একমুঠো বসন্ত পর্ব -১১+১২

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১১

ভার্সিটির গেটে নিহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরিন পিছু ফিরে আবার নিহিলার দিকে এগিয়ে এলো।

এতদিন পরে তার স্বপ্ন পূরণ হলো। তার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সে তার স্বপ্নের দেশে পড়তে এসেছে! চেরি ব্লসমের দেশে! সে বিড়বিড় করে ভার্সিটির নামটি উচ্চারণ করলো। তার মনে হচ্ছে এসব নিছকই স্বপ্ন।

অরিন পিছু ফিরে নিহিলাকে ভার্সিটির সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে দেখে হেসে এগিয়ে আসলো।

হাতে জোরে চিমটি পাওয়ায় নিহিলা ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে চেঁচিয়ে উঠলো। তার চিৎকার শুনে আশেপাশে কয়েকজন স্টুডেন্ট তার দিকে অদ্ভুত চোখে ফিরে তাকালো। নিহিলা চোখ খুলেই আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে অরিনকে বিড়বিড়িয়ে গালি দিল।

অরিন নিহিলার এমন রাগী চাহনী দেখে হেসে দিল,
“তুই স্বপ্ন ভেবে তাকিয়ে ছিলি তাই আমি চিমটি দিয়ে বোঝাইতে চাইলাম যে এটা স্বপ্ন নয় বাট দুঃখিত চিমটিটা জোরে পড়ে গিয়েছে রে।”
নিহিলা আশেপাশে তাকিয়ে অরিনকে রাগী দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করলো। যার অর্থ, ‘তোরে আমি পরে দেখে নিবো।’

অরিন হেসে এগিয়ে গেল।
নিহিলার একদিকে খুশি লাগলেও অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে অনেক পরিমান অস্বস্তি এসে ভর করছে। এতো এতো অচেনা তার উপর ভিনদেশের মানুষের সাথে সে কী মানিয়ে নিতে পারবে! পরবর্তীতে অরিনের কথা মনে পড়তেই একটু স্বস্তিবোধ হলো কিন্তু অরিনের তো অভ্যাস আছে। নিহিলা কী আদো মিশতে পারবে!

কারো ধাক্কায় সম্বিৎ ফিরে পেতেই পাশে তাকাতেই দেখলো অরিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,

“কিরে! কী এতো ভাবছিস? আজকে এতো ভাবনায় পড়ছিস ক্যান?”

“কিছু না। চল।” বলেই নিহিলা পা বাড়ালো।
অরিন নিহিলার সাথে হাঁটতে হাঁটতে উদ্দেশ্য করে বললো,

“অস্বস্তি হচ্ছে? আর তাছাড়া সকাল থেকেই মন খারাপ। সমস্যা নেই, এখানে আমার বন্ধুরা সবাই আছে। সবাই একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। তুইও মিশে যাবি। দেখিস। আর অরিন আছে না, ডর কিসের! হাহা।” শেষের কথাটা শুনে নিহিলা হেসে অরিনের দিকে তাকাতেই সেও হেসে দিল।

ক্লাসে ঢুকতেই নিহিলা আশেপাশে তাকালো। অরিন এগিয়ে নিহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ওরা সবাই ক্যান্টিনে আছে। চল।”

“কারা?”

“আমার ফ্রেন্ডরা। চল,”

ক্যান্টিনে যেতেই অরিন সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নিহিলার দিকে তাকালো। অরিন বলার আগেই তাদের দৃষ্টি অরিনের সাথে থাকা মেয়েটার দিকে।
রণ এগিয়ে এলো,

“ইউ বেঙ্গলি রাইট?”

নিহিলা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়তেই অরিন এগিয়ে এলো।

“কী ব্যাপার রণ? খুব তাড়াতাড়ি চিনে নিলি যে?” অরিনের কথা শুনে রণ মাথা চুলকে হাসার চেষ্টা করলো। তা দেখে অরিন সহ বাকী দুইজনও হেসে দিল।

অরিন নিহিলাকে উদ্দেশ্যে করে একে একে রণ, লিনি,রিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এরা সবাই এ দেশের। সবাই অরিনের মতোই ফর্সা। আর হবেই বা না কেন! এদেশের বলে কথা। তারা কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে ক্লাসে গিয়ে ক্লাস শেষ করলো। আড্ডা বলতে মূলত নিহিলা চুপচাপই ছিল কিন্তু অন্যরা আড্ডা দিয়েছে। এরা খুব তাড়াতাড়িই নিহিলার সাথে মিশে গেল। আসার আগে যতটুকু অস্বস্তি ছিল তা যেন নিমিষেই এরা কাটিয়ে দিয়েছে। আশার বাইরে পেয়ে গেছে নিহিলা। সব মিলিয়ে দিনটা আশার বাইরে ভালোই কেটেছে। ভিনদেশের প্রতি থাকা ধারণাটা পাল্টে গেল। এরা খুব তাড়াতাড়ি মানুষকে আপন করে নেয়। যাক, অস্বস্তি একেবারের জন্য মিলিয়ে গেল।

———–

বিকালে অরিন নিহিলাকে নিয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরী হতে গেল। এই প্রথম বোধহয় এভাবে বের হওয়া হবে। সবসময়ের মতো অরিন শর্ট জামাই পড়লো আর নিহিলা লং কুর্তি আর বিনুনি।
নিহিলা অরিনের দিকে একবার তাকালো। অরিন আয়না দেখে চুলগুলো আরেকটু আচড়িয়ে নিচ্ছিলো।

“কী দেখছিস অমন করে?”

“এসব জামা না পড়লে হয় না অরিন?”

অরিন নিহিলার দিকে ফিরে তাকালো।
“এসব এখনকার স্বাভাবিক ব্যাপার। তুই প্রথম আসছিস তাই অদ্ভুত লাগছে।”

“সেটা না। তুই চাইলে নিজেকে নিজে সংশোধন করে নিতে পারবি।” বলেই নিহিলা রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
নিহিলাকে বের হতে দেখে অরিনও পার্স নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল।

রাস্তায় বের হয়েই নিহিলা আশেপাশে তাকালো। আজ তারা হেটেই যাবে। অরিন গাড়ি নিতে চেয়েছিল কিন্তু নিহিলা বারণ করেছে কারণ দেশে থাকাকালীন প্রায় সময় হেটে এখানে ওখানে যাওয়া হতো। এখানে এসে একটুও হাঁটাহাঁটি হয়নি। মূলত রাস্তাও উপভোগ করবে সেই ভাবনা নিয়েই নিহিলা হাঁটার প্ল্যান করলো। তার সাথে বাধ্য হয়ে অরিনেরও হাঁটতে হচ্ছে। নিহিলা আড়চোখে অরিনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মেয়েটার হাঁটার একদম অভ্যাস নেই বিধায় চেহারা মলিন।

“গাড়ি বল।” নিহিলার কথা শুনে অরিন দাঁড়িয়ে পড়লো।

“প্রথমে না নিবি না বলছিলি?” অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিহিলা হাসলো।

“আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তোর জন্য বললাম।”
অরিন সাথে সাথে ফোন করে রিনা আহমেদকে গাড়ির কথা বললো।

বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরে গাড়ি আসতেই অরিন আর নিহিলা থমকে গেল। তাদের সব আনন্দ যেন মুহূর্তের মধ্যে উবে গেল।

“মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়িতে উঠো।”

রাহানের বলা কথা কানে যেতেই অরিন নিহিলাকে টেনে গাড়িতে বসালো। এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে কেন যে গাড়ির কথা বাড়িতে বলতে গেল! প্রথমেই যদি নিয়ে আসতো তাহলে তাদের আনন্দ মাটি হতো না। তখন রাহান ভাই রুমেই ছিল। খেয়ালই করতো না।

অরিন গাড়িতে উঠে নিহিলার দিকে তাকালো। সেও তাকাতেই অরিন এক গাদা গালি দিল। যার অর্থ,’তোর জন্যই হয়েছে সব, প্রথমেই যদি নিয়ে আসতাম তবে এই পরিস্থিতি হতো না।’

নিহিলা অরিনের দৃষ্টির পরোয়া না করে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল।

“ভাইয়া, তুমি কেন কষ্ট করে আসতে গেলে!”

“বিকালে একা দুইটা মেয়ে বের হওয়ার সাহস কীভাবে করেছিস?” ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে রাহান কথাগুলো বলতেই অরিন চুপ হয়ে গেল।

“আর হবে না এমন। ভাইয়া, শুনলাম কিছুটা দূরে একটা মেলা হচ্ছে।”

অরিনের কথা শুনেও রাহান চুপ রইল।

“কই নিয়ে যাচ্ছ ভাইয়া?” অরিনের আবার কথা বলা শুনে রাহান তাকালো।

“মেলায়।”

কথাটি শুনে নিহিলা উপরে ভার দেখালেও ভেতরে ভেতরে ভারী খুশি হলো। বাংলাদেশে মানুষের আনাগোনার মধ্যে থাকতে থাকতে এখন এরকম নীরব জায়গা ভালো লাগে না। নিহিলা জানে না এখানের মেলা কেমন হয় তাই সে ভারী উৎসুক।

গাড়ি থেকে নেমেই অরিন আর নিহিলা আশেপাশে তাকালো। অনেক মানুষের ভিড়। এতো মানুষের ভিড়ে কোনসময় তারা একেকজনকে হারিয়ে ফেলে। তারা আর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেল না।
রাহান গাড়ি একদিকে সাইট করে রেখে এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই আশেপাশে তাকিয়ে অনেক মানুষ দেখে সে নিজেও নিজেকে গালি দিল। অরিন বলেছে বলে সেও যে কেন এখানে আনতে গেল! এতো মানুষের ভিড়ে কিন্তু এখন তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।

রাহান অরিনের হাত ধরলো। নিহিলার দিকে তাকাতেই নিহিলা ঐপাশে গিয়ে অরিনের পিছু নিল। কিছু সময় যেতেই এক দল লোকের ভিড়ে নিহিলা অরিনের হাত ছুটে পেছনে পড়ে গেল। রাহান এগিয়ে এসে সামনের দিকে তাকিয়েই তার অপর হাতটা নিহিলার দিকে বাড়িয়ে দিল।

“হাত ধরো।”

“লাগবে না।” বলেই আশেপাশে তাকিয়ে রাহানের হাতের শার্টয়ের কাপড় চিমটি দিয়ে ধরলো। তা দেখে রাহানের ঠোঁটের কিনারা হালকা প্রসারিত হলো। অরিন ভাইয়ের দিকে তাকাতেই থমকে গেল। শেষমেষ তার ভাই! না না সে এটা কী ভাবছে! দায়ে পড়েই তো নিহিলাকে হাত ধরতে বলেছে। নাহয় এতো এতো মানুষের ভিড়ে সে হারিয়ে যাবে তো। অরিন আরেকবার তাকালো। রাহান নিহিলার হাত ধরেনি তবে নিহিলা তার হাতের কাপড়ের কিছু অংশ ধরে আছে। তা দেখে অরিনের মুখভঙ্গি পাল্টে গেল। যদি তার প্রথমের ভাবনানুসারে এমন কিছু হয় তবে তার আপত্তি নেই। মন্দ হয় না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রিচেক দেওয়া হয়নি,ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ।)#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১২

সাফাতের মন আজ বেশ ফুরফুরে। প্রায় কয়েকদিন পরে বাড়ি ফিরতে পারছে বলে কথা! যদিও মাত্র কয়েকদিন কিন্তু তার মনে হচ্ছে কত সহস্র দিন সে বাড়ির বাইরে! সে ভাবেনি এই প্রথম আমান শেখ এতো তাড়াতাড়ি কথা ভেঙেছেন। তিনি তো প্রথমে একমাসের মাথায় বাড়ি আসতে বলেছিল কিন্তু কয়েকদিন পেরোতেই সাফাত যখন বাবাকে কল দিয়ে বললো সে ভালোভাবেই সব করেছে। প্রথমে আমান শেখ কল কেটে অফিসের খবর নিল তারপর আবার কল দিয়ে বললো যেন বাড়ি এসে কয়েকদিন ঘুরে যায় তারপর নাহয় আবার আসবে। সাফাত প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে আর বিষয়টা ঘাটলো না। যাক, বাড়ি ফিরবে অবশেষে।

এই কয়েকদিন সে বাড়িতেও কল করেনি। অবশ্য, আমান শেখ বাড়িতে কল করার অনুমতি দিয়েছিল কিন্তু সাফাতের ইচ্ছে হয়নি। মিলির সাথেও কথা হয়নি। প্রথম দুইদিন পরে কল দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মায়েরা তেমন কথা বলেনি। এমনিতে মায়েদের থেকে ভার ভার আচরণ পেয়ে সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল তার উপর মিলির সেই একই কর্মকান্ডের ফলে আর ফোন করার ইচ্ছে হয়নি। মিলির মূল লক্ষ্য ছিল সাফাত যেন তাদের এদিকের ব্যাবসাটা নিয়ে একেবারের জন্য মিলিকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। সাফাত ভেবেছিল তার অনুপস্থিতিতে মিলি বুঝতে পারবে কিন্তু তার ধারণা ভুল। সে বুঝতে পারলো মিলি শুধরাবার নয়।

গাড়িতে উঠেই তার মন খুশি খুশি লাগছে। কেন লাগছে সে জানে না কিন্তু তার মনে হচ্ছে যেন অনেকদিনের চোখের তৃষ্ণা সে আজ মিটাতে পারবে। তার এমন উৎফুল্লতা সে বুঝতে পারলো তখনই যখন গাড়িটি চট্টগ্রামে অর্থাৎ বাড়ির কাছাকাছি এলো।
প্রতিবার আসার সময় এই বেলি ফুলের দোকানটার থেকে একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে যেত আর সেই দোকানের নার্সারি থেকে সবসময় যেকোনো একটা ফুলের চারা নিতো। আশ্চর্যজনক ভাবে এই বারও সে গাড়িটি সেই দোকানের সামনেই থামালো। গাড়ি থেকে নেমে দোকানের সামনে যেতেই দোকানদারটি সাফাতকে চিনে নিল। চিনবেই বা না কেন!প্রতিবার যে নিয়ম করে এই দোকানটি থেকেই সব নিতো।

“বাবু আসেন। এইবার অনেকদিন পরে এলেন যে!”

সাফাতের অবচেতন মন জিজ্ঞেস করলো,
“কতদিন পরে?”

“এই ধরেন একমাস মতো হচ্ছে। প্রতিবার তো প্রতি সপ্তাহেই আসতেন।” বলেই তিনি পেছনে দোকানের এক কর্মচারী ছেলের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন,
“এই জসিম,বাবুর জন্য একটি বেলি ফুলের মালা আর গোলাপ সুন্দর করে মুড়িয়ে দে।” বলেই তিনি সাফাতের দিকে ফিরে চাইল,
“বাবু, আজ কোন গাছটা নিবেন?”

সাফাত কী বুঝে না করলো না। সে হাতের ইশারায় সাদা গোলাপটা দেখালো,
“এটা দাও।”

“ঠিক আছে। আপামনি ভালো আছেন? আর গতবার গোলাপ নিছিলেন ঐটাতে গোলাপ ধরেছে?” বলতে বলতেই তিনি গাছটি নিলেন।

সাফাতের মনে আসলো। প্রতিবার ওরা ব্যালকনিতে গল্প করার সময় নিহিলা মন খারাপ করে দেখাতো,
“দেখেন তো সাফাত ভাই। এখনো গোলাপ আসছে না। একটাতে ধরেছে আরেকটাতে ধরছে না।”

সাফাত হাসতো। হেসে সান্ত্বনা দিতো,’ধরবে,’। সাফাতের এই একটা সান্ত্বনাতে নিহিলা ভরসা খুঁজে পেতো। তার উৎফুল্লতা দেখে মনে হতো যে সাফাত বলেছে আর ফুল ধরে গেছে। সাফাত গভীর থেকে একটা শ্বাস নিল। এইবারও মনে পড়ছে ভীষণ করে। কিন্তু এসব কেন নিয়ে যাচ্ছে সে জানে না। এখন তো এসব আর মানাই না কিন্তু সাফাত এসবের ধার ধরছে না। তার অবচেতন মন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে নিহিলার কথা।

—–

নিহিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে বসতেই ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ গেল। সে উঠে আয়নার সামনে এগিয়ে গেল। আয়নার সামনে থাকা খরগোশ ল্যাম্পটি হাতে নিয়ে হাত বুলালো। এটা এখানে কী করছে! এটা তো সে মেলায় দেখেছিল। পছন্দ হয়েছিল বিধায় দুইবার তাকিয়েছিল কিন্তু এটা এখানে কে এনে দিল! তবে কী…কিছু একটা ভাবতেই নিহিলা নিজেকে নিজে সংযত করলো।
“এসব কী ভাবছিস তুই নিহিলা! এসব কিছুই না।” এসব ভেবেও নিহিলা নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারলো না।

অরিন ঘুম থেকে উঠে বসতেই নিহিলাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খরগোশ ল্যাম্পটি হাতে নিয়ে কিছু একটা ভাবতে দেখে হাসলো। হেসে এগিয়ে গেল।

“কিরে কী ভাবছিস?” অরিনের কথায় নিহিলা হাতে থাকা খরগোশ ল্যাম্পটার দিকে তাকালো।

“এটা?”

নিহিলার প্রশ্নবোধক চাহনী দেখে অরিন কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিমা করে বলে উঠল,
“ওহ, এটা? এটা কালকে রাতে ভাইয়া এনে দিছিল।” বলেই অরিন মাথা চুলকে বলল,
“কিন্তু এটার দিকে আমি তো তাকাইনি তবে ভাইয়া কেন এনে দিয়েছে বুঝলাম না।”

নিহিলা অরিনের দিকে ফিরে তাকালো,
“কেন! কিছু বলেনি?”

নিহিলার কথা শুনে অরিন হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমা করে বলে উঠল,
“আরে দূর! ভাইয়া এসব কিছু বলে না-কি! সব চুপচাপ নীরবের মধ্যে করবে। কালকে এটা এনে আমার হাতে দিয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এটা কেন। জবাবে ভাইয়া বলল,’কাজে লাগবে রাখ।’ বলেই রুমে চলে গেল।”

“উনি আবার গিয়েছে?”

“আবার মানে?”

“না মেলাটাতো অনেক দূরে। আমরা তো পরশু গিয়েছিলাম। এখনো আছে?”

“হ্যাঁ মেলাটা সাতদিন মতো থাকে।” বলেই অরিন হেসে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

নিহিলা ভাবনায় পড়ে গেল। তার মানে এটা সেদিন রাহান ভাই খেয়াল করেছিল! ভাবতেই নিহিলার সেদিনের দৃশ্যপটটা ভেসে উঠলো।

সেদিন মেলায় ঢুকতেই একটা দোকানে নিহিলা থেমে গেল। মূলত এই খরগোশ ল্যাম্পটাই চোখে পড়েছিল বিধায় একটু দেখেছিল কিন্তু সেটা কাউকে বলা হয়নি কারণ তার হাতে সেরকম টাকা ছিল না আর তাছাড়া কারোর কাছে থেকে খুঁজে জিনিস নেওয়াটাও বেমানান। তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রাহানও দাঁড়িয়েছিল কিন্তু রাহান তাকাতেই নিহিলা আবার হাঁটা শুরু করে। পরবর্তীতে রাহান যে সেই জিনিসটা খেয়াল করেছে সেটা নিহিলা ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি।
নিহিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। খরগোশ ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে সেটার দিকে দৃষ্টিপাত করে হাসলো।
“মানুষটা উপরে যেমন দেখায় তেমনটা না। আংশিক হয়ত।”

“এই নিহিলা কী বলছিস বিড়বিড় করে?” অরিন ওয়াশরুম থেকে এসে মাথায় ঠোকা দিতেই নিহিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। সে ধরা পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিমায় খরগোশ ল্যাম্পটা পেছনে ফিরে আগের জায়গায় আবারো সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
“কিছু না।”

“আচ্ছা? আমার তো ভাবনায় এটা আসেনি যে মেলায় তুই সহ গেছিলি! কোনোভাবে তোর এটা পছন্দ হয়েছিল? কই আমি তো এটা খেয়ালই করিনি। তবে রাহান ভাইয়া কী তোর পছন্দ হয়েছে বলে এটা এনে দিয়েছে! আমার পছন্দ না হলে বা ভাইয়ার পছন্দ না হলে এরকম তো কোনোদিন করেনি!”

নিহিলা ল্যাম্পটির দিকে তাকালো। আসলেই কী! সে তাকিয়েছিল বলেই এনে দিয়েছে! আজব মানুষ তো! এমন অদ্ভুত মানুষ সে আগে দেখেনি। তিনি উপরে যতটা দেখাই ততটা না। তবে এটা ভেবে ভালো লাগলো যে উপরে যেমনটা দেখায় তেমনটা পুরোপুরি না। মানুষটা অতটা খারাপও না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রিচেক করা হয়নি। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here