এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৫

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৫)
*********************************

সাদাত তিন ঘন্টা ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । মাথার ওপরের রোদ আর পায়ের নিচের পীচের গরমে তার একেকবার মনে হচ্ছে, সে এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে অথবা মোমের মতো গলে পীচের সাথে মিশে যাবে । তার মনটা ভিষণ রকমের খারাপ হয়ে আছে । অনেক চেষ্টা আর অপেক্ষার পর সে এই চাকরীটা পেয়েছিলো অথচ সাতদিনের মাথায় তার চাকরীটা চলে গেলো । তেমন কোনো চাকরিও না । পিএস নাম নিয়ে চাকরীতে ঢুকেছিলো সে, এমডি স্যারের যিনি স্ত্রী, সেই ম্যাডামের পিএস । এমডির বাড়ির বাজার সদাই করা, বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা নেয়া আর বাকি সময়টায় অফিসের খুচরো কাজগুলো করে দেয়া । তবে এসব কাজে সে একটুও মন খারাপ করেনি । তার যে চাকরীটা হয়েছে এতেই সে বেজায় খুশি ।

মা আর ছোট বোন সানজিদাকে নিয়ে তার সংসার । বাবা মারা গেছেন বেশ কিছুদিন হলো । বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই সাদাতের ওপর সংসারের দায়িত্ব পড়েছে । তখন থেকেই সে টিউশনি শুরু করেছে । ভাগ্যিস তাদের ভাঙাচোরা হলেও মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই ছিলো , সাথে বাবা’র রেখে যাওয়া সামান্য ক’টা টাকা । এটুকু না থাকলে শুধু টিউশনির টাকায় তারা টিকে থাকতে পারতো না । যদিও তার দুই খালা হেল্প করতে চায় সবসময় কিন্তু তার মা’র আত্মসম্মান তীব্র । না খেয়ে থাকবে তবু কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য নেবে না । চাকরিটা তাকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল ।

সাদাত ভাবতে লাগলো বাড়িতে গিয়ে মা’র কাছে কী বলবে, কেন তার চাকরীটা চলে গেলো । চাকরি পাওয়ার খবরটা শুনে মা ভিষণ খুশি হয়েছিল অথচ কে জানতো, এমন একটা চাকরিতেও সে সাতদিনের বেশি টিকতে পারবে না । আজ অফিসে যেয়ে টুকটাক কাজ গুছিয়ে দশটায় যখন এমডি স্যারের বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ির কাছে যাচ্ছিলো, তখনই নতুন একজন ছেলে এসে বললো, আপনি থাকেন ভাই, আমি যাচ্ছি স্যারের বাসায় । জামিল স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছেন ।

আচ্ছা, বলে আর কোনো কথা বলেনি সাদাত । জামিল স্যারটা কে ! কতক্ষণ চিন্তার পর মনে পড়লো, সাতদিন আগে যার সাথে দেখা করে কাজে জয়েন করেছিলো সে, তিনিই জামিল স্যার । হঠাৎ খুব নার্ভাস লাগতে লাগলো তার । তার কাজে কী কোনো ভুল হয়েছে? স্যার কী বকা দেয়ার জন্য ডেকেছেন ? কিচেনে যেয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে তারপর সোজা গিয়ে হাজির হয়েছিলো জামিল স্যারের দরজার সামনে । স্যার কিছু একটা লিখছিলেন তাই সাদাত চুপ করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো । হঠাৎ তার দিকে চোখ পড়তেই স্যার বললেন –

কিছু বলবেন ?

কথার ধরণে সাদাত বুঝলো স্যার তাকে চিনতে পারেননি । হতেই পারে কারণ এতো বড় অফিস আর তার মতো একজনকে তো স্যারের মনে থাকার কথা না । মাত্র একবারই তো দেখা হয়েছে ওনার সাথে । সাদাত নিজের পরিচয় দিতেই তিনি এক মুহূর্ত কী যেন ভেবে সাদাতকে বসতে বললেন । তারপর লেখাটা দ্রুত শেষ করে সাদাতকে বললেন –

কেমন লাগছে কাজ, ভালো ?

জ্বী স্যার ভালো ।

হুম, আচ্ছা ইয়ে মানে আমাদের এখানে আসলে একটু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে । আপনি যে পোস্টে জয়েন করেছেন সেখানে আসলে আমাদের ম্যাডামের এক আত্মীয়ের জয়েন করার কথা ছিলো ।

সাদাত ঢোঁক গিললো, বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে বিষয়টা ।

ম্যাডাম আসলে একটু খুঁতখুঁতে । অপরিচিত কারো সাথে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান না । আর আপনি তো শিক্ষিত, আপনার এরচেয়ে অনেক ভালো কিছু হয়ে যাবে নিশ্চয়ই ।

সাদাত কী বলবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে বসে থাকলো ।

জামিল স্যার বোধহয় বুঝতে পারলেন সাদাতের অবস্থাটা । আর কথা না বাড়িয়ে একটা খাম এগিয়ে দিলেন সাদাতের দিকে –

এটা রাখেন । ভাঙা মাস সহ আগামী মাসের বেতনও দেয়া হয়েছে । আর আপনার ভালো কিছুর জন্য শুভকামনা রইলো ।

খামটা হাতে নিয়ে সাদাত দেখলো তার নামটা প্রিন্ট করে লেখা । খামটা শক্ত করে ধরে জামিল স্যারকে সালাম দিয়ে ডানে বাঁয়ে না তাকিয়ে একেবারে সোজা অফিস থেকে বেরিয়ে এসে দম নিলো সে । সেই থেকে শুধু হাঁটছে । এই অবেলায় বাড়ি ফিরলে মিথ্যে বলতে হবে । হুট করে চাকরি ছাড়ার কথাটা বলা যাবে না, মা’র মনটা খারাপ করে দিতে একদম ইচ্ছে করছে না এখন । হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা টং দোকান পেয়ে বসে পড়লো সাদাত । দোকানীর বয়স বড়জোড় সাত থেকে আট বছর হবে । আশেপাশে বড় কাউকে দেখতে পেলো না সাদাত । সাদাতকে ভালো করে লক্ষ্য করে সেই পুঁচকে সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো –

পানি খাইবেন মামা ?

গলাটা শুকিয়ে কাঠ, কোনো স্বর বেরোচ্ছে না । সাদাত ইশারায় বোঝাতেই দৌড়ে যেয়ে গ্লাস ধুয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলো । পানিটুকু শেষ করে অপলক আকাশের দিকে চেয়ে রইলো কতক্ষণ । ছেলেটা পেতে রাখা বেঞ্চটার ধুলো ঝেড়ে সাতাদকে বসতে বলে নিজের জায়গায় যেয়ে বসলো । সাদাত খেয়াল করলো, এতোটুকু বাচ্চা অসম্ভব দক্ষতার সাথে দ্রুত হাতে সুপারি কাটছে । হাত কাটার কোনো ভয় নেই । কাজের ফাঁকে সাদাতকে জিজ্ঞেস করলো –

কী খাইবেন কন?

তুমি চা বানাতে পারো?

হুম শিখা নিসি । আম্মা দুপুরে বাড়ি যায়গা । তখন কাস্টমার আইলে আমি চা দেই ।

আমাকে এক কাপ চা দিতে পারবে?

চা দিমু কিন্তু এই দুপ্পুর বেলায় শুধু চা খাইবেন ক্যান? রুটি আর কলা খান আগে ।

সামনে ঝোলানো পলিথিনে বনরুটি, আরেকটা পলিথিনে টকটকে লাল লাড্ডু আর দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা কলা দেখলো সাদাত । কলাগুলো বেশ তরতাজা। খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও পেটে একটু পরপরই গুড়গুড় আওয়াজ জানান দিচ্ছে যে এবার কিছু না খেলে আর হচ্ছে না । সাদাত একটা বনরুটি আর একটা সাগর কলা নিলো । খাওয়ার মাঝখানে ছেলেটা হঠাৎ করে বললো –

আপনের কী মন খারাপ?

সাদাত একটু চমকে তাকালো, না তো । কেন বল তো?

আমি মাইনষের মুখ দেখলে বুঝি ।

পুঁচকের কথা বলার ভঙ্গিতে সাদাত হেসে ফেললো । বললো

– নাম কী তোমার?

শাওন, শাওন মাসে হইসিলাম তো তাই ।

স্কুলে যাও শাওন ?

না, স্কুল ভাল্লাগে না । স্যারেরা মারে । আর স্কুলে গেলে আমার বইনরে দেখবো কে? তখন তো আম্মা থাকে দোকানে ।

কিন্তু লেখাপড়া করা তো ভিষণ দরকার ।

মামা খিদা মিটানো আরো বেশি দরকার । পেটে খিদা থাকলে মাথায় কিছু ঢুকে না ।

তোমার বাবা কোথায়?

জানি না, আমি কইতে পারি না । কই জানি গেছে গা ।

সাদাত অপলক তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে । ছোট্ট একটা মানুষ অথচ কথাবার্তায় কতো সাবলীল ! এই বয়সেই জীবনকে নিজের মতো করে চিনে ফেলেছে অনেকটুকু । সে রুটি কলার টাকা দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পরলো । পেছন থেকে শাওন ডাক দিলো –

চা খাইবেন না মামা ?

না, আজ থাক, আরেকদিন ।

এখন এই ভরদুপুরে আর কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা পাচ্ছে না সে । বড় খালার বাসায় যাওয়া যায় কিন্তু বড় খালার বাসায় যাওয়ার মেলা ঝামেলা আছে । সাদাতকে পেলেই বড় খালার রাজ্যের কাজের কথা মনে পড়ে যায় । কাজগুলোও সব আজব আজব । একবার সাদাতকে জৈন্তাপুর যেতে হয়েছিলো কাঁচা কাঁঠাল আনতে । বড় খালা টুন্ডু হুজুরের মুরিদ । এই বিষয়টা সাদাতের একদম অসহ্য লাগে । খালার বাতের ব্যাথা সারাবার জন্য জৈন্তাপুর থেকে পাঁচশো গ্রাম ওজনের কাঁচা কাঁঠাল আনতে হবে । যে কাঁঠাল আশেপাশের অনেক বাড়িতে ঝুলে আছে, হাত বাড়ালেই টুক করে পেড়ে আনা যায় , কোনো পয়সা ই খরচ হয় না, সেই কাঁঠাল আনতে সাদাতকে জৈন্তাপুর যেতে হয়েছিলো । আরেকবার খালার বাসার কাজের বুয়াকে গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে জ্যামের কারণে রাত দুইটায় পৌঁছাল তারা । বুয়ার বাসায় একটাই ঘর । রাতে থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই । শেষে তাকে বাকি রাত ঘরের সামনে একটা মোড়া পেতে বসে থাকতে হয়েছিল হাজারখানেক মশার সাথে । এইসব কথাগুলো মনে পড়াতে বড় খালার বাসায় যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলো সে । চাকরীতে ঢোকার আগে যে দু’টো টিউশনি করতো , একবার উঁকি দিয়ে অবস্থা দেখার জন্য দু’টো বাড়িতেই যাবে বলে ঠিক করলো সে ।

দিপুর মা তো সাদাতকে পেয়ে বেজায় খুশি –

আরে স্যার আপনি? আপনার কথা খুব মনে পড়ছিলো । এই দিপু , দিপু এদিকে এসো । তুমি যে অংকগুলো বুঝতে পারছিলে না, সেগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি এসো । তোমার স্যার চলে এসেছেন । সাদাত মনে মনে খুশিই হলো, যাক টিউশনিটা হাতছাড়া হয়নি তাহলে । এখানে পড়ানোর একটা মজা আছে, আপা একদম এক তারিখে বেতন দিয়ে দেন ।

দিপু তো স্যারকে পেয়ে ভীষণ খুশি । জম্পেশ নাস্তাও চলে এলো । নাস্তা খেয়ে একটু নির্ভার হয়ে সাদাত দিপুকে পড়ালো পুরো দুই ঘন্টা । পড়ানো শেষ হতেই আপা এসে ঢুকলেন ঘরে –

আপনি আসায় ভিষণ উপকার হয়েছে । কালকে দিপুর অংক পরীক্ষা অথচ আজকে স্যারই আসলো না । অনেক ধন্যবাদ স্যার । ঠিক আছে তাহলে, আবার আসবেন স্যার । দিপু কিন্তু আপনাকে অনেক পছন্দ করে ।

এরপর আর কিছু বলার থাকে না । সালাম দিয়ে সাদাত বের হয়ে এলো দিপুদের বাড়ি থেকে । সিরাত’দের বাড়িতে গেলে আবার কী দেখতে হয় এই ভয়ে ওদিকে যাওয়ার প্ল্যান বাদ দিলো সে । সরাসরি বাসায় চলে এলো । বাসায় ফিরে মা আর সানজিদার হাসিমুখ দেখে চাকরি ছাড়ার কথাটা চেপে গেলো সাদাত । টাকাটা বের করে আলমারিতে রাখলো । সময় বুঝে মা’র হাতে টাকাটা দিয়ে বলবে ফেলবে চাকরি যাওয়ার কথাটা ।

ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে ঢুকতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো । মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ছোট খালা ফোন করছেন । রিসিভ করতেই ছোট খালা অভিযোগের সুরে বললেন –

সাদাত তোমার চাকরির সুখবরটা তুমি আমাদেরকে জানালেই না !

সাদাত মনে মনে হাসলো । সে খালাকে কী বলবে বুঝতে পারছে না । চাকরির সুখ তো তার মাত্র সাতদিন ছিল । কথা ঘোরানোর জন্য বলল –

ছোট খালা তোমরা সবাই কেমন আছো ? শাফিন কেমন আছে ?

হ্যাঁ শাফিন ভালো আছে আর আমরা সবাইও ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ । তোমার চাকরি কেমন লাগছে বলো ।

আবারও চাকরি ! এবার কী বলবে বুঝতে না পেরে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো –

ছোট খালা আমি তোমাদের বাসায় এসে তোমার সাথে কথা বলবো ।

ঠিক আছে, কবে আসবে বলো ? ওহ, তোমার খালু তো জানে না তোমার চাকরি পাওয়ার কথা , কাল আমাকে বলছিল তোমাকে ওদের অফিসে একটা সিভি জমা দিতে । লোক নিচ্ছে এখন । আমি বললাম তোমার চাকরির কথা । আচ্ছা এর আগেও দুই দিন আসবো বলে শেষ পর্যন্ত আর আসোনি তুমি । রাগ করেছো না-কি কারো সাথে, সপ্তাহে ছুটি কয়দিন ?

চাকরিটা তার এখন খুব দরকার । সে তাবাসসুমকে বললো –

ছোট খালা সত্যি কালকেই আসবো ।

কালকে ! আচ্ছা ঠিক আছে । রাখছি তাহলে, কাল দেখা হবে ।

ছোট খালাকে তো বলে দিলো কাল যাবে কিন্তু ছোট খালার বাসায় যেতে তার এখন খুব অস্বস্তি হয় । এতোদিন তো এমন সমস্যা হয়নি তার । কিছুদিন যাবত এমনটা শুরু হয়েছে । খালার বাসায় গেলে জারার সাথে যখন দেখা হয়, তার মধ্যে কেমন একটা অসাড়তা কাজ করে । জারাকে দেখলে বুকের ভেতর কেমন যেন আকুলিবিকুলি করতে থাকে । কী যে এক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা ! সে খুব ভালো করেই জানে জারাকে সে কখনোই পাবে না । জারা তার কাছে দূর আকাশের তারার মতো । জারাকে সে পেতেও চায় না কখনো কিন্তু কেমন করে যে জারা তার মনের ভেতর গেঁড়ে বসলো সে বুঝতেও পারেনি । যদি খালার বাসায় গেলে তার মনের অবস্থাটা সবাই জেনে যায় এই ভয়ে ওমুখো হওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে কিন্তু কাল তার যেতেই হবে । চাকরিটা যদি পাওয়া যায় তাহলে মা’র দুর্ভাবনা কমবে । চাকরিটা তার খুব প্রয়োজন ।

.
.

জারা ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সাথে হেঁটে আসছিল গেটের দিকে । গেটের কাছাকাছি আসতেই সে আদিত্যকে দেখতে পেলো । এতোটা কাছাকাছি সে কখনো আসে না, দূরে কোথাও অপেক্ষা করে । জারার হঠাৎ কেমন ভয় লাগলো আদিকে দেখে । গত দুইদিন সে আদির ফোন রিসিভ করেনি । কেমন উদভ্রান্তের মতো লাগছে চেহারাটা । জারা না দেখার ভান করে বন্ধুদের সাথে গাড়ির দিকে এগোতেই আদি তাকে খেয়াল করলো । জারা ভেবেছিল সবার সাথে তাকে দেখলে আদি আর কাছে আসবে না কিন্তু আদি দৌড়ে একদম কাছে চলে এলো । তানিশা ছাড়া আর কেউই আদিকে চেনে না । হঠাৎ সে এভাবে সামনে এসে দাঁড়ানোয় অন্যেরাও তাই বেশ অবাক হলো । জারা কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । আদিই কথা শুরু করলো –

জারা তোমার সাথে একটু কথা আছে । কথাটা বলে সে অন্যদের দিকে তাকাতেই তানিশা অন্য বন্ধুদের নিয়ে ওর গাড়ির দিকে চলে গেলো ।

জারা চলে যাচ্ছে দেখে সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ালো আদি –

কী ব্যাপার, বললাম না কথা আছে আর দুই দিন ধরে যে হাজারবার ফোন করেছি, ফোন কেটে দিচ্ছো কেন বারবার ?

আমি এখন কথা বলতে পারবো না, বাসায় যাবো ।

আমার সাথে কথা না বলে তো তুমি বাসায় যেতে পারবে না জারা ।

প্লিজ আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছি না । মন্টু ভাইয়া দেখলে আমার প্রবলেম হয়ে যাবে ।

তোমার মন্টু ভাইয়া দেখলো না কে দেখলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না । তুমি ফোন ধরোনি কেন ?

আমাকে যেতে দাও আদি, আমি এখন কথা বলবো না ।

আরে আজব ! তুমি এমন করছো কেন ? সমস্যা কী তোমার ? কোনো প্রবলেম হলে সেটা বলবা তো । না বললে বুঝবো কেমন করে ।

তুমি আমার সাথে সাথে আসছো কেন ? আমি এখন বাসায় যাবো । তুমি যাও ।

আমি চার ঘন্টা ধরে এই গেটে দাঁড়িয়ে আছি আর এখন তোমার সাথে কথা না বলে চলে যাবো ! তুমি যদি এখন কথা না বলো আমি কিন্তু তোমার মন্টু ভাইয়ার সাথে যেয়ে কথা বলবো ।

আদি !

আমি কথা বলতে চাই জারা , তোমার সমস্যা বলো ।

এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না ।

চলো তাহলে আমার সাথে, এই রিক্সা….

প্লিজ আদি তুমি এমন করছো কেন? একটু বুঝতে চেষ্টা করো আমার অবস্থাটা । আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না । বাসায় কাজ আছে আমার । আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলবো রাতে ।

আমার চেয়ে বড় কোনো কাজ তোমার থাকতে পারে না । তুমি ফোন কেন ধরলা না তার উত্তর আগে দাও তারপর অন্য কথা । গতকাল আমি ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছি এইখানে । কালকে তোমার ক্লাস ছিল না ?

না ।

তোমার সাথে কথা না বলে আমি যাবো না জারা । তোমার মন্টু ভাই দেখলে দেখুক ।

জারা হাঁটা থামিয়ে খুব অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকলো আদির দিকে ।………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here