এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ১৮

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-১৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

—- হোয়াট! আর ইউ ম্যাড? এই রাত-বিরেতে ঢাকা থেকে যাবো নওগাঁ! লাইক সিরিয়াসলি!

—- এই এই ওয়েট ওয়েট! মামা তুমি স্বপ্ন দেখতে দেখতে উঠে আইছো নি? ইউ মাস্ট বি কিডিং রাইট?

রিভান-সানির প্রশ্নের জবাব স্বরূপ মুখ ফুটে কিছু বললো না নিশান্ত। চুপ করে থেকে নিজের চোখের বিস্ফোরিত দৃঢ় দৃষ্টির মাধ্যমে বোঝালো যে সে “সিরিয়াস, কোনো গোলযোগ নেই তাতে”। রিভান কপাল চাপড়াতে লাগলো। “হায় হায় দোস্তো আমার ওই মাইয়াডার জন্যে শেষমেশ পাগলই হইয়া গেলো গো….!” বলতে বলতে ধপ করে বসে পড়লো। সানি ঠোঁট উল্টালো। নিশান্তের কাঁধে হাত রেখে বললো,

—- মামা, প্যারা খাস না, বুঝি আমি বুঝি। ঘুম ঠিক মতো না হলে এরকম পাগলা-পাগলী টাইপ হাবভাব চলে আসে। তুই চিন্তা করিস না। বাড়ি চল, তোরে আগায় দিয়া আসি, ঘুম ধরছে বহুত!

বলেই নিশান্তকে উল্টো দিকে ঘোরাবার চেষ্টা চালালো সানি। তবে এক চুল পরিমাণও নড়াতে পারলো না সে তাকে। নিশান্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। শান্ত সুরেই ঝাঁঝালো গলায় বললো,

—- আবে ওয় বলদের বাপ গুলা, তোগো কি মনে হয় আমি মাঝারাতে তোদের ঘুম নষ্ট করে ফাইজলামি মারাইতে আসছি? আম ড্যাম সিরিয়াস! আমাদের নওগাঁ যেতে হবে মানে আমরা যাচ্ছি দ্যটস ফাইনাল। সেটাও আজকেই এক্ষুনি!

নিশান্তের প্রতিউত্তরে ভাষাহীন ভাব নিয়ে চোখ রসগোল্লা বানিয়ে মুখ হা করে ফেললো সানি-রিভান। সানি বুকের বা পাশে ডান হাত চেপে ধরে শুকনো ঢোক গিললো। রিভান মুখটা কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বললো,

—- তুই কি চাস ভাই, এক দিনের দূর্ঘটনা সারাজীবনের বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় থাকার কারণ হোক?

নিশান্ত চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফেলে ভ্রু কুঁচকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—- তোগো প্যারেন্টস এর চেয়ে আমার প্যারেন্টস বেশি স্ট্রিক্ট ভুলে যাস না। আমি যেতে পারলে তোরা পারবি না কেন?

—- কারণ তুই ফেরত এলে দু-চার ঘা মেরে হলেও আবার বাড়িতে ঢুকাবে বাট আমাগো কি হবে? সোজা লাথ মেরে স্টেশনে থাকবার জন্য বাইর কইরা দিবো। বুঝোস ব্যাপারটা? এখনোও বিয়া হয়নি, সোনালী মূহুর্তে ভরপুর আধা জীবনটা বাকি আছে…

রিভানের কথার মাঝে সানি কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো,

—- প্লিজ ভাউ, আমারে প্যারা দেওয়ার হইলে দে মাগার আমার হবু বউ গুলার কি দোষ? ওদের ওপর একটু দয়া কর মামা প্লিজ…..! ওরা কি আমার মতো রাস্তায় রাস্তায় থাকবো নাকি শ্বশুর বাড়ি থাকতে?

নিশান্তের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর আকার ধারণ করলো। ধমকের সুরে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,

—- ধুরো রামছাগল, কয়টা বউ লাগে তোর? ফ্লার্ট থেকে শুরু করে গার্লফ্রেন্ড পর্যন্ত ঠিক আছে বাট বউ! লাইক সিরিয়াসলি! তোর দাঁড়াই একমাত্র পসিবল এইসব। উফফফফ……

নিশান্ত থামতেই মুখ কালো করে ঠোঁট উল্টালো সানি-রিভান। নিশান্ত কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাদের মুখভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার বুক চিরে। হতাশার চরম সীমায় গিয়ে ঠেকলো তার পিঠ। পর মুহূর্তে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে নিয়ে মাথা উঁচু করে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়লো সে। গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

—- বেশ, যেতে হবে না তোদের। প্রয়োজনটা যেহেতু নিতান্তই আমার একারই সেহেতু আমি একাই যাবো।

বলেই বড়বড় পায়ের ধাপ ফেলে এগোতে শুরু করলো নিশান্ত। সানি-রিভান একে অপরের দিকে ক্ষত-বিক্ষত চোখে তাকালো। পলক ফেলে চোখের ইশারায় মত দেওয়া নেওয়া করে নিয়ে ছুট লাগালো নিশান্তের পিছু পিছু। পাঁচ কি ছ ধাপ ফেলে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ দ্রুত বেগে সানি-রিভানের সামনে চলে আসায় ভ্রু কুঁচকে থমকে দাঁড়ালো নিশান্ত। সানি-রিভান ভয়ার্ত চোখে চেয়ে দু-হাত মেলে তাকে ঘেরাও করে দাঁড়ালো। রিভান আমতা-আমতা করে বললো,

—- আরে দো…দোস্ত! রাগ করোস কেন? তুই কোথাও যেতে বলবি আর আমরা যাবো না তা কি করে হয়? আমরা তো জাস্ট মজা করছিলাম। কিরে সানি লিওন তাইতো?

রিভানের গুঁতো খেয়ে দাঁত কেলিয়ে সম্মতি সূচক মাথা ঝাঁকালো সানি। বোকা হেসে বললো,

—- আরে হ্যাঁ! মজাই তো, আমরা তো যাবোই। তুই যেখানেই যাইতে বলোস না কেন সেখানেই তুড়ি বাজিয়ে চইলা যামু। আকাশ-পাতাল, পাহাড়-সমুদ্র, সুন্দরবন-আমাজন এমন কি মাটি ফুট্টা করে ঢুকবার কইলেও ঢুইক্কা যামু! এক্কেরে সানি লিওনের কসম!

নিশান্ত ঠোঁট বাঁকালো। বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে গম্ভীর গলায় বললো,

—- নাহ বাপ! তোরে মাটি ফুট্টা করে ঢুকতে লাগবে না, আপাতত নওগাঁ গেলেই চলবে!

________________________

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বেশ মন দিয়েই গানের কিছু লিরিক্স ঘাটছিলো অন্বিতা। আকাশটা জেনো সেজেছে আজ নতুন এক রূপক বেশে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মেঘমালা কেটে থালার ন্যায় ফুটে উঠেছে ছোপ ছোপ দাঁগে উজ্জলদার চাঁদ মামা! জ্যোৎস্না রাতে অসংখ্য তারার আমেজে খেলা করছে “আকাশ” নামক বিশাল সেই চাদর। সাথে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বইছিলো হিমেল হাওয়া। ঘুমে কাতর গাছপালার বাতাসের দোলায় নড়া পাতার বাহারের সেই সৌন্দর্যে ঘেরা নিস্তব্ধ পরিবেশ অনুভব করতেই মূলত জানলার ধারে আসা হয়েছিলো তার। ঘুম না আসায় সময় অপচয় নামক ভয়ানক ব্যধি এড়াতেই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিলো সে। যার মূল লক্ষ্য ছিলো “প্রয়োজনের বাহিরে একটা সেকেন্ড সময়ও যেনো অপচয় না হয়!” হঠাৎ নিচ থেকে কারো গলার আওয়াজ কানে ভেসে আসায় ডায়েরি থেকে মুখ তুলে সচেতন চোখে তাকালো সে।

নিশান্ত, সানি আর রিভানকে চোরের মতো ফিসফাস করতে করতে পা টিপে টিপে বাগানে ঢুকতে দেখে চমকালো অন্বিতা। ভ্রু কুঁচকে খোলা চুলগুলো হাত খোপা করতে করতে সন্দিহান চোখে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে লেগে পড়লো। তবে ৩০ সেকেন্ডের বেশি নজরদারি করার সুযোগ হলো না মোটেই। এইটুকু সময়ের মাঝেই গ্যারেজের ওদিকটায় গিয়ে চোখের আড়াল হয়ে পরে নিশান্তরা। অন্বিতার মনে একঝাঁক প্রশ্ন সাথে হানা দেয় একবুক ভরা সন্দেহ। “এই মাঝরাতে তিন বন্ধু মিলে কোনো অঘটন ঘটাতে যাচ্ছে না তো?”
প্রশ্নটা মাথায় তীক্ষ্ণভাবে আঘাত হানতেই বিছানা থেকে নিজের ওড়নাটা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো অন্বিতা। নিঃশব্দে চটজলদি দোতলা থেকে নেমে পড়লো সে চোর ধরার উদ্দেশ্যে।

—- এ তুই কি করতাছোস বলতো? তাড়াতাড়ি কর বাপ, আমরা থাকতে যাচ্ছি না যে ব্যাকপ্যাক করে টাইনা আনতাছোস!

নিশান্তের কথার বিপরীতে চোখমুখ কুঁচকে তাকালো সানি। নিজের সাথে করে আনা ট্রাভেলার ব্যাগটা গাড়ির পেছনে এনে ট্রাঙ্কে উঠিয়ে হাত ঝেড়ে দাঁড়ালো। উল্টো দিকে ফিরে নিশান্তকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—- আরে লাইফে ফার্স্ট একটা সফর টাইপ অভিযানে যাইতাছি, প্রিপারেশন লাগবে না?

নিশান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—- আমরা ঘুরতে যাচ্ছি না গবেট! জলদি উঠে বস।

সানি ঠোঁট উল্টালো। পেছনের সিটের দরজা খুলে ঢুকতে নিবে এমন সময় আবারও থমকে দাঁড়ালো।
দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে খানিক এদিক-ওদিক চোখ বোলাতে বোলাতে দোমনা ভাব নিয়ে বলে উঠলো,

—- দোস্ত আর এক মিনিট দাঁড়া প্লিজ!

রিভান একরাশ বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে মাথা বের করে বললো,

—- আবে কতো টাইম লাগে তোর? আবার এক মিনিটে করবি টা কি?

সানি চোখ-মুখ কুঁকালো। ঠোঁট উল্টে হাতের এক আঙুল দেখিয়ে বললো,

—- মু…মু…মুত ধরছে রে…মাম্মা!

নিশান্ত রেগেমেগে স্টিয়ারিং এ জোড়ে বারি মারতেই এক ছুটে কাজ সাড়তে দৌড়ে পালালো সানি। রিভান আবারও কপাল চাপড়ালো। ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বললো,

—- দোস্ত, ২ টা পাড় হয়ে যাচ্ছে। এখন রওনা দিলে ঠিক কখন পৌঁছাবো বলতে পারিস?

নিশান্ত স্টিয়ারিং এ মাথা ঠেকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভারী গলায় চোখ বন্ধ করে বললো,

—- কম করে হলেও ৪ ঘন্টা।

রিভান শুকনো ঢোক গিললো। তবে অস্বস্তি প্রকাশ করলো না মোটেই। নিশান্তের চিন্তায় গভীর ভাবনায় ডুব দিলো অগত্যাই।

সবার আড়ালে পা টিপেটিপে নিশান্তদের গাড়ির পেছনে এসে দাঁড়ালো অন্বিতা। ডিটেকটিভদের বেশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আনাচে-কানাচে। কেনো জানি না নিশান্তকে নিয়ে মনে এক পশলা সংশয় এসে ভর করলো তার। সানি তো স্মোক করে এটা তার জানা কথা। “ওর পাল্লায় পরে নিশান্তও কোনো বাজে কাজে যুক্ত হয়ে পরে নি তো?” প্রশ্নটা মাথায় কীটের মতো কামড়াতে লাগতেই বুক ভারী হয়ে এলো তার। এই মুহুর্তে নিশান্তদের ফলো করাটাই উত্তম বলে বিবেচনা করলো সে। যার দরুন উপায় না পেয়ে চুপিচুপি গাড়ির পেছনে মালামাল রাখার ট্রাঙ্কে উঠে পড়লো অন্বিতা। গুটিশুটি মেরে রইলো সে রহস্যের পর্দা ভেদ করবার উদ্দেশ্যে।

১ নম্বর কাজ সেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে সানির উপস্থিত হতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো নিশান্ত। সানি চটজলদি পেছনের সিটে উঠে দরজা লাগিয়ে ফেললো। রিভান ঘাড় ঘুরিয়ে সানির দিকে তাকাতেই লম্বা হাসির রেশ টেনে একতরফা দাঁত কেলালো সে। রিভান সরু চোখে তাকালো, ঠাস করে মাথায় চাটি বসিয়ে দিতেই ঠোঁট উল্টালো সানি।
গাড়ি চলছে অনুভব করতেই বুকটা ধক করে উঠলো অন্বিতার, তবু মুখ ফুটে “টু” শব্দ পর্যন্ত করলো না। অন্ধকারেই ঘাপটি মেরে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো সে।

________________________

আধঘন্টা পেড়িয়ে একঘন্টা ছুঁইছুঁই ভাব। শহর ছেড়ে গ্রাম এলাকায় বিচরণ বর্তমান। মুখে কারো কোনো শব্দ নেই আর। রয়েছে শুধু মোড়ানো চাদর নিস্তব্ধতার। এই নিস্তব্ধতায় ঘেরা পরিবেশে শুধুমাত্র একজনের হৃদপিন্ডটাই ডিবডিবে আওয়াজ করে উঠছে বারংবার। মনে ক্ষীণ আশা আবার এক বুক ভরা হতাশা নিয়ে কাটা হাতেই স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ঝড়ের বেগে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে নিশান্ত। একদিকে যেমন প্রাপ্তির উৎফুল্লতা অপরদিকে রয়েছে হারিয়ে ফেলার তীব্র অধীরতা। থেকে থেকেই মনটা খুশির আমেজে ছেঁয়ে যাচ্ছে আবার থেকে থেকেই মোচড় দিয়ে উঠছে বুক। হৃদয় নামক সংবেদনশীল বস্তুটির সাথে হারাজিতের এই নির্মম নিদারুণ খেলায় না চাইতেও মত্ত হতে হচ্ছে তাকে।

অন্বিতা কান লাগিয়ে রেখেছিলো কোনো না কোনো তথ্য জানবার উদ্দেশ্যে, তবে এতোক্ষণ যাবৎ কানের বারোটা বাজিয়েও নিশান্তদের কোনো কথোপকথনই শ্রবণগোচর হয় নি তার। যা কানে ভেসে আসছে তার মাঝে অধিকাংশই বড়বড় ট্রাক অথবা বাসের। মাঝেমাঝে কান ঝালাপালা করে হর্ণ বাজিয়ে চলে যাচ্ছে দুটো একটা ট্রাক। অন্বিতার ইচ্ছে করছে সেই ট্রাকগুলোর গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারতে, পর মুহূর্তে আবার ভাবছে ট্রাকের গাল তো তার হাতের তুলনায় বিশাল যার দরুন, ড্রাইভারের গালের ওপরই হাল্লাবোল চালাতে ইচ্ছে তার। মেরে মেরে ব্যাটাদের গালের ভর্তা বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ভিষণ।
” মেয়ে দেখলেই হর্ণ বাজানো তাইনা! শালা ক্যারেক্টর ঢিলা মদারু ড্রাইভার!” বাক্যটা আবারও বিড়বিড় করে আওড়াতেই রিভানের ক্ষীণ গলা কানে ভেসে আসতে লাগলো তার। অন্বিতা দুহাতে মুখ চিপে ধরে কানখাড়া করে বসলো। রিভান সম্ভবত নিশান্তকে উদ্দেশ্য করে বলছে,

—- দোস্ত তোর কি মনে হয়, যার জন্য এই মাঝ রাত্তিরে হন্যে হয়ে পাগলের মতো ছুটছিস তার কি আদৌ তোর কথা মনে আছে?

নিশান্ত কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেললো। আগের মতো রাস্তায় স্থির দৃষ্টি ফেলে বললো,

—- মনে না থাকলে নাই, মনে করানো যাবে, প্রমান চাইলেও দেওয়ার মতো অহঃরহ প্রুফস আছে আমার কাছে। তাছাড়া আমার তো পাই টু পাই সবকিছুই মনে আছে। এন্ড দ্যটস দ্য মেইন পয়েন্ট রিভান!

নিশান্তের করা উপরোক্ত উক্তিতে কপাল কুঁচকালো অন্বিতা। “কার কাছে যাচ্ছে নিশান্ত, কার উনাকে মনে থাকা না থাক নিয়ে কথা বলছে রিভান?” এমন হাজারও অজানা প্রশ্ন এসে হানা দিলো তার মস্তিষ্কে। ওপাশ থেকে আবারও রিভানের কথা ভেসে আসায় সেদিকে মনোযোগ দিলো বিচক্ষণ ভঙ্গিতে।

—- দোস্ত একটু গাড়ি থামাবি?

রিভানের কথাটা কানে যেতেই কপালে বিরক্তির ছাপ পড়লো নিশান্তের। পাত্তা না দিয়ে একই ভাবে ড্রাইভিং এই মনযোগী হলো যে। রিভান ঠোঁট উল্টালো, পাশ থেকে গুঁতো মেরে সানি ফিসফিসের বললো,

—- তোরও কি মুত লাগছে মামা?

রিভান সরু চোখে তাকালো, আড়ালে ফিক করে হেসে ফেললো অন্বিতা। রিভান আবারও নিশান্তের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

—– দোস্ত, প্রাকৃতিক চাপে কি কারো হাত থাকে বল? তোর মতো চাপায় রাখার ক্ষমতা আমাগো নাই বুঝোস না ক্যারে?

নিশান্ত জোরেশোরে ব্রেক কষলো। সাথেসাথেই ধুপধাপ করে মাথায় বারি খেলো সানি-রিভান। অন্বিতা টাল সামলাতে না পেরে উল্টে গিয়ে সানির ব্যাগ চেপে ধরলো অগত্যাই। নিশান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ঝাঁঝালো গলায় বললো,

—- ব্যাটারা, ট্যাংকি ট্যাংকি পানি খাবি তাইলে তো একটু পরপর চাপ লাগবেই। যা ভাগ! দেখেশুনে নাম, বেশিদূর যাস না। এলাকা ভালো না!

রিভান কৃতজ্ঞতা ভরা চাহনিতে তাকালো। গাড়ির গেইট খুলে চটজলদি নেমে পরতেই নামতে লাগলো সানিও। নিশান্ত কপাল কুঁচকে ধমক মেরে বললো,

—- ব্যাটা তুই নামোস কেন? একটু আগেই তো বাসা থেকে কাজ সেড়ে আসলি!

সানি ঠোঁট উল্টে করুন চোখে চেয়ে বললো,

—- কোন সংবিধানে লেখা আছে যে ঘন্টায় শুধু একবারই মুত লাগে?

—- শালা, দূর হ আমার চোখের সামনে থাকে…!

সানি নিশান্তের হাই ভোল্টেজ ওয়ালা ধমক খেয়ে দু হাতে কান কান চেপে ধরে দরজা খুলে রিভানের পেছন পেছন দৌড় লাগালো সানি। নিশান্ত সিটে গা এলিয়ে দিলো। চোখ দুটো বুজে নিয়ে স্মৃতির পাতা উল্টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার অবুঝ মন। অন্বিতা গুটিশুটি মেরে উঁকিঝুঁকি মারবার প্রচেষ্টা চালালো। আবছা কাচের দেয়াল ভেদ করে দৃষ্টি পড়লো নিশান্তের স্নিগ্ধ ব্রাউন সেইডের চুলগুলোর ওপর। যারা লেপ্টে বিচরণ করছে তার কপাল জুড়ে, পরিবেশের হাল্কা হিমেল হাওয়ায় উড়ছে তারা, খেলছে তারা অবলীলায়।

ঝোপের আড়ালে ৪ জোড়া লোভাতুর চোখ আড়ালে থেকে এতোক্ষণ নজর রাখছিলো নিশান্তদের গাড়ির ওপর। তাদের এলাকায় হুটহাট কোনো চলতি প্রাইভেট কারের থামায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে তারা। পর মুহূর্তে গাড়ি থেকে দুটো ছেলেকে নামতে দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো তাদের। তাদের মাঝে একদন হাতের ইশারায় বাকিদের এগোতে বলতেই “জো হুকুম!” বলেই নিঃশব্দে এগোতে লাগলো তারা। তাদের লক্ষ্য স্থির, কম করে হলেও হাজার খানিক টাকার মাল কপালে জুটবে এই ভেবেই নেচে উঠলো তাদের হিংস্রতায় ভরা মন।
.
.
.
চলবে……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here