#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(১৩)
**********************************
শুরুতে যেমন আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করছিল তাবাসসুমের ভেতরে , জারা’র ঘটনার পর থেকে সেই আনন্দ আর উত্তেজনা যেন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে । সব কাজই করছেন তিনি , জা এর সাথে রান্না করছেন , সুযোগ পেলে শপিং এ যাচ্ছেন , দেবরের পরিচিত মহলের তিনটা আড্ডা থেকে ঘুরে এলেন । এর মধ্যে গ্রান্ড ক্যানিয়ন ঘুরে এসেছেন । এতোদিন ছবিতে আর ভিডিওতে দেখা জায়গাটা চোখের সামনে দেখে কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল । সবই করছিলেন কিন্তু কেমন যেন দায়সারাভাবে । তিনি মনে মনে শুধু প্রার্থনা করছেন, সময়টুকু ভালোভাবে কেটে যাক তারপর যা করার দেশে ফিরে তিনি শক্ত হাতে করবেন ।
ছেলের সাথে অনেক দিন পর বাইরে এসেছেন তাবাসসুম । আর কয় দিন পরেই শাফিনকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাঁর । কান্নাগুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে আছে , কথা বলতে দিচ্ছে না তাঁকে । শাফিন মা’র হাত ধরে হাঁটছে আর আশপাশে জিনিসগুলোর বর্ণনা দিচ্ছে কোনটা কী । তাবাসসুম কথাগুলো শুনছেন আবার ঠিক শুনছেনও না । তাঁর এই আনমনা ভাব লক্ষ্য করে শাফিন বললো –
মা কোনো প্রবলেম ?
না তো ।
খারাপ লাগছে , ফিরে যাবো ?
না না ফিরে যাবো কেন ? আবার কবে তোমার সাথে এভাবে বেড়াতে পারবো তার কোনো ঠিক আছে ?
কবে আবার ? আমি তো সামনের বছরেই আসছি দেশে ।
তখন যদি আমি না থাকি ?
না থাকো ! আমি দেশে ফিরবো আর তখন তুমি কোথায় যাবে !
ধরো থাকলাম না, মরে গেলাম ।
মা ! এটা কেমন কথা, তুমি কেন মরবে ?
মরার তো ঠিক নেই, তাই না ?
মা আর কখনো এইসব কথা বলবে না প্লিজ । এসব শুনতে ভালো লাগে না ।
ঠিক আছে বলবো না । আচ্ছা জারাকে এখানে নিয়ে আসা যায় না ?
কেন যাবে না ? আমি তো ওকে মেইল করেছি কবেই । শুধু আমার ভার্সিটির না, আরো তিনটা ভার্সিটির ইনফর্মেশন পাঠিয়েছি ওকে । ওর সাথে তো কথাও বললাম । আমার তো মনে হলো জারা’র কোনো ইচ্ছে নেই বাইরে আসার । তুমি তাহলে শুধু শুধু জোর করছো কেন মা ? না আসতে চাইলে যেখানে আছে সেখানেই থাকুক । খারাপ কী ?
না না ও ওখানে থাকতে পারবে না ।
কেন মা, এভাবে কেন বলছো ? জারা চলে আসলে তো তোমরাও একদম একা হয়ে যাবে । তাছাড়া ওর যখন আসার মন নেই তখন কী দরকার ?
না না দরকার আছে ।
কী দরকার সেটা বলো ।
সেটা তুমি বুঝবে না ।
আমি বুঝবো না ? ঠিক আছে তুমি বুঝিয়ে বলো ।
তাবাসসুম আর কোনো কথা না বলে হাঁটতে লাগলেন ।
বললে না তো মা কী কথা ? আচ্ছা একটা ছেলের সাথে যে ও ইনভলভ হয়েছিলো সেই ঝামেলাটা তো মিটেছে, তাই না মা ?
তাবাসসুম হ্যাঁ অথবা না কোনটা বলবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না । পুরোপুরি অস্বীকার না করে বললেন –
জারা তো আমার কাছে বলেছিল আর কোনো যোগাযোগ নেই । দেখি এবার ঢাকায় যেয়ে ভালোভাবে খোঁজ নেবো । সেজন্যই তোমাকে বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে তোমার এখানে নিয়ে এসো । আবার কখন কী বিপদ ঘটিয়ে বসে তার কোনো ঠিক নেই ।
এভাবে বলছো কেন মা ? ও তো এখনো ভালোমন্দ ঠিক মতো বুঝতেই শিখলো না ।
হ্যাঁ সে কারণেই তো বিপদ ।
টেনশন কোরো না মা , সব ঠিক হয়ে যাবে ।
হুম চলো ।
.
.
আওলাদ হোসেন ভাড়াটে তুলে দিয়ে রুমটাতে দোকান করার কাজ শুরু করেছেন । রাস্তার দিকের দেয়াল ভেঙে সাটার লাগানো হয়েছে । খরচ একটু বেশি লাগলেও টাইলস করিয়ে ফেলছেন পুরোটায় । এতে বারবার রঙ করানোর ঝামেলাও মিটবে আর দেখতেও সুন্দর হবে । সেদিনের মতো কাজ শেষে মিস্ত্রীদের হিসেব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি । তাঁর মন মেজাজ দু’টোই আজ খারাপ হয়ে আছে । তিনি আজম স্যারকে ফোন দিয়েছিলেন রফিক কেমন কাজ করছে জানার জন্য । আজম স্যার খুব বেশি ভদ্রলোক বলেই তাকে ভালোভাবে কথাগুলো বলেছেন । অন্য কেউ হলে কোনো চিন্তা ভাবনা না করে অপমান করে ছাড়তো ।
মিস্ত্রী বিদায় নেয়ার আগেই রফিক চলে আসলো । সে দোকানটা ভালোভাবে দেখে বললো –
আব্বা আপনি কেন যে এটার পেছনে এতো টাকা ঢালছেন বুঝতে পারছি না । যতো সব ফালতু কাজ । আর এই তোমার নাম কী মিয়া ? দশদিন ধরে কী টুকটুক করে যাচ্ছো ? এতোটুকু একটা দোকান করতে এতোদিন সময় লাগে ? খালি টাকা খাওয়ার ধান্দা ।
মিস্ত্রীদের একজন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো –
ভাইজান যেই কাজটুকু আছে আপনে কাল কইরা ফালাইয়েন । আমরা করলে তো তিনদিন লাগামু । আমি তিন দিনের খোরাকি দিমুনে । আমরা তো বইয়া থাইক্যা পয়সা নিয়া যাই, নিজে কাম করলে বুঝবেন কাম বেশি না কম । তখন কথা কওনের আগে একটু হুঁশ কইরা কইবেন ।
রফিক রাগে গজগজ করতে করতে বললো –
আব্বা আপনি এইসব বেয়াদব কোত্থেকে ধরে এনেছেন ?
আওলাদ হোসেন ছেলের সাথে কথা না বলে মিস্ত্রী বিদায় করলেন ।
বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলেন চা এর জন্য । বাকিরাও এসে বসেছে চারদিকে । মিনা সবার জন্য চা আর আলিফের জন্য দুধ নিয়ে এসে বসলো । রফিক ফ্রেশ হয়ে এসে বসার পর আওলাদ হোসেন কথা শুরু করলেন –
তোর অফিসের কী অবস্থা ? কেমন লাগছে বললি না তো ।
অফিস তো ভালোই । দুপুরের খাবারটা খুব ভালো দেয় ওখানে ।
খাবার ছাড়া অন্য সব ঠিক আছে ? ফাহিম ছেলেটা কেমন ?
ওহ, আব্বা ওর কথা আর জিজ্ঞেস কোরেন না । এই লোকটাকে সবাই সহ্য করে কী করে আমি বুঝি না । তার যে এতো সবজান্তা ভাব, বাপ রে বাপ ।
কেন কী করেছে সে ? তোকে কাজ শেখাচ্ছে না ?
কাজ শেখাবে কী ? এটা কী শেখার মতো কোনো কাজ ! অফিসে অফিসে যাও, গিয়ে হুজুর হুজুর করে গলা শুকিয়ে ফেলো । এগুলো শেখার কী আছে ? আমি বুঝলাম না আব্বা আপনি আমার জন্য সব ছেড়ে এটা কী কাজ ঠিক করলেন ? এইসব জ্বি হুজুর কাজ আমাকে দিয়ে হবে না ।
তাহলে কী করতে চাস ? তুই কী সারাজীবন বসে বসে খাবি ? এই লেখাপড়ায় তুই কী ম্যানেজারের চাকরি খুজছিস না-কি এমডির ? আমার তো এতো পয়সাও নেই বসে খাওয়ার মতো । এতো বলে কয়ে চাকরিটার ব্যবস্থা করলাম আর সেখানে যেয়েও তুই পাকামি শুরু করে দিয়েছিস ?
আমি আবার কী পাকামি করলাম ?
তুই ফাহিমকে বলিসনি যে এই রকম দশটা চাকরি তুই পকেটে নিয়ে ঘুরিস । তাই না-কি ? তাহলে দে না আমাকে আর তোর মা’কে দু’টো চাকরি । আমাদের সংসারটা একটু ভদ্রলোকের মতো চলুক ।
এই কথা আপনাকে কে বলেছে ?
বলেছিস কি-না বল ? আওলাদ হোসেন ধমকে উঠলেন ।
আব্বা আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম, এইসব চাকরি আমাকে দিয়ে হবে না । মানুষ তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য কতো কিছু করে আর আপনি আমার জন্য কী করেছেন এই পর্যন্ত ?
তোর জন্য আবার কী করবো ? এতো বড় করিনি তোকে, লেখাপড়া শেখাইনি ? আর কী চাস তুই ?
ঐটুকু তো সব বাপ-মা ই করে । আপনি যে টাকাগুলো জমিয়ে রেখেছেন, ওটা দিলেও তো আমি একটা ব্যবসা শুরু করতে পারতাম । নিজের ছেলের মানসম্মানের, ভালোমন্দের কোনো চিন্তা আছে আপনার ?
তোর মানসম্মান ! কী বলতে চাস তুই ? সারাদিন শুয়ে বসে অন্ন ধ্বংস করে আর কতোগুলো লাফাঙ্গার সাথে মিশে দিন পার করিস আর তুই আমাকে মানসম্মান শেখাতে আসিস ? চিৎকার করে কথাগুলো বলে উঠলেন আওলাদ হোসেন ।
সুফিয়া বললেন –
থাক এখন আর চেঁচামেচি কোরো না । ছেলেটা বাইরে থেকে এসেছে সারাদিন পর ।
তুমি চুপ করো । তুমি ছেলের সাপোর্টে একটা কথাও বলবে না । সারাদিন বাইরে থেকে এসে কী এমন উদ্ধার করেছে সে ? অফিস তো একদিনও ঠিক মতো করেনি । আজম স্যার বলেছেন তো আমাকে । কোনোমতে আধাখেঁচড়া করে দুপুর পার করে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে । শোন তোকে ভালো করে বলে দিচ্ছি শেষবারের মতো, যদি চাকরি ঠিকমতো করতে পারিস তো এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে নতুবা তুই নিজের ব্যবস্থা করে নে । তোকে বসিয়ে বসিয়ে আর খাওয়াতে পারবো না আমি । আর তুই কোন টাকার কথা বললি ? এতো কষ্ট করে যা জমিয়েছিলাম, সেগুলো সব তোর হাতে তুলে দেবো ? তুলে দিতাম যদি বুঝতাম তুই আসলেই যোগ্য ছেলে হয়েছিস । তোকে যা দেয়ার, যতটুকু দেয়ার দিয়ে ফেলেছি আমি । এবার বাকিটা নিজের যোগ্যতা থাকলে করে নে যা ।
আওলাদ হোসেন সচরাচর এতোটা রাগেন না । তাঁর এমন রাগী চেহারা দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল । চা শেষ করে তিনি উঠে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে ।
.
.
অনেক কাজ জমা হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে । তাবাসসুম ফেরার পর থেকেই কাজগুলো গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন । গত এক মাস তাঁরা ছিলেন না । ড্রাইভার, শিল্পী, ছুটা বুয়া এদের সবাইকেই ছুটি দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি । ইনডোর প্ল্যান্টগুলোকে পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটার কাছে রেখে গিয়েছিলেন । শিল্পীকে দিয়ে সেগুলো আনিয়ে সবগুলো জায়গা মতো রাখলেন । দরজা জানালা সব বন্ধ থাকলেও ভালোই ধুলো জমেছে সবকিছুর ওপরে । শিল্পী আর তিনি মিলে সকাল থেকে অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে ধুলো ঝাড়ামোছার কাজটাও করে যাচ্ছেন । সবই হচ্ছে কিন্তু তাবাসসুমের কোনো কাজেই ঠিক মন বসছে না । জারা’র ওপর নজর রাখছেন সারাক্ষণ । জারা কয়েকবারই বাইরে যেতে চেয়েছে কিন্তু তিনি প্রতিবারই আটকে দিয়েছেন মেয়ের বাইরে যাওয়া । এ কারণে জারা তাঁর সাথে ঠিক মতো কথাও বলছে না । না বলুক তাতে কোনো সমস্যা নেই । মেয়ের এই রাগ আর মন খারাপ দেখার সময় নেই তাঁর । যতটুকু ছাড় দেয়ার তা তিনি এর মধ্যেই মেয়েকে দিয়ে দিয়েছেন , এবার রাশ টেনে ধরার পালা । তিনি ঠিক করেছিলেন আজকে সরাসরি কথা বলে বিষয়টার একটা বিহিত করে ছাড়বেন । রোজার আসার কথা ছিল । রোজাকে সামনে রেখে জারা’র সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু বন্ধুদের সাথে দু’দিনের ট্যুরে ওরা সিলেট গেল হঠাৎ । অবশ্য যাওয়ার আগে মেয়ে জামাই এসে দেখা করে গেছে তাঁদের সাথে ।
শিল্পীকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তাবাসসুম এসে নক করলেন জারা’র রুমে । এতো করে নিষেধ করেছেন সকালবেলায় রুমের দরজা বন্ধ না করতে কিন্তু মেয়ে কিছুতেই কথা শুনছে না ইদানীং । দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতর কী করে কে জানে ?
জারা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো –
কিছু বলবে ?
সরো, রুমে ঢুকতে দাও ।
আমি এখন ঘুমাচ্ছিলাম তো মা ।
তোমার সাথে কথা বলবো আমি । এখন ঘুমের সময় না ।
জারা’র মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো । মা’কে ভয় পায় বলে আর কোনো কথা না বলে সরে দাঁড়িয়ে তাবাসসুমকে রুমে ঢুকতে দিলো জারা ।
রুমে ঢুকে তাবাসসুম এসে রকিং চেয়ারটায় বসে জারাকে বললেন –
দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে এসো ।
জারা বললো –
দরজা চাপানোর কী আছে ? বাসায় তো শুধু আমি আর তুমি ।
যেটা বলছি সেটা করো । বেয়াদবি করা তোমার স্বভাব হয়ে যাচ্ছে দিন দিন । তোমাকে বলেছি না যে সকালে রুমের দরজা বন্ধ রাখবে না । তারপরেও দরজা বন্ধ করে রেখেছো কেন ?
জারা কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো ।
কী হলো কথা শুনছো না কেন ?
মা তুমি আমাকে বাইরে যেতে দিচ্ছো না কেন ?
বাইরে তোমার এখন কোনো কাজ নেই । ভার্সিটি বন্ধ । বাইরে কোথায় যাবে তুমি ?
আগে তো তুমি এমন ছিলে না মা । আমি তো আমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতেও যেতে পারছি না । এমন করছো কেন তুমি ?
তুমি একা একা কোথাও যেতে পারবে না ।
মানে কী মা ! আমি একা কোথাও যেতে পারবো না ! এতোদিন কী আমি একা বাইরে যাইনি , ক্লাসে যাইনি ?
তোমাকে একা ছাড়াটাই আমার ভুল হয়েছে । তোমাকে বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছে আমার । আমাকে বোকা বানিয়ে তুমি ঐ ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখেছো ।
মা আদি কোনো খারাপ ছেলে না ।
সেটা আমি বুঝবো ভালো না খারাপ । তুমি ঐ ছেলেকে ফোন করে আসতে বলো, আমি কথা বলবো ওর সাথে ।
জারা হঠাৎ নড়েচড়ে উঠলো তাবাসসুমের কথায় । বললো –
তুমি কী কথা বলবে ওর সাথে ?
সেটা তো আমি তোমাকে বলবো না । আমিও দেখতে চাই কোনো এমন সেই ছেলে যার কারণে আমাদের এতো আদরের জারা আজ এতো সুন্দর করে আমাদের সাথে অবিরাম মিথ্যে বলে যাচ্ছে ।
আমি মিথ্যে বলছি না মা । আমি শুধু বিষয়টা হাইড করেছি তোমাদের কাছ থেকে ।
হাইড করারও যে এক রকমের মিথ্যে বলা সেটা তুমি জানো না জারা ? হ্যাঁ আমি সেটাই দেখতে চাইছি কার জন্য তুমি এসব করছো । কী এমন স্পেশাল বিষয় আছে ঐ ছেলের মধ্যে । তুমি ওকে ফোন করো । আমি কথা বলবো ।
মা প্লিজ ।
কী প্লিজ ? আমি তো কথা বলতে চাইছি । তোমার পছন্দ, তোমার রুচি কোন লেভেলের আমি দেখতে চাই । এতোদিন তো বলেছো আমি না জেনে অকারণে খারাপ কথা বলছি ছেলেটার সম্পর্কে, তাই এবার আমি ওকে সরাসরি দেখতে চাই । ফোন দাও ।
জারারকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে তাবাসসুম বললেন –
কী হলো, ফোন করো ।
এখন, তোমার সামনে ?
মানে কী, আমার সামনে ফোন করতে সমস্যা কোথায় ?
সমস্যা আছে মা । তোমার সামনে কেন আমি ফোন করবো ? সবার একটা প্রাইভেসি থাকে তো ।
আমার সামনে তোমার প্রাইভেসি !
আমি বলছি তো ফোন করবো । ও তো এখন ব্যস্ত থাকতেও পারে । আমি পরে ফোন করে বলে রাখবো ।
কিসের ব্যস্ততা ? কী করে সে ?
মা ওদের অনেক বড় বিজনেস আছে কিন্তু ও নিজে থেকে কিছু করতে চায় তাই ইদানীং খুব ব্যস্ত আছে ।
তোমার কাছে পুরো আপডেট আছে তাই না ? সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছো ঐ ছেলের সাথে । আর অবলীলায় ওর কথা বলে যেতে একটুও লজ্জা করছে না তোমার ?
মা তুমি জানতে চাইলে দেখেই তো আমি বলেছি । আমার লজ্জা লাগবে কেন ? আমি তো কোনো খারাপ কাজ করিনি মা ৷ তোমাকে আমি এখন বুঝতে পারি না মা । তুমি আগে এমন ছিলে না ।
আমি আগের জায়গাতেই আছি । আমার মেয়েটা হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে । এতোটাই বড় যে আমাদের লুকিয়ে কাজ করতে শিখে গেছে । নিজের জীবনের ডিসিশন নিতে শিখে গেছে, যদিও সেটার ভুল-ঠিক বুঝার মতো বোধই তার তৈরি হয়নি এখনো । ঠিক আছে আমি এই বিষয়ে এখন আর কিছু বলবো না তোমাকে । ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলে তারপর তোমাকে নিয়ে বসবো আমি । আমার মুখের কথায় তো তোমার ভুল ভাঙবে না তাই এটাই ভালো ।
মা আমি কী আজকে একবার বাইরে যেতে পারি ?
না পারো না ।
এমন করছো কেন তুমি আমার সাথে ? মা তুমি ভুলে যাচ্ছো যে আমি ভার্সিটিতে পড়ি । এভাবে তুমি আমাকে আটকে রাখতে পারো না বাসার ভেতরে ।
আমি কী কী পারি সেটা তুমি ধারণাও করতে পারবে না জারা ।
আমি আজকে বাইরে যাবো মা । আমার কাজ আছে ।
কোথায় যাবে বলো ? আমি কাজ শেষ করে নেই তারপর আমিও যাবো তোমার সাথে ।
তুমি কী আমাকে পাহারা দিচ্ছো মা !
পাহারা মনে করলে পাহারা । তুমি একা কোথাও যেতে পারবে না । তোমার তো ক্লাস শুরু হয়নি এখনো তো বাইরে তোমার এমন জরুরি কোনো কাজও নেই । কোথায় যাবে বলো আর কখন যাবে ?
মা প্লিজ এমন কোরো না আমার সাথে । আমার বন্ধুরা তোমাকে আমার সাথে দেখলে হাসাহাসি করবে ।
জারা তুমি বোধহয় আমার কথা বুঝতে পারছো না । তুমি একা বাইরে যেতে পারবে না । তুমি যেখানে যাবে, আমার সাথে যাবে ।
কথাগুলো বলে তাবাসসুম বাকি কাজ সামলাতে চলে গেলেন ।
রাগে জারা’র ইচ্ছে করছে হাতের কাছের জিনিসপত্রগুলোকে ভেঙেচুরে ফেলতে । মা কী শুরু করলো তার সাথে ? দেশে ফেরার পর থেকে সে এই পর্যন্ত আদির সাথে দেখা করতে পারেনি । আদি তো পাগলামি শুরু করেছেই, তার নিজেরও পাগল পাগল লাগছে । মা জানে না এরকম খারাপ ব্যবহার করে মা খুব খারাপ করছে তার সাথে । মা তাকে ভয় দেখিয়ে গেল কিন্তু মা এটা জানে না, জারা যদি চায় তাহলে কী কী করতে পারে । রাগটাকে কোনো মতে কন্ট্রোলে এনে আদিকে ফোন করলো জারা ।
আদি ফোন রিসিভ করেই বললো –
হ্যালো জারা কখন আসছো ?
মা বের হতে দিচ্ছে না আদি ।
মানে কী ? এটা কিন্তু খুব বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে । আমি কিছু জানি না, তুমি আজকে আসবা ।
আমি এখনই মা’র সাথে কথা বলেছিলাম । মা বলেছে বাইরে গেলে মা’কে সাথে নিয়ে যেতে হবে ।
এটা কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে জারা । এতোটা আমি সহ্য করতে পারছি না । এক মাস বাইরে ছিলে তারপর আসার পর থেকে শুরু করেছো নতুন যন্ত্রণা । মানে কী এসবের ?
আমিও তোমার সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে আছি কিন্তু মাকে কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারছি না । আচ্ছা শোনো মা তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, কথা বলবে তোমার সাথে ।
আমার সাথে কী কথা বলবে ? তোমার মা তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না । আর এমন হঠাৎ করে দেখা করতে চাওয়ার মানে কী ?
দেখা করো, সমস্যা কী ? আমি চাই তুমি মা’র সাথে দেখা করো । তোমার সাথে দেখা করে মা’র ভুল ভাঙুক । মা’র ধারণা তুমি খুবই যা-তা ধরণের একটা ছেলে । এটা নিয়ে কথা শুনতে আমার আর ভাল্লাগছে না ।
তোমার মা আমার ওপর রাগ হয়ে আছেন । এখন দেখা করা ঠিক হবে না জারা ।
সেজন্যই তো দেখা করবে । মা’কে আমি দেখাতে চাই আমার পছন্দ মোটেও যা-তা নয় । কবে আসবে বলো ?
কোথায় আসবো ?
মা’র সাথে দেখা করতে ।
জারা হঠাৎ এতো ক্রেজি হয়ে উঠলে কেন ? উনি দেখা করতে চেয়েছেন ঠিক আছে তবে আমাকে একটু সময় তো দাও প্রিপারেশন নেয়ার ।
কিসের প্রিপারেশন ? মা কী তোমার হাতের বিরিয়ানি খেতে চেয়েছে না-কি ? কখন দেখা হবে সেটা বলো ।
এমন হুট করে আমি দেখা করতে পারবো না ।
কেন?
সমস্যা আছে ।
কী সমস্যা ?
তুমি বুঝবে না ।
বুঝিয়ে বলো, তাহলেই তো বুঝি ।……………………