এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ২৮

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
২৮.
__________________________________
— “প্রেমে পড়লি কিভাবে??
নিশানের এমন প্রশ্নে নিভ্র বিভ্রান্ত হয়।সে ভাবে তার প্রেমে পড়ার ব্যাপার নিশান ধরে ফেললো কিভাবে??কিছুক্ষণ চুপ থেকে কয়েক সেকেন্ড ভাবে।তারপর নিশানের দিকে তাকায়।নিশান আগ্রহের সাথে তাকিয়ে আছে।নিভ্র বলল……..
—- “হুট কেরেই পড়া।”
নিশানের মুখ দেখে এখন মনে হচ্ছে তার নিভ্রর মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।বিরক্তির সাথে সে জিজ্ঞাসা করে…..
—- “প্রেমে মানুষ বলে কয়ে পড়ে না।হুট করেই পরে। আমিও পড়েছি। টানা ৫বছর প্রেম করেছি তাই অভিজ্ঞতা বেশি বুঝলি।এবার শুরু থেকে বল।আমরা প্রেমে পড়া আর নিভ্রনীল প্রেমে পড়া ব্যাপারটা এক না।তাই নিশ্চুই ইন্টেরেস্টিং কিছু আছে।
.
নিভ্র চোখ ছোট করে।মুখে গম্ভীর ভাব টেনে একটু সন্দেহের চোখে নিশারের দিকে তাকিয়ে বলল….
—- “৫বছর প্রেম মানে??তুই ৫বছর আমার বোনের সাথে প্রেম করলি আর আমরা জানি না??তাহলে এটাই ছিলো তোর আমাদের বাসায় আশার মূল কারন??

নিশান এবার জিব কামড়ায়।মিইয়ে যাওয়া সুরে বলে….
— “দেখ ভাই বিয়ে ঠিক হয়েগেছে। এখন আর পিছনের কথা টানছিস কা??কয়েক দিন পরে মামা হবি।মামা ভাতিজাকে এক সাথে না হয় আমার লাভ স্টর্রি শুনাবো।তোরটা বল না।আমার পিছনে পড়ার টাইম আর নেই।ভুলে গেলি নাকি প্রথম যেদিন যানতে পারলি কয়টা ঘুষি দিয়েছিলি??তুই তো দিলি দিলি সাথে অভ্র ভাইয়াও।ভেবেছিলাম তোকে বোনের প্রেমে ফেলে তা উশুল করে নিবো। তা আর হল কই তুইও প্রেমে পড়লি সাথে আমার হাদারাম বোনও।

নিশানের এমন খোঁচা মারা কথা শুনে নিতা পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠে…..
—- “ভাই তুই আবার শুরু করলি??
নিভ্র মাথা কাত করে ঘুড়িয়ে আস্তে কথা বলতে ইশারা করে।সবাই মুচকি হাঁসে।হালকা কেশে উঠে।কত ক্যায়ার??ব্যাপারটায় সবাই মুগ্ধ। পিছনের দিকে বয়স্ক কেউ বসে নি।তারা প্রায় নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। রাফা জানালার পাশে বসেছে।বাতাসে তার ঘুম পায় খুব তাই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশানের কাধে।নিশান নিভ্রকে হাত দিয়ে গুতা দেয়।নিভ্র একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়।নিশান উৎসুক জনতার মত প্রশ্ন করে……
—- “কিরে বল না??”
নিশানের সামনের সিটে আরিফ আর অভ্র বসেছে।আরিফ পিছনে ঘুড়ে হাটু ভাঁজে ভর দিয়ে সিটের উপড় দাঁড়ায়। নিশানের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে বলে…..
—- “বারি খেয়ে!!”
নিশান ভারী অবাক হয়।চোখ গোল করে আরিফকে প্রশ্ন করে……
—— “বারি খেয়ে মানে কি??নিভ্রনীলকে কে বারি দিবে??এত সহজ নাকি?? যে বললেই হয়ে যাবে??”

আরিফ হালকা শব্দ করে হাঁসে। নিভ্র চোখ রাঙ্গিয়ে চুপ করতে বলে।কিন্তু আরিফের ভাব খানা এমন যে সে এখন নিভ্রকে নিজের স্যার মানে না।নিভ্রকে পাত্তাই দিলো না।এমন একটা ভাব নিয়ে নিশানকে বলে…..
—- “এত অবাক হয়ে লাভ নেই ভাই।এটাই সত্যি। কেউ নিভ্রনীলকে মারতে না পরলে কি হয়েছে সাফারানী পেরেছে।আর রানীমনির এমন ভয়ংকর কাজই ভয়ংকর নিভ্রনীলকে প্রেমে পড়তে বাদ্ধ করেছে।ভাই শুনলে অবাক হবে হকস্টিক দিয়ে বারি দিয়েছে সাফা।তাও কড়া সিকিউরেটির ভিড় ঠেলে।এতে সাফার একার দোষ না নিভ্রনীল ও আগে মেরেছে।তাই নিজেও খেয়েছে।কিন্তু স্যার!! বারি খেয়ে প্রেমে পড়া যায় তাহলে তো মানুষ গুন্ডা পান্ডাদের প্রেমে হাবুডুবু খেতো।তাই না?? তা কেনো খায় না???”
আরিফ আগ্রহের সাথে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।অভ্রও এবার ঘুড়ে এসে বলল…..
—- “তার মানে তুই যে সাত দিন হসপিটালে ছিলি এর সম্পূর্ন্য ক্রেডিট সাফার???”
নিভ্র পড়েছে মহা বিপদে।সাফাকে সে বলেছে এই কথা গুলো কাউকে বলবে না।কিন্তু এই আরিফ সব বলে দিয়েছে।বাসে বসা আশেপাশের সব চোখ নিভ্রর দিকে উৎসুক জনতার মত তাকিয়ে আছে। যেনো নিভ্র ভাসন দিবে আর তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে।নিভ্র ঘাবড়ায়!!সাফার দিকে একবার তাকায়।সাফা নিভ্রর বুকে গভীর ঘুমে মগ্ন।নিভ্র আরিফের দিকে তাকিয়ে ফিঁসফিসিয়ে বলে……..
—- “তোমাকে সাফা ক্যাবলাকান্ত ডাকে একদম ঠিক একটা নাম দিয়েছে।এবার সামনে ঘুড়ে বসো।আর ফাউল কথা বাদ দেও।”
আরিফের মন ক্ষুন্ন হয়।দুঃখে তার মুখ মলিন হয়ে আসে।শেষে কিনা তার স্যারও তাকে এভাবে বললো??আরিফ তবুও দমেনি।নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে……
—– “স্যার আপনার মাথা তো প্রেম নামক বস্তুর ব্যাপারে মোটা তবে আপনি কিভাবে প্রেমের ব্যাপারটা বুঝলেন???”
নিভ্র যেনো আকাশ থেকে পড়লো।এই আরিফ তাকে ভয় পেয়ে কাঁপাকাঁপি করতো এখন তাকেই এসব প্রশ্ন করছে।আরিফকে চোখ রাঙ্গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশান অভ্র দুজনেই তাকে চোখ রাঙিয়ে দেয়।নিভ্র পড়েছে মুশকিলে।সে কিভাবে বলবে সে প্রেম নামক বিষয়ের সাথে নতুন পরিচিত।নিভ্র দীর্ঘশ্বাস নেয়।অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। তারপর সাফার দিকে একবার তাকিয়ে হেঁসে বলে…….
—– “প্রেম বলে কয়ে আসে না এটা তুই মাত্রই বললি নিশান তবে প্রশ্ন করার মানে কি??আর যাকে আমার জন্য তৈরি করা হয়েছে মানে যার সাথে ভাগ্য লিখা হয়েছে তাকে দেখলেই আমার মতের পরিবর্তন হবে এটা অভ্র বলেছিলো।তাহলে আর কি দুজনের কথাই মিলে গেছে।আর তুমি আরিফ।মনে মনে কতবার দোয়া করতে নিভ্রনীলকে নিভাতে যাতে কেউ আসে।তোমার এত কষ্টের দোয়া আল্লাহ ফিড়াতে পারেনি তাই পাঠিয়ে দিয়েছে।সব মিলিয়ে আমার জীবনকে এক রোদেলা দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে কেউ ভিঁজিয়ে দিয়েছে।আমার মনের অগচরেই হয়েছে সবটা তাই বেশি কিছু জানি না শুধু ভিঁজেছি জানি।”

সবাই এবার চুপ করে গেলো।মুগ্ধ হয়ে মনোযোগী ভাব নিয়ে সবাই শুনলো।নিভ্রর মুখে এতটা অনুভুতি মিশ্রীত কথা কেউ আশা করে নি।ভাবতে পারছে না কেউ, নিভ্রর মত তিতা করল্লার মত ভাষী মানুষও প্রেমে পড়ে এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে।সবাই একটু অবাক তাই নিজেদের মত ভাবনায় ব্যস্ত।নিভ্র সাফার দিকে তাকায়।সাফার চুলগুলো প্রচণ্ড খারাপ।কিছুক্ষণ পর পর তার মুখে এসে পরে।ব্যাপারটা নিভ্রর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।সে সরিয়ে দিচ্ছে বার বার।নিভ্র থেমে কিছুক্ষণ সাফার মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকে।রাত হয়ে এসেছে।রাস্তার ধারের লাইট গুলোর আলোতে আবছা আবছা সাফার চেহারা দেখা যাচ্ছে। নিভ্রর চোখ মনে হয় এতেই তৃপ্ত। তার কাছে সাফা থাকলেই হল।নিভ্রর নিজের অজানতেই সাফার কোমড় জড়িয়ে তাকে নিজের কাছে আনে।মনে মনে ভাবে দাদাজানের দেওয়া ভালোবাসার ব্যাখা।তাকে হাজার বার ধন্যবাদ দেওয়া হয়েগেছে মনে মনে।ভাগ্যিস সেদিন তাকে দাদাজান ওভাবে বুঝিয়ে ছিল।তা না হলে সত্যিই সে এই ব্যাপারে মাথা মোটা।নিভ্রর হুট করেই নিজেকে প্রেমিক প্রেমিক লাগতে শুরু করে।মনে মনে ঠিক করে সিলেটের প্রকৃতির ভিড়েই সাফাকে মনের কথা বলবে।একটা ছক আঁকে নিভ্র।সিলেট গিয়েই একটা প্ল্যানিং কবে।নিভ্র সাফার মুখের দিকে আর একবার তাকিয়ে মনে মনে ভাবে কেউ একজন বলেছে মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় ঘুমের মাঝে।ঘুমন্ত যে ব্যক্তি অধিক সুন্দর সেই প্রকৃত সুন্দর। কথাটা সত্য।নিভ্র সাফার মাথা নিজের এক হাতে চেঁপে বুকে ধরে।আর এক হাতে কোমড় জড়িয়ে সিটের পিছনে হেলান দিয়ে চোখবুজে।মনে মনে ভালোবাসার প্রয়াস করে।প্রেম থেকে তাকে এখন ভালোবাসায় নাম লিখাতে হবে।প্রেমিক থেকে হতে হবে প্রিয়তম।প্রকাশের মাধ্যমে ভালোবাসা হয় তা না হলে তা প্রেম হিসেবেই থাকে।
.
.
দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পর সাফার ঘুম ভাঙ্গে।চোখ মেলার আগে সে নড়তে চায়।কিন্তু পারছে না!!মনে হচ্ছে সে বন্দী।তার মনে হলো কেউ অতি যত্নে তাকে বন্দী করে রেখেছে।সাফা ভালো করে চোখ মেলতে চাচ্ছে। কয়েক বার পলক ফেলে ভালো ভাবে তাকায়।চোখ দিয়ে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে।দু’টি হাত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিজের মাঝে বন্দী করে রেখেছে তাকে।মাথায় শক্ত কিছু।তার মানে হাতের মালিক নিজের বুকে তাকে জড়িয়ে রেখেছে।সাফা ভড়কে যায়।অবাক চাহনি দিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উপড়ে তাকিয়ে এই বুকের একমাত্র মালিকে দেখতে চায় সে।নিভ্র!!সাফা বিস্ময়ের সাথে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। নিভ্র তাকে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ভাবতে পারছে না সে।নিভ্র সিটের পিছনে মাথা রেখে ঘুমচ্ছে। তার সামনের লম্বাটে চুল তার কপাল ছুঁয়ে একটা চোখের উপড় পড়েছে।দুইজোড়া লালঠোঁট হালকা আলাদা হয়ে আছে।আর নিজের শরীর দিয়ে সাফাকে আঁকড়ে ধরে আছে পরম আবেশে।গাড়ি থেমে আছে। আশে-পাশের কেউ নেই।বাহিরে হোটেলের বাতি চলছে।যা দিয়ে নিভ্রর মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাফা হকচকিয়ে উঠে।মুহূর্তেই চোখ ভালো করে খুলে মাথা আরো উঁচিয়ে নিভ্রকে দেখে সে।নিভ্রর এক হাত তার কোমড়ে বুঝতে পেরেই তার পুরো শরীর বরফের মত জমে গেছে।শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে ভয়ংকর ভাবে।সাফার সারা শরীর কাপঁনি দেয়।হৃৎপিন্ড নামক যন্ত্র দ্রুত থেকে দ্রুত গতিতে চলে।নিঃশ্বাস আঁটকে আশে।দম নিতে কষ্ট হয়।মাঝে মাঝে শ্বাস নালী দ্রুত চলে।সে ভাবতে পারছে না নিভ্র তাকে এভাবে জড়িয়ে রাখতে পারে।আর সবাই কই গেলো।সাফার নিজেকে কেমন পাগল মনে হচ্ছে। সব মনে হয় স্বপ্নের মত।হয় তো এখনই মিউজিক বেজে উঠবে সিনেমার মত।সাফা নিজেকে নিভ্রর এত কাছে দেখে শরীরের কম্পোনের গতি বেড়েই চলেছে তার।হাত পা কাপঁছে। হৃৎপিন্ডের তালে মনে হয় শরীরও শব্দ করে থরথর করে কাপঁছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।সাফার ভারী নিঃশ্বাসের তাপে নিভ্র হকচিকে উঠে।উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে……
—- “কি হয়েছে??খারাপ লাগছে??নাকি ঠান্ডা লাগছে??বোমি বোমি লাগছে??

নিভ্রর হাত আলগা হয়ে আসতেই সাফা নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে।নিভ্র ব্যাপারটা এবার বুঝতে পেরেছে।হুট করেই ঘুম ভাঙ্গায় সে নার্ভাস হয়ে পড়েছে।তাই এমন বিহেভ করেছে।সাফার প্রচণ্ড লজ্জা লাগছে।এভাবে একটা ছেলের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঘুমানো ব্যাপারটা এদেশের মেয়ের কাছে আলাদা ব্যাপার।নিভ্র যতই তার পরিচিত খুব কাছের কেউ হক তবুও সে ছেলে।সাফা অসস্থিতে ভুগে।নিভ্র বুঝতে পারে।তাই বলে…………
—— “সবাই খেতে গেছে।তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই যেতে পারি নি।তুমি কি এখন যাবে??”
সাফা চট করে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র তার জন্য যায়নি কথাটা ভেবে তার মনে আলাদা অনুভুতিরা বাসা বাধে।কত ক্যায়ারি!!কত যত্নের সাথে তাকে জড়িয়ে ছিল!!আর কত আবেশে ছিল সে!!মনে হচ্ছিলো সে নিজের রুমে সম্পূর্ন নিরাপদে ঘুমিয়ে ছিল।কত নিরাপদ সে নিভ্রর বুকে।সাফাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র বলে……
—- “চলো খেতে??”
সাফা নিজেকে সামলায়।একটু থামে।থেমে থেমে বলে…..
—–“না এখন খাবো না।আমি গাড়িতে উঠলে তেমন কিছু খাই না।আপনি যেতে পারেন চাইলে???”
নিভ্র চট করে বলে উঠে……
—– “পাগল নাকি??তোমাকে একা রেখে যাবো কেনো??আমিও যাবো না।অভ্র খাবার নিয়ে আসবে তখন খেয়ে নিবো দুজনে একসাথে।নেও পানি খাও।

নিভ্র নিজের পিছনের ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দেয় সাফার দিকে।সাফা নতজানু হয়ে বোতল হাতে নেয়।ঢাকনা খুলতে দেরী ডগডগ করে পানির বোতল শেষ করতে দেরী হল না।সাফা এক নিমিষে পানি শেষ করে ফেলে।নিভ্র মুচকি হাঁসে। বুঝতে পারে সাফা ভয় পেয়েছে।দিনকাল এমন হয়েছে নিজের আপন মানুষকেও মেয়েরা বিশ্বাস করতে পারেনা।মেয়েদের জন্য পৃথিবীময় অনিরাপত্তা বিরাজ করে।নিভ্রর ভালো লাগলো সাফার ভয় পাওয়া।এটাই উঁচিত ছিল।উঁচিত কিছু না হলেই অস্বাভাবিক মনে হয়।নিভ্র সাফাকে সহজ করতে চায়।তাই সিটের সাথে হেলে শুয়ে নিজের হাত পিছনে দিয়ে বলে…….
—– “এত ঘুম কিভাবে কেউ দিতে পারে?? আল্লাহ??আমার জীবনের ভয়ংকর ঘুমী মানুষ তুমি।”
সাফার ভয় কাঁটে।ঢোক গিলে কয়েকটা।পরিবেশ হালকা মনে হয়।ভারী ভাব নেই।সাফা নিভ্রর মুখপানে তাকিয়ে জবাবে বলে…..
—— “এভাবে বলেন কেনো??কতই আর ঘুমিয়েছি??মাত্র এক দুই ঘন্টা!!”
নিভ্র অবাক হওয়ার ভান করে।সাফার দিকে মুখ করে বলল……..
—– “এক দুই ঘন্টা!! মহারাণী আপনি টানা পাঁচ ঘন্টা মরার মত ঘুমিয়ে ছিলেন??আমি ভাবতে পারিনি এতটাও কেউ ঘুমতে পারে??আমার এই ছোট লাইফে এটা বড় অভিজ্ঞতা।”
—– “তো কি হয়েছে আমি কি ২৪ ঘন্টা ঘুমিয়েছি নাকি??আর বাসে উঠলে আমার ঘুম পায় তা না হলে বোমি হয়।তাই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দি সময়।মাত্র পাঁচ ঘন্টা ঘুম দেখে আপনার অভিজ্ঞাতা হয়ে গেছে??
নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায় সাফার দিকে।এই নারী নিঃসন্দেহে ভয়ংকর নারী।মরার মত ঘুমিয়ে বলে কি না মাত্র।নিভ্র হা করা মুখে বলল…….
—– “এটা মাত্র??তোমার তুলনা নেই।সব তুলনার উর্ধ্বে তুমি।
সাফা শব্দ করে হাঁসে। নিভ্রর বলার ভঙি দেখে তার হাসি পেয়ে যায়।নিভ্র তাকিয়ে দেখে সে হাসি।হালকা আলোই সাফাকে অন্ধকারে জ্যোৎস্নার মত লাগছে।সাফা চোখ সরিয়ে নেয়।জানালার বাহিরে মুখ করে আকাশ দেখে।মেঘলা আকাশ বৃষ্টি হবে হয় তো।সাফা ভাবতে ভাবতেই বড় বড় ফোটা পড়া শুরু করে।ঝুম লেগে বৃষ্টি শুরু হয়।নিভ্র সাফার দিকে ঝুঁকে জানালা বন্ধ করতে চায়।সাফা ইশারা করে। তার বৃষ্টি ভালো লাগছে।সাফা জানালা দিয়ে হাত বাহিরে করে।সাফার হাত ভর্তি বৃষ্টির পানি। হাত নাচিয়ে পানি একবার ফেলে তো একবার জমা করে।নিভ্র তাকিয়ে তাকিয়ে সে দৃশ্য দেখে আর মনে মনে আউড়ায়….. “বাচ্চা সাফারানী”
.
.
খাওয়াদাওয়ার পালা চুকিয়ে ভিঁজে সবাই বাসে এসে হাজির।সাফা নিভ্রর জন্য খাবার এনেছে সবাই কিন্তু সাফা!!সে তো আবার ঘুম।গাড়ি ছাড়ে কিছুক্ষণের মাঝেই।নিভ্র আর খেলো না।সাথে সে জানে অভ্রও খাবে না।নিভ্র অভ্র একসাথে আছে এমন অবস্থায় কেউ একজন না খেলে অপরজনও খায় না।সাফা ঘুমের মাঝেই নিভ্রর বুকে এসে পড়েছে।নিভ্র হাসলো কিছুক্ষণ। সাফা ঘুমনের আগে বলেছে নিভ্র যাতে তাকে না ধরে।নিভ্রও বলেছে ঠিক আছে।কিন্তু সাফা নিজে থেকে তার বুকে এসেছে তাই কিছু করার নেই।বৃষ্টি পড়ছে এখনো ঝুম ধরে।নিভ্র নিজের ব্লেজার সাফার গায়ে জড়িয়ে দেয় ভালো করে।যাতে ঠান্ডা না লাগে।তারপর আগের মতই জড়িয়ে নেয় সাফাকে।নিভ্র সিটে মাথা রেখে চোখ সাফার দিকে দিয়ে তাকিয়ে থাকে বহু সময়।যেনো এই চাওয়ারই শেষ নেই।

_______________________________
সিলেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ শহর।সৌন্দর্যে মন্ডিত প্রকৃতি যেনো মানুষকে প্রতি নিয়তই মুগ্ধ করে।পাগল করা প্রকৃতির প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না।সবুজ চা বাগান,পাহাড়,নদী,দিগন্তজুড়া সবুজ মাঠ,বৃক্ষ, ঝর্না,জলাশয়, টিলা,অপরূপ সুন্দর নীলাভ আকাশ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে যাওয়া শহর এই সিলেট।ভ্রমন পিপাসু মানুষের প্রানের প্রিয় একটি জায়গা সিলেট শহর।প্রকৃতি জিনিসটাকে আল্লাহ এত সুন্দর করে তৈরি করেছে যে মানুষ চাইলেও মুখ ফিড়িয়ে নিতে পারে না।পৃথিবীর খাঁজে খাঁজে তাঁর সৃষ্টির অপরূপ মোহনিয় মায়ায় মানুষ নামের প্রানী জড়িয়ে যাবে স্বাভাবিক ব্যাপার।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেনো মানুষকে প্রতি নিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে।তাদের দেখে শিখতে।কতটা সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি তারা তবুও তাদের মাঝে অহংকার,হিংসা নেই কিছু পাওয়ার অভিমান।না আছে তাদের চাহিদা।তারা শুধু উদারতায় বিশ্বাসী।প্রান খুলে দিতেই ভালোবাসে।দেওয়ার মাঝে প্রকৃত সুখ খুজে নেয় তারা।মানুষকে নিজেদের সৌন্দর্য দেখিয়ে তারা প্রতিনিয়ত শিক্ষা দিতে চায় কিসের এত অহংকার কিসের এত গৌরব তোমাদের মাঝে।দেখো আমাদের।প্রকৃতি থেকে শিখতেই ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে।
.
গাড়ির ঝাঁকনিতে সাফার ঘুম ভাঙে।পুনরায় নিজেকে নিভ্রর বাহু বন্দী দেখে সাফা চট করে উঠে বসে।নিভ্রর চোখ কিছুক্ষণ আগেই লেগেছে।সাফা এভাবে উঠাতে সে একটু বিস্মিত হয়।সাফার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সাফা নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছোট করে বলে………
—– “সরি আবার আপনার উপর মরার মত পরে ঘুমানোর জন্য।”
নিভ্র মুচকি হেঁসে হাই তুলে।সাফা জানালা দিয়ে মুখ বের করে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নেয়।কেমন যেনো মাতাল করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঘ্রাণ তার নাকে আসছে।ঢাকার ধোয়াঁ, বিষাক্ত বাতাস,বাজে গন্ধের থেকে তারা বহু দূরে প্রকৃতির মুঠোয় বন্দী এখন।সাফা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে………..
—— “আর কত সময় লাগবে??”
—– “বেশি না অল্প।চলে এসেছে প্রায়।আর একটু গেলেই মেইন শহর।”
——“মেইন শহরেই আপনাদের বাড়ি??”
—–“হুম”
——“তাহলে দাদাজান বললেন যে গ্রামের বাড়িতে যাবে??এটা তো শহর??
নিভ্র হাঁসে। সামনে আশা চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে সবুজ চোখ দিয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে মৃদুল আওয়াজে বলল……….
——“সহজ ভাষায় বলতে ওটাই।দাদার বাড়ি আগে গ্রামে ছিল।কিন্তু পড়ে দাদা এদিকে জমি কিনে চলে এসেছে।বিশাল এরিয়া নিয়ে বাড়ি করেছে।তারপর থেকে এখানেই সবাই থাকতো।ঢাকা যাওয়ার পর থেকে এটাকে গ্রামের বাড়িই বলা হয়।”
—-“ওও”
সাফা আবার জানালার দিকে তাকায়।অন্ধকার হওয়ায় কিছু দেখতে পারছে না।গাড়ি থামে এক বিশাল বড় বাড়ির সামনে।সবাই নামে সাফাও।সাফা অবাক হয় এটা ভেবে এরা বডিগার্ডস ছাড়া কোথাও যায় না কেনো??এদের সাথে ঘুড়তে গেলেও এই দানোবের মত লোকগুলোকে দেখতে হবে।ভয়ংকর লাগে তার এদেরকে।সবাই কালো জামা পড়ে।কেমন যেনো রোবটের মত।সাফার গায়ে নিভ্রর ব্লেজার।সাফা খুলে দিতে চায় নিভ্র নিষেধ করে।বাহিরে ঠান্ডা পরছে।বিশাল পিতলের দরজা খুলে দেওয়া হল।সাফা রাফার সাথে কথা বলছে।বাড়ির বাহিরে ভিতরে সবই সুন্দর। সাফা দুই কদম যেতে না যেতেই..ঠাসসসসস্ শব্দে সবাই স্তব্ধ। সাফার মুহূর্তেই তার ডান হাত নিজের ডান গালে চলে গেছে।আকর্ষীক এমন ঘটনায় সাফা বাকরুদ্দ হয়ে গালে হাত দিয়ে সামনে তাকায়………
.
.
#চলবে_______________________🍁

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here