এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ১৫+১৬

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

আমি মুহিতের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ইনহেলারটা মুখে চেঁপে একের পর এক কয়েকটা চাপ নিয়ে নিলাম। প্রায় দশ মিনিট ধরে মুখটা বন্ধ করে রাখলাম। আস্তে আস্তে আমার শ্বাস চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

মুহিত আমাকে আস্তে করে বেডে শুইয়ে দিলো। আমি চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। মৃন্ময় ভাইয়া রুম থেকে বের হয়ে উনার নিজের রুমে চলে গেলো। মুহিত আমার মাথার পাশে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“এখন কেমন লাগছে রূপ?”

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,,,,,,

—-“ভাভাভালো লাগছে। আগের থেকে কিছুটা ব্যাটার।”

—-“ঘুমানোর ট্রাই করো রূপ। ঘুমালে আস্তে ধীরে শরীরটা শিথীল হয়ে আসবে। স্বাভাবিক লাগবে। শ্বাস নিতে ও সমস্যা হবে না। সকালের মধ্যেই তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ্।”

আমি খুব আস্তে করে মুহিতের কানের কাছে মিনমিনিয়ে বললাম,,,,,,,

—-“তুমি ঘুমাবে না মুহিত?”

—-“তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে নেই এরপর আমি ঘুমাবো।”

—-“মুহিত….আমি তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই।”

মুহিত আর দেরি না করে আমার পাশে শুয়ে আমাকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে আমার কপালে চুমো খেয়ে আমার মাথায় অনবরত হাত বুলাতে লাগল। আমি মুহিতকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছি। শান্তি লাগছে খুব। ভালোবাসার মানুষটার সান্নিধ্যে আসলে সবকিছুই যেনো আচমকা শান্ত হয়ে উঠে। ভালো লাগায় মন ছেঁয়ে যায়। শরীরের অসুখের সাথে তখন মনের অসুখটা ও সেরে যায়। মনের জখম গুলো আস্তে আস্তে সেরে উঠছে। মুহিতের প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাস আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগাচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই এই লোকটার সাথে জনম জনম ধরে। এইভাবেই ওর বুকের সাথে মিশে থাকতে চাই। হোক সেটা ইহকালে বা পরকালে।

আস্তে আস্তে আমার চোখ লেগে আসছে। ঘুমপরীরা হানা দিয়েছে চোখে। মুহিত এখনো আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—-“রূপ সোনা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো। ঘুমালেই তোমার শরীর ঠিক হবে। তুমি আমার বুকে নিশ্চিন্ত। সো শান্তির এক্টা ঘুম দাও।”

আমি এবার পুরোপুরি ঘুমপুরীতে পাড়ি জমালাম। মুহিতের আশ্বাসে আমি এক্টা শান্তির ঘুম দিলাম। সেই ঘুম ভাঙ্গল সকাল নয়টায়। চোখ খুলেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম মুহিতের বুকে। মুহিত খালি গাঁয়ে শুয়ে আছে। উন্মুক্ত ফর্সা বুকটা আমার চোখ দুটোকে লজ্জায় রাঙ্গিয়ে তুলছে। আমার যতটুকু মনে আছে মাঝ রাতে তো মুহিত শার্ট পড়া অবস্থায় ছিলো। সকাল সকাল কি এমন হলো যার কারনে মুহিত উন্মুক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে?

গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে মুহিত। আমাকে দু হাতের বেষ্টনীতে আবদ্ধ করে রেখেছে। আমি মুচকি হেসে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি। ওর গোলাপী রং এর ঠোঁট জোড়া আমাকে খুব টানছে। ইচ্ছে করছে কুটুস করে এক্টা কামড় বসিয়ে দিতে।

আচমকাই আমার চোখ গেলো নিজের দিকে। আমার গাঁয়ে কাল রাতের নীল রং এর জামাটা নেই। বড় এক্টা উড়না দিয়ে আমার শরীরটা ঢাকা আছে। মনের মধ্যে হাজারো ভয় আর কৌতুহল দানা বাঁধছে। শুকনো ঢোক গিলে আমি বারংবার নিজের শরীরটা চেইক করছি। মাথায় কেবল এক্টা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝরাতে মুহিত আমার সাথে কিছু করে বসে নি তো? কথাটা ভাবলেই শরীরটা কেঁপে উঠে। কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। সাথে প্রচন্ড রাগ ও উঠছে। উভয় দিক মিলিয়ে আমার কেমন মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।

বুঝতে পারছি না মুহিতকে এই মুহুর্তে ডাকা টা ঠিক হবে কি না। সারা রাত তো আমার জন্য ঘুমাতে পারে নি। খুব জ্বালিয়েছি আমি ওকে। বার বার ডাকতে যেয়ে ও থেমে যাচ্ছি। মন মানছে না। কি এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেসে গেছি আমি। মুখ ফুলিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি। ফাজিল লোকটা আমাকে না জানিয়েই ফুলসজ্জা করে ফেলল? কতো স্বপ্ন ছিলো এই রাতটা নিয়ে আমার। খুব সুন্দর করে সাজব, লোকটাকে লাল গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করব, নিজ থেকে আমি ওকে নিজের করে নেবো। ধ্যাত কিছুই হলো না। সব নিরামিষ হয়ে গেলো। এই লোকটা সব ঘেটে দিলো। আনরোমান্টিক ছেলে এক্টা।

এর মাঝেই মুহিত নড়েচড়ে উঠল। বেচারার ঘুম ভাঙ্গছে। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মুহিতের দিকে। মুহিত চোখ বন্ধ অবস্থায় বড় এক্টা হাই তুলে আমাকে আরো জোরে ঝাপটে ধরে মিনমিন করে বলল,,,,,,,,

—–“রূপ উঠে পড়ো। তোমাকে ডক্টর দেখিয়ে বাসার সন্ধানে টহল দিতে হবে।”

আমি ঝাঁঝালো কন্ঠে মুহিত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,,

—-“তুমি কাজটা ঠিক করো নি মুহিত।”

মুহিত বেশ অবাক হয়ে চোখ জোড়া খুলে পিটপিট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“হোয়াট? কোন কাজটা ঠিক করি নি রূপ?”

—-“ওহ্ আচ্ছা এখন কিছুই জানো না তাই না?”

—-“না রূপ কিছুই জানি না। বলো কি হয়েছে? কি করেছি আমি?”

আমি শোয়া থেকে উঠে গায়ের জড়ানো উড়নাটা ভালো করে চেঁপে ধরে মুহিতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,

—-“আমার অনুমতি না নিয়েই মাঝ রাতে অসব করে নিলে?”

মুহিত ভ্রু জোড়া কুচকে শোয়া থেকে উঠে কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কি করেছি আমি? তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কি এমন করতে পারি?”

—-“হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো কিছুই জানবে না। যা করার তো করেই ফেলছ। এখন বলে ও লাভ নেই।”

—-“প্লিজ রূপ বলো কি হয়েছে। আমি জানতে চাই।”

—-“একদম ঢং করবে না। বিরক্ত লাগছে আমার। তোমার জন্য এই সাত সকালে আমার শাওয়ার নিতে হবে।”

—-“পাগল হইছ তুমি? সাত সকালে শাওয়ার নিবে মানে? একদম পানির আশেপাশে যাবে না। এমনিতেই শরীর খারাপ আবার যাবে শাওয়ার নিতে।”

—–“তুমি ই তো আমার কাজ বাড়ালে। এই অসুস্থ শরীর নিয়েই এখন আমার শাওয়ার নিতে হবে।”

—-“আমি কাজ বাড়ালাম মানে? আমি কি করেছি রূপ। প্লিজ বলো!”

—-“ওহ্ আচ্ছা। আপনি দুধের ধোঁয়া তুলসি পাতা তাই না? কিচ্ছু জানেন না?”

—-“না জানি না রূপ। প্লিজ বলো।”

আমার রাগটা যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। মুহিত এমন এক্টা ইনোসেন্ট ভাব নিয়েছে মনে হয় যেনো কিছুই জানে না। রাগে আমি মুঠ করা উড়নাটা ছেড়ে মুহিতের গলা চেঁপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,,,,,,

—-“মাঝরাতে তুমি আমার সাথে ফুলসজ্জা করেছ। আমার অনুমতি ছাড়াই। তুমি কি ভেবেছ আমি কিছু বুঝব না?”

মুহিত বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গাঁ থেকে উড়নাটা নিচে পড়ে গেছে। আমার পুরো শরীর মুহিতের কাছে স্পষ্ট। আচমকাই মুহিত আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিলো। মৃদ্যু হেসে মুহিত আমার গাঁয়ের উপর উঠে গেলো। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মুহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। দুহাত দিয়ে আমি মুখটা ঢেকে রেখেছি। মুহিত আমার মুখ থেকে হাত জোড়া সরিয়ে আমার নাকে নাক ঘঁষে বলল,,,,,,,,

—-“তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করি নি রূপ। মাঝ রাতে তুমি আচমকাই বমি করে আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছ। সাথে তুমি নিজে ও ভেসে গেছো। তাই তোমাকে চেইন্জ্ঞ করাতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে আমাকে ও চেইন্জ্ঞ করতে হয়েছে। চোখে খুব ঘুম ছিলো বলে তোমাকে জামাটা পড়াতে পারি নি। জাস্ট উড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম। আমি নিজে ও কিছু পড়ি নি। উন্মুক্ত অবস্থায় ছিলাম। ঘুমে চোখ জ্বলে যাচ্ছিলো। তাই সবকিছু ইনকমপ্লিট রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছি।”

আমি জিভ কেটে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছু না জেনেই ঝুটা ইন্জ্ঞাম দিয়েছি মুহিতকে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,

—–“আ’ম স্যরি মুহিত। আমি না বুঝেই তোমাকে উল্টো পাল্টা বলেছি। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।”

মুহিত বাঁকা হেসে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“এক্টা শর্তেই আমি তোমাকে ছাড় দিবো।”

আমি কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,,,,,,

—-“কি শর্ত?”

মুহিত আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইস করছে আর বলছে,,,,,,,

—-“চুমো দিতে হবে অনেকগুলো।”

আমি চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছি। মুহিতের প্রতিটা স্পর্শ আমার গাঁয়ে শিহরণ তুলে দিচ্ছে। ভাল্লাগছে বেশ। অস্বীকার করার মতো কিছুই নেই। স্বামীর স্পর্শ সব স্ত্রীদের কাছেই অধিক প্রিয় এবং পবিএ। আমি এখন একান্তভাবে মুহিতকে চাইছা। মুহিত হয়তো আমার সম্মতি বুঝে গেছে। সে আর দেরি না করে আমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। আমি ওর পেছনের চুল গুলো মুঠ করে ধরেছি। মুহিত খুব সফটলি আমার ঠোঁটে কিস করছে। প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,,

—-“আজ এটুকুই রূপ। আমাদের ফার্স্ট নাইট হবে খুব স্পেশাল। সামাজিক নিয়মে আমরা যেদিন বিয়ে করব ঐদিনই আমাদের ফুলসজ্জা হবে। তোমার অনুমতি নিয়েই আমি তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিবো।”

আমি মুচকি হেসে মাথা নাঁড়ালাম। মুহিত আমাকে ছেড়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি এক দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি। মুহিত মৃদ্যু হেসে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“উঠো রূপ। চেইন্জ্ঞ করে নাও। অনেক কাজ আছে আজ।”

আমি শোয়া থেকে উঠে নাকটা ফুলিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,

—-“আমি ডক্টরের কাছে যাবো না মুহিত। এখন আমি একদম সুস্থ আছি।”

—-“নো রূপ। এসব বললে চলবে না। ডক্টর দেখিয়ে ঔষধ আনতে হবে। বলা যায় না ডক্টর হয়তো ইনহেলার ও চেইন্জ্ঞ করে দিতে পারে।”

—-“তা ও আমি যাবো না। ডক্টরের কাছে যেতে আমার একদম ভালো লাগে না।”

মুহিত রাগী কন্ঠে আমার দিকে তেড়ে এসে বলল,,,,,

—-“আর এক্টা কথা ও বাড়াবে না রূপ। আমি যা বলছি তাই হবে। তাড়াতাড়ি চেইন্জ্ঞ করে রেডি হয়ে নাও।”

আমি কান্না মুখ করে বসা থেকে উঠে মুহিতকে ক্রস করে কাবার্ড থেকে সালোয়ার স্যুট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। প্রায় পনেরো মিনিট পর আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মুহিতকে রুমে দেখতে পেলাম না। ভ্রু কুঁচকে আমি পুরোটা রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম। টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুছে উড়নাটা বুকে জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচ তলায় তাকিয়ে দেখলাম মুহিত ভাইয়া মাথা নিচু করে সানোয়ার আঙ্কেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে পরিবারের সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

বুঝতে পারছি না আমার কি নিচে যাওয়া উচিত নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। কিছুক্ষন দ্বিধা দ্বন্ধে ভোগে নিজের মনের সাথে না পেরে ছুটে গেলাম নিচে। আমাকে দেখে সানায়া আপু মুখটা বাঁকা করে রেখেছে। ফুফুমনি আর সোহেলী আন্টি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রেজাউল আঙ্কেল ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে। মৃন্ময় ভাইয়া এখানে নেই। দোলা আপু পাউরুটিতে জেলি মেখে খুব আয়েস করে খাচ্ছে। সাকিব ভাইয়া হয়তো এখনো ঘুমুচ্ছে।

আমি মুহিতের পাশে মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। সানোয়ার আংকেল কান্নাসিক্ত কন্ঠে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত….তুমি সত্যি সত্যি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে?”

মুহিত গলা জড়ানো কন্ঠে বলল,,,,,

—-“হুম আব্বু। আগামী মাসেই চলে যাচ্ছি।”

—-“এটাই কি তোমার শেষ কথা মুহিত?”

—-“হুম আব্বু। এর উপর তোমরা আর কিছু বলতে এসো না।”

—-“আমাদের ভুলটা কি মুহিত? তোমার আম্মু না হয় হিংস্র কিন্তু তোমার আব্বু তো হিংস্র নয়। অন্তত আমার দিকটা ভেবে থেকে যাও।”

ফুফুমনি দূর থেকে ফুসফুস করছে। সানোয়ার আংকেলের কথায় উনার গাঁয়ে ফোসকা পড়ছে। মুহিত মলিন কন্ঠে সানোয়ার আংকেলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“স্যরি আব্বু। আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও।”

সানোয়ার আংকেল কাতর কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“প্লিজ মুহিত থেকে যাও। আমাকে বিবেকের কাছে এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিও না। এতো বিশাল অপরাধবোধ নিয়ে আমি বাঁচতে পারব না।”

—-“আমি চলে গেলে তোমার জন্য আরো ভালো হবে আব্বু। অনেক বড় এক বোঝা সরে যাবে। বিবেকের কাছে তো অনেক আগেই তুমি শেষ হয়ে গেছো। অপরাধ বোধ অনেক আগেই তোমার পিছু ছেড়েছে। আমার সব জানা হয়ে গেছে আব্বু। সত্যি কখনো চাঁপা থাকে না। আপন মানুষ পর হতে বেশি সময় লাগে না। সবার সামনে আমি আর কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না। আমাকে প্লিজ বাঁধা দিতে এসো না। আমি এবার নিজের মতো করে বাঁচতে চাই। এতো বছর আমার জন্য যা যা করেছ সব আমি সুদে আসলে ফেরত দেবো। সুসময় আমার ও আসবে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।”

সানোয়ার আংকেল থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখলে মনে হবে এক্টা মুর্তি দাঁড়িয়ে আছে। ফুফুমনি ন্যাকা কান্না করে মুহিতকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তুমি কোন সত্যির কথা বলছ মুহিত? আমরা সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।”

মুহিত ফুফুমনির হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—-“না বুঝার তো কিছু নেই আম্মু। তুমি আমার আপন মা নও। আমি তোমার লালিত সন্তান। বাধ্য হয়ে তুমি আমাকে লালন পালন করেছ। নিজের স্বামীর দোষ ঢাকার জন্য।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৬ (রহস্য উন্মোচন পর্ব)
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“না বুঝার তো কিছু নেই আম্মু। তুমি আমার আপন মা নও। আমি তোমার লালিত সন্তান। বাধ্য হয়ে তুমি আমাকে লালন পালন করেছ। নিজের স্বামীর দোষ ঢাকার জন্য।”

উপস্থিত সবাই বেকুব হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখে পানি চলে এসেছে। সানোয়ার আংকেলের চোখ থেকে দু এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে। ফুফুমনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত তুমি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছো। কিছু না বুঝেই যা তা বলছ। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে বুঝেছ?”

মুহিত জোরে চেঁচিয়ে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,

—-“আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি। দুই বছর আগেই আমি আসল সত্যিটা জেনে গেছি। তুমি নিজের মুখে সোহেলী আন্টিকে আমাদের অতীত বলছিলে। আমি আড়াল থেকে সব শুনে নিয়েছি আম্মু। প্লিজ আমার থেকে আর কিছু লুকানোর চেষ্টা করো না। আমি আর নিতে পারছি না। অবৈধতার সিলমোহর আমার গাঁয়ে লেগে গেছে। আমি আব্বুর নাজায়েজ সন্তান। আমার মা কে তোমরা মেরে দিয়েছ। মানসিক ভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছ। তোমাদের জন্য আমার মা সুসাইড করতে বাধ্য হয়েছে। তোমরা প্রত্যেকে খুনি। আমার মা কে তোমরা খুন করেছ। আমাকে অনাদ করে দিয়েছ। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে লালন পালন। সমাজরে চোখে নিজেদের সৎ রাখার জন্য। বিশেষ করে মিঃ সানোয়ার আবরারের দোষ ঢাকার জন্য। উনাকে মহান করার জন্য। আমার উপর অনেক দয়া করেছ তোমরা। কিন্তু আর না। আমি চলে যাবো তোমাদের ছেড়ে। অনেক দূরে। এই পাপের শহরে আমি আর থাকব না। আমি মুক্তি চাই। প্লিজ তোমরা আমাকে মুক্তি দাও।”

মুহিত কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। আমার চোখ দিয়ে নোনাজলের আনাগোনা শুরু হয়েছে। মুহিতের ভয়ংকর অতীত আমার মনকে নাঁড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো। শুরু থেকে সবটা শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি পুরোটা জানতে চাই। কি থেকে কি হয়েছে। জানাটা ভীষন জরুরী।

সানোয়ার আঙ্কেল ধপ করে সোফায় বসে পড়ল। মাথায় হাত উনি চোখের জল ছাড়ছে। ফুফুমনি অনবরত শুকনো ঢোক গিলছে। দোলা আপু, সোহেলী আন্টি আর সানায়া আপু ও ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। রেজাউল আংকেলের কপাল বেঁয়ে ঘাম পড়ছে। শীতকালে ও এতো ঘামানোর কারণটা বুঝলাম না। মুহিত মাথা নিচু করে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,

—-“তোমরা এটা কেনো করলে? কেনো আমার মা কে মেরে দিলে? আমার মা বেঁচে থাকলে কি তোমাদের খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? নিজেদের সংসার সাজানোর জন্য আমার মা কে তোমরা মেরে দিলে? মানুষ কি এতোটা ও নিচে নামতে পারে?” তোমরা সবাই হার্টলেস। কারো মধ্যে দয়া মায়া নেই। তোমরা একেকটা খুনি। ঠান্ডা মাথার খুনি। এই সমাজ তোমাদের ছেড়ে দিলে ও উপর ওয়ালা কখনো তোমাদের ছাড়বে না।”

মুহিত এবার অশ্রুসিক্ত চোখে ফুফুমনির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“শুধুমাএ এজন্যই তুমি আমাকে আপন করে নিতে পারো নি তাই না আম্মু? আমি নাজায়েজ বলেই আমাকে নিজের সন্তানদের মতো মানুষ করতে পারো নি। ছোটবেলা থেকেই আমাকে অবহেলা করেছ। মৃন্ময় ভাইয়া আর দোলা আপুকে সবসময় এক্সট্রা এক্সট্রা আদর করতে। এক্সট্রা এক্সট্রা খেয়াল রাখতে। ওদের সবসময় নিজ হাতে খাইয়ে দিতে, অনেক অনেক খেলনা কিনে দিতে, ওরা যা খাইতে চাইত তাই খাওয়াতে, প্রতিদিন ওদের ঘুড়তে নিয়ে যেতে, রাতে ঘুমানোর আগে ওদের দুইজনের কপালে চুমো খেয়ে যেতে, শুধু আমি বাদে, সকালে ঘুম থেকে উঠলে ওদের ব্রাশ করিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিতে, আমি সামনে ঘুরাঘুরি করলে ও আমার দিকে তাকাতে না। পুরো এক গ্লাস দুধ ওদের খাওয়াতে, আমাকে হাফ গ্লাস দুধেই সন্তুষ্ট রাখতে, বিকেলে ওদের সাথে খেলতে আর আমাকে দূরে দূরে রাখতে। আমাকে কেউ মারলে ও কাছে এগিয়ে যেতে না, অথচ মৃন্ময় ভাইয়াকে কেউ ধমক দিয়ে এক্টা কথা বললেই তুমি তেঁড়ে যেতে। মাঝে মাঝে খুব কাঁদতাম। তোমার অবহেলা আমার সহ্য হতো না। কতো রাত অনিদ্রা আর অনাহারে কাটিয়েছি জানি না। এতে অবশ্য তোমার কিছু আসত যেতো না। তুমি দিব্যি হাসি খুশি থাকতে। নিজেকে খুব একা একা মনে হতো। বাবা, মা থেকে ও এতিম মনে হতো। বড় হতে হতে তোমার অবহেলা গুলো অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো। মানিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। ভাবতাম মা তো মা ই হয়। মায়ের কাছে সব সন্তানরাই এক। কোনো তফাৎ নেই। হয়তো আমার ক্ষেএে ভালোবাসাটা প্রকাশ করো না। তবে মনে মনে আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু ঐদিনের পর আমার কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে আম্মু। আমি ছোটবেলার কিছু অমিমাংসিত সত্যি জেনে গেছি। যা আমার অনেক আগেই জানার দরকার ছিলো। খানিকটা দেরি হয়ে গেছে। এরপরে ও আমি চেষ্টা করছি তোমাদের মায়া ত্যাগ করতে। রূপকে নিয়ে কোথাও এক্টা হারিয়ে যেতে। আমরা দুজনই এক। ভাগ্য এক, জীবনের চলার পথ ও এক। ভালো থাকব দুজন। কারণ দুজনই অনাদ। তাই দুজন দুজনের দরদটা খুব ভালো করে বুঝব।”

ফুফুমনি মাথাটা নিচু করে রেখেছে। নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে উনি। হয়তো বিবেকের সাথে বোঝা পড়া করছে। মুহিত মাথা নিচু করে হেচকি তুলে কেঁদে যাচ্ছে। আমার সহ্য হচ্ছে না ওর কান্না। একদম সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে ওকে ঝাপটে ধরে থামিয়ে দিতে। কিন্তু পারছি না। এই মুহূর্তে আমার অহেতুক ইচ্ছেটা শোভা পায় না।

সানোয়ার আংকেল বসা থেকে উঠে মুহিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“তুমি চলে যাও মুহিত। আমি তোমাকে আটকাবো না। নিজের মতো করে বুক ফুলিয়ে বাঁচো। তোমার আম্মুকে ও আমি কিছু দিতে পারি নি। তোমাকে ও দিতে পারছি না। পাপ করেছি আমি। জঘন্য পাপ করেছি। তোমার আম্মুকে ছেড়ে আমি অন্যায় করেছি। তোমার আম্মুকে আমি ঠকিয়েছি মুহিত। আমার পাপের জন্যই তোমার আম্মু পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দেখো না আমাকে একা করে তোমার আম্মু কতো নিশ্চিন্ত আছে। তাঁরা দের দেশে ভালো আছে সে। মাঝে মাঝে রাতের নিস্তদ্ধতায় আমি ওকে খুঁজি। নীরবতায় ওর অস্তিত্বকে ছুঁতে যাই। কিন্তু ছুঁতে আর পারি না। ধরতে গেলেই পালিয়ে যায়। কতো শতো বার চিল্লিয়ে বলি, সুপ্রিয়া প্লিজ তুমি যেয়ো না। আজ ও আমি তোমাকেই ভালোবাসি। ঠিক আগের মতো। শুনে না সে আমার কথা। বার বার হারিয়ে যায়। তুমি ও চলে যাও মুহিত। আমার ভালোবাসা আর দোয়া সবসময় তোমার পাশে থাকবে। মৃন্ময়ের মা কখনো তোমাকে আপন করতে পারে নি। ওর মতো জঘন্য আর দজ্জাল মহিলা এই পৃথিবীতে দুটো নেই। এখানে থাকলে তুমি আর রূপ কখনোই সুখি হবে না। কারন, ঐ মহিলা শুধরাবার নয়। তাই বলছি তোমরা চলে যাও। নিজেদের মতো করে বাঁচো।”

সানোয়ার আঙ্কেলের চোখ থেকে টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ছে। মুহিত এক দৃষ্টিতে সানোয়ার আংকেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুফুমনি ফুসফুস করতে করতে সানোয়ার আঙ্কেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কি বললে সানোয়ার? তুমি এখনো ঐ নষ্টা মেয়েটাকেই ভালোবাসো? যে মেয়ে অন্যের সংসার ভেঙ্গে নিজের দেহ বেঁচে গর্ভে সন্তান নেয় সে কখনো ভালো মহিলা হতে পারে না। এইসব মেয়েদের পতিতা পল্লীতেই মানায়। ঐ মেয়ের পাপের ফল ই হলো তোমার ছেলে মুহিত। আমি নেহাত ভালো বলে ঐ পতীতা মেয়ের নাজায়েজ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে পরিপূর্ণ মানুষ করে তুলেছি। অন্য কেউ হলে তোমার ছেলেকে মেরে দিতো। তাও আবার গলা টিপে।”

সানোয়ার আঙ্কেল চোখ মুখ লাল করে ফুফুমনির গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে জোরে চিল্লিয়ে বলল,,,,,,,

—-“জাস্ট শাট আপ মায়া। আমার সুপ্রিয়া সম্পর্কে আর এক্টা বাজে কথা বলবে তো আমি তোমাকে জানে মেরে দিবো। আমার সুপ্রিয়া পবিএ, নিষ্পাপ। সুপ্রিয়া আমার লিগালি ওয়াইফ। আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। তুমি সাপ দিয়ে মাছ ঢাকতে এসো না প্লিজ। তোমাকে নিয়ে আমি কখনোই হ্যাপি ছিলাম না। এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। সুপ্রিয়া খুবই গরীর ঘরের মেয়ে ছিলো। ওর বাবা, মা এক্টা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। অনাদ, আশ্রমে থেকে বড় হয়েছিলো সে। তাই আমার ফ্যামিলি সুপ্রিয়াকে মানতে চায় নি। জোর করে তোমার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের সাত বছর পরে ও আমি সুপ্রিয়াকে ভুলতে পারছিলাম না। তাই আমি সবার অগোচড়ে সুপ্রিয়ার সাথে কোর্ট ম্যারেজ করি। সুপ্রিয়া আমায় বিয়ে করতে একদম নারাজ ছিলো। সে জেনে শুনে কারো সংসার ভাঙ্গতে চাইছিলো না। আমি জোর করে উঠিয়ে নিয়ে সুপ্রিয়াকে বিয়ে করি। মৃন্ময় আর দোলার জন্মের পর সুপ্রিয়া অন্তর্সওা হয়। আমি লুকিয়ে সুপ্রিয়ার সাথে দেখা করতাম এমনকি সুপ্রিয়ার ভরণ পোষণ চালাতাম। তোমরা কেউ কিছু জানতে পারো নি। এভাবেই কেটে যায় প্রায় দুই বছর। মুহিত তখন এক বছরের, যখন তোমরা সুপ্রিয়া সম্পর্কে জানো। আর তখন থেকেই তুমি সুপ্রিয়ার পিছনে লেগেছ। নানা ভাবে মানসিক টর্চার করে তুমি আমার সুপ্রিয়াকে সুসাইড করাতে বাধ্য করেছ। তোমার জন্য আমার সুপ্রিয়া পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমার ভালোবাসাকে আমি হারিয়েছি। একজন পুরুষ চাইলেই দুটো বিয়ে করতেই পারে। যদি উনার দুই দিক চালানোর সামর্থ্য থাকে তো। আল্লাহ্ র রহমতে আমার সামর্থ্য ছিলো। দ্বিতীয় বিয়ের পরে ও আমি তোমাকে রাজরাণী করে রেখেছিলাম। কোনো দিক কমতি রাখি নি। তবে ভালোবাসার কমতি ছিলো। কারণ তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য ছিলে না। ভালোবেসে আমি সুপ্রিয়াকে বিয়ে করেছি তোমাকে নয়। হিংসের বশে তুমি আমার সুপ্রিয়াকে মেরেছ। জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে আমার। আমার ছেলেটা ও সুখি না তোমার সাথে। সুপ্রিয়ার শেষ চিহ্ন টাকে ও আমি ধরে রাখতে পারছি নি। কেবলমাএ তোমার জন্য। আমি আমার ছেলেকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। ওকে নতুন ভাবে বাঁচতে সাহায্য করব। তোমার মতো বিষাক্ত কেউটের সাথে ওকে এক বাড়িতে থাকতে দিবো না। জীবন থেকে আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। সুপ্রিয়া যাওয়ার সময় আমার সব সুখ কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি এখন একাই ভালো। সংসারের প্রতি আমার কোনো টান নেই। আমি নিষ্প্রাণ হয়েই থাকতে চাই। যেমনটা আমার সুপ্রিয়া আমাকে রেখে গেছে।”

মুহিত বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে সানোয়ার আঙ্কেলকে ঝাপটে ধরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,

—-“আই লাভ ইউ আব্বু। লাভ ইউ সো মাচ। আমি এতো দিন ভাবতাম আমি হয়তো তোমার নাজায়েজ সন্তান। নিজেকে খুব পাপী মনে হতো, ছোট মনে হতো, বুকে এক্টা চিনচিনে ব্যাথা হতো, খুব কষ্ট হতো। টানা দুই বছরের প্রতিটা রাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি। রূপ আসার পর খানিকটা হলে ও ঘুমাতে পেরেছি। কিন্তু এখন সত্যিটা জানার পর খু্ব শান্তি লাগছে। বুক থেকে এক্টা ভারী বোঝা নেমে গেলো। রাতে এখন ঠিকভাবে ঘুমাতে পারব। এটা জেনে ও খুব ভালো লাগছে যে তুমি আমার মা কে আজ ও ভালোবাসো। আমার মা মরে ও অমর হয়ে আছে। তোমার ভালোবাসাটা খুব পবিএ আব্বু। তাই তো এতো বছরে ও তুমি আমার মা কে মনে রেখেছ। হয়তো বাকিটা জীবন ও আমার মা কে মনে রেখে কাটিয়ে দিবে। তুমি আমার বেস্ট আব্বু। তোমাকে খুব সম্মান করি। মন থেকে ভালোবাসি। আমি হয়তো মা এর আদর পাই নি তবে বাবার আদর অনেক পেয়েছি। তোমার জন্যই আজ আমি সাকসেসফুল। তোমার একক চেষ্টায় আজ আমি এতটুকু আসতে পেরেছি।”

মুহিত এবার সানোয়ার আঙ্কেলকে ছেড়ে জানালার সামনে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আম্মুম্মুম্মু….. তুমি যেখানেই থাকো না কেনো খুব ভালো থেকো। তোমার বর তোমার সন্তান আজ ও তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে শ্রদ্ধা করে, তোমাকে ভক্তি করে, তোমাকে রোজ মনে নিয়ে ঘুমাতে যায়। তুমি আমাদের চোখে মহান আম্মু। আমরা আজও তোমায় ভুলি নি। না কখনো ভুলব। তুমি স্বার্থক আম্মু। আমার আব্বুর মতো একজন সরল মনের মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়ে। মাঝে মাঝে তোমাকে খুব দেখতে মন চায় আম্মু। রাতের তাঁরা হয়ে তুমি একদিন আমাদের বাড়ির ছাঁদে উঁকি দিয়ো। আমি তোমাকে এক নজর দেখে নিবো। তুমি ও আমাকে এক্টু করে দেখে নিও। তোমাকে দেখার ইচ্ছে আমার প্রবল। তোমার আদর, ভালোবাসা হয়তো পাই নি। তবে তোলা রইল। পরকালে সব আদর, ভালোবাসা পুষিয়ে নিবো। ভালোবাসি তোমাকে আম্মু। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

সানোয়ার আঙ্কেল কাঁদতে কাঁদতে মুহিতকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—-“লাভ ইউ বেটা। লাভ ইউ সো মাচ। তুমি অন্তত আমাকে ভুল বুঝো নি। তোমার মা কে আমি খুব ভালোবাসি বেটা। কখনো ভুলতে পারব না ওকে। আমার জীবনের প্রথম চাওয়া সে। কি করে ভুলতে পারি বলো? আমার মনের সবটা জুড়ে এখনো তোমার মা ই বাস করে। সুপ্রিয়া আমার দেখা পৃথিবীর সবচে সুদর্শন নারী। যাকে আমি প্রথম দেখাতেই প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি। প্রথম বারই সে আমার মনে গেঁথে গেছে। এরপর আর কাউকে মন দিতে পারি নি। কখনো চেষ্টা ও করি নি। যতদিন বেঁচে থাকব কেবল সুপ্রিয়াকেই ভালোবেসে যাবো। তুমি একদম তোমার মা এর মতো হয়েছ মুহিত। সেই গাঁয়ের রং, সেই চেহারার আর্ট। তোমার মা যাওয়ার সময় তোমাকে আমার কাছে রেখে গেছে। যেনো আমি তোমাকে দেখেই জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেই। তোমার মা এর প্রতি আমি খুব ঋণী বেটা। যাওয়ার সময় অন্তত বেঁচে থাকার এক্টা কারণ ছেড়ে গেছে। তুমি দূরে থাকলে ও আমার দোয়া সবসময় তোমার পাশে থাকবে মুহিত। প্রতিদিন তোমাকে আর রূপকে গিয়ে দেখে আসব। সব বিপদে আপদে আমাকে পাশে পাবে।”

ফুফুমনি ন্যাকা কান্না করে সানোয়ার আঙ্কেলকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“তাহলে ঐ মহিলাই তোমার আপন? তুমি এখনো ঐ মহিলাকেই ভালোবাসো? তাহলে আমি কি সানোয়ার? আমাকে কি হিসেবে তুমি তোমার জীবনে রেখেছ? আমার এক্সেক্ট পরিচয়টা কি সানোয়ার। প্লিজ স্পিক আপ।”

সানোয়ার আঙ্কেল মুহিতকে ছেড়ে ফুফুমনির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি আমার করা জীবনের সবচে বড় ভুল। যাকে আমি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। জীবনের বাকিটা সময় ও এভাবে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। ক্লান্ত হয়ে উঠেছি আমি বিশ্বাস করো। তোমাকে জাস্ট নিতে পারি না। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে আমার। মৃন্ময় আর দোলার দিকে তাকিয়ে তোমাকে সহ্য করতে হচ্ছে।”

ফুফুমনি কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে উনার রুমে চলে গেলো। দোলা আপু চোখের জল ছেড়ে সানোয়ার আঙ্কেলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“আই হেইট ইউ পাপা। হেইউ ইউ সো মাচ।”

সানোয়ার আঙ্কেল তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি ও তোমার মায়ের মতোই হয়েছ। কোনো অংশে কম না। তোমার ঘৃনা দিয়ে আমার কিছু আসবে যাবে না।”

দোলা আপু কাঁদতে কাঁদতে উনার রুমে চলে গেলো। সানায়া আপু, রোজাউল আঙ্কেল আর সোহেলী আন্টি ও উনাদের রুমে চলে গেলো। আচমকাই মৃন্ময় ভাইয়া চোখে এক গাঁধা জল নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সানোয়ার আঙ্কেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—-“আই রেস্পেক্ট ইউ পাপা। তোমার সাহসিকতা সবসময় আমায় মুগ্ধ করে। সত্যি কথাটা তুমি অনায়াসে বলে দিতে পারো। সবার মাঝে এই গুনটা থাকে না। তুমি আমার দেখা পৃথিবীর বেস্ট পাপা। আমি ও তোমার মতোই সবসময় মুহিতের পাশে থাকব। তোমার মতো আমি ও সুপ্রিয়া আন্টিকে খুব ভালোবাসি।”

সানোয়ার আঙ্কেল এক গাল হেসে মুহিত আর মৃন্ময় ভাইয়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে দুজনের মাথায় চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমি আমার দুই ছেলেকেই খুব ভালোবাসি। ওদের ছাড়া আমি অচল।”

সানোয়ার আঙ্কেল এবার মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“মুহিত….কাল দোলাকে দেখতে আসবে। লিয়েন ওর পরিবার নিয়ে কাল আমাদের বাড়ি আসবে। মাসের কয়েকটা দিন তুমি এই বাড়িতেই থেকে যেয়ো। আমাকে এখন অফিসে যেতে হবে। আসছি আমি।”

সানোয়ার আঙ্কেল মুহিত আর মৃন্ময় ভাইয়াকে ছেড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো। আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সানোয়ার আঙ্কেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমার লক্ষী মেয়ে। তোর উপর খুব বড় দায়িত্ব রইল। আমার ছেলেটাকে দেখে শুনে রাখবি। ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবি আমার ছেলেটাকে। কোনো অযত্ন যেনো না হয়।”

আমি মুচকি হেসে মাথা নাঁড়ালাম। যার মানে হ্যাঁ। সানোয়ার আঙ্কেল মৃদ্যু হেসে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। মৃন্ময় ভাইয়া মুহিতের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে এক গাল হেসে বলল,,,,,,,,

—-“ইসসস মেয়েদের মতো কিভাবে কেঁদেছিস রে তুই! তোকে একদম মেয়ে মেয়ে লাগছে।”

মুহিত রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে মৃন্ময় ভাইয়ার দিকে। আমার খুব হাসি পাচ্ছে মুহিতের রাগী লুক দেখে। মৃন্ময় ভাইয়া মুহিতের মাথায় গাড্ডা মেরে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা জড়ানো কন্ঠে বলল,,,,,,,,

—-“রূপ….তোর ফ্রেন্ড মারু আমার কল পিক করছে না। কাল রাত থেকে কল করে যাচ্ছি।”

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,,,,,,

—-“তো আমি কি করব?”

—-“ওর বাড়ির এড্রেসটা দে।”

—-“এ্যা!”

—-“এ্যা না হ্যা। জলদি দে। আমার তাড়া আছে।”

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here