই করার পর হটাৎ করে সব এক জোড় হয়ে তানভীরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে নিজেদের শরীরের জ্বালা মিটাতে । কারন বিগত কয়েক বছর থেকে প্রত্যেক গোলোযোগের সময় তানভীরের হাতে সবাইকে ন্যাস্ত হতে হচ্ছে । ঘটনা বেগতিক দেখে দুই ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান আর তিন মেম্বার ভিড়ে ঢুকে তানভীর কে সেফ করতে । এর মধ্যে ইসমাইল ও ছিলো । তানভীরকে আনতে গিয়ে তাদের শরীরেও কয়েক ঘা পড়েছে । এদিকে তানভীরের এমন ফাইট দেখে লাবিবা ভয়ে কাপতে থাকে । যখন ইসমাইলকে দেখতে পায় তখন তার প্রানটা হাতে । এতোক্ষনে কোন্দল প্রায় থেমে গেছে । ছাত্রছাত্রীরা বাইরে বের হতে শুরু করেছে । লাবিবা বের হতে নিলে মুক্তা আটকাতে নিলেও লাবিবা দৌড়ে বেরিয়ে আসে । আব্বু আব্বু করে কাদতে কাদতে চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়ে আসতে থাকে । ইসমাইল ডাক শুনে দেখে লাবিবা । কাছে আসতেই নিজের সাথে চেপে ধরে বলে
– ভয় পাইছো আব্বু ? কিচ্ছু হয় নাই তো । কাদে কেনো ? ভয় পাইও না । তুমি তো আমার সাহসী বাচ্চা ।মুক্তা কই ? ধরে নাই তোমারে ?
– আব্বু তোমাকে মারছে । কই মারছে ? কই ব্যথা করতেছে তোমার ?
– আমায় মারে নাই তো ।
– আমি দেখছি তোমার কাধে লাঠি লাগছে ।
তখনি মুক্তা এসে দাড়ায় । ইসমাইল মুক্তাকে বলে
– ধরবানা তুমি ওকে ? দেখতে দিছো কেন ? ভয় পাইছে তো ।
মুক্রা কিছু বলে না । ইসমাইল লাবিবার চোখ মুছে চেপে ধরে কান্না থামায় । আব্বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ চাপ তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে । তানভীর ও অনেকক্ষন থেকে এক দৃষ্টিতে লাবিবাকে দেখছিলো । দুজনার চোখ দুজনের দিকে । লাবিবা শান্ত চোখে চোখ পিট পিট করে । বড় বড় পাপড়িতে নোনা পানির ছলছল খেলা গভীর নয়নে দেখতে থাকে তানভীর । ইসমাইলের কথায় হুস ফিরে ।
– বাসায় যাও তানভীর । তোমার পাপা ফোন করেছিলো ।
– শালারা আমি চলে গিয়েছি ভেবে গোলযোগ শুরু করে দিয়েছে । অর্ধেক রাস্তাও যেতে দিলো না । শালা গুলার জন্য ফিরে আসতে হলো ।
– ইলেকশন হলো কয়েকদিন আগে । এখন একটু করবেই । জিততে পারে নাই তেজ দেখাবোই । দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবো । তোমার হাতে লাগছে । চলো বাসায় যাও ।
– গাড়িতে উঠেন কাকা । পৌছে দিতেছি । আর এইযে , আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা । এতো ভয় কিসের ? আব্বুর মতো হও । অনেক সাহসী অনেক শক্তিশালী ।
লাবিবা কোন উত্তর না দিয়ে আব্বুকে আরো শক্ত করে ধরে তানভীরের দিকে তাকিয়েই চোখ পিট পিট করে ।
ভেজা চোখের পিটপিটানি যে এতো ভালোলাগা ছড়িয়ে দেয় তা এই প্রথম দেখছে তানভীর । তানভীর এসে গাড়ির গেইট খুলে দেয় । ইসমাইল লাবিবাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে ।

চলবে….

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৩

🍁
তানভীর বাসায় গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায় । সোহানা ডাকলেও শুনে না । ছেলের হাত ,কাধ দেখে সোহানা ফেস ফেস করে কান্না শুরু করে দেয় । ফিরোজ বিরক্ত হয়ে উঠে যায় সোহানার পাশ থেকে । তানভীরের রুমে এসে দেখে তানভীর রেগে wall এ boxing করছে। ফিরোজ আটকে দিয়ে বলে
– এমনি হাতের বারোটা বাজিয়ে এনেছিস । এখন আবার তেরোটা বাজাতে চাইছিস ।
– leave me alone papa .
– alone থাকার জন্য full night পরে আছে তার আগে দেখি তোমার কোথায় লেগেছে ?
ড: রশিদের কথায় ফিরে তাকায় দুজনে । ফিরোজ রাগ দেখিয়ে বলে – এতোক্ষন লাগে আসতে ?
– আরে বাবা তুই কি আমাকে সবসময় রকেট ভাবিস নাকি ? সর তো এখন , আমার ভাতিজা কে দেখতে দে । ফিরোজ সরে দাড়ায় । রশিদ তানভীরকে বসায় । হাতের জখম দেখে । ট্রিটমেন্ট করে চলে যায় । সোহানা খাবার হাতে আনে । সোহানার সাথে তানিয়া ও আসে । তানিয়া ফিরোজের ভাই মিনারের মেয়ে । ওরা সবাই নানু বাড়ি গিয়েছিলো আজ এসেছে। তানভীর তানিয়াকে ইশারায় ডেকে কোলে নিয়ে বলে
– কখন আসছিস ?
– বিকালে ।
– পাপা মম কোথায় ?
– পাপা জেঠুর সাথে । মমের মাথা ব্যথা করছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
– লাবিবাকে চিনিস ? তোর এক ক্লাস উপরে পড়ে । এইটে। গুলুমুলু পুতুলের মতো ।
– ও লাবিপু .. চিনিতো । লাবিপু আমাকে খুব আদর করে । আমাকে ওর চকলেট দিয়ে দেয় তারপর ওর মারবেল ও দেয় আবার কৃষ্ণচূড়া ফুল কুড়িয়ে হাতের নখ বানিয়ে দেয় ।
– তাই নাকি ? দুই দুষ্টু এক জায়গায় হস । মিলবে ভালো তদের । যা খেয়ে ঘুমিয়ে পর ।

পড়তে পড়তে চকলেট খাচ্ছে লাবিবা । কান্না বন্ধ করানোর জন্য ইসমাইল আসার পথে অনেকগুলা চকলেট কিনে দিয়েছে । সেই চকলেট যে তখন থেকে খাওয়া হচ্ছে এতো চলবেই চলবেই । ইসমাইলের রাগ হচ্ছে । এ চকলেটি খাবে নাকি পড়বে ? খেতে খেতে কখনো পড়া হয় নাকি ? কিন্তু কিছুই বলছে না । বললে যাও পড়বে সেটুকুও পড়া হবে না । সাবিনা রাগ দেখিয়ে দেখিয়ে ইসমাইলের প্লেটে ভাত দিচ্ছে ।
– আহ. আস্তে দাওনা । এতো তেজ কিসের ?
– দিলে তো আমার বাচ্চাটার খাবার নষ্ট করে । এমনিতেই ভাত খাওয়াতে পারিনা তার মধ্যে আবার চকলেট পেয়েছে । চকলেট খেয়েই পেট ভরিয়ে রাখবে । যে পর্যন্ত চকলেট শেষ না হবে সেই পর্যন্ত মুখ টা একটু শান্তি পাবে কিনা সেটা ভাবছি । রাতে ঘুমোবে তো ?
লাবিবা শুনে বলে – আম্মুনি আমি ঘুমোবো । আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে । গুডু গুডু নাইট ।
সাবিনা আসস্ত হলো । চকলেট গুলো রুম থেকে সরানো দরকার ভেবে লাবিবার রুমে আসতে নিলে দেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে । অনেক ডেকেও দরজা খুলাতে পারে না ।

সকালে বেলকনির জানালা দিয়ে উকি দেয় সাবিনা । লাবিবা বিছানায় উবু হয়ে পড়ে আছে । বিছানায় চকলেটের খালি প্যাকেটের ছড়াছড়ি । গালের একপাশেও চকলেট লেগে আছে । ঠোট তো দেখাই যাচ্ছে না । সাবিনা কি আর বলবে এই মেয়েকে ..কত রাতে যেন ঘুমিয়েছে কে জানে ? দরজা ধাক্কিয়ে লাবিবাকে তুলা হয় । ঠেলে বাথরুমে পাঠানো হয় । আবার সেই লেইট । বাথরুমের দরজা ধাক্কা দিতে থাকে সাবিনা । ইসমাইল শব্দ পেয়ে আসলে সাবিনা দাত কটমট করে বলে – তোমার মেয়ের জন্য আজকে নতুন লেপ তোষক বানিয়ে আনবে । ওকে বাথরুমেই থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি । ওর আর কষ্ট করে বের হতে হবেনা বাথরুম থেকে । খাবার ও পাঠিয়ে দিবো তিনবেলা করে । ইসমাইল গিয়ে দরজায় হাত রেখে বলে – বাবা ..বের হোও ।
ইসমাইলের গলা শুনে লাবিবা বের হয় । খেয়ে রেডি হয়ে দুলতে দুলতে স্কুলে যেতে থাকে । স্কুলে না গিয়ে পাশেই বাজারে যায় । বাজারে গিয়ে নোটনের হোটেলের সামনে এসে বেঞ্চিতে বসে বলে
– ও নোটন ভাই .. বড্ড ঘুম পাচ্ছে। একটা হরলিক্স চা দাওতো । নোটন হাসতে হাসতে সামনে এসে বলে – হরলিক্স তো বাসায় রেখে আসছো বইনা ।
– ওহ তাই তো । তাহলে একটা নীল চা দাও ।
– কিহ ?? নীল চা আবার আছে নাকি ? আগেকার মানুষ তো কাপড় সাদা রাখার জন্য নীল চাষ করতো । ঐটাতো সোডা ।
– উফফ ঐটা টা । আমিতো নীল অপরাজিতা ফুলের চায়ের কথা বলছি ।
– কিহ?? ফুল দিয়ে চা ? এগুলা কেমন চা ? আমার দোকানে ঐসব পাবে না ।
– আচ্ছা তা হলে হলুদ চা দেও । গুচ্ছগাদারটা দিও।পাতলা গাদার টা ভাল্লাগেনা ।
– এগুলা আমার দোকানে পাওন যাবো না ।
– আচ্ছা তাহলে সাদা গন্ধরাজ চা , গোলাপী গোলাপ চা, বেগুনী নয়নতারা চা, সবুজ জবা চা , সাদা-কমলা শিউলী চা , হলুদ সূর্যমুখী চা , খয়ারী পাতাবাহার চা , লাল শাপলা চা, কালো গোলাপ চা😍 এর যে কোন একটা দিলেই চলবে ।
নোটনের মাথা ঘুরার উপক্রম । নিজেকে সামলিয়ে বলে
– বইনে..তুমি কি আগে এর কোন চা খাইছো ?
– আমি খাই নাই । তবে আমার পুতুল খেয়ে বললো খুব মজা । তাই ভাবলাম আজকে আমি একটু টেস্ট করি ।
নোটন এবার সত্যি সত্যি মাথা ঘুরিয়ে ধপাস করে বেঞ্চিতে বসে পরে । পেছনে বসে বেলাল ভাতিজির এসব আজাইরা কথা শুনে আর বসে থাকতে পারলো না । সামনে এসে ডাক দিলো
– লাবিবা..।
– জেঠু 😒
– কি চা খেতে আসছো ?
– দুধচা😐
– ঐ এক কাপ দুধ চা দে ।
লাবিবা দুধ চা শেষ করতেই বেলাল বিল মিটিয়ে লাবিবার হাত ধরে স্কুলের দিক হাটা দেয় ।
এতোক্ষন বসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সবটা দেখছিলো তানভীর । এখানে আসলে নোটনের দোকানে প্রায়ই চা খেতে আসা হয় । এই দোকানে নিন্মশ্রেনী থেকে উচ্চশ্রেনী সবারি বসা হয় । অবাক হয়ে বসে আছে তানভীর । তবে মৃদু হাসিও পাচ্ছে তার । বিল মিটিয়ে সেও চলে যায় ।

স্কুলের assembly start হয়ে গেছে এতোক্ষনে । এই সময় কাউকে ডুকতে দেওয়া হয় না । কিন্তু হেড টিচারের শ্বশুর হেড টিচারের শালিকে নিয়ে আসছে দেখে physical teacher কিছু বলে না । বরং বেলালকে সম্মান প্রদর্শন করে অফিসে গিয়ে বসতে বলে । বেলাল কাজের কথা বলে চলে আসে ।

ক্লাসে বসে বসে নুপুর আর লাবিবা আলোচনা করছে
– দোস্ত। আজকে তো math খাতা দিবো ।
– এতো চিন্তা করিস না । বাড়িতে বলমু না ।
– কিন্তু ঐ কামলা (কামরুল) স্যার কে তো বলতেই হবে ।
– প্রাইভেট ই পরুম না । নো চিন্তা ডু ফুর্তি ।
লাবিবার টেনশন দুর হয় না । অবশেষে খাতা দেয় । শহীদ স্যার সামনে এসে বলে
– কি ? ব্যপার টা কি ? দুইটায় মিলে দেখাদেখি করে লিখিস আর সেম নাম্বার পাস । এর পর থেকে একটা পরিক্ষাতেও দুইটারে একসাথে বসতে দিমু না । দেখি কেমনে বসিস ।
লাবিবা,নুপুর মনে মনে – আহা…বাপের বাড়ির আবদার ..দেখি কেমনে বসিস(ভেঙিয়ে) । একবারো তো আলাদা বসাতে পারলি না । কচু কাটা তোর সাহস আছে আমাদের আলাদা করার ? চিল্লিয়ে এই তিনতালা স্কুল সহ তোকে উগান্ডা ঢিল দিবো । হুহহ..।
লাবিবা – স্যার খাতাটা দেন । কতো পাইছি একটু দেখি
স্যার খাতা দিয়ে হন হন করে চলে যায় । লাবিবা নুপুর mark দেখে মাথায় হাত। নুপুর তো পারে কান্না করে দেয় । 32 mark পেয়েছে দুজনেই । এক নাম্বারের জন্য ফেইল । লাবিবা মনে মনে শহীদ স্যারের বউয়ের বারো গোষ্ঠী উদ্দার করতে থাকে। আর বলে শালা কচু কাটা ব্যঙের ডিম মুরগীর ছাতা হাসের বাচ্চা তোর কোনদিন বিয়ে হবে না দেখিস । একটা নাম্বারের কিপ্টামির জন্য তোর বউ চলে যাবে দেখিস । তোর গরু গুলার পাতলা পটি হবে আর ঐ গুলা চটপটি বানিয়ে চেটে চেটে তুই খাবি ..yack ..thu আম্মুনি.. বমিকা আগায়া 😧…

কামরুল স্যারের প্রাইভেট এ স্যারের সামনে খাতা ধরে আঙুল কামড়াচ্ছে লাবিবা । নুপুর নিচের দিকে মুখ করে বসে আছে । পড়ানো শেষে সবাই চলে গেছে । শুধু লাবিবা আর নুপুর ই আছে। চশমা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ৩২ mark কে উল্টা পাল্টা করে বার বার দেখছে স্যার । সোজা রাখলে হয় ৩২ উল্টো করলে হয় ২৩ । কামরুল স্যার গলা খাকারি দিয়ে বলে
– আহ হা হা রে…….তোরা তো ডাসা ফেল । তোদের কোন ভাবেই পাশ দিতে পারতাছি না আমি । ৩২ এও ফেল ২৩ শেও ফেল । আমার ছাত্রী হয়ে তোরা কিভাবে ফেল করিস ? জানিস math এ কত নাম্বার করে পাইছি আমি ? তোদের মাথা ভর্তি গোবর । তদের দ্বারা পড়া লেখাই হবো না ।
নুপুর মাথা তুলে বলে – স্যার আপনিতো পড়াচ্ছে চার মাস থেকে । এই চার মাসে আপনি গড়ে দুই মাস ও পড়াননি । তার মধ্যে আবার এক দুইটা math ছাড়া কোন দিন তিনটা math করাননি । আর syllabus এ huge lesson . আমরা পারবো কিভাবে ? আপনার জন্য ফেল করেছি ।
স্যার – কিহ?? মুখে মুখে তর্ক?? বাপ মায়ে এই শিক্ষা দিছে ? তোদের বাপ মায়ের শালিসি বসামু আমি । বাপ মা বেয়াদব হইলে পোলাপান বেয়াদব হয় ।
লাবিবা – ঐ কামলা একদম বাপ মা তুলে কথা বলবেন না । আমার বাপ মা বেয়াদব তাই না ? চিনেন আমার বাপকে ? দ্বারান ভাইয়াকে বলে আপনার চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা করতেছি ।
স্যার – কেমন বেয়াদব মাইয়া । আমারে ডাকে কামলা । চেয়ারম্যানের মাইয়া হইছো জন্যে আমাকেই হুমকি ধামকি দেয় ।
নুপুর – আমরা ছাত্রী আমাদের যা বলার বলবেন । বাপ মা কে বেয়াদব বলেন ক্যা ? মূর্খ শালা কামকুন্নির জামাই বিচি ভর্তার মরিচ । আপনি এর আগেও এরকম উল্টাপাল্টা বেয়াদবি করেছেন আমাদের সাথে । আমরা কিছু বলিনি । আজ আপনার একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত । জানু এরে কি করা যায় বলতো ?
লাবিবা – এক মিনিট দ্বারা আমি পাচ মিনিটে আসতেছি । চার মিনিট পর লাবিবা হাতে একটা রেজার নিয়ে আসে । লাবিবা নুপুরের চোখ দুষ্টুমিতে চকচক করে উঠে । দুজনে শয়তানি হাসি হেসে একসাথে বলে
– উলাললা উলাললা কামলাকে ছিলা মাথা কইরা ফালা ।
__________________
ফিরোজ , মিনার, ইসমাইল ,কাদের মিলে মিটিং এ আছে। এরি মাঝে দারোয়ান এসে বলে – কামরুল স্যার আসছে চেয়ারম্যানের সাথে দুটো কথা বলতে । বলছে এখনি বলতে হবে ।
ফিরোজ – আমরা মিটিং এ আছি । আচ্ছা কামরুলকে পাঠাও কথা বলে চলে যাক ।
দারোয়ান চলে যায় । তানভীর নিচে নেমে দেখে ড্রয়িং রুমে কয়েকজন বসে । ডাইনিং এ যেতেই দেখে কামরুল চুল ছাড়া মাথা নিয়ে এগোচ্ছে। কামরুলের দিকে চোখ পড়াতে সবাই হেসে ফেলে । কিন্তু ইসমাইল ঠিক ই আবাস পেয়েছে । আমতা করে বলে -মাথা …।
ফিরোজ – কি ব্যপার কামরুল তোমার মাটির পাতিল হইতে ইচ্ছা করলো নাকি ?
– আমি করিনি । সব ঐ চেয়্যারমেন আপনার মেয়ে করছে ।
তানভীর পানি খাচ্ছিলো লাবিবার কথা শুনে বিষম খায় । ইসমাইল নিচের দিক মুখ করে রাগ কন্ট্রোল করছে । ফিরোজ সহ বাকিরা অবাক ও হয় আবার শব্দ করে হেসে ফেলে ।
কামরুল – চিন্তা করেন একবার কি বিচ্চুর বিচ্চু মেয়ে স্যারের সাথে বেয়াদবি ‌। শুধু বলছিলাম math এ 32 mark পেয়েছো । মাথা ভর্তি গোবর । তাতেই আমার এই অবস্থা করে দিলো ।
ইসমাইল : স্যার ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে । ওকে আমি দেখতেছি । মাফ করবেন । জানেন তো একটু দুষ্টু আর কি ।
ফিরোজ সহ সবাই স্যারকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয় । তানভীর চেয়ার টেনে বসে বসে লাবিবার কথা ভাবে কিছুক্ষন । তারপর উঠে উপরে যেতে যেতে বলে
– হায়রে ..দুষ্টু পুতুল ।

চলবে …….

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_৪

🍁
ইসমাইল বাড়িতে এসে দেখে লাবিবা আর জেমি খালা-ভাগনী মিলে খেলছে। কোন কথা না বলেই বাশঝাড় থেকে পাকা বাশের কঞ্চা এনে পিঠে লাগাতে লাবিবা পিঠ বাকিয়ে আম্মুনি বলে চিৎকার করে উঠে । ইসমাইল টেনে এনে আরো মারতে থাকে আর বলতে থাকে – স্যার এর সাথে বেয়াদবি করিস । দিনকে দিন লায় পেয়ে পেয়ে মাথায় চড়ছিস । আজ মেরেই তোর হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে ফেলবো । ওদিকে লাবিবার চিৎকারে সাবিনা আর সখিনা দুই জা দৌড়ে এসে ইসমাইল কে থামায় । লাবিবাকে সরিয়ে নিয়ে সাবিনা বলে – মারতেছো কেন আমার বাচ্চাটাকে ? দুষ্টুমি একটু আধটু করবেই তাই বলে মারবে ?
– তোমার মেয়ে আর দুষ্টু নেই । খারাপ হইতেছে খারাপ । স্যারের মাথার চুল ফেলে দিছে মোখলেছের দোকান থেকে রেজার কিনে আনে । চিন্তা কর কতটুকু খারাপ হইছে । সব সময় উল্টাপাল্টা কাজে লায় দিতে দিতে এখন যা ইচ্ছে তাই করছে । এমপির বাড়িতে তাদের সামনে লজ্জায় মাথা হেড আমার । আমার মেয়ে এতো খারাপ কাজ করছে ।
সাবিনা কি বলবে আর.. বলার কিছু নেই। ঘরে এসে দেখে ছখিনা লাবিবার জামা খুলে মলম দিয়ে দিচ্ছে । মারের জায়গাটুকু ফুলে কালো হয়ে আছে যা দেখে সাবিনা কেদে দেয় । সেও কখনো এইভাবে মারে নি ।
সন্ধ্যার পর পর গা কাপুনী জর আসে । ইসমাইল একটা ফুলের টোকাও দিতে পারে না লাবিবার জর চলে আসে । আজতো আরো অনেক মেরেছে । ড. এসে জর মেপে দেখে একশ পাচ ডিগ্ৰই । জেমি ফোনে আম্মু আব্বু বিনা আর মুক্তাকে খবর দেয় । জরের কথা শুনে অরাও চলে আসে । এলাকার ডাক্তার রমিজ মিয়া কে সারারাত এখানে রাখা হয় । জ্বর এই উঠে এই কমে ।লাবিবা আবোলতাবোল করতে থাকে। সখিনা ভেজা কাপড়ে গা মুছে দেয় । বিনা সারারাত পানি ডালে । সাবিনা লাবিবার আবোল তাবোল বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগে । ইসমাইল একটু পর পর পানি খাওয়ায় । লাবিবার পাগলামি বেড়ে গেলে ইসমাইল বসার ঘরে গিয়ে কেদে ফেলে।
– আমার বাবাটারে আমি আর কোনদিন মারমুনা । আল্লাহ তুমি আমার কলিজাটারে ভালো করে দেও । আমার একটা মাত্র বুকের ধনরে আমার বুকে রাইখা দেও ।
বেলাল কাধে হাত রেখে বলে – আহ.. ইসমাইল চুপ করো। এইভাবে কাইদো না । একশ দিন বলছি গায়ে হাত তুলবা না । কি হইল এইটা ? কথা শুনো না তুমি । আরেক দিন দেখি বাচ্চারে মারতে । হাত ভেঙে রেখে দিমু ।
ইসমাইল চুপ করে নিঃশব্দে কাদতে থাকে । সারারাত সবাই এইভাবেই পার করে । সকালের দিকে হালকা জর হয় । সাবিনা ,বিনা লাবিবাকে খাওয়াতে আসে ইসমাইল ও আসে হাতে অনেকগুলো ফল নিয়ে । লাবিবা ইসমাইলকে দেখেই চিল্লাতে থাকে । বেলাল এসে তারাতাড়ি ইসমাইলকে রুম থেকে বের করে । লাবিবাকে চেপে ধরে আছে বিনা । লাবিবা ভয়ে মুখ গুজে আছে । কোন রকম খাইয়ে শুইয়ে রাখে লাবিবাকে।এরকম জ্বর টানা তিনদিন থাকে । লাবিবা স্কুলে যেতে চাইলে ইসমাইল না করে । এমনিতেই তিনদিন থেকে কথা বলে না তার উপর আরো বাধা দিচ্ছে । কথা একদম বন্ধ। সুস্থ হয়ে তারপর যেতে বলে । পাচ দিন পর এবার স্কুলে যায় । ক্লাসে বসে বসে ভোর হচ্ছে । পড়া কিছুই পারে না । মেডাম সবাইকে পড়া ধরছে আর না পারলে কান ধরে এক পায়ে দাড় করিয়ে রাখছে । তা দেখে নুপুর আর লাবিবা দুজনের দিক তাকিতুকি করছে । নুপুর চোখ ইশারা দিয়ে বললো চল । লাবিবাও ইশারা করে বেঞ্চির নিচে ডুকে যায় । হামাগুড়ি দিতে দিতে দরজার কাছে এসে উঠে দৌড় দেয় । ছাত্রীরা দেখে হা করে থাকে । কিন্তু কেউ মেডামকে কিছু বলে না । সবাই ভালো করে যানে যে বলবে তার বিশেষ ক্লাস নেওয়া হবে । বাইরে বেড়িয়ে আরেক মুশকিল এ পড়ে । নতুন বাথরুমের কাজ করা হচ্ছে যেখান দিয়ে পালায় । মুক্তা স্যার মিস্ত্রিদের দেখিয়ে দিচ্ছে । দুজনেই আঙুল কামড়াতে থাকে । মুক্তা ফোন কানে একটু সরে যেতেই দুজনে একসাথে
– উলাললা উলাললা এক দৌড়ে স্কুল পালা । 🏃‍♀🏃‍♀
বাজারের মাঝখানে এসে হাপাতে হাপাতে হাটুতে হাত দিয়ে ভর করে দাড়ায় ।
নুপুর – এখন ??বাড়িতেতো যেতে পারবোনা ।
লাবিবা – নদীর পাড়ে চল ।
নুপুর – আংকেল জানলে ?
লাবিবা- হুস হুস …কথা নাই । কেউ ভালুপাসে না।অটো ডাক ।
দুজনে অটো ডেকে উঠে পড়ে । নদীর পাডে এসে থামে । ভাড়া মিটিয়েই দুজনে আনন্দ চিৎকার করতে করতে দৌড় । sandy মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে গেলে নুপুর হাত টেনে ধরে ।
– ঐ ঐ কই যাস ? সেলোয়ারে wet sand লাগলে go to home কি করে ? বুঝে যাবে সবাই ।
-idea. সেলোয়ারের নিচে তো আরেকটা সেলোয়ার আছে ।
– আমারোতো আছে ।
– চল।
দুজনে দৌড়ে ব্রিজের নিচে চলে আসে । uniform এর সেলোয়ার খুলে ব্যাগে ভরে নেয় । তারপর দৌড়ে sand এর উপর চলে যায় । dry sand এর উপর লাবিবা গিয়ে jump করতে থাকে আর uff lovely .. Sandy sandy sandy sandy বলে shout করতে থাকে । হাপিয়ে গেলে ঘাটে এসে বসে নদীর পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে । পায়ের আঘাতে পানিতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে ।
নুপুর – দোস্ত অনেক দিন থেকে তোর গান শুনিনা । এই environment এর সাথে match করে sing a song .
লাবিবা – গান is not coming out . But once কলি গাই ।
নুপুর – গা ..
লাবিবা – ” নদীর হাওয়ার তরে …
প্লাজু আমার উডু উডু করে ।
ওরে ওরে প্লাজু উড়িস না রে ..
ঘাটের মানুষ দেখতাছে রে ।
আমার শরম করতাছে রে ..।
লা লা লা লা লা লা লা লা লা ..
রি রি রি রি রি রি আ আ আ ।
নুপুর – হাত তালি হাত তালি হাত তালি । উম্মাহহ..
লাবিবা- উম্মাহহহহ টু । ওই letter গুলা বের কর । পানিতে ভাসিয়ে দেই ।
নুপুর ব্যাগ থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে । লাবিবা এক টা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে –
” ভালোবাসার নুপুর ,
আমার এক ছাতি ভালোবাসা নিও । মুই তোমাকে মেলা ভালোবাসি । তুমি আমার পায়ের নুপুর কখনোই নোও। তুমি হচ্ছো আমার মাথার নুপুর , আমার চোখের নুপুর , আমার নাকের নুপুর, আমার ঠোটের নুপুর, আমার গলার নুপুর , আমার বুকের নুপুর , আমার পেটের নুপুর । না জানু তোমাকে আর নিচে নামাবো না । তুমি উপরের প্রেম আমার তোমাকে উপরেই রাখবো ।
ইতি তোমার পাগল মুইন ”
Letter টা ভাজ করে নৌকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয় লাবিবা । এদিকে নুপুর হাসতে হাসতে শেষ ।
লাবিবা – হিজড়া নাকি ? কিসব লিখছে । ভাভাগো ভাভা ..ভাবা যায় এগ্লা ??🙄🙄 দে পরের লেটার টা দে read করি।
লাবিবা পরের letter টা open করে reading করতে থাকে –
” প্রিয়তমা ,আমার প্রেম নুপুর ,
তুমি আমাকে কেন তুমার বুকে জায়গা দিচ্ছ না ? আমি কি দেখতে সুন্দর নই ? আমি ফর্সা , লম্বা, চিকনা । তুমার favourite কেয়া সাবান দিয়ে গোসল করি । fair and lovely সুনু মাখি । sunsilk shampoo দিয়ে চুল ধুই । তিনশ টাকা দামের pant পড়ি। দেড়শ টাকার চটি পড়ি । তোমার জন্য মুই ফেলাট বাসা কিনার লাগি টাকা জমাইতাছি । তবু কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসা দেও না ? কি করলে ভালোবাসবে ? তুমার জন্য আমি কলিজাটা বের করতে পারি । আকাশের চাদ এনে দিতে পারি ।
ইতি তোমার আশিকী ।”
নুপুর হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বসে বলে
– দোস্ত আর পড়িস না । তাইলে এখানেই আমি শহীদ খামু ।
– আচ্ছা আর পড়ব না । খাতা কলম দে । উত্তর দেই ।
নুপুরের কাছ থেকে খাতা কলম নিয়ে লাবিবা লিখতে শুরু করে –
” প্রিয় মুইন ডারলিং
আমি জানি তুমি আমাকে পেয়ার কিয়া । তুমি যদি আমার কথায় রাজি থাকো তাহলে আমিও তোমাকে পেয়ার কিয়া । তুমি তুমি মাথায় , চোখে, নাকে,ঠোটে,গলায় ,বুকে, পেটে নুপুর পড়ে স্কুল মাঠে সবার সামনে আমাকে প্রেম নিবেদন করবে । তবেই আমি রাজি তোমাকে পেয়ার কিয়াতে ।
ইতি তোমার পেটের নুপুর ।”
নুপুর – দোস্ত আয় আমরা imagine করি মুইনের বাচ্চাক কেমন লাগছে ।
দুজনেই গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে imagine করে । চোখ খুলে দুজনেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে ।
নদীর পাড় দিয়ে হাত ধরে হেলতে দুলতে হাটতে থাকে ।
লাবিবা- স্কুল ছুটি হোওয়ার পর বাড়ি যেতে হবে ।
নুপুর – অনেক late। কি করবো এতোক্ষন ?
লাবিবা -ওই দেখ ওরা catch fishing . চল আমারাও Fishing.
__________________
এদিকে ইসমাইল আসছে স্কুলে ‌। অফিসে ঢুকতেই teacher রা সমাদর করতে থাকে । ইসমাইল সবার সাথে কথা বলে
– শুনলাম marksheet দিয়েছে । মেয়েতো আমার বড়ই শেয়ানা । নিজে নিয়ে নিজেই সাইন করে জমা দেয় ।
শহীদ স্যার – হা হা । ছেলেমেয়ে তো এসব করবেই । বাবা মা কেই খোজ খবর রাখতে হবে ।
– তার জন্য ই তো আসা । এই হারুন ডাক দেও তো লাবিবা কে ।
Marksheet হাতে নিয়ে ইসমাইল দেখছে । math আর english এ খারাপ mark আর সব গুলোতে ভালো নাম্বার পেয়েছে । কামরুল স্যার ক্লাস নিয়ে এসে ডুকে অফিসে । কামরুল স্যার কে দেখে ইসমাইল মনে মনে জলে উঠে । কি এমন করেছে তার মেয়ে ? মাথাই তো ন্যাড়া করে দিয়েছে । তার জন্য মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছে । তিনদিন জরে ভুগেছে । পাচ দিন থেকে কথা বলে না । আর এই স্যার দিব্বি মাথায় ক্যাপ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । ইসমাইল নিজেও তো স্যারের লুঙি খুলে নিয়েছিলো । কই তখন তো কেউ নালিশ করেনি ইসমাইলের বাবাকে । পিয়ন হারুন এসে বলে লাবিবা নেই ।
ইসমাইল – নেই মানে ? ও স্কুলে আসছে । নুপুর ?
হারুন – নুপুর ও নেই । পেজেন্ট দেওয়া আছে কিন্তু ক্লাসে নেই । ক্লাস পালিয়েছে ।
ইসমাইলের মাথায় বাজ পড়ে । পুরো স্কুল খোজায় । লাবিবা নেই । বাসায় ফোন দিয়ে জানে বাসায় যায় নি । নুপুরের বাসায় ফোন দিয়ে জানে সেখানেও যায় নি । খবর শুনে নুপুরের আব্বু আর ইসমাইলের প্রানের বন্ধু আনিস মিয়া ছুটে আসে । পুরো বাজার খুজা হয় নেই । স্যার দের ও টেনশন । মুক্তার মাথায় হাত । এতো গার্ড থাকতে কিভাবে পালায় ছাত্রীরা । তার মধ্যেআবার তার নিজের শালিকা উধাও । স্কুল টিফিন পিরিয়ডে ছুটি দেওয়া হয় । ইসমাইল আনিস পাগল প্রায় । এদিকে বাসায় খবর পেয়ে বাসার সবাই টেনশন । সাবিনাও কান্নাকাটি শুরু করে । রাস্তায় রাস্তায় খবর পাঠিয়ে দেয় । কোথাও নেই । লোকজন আ কথা কু কথা বলতে থাকে । ” সুন্দর মুন্দর মাইয়া ..জীনে নিয়ে গেলো নাকি ” ” রাস্তায় পাইয়া কেউ উঠাইয়া নিয়ে গেলো নাকি ” ” ছেলে ধরা নিয়ে গেলো নাকি ? ব্রিজের নিচে কল্লা দিতে হয় । কল্লাকাটা নিয়ে গেলো নাকি ?”
এসব শুনে ইসমাইলের আর হুস নেই ।

তানভীর চার দিন আগে ঢাকা গিয়েছিলো । ঢাকা থেকে ফিরে ড্রয়িং রুমে বসে পায়ের মোজা খুলছিলো । তানিয়া স্কুল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে ডুকেই বলে
– ও বড় মাম্মা মম ভাইয়া জানো লাবিপু নাহারিয়ে গেছে । কল্লাকাটা নাকি নিয়ে চলে গেছে। তাই হাফ পিরিয়ডেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিলো ।
সবাই বিচলিত । – কিভাবে ? কখন? এসব জিজ্জাসা করছে । তানিয়া তো কিছুই জানে না তাই উত্তর ও দিতে পারছে না । তানভীরের যেন কলিজাটা কেপে উঠে । বুকে হাত রাখে । খোলা মোজা আবার পড়ে নেয় । গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় । কোথায় যাবে লাবিবা ? ভেবে ভেবে তানভীরের মাথাও নষ্ট । বাজারে এসে দেখে লোকজন ইসমাইলের মাথায় পানি ডালছে । গাড়ির সিটে মাথা রেখে চোখ বুজে বলে-
” কোথায় তুমি দুষ্টু পুতুল ? কোথায় লুকিয়ে আছো ? প্লিজ বেড়িয়ে আসো । প্লিজ ..।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here