এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ৬

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

—- উফফফ…..অস্থির! এতো মেয়ে নয় যেনো পুরাই আগুন মাম্মা!

পাশ থেকে রিভানের গলা পেয়ে হকচকিয়ে উঠে অন্বিতার থেকে চোখ নামিয়ে নিলো নিশান্ত। কেনো যেনো বড্ড রাগ লাগছে তার। এই রাগ অন্বিতাকে এভাবে হ্যাবলার মতো দেখার জন্য নাকি রিভানের এভাবে অন্বিতাকে দেখে বাজেভাবে মন্তব্য করার জন্য তা জানা নেই নিশান্তের। সে শুধু অনুভব করছে তার ভেতরে আবারও রাগের জোয়ার ধেঁয়ে আসছে।
নিশান্তের ভাবনার মাঝেই আবারও সাইকেল চালালো রিভান। অন্বিতার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক হাতে নিশান্তের হাত চেপে ধরে সে বললো,

—- দোস্ত এটা তোদের ফ্ল্যাটের নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়েটা না, যে আজ তোর গায়ে পানি ফেললো?

অনিচ্ছা সত্ত্বেও গম্ভীর গলায় “হ্যাঁ, তো?” বললো নিশান্ত। নিশান্তের পজিটিভ জবাবে ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসির রেশ টেনে রিভান বললো,

—- সাব্বাস! তাহলে তো এক্কেবারে লাইন সেট! ইশশস এতোদিন কোথায় ছিলো মেয়েটা? আগে কেনো দেখলাম না বলতো? আহা রে! কি মিস টাই না করে ফেলেছি দোস্ত! এই কষ্ট কই রাখবো আমি?

রিভানের কথায় কপালের ভাঁজ আরো দৃঢ় ভাবে প্রকট হলো নিশান্তের। রিভানের থেকে হাত ছাড়িয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে সে প্রশ্ন করলো,

—- ওয়েট ওয়েট, তুই কবে থেকে সানির মতো মেয়েদের দিকে তাকাতে শুরু করলি রিভান?

বিনিময়ে বুকের বাম সাইডে হাত দিয়ে চেপে ধরলো রিভান। নিশান্তের চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললো,

—- কবে থেকে নয় দোস্ত! আজ থেকে, এখন থেকে তবে অন্য মেয়েদের দিকে নয়, জাস্ট এই মেয়েটির দিকেই।
তা নাম কি মেয়েটার? উমম…! আই থিংক ওর নাম “সুইটি, মিষ্টি, হানি” টাইপ কিছু একটা হবে, রাইট?

এবার রাগের সীমানা আকাশ ছুঁয়ে ফেললেও প্রকাশ করলো না নিশান্ত। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বিরক্তিকর গলায় “জানি না” বলেই ফুল স্পিডে গাড়ি টান দিলো সে। রাস্তায় বেশকিছু ভাঙা অংশে পানি জমাট বেঁধে থাকায় সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই এগিয়ে চললো সে।

_________________________

কাকভেজা হয়ে বাচ্চাদের সাথে বৃষ্টিতে হাত মেলে খেলা করছিলো অন্বিতা। এই রাস্তায় তেমন একটা যানবাহন চলাচল করে না বলেই একটু হলেও চিন্তামুক্ত সে। কিন্তু ভাবনাটা আর বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না তাকে। নিয়তির চরম পরিহাসে হঠাৎ তীব্র গতিতে চলমান প্রাইভেট কার এসে রাস্তার জমাট বাঁধা কাদাপানি ছিটিয়ে দিলো তার ওপর। নিজের শরীরের ভেজা শাড়ির ওপর কাদাপানির লেপ্টে যাওয়ায় কপাল কুঁচকে বিস্মিত হলো অন্বিতা। রেগেমেগে
“ওই ব্যাটা দাঁড়া….আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস? বাচ্চারা….! এট্যাক!”

অন্বিতার কথায় সেকেন্ডের মধ্যে দৌড়ে নিশান্তদের পথ আটকে ধরলো বাচ্চাগুলো। হঠাৎ এভাবে এতোগুলো বাচ্চার সামনে চলে আসায় ভড়কে গিয়ে তৎক্ষণাৎ ব্রেক কষলো নিশান্ত। আবারও আচমকা ধাক্কা লাগায় গ্লাসে গিয়ে মাথায় বারি খেলো রিভান। কপাল চেপে ধরে “আহহহ” বলে চাপা আর্তনাদ করতেই গ্লাসে একপ্রকার কিল-ঘুষির বজ্রপাত শুরু হলো যেনো।
বাচ্চাগুলো তাদের গাড়ি পুরোপুরি ঘেরাও করে ফেলেছে। তুমুল গতিতে চোখে মুখে রক্তিম আভা ধারণ করে উইন্ডো তে করাঘাত করছে তারা। নিজেদের গায়ে কাদা লাগায় কোনো সমস্যা না হলেও তাদের অন্বিপুর গায়ে কেউ এভাবে কাদাপানি মাখিয়েছে ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ হয় নি তাদের। রাস্তা কি ছোট হয়ে গিয়েছিলো এক মুহুর্তের জন্য যে এতোগুলা জায়গা ফেলে একদম তাদের পাশ দিয়ে গিয়েই কাদাপানি ছেটাতে হলো গাড়ির ভেতরে থাকা পঁচা ছেলেদের?

বাচ্চাগুলোর রেগে আগুন হয়ে হৈচৈ এর মাঝেই গাড়ির একদম সামনে এসে চোখের দৃষ্টি সরু করে দাঁড়ালো অন্বিতা। নিশান্ত বুঝলো এই ভীড় ঠেলে এগোনো কোনো ভাবেক যাবে না আর। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো সে। নিশান্ত নামতেই রিভানও গাড়ি থেকে কপাল চেপে ধরে নেমে পড়লো অগত্যাই। গাড়ি থেকে সেই চেনা মুখশ্রী বের হতেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো অন্বিতার, অবাকের ভাব বদলে নিমিষেই প্রকান্ড রাগের আকার ধারণ করলো সে। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে নিশান্তকে উদ্দেশ্য করে অন্বিতা বললো,

—- কতোটা বোকা আমি, আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো যে এরকম একটা বিশ্রী কাজ আপনি ছাড়া আর কেউ করতেই পারে না!

অন্বিতার তাচ্ছিল্যে ভরা প্রলাপে চোখের মুখে বিরক্তির ছাপ দৃঢ় হলো নিশান্তের। যদিও রাগের বশে না জেনে বুঝেই অতিরিক্ত স্পিডে গাড়ি চালানোয় অঘটনটা ঘটে গিয়েছে তবুও তাতে অনুশোচনা হবার বদলে যুক্ত হলো আরো একরাশ বিরক্তি। বৃষ্টির তেজ কমে যাওয়ায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতেই আধভেজা হয়ে গেলো নিশান্ত। অন্বিতার কথার বিপরীতে পকেটে দুহাত গুঁজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সে বললো,

—- ওয়েল, আমার জায়গায় যে কেউ থাকলেই এই অঘটনাটা ঘটে যেতে পারতো।
এভাবে কাদায় মাখামাখি হবার পূর্বে আপনার রাস্তায় নেমে এভাবে বৃষ্টিতে মাতামাতি করার পরিণতি সম্মন্ধে জেনে নেওয়া উচিৎ ছিলো মিস অন্বিতা।

নিশান্তের মুখে “অন্বিতা” নামটা শুনতেই ভ্রু কুঁচকালো রিভান। তখন মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করায় জেনে শুনেও নিশান্তের “জানি না” জবাবে চরম বিরক্ত সে।
অন্বিতা বুঝলো এভাবে কথায় শুধু কথাই বাড়বে, কাজের কাজ আর হবে না। তাই বাচ্চাদের ইশারায় চেঁচামচি করা বন্ধ করতে বলে তাকে ফলো করতে বললো অন্বিতা। রাস্তার ভাঙ্গা অংশে জমে থাকা কাদাপানি পা দিয়ে ছিটকে নিশান্তের গায়ে মেখে মুচকি হাসলো সে। অন্বিতার দেখাদেখি বাচ্চারাও একইভাবে কাদা ছেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিশান্তের গায়ে। মাঝখান থেকে বিপাকে পড়লো রিভান। কোনো দোষ না করেও এভাবে বাচ্চাদের কাছে হেনস্ত হওয়া থেকে বাঁচতে দূরে সরে গেলো সে।

—- হাউ ডেয়ার ইউ! আপনার সাহস কি করে হলো আমার গায়ে কাদা ছেটানোর?

বিনিময়ে বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে বাঁকা হাসলো অন্বিরা। জবাব স্বরূপ সে বললো,

—- যেভাবে আপনার সাহস হয়েছে এতোগুলো মানুষের ওপর কাদা ছেটানোর ঠিক সেভাবেই!

—- ইউ ননসেন্স…..

রেগেমেগে আরোও কিছু বলার আগেই থমকে গেলো নিশান্ত। প্রায় ৪ অথবা ৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে তার ব্লেজার টেনে ধরে অভিযোগের শুরু আধো আধো বুলি আওড়াতে আওড়াতে বললো,

—- এই পচা লোক, তুমি আমাদেল অন্বিপুকে পচা পচা কথা বলছো কেনো?

এতো ছোট্ট একটা বাচ্চার এতোকিছু বোঝার ক্ষমতা দেখে অবাক হলো নিশান্ত। বাচ্চাটির কথার রেশ ধরে একে একে সবাই এসে নিশান্তকে ঘিরে ধরে একের পর এক অভিযোগ ছুড়তে লেগে পড়লো তৎক্ষণাৎ। মাঝথেকে তমা এগিয়ে এলো মুখ ফুলিয়ে নিজের গোলুমলু হাতের ইশারায় পাঞ্চ দেখিয়ে বললো,

—- এই ফত্তা লম্বা ব্লাউন ব্লাউন পতা লোক! আমাদেল অন্বিপু কে যতি আল কোনো পতা পতা কতা বলো তাইলে কিন্তু তোমাদেল কে আমলা পিতিয়ে পিতিয়ে হাতপাতালে পাতিয়ে দেবো! হু!

তমা’র তোতলা টাইপ অফ কনভার্সনের নিশান্ত কি বুঝলো সে নিজেই জানে না তবে এটুকু স্পষ্ট যে বাচ্চাটা তাকে ভালো কোনো কথা বলে নি।
এতো ক্যাচাল এর মধ্যে নিশান্ত আর কিছু বললো না। অন্বিতার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে “পরে দেখে নেবো আপনাকে মিস অন্বিতা!” বলেই গাড়িতে উঠে বসলো সে। রিভানও নিশান্তকে গাড়ি তে বসে পড়তে দেখে হুড়মুড় করে সিটে বসে পড়লো তৎক্ষণাৎ।
বিনিময়ে অন্বিতা ভিলেনি হাসি হাসলো। এক হাতে তুড়ি বাজিয়ে ভ্রু উঁচু করে সে বললো,

—- আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে ঠিক এভাবেই ময়দান ছেড়ে পালাতে হয় মি. নিশান্ত! সো নেক্সট টাইম থেকে কেয়ার ফুল থাকবেন। পাঙ্গা নেওয়ার আগে ভেবে নিবেন ঠিক কার সাথে মোকাবেলায় মাঠে নেমেছেন এবং পরিশেষে ঠিক কি পরিণতি হতে পারে।

বলেই বাচ্চাদের সাইডে সরে যেতে ইশারা করলো অন্বিতা। সকলেই তার ইশারায় ফুটপাতের ওপরে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো নির্দ্বিধায়। নিশান্ত রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে স্টিয়ারিং গুড়িয়ে ছুট লাগালো। রিভান ভেতর থেকেই বোকার মতো অন্বিতার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একটা সময় হয়ে গেলো অদৃশ্য।
বেশ খানিকটা দূরে চলে আসতেই মুখ খুললো রিভান। কল্পনায় অন্বিতার ছবি ভাসিয়ে সেন্টি টাইপ ভাব নিয়ে বললো,

—– ইশশস কি তেজ, কি জৌলুশ! কি ভয়ংকর সুন্দর মুখশ্রী। ঘন কালো চুল! সাথে ঢেউ খেলানো ভ্র‍ু! আর গালে সেই পাগল করা টোল! উফফ…দোস্ত আমি তো খুন!

রিভানের কথায় চোখের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ করলো নিশান্ত। ফোসফাস করতে করতে এক নজরে গাড়ি চালাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। নিশান্তকে চুপচাপ থাকতে দেখে রিভান আবারও বলতে শুরু করলো,

—– তুই কিভাবে মেয়েটার সাথে এতোটা বাজে বিহেভ করতে পারিস বলতো নিশান্ত? এতো সুইট একটা মেয়ে, যাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়া টাইপ অবস্থা হয়েছে আমার সেখানে তুই কি এতোটা রুড! মানলাম তোর পেছনে হাজার হাজার মেয়ে ঘুরে বেড়ায় বাট তাই বলে এরকম একটা মেয়েকে দেখেও তুই দেখিস না? যাক গে আমার লাইন তো ক্লিয়ার। তুই প্রেমে পড়িস না তাই আলহামদুলিল্লাহ!

এতোক্ষণ ধরে চেপে রাখা রাগের ফোয়ারা নিমিষেই ফেটে পড়লো এবার নিশান্তের। জোরেশোরে ব্রেক কষেই চোখ গরম করে তাকালো সে রিভানের দিকে। স্টিয়ারিং এ হাত মুঠো করে বারি মেরে দাঁতে দাঁত চেপে রিভান কে উদ্দেশ্য করে সে বললো,

—- খুব পছন্দ হইছে তোর তাইনা? বেশ থাক তুই ওই ডাফার মেয়েটাকে নিয়ে।

বলেই রিভানের পাশের গাড়ির গেইট খুলে এক প্রকার ধাক্কা মারা শুরু করলো সে রিভান কে। নিশান্তের হঠাৎ এরকম আচরণে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো রিভান। ৪ বছরের ফ্রেন্ডশিপে কোনোদিনও তাকে এতোটা রেগে যেতে দেখে নি সে। নিশান্ত তো তার নামের মতোই ছিলো শান্তশিষ্ট, রাগের বিন্দুমাত্র চিহ্নও ফুটে উঠতো না তার মাঝে। গম্ভীরতা পূর্ণ হলেও কখনো এরকম রুড বিহেভ করে নি সে। তবে আজ হঠাৎ হলো কি তার?
তার ভাবনার মাঝেই আবারও নিশান্ত ধমকে উঠলো,

—– কি হলো নামতেছিস না কেনো? নাম…..! আর এক মুহূর্তও চোখের সামনে থাকবি না আমার। বের হ!

রিভান বুঝলো কোনো কথায় কাজ হবে না। রাগ থেমে গেলে এই বিষয়ে পরে কথা উঠানো যাবে। এই মুহুর্তে তার সামনে থেকে না গেলে রাগ কমার বদলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে আংশকা করে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো রিভান। রিভান নামতেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো নিশান্ত। রিভান কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে নিশান্তের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিলো। উল্টো দিকে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। আরে এটাতো তার নিজের বাড়ি! তার মানে নিশান্ত জেনে শুনেই তাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে! শিট! আর সে ভাবছিলো বোধহয় অর্ধেক রাস্তা হেটেই চলে যেতে হবে তাকে।
অন্বিতার ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলো যে কখন বাসার সামনে এসে গাড়ি থেমেছে বুঝতেই পারেনি! নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় চাটি মেরে দিলো রিভান। নিশান্তের কথা ভেবেই মুচকি হেসে পা বাড়ালো সে ভেতরে প্রবেশের উদ্দেশ্যে।

__________________________

নিজের ভেজা চুলগুলো তোয়ালা দিয়ে মুছতে মুছতে বেড়াল ছানাটির সাথে খেলা করছে অন্বিতা। তার পাশেই মুখ ফুলিয়ে কুমড়ো বানিয়ে বসে আছে বাবলী-শিখা! একে তো ভার্সিটি যাবে বলে তাদের পাঠিয়ে নিজে বৃষ্টি বিলাস করেছে তার ওপর তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েই বেড়াল নিয়ে খেলা করছে অন্বিতা। যার দরুন বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে তারা।

বেড়ালকে বাটিতে দুধ ঢেলে খেতে দিয়ে এবার সরে এসে বসলো অন্বিতা। বাবলী ও শিখার দিকে এক পলক নজর ফেলে জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো সে। তোয়ালা রেখে চুলে চিরুনি করতে করতে সে বললো,

—- আচ্ছা এখন বল, কি কি যেনো প্রশ্ন করছিলি তোরা?

অন্বিতার এমন বেখেয়ালি পনায় বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললো বাবলী-শিখা। বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে শিখা গম্ভীরতা ত্যাগ করে বলে উঠলো,

—- মানেটা কি অন্বি? প্রবলেম কি তোর? এতোক্ষণ ধরে যে তোকে এতোগুলো প্রশ্ন করলাম যে আমাদের ভার্সিটি যেতে বলে তুই কেনো গেলি না? এই বেড়ালটাকে কোথায় থেকে পেলি? আর বাড়ি চেঞ্জ করলি অথচ আমাদের জানালি না কেনো?

শিখার কথায় সঙ্গ দিয়ে বাবলীও একই প্রশ্ন ছুড়লো। হাত থেকে চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিয়ে অন্বিতা বললো,

—- বহুত লম্বা কাহিনীরে মোটু-পাতলু, তোরা তো জানিস আমার ফোনের স্পিকারের অবস্থা, মেসেজে এতো কথা লেখার সময় কই? তাই ছোট্ট করে আজ ভার্সিটি যেতে বলেছিলাম তোদের। উদ্দেশ্য ছিলো একে একে সব বলা বাট ওইযে আমার প্রাণপ্রিয় ওয়েদার। আহা কি বৃষ্টি টাই না হলো! বৃষ্টি হবে আর আমি ভিজবো না তা কি করে হয়? অবশ্য আজ ভেজার বিন্দুমাত্রও ইন্টেশন ছিলো না তবুও ভিজতে হলো।

এটুকু বলেই থামলো অন্বিতা। দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে সে আবারও বলে উঠলো,

—- আচ্ছা সেসব পরেও বলা যাবে। আপাতত ভার্সিটির খবর বল, কোনো ব্রেকিং নিউজ টিউজ আছে নাকি?

অন্বিতার কথা শুকনো ঢোক গিললো দুজনেই। একে অপরের দিকে এক পলক চেয়ে আবারও অন্বিতার মুখপানে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে একসাথেই বললো বাবলী-শিখা,

—- ব্রেকিং নিউজ নয় দোস্ত, একেবারে বাঁশিং নিউজ আছে, নেক্সট উইকেই শুরু হবে সেমিস্টার ফাইল এক্সাম….! তো হলো না ব্রেকিং নিউজের জায়গায় বাশিং নিউজ?

সেমিস্টার ফাইন এক্সাম কথাটা নিজের মস্তিষ্কে বার কয়েক আওড়ে নিতেই গলা শুকিয়ে এলো অন্বিতার। ঠোঁট কামড়ে ধরে সে বললো,

—- বলোস কি? সেমিস্টার ফাইনাল না এই মাসের শেষের দিকে হওয়ার কথা ছিলো?

বিনিময়ে ঠোঁট উল্টানোর পরিধি আরো খানিকটা বৃদ্ধি করলো বাবলী। মুখ ফুলিয়ে সে বললো,

—- কথা আছিলো তবে এখন আর নাই। একটা টিচার লাগবেই দোস্ত নয়তো সোজা হার্ট ফেইল করা লাগবে এবার। শালার ম্যাথমেটিক্স এ কাচা হয়েও তোর পাল্লায় পরে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে এডমিট হইলাম। এখন যদি সেমিস্টার ড্রপ খাই তাইলে আমার আর বিয়া হবে না।

বাবলীর কথা ভ্রু কুঁচকে ঠাস করে তার পিঠে কিল বসিয়ে দিলো অন্বিতা। বিরক্তির রেশ টেনে সে বললো,

—- এই তোর কি জন্ম হইছে খালি বিয়া করার জন্যই নাকি? খালি আউল ফাউল সব কথাবার্তা! ডাম্ব! চুপ থাক, ফেইল মারবো এমনটা ভাবা বন্ধ কর। কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতে হবেই। এভাবে তো আমি নিজেই ফেইল মারুম দেখতাছি!

অন্বিতার কথার মাঝেই শিখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জানালার ওপারে। আকাশের বুক চিরে আবারও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামতে দেখায় মুখে একরাশ হতাশা এসে ভর করলো তার। ঠোঁট উল্টে সে বললো,

—- ওহ নো! আবারও বৃষ্টি!

“বৃষ্টি” শব্দটা কানে পৌঁছোতেই লাফ মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো অন্বিতা। বাবলী-শিখাকে বিছানাতেই বসে থাকতে ইশারা করে ব্যস্তস্বরে সে বললো,

—- এই রে ছাদে আমার কাপড় নেড়ে দেওয়া আছে, ভিজে গেলো বোধহয়….!

বলেই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ছুট লাগালো সে ছাদের উদ্দেশ্যে। অন্বিতা যেতেই মুখ কালো করে আবারও বিড়ালছানাটিকে দেখে নিয়ে ঠোঁট উল্টালো বাবলী-শিখা।

_______________________

নিজের আধভেজা কামড় গুলো সিড়ি রুমে থাকা একটা চেয়ারে এনে রেখে আবারও ছাদে পা রাখলো অন্বিতা। আফসানা বেগম তাদের শুকিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো ভুলে নিশ্চিন্তে রয়েছে কিভাবে মাথায় খেলছে না তার। কাপড় গুলো ভিজে চিপচিপে হয়ে যাবে বিধায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই ছাদ থেকে কাপড়গুলো দ্রুত তুলে এনে চেয়ারে রাখলো অন্বিতা। কাপড় তুলতে তুলতে এক পর্যায়ে অদ্ভুত একটা কাপড় দেখে থতমত খেয়ে গেলাও সে। এটা নিঃসন্দেহে কোনো ইয়াং ছেলের আন্ডারওয়্যার তা নিশ্চিত, তবে এটা যে তার বাড়ির কারোর নয় এটাও স্পষ্ট। রফিক আহমেদেরও হওয়াটা নিতান্তই অসম্ভব প্রায়।

অবশেষে হিসেব মিলিয়ে চরম অস্বস্তিকর পর্যায়ে পড়লো অন্বিতা। এটা যে তার জাত শত্রু বাড়িওয়ালার ছেলে নিশান্তের তা বোঝা হয়ে গিয়েছে তার। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে এই আন্ডারওয়্যার টা তুলবে কি করে সে? এসব ভাবতে ভাবতেই আজকের সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেলো তার। নিশান্তের ওপর না হোক এটলিস্ট তার আন্ডিত ওপরই প্রতিশোধ নেওয়া যাবে ভেবেই ভিলেনি হাসি হাসলো সে। তার থেকে নিশান্তের আন্ডারওয়্যার টা নামিয়ে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ইচ্ছে মতো জুতো দিয়ে ঘষামাজা করে ছাড়লো অন্বিতা। আন্ডির হাল বেহাল করে দিয়ে অবশেষে থামলো সে। অথচ এদিকে নিজে যে ভিজে যাচ্ছে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
আন্ডারওয়্যার টার দফারফা করে ছেড়ে দিয়ে এক পলক তার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো অন্বিতা। বিশ্বজয়ের হাসি হেসে আনমনেই সে বলল,

—– এ যেনো আন্ডারওয়্যারের নয় পুরো জলজ্যান্ত ডায়নোসরেরই ধোলাই করে ছাড়লাম আমি। আহা! এতো শান্তি শান্তি লাগে কেনো অন্তরে….!

.
.
.
চলবে……………….💕

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here