এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৩

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৩)
********************************

জারা’র ক্লাসের মাঝখানে আড়াই ঘন্টার ব্রেক থাকায় সে আদিত্যকে ঐ সময়ে আসতে বলেছে । মা’র কথাগুলো মাথার ভেতর ঘুরছে সারাক্ষণ । সত্যিই তো আব্বুকে সে কী করে এতোটা কষ্ট দেবে ? আজ একটা সিদ্ধান্ত সে নিয়েই নেবে এবং আদিকে জানিয়ে দেবে কিন্তু আদি কী রিয়েক্ট করবে সেটা ভেবে খুব অস্থির লাগছে তার । জারা তানিশাকে জিজ্ঞেস করলো –

মন্টু ভাইয়াকে ফাঁকি দিয়ে কী করে যাওয়া যায় বল তো ?

কেন মন্টু ভাইয়া কী গেটের দিকে তাকিয়ে থাকবে না-কি? উনি তো জানেন ই যে আমাদের কখন ছুটি । এতক্ষণে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে আছেন গাড়ির ভেতর । এর মধ্যে তুই দেখা করে চলেও আসতে পারবি ।

তানিশা তুইও চল আমার সাথে ।

আচ্ছা তোরা দুইজন প্রেম করবি, গুনগুন করে গল্প করবি আর আমি ওখানে যেয়ে কী করবো বল তো ? আমার কাজটা কী ওখানে ?

প্লিজ চল, তোর সাথে অনেক কথা আছে আর তোর গাড়িটা ছাড়া আমি যাবো কী করে ?

গাড়ি নিয়ে যা, সমস্যা নাই । আমি কামাল ভাইকে বলে দিচ্ছি । সময় মতো চলে আসিস ।

না না তুই চল । আমি আসলে ডিসিশন নিতে পারছি না ।

কিসের ডিসিশন ?

আদিত্যর বিষয়ে ।

তার বিষয়ে আবার কী ডিসিশন ?

বাসায় খুব ঝামেলা হচ্ছে । আব্বু, মা সবাই আমার সাথে কেমন যেন শুরু করে দিয়েছে । তুই বিশ্বাস করবি, বাসায় লোক পর্যন্ত চলে এসেছে আমাকে দেখতে ।

দেখতে মানে, কী দেখতে ?

আরে বিয়ের জন্য দেখতে আসে না, আরে কী বলে ঐটার একটা নাম আছে তো।

পাত্রী দেখা?

হুম হুম পাত্রী দেখা । তুই ভাবতে পারিস কিসের মধ্যে আছি আমি ?

আংকেল আন্টি এতো ক্ষেপলো কেন রে ? সত্যিই কী তোর বিয়ে দিয়ে দেবে ? এতো তাড়াতাড়ি !

আরে বললেই কী হয় না-কি? আমি তো তাঁদের সামনে যাইনি, সেই জন্য আব্বু খুব রাগ হয়ে আছেন আমার ওপর ।

আচ্ছা ওনারা এতো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন কেন? তুই তো বললেই পারিস, এটা জাস্ট একটা টাইমপাস । নরমাল ফ্রেন্ড ছাড়া আর কিছুই না । আচ্ছা ফ্রেন্ড বলবি কী করে? সে তো আমাদের সাথে পড়েও না । যেইটা সত্যি সেটাই বলে দিস, তোর ফেসবুক ফ্রেন্ড ।

তানিশা তুই কী বলিস এইসব ! টাইমপাস হবে কেন ? আমি খুবই সিরিয়াস ।

তুই সত্যিই সিরিয়াস জারা ? এই সম্পর্কে জড়ানোর আগেই আমি তোকে বারবার নিষেধ করেছিলাম, মনে আছে তোর ? কতোবার বলেছিলাম আর তুইও তখন বলেছিলি শুধুই দুষ্টামি করছিস । এখন দেখ দুষ্টামি করতে করতে কী হয়েছে অবস্থা । একটা কথা বলবো, রাগ করিস না দোস্ত । ছেলেটাকে আমারও কেন জানি ভালো লাগেনি প্রথম থেকে । কেমন লুইচ্চা টাইপ ।

তানিশা !

দেখ আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি । আমার বন্ধুর সাথে খারাপ কিছু হোক এটা আমি মোটেও চাই না । একটা জিনিস থাকে না, দেখে ভালোলাগার একটা বিষয় তো থাকেই । আদিত্যকে দেখলে আমার শুধু মনে হয় ও আসলে তোকে ভালোবাসে না । ওর অন্য কোনো ধান্দা আছে, তার টার্গেট অন্য কিছু । তোর পাশেও তো ওকে একদম মানায় না । ফকিন্নি একটা ।

আদির সম্পর্কে তুই এসব ভাবিস ! অথচ সে তোকে কতো পছন্দ করে তুই কী সেটা জানিস ?

আমাকে পছন্দ করার দরকার নাই দোস্ত । তুই নিজের সমস্যার সমাধান করে ফেল । ব্রেক আপে চলে যা ।

আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না তানিশা । মা যখন কথা বলে তখন মনে হয় মা’র কথাগুলোই ঠিক । মা বলেছে আমি না-কি ওর সাথে এ্যাডজাস্ট করতে পারবো না । আচ্ছা আমি পারবো কী পারবো না এটা মা কী করে বুঝলো বল তো ?

বাবা-মায়েরা আমাদের চেয়ে একটু বেশি তো বোঝেনই আর আন্টি একদম ঠিকটাই বুঝেছেন ।

কিন্তু আমি তো কোনোভাবেই আদিকে খারাপ ভাবতে পারি না, খারাপ কিছু তো দেখি না ওর মধ্যে । ও কতো কেয়ারিং আমার সব বিষয়ে ।কেমন করে না করবো ওকে ? আমাকে একটু হেল্প কর তানিশা , আমি কী করবো একটু বুদ্ধি দে ।

আমি তো বললামই , তুই ব্রেক আপ করে ফেল । এটাই সবচেয়ে ভালো ডিসিশন । তোকে আমি আগেই বলেছিলাম, এইসব প্রেম ট্রেম করিস না ভাই , তাও যদি নিজেদের লেভেলের হতো । আমার আপুকে নিয়ে বাসায় যে ঝড় গেছিল, আমি তো তখনই তওবা করেছি আর যা-ই করি না কেন এই খারাপ কাজে আমি নাই ।

প্রেম করা খারাপ কাজ ?

আমি জানি না ভালো না খারাপ শুধু জানি এতো যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারবো না । বাবা-মা’র আদরে আছি, কেউ সন্দেহের চোখে তাকায় না , কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না । এই লাইফটাই আমি চাই । এই যে আমরা বন্ধুরা কোথাও মজা করতে গেলে তুই মিস করে যাস ইদানিং । তোর তখন ডেট করতে যাওয়া লাগে । তারপর কী হয়? ফিরে এসে মন খারাপ করে বলিস যে ঝগড়া হয়েছে, কথা কাটাকাটি হয়েছে, তোকে বকা দিয়েছে আরো হাবিজাবি হাবিজাবি । ও তোকে বকা দেয়ার কে? কী করে সহ্য করিস বল তো ! প্লিজ জারা তুই ডিসিশন নিয়ে নে, এটাই বেস্ট হবে তোর জন্য । চল যাই , আমি অপেক্ষা করবো আর তুই যেয়ে ডিসিশন জানিয়ে আসবি । কী পারবি না ? একবার বলে ফেল তারপর দেখিস লাইফটা কত্তো ইজি হয়ে যাবে ।

এমন হুট করে না করবো কেমন করে আর আমি তো ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাই না । ছয় মাস ধরে আছি রিলেশনে ।

হতাশ হয়ে তানিশা বললো –

আমার যা ভালো মনে হলো বললাম এখন তুই কী করবি ঐটা পুরাই তোর ব্যাপার । চল যাই ।

তানিশার গাড়িতে করে ওরা আদিত্যের সাথে দেখা করতে রওনা দিলো ।

আদিত্য এগারোটা বাজার আগেই চলে এসেছিল , বনানী এগারোতে সে অপেক্ষা করছে জারার জন্য । হঠাৎ তার গা ঘেঁষে সাদা রঙের গাড়িটা থামলো । ঘুরে একটা গালি দিতে যেয়েও জারাকে গাড়ির ভেতরে দেখে সে একটু অবাক হলো । এটা আবার কোন গাড়ি ? জারাদের গাড়ি তো ব্লু কালারের ।

তানিশা জারাকে নামিয়ে দেয়ার সময় বলে গেল সে আবার এখন থেকেই তুলে নেবে জারাকে । জারা যেন অবশ্যই আজকেই শেষ করে বিষয়টা ।

তানিশা চলে গেলে জারা এসে আদিত্যর সামনে দাঁড়ালো । আদিত্য একটা রিক্সা ডেকে জারাকে নিয়ে উঠে বসলো । রিক্সা ছুটে চললো কেএফসির দিকে ।

রাস্তায় একটাও কথা বললো না জারা । কেএফসিতে যেয়েও চুপ করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ । এখানে আসার পর তার মনটা আবার আদির জন্য কেমন যেন করছে । তানিশা’র বলা কথাগুলো আর ভাবতে চাচ্ছে না সে । নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে । আদির সাথে সে সত্যিই কী মানিয়ে নিতে পারবে না , তার বাসায় কী মেনে নেবে না আদিকে ? ইস প্যারেন্টসগুলো যে কেন এমন অবুঝ হয় বুঝতে পারে না সে । তাঁদের পছন্দেই কেন তাকে চলতে হবে ? ভাবনায় ছেদ পড়ে আদিত্য খাবার এনে সামলে দাঁড়ালে । খাবারের ট্রে টেবিলে নামিয়ে রেখে আদিত্য জারার হাতে বাকি টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বললো –

কী ব্যাপার জারা , তুমি অনেকক্ষণ ধরে একদম চুপ ? কোনো কারণে মন খারাপ ?

না ।

অবশ্যই মন খারাপ নইলে এতো চুপ হয়ে থাকার মেয়ে তো তুমি না ।

জানো আমার বাসায় খুব প্রবলেম হচ্ছে ।

কী কারণে প্রবলেম ?

আব্বু খুবই কষ্ট পেয়েছেন আমাদের রিলেশনের কথা শুনে ।

বাপ মা এমনই থাকে বুঝতে পেরেছো ? কোনো বাপ-মাকে দেখেছো ছেলেমেয়েদের প্রেমের কথা জানতে পেরে খুশিতে নাচানাচি করতে ?

আমার খুবই খারাপ লাগছে এখন । এমন কিছু হবে আমি ভাবতেই পারিনি ।

ওনারা তোমাকে কিছু বলেছে ? বকা দিয়েছে কিংবা মারামারি ?

মারামারি ! আমার আব্বু আর মা আমাদের কোনোদিনও মারেননি । অকারণে বকাও দেন না কখনো । আব্বুর সাথে আমার খুবই ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক কিন্তু কয়দিন ধরে আব্বু আমার সাথে ঠিক মতো কথাই বলছেন না । আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি ।

আরে এইগুলো কিছু না । বাপ-মায়েরা হলো প্রেমের সবচেয়ে বড় শত্রু । তুমি জানো না এইটা ?

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমার এখন কী করা উচিত ।

তোমার এখন আমার সাথে এই খাবারগুলো শেষ করা উচিত, নাও খাও ।

খেতে ইচ্ছে করছে না একদমই । তুমি খাও ।

এইটা কোনো কথা হলো? তুমি তো একটু বেশিই মন খারাপ করে ফেলছো । আরে বাবা দুনিয়ার যত ছোট বড় প্রেম কাহিনি আছে তার সবগুলোর মধ্যেই এই প্যারেন্টসরাই হলো গিয়ে ভিলেন । কয়দিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো । শুনো তোমার তো আরো বেশি সুবিধা হবে । তুমি তাদের খুব আদরের মেয়ে । বেশিদিন তোমার সাথে রাগ করে থাকতেই পারবে না । শুরুতে সবাই এমন একটু ওভার রিয়েক্ট করে । কয়টা দিন যেতে দাও তারপর দেখবা সব একদম পানির মতো ।

পানির মতো মানে কী ?

মানে কোথাও কোনো প্যাঁচ নাই । দেখো আজেবাজে কথা বলতে গিয়ে খাবারগুলোই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । আমার কিন্তু ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে ।

তুমি খাও প্লিজ, আমার একটুও খিদে নেই ।

আমি একা একা খাবো ! এইটা কেমন কথা ? ট্রাস্ট মি জারা সব ঠিক হয়ে যাবে । তুমি খামোখা মন খারাপ করে আমাদের সুন্দর সময়টা নষ্ট করে দিচ্ছো ।

আমার মনেহয় আবার একটু চিন্তা করা দরকার । আমি আসলে আব্বুকে মোটেও কষ্ট দিতে চাই না ।

কী করতে চাও তুমি ?

আমার মনে হয় আমাদের রিলেশনটা….জারা’র মুখে কথা আটকে যায় এরপর ।

রিলেশনটা কী ,বলো ? তুমি কেন এতো ফালতু টেনশন নিচ্ছো জারা ? যে যা খুশি বলুক জারা, যদি আমরা ঠিক থাকি তাহলে কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না । তোমার আব্বুকে নত হতেই হবে । আর একটা কথা বলে দিচ্ছি আজকে, যদি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো আমি কিন্তু একদম শেষ করে ফেলবো নিজেকে । তোমার জীবনে আমি ছাড়া আর কেউ আসতে পারবে না । জারার পাশে শুধু আদির নাম থাকবে । তোমাকে খুব ভালোবাসি জারা, এই দুনিয়ার সবার চেয়ে বেশি । কথাগুলো শেষ করেই জারা’র ব্যাগ থেকে কলম বের করে হাতে বসিয়ে সজোরে টান দিলো আদিত্য । নিমিষেই জায়গাটা ফুলে উঠে রক্ত বেরিয়ে আসলো । হঠাৎ এমন কান্ড দেখে জারা আঁতকে উঠলো একেবারে । কিছু বলার মতন কথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে । শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠলো । আদিত্য তার হাতটা জারার মুখের সামনে তুলে ধরে বললো –

বুঝতে পারছো কতো ভালোবাসি ? আরো প্রমান চাও ? সব রকম প্রমান দেবো আমি ।

আর্তনাদ করে বলে উঠলো জারা –

তুমি কী পাগল ?

হ্যাঁ আমি পাগল । তোমার জন্য, তোমার প্রেমে পাগল আমি । আমরা ভালোবেসেছি জারা । কোনো অন্যায় কাজ করিনি । তোমাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে চাই না । শোনো তোমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দেই, নেক্সট টাইম তোমার বাসার কেউ এইসব বলতে আসলে তুমি সোজা বলে দিও যে আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে ফেলেছো । তাহলে তো আর কোনো ঝামেলা থাকে না তাই না ?

তারপর কী হবে ?

এভাবে কিছুদিন যাক না । তারপর অন্য কোনো রাস্তা বের করতে হবে । রাজি তাঁদের হতেই হবে । তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি জারা , তুমি কল্পনাও করতে পারবা না কতো বেশি ।

আদিত্যর কথা শুনে জারা আরো বেশি কনফিউজড হয়ে গেল । তাই তো, সে তো এমন কোনো খারাপ কাজ করছে না । মা একটু বেশিই চিন্তা করে ফেলছে তাকে নিয়ে । আদিকে সামনাসামনি দেখলে, কথা বললে মা’র নিশ্চয়ই ভুল ভাঙবে । আব্বুও একসময় নিজের ভুল বুঝতে পারবেন, মেনে নেবেন আদিকে । সে কিছুতেই আদিকে দুঃখ দিতে পারবে না । সে যদি ছেড়ে চলে যায় তাহলে তো আদি মরেই যাবে । যে ছেলেটা তাকে এতো ভালোবাসে, তার জন্য নিজের শরীরকে নিরদ্বিধায় কষ্ট দিতে পারে, তাকে সে কিছুতেই ছেড়ে যাবে না । একটু আগে তানিশা’র সাথে যে কথাগুলো হয়েছিল সেসব বেমালুম ভুলে গেল সে । ইশ সবার কথা শুনে আজ যদি সে সত্যি সত্যি আদির সাথে ব্রেক আপ করে ফেলতো তাহলে কী বাজে একটা ব্যাপার হয়ে যেতো । ভাগ্যিস সে বোকার মতো বলে ফেলেনি কথাগুলো । মনের সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে আদিত্যর হাতটা জড়িয়ে ধরে গল্প শুরু করলো জারা । আদিত্যও মনে মনে নিশ্চিন্ত হলো জারাকে কনভিন্স করতে পেরে ।

জারা বললো –

তানিশা আসলে আমি এখনই চলে যাবো আর তুমি ডাক্তারের কাছে যেয়ে মেডিসিন, ব্যান্ডেজ যা যা করতে হয় সব করবে, ঠিক আছে ?

আরে না এসবের কোনো দরকার নেই । এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে ।

এমনিতে ঠিক হবে মানে ! ইনফেকশন হয়ে যাবে । তুমি এখনই যাবে, প্রমিজ করো আমার কাছে ।

প্রমিজ করতে পারবো না জারা, একটু সমস্যা আছে ।

কী সমস্যা ?

ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক টাকা লাগবে । তুমি তো জানো ই আমি মানিব্যাগটা বাসায় রেখে এসেছি ।

জারা তাড়াতাড়ি ব্যাগ খুলে দু’টো নোট বের আদির হাতে দিয়ে বলেলো –

ওহ, সরি সরি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম । এটাতে কী হবে ?

দুই হাজার টাকা দেখে আদির চোখ চকচক করে উঠলো । বললো –

হ্যাঁ হয়ে যাবে । না থাক তোমার কাছ থেকে টাকা নেয়া ঠিক হবে না জারা । দরকারের সময় তুমি আবার কোথায় টাকা পাবে ?

সেই টেনশন তোমার করতে হবে না । আমার টাকা তো তোমারই টাকা ।

আদিত্য হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে পকেটে রেখে দিলো ।

তানিশা অপেক্ষা করছিল জারা’র জন্য । জারা গাড়িতে উঠতেই সে জিজ্ঞেস করলো –

ঠিকমতো বলতে পেরেছিস তো ? ভেজাল শেষ তো দোস্ত ?

জারাকে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে আবার জিজ্ঞেস করলো –

কী রে এমন করে আছিস কেন ? বেশি মন খারাপ ? ব্রেক আপ হলে প্রথম কয়দিন একটু মন খারাপ থাকেই, তারপর দেখবি ঐ লুইচ্চাটাকে তোর মনেও পড়বে না । কথাটা শুনে কী খুব ঝাড়াঝাড়ি করলো না-কি তোকে ? করলে করুক । একটু তো সহ্য করতেই হবে । সে বড় দান খেলতে চেয়েছিল আর তুই মাঝখান থেকে চাল উল্টে দিলি । থ্যাংক ইউ দোস্ত । এবার দেখবি নিজেকে কতো স্বাধীন মনে হবে । সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে । ঝঞ্জাট বিদায় হয়েছে এই খুশিতে কালকে আমি ট্রিট দেবো গার্লস গ্রুপকে । কী রে কিছু তো বলবি ।

তুই আদির সম্পর্কে খারাপ কথা বলিস না তানিশা । আমার খুব কষ্ট হয় ।

মানে কী ! তুই ওকে বলিসনি ? শেষ করে ফেলিসনি সবকিছু ?

আদিত্য খুব ভালো ছেলে তানিশা । আমি ওর জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে পারবো কিন্তু ওকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না ।

জারা’র দিকে কতক্ষণ চেয়ে থেকে তানিশা বললো –

তুই জাহান্নামে যা ।

প্রয়োজন হলে তাই যাবো । এরপর তোর যদি আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখতে ইচ্ছে করে রাখবি, না রাখতে চাইলে সেটাও তোর ইচ্ছা ।

জারা ! তুই আমাদের এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপ এমন একটা ফালতু ছেলের কারণে শেষ করে দিবি ?

উহু, আদিত্যকে নিয়ে আর একটাও খারাপ কথা না ।

ঠিক আছে তোর আদিত্যকে নিয়ে আমি আর কখনোই কোনো কথা বলবো না । আশা করি তুইও কিছু বলবি না আমাকে । তোর প্রেমের আগে আমাদের সম্পর্ক যেমন ছিল তেমনই থাকবে । আরেকটা কথা জারা, যদি কোনোদিন এই ছেলেকে নিয়ে কোনো বিপদে পড়িস, সেদিন কিন্তু আমার কাছে হেল্প চাইতে আসবি না ।

দুই বন্ধুর মাঝে যেন অদৃশ্য একটা দেয়াল দাঁড়িয়ে গেল হঠাৎ করে । যাওয়ার সময় যেমন উচ্ছলতা ছিলো দু’জনার মাঝে ,ফেরার সময় সেটা কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল ।………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here