একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব -০৪

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

প্রিয়,,,

আজকে আমি তোর থেকে হাজার গু’ন দূরে চলে যাবো।যেখান থেকে আর আসবো কিনা জানি না।জানি খুব ভালোবাসিস আমায় কিন্তু আল্লাহ হয়তো আমার সাথে তোর ভা*গ্য লিখেনি তাই হয়তো আমরা আ’লা’দা আমরা।কালকে যখন তোর কাছে গেলাম তখন জানিস ম*নে হচ্ছিল তোকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই যেখানে কেউ থাকবে না।কিন্তু তা তো স’ম্ভ’ব নয়।আমি আম্মুকে কষ্ট দিতে পারবো নারে প্রিয়।কিন্তু তোর সাথে হাতে হাত রেখে চলা আর হলো না। তোর খুব ইচ্ছা ছিলো তাই না আমার হাত ধরে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটার। কত বায়না করেছিলি সেদিন কিন্তু আমি নেইনি।আসলেই ভু*ল করেছিরে প্রেয়শী সেদিন তোকে নিয়ে গেলে তোর একটা ইচ্ছা তো পূরণ করতে পারতাম কিন্তু আমি নিলাম না।খুব ক*ষ্ট হচ্ছে রে প্রিয়।বুকটা ফেঁ’টে যাচ্ছে। বিশ্বাস কর তোকে বলে বোঝাতে পারবো না কেমন লাগছে আমার।নিজেকে অনুভূতি শূ’ন্য জী’বি’ত লা*শ মনে হচ্ছে রে।জানিস এইটুকু লিখতেও হাত কাঁ’পছে। হাত চলছে নারে।তুই যখন চিঠিটা পাবি তখন আমি অনেক দূরে।আ*ত্ম*হ*ত্যা যদি ম’হা’পা’প না হতো তাহলে আর বেঁচে থাকতাম না।আমার আম্মু আব্বুর একটু খেয়াল রাখিস।জানিসই তো আম্মু আব্বুর আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
খুব ভালো থাকিস প্রিয়।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,,
“আপনিই তো ভালো থাকার কারণ আপনি ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বলো আনফি ভাইয়া!একটি বার ফিরে আসুন না”

কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরলাম।বাইরে থেকে এতো সময় প্রেয়শীর মা সব দেখছিলো।প্রেয়শী ঘুমিয়ে পরতেই প্রেয়শীর আম্মু রুমে ঢু’কে মেয়েকে ঠিক করে শুইয়ে দিলেন।কপালপ চুমু দিয়ে বললেন,,,
❝আমি পারলে আনফিকে এনে দিতাম তোকে কিন্তু তা স’ম্ভ’ব নয়!কিন্তু তোর জী’বনে এখন সে চলে এসেছে।আর কাউকেই লাগবে না।ওকে আমি খুব ভালো করেই চিনি ও তোর জন্য সব করতে পারে সব রকমের পা*গ’লা’মি।নাহলে কি ওতো ছোট বয়সে..!আর আনফি ফিরে আসলেও ও তোকে কারো হতে দিবে না।যাইহোক ওর পা*গ’লা’মিতে ওর ভালোবাসায় যেনো আমার মেয়েটা ওকে ভালোবেসে ফেলে।ওই শে’ষ আশা আমার।❞

প্রেয়শীর আম্মু চো’খ মু’ছতে মু’ছতে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

______________

তুমি না ডাকলে আসবো না।
কাছে না এসে ভালোবাসবো না,
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও ভালোবাসি

গিটারটা রেখে প্রেয়শীর ছবি হাতে নিয়ে মিষ্টি হাসলো লোকটা।রাত প্রায় দেড়টা বাজতে গেলো!কিন্তু লোকটার কোনো হে’লদো’ল নেই তাতে।বারান্দায় বসে এতো সময় গান গেয়ে যাচ্ছিল তার হৃ’দহরনীর জন্য।লোকটা প্রেয়শীর ছবিতে চুমু দিলো পা*গলের মতো।লোকটাকে এখন কেউ দেখলে বলবে ব*দ্ধ উ’ন্মা’দ।লোকটা কিছুক্ষণ হা হা করে হাসলো তারপর আপন মনে বিড়বিড় করলো,,,,
“তুমি শুধু আমার প্রিয়।তোমাকে আমি আর কারো হতে দিবো না!তুমি শুধুই আমার শুধুই।ভালো বাসি খুব বেশি যে তোমায়।”

কিছু একটা ভাবতেই লোকটার চোখ জো*ড়া লাল হয়ে গেলো।এখন যে কেউ দেখলেই ভয় পাবে!
❝আমি সব জেনে গেছি প্রিয়।যেখানে ওই হিয়াকেও আমি তোমার পাশে স*য্য করতে পারছি না সেখানে তো অন্য ছেলে।তোমার দিকে কেউ তাকালে সে আর আ’স্ত থাকবে না আমার প্রেয়শী পরি।আর ওই ছেলেটা তোমাকে আমার কাছ থেকে কে*ড়ে নিতে চেয়েছিলো।কতো সাহস ওর!আমার প্রেয়শীকে যেমন আমি বকবো মারবো তেমনি আমিই আদর করবো আর কেউ না।❞

লোকটা হুট করে আবার হাসতে লাগলো।আবার গিটার হাতে নিয়ে সুর ওঠাতে লাগলো।

__________

সকালে উঠে দেখি আমি এখনো আনফি ভাইয়ার রুমেই শুয়ে আছি।কালকে হয়তো কাঁ’দতে কাঁ’দতে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে লাগলাম।আম্মু আমাকে খাইয়ে দিলো।আমি বাড়ির বাইরে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমার সামনে থামলো।আমি ভ’রকালাম।কে হতে পারে!আমার ভাবনার মাঝেই আরাদ ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে আসলেন।এসে মিষ্টি হেসে বলল,,,
“প্রিয় গাড়িতে উঠে পর দ্রুত”

আমার ভ্রু আপনাআপনি কুচকে গেলো,,,,
❝আরাদ ভাইয়া আপনি মনে হয় ভু*লে গেছেন আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে আপনি আমার স্যার আমি স্টুডেন্ট তাই আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না❞

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখগুলো কেমন লা*ল হয়ে যাচ্ছে।আমি ভ’রকালাম।কিন্তু তাও উনার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চে*ষ্টা করলাম।উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি খুব রে*গে আছেন।শান্ত কন্ঠে বললেন,,,
“প্রিয় আমি তোকে কালকেও বলেছি আমি কাউকে কেয়ার করি না কে কি ভাবলো আর তুই আমার সাথেই যাবি!”

আমার প্রচন্ড রা*গ লাগলো।আমি রে*গে চি’ল্লি’য়ে বললাম,,,,
“আরাদ ভাইয়া সমস্যা কি আপনার আপনায় আমি বলেছি না একবার আমার কেয়ার আসে আমি মেয়ে মানুষ সবাই খা’রা’প ভাববে”

আরাদ ভাইয়া শান্ত কন্ঠে বললেন,,,,
“প্রিয় তুই কিন্তু আমায় রা*গাস না এর ফ’ল ভালো হবে না”

উনি যেনো আমায় শান্ত কন্ঠে হু’ম’কি দিলেন।আমি ভয় পেলাম।তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম গাড়িতে।আরাদ নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো।হঠাৎ করে আরাদ ভাইয়াকে নিজের দিকে আসতে দেখে ঘা’ব’ড়ে গেলাম।

“আ..পনি কা..ছে কে..নো আসছেন”

উনি সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বললেন,,,
“ইডিয়েট আমি সিট বেল্ট লাগাচ্ছিলাম”

আরাদ ভাইয়ার কথায় ল*জ্জা পেলাল। বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামালেন আরাদ ভাইয়া। আমি গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত হাঁটা ধরলাম।কিন্তু তবুও ভাইয়া দৌড়ে এসে আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে বললেন,,,
“দাঁড়ালি না কেনো আমার জন্য”

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। এর সাথে কথা বলাই বে’কার।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই হা করে আমাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ফিসফিস করে আরাদ ভাইয়াকে বললাম,,,,,
❝দেখুন কেমন করে সবাই তাকিয়ে আছে❞

আরাদ ভাইয়া কারো দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
“আই ডোন্ট কেয়ার!আর শোন সবগুলো ক্লাস শেষে দাঁড়িয়ে থাকবি ভার্সিটির সামনে নিয়ে যাবো তোকে”

“আমি একা যেতে পারবো”

“আমি তোকে বলেছি যখন তুই আমার সাথেই যাবি”

কথাটা বলেই আরাদ ভাইয়া চলে গেলেন।আমি ক্লাসে ঢু’কতেই দেখি হিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি ওর পাশে বসতেই বলল,,,
“এখন কেমন আছিস?”

“এইতো ভালোই আছি”

“জানিস কালকে তুই অ’জ্ঞা’ন হওয়ার পর কি হয়েছে”

“কি হইছে”

❝তুই যখন অ!জ্ঞা’ন হয়ে পরে যেতে নিলি তখনই আরাদ স্যার এসে তোকে ধরে ফেলে।আরাদ স্যার অনেক অ’স্থি’র হয়ে গেছিলেন।ম’নে হচ্ছিল উনার প্রিয় মানুষের কিছু হইছে।উনি তোকে পা*গ*লের মতো ডাকছিলেন।আমরা ক্লাসের সবাই হা করে তাকিয়ে ছিলাম।উনি পুরো ভার্সিটিতে তু’ফান লাগিয়ে দিয়েছিলো।আমাদের ডিপার্টমেন্ট হে’ড স্যার তার থেকে বড় কথা ভিসি স্যার পর্যন্ত চলে এসেছিলেন।সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে দেখছিলো।তুই চলে যাওয়ার পর তো সবাই এসে আমাকে প্রশ্ন করছিলো যে আরাদ স্যার কি হয় তো আমি বলেছি কাজিন হয়❞

চোখ বড় বড় করে বললাম,
❝কি আরাদ ভাইয়া এইগুলো করেছে❞

“হুম”

দ্বিতীয় ক্লাসটা আরাদ ভাইয়ার।এখনই হয়তো আসবেন।আমার ভাবনার মাঝে হাজির ও।আমরা সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম।উনি আমাদের বসতে বলে বললেন,,,,
“সরি কালকের জন্য আপনাদের সবাইকে।”

সবাই চি*ল্লিয়ে ইট’স ওকে বলল।আরাদ ভাইয়া হেসে বলল,,,
“আমি আরাদ খান।আপনারা এবার একে একে পরিচয় দিন”

সবাই পরিচয় দিলো।সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো আরাদ ভাইয়া কোনো মেয়ের দিকে একবারের জন্যও তকাননি।আমার পা*লা আসতেই বললাম,,,
“আমি প্রেয়…..”

“তুই বস”

আমি চুপচাপ বসে পরলাম।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে এর একটা কিছু করতেই হবে আজকে বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলবো কি শুরু করেছে কি এই লোক।ক্লাস করে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।এখনো আসেনি আরাদ ভাইয়া। এর মাঝেই একটা ছেলে এসে আমার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বলল,,,
“প্রেয়শী খুব ভালোবাসি তোমায় প্লিজ একসেপ্ট করো।”

আমি কিছুক্ষণ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।ফুল গুলো ছেলেটার হাত থেকে নিতে গেলেই কেউ একজন হেঁ’চ’কা টা’ন মেরে নিজের সাথে চে’পে ধরলো।তাকিয়ে দেখলাম আরাদ ভাইয়া। তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।আরাদ ভাইয়ার চো’খ দিয়ে যেনো আ’গুন বের হচ্ছে!ভ*য় পেলাম আমি।উনি ছেলেটাকে কিছু বললেন না কিন্তু আমায় টানতে টানতে নিয়ে আসলেন ওখান থেকে।

হিয়া আর ওই ছেলেসহ পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্ট সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। ওই ছেলেটা হিয়ার কাছে এসে বলল,,,,
“প্রেয়শী কে স্যার এভাবে কেনো নিয়ে গেলো?”

❝তুমি কি বলদ বুঝতে পারছো না স্যারের কাজিন আর হয়তো স্যার ওকে ভালোবাসে❞

“কি করছেন আরাদ ভাইয়া ছাড়েন প্লিজ হাত ব্যা*থা করছে অনেক”

“ওই ছেলের থেকে ফুল নেওয়ার সাহস কোথা থেকে পাস তুই”

“আমার লাইফ আমার ইচ্ছা আমি কি করবো কি করবো না আপনি কেনো এভাবে অধিকার খাটাচ্ছেন”

আরাদ ভাইয়া উত্তর না দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।নিজে বসে পরলো।এরপর বললো,,,,
“তোর উপর সব থেকে বেশি শুধু আমার অ’ধি’কা’র।এমনকি তোর নিজের থেকেও বেশি”

চিল্লিয়ে বললাম,,,
“এতো কিসের অ’ধি’কার আপনার”

আরাদ ভাইয়া হুট করে একটা কাজ করে বসলেন।যা আমি কখনো ক’ল্প’না ও করতে পারিনি।উনি আমার ঠোঁ’ট আ’কড়ে ধরলেন।আমি ছাড়ানোর চে*ষ্টা করলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো টপটপ করে।উনি ছে’ড়ে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,,,
❝ভালোবাসার অধিকারে আর যেই অধিকার শুধু মাত্র আমারই আছে আর কারো না❞

চলবে,,,,,,,?

[ ইনশাআল্লাহ আজকে পারলে আরেক পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here