একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব ২৩+২৪+২৫

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৩

বাসার ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আনাজ আর ইয়ানা অপেক্ষায় আছে কখন তাদের ফ্যামিলি আসবে। এই কয়টি দিন বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে। পরিবারের গুরুত্বটায় যে এতো প্রখরতা আছে তা বোঝা যায়। মা বাবাকে ছাড়া বাড়িটাও কেমন যেন নির্জীব নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলো। তবে, আজকে থেকে আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে, আয়নার আড্ডায়, আনজানার লাফালাফিতে।
হাতে থাকা সফট্ ওয়াচটা বার বার নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখছে আনাজ। ট্রেন আর কিছুক্ষণের মাঝেই পৌছুবে। তাদের রিসিভ করতে যাবে আনাজ।
আনাজের মা বাবার কোনো ইনটেনশন ছিলো না এতো জলদি আসার। তবে, আনাজের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে ফিরছে। ইয়ানা বুঝতে পারছে, আনাজ তার সাথে কেমন থাকতে চাইছে না। সেদিন আনাজকে প্রতিদিনের ন্যায় কফি দিতে যেয়ে দরজা থেকেই শুনতে পায় আনাজ ব্যস্ত হয়ে আয়নাকে বলছে

–‘আম্মু তুমি জলদি চলে আসো প্লিজ! আমার আর ভালো লাগছে না এভাবে থাকতে।’

–‘হোয়াট! প্রাইভেসি? কেনো মা? এভাবেই কি প্রাইভেসি হচ্ছে না? আর এসবের অপপাত কোনো দরকার নেই (আনাজ)

–‘উহু, তুমি বুঝছো না কেনো মা? আর আনু? ওর কথা ভুলে গেছো? ওর সামনে এক্সাম পড়ালেখার বিন্দুমাত্র চিন্তে নেই। নির্দ্বিধায় ঘুরে বেরাচ্ছে সে!'(আনাজ)

—‘না মা, আমি আর কিছু শুনবো না।তুমি জাস্ট জলদি চলে এসো’

এরকম রেগে কথাগুলো বলেছে আনাজ। আনাজের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে কষ্টসমূহ দলা পাকিয়ে যাচ্ছিলো।

আর আজকাল একা একা থাকতেই বেশ কমফোর্টেবল ফিল করে আনাজ । ইয়ানাও আর আনাজের ধারে কাছে যায় না। সেদিনের আনাজের রেগে যাওয়ার পর থেকে।
——-

সবাইকে রিসিভ করতে গিয়েছে আনাজ। মাত্রই ট্রেন ফিরলো। গাড়িটা নিয়ে বেড়িয়ে পরে আনাজ। পুরো বাড়িতে একা ইয়ানা। দু-তিন একটু ভয় পেলেও এখন এসব অভ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছে৷ কিচেনে সবার জন্য স্ন্যাকস এর ব্যবস্থা করছে ইয়ানা। সাথে পাশে থাকা মেশিনে কফিও হতে দিয়েছে। আনজানার ব্ল্যাক কফি বেশ পছন্দের। ইয়ানাও প্রায়ই বানিয়ে দেয়। গল্প করতে করতে চুমুক দেওয়া হয়।
আনমনে গুনগুনিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সে। সামনে থাকা জানালাটা আরো ভালো করে খুলে দিতে সামনে হাত বাড়ায় সে। মুহূর্তেই মনে হলো কেউ যেন তার হাতটি ধরতে চাইছিলো তবে, ইয়ানা দ্রুত সরিয়ে নেওয়ায়। ধরার সুযোগটা হয় নি। বুকের ভেতরটা ধুক করে কেপে ওঠে ই্য়ানার। পিছিয়ে যায় দু’কদম। কাঁপা কাঁপা গলায় ‘কে…?’ বলে ডাকতেই জানালার সামনে থাকা অবয়বটা ছুটে পালিয়ে যায়৷ ভয়ে শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। তিন তলায় থাকে তারা৷ এতো উপরে প্রাচীর টপকে মানুষ উঠবে? বিড়াল ও তো হতে পারে! নিজেকে নিজেই শান্তনা দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে যায় ইয়ানা। ভাবলো একবার আনাজকে কল করুক, পরবর্তীতে আনাজ কি মনে করবে ভেবে। ইচ্ছাটাকে দাবিয়ে রাখে সে।চারিদিকের জানালার দিকে একটু উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখে সে। নাহ, অবয়বটি নেই আর। তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে ইয়ানা। নিজের মনকে শান্ত করার জন্য টিভিতে গান ছেড়ে দেয়।
.
.

সবাইকে নিয়ে এসে পড়ে আনাজ। ইয়ানা প্রফুল্লচিত্তে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করায়। ফ্যাকাশে মুখ করে ভেতরে প্রবেশ করে আনজানা। এতো জলদি আসতে চাইছিলো না সে৷ মনটা আরো কয়েকদিন থাকার জন্য আনচান করছিলো।
সবাই ফ্রেশ হয়ে আসলে স্ন্যাকস্ সার্ভে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইয়ানা। দিদা তাদের সবার জন্য অনেকগুলো বয়ামে বিভিন্ন আচার বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আচারের প্রতি ভীষণ রকম দূর্বলতা আছে ইয়ানার। এটার প্রতি লোভ সামলানো দায় হয়ে যায়। সবাই নাস্তা করলেও সে আচার নিয়ে বসে যায়। গপাগপ মুখে পুরতে থাকে একের পর এক। ইয়ানার এরকম খাওয়া দেখে সবাই হাসি থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। মেয়েটার ছেলেমানুষী এখনও গেলো না বইকি!

–‘আ..দেখেছো মা, তো..মার আদর্শ বউ মার, আদর্শ খাওয়ার স্টাইল। একটা ভিডিও করে যদি নেটে ছেড়ে দেই নিঃসন্দেহে ভাইরাল হয়ে পড়বে তাহার আদর্শ স্টাইলখানা!’
রম্যের সুরে আনাজ বলে। মিনমিনে হাসি দেয় আনজানা।

–‘আহা! আনাজ তুইও না! খেতে দে না মেয়েটাকে। ওর পছন্দের জিনিস ও খাবে না তো তুই খাবি বল?’

আয়নার কথায় তাল মিলিয়ে ইয়ানা বলে,

–‘মাম্মি হো তো এয়সা… আর আপনি এরকম খাটাশ মার্কা ভাঙ্গা রেডিও আমার সামনে না ছাড়লেও পারবেন হুহ!’

আবার আচার খেতে শুরু করে ইয়ানা। হেসে ওঠে আনাজসহ সবাই। ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ইয়ানা। মেয়েটা একদম নিজের মেয়ের চেয়ে কোনো অংশেও কম লাগে না ইয়ানার।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৪

বৃষ্টিসিক্ত অপরাহ্নে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছে আনজানা। সকাল থেকেই আবহাওয়াটা বেশ ভালো রৌদ্রস্নাত ছিলো। তাই আনজানা আর ছাতা নেয় নি। চারিদিকে মুষলধারে জমানো মেঘগুলো হয়ে নেমে আসছে। বৃষ্টির গতি বেড়েই চলছে। অর্ধসিক্ত কাপড়ে, দোকানের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে ইয়ানা। চারপাশে তেমন কোনো সিএনজির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। চারিদিকে বিরাজিত হচ্ছে অন্ধকার। ভয়ে তটস্থ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এক দোকানের ছাদের নিচের সামান্য অংশে দাড়িয়ে থাকে আনজানা। চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে কিছু আসছে নাকি। নাহ, কোনো কিছুর দেখা পাওয়া গেলো না। উবার কল করবে ভেবে ফোনটা হাতে নিলেই, কই থেকে যেনো একটা ধবধবে সাদা গাড়ি তার সামনে এসে দাড়ায়। আনজানা কিছু বলতে নিবে তখনই একজনের কথায় গাড়ি থেকে নেমে আসে কিছু যুবক। আনজানাকে টেনে গাড়িতে নিয়ে যেয়ে বসায়। হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায় ইয়ানার৷ বুকের ভেতরে ভয়েরা রীতিমতো আন্দলোন শুরু করে দিয়েছে। আতঙ্কে জান শুকিয়ে যাচ্ছে তার। আনজানা ছটফটানি করতে নিলেই একজন কালো কাপড় দিয়ে তার মুখ ও হাত বেধে দেয়। তবে আনজানার দিকে তাকাচ্ছে না কেউ। ভয়কাতুরে দৃষ্টিতে সবাইকে পরখ করে নেয় আনজানা। ছেলেগুলোকে দেখে বেশ ভালো মনে হচ্ছে। মোটেও কোনো মাফিয়া টাইপ বা গুন্ডা টাইপ মনে হচ্ছেনা৷ কিন্তু এরা আনজানাকে কিডন্যাপ কেন করছে? আনজানা ছটফটাতে নিলেই একজন তারদিকে তাকিয়ে বলে,

–‘দোহাই লাগে, এমন করবেন না। আমরা আপনার কোনো ক্ষতি করব না।’

লোকার এহেন কথায় থ বনে যায় আনজানা। চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে, নিষ্পলক সে দৃষ্টি। তবে, লোকটা তার দিকে না তাকিয়ে অন্য পানে তাকিয়ে আছে। মুখ বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও কথা বলার চেষ্টা করে আনজানা। সে জানতে চাইছে, প্রবলভাবে জানতে চাইছে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারদিকে লোকটা তাকিয়ে তার হাসফাস অবস্থা দেখে বলে,

–‘কি হলো, জানতে চাইছেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? আগে চলুন তারপর না-হয় বলবো’

ছটফটানি বাড়িয়ে দেয় আনজানা। অস্বস্তি লাগছে তার এভাবে বেঁধে থেকে। তবে, ভয়টা যেন কাটতেই চাইছে না। লোকটা যে মিথ্যা বলবে না, তার গ্যারান্টি কি? বারবার শুকনো ঢোক গিলেই চলছে। কথাগুলো বারবার যেনো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। হাতটা ছটফটিয়ে রশির বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চাইছে সে।

–‘দেখুন, এভাবে বাচ্চা ছাগলের মতো লাফালাফি করলে এখনই ঘুমের ওষুধ শরীরে পুশ করতে পিছপা হবো না!’

ছটফটানি থেমে যায় আনজানার। বারবার বিষ্ময়ের সাথে তাকাচ্ছে লোকটার মুখ পানে। সবার দিকে পরখ করে নেয় সে। সবার মুখটা কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। সবার বিষন্ন চাহনি, আর ফ্যাকাশে মুখ। ছেলেগুলোর বাহিরের রূপ দেখে কে বলবে, এরা কিডন্যাপকারী?
খটকা লাগে আনজানার। চুপচাপ তাদের সাথে চলতে থাকে সে। বুকের ভেতরে দ্রিম দ্রিম শব্দটা ক্রমশই বেড়ে চলছে। না জানি কি অপেক্ষা করছে তার জন্য….!

———————-

নিশ্চিন্তে ঘুমোতে ব্যস্ত ইয়ানা। দুপুরে খুব একটা ঘুমোয় না সে। তবে আজ কেনো জানি রাজ্যের ঘুম লাগছে। সে দুপুর থেকে সন্ধ্যা অব্দি ঘুমাচ্ছে।আজ তারাতাড়ি ফিরেছে আনাজ। তেমন কোনো পেশেন্ট ছিলো না, বৃষ্টি বলে। দেড়শোজন পেশেন্ট দেখেই বাসায় চলে আসে সে। এসেই জানতে পারে আনজানা এখনো ফিরেনি। আয়নার মুখটা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। তখনতো আনজানা বললো সে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে ফিরবে। কিন্তু আসার কোনো নামগন্ধ নেই। বারবার ফোন করলেও নম্বর বন্ধ আসছে। বাসায় এসে এখবর শোনার সাথে সাথে আনাজ স্টাফদের পাঠিয়ে দেয় ভার্সিটির আসেপাশে খোঁজ করার জন্য, হতে পারে বৃষ্টির জন্য আনজানা কোথাও আটকা পরেছে। তবে তার স্টাফরা জানায় সব জায়গায় সার্চ করেছে বাট কোথাও পায় নি। ভরকে যায় আনাজ। নিজেই রেডি হয় আনজার খোঁজ করতে।রুমে এসে রেডি হতেই দেখে ইয়ানা ঘুমে বিভোর। চটজলদি ওয়াশরুম থেকে মুঠোয় করে পানি নিয়ে যেয়ে ইয়ানার মুখে ছিটিয়ে দেয় আনাজ। ইয়ানা চেহারায় একরাশ বিরক্তির আভাসে ছেয়ে যায়। চোখদুটো টেনে টেনে খুলে কিছু বলতে যাবে তখনই আনাজ বলে,

-‘দেখো চিল্লাচিল্লি করার সময় এখন নেই। আনাজানা ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে নি। কলে ট্রাই করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তোমাকে কিছু বলেছে? ‘

আনাজের কথায় ঘুমটা কর্পূরের ন্যায় উড়ে যায় ইয়ানার। মাত্রই সে ঠিক শুনলো? চোখদুটো রসগোল্লার আাকার ধারণ করে।

–‘হোয়াট? আনজু বাসায় ফিরে নি? ‘

—‘না, তোমার এন্সার পরে করবো, এখনই আমাকে যেতে হবে। দেখো মা কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পরছে, যেয়ে একটু বুঝ দাও’

আর কথা না বাড়িয়ে আয়নার কাছে ছুটে যায় ইয়ানা। মুখ আঁচল দিয়ে ঢেকে কেঁদেই চলছেন তিনি। ইয়ানাকে দেখে কান্নার বেগটা বেড়ে যায় তার। ইয়ানা ছুটে এসে আয়নাকে সন্তপর্ণে জড়িয়ে ধরে। আয়না ইয়ানার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকেন।

–‘মা, এভাবে কাঁদিয়েন না। আনজানার কিছু হয় নি তো।হয়তো ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরাঘুরি করছে। এতোদিন দিদার বাসায় ছিলো…

–‘তাহলে ফোন বন্ধ কেনো? ‘

ক্রন্দনরত কন্ঠে বলেন আয়না। স্তব্ধ হয়ে পরে ইয়ানা। আসলেই আনজানার কিছু হয় নি তো? আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ইয়ানা।

–‘মা এভাবে কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়লে, নিঃসন্দেহে আপনার শরীর খারাপ করবে। আপনি শান্ত হন। আনজানা একদম ঠিক আছে দেখবেন।’

ইয়ানার কথায় কর্ণপাত না করে আবারো হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগেন আয়না। হঠাৎ ইয়ানার মনে পড়ে…..
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৫

অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরিবিলি একটা গোডাউনের মতো জায়গায় চেয়ারে বসে আছে আনজানা। চেয়ারের সাথে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে তার। শ্বাস নিতে পারছে না সে। এতো চিৎকার চেচামেচি করলেও কাউকে পাচ্ছে না। গলা শুকিয়ে এসেছে। খুব শক্ত দড়ি দিয়ে এক্রোসলি বেঁধে দেওয়া হয়েছে যার দরুন ছটফট করলে বা চেষ্টা চালালেও ছিড়ে ফেলা সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ আগে তাকে গাড়ি থেকে ছেলেগুলো নামিয়ে দেয়। আনজানাকে টেনে হিচড়ে গোডাউনের ভেতরে ঢোকানো হয়। তারা বারংবার আনজানাকে আশ্বাস দিচ্ছিলো আনজানার কোনো ক্ষতি করবে না। খানিক বাদেই একটা লোক গোডাউনে প্রবেশ করে। ভয়ে কাঠ হয়ে যায় আনজানা। মূর্তির মতো বসে আছে সে। ভেতরে ভেতরে অক্কা পাওয়ার উপক্রমণিকায় আছে!
লোকটা ভেতরে হনহনিয়ে প্রবেশ করে। আবছা কৃত্রিম আলোয় আনজানা তার মুখশ্রী দেখতে পায়। লোকটাকে চিনতে দেরি হলো না,, এই লোকটাই তো তাকে কিডন্যাপ করে এনেছে। লোকটার মুখ একঝাঁক আতঙ্কে গ্রাস করছে।
আনজানার কাছে এসে লোকটি তার পায়ের কাছে বসে যায়। তার এহেন কান্ডে ভরকে যায় আনজানা। চিল্লাতেও পারছে না, তার মুখ যে বাঁধা!
লোকটি তার দু’পায়ে হাত দিয়ে মুহূর্তেই ডুকরে কেদে দেয়! ভেবাচেকা খেয়ে যায় আনজানা। কি হচ্ছে বোধগম্য হচ্ছে না তার।

—‘আপনার রিকোয়েস্ট লাগে, আপনি আমার বন্ধুকে বাঁচান। পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। আমরা আর নিতে পারছি না (কান্নার বেগ বেড়ে যায়) আমার বন্ধুকে কষ্টগুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমরা কি এভাবে তাকে থাকতে দিতে পারি বলেন?’

কথার কোনো মানে বুঝতে পারে না আনজানা। আর না কিছু বলতে পারছে। লোকটার দিকে তাকিয়ে মুখের বাঁধন এর দিকে ইশারা করতেই লোকটা মুখের বাঁধনটা খুলে দেয়। জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে শুরু করে আনজানা। ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে সে।

–‘কি হয়েছে আপনার বন্ধুর? আর আমাকে এখানে এনেছেন কেন?’ (থমথমে কন্ঠে)

–‘আদ্র! আদ্র কে মনে আছে আপনার? ওই যে সেদিন প্রপোজ করেছিলো? মনে পড়ছে?
ছেলেটা ভিষণ ভালোবাসে আপনাকে। আপনার পাগল ও! এই কয়দিন আপনি ছিলেন না। আপনাকে দেখতে না পেয়ে কি কিই না করেছে। আপনাকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে কষ্ট দিতে শুরু করে সে। বারবার নিজেকে ছুরিকাঘাত করে, ড্রাগস এডিক্টেড হয়ে পড়ে। সারাদিন নেশায় বুদ হয়ে থাকে। সব ভেঙে ফেলতে চায়। ও….ও নিজেকে শে*ষ করে ফেলতে চাচ্ছে। তার উন্মাদনা কারোই সহ্য হচ্ছে না। আপনিই পারেন আদ্রকে বাঁচাতে পারবেন না আনজানা? বলেন?

আনজানার পা ধরে রীতিমতো কাঁদতে শুরু করে লোকটা। আনজানা ঘোরের মধ্যে আছে। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না।

–‘আপনি আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন? ‘

আবার আনজানার পা ধরে কাদতে শুরু করে লোকটা।

–‘আপনিই ও তো মানুষ তাই না? মানুষের আবেগ বুঝেন নিশ্চয়ই? তাহলে কেনো আমার বন্ধুর জিবনটাকে জাহান্নাম বানাচ্ছেন? কেনো বুঝছেন না সে আপনাকে ভালোবাসে?’

বাকরুদ্ধ! আনজানা একদম বাকরুদ্ধ। লোকটার চোখের পানি পড়ে টিশার্টটা ভিজে গিয়েছে। হাত দিয়ে সিক্ত অংশ গুলোকে ভালোমতো মুছে নেয় সে। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে শান্ত হয় সে। আনজানার দড়িগুলো খুলতে শুরু করে সে। খুলে দিয়েই আনজানাকে নিয়ে গোডাউন থেকে অন্য ঘরের মতো জায়গায় যায় সে। আনজানা লোকটার আদেশে তার পিছে পিছে চলতে শুরু করে। ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক পরখ করে নেয়।

লোকটা আরেকটা অন্ধকার মতো ঘরে নিয়ে যায়।
ঘরের বাহিরে গেটের কাছে আনাজাকে লোকটা বলে,

–‘আমার ভাইটারে একটু দেখিয়েন’
চলে যায় লোকটা। আনজানাকে একা ফেলে। একরাশ ভয় ঝেকে ধরে আনজানাকে। হৃদ স্পন্দন বেড়ে গিয়ে রীতিমতো দৌড়াতে শুরু করে। দরজায় আস্তে করে একটু টোকা দেয় সে। মুহূর্তেই দরজাটা খুলে যায়। ভয়ে ভয়ে ঘরটায় প্রবেশ করে সে। অন্ধকারময়ী রুমটা হালকা সবুজ রঙের কৃত্রিম আলোয় টিমটিম করে জ্বলছে । হালকা আলতেই বোঝা যাচ্ছে চতুর্দিকটা। কাঁপতে কাঁপতে এগোতে শুরু করে আনজানা। দৃশ্যমান হয় সামনে থাকা হ্যান্ডসাম হান্ক আদ্রকে। একটা টেবিলের ওপর অনেক কিছু রাখা। ওপাশে তাকিয়ে আছে আদ্র। ওয়াইনের গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুকে পান করে ফেলে পানীয়জাত জিনিসটা। এক নিঃশ্বাসে খেয়েই কাচের গ্লাসটা স্বজড়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। বিকট আওয়াজ হয়। আওয়াজে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে আনজানা। আনজানার আওয়াজ কানে বাড়ি খেতেই চটজলদি তার দিকে তাকায় আদ্র। আশ্চর্য হয়ে যায় সে। ‘আনজানা’ বলে দৌড়ে ছুটে আসে তার কাছে।
.
.
.
চলবে,,,

ক্ষমাপ্রার্থী এর জন্য।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here