একমুঠো বসন্ত পর্ব -১৩+১৪

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১৩

সাফাত বাড়ি ঢুকেই সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আশেপাশে তাকালো। নিহিলা কী এখনো তার উপর রেগে আছে! হয়ত! তাই তো এতক্ষন রুম থেকে বের হয়নি। সাফাত রুমে যাওয়ার আগেই নিহিলার রুমের দিকে তাকালো। দরজা বন্ধ। আচ্ছা! মেয়েটা দরজা বন্ধ করে বসে আছে কেন! না-কি সে এসেছে জেনেই আর বের হচ্ছে না! বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে!

সাফাত রুমের দরজায় দাঁড়াতেও দেখলো মিলি মোবাইল নিয়েই বসে আছে। সে এসেছে দীর্ঘক্ষন হচ্ছে কিন্তু মিলি রুম থেকে বেরও হয়নি। সে রুমে ঢুকে হাতে থাকা ব্যাগটা জোরেসরে রাখলো যাতে মিলির ধ্যান মগ্ন হয়।

মিলি খেয়াল করেছে। সে মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একবার সাফাতের দিকে তাকিয়ে আবারো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তা দেখে সাফাত মলিন হাসলো,
“স্বামী বাসায় আসলে নিজের কাজ থামানো উচিত।”

“স্বামীরও উচিত বৌয়ের সব দায়িত্ব পালন করা। কী করেছো তুমি! একটা অধিকার চেয়েছি সেটাও তো পূরণ করতে পারছো না। কেমন স্বামী তুমি!”

“উল্টাপাল্টা অধিকার পূরণ করতে বাধ্য নই আমি।”

মিলির মাথা গরম হয়ে গেল। কিন্তু সে নিজেকে ঠান্ডা করলো। সবজায়গায় গরম ভাব দেখানো উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে। মিলি জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না। সে মোবাইল হাতে নিয়ে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

সাফাত মিলির দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলল। এরপর কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। সে এই মিলির সাথে সংসার করবে! বড়োসড়ো ভুল করে ফেলেছে। ভুল যখন করেছে শুধরাতেও হবে। যেহেতু অধ্যায়টার সূচনা সেই লিখেছে সেহেতু অধ্যায়ের উপসংহারও তারই লেখা উচিত।

রিহি এসে মিলিকে মোবাইলে ব্যস্ত দেখে কিছু একটা ভাবলো। এমন সময়েই সাফাত ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হলো। রিহি মিলির দিকে তাকালো। মিলির স্বামী এতদিন পরে বাইর থেকে এসেছে, কই একটি যত্ন করবে তা না সে মোবাইল নিয়ে বসে আছে! রিহি ভাবলো, তার মানে কী তার ভাই ফল পেয়ে যাচ্ছে!

“আরে রিহি যে! আয়, ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান?”

“আরে না, তোরে খেতে ডাকতে এলাম। সাথে মিলি ভাবীকেও।”
রিহি মিলির দিকে তাকালো। মিলি শুনেও না শোনার ভান করে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।

“মিলি ভাবী?”

“আমি খাবো না।” বলেই সে মোবাইল নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। সাফাত আর ঘাটলো না। সে রিহিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। রিহি ভাইয়ের দিকে তাকালো। তার ভাইও ভাবীকে আরেকবার ডেকে দেখলো না। তার মানে কী এদের মধ্যে শুরুতেই ঝামেলা! রিহি মনে মনে নিজেকে গালি দিল। এমন কিছু না হোক। সবাই সুখে থাকুক।

সাফাত খেতে বসেও নিহিলাকে দেখলো না। খাওয়া শেষে সে উপরে উঠে নিহিলার ঘরের সামনে পায়চারি করতে লাগলো। বেলিফুলটা এখনো তার পকেটে রয়ে গেছে। গাড়িতে অনেকক্ষন নিজের সাথে যুদ্ধ করে ভেবেছে নিজের মনকে শুধরানোর চেষ্টা করবে। মিলিকেই বেলি ফুলের মালাটা দিয়ে খুশি রাখার চেষ্টা করবে কিন্তু মিলির কর্মকান্ডে তার মন আগেরটাতেই স্থির হয়ে গিয়েছে। সাদা গোলাপের গাছটা সে নিহিলার রুমের দরজার সামনে রেখেছে। কিন্তু মনে তো হচ্ছে না এখানে কেউ এসেছে।
রিহি সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে যেতে নিতেই নিহিলার রুমের দরজার সামনে ভাইকে দেখে এগিয়ে আসলো। দরজার সামনে গাছ দেখে সে কিছু একটা আন্দাজ করলো।

“ভাইয়া, তুই?”

সাফাত বোনের দিকে ফিরে তাকালো।

“গাছটা তুই এনেছিস?”

“হ্যাঁ, নিহি পছন্দ করতো তাই আনলাম।”

রিহি কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে শক্ত হয়ে গেল।
“কেন এনেছিস?”

সাফাত মাথা নিচু করে ফেলল।
“তুই এখন বিবাহিত সেটা মাথায় রাখ ভাইয়া। মিলি ভাবীর সাথেই থাকবি।”

“আমি বড়োসড়ো ভুল করে ফেলেছি রে বোন। মানুষ চিনতে পারিনি। আমার চোখে পর্দা পড়ে গিয়েছিল রে।”

ভাইয়ের এমন কথায় রিহি কেঁপে উঠলো। তার মায়া লাগলো ভাইটার জন্য। যেমনই হোক নিজের ভাইতো! এই মানুষটার কণ্ঠস্বর এতো অসহায় শোনাচ্ছে কেন! মানুষটার এমন অসহায় কণ্ঠস্বর সে মেনে নিতে পারছে না কিন্তু এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগলেও সে নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করলো,

“কিছুই করার নেই ভাইয়া । ভুল করেছিস এখন সেটা নিয়েই ভালোভাবে থাকবি।”

“ভুল আমি করেছি তাই এটার শেষ আমি করে দিবো।”

“কী শেষ করবি?” বলেই রিহি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সাফাত মাথা নিচু করে ফেলল।

“নিহিলা নেই। চলে গেছে।”

সাফাত রিহির কথা বুঝতে পারলো না।
“নেই মানে?”

“নেই মানে নেই। সে জাপানে ফুপির কাছে চলে গেছে।”

সাফাত হাসলো।

“তুই তুই মজা করছিস তাই না?”

“তোর সাথে আমার মজা করার সম্পর্ক আগে থাকলেও এখন নেই ভাই।”রিহির শান্তস্বরে বলা কথাটাই সাফাতকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। সাফাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তাকে সেভাবে রেখেই রিহি চলে গেল।

সাফাতের চোখে ভাসছে নিহিলার উচ্চস্বরে হাসির মুখ। মেয়েটাকে সে এতো গভীর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে দিয়েছে যে মেয়েটা এতো দূরে চলে গেল! পরিবার ছেড়ে যেতে কীভাবে পারলো! সাফাত পরক্ষনে নিজের উপরেই হাসলো। যাবেই বা না কেন! কিসের জন্য থাকবে! এখানে থেকে নিজের অতীতের তিক্ত স্মৃতি মনে করে সে তো এগিয়ে যেতে পারবে না। একটা পা’ষা’ন মানুষ এসে তার জীবনে একটা বি’শ্রী অতীত দিয়ে দিয়েছে আর সে সেই পা’ষা’ন মানুষটাকে ক্ষমা করে এখানেই থেকে যাবে! সাফাত মলিন হাসলো।

সে ফুলের গাছটার দিকে তাকালো। এক পা এগিয়ে ফুলের গাছটা হাতে নিয়ে নিহিলার রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজা খুলতেই চারপাশে তাকালো। সাফাত রুমের আলো জ্বালালো না। ঐভাবেই এগিয়ে গেল। রুমের চারদিকে থেকে যেন নিহিলার হাসির ঝংকার শোনা যাচ্ছে। যেন হেসে হেসে বলছে,’শেষপর্যন্ত ফিরে আসলেন তো সাফাত ভাই!’ বলতে বলতেই কেঁদে দিল, কেঁদে কেঁদেই বলা শুরু করলো,’আমাকে এমন একটা অতীত কেন দিলেন, আমি ভালো থাকতে পারছি না ‘। সাফাত ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল। আশ্চর্য! তার এমন কেন লাগছে! সে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেল। ব্যালকনিতে গিয়েই দেখলো তার সব গাছগুলো সারি সারি লাগানো আছে। নিশ্চই নিহিলা রিহিকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে গাছগুলোর। এখন সব গাছেই কম বেশি একটা ফুল আছেই। যে গাছটাতে ফুল ধরেনি বলে মন খারাপ করেছিল নিহিলা সে গাছটিতে একসাথে তিনটি ফুল আছে। সাফাত একটু এগিয়ে গাছটির ফুলগুলোতে ছোঁয়া লাগিয়ে দিল। আজ নিহিলা থাকলে নিশ্চই খুশি হতো ভীষণ! কী জানি! সাফাত তার হাতে থাকা গাছটা সহ বাকী গাছগুলোর সাথে রাখলো। আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে বিশাল বড়ো। তালার মতো চাঁদটার সব আলো যেন নিহিলার ব্যালকনিটাতে এসে পড়েছে। নিহিলা থাকলে নিশ্চিত এই দোলনাতে বসে রাতটা উপভোগ করতো। পাশে নিজের রুমের ব্যালকনিতে চোখ যেতেই দেখতে পেল মিলি ফোনে কথা বলছে। ঐপাশে ফেরা ছিল আর এই ব্যালকনিতে কোনো আলো জ্বালায়নি বলে মিলি খেয়াল করতে পারেনি। সাফাত তাকিয়ে রইল। মিলি কার সাথে কথা বলছে! তার তো পরিবারের সাথে যোগাযোগ নেই। সে এই মিলি আর বিয়ের আগের মিলির সাথে মেলাতে পারছে না। সাফাত এক দীর্ঘ-মলিন শ্বাস ফেলল। আলো আঁধারে সাফাতকে দেখা যাচ্ছে না। সাফাত মিলির ব্যাপারটা আর ঘাটার চেষ্টা করলো না। ইচ্ছে করলো না গিয়ে মিলির ফোনটা দেখার। সে এগিয়ে নিহিলার দোলনাটাতে বসলো। আজ আর রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না। রাতটা এভাবেই কাটিয়ে দিবে।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১৪

বিদায় নিয়েছে কনকনে শীত। এক পসলা বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে তার আপন রূপে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে মৃতপ্রায় পাতাহীন গাছের ঢালগুলো। কোমল বাতাস এবং সুন্দর ফুলের সাথে উষ্ণ আবহাওয়া প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ-অপ্রতীম মুগ্ধতার গন্ধে বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত।
দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকগুলো দিন। সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। যেভাবেই হোক চলবেই। নিহিলা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। সপ্তাহ ধরে রোদের বেশ আমেজ। এ রকম নিয়মিত রোদ, ঝকঝকে নীল আকাশ নিহিলা আসা পর্যন্ত আর দেখেনি। তার সঙ্গে এমন এক আউলা বাতাস বইছে। কিন্তু সে হাওয়ায় একরকম মিষ্টি স্বাদ। দেহে শীত অনুভূত হলেও এক ভালো লাগার আবেশ ছুঁয়ে দেয়। নিহিলা ব্যালকনি থেকে এসবই পর্যবেক্ষণ করছিলো। বেশ কিছুক্ষন থেকে শীত অনুভব হতেই ব্যালকনি ত্যাগ করলো।
নিহিলা নিজের রুমে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল। এমন সময় হুট্ করে অরিন হাতে দুইটা জামা নিয়ে ঢুকলো। তা দেখে নিহিলা ভ্রু কুচকালো।

“তুই তো বের হোসনি তবে হাতে শপিং ব্যাগ কেন?”

অরিন শপিং ব্যাগ দুটো নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে খাটে বসলো।

“রাহান ভাইয়া এনেছে। রাহান ভাইয়া এভাবেই হুটহাট আনে অথচ মুখ ফুটে কিছুই বলে না।”

“আচ্ছা।” বলেই নিহিলা আবারো মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ দিল। এই গম্ভীর ছেলেটাকে নিয়ে সে আপাতত আর ভাববে না। এতদিন ভাবতে ভাবতে তার দিন শেষ মানে এতো গম্ভীর মানুষ কিভাবে হয় সেটাই সে ভেবে পায় না।

“এখান থেকে এটা তোর।” বলেই অরিন একটা প্যাকেট নিহিলার দিকে বাড়িয়ে দিল।

নিহিলা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে একবার প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে অরিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“আমার জন্য?”

“হ্যাঁ। পছন্দ হয়েছে কিনা দেখ।” বলেই অরিন নিজের জামাটা নিয়ে চলে যেতে নিতেই আবার ফিরে তাকালো,
“অবশ্য, ভাইয়ার পছন্দ বলে কথা, পছন্দ হবেই।”বলেই অরিন জামা নিয়ে চলে গেল।

নিহিলা প্যাকেটটা খুলে জামাটা বের করলো। সাদা আর হাল্কা গোলাপী রঙের একটা গ্রাউন্ এর মতো। নিহিলা পুরোপুরি বের করলো জামাটা।
সে সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে ধরলো।
“আসলেই পছন্দ সুন্দর।” কিন্তু পরক্ষনেই নিহিলা রেখে দিল। সে গাঢ় নীল, কালো ছাড়া অন্য রঙের কাপড় পড়তে তেমন একটা সাচ্ছন্দবোধ করে না কিন্তু এই রঙটা যদিও হাল্কা কিন্তু না পড়তে পড়তে তার আর ইচ্ছে হয় না।

“বলছি না? ভাই মানুষের সাথে মানাবে তেমন কাপড়ই আনবে।” বলেই অরিন নিজের দিকে তাকালো,
“দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে।”

নিহিলা জামাটা রেখে অরিনের দিকে এগিয়ে আসলো। অরিনেরটা সাদা আর হাল্কা লালের মধ্যে।

“মাশাআল্লাহ, কী সুন্দর লাগছে তোকে।”

“তোকেও লাগবে।” বলেই অরিন নিজের জামাটা আরেকটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো।

“এগুলো কেন এনেছেন?”

“কী জানি! এনেছে খুশি হয়েছি অনেক।” বলেই অরিন মাকে দেখাতে চলে গেল।

নিহিলা ভাবনায় পড়ে গেল। হুটহাট মানুষটা এমন কর্মকান্ড করে। আবার পরক্ষনেই নিজের বোকামোতে গালি দিল। হয়ত জামা সুন্দর লেগেছে বিধায় বোনের জন্য নেয়ার সময় নিহিলার জন্যও নিয়েছে। এতে এতো ভাবার কী আছে!

“নিহিলা শোন, বিকালে জামাটা পড়ে তৈরী হয়ে নিবি।”অরিন দ্রুত পদে রুমে এসেই নিহিলার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে উঠল,

“কেন?”

“রাহান ভাইয়া কোথাও নিয়ে যাবে।”

“রাহান ভাই!” নিহিলা ভাবনায় চলে গেল। এই একটা মানুষকে সে ঠিক চিনে উঠতে পারে না। এমন গম্ভীর মানুষের সাথেও ঘোরা যায় না-কি!

“আমি যাবো না।”

“কেন?”

“তোর যে গম্ভীর ভাই! একটু বেশি কথা বললেও ধমক দেয়। এমন মানুষের সাথে যাওয়া মানে জেনে শুনে কুমিরের লেজে পা দেওয়া। আনন্দটাই মাটি।”

“তুই কী আমার ভাইকে অপমান করছিস?” অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিহিলা এগিয়ে আসলো,
“তুই নিজেই তো জানিস আনন্দ মাটি হবে সেটার কথা বললাম।”

“তা ঠিক কিন্তু এইবার বাবা মা সহ যাচ্ছে। সুন্দরভাবেই কাটাতে পারবো।” বলেই সে নিহিলার দিকে তাকালো,
“আমার ভাই কিন্তু অতটাও খারাপ না। তুই যেমনটা মনে করছিস। মাঝে মাঝে আমরা অতিরিক্ত খুশি হয়ে লাফালেও ডাক দেয় না।”

“কই যাবি তো?”

“জানি না এখনো।”

———–

বিকালে সবাই তৈরী হয়ে নিল। নিহিলা রাহানের দেওয়া কাপড় হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই রঙটা তার একসময় পছন্দ ছিল কিন্তু এখন আর পড়তে ইচ্ছে করে না কিন্তু কেউ একজন খুশি হয়ে উপহার হিসেবে এনেছেন। না পড়লে কেমন দেখায়! তা ভাবতে গিয়েই পরক্ষনেই জবাব মিলল, নিহিলার এসবে কারোর ধ্যান থাকবে না। রাহান ভাই নিজের বোনের জন্য কিনতে গিয়ে আরেকটা মেয়ে আছে ভেবেই নিয়েছে। বলতে গেলে দায়ে পড়ে নিয়েছে এতে সে মেয়ে জামাটা পড়লো কী ফেলে দিল এতে মানুষটায় কোনো কিছু যায় আসবে না। অন্তত রাহান ভাইয়ের কাছে এসব কোনো কিছু না। নিহিলা দীর্ঘক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে কাপড়টা রেখে দিল। এটা সে পড়বে না। সে আলমারি থেকে আরেকটা কুর্তি বের করে সামনে দিয়ে বিনুনি এনে আগের নিয়মেই তৈরী হয়ে নিল।

অরিন রুমের বাইরে থেকে নিহিলাকে ডাক দিয়ে নিচে নেমে গেল। নিহিলা দ্রুত পদে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেল সামনে বরাবর রাহান ভাইও এসে দাঁড়িয়েছে। বোধহয় উনিও মাত্রই রুম থেকে বেরিয়েছে।

নিহিলা রাহান আগে নেমে যাওয়ার জন্য সরে দাঁড়ালো। কিন্তু তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো।

“কাপড়টা পড়োনি কেন?”
রাহান ভাইয়ের কণ্ঠস্বর পেয়ে নিহিলা তাকালো। তিনি দুহাত পকেটে রেখে সামনের দিকে তাকিয়েই কথাটা বলেছেন।

“এমনিতে।”

“সবসময় গাঢ় নীল, কালো এসব জামা পড়ো। খুবই অশুভ এর মতো। মাঝে মাঝে বদলিয়ে পড়ো, ভালো লাগবে।”বলেই তিনি নিচে নেমে গেলেন। আর নিহিলা ঐভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে না! এমন কথা তাও রাহান ভাই বলেছে! এমন অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ অন্য কারোর জামার রঙের দিকেও খেয়াল দেয় না-কি? সে কী বুঝে নেমে যেতে পা বাড়াতে নিতেই থেমে গেল। অরিন নিচে থেকে ডাক দিচ্ছে।
“অরিন, কিছুক্ষন অপেক্ষা কর।” বলেই নিহিলা আবার রুমের দিকে পা বাড়ালো।
কিছুক্ষনের মধ্যে রাহানের আনা সেই হাল্কা গোলাপী সাদা মিশ্রনের কাপড়টি পড়ে নেমে আসলো নিহিলা।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here