এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ১৬

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-১৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

নিজের চোখের সামনে কোনো মেয়েকে এভাবে একাই ৪ জন ছেলে ধোলাই দিতে আজ সর্বপ্রথম দেখছে রিভান। “সানি ধোলাই” মিশনে নাহয় পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা ০% সাথে বাচ্চারা ছিলো বলে এতোটা অবাক হয় নি সে। কিন্তু আজ? কি হচ্ছে এসব! রিভানের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে, মাঝখান থেকে নীরব দর্শকদের মতো মজা নিয়ে চলেছে নিশান্ত। মারামারি নামক ভয়ানক দৃশ্য নিজের মেমোরিতে ধারণ করতে ভীষণ বাজে ভাবে অপছন্দ করা ব্যক্তিটাও কি সুন্দর ঠোঁটে বাঁকি হাসি ঝুলিয়ে ফিল্ম দেখার ভাব ধরে অন্বিতার ফাইটিং দেখে চলছে, ব্যাপারটায় অবাকের পর অবাক হয়ে চলেছে রিভান।

প্রায় ১০ মিনিট যাবৎ প্রত্যেকের হাড়গোড় সমান তালে ভাঙা হয়ে এলে শেষের ছেলেটির মেইন পয়েন্টে সজোরে লাথি মেরে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ালো অন্বিতা। যা দেখে রিভান চরমভাবে টাস্কিত হলো! নিশান্ত চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। রিভানের চোখজোড়া কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে আসবে ভাব। অন্বিতা রাস্তায় পরে থাকা নিজের অসহায় ব্যাগটার দিকে তাকালো। এক হাতে টেনে তুলে ধুলো ঝাড়তে ব্যস্ত হয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো। সোডিয়াম বাল্বের আলোয় দৃশ্যমান নিশান্তের পলকহীন চাহনিতে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে। এই মুহুর্তে একই স্পটে তাদের বিন্দুমাত্রও আশা করেনি অন্বিতা। তবে ভাগ্যে কি আছে আন্দাজ করা যে বড়ই মুশকিল! ভাগ্য কাকে কখন কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয় তা বোঝা বড় দায়। এই ভেবেই মুখে স্বাভাবিকভা ফুটিয়ে তুললো অন্বিতা। ধুলো-বালি মাখা ব্যাগটা ঝাড়তে ঝাড়তে কিঞ্চিৎ অস্বস্তি নিয়ে রিভান-নিশান্তের দিকে পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেলো অগত্যাই।

রিভানের “হা” করা মুখটা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো অন্বিতা। গলা খাঁকারি দিয়ে চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,

—- ফাইটিং সিন এন্ডস, এখন আপনি মুখটা বন্ধ করতে পারেন ভাইয়া, নয়তো বাল্বকে ঘিরে যতোগুলো পোকা ঘুরঘুর করছে সব এসে আপনার মুখে ঢুকে যাবে….। (হাতের ইশারায় উপরের সোডিয়াম বাল্ব দেখিয়ে)

অন্বিতার পুরো কথাটা শেষ করবার পূর্বেই বাঁধ সাজলো নিশান্ত। সেখান থেকেই শুরু করে নিজের মতো লাইনটি সাজিয়ে বললো,

—- দেন মুখ থেকে সোজা পেটে, আর পেট থেকে তো জানিসই কোথায় যাবে, সো সাবধান!

রিভান চটজলদি মুখ বন্ধ করে হাসার চেষ্টা করলো। খানিকটা সফল হয়ে বললো,

—- অ…অন্বিতা তুমি একা কিভাবে? আই মিন কিভাবে কি? হাও….!

অন্বিতা আবারও এক গাল হাসলো। তবে এবারও উত্তর দেওয়ার সুযোগ হলো না তার। নিশান্ত কথার মাঝে বাই সাইকেল চালিয়ে বললো,

—- তুই কি ভেবেছিস বর্তমানে সব মেয়েরাই তোর ভাবনা মতো পরনির্ভরশীল, বোকাসোকা টাইপ আছে নাকি? এখনকার মেয়ারা নিজেদের প্রটেকশন নিজেই করতে পারে। বুঝলি গবেট?

রিভান মুখ বাঁকিয়ে অভিযোগ ছুড়ে মারা চোখে তাকালো। গালে হাত দিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্নতার ভান করে বললো,

—- সে নাহয় বুঝলাম বাট তুই সব প্রশ্নের জবাব একাই দিচ্ছিস কেনো এই সাইন্সটা তো বুঝলাম না। আমি তো ওরে জিগাইছি, তুই মাঝখান থেকে বাম হাত ঢুকাস কিল্লাই?

নিশান্ত সরু চোখে তাকালো। অন্বিতার ঠোঁট কুঁকচে তাকানো মাত্র কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই চোখ পড়লো কোনো আগন্তুকের ওপর। নিশান্ত চমকালো, তৎক্ষণাৎ অন্বিতাকে হেঁচকা টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাত বাড়িয়ে পেছন থেকে প্রহার করবার জন্য চেষ্টা চালানো ছুড়িটা চেপে ধরলো। সাথেসাথেই হাত কেটে ফিনকি দিয়ে ঝড়তে লাগলো তাজা রক্ত! রিভান ভয়ার্ত চোখে তাকালো। এইটুকু সময়ে তাদের মধ্যে কেউ উঠে এসে পাল্টা আক্রমণ কর‍তে পারবে মাথাতেও আসে নি বিন্দুমাত্র! গল্পে এতোটাই মত্ত ছিলো যে লোকটাকে আবছা আলোয় ততোটা দেখে না গেলেও পদধ্বনি পর্যন্ত শ্রবণগোচর হয় নি কারো। রিভান নিশান্তের চেপে ধরে রাখা ছুড়ির দরুন কেটে ঝড়া লাল টকটকে রক্ত দেখে কেঁপে উঠলো। বুক বরাবর লাথি বসালো বখাটে ছেলেদের মাঝে যে ছুড়ি দিয়ে প্রহার করতে এসেছিলো তাকে। রিভানের লাথির চোটে আর্তনাদ করে রাস্তার ধারে পড়লো ছেলেটি। রিভান থামলো না। ইচ্ছেমতো লাথি- ঘুষিতে ভরিয়ে তুলতে লাগলো তার পুরো শরীর।

অন্বিতা নিশান্তের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ তুলে তাকালো। নিশান্তকে ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ দুটো বুজা অবস্থায় দেখে চমকালো। একঝাঁক ভয়েমাখা সন্দেহ এসে হানা দিলো তার মনে। তটস্থ হয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অন্বিতা। বাল্বের ক্ষীণ আলোয় নিশান্তের হাত দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।
নিশান্ত হাত লুকাবার শত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হলো। ব্যাথায় কাটা দিয়ে উঠতে লাগলো তার পুরো শরীর! তবে নিজ মনে প্রাপ্তির হাসি হাসলো সে। এইটুকু ব্যথা অন্বিতার প্রাণ বাঁচাবার তুলনায় অতি নগণ্য মনে হলো তার। কেনো জেনো মনটা একই বাক্য আওড়াতে লাগলো “যাই হয়ে যাক, এই মেয়েটার কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া চলবে না। কিছুতেই না!”

অন্বিতা ছলছল চোখে নিশান্তের হাত দেখে চোখ তুলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নিশান্তের মলিন হাসি মাখা মুখখানায়। যে ছেলেটার সাথে ঝগড়া-ঝাটি, গালি-মন্দ ছাড়া কোনো ইস্যুই ক্রিয়েট হয় না সেই আজ প্রাণে বাঁচালো তাকে। নিজেকে জখম করার বিনিময়ে হলেও বাঁচালো!

—- একি করলেন আপনি, হাতটা তো অনেকটা কেটে গেছে! রক্ত পড়ছে ভীষণ!

নিশান্ত আবারও একগাল হাসলো। ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

—- এইটুকুনি কেটে যাওয়ায় আমার কিছু হবে না মিস. অন্বিতা। তবে পেছন থেকে আপনার পেটে ছুড়ি বসালে এর থেকে আরো অনেক বেশি কিছু হয়ে যেতে পারতো। আমি হওয়া থেকে আটকাবার ছোটখাটো চেষ্টা চালালাম স্রেফ। সিম্পল!

অন্বিতা জবাব দিলো না। চটজলদি ব্যাগ থেকে স্যাভলন এন্টিসেপক্টিক সাথে তুলো ও ব্যান্ডেজ বের করলো। ফার্স্টএইড বক্স পুরোটা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো সম্ভবপর না হলেও এই তিনটি জিনিস তার ব্যাগে থাকে সবসময়। বিপদে আপদে নিজের সুরক্ষা যাতে নিজেই কর‍তে পারে এমন একটা ধারণা নিয়েই এতোটা গোছালো ও পরিকল্পনার সহিত চলাচল করে অন্বিতা।

অন্বিতার কাছে তৎক্ষণাৎ প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী দেখে নিশান্ত ভ্রু কুঁচকে অবাক চোখে তাকালো, রিভান ছেলেটাকে মারতে মারতে একটা সময় রক্তাক্ত করে ছেড়ে দাঁড়ালো। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস চলায় ওঠা-নামা উদর নিয়ে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো। অন্বিতা খুবই সাবধানে কাঁপাকাঁপা হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিচ্ছে নিশান্তের হাতে। আর নিশান্ত ভ্রু কুঁচকে একরাশ বিস্ময় নিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে অন্বিতার চিন্তিত মুখখানায়। যা দেখে মুচকি হাসলো রিভান। বুক চিরে প্রশান্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো, হৃদয়ের গহীন থেকে তার।

ব্যান্ডেজ করা হয়ে এলে হাঁফ ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অন্বিতা। তার বুক এখনোও সমান তালে কেঁপে চলেছে। অস্থিরতা কমার বদলে বেড়েই চলেছে সুষম গতিতে। এর আগেও বহুবার জখম হয়েছে সে কিংবা জখম হতে দেখেছে অন্যকে। হ্যাঁ এটা ঠিক খারাপ লাগে ভীষণ, কিন্তু এবারের অনুভূতিটা ভিন্ন ধরনের। কেনো এরকম অনুভূতি? কিসের এতো মায়া? কেনো না চাইতেও ভাবতে বাধ্য হয় সে নিশান্তের কথা? জানা নেই অন্বিতার।
নিশান্ত ঠোঁট কামড়ে অন্বিতার হাবভাব বুঝার চেষ্টা চালালো। নীরবতার পর্দা ভেদ করে মুখে বুলি ফুটিয়ে বললো,

—- আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন মিস অন্বিতা! আমি একদম ঠিক আছি। আম টোটালি ফাইন!

অন্বিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করবার চেষ্টা চালালো। খানিকটা সক্ষম হয়ে অস্ফুট গলায় বললো,

—- জি…জ্বি! বাড়ি চলুন সবাই চিন্তা করছে!

নিশান্ত মৃদু হেসে সম্মতি সূচক মাথা ঝাঁকালো। রিভানের ঠোঁট উল্টে রাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

—- দোস্ত তোর পাম্পে গ্যাস অবশিষ্ট আছে তো?

রিভান বুঝলো না, কপালে ভাঁজ ফেলে পাল্টা জিজ্ঞেস করলো,

—- গ্যাস অবশিষ্ট আছে! মানে?

নিশান্ত বাঁকা হেসে স্ট্যান্ড উঠিয়ে বাইকটা সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললো,

—- মানেটা খুবই সিম্পল! মানেটা হচ্ছে আমার বাপের ওতো টাকা নাই যে চারচাকা টাইপ দু-চাকার বাইক বানিয়ে দেবে। তাই আমার এই ছোটখাটো সিট ওয়ালা পালসার বাইকে দুজনের বেশি যেহেতু তিনজন বসানো যাবে না তাই………..(হাতের দুটো আঙুল দিয়ে হেটে এগোতে ইশারা করে) মে ইউ?

রিভান গোলগাল চোখ করে তাকালো, চিৎকার করে বলে উঠলো,

—- হোয়াট? আমি হেটে হেটে যাবো আর তোরা বাইকে? না বাবা না, এমনিতেই বাইক থেকে ফেলে কোমড় ভাঙছিস তুই আমার! আর তাছাড়া তোর তো হাত কেটে গেছে বাইক কেমনে চালাবি তুই?

নিশান্ত নিজের হাতের দিকে একবার পলক ফেলে তাকালো। অন্বিতা আগ বাড়িয়ে দ্বিধা ভরা চোখে চেয়ে বললো,

—- আপনারা আমার জন্য নিজেদের মাঝে ঝামেলা করছেন কেনো? এইতো সামনেই বাসা, মাত্র ৫ মিনিটের মতো হাটলেই পেয়ে যাবো। আপনারা যান! আমি হেটে যাচ্ছি!

—- হুম আবারও রাস্তায় ছেলেপেলে আপনাকে এট্যাক করুক আর আমার হাত আবার কাটা যাক এইতো? দেখুন ঢাকার এসব মাস্তান পোলাপান মোটেই সুবিধের নয়। অস্ত্র রাখে সাথে করে! বুঝতে পারছেন কতোটা রিস্কি?

অন্বিতা ঠোঁট উল্টালো। নিশান্তের যুক্তি একেবারে ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। তার যুক্তিতে রিভানও গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। পরক্ষণে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

—- আইডিয়া! আরে আমি বাইক চালাই, অন্বিতা পেছনে বসুক। আর তুই দৌড় দিয়ে আয়, বাইক স্লো স্লো চালাবো। ব্যাস তাইলেই তো হয়ে গেলো!

সাথেসাথেই মাথায় শক্ত হাতের চাটি পড়লো তার। নিশান্ত রিভানের মাথায় চাটি বসিয়ে সরু চোখে তাকালো। ভেঙানের সুরে বললো,

—- তোমার বাইক চালানো আর নার্সারিতে পড়া বাবুর প্রথম সাইকেল চালানো, দুটোই একে অপরের অনুরূপ! কি চাইছিস, নিজে তো নিজের আধভাঙ্গা কোমড়টা পাউডার বানাবি সাথে উনার টাও? না ভাই মাফ চাই! তোদের চক্করে আমার বাইকটারও না জান যায়।

রিভান কাঁদো কাঁদো চোখে তাকালো। নিশান্তের কথায় প্রতিবাদ করবার বদলে চোখেমুখে হানা দিলো সম্মান খোয়াবার ভয়। সে যে সঠিক ভাবে বাইক চালাবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাতে চালাতে এক্সিডেন্টের রেকর্ড গড়ে তুলেছে তা তার অজানা নয়। কি করা যায়, কি করা যায় ভাবতেই সময় পেরোলো আরোকিছু, অন্বিতা চোখেমুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে মাটিতে ধাপ ফেললো। নিশান্তকে সরে দাঁড়াতে ইশারা করে ফট করে বাইকে উঠে পড়লো সে। বাইক স্টার্ট দিয়ে ব্যস্ত স্বরে বললো,

—- আপনারা পাতলা পাতলা দুটো ছেলে, ঠিক এটে যাবেন, নয়তো কেউ একজন ট্যাংকিতে এসে বসুন! আমি চললাম।

রিভান এবার টাস্কি খেতে খেতে রেকর্ড গড়ে তুলবে বোধহয়। রিভানের হা করা মুখ দেখে হু হা করে হেসে ফেললো নিশান্ত। রিভানের মাথায় আবারও ছোট্ট করে চাটি বসিয়ে অন্বিতার পেছনে বসতে বসতে বললো,

—- আজকাল কার মেয়েরা শুধু নিজেদের প্রটেকশনই নয়, বাইক চালাতেও এক্সপার্ট! তোর মতো বলদ নয়। জাস্ট ইমাজিন, কি করলি জীবনে! হাহা, সেইম অন ইউ! এখন কথা না বাড়িয়ে উঠে পড় ফটাফট। তোরে নামায় দিয়ে বাড়ি ঢুকবো।
_____________________________

নিজের ঘরে অস্বস্তিতে কাবু হয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে নিশান্ত। পাশেই ম্যাথমেটিকস এর ক্যালকুশনে ব্যস্ত হয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বসে আছে অন্বিতা। তখন কোনোরকমে রিভানকে নামিয়ে দিয়ে হাত লুকিয়ে নানান বাহানা জুড়ে দিয়ে বাসায় ঢুকেছিলো নিশান্ত। অন্বিতাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মা’কে আজকের ঘটনা বলা থেকে বিরত রেখেছে সে। আফসানা বেগমের কানে এসব গেলে যে পুরো বাড়িতে একপ্রকার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হবে তা জানা কথা নিশান্তের, যার দরুন এরকম লুকোচুরি খেলায় মত্ত হতে হয়েছে তাকে। তবে এরকম লুকোচুরি খেলা চলবে আর কতোক্ষণ? পেট তো বাঁধা মানে না। খিদের চোটে একটু পর পরই পেটটা গুড়গুড় করে উঠছে তার। কিন্তু খেতে গেলে ধরা পড়তে হবে তাকে খুবই বিশ্রী ভাবে। কারণ দুভার্গ্যবশতঃ কেটেছে তার ডান হাতটাই। বা হাতে তো আর খেতে পারবে না যার দরুন মুখে কুলু পেতে রেখেছে সে।

কানে আবারও সেই একইরকম গুড়গুড় টাইপ আওয়াজের আগমনে সচেতন চোখে তাকালো অন্বিতা। নাহ! এটা কোনো ভ্রম নয়, কানে ভুল শুনে নি সে। এতোক্ষণ ধরে নিজের মনের ভুল ভেবে শব্দটাকে উপেক্ষা করলেও এবার আর সেই ভুল করলো না অন্বিতা। কলম রেখে মাথা তুলে তাকাতেই নিশান্তের পেট চেপে ধরে ঠোঁট উল্টে রাখা ভঙ্গিমা আবিষ্কার করলো সে। “তারমানে কি ওটা উনার পেটের শব্দ ছিলো?” প্রশ্নটা মাথায় আসতেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো সে। এই মুহূর্তে নিশান্তকে একটা ছোট্ট বাচ্চার মতোই মনে হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে গাল দুটো টেনে দিতে। অন্বিতা চমকালো, নিজের মনের এরকম বেহায়া টাইপ ইচ্ছের আগমনে বিরক্ত হলো বহুগুণ। তবে যেহেতু তার জন্যেই নিশান্তকে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে সেহেতু তার উচিত তাকে সাহায্য করা। কথাটা ভেবেই উঠে দাঁড়ালো অন্বিতা। নিশান্ত অন্বিতাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—- কি হলো মিস অন্বিতা, উঠে দাঁড়ালেন যে?

—- ইয়ে মানে, পা…পা…পানির খুব জোর তেষ্টা পেয়েছে আমার। একটু পানি খেয়ে আসছি।

নিশান্ত ঠোঁট উল্টালো। ছোট্ট করে “ওহ” বলতেই চটজলদি বেড়িয়ে গেলো অন্বিতা। নিশান্ত কিঞ্চিৎ অবাক হলো। পরক্ষণে নিজের খিদে দমিয়ে রাখতে পেটে চেপে ধরে মাথাটা টেবিলে লাগিয়ে চুপ করে বসে রইলো সে।
.
.
.
.
চলবে…………….💕

(সরি ফর বিং লেইট! ফোন আমার মৃগী রোগে আক্রান্ত তা আপনাদের জানা কথা!😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here