একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব -০১

রাস্তার দিকে চো’খ পরতেই দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ল্যামপোস্টের নিচে।ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ওইটা আনফি ভাইয়া।আমি চো’খ ঘুরিয়ে নিলাম।দীর্ঘশ্বাস ফেলে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে চো’খ মু’ছলাম।বেলকনি থেকে রুমে চলে আসলাম।লোকটা এখনো এখানে কেনো!সে তো আর আমার না কালকে বিয়ে তার।কেনো তাহলে সে এখানে কেনো।
ফোনে নো’টিফিকেশন আসলো।তাকিয়ে দেখলাম তার মেসেজ।চেক করে দেখি মেসেজে লেখা,,,
❝একবার নিচে আসবে প্রেয়শী একবারের জন্য তোমায় কাছ দেখেই চলে যাবো বি’শ্বা’স করো❞

আর নিজেকে ক’ন্ট্রো’ল করতে পারলাম না।ফোনটা বু’কে জড়িয়ে হুহু করে কেঁ’দে উঠলাম।মানুষটা আমাকে যখন ভালোবাসে তাহলে কেনো অন্য কাউকে বিয়ে করছে।আবারও নো’টিফি’কেশন আসলো।তাকিয়ে দেখি সে এবার লিখেছে,,,,
❝তোমার কাছে এটাই আমার শে’ষ রিকুয়েষ্ট প্লিজ আসো একবার আসো না প্রিয়❞

চো’খ মু’ছে নিলাম ভালো করে।মা*থায় ওড়নাটা ভালোভাবে দিয়ে নিচে নামলাম।তার কাছে যেতেই সে হুট করে আমায় জড়িয়ে ধরলো।আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছা’ড়িয়ে নিয়ে বললাম,,,
❝সমস্যা কি আপনার এতো রাতে এখানে কেনো এসেছেন কালকে তো আপনার বিয়ে ❞

সে কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,,,,
❝ভালো থেকো প্রিয় আজকের পর হয়তো আর তোমার সাথে দেখা হবে না কিন্তু আমি তোমায় নিজ ইচ্ছায় ছা’ড়িনি কথাটা মা*থায় রেখো!❞

চো’খ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরল।চো’খ মু’ছে বললাম,,,
❝তাহলে কেনো আপনি আপনার মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করছেন আনফি প্লিজ বলুন❞

❝তুমি ছোট মানুষ প্রিয় বেশি বয়স না তাই বুঝবে না যখন বুঝবে তখন আমি তোমার থেকে বহুদূর❞

❝আনফি প্লিজ আপনি আমায় এমন ধোঁ’য়া’শা’র ভেতর রেখে যাবেন না❞

আনফি আর কিছু বলল না।হুট করে আবার জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পর ছে’ড়ে দিয়ে বলল,,,
❝ভালো থেকে প্রিয়❞

কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে চলে গেলো।অনেক তাকিয়ে ছিলাম।আজকে আর ভ*য় লাগছে না অন্যদিনের মতো।আমার ভ*য় ম*রে গিছে।উপরে নিজের রুমে চলে আসলাম এলোমেলো পায়ে।আনফি আহমেদ আমার বড় ফুফির একমাত্র ছেলে।আমি তাকে ভালোবাসি কিনা জানি না কিন্তু আমার তার বিয়ের কথা শুনে অনেক ক*ষ্ট হচ্ছে।

আমি তাকে প্রথম দেখেছি আজ থেকে ১বছর আগে।সে বিদেশ থেকে ছুটিতে এসেছিলো।আমি তখন মাত্র ১০ম শ্রেনীতে পরি।লম্বা ফর্সা চশমা পরা ছেলেটাকে প্রথম দেখেই হার্টবিট জো’ড়ে জো’ড়ে লাফাচ্ছিল।তাকে দেখে ছুটে নিজের রুমে গিয়ে পা’লিয়ে ছিলাম।সে এখানে ছিলো একমাস আবার চলে গেলো।খুব ক*ষ্ট হয়েছিল।
এরপর আনফি আবার আসলেন আমার এসএসসি পরীক্ষার পরে।তখন সে একেবারে চলে আসলো।তার ওখানের পড়া শে’ষ।

উনি প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন।আমি লু’কিয়ে লু’কিয়ে উনাকে দেখতাম।লু’কিয়ে দেখতে বেশ ভালো লাগতো আমার।এইতো ৩মাস হলো আমি জানলাম উনিও আমায় ভালোবাসেন।কিন্তু ভা*গ্য হয়তো আমায় সহায় ছিলো না তাই এই বিচ্ছেদ। ভালোবাসি আমরা দুজন দু’জনকে কিন্তু ভা*গ্য আমাদের এক হতে দিলো না।কাঁ’দতে কাঁ’দতে কখন ঘুমিয়ে গিছি জানি না।

ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অনেক লেট হলো।আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম।ভালোবাসার মানুষকে নিজের চোখের সামনে অন্যকারো হতে দেখতে পারবো না তাইতো এখন হিয়াদের বাসায় গিয়ে বসে থাকবো।অনেক ক*ষ্টে আম্মুকে রা’জি করিয়ে চলে আসলাম। হিয়া দরজা খুলে আমাকে দেখে বলল,,,,
❝আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে যে প্রেয়শী ম্যাডাম আমাদের বাসায়❞

আমি আন্টিকে সালাম করে সোজা হিয়ার রুমে চলে আসলাম।হিয়া রুমে এসে দরজা ব’ন্ধ করে বলল,,,
❝কি হয়েছে তোর চোখ মুখ ফো’লা কেনো❞

আমি মলিন হেসে বললাম,,,
❝কি হবে কিছু না❞

হিয়া আমায় বলল,,,,
❝যত যাই হোক আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড তোর চো’খ মুখ দেখেই বুঝতে পারি কিছু হয়েছে তোর।এখন বল কি হয়েছে!❞

হিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।হিয়া হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে গিয়েছে আমার কাজে।হুস ফিরতেই আমার মা*থায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,,
❝কি হয়েছে প্রেয়শী বল আমাকে❞

ওকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বললাম।ও স্ত*ব্ধ হয়ে গিছে।হয়তো ভাবেনি আনফি এমন করবে।ভাবার কথাও না। আমরা কিন্তু রিলেশনে ছিলাম না।আনফিও আমায় ভালোবাসত আমিও আনফিকে পছন্দ করতাম।হিয়া সবই জানতো।সারাদিনটা আমার কেঁ*দেই কা*টলো।বাসায় ফিরে দেখি বড় ফুফিও আমাদের এইখানে।আমি কাছে যেতেই দেখলাম সবার চোখে কেমন চিন্তা।আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
❝কি হলো আম্মু তোমরা এখানে আজকে না আনফি ভাইয়ার বিয়ে.নতুন বউ কোথায় আর ফুফিই বা এখানে কেনো?❞

বড় ফুফি হুট করে এসে আমার কাঁধ ঝাঁ’কিয়ে বলল,,,
❝তুই কি জানিস আমার আনফিটা কোথায় গিয়েছে।ও আমায় বলেছিলো ও একজনকে ভালোবাসে কিন্তু আমি আমার জে*দের জন্য আজকে নিজের ছেলেটাকে হা*রালাম❞

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,,,
❝কেনো ফুফি আনফি ভাইয়া কোথায়❞

❝ও চলে গেছে রে প্রেয়শী আমার উপর অভিমান করে আমি যে ওকে ওর ভালোবাসার মানুষের থেকে আ’লাদা করেছি তার জন্য অভিমান করে চলে গিয়েছে।❞

আমি চি’ৎ’কার করে কাঁ’দতে লাগলাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কাঁ’দতে কাঁ’দতে বললাম,,,

❝বাবাই তুমি যেভাবে পারো আমায় আনফি ভাইয়াকে এনে দাও আমি ওনাকে ছা’ড়া থাকতে পারবো না প্লিজ এনে দাও।উনি কালকেও আসলেন কই আমাকে তো বললেন না চলে যাবেন❞

ফুফি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,
❝আনফি তোকে ভালোবাসতো প্রেয়শী।❞

❝আমি কিছু জানি না আম্মু আমায় আনফি ভাইয়াকে এনে দাও প্লিজ প্লিজ❞

তারপর আর কিছু ম*নে নেই আমার।

চলবে,,,,?

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here