এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৪

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৪)
*********************************

দেড় কাঠা জমির ওপর দুই তলা বাড়ি । বাড়িওয়ালা আওলাদ হোসেন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার পেতেছেন ওপর তলায় । নিচ তলায় দু’টো ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া থাকে । সেই ভাড়ার টাকা দিয়ে আওলাদ হোসেনের সংসার কোনো মতে বেঁচে বর্তে আছে । শুধু খাওয়ার খরচ চলে যায়, অন্য সব প্রয়োজন মেটানো যাবে না বলে কেউ আর সে সবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না । আগে অবস্থা এতোটা খারাপ ছিল না । গত বছর তাঁদের অফিসে কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় পড়ে চাকরি খুইয়েছেন তিনি । যদিও রিটায়ারমেন্টের আর বেশি বাকি ছিল না । বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন । মেয়ে মিনাকে নাতিসহ তাঁর কাছে রেখে জামাই থাকে বাহরাইন । সেখানে যা টাকা পায় তা দিয়ে না-কি তারই চলে না, এখানে আর পাঠাবে কী ! ছোট মেয়ে লিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী । ইদানিং তার কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই শরীরটা বেশ খারাপ থাকে সবসময় । এই মেয়ের ওষুধের খরচে বেশ কিছু টাকা লাগে প্রতি মাসে । সবকিছু মিলে একেবারে নাভিশ্বাস অবস্থা । সুফিয়া তার সংসারটা সামলে রেখেছে বলেই এতো অল্প টাকায় খেয়ে পরে বেঁচে আছেন এখনো ।

সুফিয়া স্বামীর জন্য এক কাপ চা এনে বললেন –

রফিকের চাকরির জন্য যে বলে রেখেছিলে তোমার বন্ধুর কাছে, তার কী হলো ?

তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করো আগে, সে চাকরি করবে কি-না । সেবার আজম স্যারের কাছে কী লজ্জায় পড়তে হয়েছিল আমাকে, মনে নেই তোমার ? সে কোথাকার কোন নবাবাজাদা যে ছয় হাজার টাকা তার কাছে কম মনে হয় । আরে ডিগ্রি পাশ করে বসে আছিস আজকে চার বছর ধরে । চাকরি কী এতো সোজা জিনিস ! এম এ পাশ করা লাখ লাখ ছেলেমেয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর তিনি এসেছেন ডিগ্রি পাশ নিয়ে হাতি ঘোড়া মারতে । বললাম পড়ালেখাটা শেষ কর, সেটাও করলো না ।

ওর কী দোষ বলো? ওর বন্ধুরা ভালো ভালো চাকরি করে । ওর খুব লজ্জা লাগে এমন ছোটখাটো চাকরি করতে ।

ছোটখাটো চাকরি ! এটাই কয়জন পায় তোমার জানা আছে৷? বন্ধুরা তো চাকরি পেয়েছে নিজের যোগ্যতায় , কেউ হয়তো বাপ চাচার জোরে । আমার তো কোনো জোর নেই যেটা খাটিয়ে তোমার ছেলের জন্য মন মতো চাকরি জোগাড় করে দিতে পারবো । এই পড়ালেখায় এমন চাকরি যে কপালে জুটছে সেটার জন্য শুকরিয়া করো মা বেটা ।

ওরও তো ইচ্ছে করে ভালো কোনো চাকরি করতে ।

হুম তোমার মতো মা থাকলে সেই ছেলের চিন্তা তো এমনই হবে । কয়দিন পরে যখন না খেয়ে মরতে হবে তখন বুঝবে এই সব বাবুগিরির মজা । সুফিয়া এতো অভাবের মাঝেও যতো সুন্দর করে সংসারটা আগলে রেখেছো, ছেলেটাকে সেভাবে ঠিক করতে পারলে না ? জীবনে ও কী করে খাবে বলো তো ? আজকের এই কঠিন প্রতিযোগিতার বাজারে এরকম রফিকদের জন্য বিন্দু পরিমাণ জায়গা নেই সুফিয়া । এখনো সাবধান করে দিচ্ছি, এরপর এই ছয় হাজার টাকার চাকরিও আর পাবে না, মাথা কুটে মরে গেলেও না । ছেলেকে বোঝাও, ভালো করে বোঝাও ।

ও আসলে বড় কিছু করতে চায় । যদি কিছু পুঁজি পাওয়া যেতো তাহলে যে কোনো একটা ব্যবসা….

ব্যবসা ! ও কী ব্যবসা করবে ? ব্যবসা কী জিনিস ও সেটা বোঝে ? আর ব্যবসা করতে কতো টাকা লাগে তোমার কোনো ধারণা আছে ? ধারণা থাকলে এ কথা বলতে না । তাছাড়া টাকা আসবে কোত্থেকে ? তুমি কী আসলে বোকা না-কি মাঝে মাঝে বোকার ভান ধরে থাকো সুফিয়া, আমি ঠিক বুঝি না । যাগগে তোমার ছেলেকে বলো, যদি রাজি থাকে এই চাকরি করতে তাহলে আমি শেষবারের মতো অনুরোধ করতে পারি ।

সুফিয়া স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে এসে ছেলের ঘরে উঁকি দিলেন । রফিক বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইলে কী যেন করছে৷। সুফিয়া চিন্তা করেন ছেলেটা সারাদিন মোবাইলে কী টেপাটেপি করে আল্লাহ ই জানে ! আজ একটু রাগ হয়েই ছেলের সাথে কথা বললেন তিনি –

কী রে সারাদিন কী করিস এইটার মধ্যে ? এভাবে জীবন কাটবে তোর ?

রফিক উঠে বলে বললো –

কেন মা কী হয়েছে, কিছু লাগবে ?

কিছু লাগলে এনে দিতে পারবি , আছে টাকা ? তোর জন্য তোর বাপের কাছে কথা শুনতে হলো আমাকে ।

কেন আব্বা কী বলেছে, কী সমস্যা ?

এই যে তোর চাকরির জন্য যেয়ে যেয়ে অনুরোধ করলো অথচ তুই গেলিই না একবারও । আবারও কথা বলেছে কার সাথে যেন । তোকে যেয়ে দেখা করতে বলছে । এভাবে শুয়ে বসে না থেকে এবার কিছু একটা শুরু কর বাবা ।

এইসব ছোটখাটো চাকরি আমাকে দিয়ে হবে না মা । আমার প্ল্যান আছে বড় কিছু করার ।

ঘরে শুয়ে শুয়ে এই স্বপ্ন কতো আর দেখবি? দিন দিন সংসারে খরচ বাড়ছে, লিনার চিকিৎসার জন্য কতোগুলো টাকা আলাদা করে রাখতে হয় প্রতি মাসে । তার ওপর আবার আলিফকে স্কুলে ভর্তি করলে নতুন করে খরচ যোগ হবে । এতো কিছু কী করে সামাল দেবো বলতে পারিস ? এ সংসারে আর কেউ আছে হাল ধরার ? মিনা একটা স্কুলে চাকরির সবকিছু রেডি করলো অথচ জামাই পারমিশন দিলো না । টাকা পাঠানোর মুরোদ নেই, এদিকে আমার মেয়েকে ঠিকই শাসনে আটকে রেখেছে ।

আপা ওর বরের কথা শোনে কেন? না শুনলেই তো পারে ।

মিনার চিন্তা তুই বাদ দে, তুই কী ঐ অফিসে যেয়ে কথা বলে দেখবি একবার ? যদি চাকরিটা হয়ে যায় । ছয় হাজার টাকা তো কম না বাবা ।

মা ছয় হাজার টাকার চাকরি করার জন্য আমার জন্ম হয়নি । তুমি টেনশন করো না, খুব তাড়াতাড়ি বড় একটা কিছু হয়ে যাবে ।

কী করে ?

একটু অপেক্ষা করে দেখোই না ।

আর অপেক্ষা , অপেক্ষা করতে করতে জীবনটাই পার করে দিলাম । এখন কবরে যাওয়ার অপেক্ষা ।

ধ্যাত এইসব ফালতু কথা বলো না তো মা । বললাম তো সব ঠিক হয়ে যাবে ।

সুফিয়া আর কোনো কথা না বলে বের হয়ে এলেন ছেলের রুম থেকে ।

.
.

রাতে শোয়ার আগে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস তাবাসসুমের বহুদিনের । বই পড়ার ফাঁকে তিনি দেখলেন কায়সার কেবিনেট থেকে ফটো এ্যালবামগুলো বের করে এনে বিছানায় রাখছেন । এ্যালবামগুলোয় বাচ্চাদের ছোটবেলার সব স্মৃতি পাতায় পাতায় সাজানো । কায়সার মনোযোগ দিয়ে তিন ছেলেমেয়ের ছবি দেখছেন । তাবাসসুম বুঝতে পারছেন কায়সারের ভীষণ মন খারাপ হয়ে আছে । সব কাজের মাঝেও মেয়ের টেনশন তাঁর মাথা থেকে যাচ্ছে না । মেয়ে যে কয়দিন ধরে দূরে সরে আছে এটা বোধহয় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর । বইটা বন্ধ করে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলেন –

এতো রাতে এ্যালবাম খুলে বসলে যে ?

পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কায়সার বললেন –

আমাদের বাচ্চারা কতো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল দেখো তাবাসসুম । ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে মাত্র ক’দিন আগের তোলা । এটা দেখো জারাকে কী সুন্দর লাগছে আমার কোলে । আমরা দু’জন ছাড়া ওকে বেশিক্ষণ কেউ কোলে রাখতে পারতো না, তোমার মনে আছে ?

স্বামীর কথায় হাসলেন তাবাসসুম ।

সবাই বলতো এত্তো মোটা বাচ্চা ! জানো কেউ এভাবে মোটা বাচ্চা বললে আমার ভীষণ রাগ হতো । সবাই মোটা মোটা বলতে বলতে মেয়েটা শুকিয়েই গেলো । আচ্ছা ওরা যদি আরো কিছুদিন ছোট থাকতো খুব বেশি ভালো হতো তাই না তাবাসসুম ?

তাবাসসুম বুঝতে পারছেন কায়সারের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে । আগে কায়সার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর জারা সারাক্ষণ ওর আগে পিছে ঘুরঘুর করতো । কায়সারের সাথে গল্প করে, পছন্দের কোনো খাবার খাইয়ে শেষে নিজের প্রয়োজনের জিনিসটা ঠিক আদায় করে নিতো জারা অথচ আজ কয়দিন হয়ে গেলো মেয়েটা কায়সারের সামনেই আসছে না । তিনি কাছে এসে কায়সারের হাতটা ধরে বললেন –

মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে আছে বুঝি ?

কেমন যেন বিষাদ ভর করে আছে মনে তাবাসসুম । সবই ঠিক আছে তবুও কোথায় যেন একটু ছন্দ পতন ।

একটা কথা বলবো ?

কায়সার তাকালেন তাবাসসুমের দিকে । স্বামীর চোখে এতো কষ্ট বহুদিন দেখেননি তিনি । বললেন –

তুমি এতো মন খারাপ করছো কেন বলো তো ? জারাকে আমি বুঝিয়েছি অনেকবার । ছোট মানুষ, চারিদিকে যা দেখে তা-ই ভালো লাগে । যুগটাই তো এমন । কেউ হয়তো একটু হেসে কথা বলেছে, প্রসংশা করেছে তাতেই কাবু হয়ে গেছে । আমার মনে হয় জারা নিশ্চয়ই বুঝবে আমরা কী চাই । আমি যতোবার বুঝিয়েছি, চুপ করে আমার কথা শুনেছে । তুমি ক’দিন ধরে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছো তাই অভিমান করে দূরে সরে আছে । তুমি একবার কাছে ডেকে আদর করে কথা বলে দেখো, নিমিষেই সব রাগ, অভিমান হাওয়া হয়ে যাবে । তুমিও কষ্ট পাচ্ছো ওদিকে মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে । এখন আমাদের বুঝানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই । জোর করলে, রাগ করলে বিষয়টা আরো জটিল হয়ে যাবে । তুমি কালকে ওর রুমে যেয়ে ওর সাথে কথা বলো । সব ঠিক হয়ে যাবে ।

স্ত্রীর কথাটা বোধহয় মনে ধরলো কায়সারের । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কায়সার বললেন –

জারা কী ঘুমিয়েছে?

এতো তাড়াতাড়ি তো ঘুমানোর কথা না । দেখবো ?

না, তুমি পড়ো, আমি যেয়ে দেখে আসি ।

মেয়ের রুমের দরজার কাছে এসে কিছুটা সময় নিলেন কায়সার । রিডিং টেবিলে বসে কিছু লিখছিল জারা । শব্দ হতেই পেছনে ফিরে কায়সারকে দেখে তাড়াতাড়ি খাতাটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো । কী করবে যেন বুঝতে পারছে না ।

কায়সার মেয়ের বিছানায় বসে ইশারায় জারাকে বসতে বললেন । দুরুদুরু বুকে জারা এসে বিছানায় বসলো । মেয়ের দিকে তাকিয়ে কায়সারের ভেতরটা একটা মোচড় দিলো । এতো আদরের বাচ্চার সাথে কয়দিন কথা না বলে তিনি আছেন কী করে ! জারার হাতটা ধরে বললেন –

আজকে একটা কথা খুব মনে হচ্ছে ।

জারা কিছু না বলে কায়সারের বলার অপেক্ষায় থাকলো ।

আজকে মনে পড়ছে সেই সব দিনের কথা যখন আব্বা আম্মাকে কোনো একটা বিষয়ের জন্য খুব বিরক্ত করতাম । কলেজে ওঠার পরপরই ছুটিতে বন্ধুরা সবাই রাঙামাটি যাবে । আমি বাড়ি থেকে পারমিশন পেলাম না । বন্ধুরা এসে আম্মাকে ধরলো । আম্মা বললেন টাকা নেই । বন্ধুরা সবাই মিলে আমার টাকার ব্যবস্থা করে ফেললো । আম্মা দিলেন আচ্ছা মতো বকা । খাওয়া বন্ধ করে দিলাম, কথা বলা বন্ধ করে দিলাম সবার সাথে । শেষে বাধ্য হয়ে আব্বা আম্মা যাওয়ার পারমিশন দিলেন । গিয়ে তো খুব মজা করলাম ৷ তখন তো আর মোবাইল ছিল না, বাড়ির সবার কথা ভুলে গেলাম । ফিরে আসার পর দেখি আম্মার ভীষণ জ্বর । আমার টেনশনে বেচারি ঘুম, খাওয়া বাদ দিয়ে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করেছেন । আম্মাকে যেয়ে বললাম –

আম্মা আপনি এমন করেন কেন? এতো কান্নাকাটি করার কী হলো ? আমি তো বড় হয়ে গেছি না-কি ?

আম্মা বলেছিলেন –

আজকে বুঝবি না রে বাপ, যেদিন নিজে বাপ হবি, যেদিন তোর বাচ্চা তোর সাথে এমন করবে সেদিন তুই বুঝতে পারবি আমার কষ্টটা, তার আগে যতই বলি কিছু বুঝবি না । ছেলেমেয়ে যতই বড় হোক, বাপ-মা’র কাছে সারাজীবন ছোটই থাকে । বাপ-মা সারাজীবনই টেনশন করে ।

আজ আমি আম্মার কথাটার মানে বুঝতে পারছি । এখন বুঝতে পারছি আম্মা আব্বাকে কতোটা কষ্ট আমি দিয়েছি কিন্তু আজকে বুঝে তো আর লাভ নেই । আজকে তো আর সেই সময়টা ফিরে আসবে না সবকিছু শুধরে নেয়ার জন্য । আমরা আসলে বয়সের দোষে অনেক সময় ভুল করে ফেলি, ভাবি যে আমি যা বুঝি সেটাই ঠিক আর সব ভুল ।

জারাকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে কায়সার মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন –

আমরা তোমার শত্রু না জারা । আমরা কখনোই তোমার খারাপ কিছু চাই না, তোমার সাথে খারাপ কিছু হলে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই । আমরা তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আম্মু । এখন তো জীবনটাকে গড়ার সময় । ছোট্ট একটা ভুলেরও অনেক বড় খেসারত দিতে হবে সারাজীবন । তোমার অবশ্যই অধিকার আছে নিজের পছন্দের একজনকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়ার কিন্তু এটাতো সারাজীবনের একটা ব্যাপার । হুট করে কোনো একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া তাও আবার ফেসবুক ফ্রেন্ড ! তুমি কী ছেলেটার সম্পর্কে সবকিছু জানো ? কোথায় থাকে, কী করে, ফ্যামিলি কেমন, জানো এসব ? তোমার কী মনে হয় না বিষয়টা খুব বেশি রিস্ক হয়ে যাচ্ছে ? এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো যথেষ্ট ম্যাচিওর তুমি কী হয়েছো জারা ? এখন চোখের সামনে যা আসবে তা-ই তোমার চোখে সুন্দর হয়ে ধরা দেবে কিন্তু তুমি কী জানো হয়তো এর চেয়েও আরো অনেক ভালো কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে ? আজকে যদি কোনো ভুল করে ফেলো তবে জীবন তোমার জন্য ভবিষ্যতে যে ভালো কিছু উপহার নিয়ে অপেক্ষা করে আছে, সেই উপহার তোমার আর পাওয়া হবে না । তখন তোমার পাওয়ার খাতায় রয়ে যাবে শুধু আফসোস । আমি কী তোমাকে বুঝাতে পারলাম আম্মু ?

বাবা’র কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখ বেয়ে পানি ঝরতে শুরু করেছে জারা বুঝতেই পারেনি । আব্বুর কথাগুলো শুনে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । সে কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । যখন আদি তার সামনে আসে তখন মনে হয় আদি ছাড়া আর সবকিছু মিথ্যে । এখন আব্বুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আব্বু যা বলছে সেগুলোই ঠিক কথা ।

মেয়েকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে কায়সার বললেন –

বাবা-মা’র দায়িত্ব হচ্ছে সন্তান কোনো ভুল করলে তাকে শুধরে দেয়া । আমি সবসময় তোমার পাশে আছি মা , তুমি শুধু লেখাপড়ায় মন দাও আর সবকিছু একদম ভুলে যাও । ঠিক আছে ?

জ্বি আব্বু ।

কায়সার জারাকে আদিত্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়েও থেমে গেলেন । একদিনে এতো কথা মেয়েটার জন্য হয়তো বেশি হয়ে যাবে । তাবাসসুম ঠিকই বলেছে, ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ফেরাতে হবে মেয়েকে । মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলেন কায়সার ।

কায়সার চলে যাওয়ার পর জারার আর কিছু করতে ইচ্ছে করছে না । যে এসাইনমেন্টটা রেডি করছিল সেটা ঐ অবস্থায় রেখে দিল সে । আপুর সাথে কথা বলতে পারলে খুব ভালো হতো । তার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন আপুর সাথে কথা বললে কষ্টগুলো কমে যায় । ফোনটা হাতে নিয়ে রোজাকে কল করলো সে । নাম্বার বিজি আসছে বারবার । মনটা খারাপ হয়ে গেলো আবার । হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতেই সে ভাবলো রোজা ফোন করছে । মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখলো টিউলিপ নামটা ভেসে উঠেছে । আদিত্যর নাম্বারটা সে টিউলিপ নামেই সেভ করে রেখেছে । কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে টেবিলে রেখে শুয়ে পড়লো জারা । ……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here