এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৬

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৬)
********************************

আদিত্যের নাছোড়বান্দাগিরির কাছে হেরে গিয়ে জারা বললো –

ঠিক আছে দশ মিনিট থাকবো আমি, কী বলবে বলো ।

দশ মিনিট ! ঐ মন্টুরে ফোন দাও, বলো যে আরো দুইটা ক্লাস বাকি আছে তোমার । আমাদের কথা শেষ হবে তারপর তুমি যেতে পারবা ।

এভাবে কথা বলছো কেন তুমি ! আমি বললাম তো শুনবো তোমার কথা কিন্তু আজকে না, কালকে । আজকে এতোটা সময় আমি থাকতে পারবো না । বাসায় যেয়ে মা’র সাথে আপুর বাসায় যেতে হবে ।

আজকে মানে আজকে, মানে এখনই ।

ওদের কথার মাঝে জারা’র ফোন বেজে ওঠে । মা’র ফোন দেখে জারা আদিত্যকে ইশারায় থামতে বলে কল রিসিভ করলো –

হ্যাঁ মা বলো ।
না না আরেকটু দেরি হবে মা, আজ একটা এক্সট্রা ক্লাস হবে ।
না আগে বলেনি তো ।
আমি আবার কোথায় যাবো ! ক্যাম্পাসেই তো আছি । তানিশা’র সাথে কথা বলবে ? এই তানিশা…
আচ্ছা ঠিক আছে, হ্যাঁ মন্টু ভাইয়াকে বলে দিচ্ছি লাঞ্চ করে নিতে ।
আরো এক ঘন্টা তো….

জারা খেয়াল করলো আদিত্য আঙুল তুলে দুই ঘন্টা বলতে বলছে তাকে ।

জারা মা’র সাথে কথা শেষ করে মন্টু ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো যে তার আরো এক ঘন্টা দেরি হবে ।

কথা শেষ করতেই আদিত্য ধমকে উঠলো –

কী ব্যাপার তোমাকে না বললাম দুই ঘন্টা বলতে ?

জারা আজ প্রথম আদির সাথে একটু কঠিন ভাবে কথা বললো –

কী ব্যাপার তুমি আমাকে ধমক দিচ্ছো কেন ? আমাকে কেউ ধমক দিয়ে কথা বলে না । কারো এ রকম ব্যবহারে আমি অভ্যস্ত না, তোমাকে বলে দিলাম আদি । তুমি আগেও আমার সাথে এমন করেছো, এটা আজকেই যেন শেষ হয় আর এক ঘন্টার বেশি এক মিনিটও আমি থাকবো না ।

আদিত্য একটু যেন চমকে গেল জারা’র রূঢ় আচরণে । তাড়াতাড়ি বলে উঠলো –

সরি জারা, আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম । তোমাকে ধমক দিয়ে কথা বলার সাধ্য আমার আছে বলো ? তুমি তো হলে তোমার আব্বুর প্রিন্সেস । তুমি সবসময় এতো হাসিখুশি থাকো আর এখন হঠাৎ এতো সিরিয়াস হয়ে গেলে কেন বলো তো ?

আদি তুমি যা বলবে জলদি বলো ।

এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তুমিই তো কথা বলতে পারো না, চলো হট কফিতে যেয়ে বসি ।

রাস্তা পেরিয়ে হট কফিতে এসে বসেই জারা বললো –

তোমার যা খাওয়ার খাও, আমি কিচ্ছু খাবো না ।

একটা কফি আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের অর্ডার দিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসে আদিত্য বললো –

এবার বলো কী সমস্যা, দু’দিন ধরে আমার ফোন ধরোনি কেন ? তুমি কী জানো আজ তোমার দেখা না পেলে আমি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যেতাম ।

কড়াভাবে কথা শুরু করতে যেয়েও আদির এমন কথায় জারা একটু থতমত খেয়ে গেল । নরম গলায় বললো –

আদি শোনো আজ কিছু বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই ।

কী বিষয় ? তোমার সাথে আমার কী টাকা পয়সার লেনদেন আছে যে ক্লিয়ার করতে হবে ?

না তা না । তোমার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে । আমি শুধু জানি তোমার নাম আদিত্য শাহরিয়ার, তুমি ইস্টওয়েস্ট থেকে এমবিএ কমপ্লিট করেছো আর নিকুঞ্জে থাকো ফ্যামিলির সাথে । তোমার বাবা বারবার ওনার ব্যবসার দায়িত্ব নিতে বলছেন কিন্তু তুমি নিজের মতো কিছু করতে চাও তাই ওনার ব্যবসায় জড়াচ্ছো না । এর বাইরে আমি তোমার সম্পর্কে আর কিছুই জানি না । মানে তুমি আমাকে এটুকুর মধ্যেই আটকে রেখেছো, তাই তো ?

হুম, এগুলো আবার নতুন করে বলার কী আছে ? সমস্যাটা কোথায় সেটা বলো ।

বলছি । আমি তোমাকে আমার ফ্যামিলির সব কথা বলেছি । আমার সমস্ত কিছু তুমি জানো, কী জানো না ?

তুমি যতটুকু বলেছো ততটুকুই জানি ।

আমি তোমাকে সবটুকু বলেছি, সবটুকুই । আমার আপু, ভাইয়া, আপুর শ্বশুরবাড়ি খবর, আমার দুইজন খালা আর একজন চাচার ফ্যামিলিতে কে কে আছে তাও তুমি জানো । আমাদের বাসার কাজের মেয়েটার নাম শিল্পী আর ওর যে দু’টো বিয়ে হয়েছিলো সেটাও তোমার জানা আছে ।

আরে বাবা বলবা তো তোমার পুরা জেনারেশন কেন আসছে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ?

এই জন্যে আসছে যে তুমি আমার বাসায় না গেলেও আমাদের সবার কথা তুমি জানো, ছবি দেখে সবাইকে তুমি চিনে গেছো ।

তো এইটাকে কী দাঁড়ালো মানে কী বুঝালা তুমি ?

আদি তুমি আমার মা আর আব্বুর কাছে কোনোদিন কিছু লুকাইনি, কখনো মিথ্যে কথা বলিনি । বলার প্রয়োজনই পড়েনি কিন্তু গত ছয় মাসে আমার জীবনটা কেমন যেন আগোছালো হয়ে গেছে । সারাক্ষণই আমি কিছু না কিছু মিথ্যা বলেই যাচ্ছি তাঁদের সাথে । আমি এটাতে খুব অপরাধবোধে ভুগছি । আব্বু আর মা দু’জনই আমাকে অনেক বুঝিয়েছেন । তোমাকে এখন যে কথাটা বলবো তাতে তুমি মন খারাপ করো না প্লিজ ।

বলো…

মা আমাকে বলেছেন এভাবে ফেসবুক থেকে পরিচয়ের পর রিলেশনে জড়িয়ে অনেকই খুব বিপদে পড়েছে । মা’র এক বন্ধুর মেয়ের সাথেই এমনটা হয়েছে । এক বছর রিলেশনের পর মেয়েটা জানতে পেরেছে ছেলেটা একটা মুদি দোকানের সেলসম্যান । বিশ্বাস করা যায় কী ভয়ংকর ব্যাপার !

তোমার কী আমাকেও মুদি দোকানের সেলসম্যান মনে হচ্ছে , না-কি বাসের কন্ডাকটর ? তুমি কী বলতে চাও জারা, আমি তোমার কাছে পরিচয় লুকিয়েছি , মিথ্যা কথা বলিছি নিজের সম্পর্কে ? আমার সাথে সম্পর্ক করে তুমি বিপদে পড়বে? আমি তোমাকে বিপদে ফেলবো, আমি !

আমি এতো সব বুঝি না আদিত্য । আমি আসলে এতোটা স্ট্রেস নিতে পারছি না । আমি চাই আব্বু আর মা যেন আমাকে আগের মতো ভালোবাসেন । লেখাপড়ায়ও ঠিকমতো মনযোগ দিতে পারছি না এইসব কারণে ।

আমার সম্পর্কে তোমার কেন এমন ধারণা হলো তুমি কী বলবা আমাকে ? কারো কাছে কিছু শুনেছো?

না আমি কারো কাছে কিছু শুনিনি । বাবা-মাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে আমি আসলে রিলেশনটা ক্যারি করতে চাচ্ছি না । প্লিজ আমার সিচুয়েশনটা একবার বুঝতে চেষ্টা করো আদি ।

আমি তোমার সিচুয়েশন বুঝবো? আচ্ছা বুঝলাম, বুঝে রিলেশনটা শেষ করে দিলাম, তারপর আমার সিচুয়েশনটা বুঝবে কে? তোমার বাবা-মা আছেন, তাঁদের মতামত আছে আর আমার বাবা-মা নাই ? তাঁদের মতামতের কোনো দাম নাই ? তাঁরাও তো তোমার বেলায় আমাকে না করতে পারেন । তাঁদের একমাত্র ছেলের জন্য তাঁদের তো পছন্দ থাকতেই পারে । আমি বুঝলাম না রিলেশন শেষ করার কথা আসছে কেন জারা ? সম্পর্ক কী তোমার একার ইচ্ছায় শুরু হয়েছিল যে তুমি চাইলেই শেষ হয়ে যাবে ? তুমি বললে আর ভালো লাগছে না, তাতেই খেলা শেষ হয়ে গেল ? আমি জানি না তুমি সত্যিই কারো কাছে কিছু শুনেছো কি-না, আমার সম্পর্কে যতোটুকু তুমি জানো আজ বাকিটাও জেনে রাখো । বলো কী জানতে চাও ।

জারা ক্লান্ত গলায় বললো –

তুমি নিজেই বলো তোমার কথা ।

আমি তো তোমাকে বলেছি আমি বাবা-মা’র একমাত্র ছেলে । আমার দুই বোন আছে, বড় আপু ওর ফ্যামিলি নিয়ে শিকাগো থাকে, ছোট বোন লেখাপড়া শেষ করেছে । বাবা’র ব্যবসা হয়তো ও-ই সামলাবে । আমার নিজের চেষ্টায় কিছু করার ইচ্ছা । মা যদিও খুব কান্নাকাটি করে বলে, এতো বড় ব্যবসা আমি দায়িত্ব না নিলে কীভাবে ব্যবসা টিকবে কিন্তু তুমি তো জানো জারা, টাকা-পয়সা আমাকে একদম টানে না । দেখো না কতোদিন মানিব্যাগ বাড়িতে ভুলে চলে আসি । তোমার কাছে হাত পাততে হয় । তুমি বোধহয় সেই বিষয়টাতেই রাগ করেছো তাই না জারা ?

না না আমি সেটাতে রাগ করবো কেন !

কোনোভাবে নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে অবিশ্বাস ঢুকেছে জারা । এটা আমি নিতে পারছি না, খুব অপমানিত বোধ করছি । ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে এখনই বাড়িতে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে । আমার মোবাইলে আমি তো কোনো ছবি রাখি না । রাখলে তোমাকে সবার ছবি দেখাতে পারতাম । এমন দিন আসবে তা কী আমি আগে জানতাম ? দাঁড়াও আমাদের বাসার ছবি দেখাই তোমাকে ।

পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি জারা’র চোখের সামনে ধরলো আদি –

এই এলাকাটা চেনো তো, নিকুঞ্জ । এই যে আমি আর আমার বন্ধু তানভীর । আমাদের ছাদটা দেখেছো কী সুন্দর । আমি তো কতোদিন ভেবেছি ঐ মার্বেলে বাঁধানো গোল জায়গাটায় তোমার সাথে বসে চাঁদের আলো খাবো । তুমি আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকবে, আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দেবো আর বলবো “তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ”। হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে সাঁই করে বিশাল প্লেন উড়ে যাবে আর তুমি চমকে আমাকে জড়িয়ে ধরবে ।

জারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেই আদিত্য বললো –

এমন করে তাকাচ্ছো কেন ! আরে বাবা বিয়ে পরে হবে সবকিছু । আমাদের ছাদটা সুন্দর কি-না বলো ?

জারা দেখলো ছাদটা সত্যি অনেক সুন্দর । খুব রুচিশীলভাবে সাজানো হয়েছে ছাদটা । সে বললো –

এটা তোমাদের বাড়ি ?

না ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম ।

এভাবে বলছো কেন আদি ? আমি কী তা বলেছি ?

না তোমার বাবা-মা তো তোমার মনের ভেতর সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে যে ফেসবুকে পরিচয় মানেই চিটার । আমি কেন তোমাকে মিথ্যা বলবো নিজের সম্বন্ধে ? আমার কী কোনো স্বার্থ আছে ? আমি কী বড়লোকের মেয়ে দেখে তোমার সাথে খাতির জমিয়েছি ? হ্যাঁ একটা স্বার্থ তো আছেই, আমি ভালোবেসেছি জারা, পাগলের মতো ভালোবেসেছি ।

জারা বুঝতে পারে না আদিকে সে কী বলবে । আব্বুর কথা শুনে তার মনে হয়েছিল আদির সাথে সে আর কোনো সম্পর্কই রাখবে না । এখন আবার মনে হচ্ছে আদি যা বলছে সেগুলোই ঠিক । সে বারবার কেন এতো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে ? নিজের উপর ভিষণ রাগ হচ্ছে তার ।

আদি হয়তো বুঝতে পারে জারা’র দোদুল্যমান অবস্থাটা । সে বললো –

তুমি এতো টেনশন করছো কেন জারা ? শোনো তোমাকে তো আগেই বলেছি, আমাদের বিষয়টা এখন একদম হাইড করে যাও তোমার বাসায় । যদি তোমার গার্ডিয়ান জিজ্ঞেস করে সরাসরি অস্বীকার করবা । বলবা আমার সাথে তোমার আর কোনো যোগাযোগ নাই । কী পারবা না বলতে ?

জারা চুপ করে বসে আছে , কী বলবে বুঝতে পারছে না ।

শোনো জারা তারা যদি তোমার এতো ভালোই চাইতেন তাহলে তোমাকে না জানিয়ে হুট করে বিয়ের চিন্তা করতে পারতেন না । তুমি ভাবতে পারো, তোমার এখনো লেখাপড়া শেষ হলো না অথচ বিয়ে দিয়ে তাঁরা তোমার জীবনটাই শেষ করে দিতে চাচ্ছিলেন ।

জারা’র নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছে । সে কী করবে এখন ? প্রতিবার সে ঠিক করে রাখে আদির সাথে কীভাবে কথা বলবে অথচ প্রতিবারই সে জায়গাটা থেকে সরে যাচ্ছে । সে বুঝতে পারছে না তার আসলেই কী করার আছে এখন । জীবনটা এতোটা জটিলতায় ঢেকে গেলো কীভাবে ? আদি যে তাকে এতো সহজে ছাড়বে না এটা সে বেশ বুঝতে পারছে । সে-ও কী ছাড়তে চায় আদিকে?

.
.

সাদাত অনেক দিন পরে এলো ছোট খালার বাসায় । আশ্চর্য ব্যাপার, তার ভিষণ রকমের লজ্জা লাগছে এখানে আসার পর । সেই ছোট্টবেলা থেকে খালার বাড়িতে তার অবাধ বিচরণ । শাফিন আর সে সমবয়সী হওয়ায় খুব খাতির ছিল দু’জনের মধ্যে । খালাও তাকে আদর করতো ভিষণ । শাফিনের জন্য কোনো ড্রেস বা খেলনা কিনলে তার জন্যেও একটা কিনে আনতো । কী দারুণ ছিল সেই সব দিনগুলো । শাফিনের কথা মনে পড়ায় মনটা খারাপ হয়ে গেল সাদাতে’র । শাফিন বাইরে চলে যাওয়ার সময় তাকে কতোবার ফোন করেছে এখানে আসার জন্য অথচ ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে শাফিনের সাথে দেখা করতে পর্যন্ত আসতে পারেনি । শেষে চলে যাওয়ার আগের রাতে শাফিন যেয়ে হাজির হয়েছিল তাদের বাসায় ।

হঠাৎ সম্বিত ফিরলো খালার গলার আওয়াজে । তাবাসসুম সিঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকলেন –

কী ব্যাপার সাদাত, তুমি এখানে বসে আছো কেন ? তুমিও কী গেস্ট হয়ে গেলে না-কি যে ওভাবে নিচে বসে অপেক্ষা করতে হবে? এসো, ওপরে চলে এসো ।

খালার কথায় লজ্জা পেয়ে গেল সাদাত । তাই তো আজকের আগে তো সে কখনো এমন মেহমানের মতো বসে থাকেনি লিভিংরুমে , এসেই ওপরে উঠে গেছে । নিজেকে যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে ওপর তলার দিকে পা বড়ালো সাদাত ।

তাবাসসুম ভাগনের হাতটা ধরে বললেন –

কেমন আছো তুমি ? এমন করে ওখানে বসেছিলে কেন ?

এমনি খালা । ভাবলাম তোমরা কে কোথায় আছো তাই আর ওপরে উঠিনি ।

শিল্পীটাও একটা জিনিস, আমাকে বলেইনি তুমি যে এসেছো ।

তোমরা সবাই কেমন আছো ছোট খালা ?

সবাই ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ ।

রোজা কোথায় ? জারা’র কথা জিজ্ঞেস করতে যেয়েও গলায় আটকে গেল শব্দ ।

ও তো চলে গেছে গত সপ্তাহে । তোমার কথা বলছিল সেদিন । অনেক দিন দেখে না তোমাকে । আচ্ছা আজকে কী তোমার অফিস নেই ?

না খালা ।

কেন, কী কারণে ছুটি আজ ?

চাকরিটা চলে গেছে খালা ।

চলে গেছে মানে কী ! মাত্রই না জয়েন করলে ?

হুম কিন্তু ওখানে ম্যাডামের পরিচিত আরেকজনকে নেয়া হয়েছে আমার জায়গায় । তাই চাকরিটা চলে গেল খালা ।

ইশ, আমাদের দেশে এইসব স্বজনপ্রীতি আর বন্ধ হলো না । আমি তো তোমার খালুকে আরো বললাম, সাদাত চাকরিতে জয়েন করেছে । তোমার খালুও কতো খুশি হলো । আচ্ছা তোমার খালু আসুক আজকে, বলে দেখি তোমার জন্য যে পোস্টের কথা বলেছিল সেটা এখনো খালি আছে কি-না । তাই বুঝি তোমাকে এতো মনমরা দেখাচ্ছে? আরে বোকা ছেলে টেনশনের কিছু নেই, একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই ।

কথার মাঝে শিল্পী ডাকতেই তাবাসসুম বললেন –

সাদাত তুমি শাফিনের রুমে যেয়ে বসো, আমি আসছি । শাফিন যেন কী সব রেখে গেছে তোমার জন্য । ওভাবেই রাখা আছে প্যাক করা অবস্থায় । তুমিও আসোনি, দেয়াও হয়নি । তুমি যাও, আমি আসছি ।

খালা নিচে নেমে গেলে সাদাত ধীর পায়ে শাফিনের রুমের দিকে এগোতে গিয়েও থমকে গেল । পা চলছে না আর, জারা এগিয়ে আসছে তার দিকে । কাছে এসেই জারা অনুযোগের সুরে বললো –

ভাইয়া তুমি এত্তোদিন পরে এলে ! খুব বেশি বিজি থাকো না-কি ?

সাদাত জারা’র চোখের দিকে তাকাতে পারছে না, পাছে জারা তার মনটা পড়ে ফেলে এই ভয়ে সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ।

জারা অধৈর্য্য হয়ে সাদাতের হাতটা ধরে বললো –

এই ভাইয়া আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন, কী হলো তোমার ? আচ্ছা ভাইয়া তুমি কিন্তু এই ক’মাসে আরো সুন্দর হয়ে গেছ দেখতে, দারুণ হ্যান্ডসাম লাগছে তোমাকে ।

জারা হাতটা ধরায় সাদতের মনে হলো সে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারবে না । শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক শিহরণ জেগে উঠছে, বুকের ভেতরের তোলপাড় যেন কানটাকে ঝালাপালা করে দিচ্ছে । এ কী যন্ত্রণা, এমন তো হয়নি আগে । এর নামই কী প্রেম?……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here