এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ২৫

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
২৫.
_____________________________________
সাফা হতবাক হয়ে বসে বসে ভাবছে লোকটার হলোটা কি।নিভ্র সাফার এমন চিন্তিত মুখ দেখে মিটমিটিয়ে হেসে উঠে।সাফা নিভ্রর এমন হাঁসিতে ভ্রুকুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ করেই সাফার চেনা নিভ্রকে অচেনা লাগছে।নিভ্রর এমন রূপের সাথে সে আগে পরিচিত হয়নি।তাই এখন সে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে এবার বলে………
—-“নামজ পড়বে মনে হয়???”

সাফা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝায়।নিভ্র সাফার উত্তর পেয়ে সাফাকে অবাক হওয়ার আর এক ধাপ উপরে নিয়ে নিজের কোলে তুলে নেয়।সাফার যেনো জ্ঞান হারাবে হারাবে ভাব।সাফার হঠাৎ করেই হিঁচকি শুরু হয়।সারা শরীর ঝন ঝন করে কেঁপে উঠে। নিভ্রর গেঞ্জির কলার চেঁপে ধরে সাফা চোখবুজে হিঁচকি দিয়ে যাচ্ছে। নিভ্র ওয়াসরুমের দিকে যেতে চেয়েও যেতে পারলো না। সাফার হঠাৎ করেই হিঁচকি উঠার কারন তার জানা নেই।ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে সে কিছুক্ষণ সাফার খিঁচে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর সাফাকে সোফায় বসিয়ে নিভ্র জগ থেকে পানি গ্লাসে ডেলে সাফার সামনে ধরে।সাফা কাপাঁ হাতে গ্লাস নিতে গিয়েও পাড়লো না।নিভ্র গ্লাস মুখে এগিয়ে দিয়ে সাফাকে পানি খেতে ইশারা করে।সাফা চরম অবাক।নিভ্রর এত ক্যায়ারি ভাব যেনো তার উপড়ই ভারি হচ্ছে। সাফা বিস্মেয়ে হতবাক হয়ে নিভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।এই সবুজ চোখে কি যেনো আলাদা মনে হচ্ছে যা এতদিন সে দেখেনি।তবে কি হতে পারে।সাফা তাকিয়ে থাকা অবস্থায় পানি না খেয়ে হিঁচকি দিতে দিতে নিভ্রকে উদ্বেগের সাথে প্রশ্ন করে………..

—-“আপনি ঠিক আছেন তো??”

নিভ্র সাফার এমন প্রশ্নে এবার বিরক্ত। মনে মনে ভাবে তার কি হয়েছে মানে কি???প্রেমেই তো পড়েছে।পাগল তো হয় নি??এই মেয়ে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কিভাবে করতে পারে??সবকিছুতে সাফার কৌতুহল বেশি।নিভ্র বিরক্তর মাত্রা বাড়িয়ে সাফার মুখের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে জবাবে বলে………..
—-“তোমার কি মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে গেছি??”
সাফা বেক্কেল বনে গেছে।দ্রুত সে বলে উঠে……
—-“আরে না না এমন মনে হবে কেনো??আমি কি এমনটা মনে করতে পারি??না তো।আসলে আপনি সকাল থেকে কেমন কেমন বিহেভ করছেন তো তাই মনে হচ্ছে আপনি অসুস্থ। তাই এমনটা বলেছি।”

নিভ্র সাফার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেয়েটা মুহূর্তেই নিজের মুখে ইনোসেন্ট ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারে।তখন সাফাকে মারাত্মক লাগে।নিভ্র মনে মনে আউড়ায় আমি মারাত্মক ভাবে এই ইনোসেন্ট ভাবের কবলে আঁটকে গেছি।মারাত্মক তার প্রহার।যা ঘায়েল করছে আমাকে।নিভ্র গ্লাস টেবিলে রেখে সাফার ডান হাত নিজের হাতের ভাঁজে নেয়।সাফা চমকে তাকায়।হিঁচকির মাত্রা বারে।ভয়াত্নক চোখে তাকায় নিভ্রর দিকে।সাফার এমন বড় বড় চোখে তাকানো দেখে নিভ্র হাঁসে। সাফা আরো বিস্মত।নিভ্র সাফার হাত নিজের কপালে ছোঁয়ায়। সাফার সম্পূর্ন কিশোরী শরীর কেঁপে উঠে।কলিজায় শিরশিরে অনুভুতি হয়।নিভ্রর কপাল ঠান্ডা। সাফা হাঁসফাঁস করে।নিভ্র হাত নামিয়ে বলল……….
—-“দেখলে তো জ্বর নেই।তার মানে আমি সুস্থ।তোমার মত কথায় কথায় আমি চিৎপটাং হয়ে যাই না।আমি সাহসী পুুরুষ ভিতূ সাফা না।যে কথায় কথায় অসুস্থ হয়ে যাবো।”

সাফার রাগ হয়।রাগি চোখে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে সে…………
—-“আমি ভিতূ???আমি চিৎপটাং হয়ে যাই??”
—-“তা নয় তো কি???”
—-“দেখেন আমার মনে হয় আপনি পাগল হয়ে গেছেন আর এখন আমাকেও তা মনে করছেন??আমি মোটেও ভিতূ না। ভিতূ হবে আপনার বউ।”

নিভ্র হাসলো।জবাবে বলল…….
—-“আমি কি একবারো বলেছি আমার বউ ভিতূ হবে না।অবশ্যই আমার বউ ভিতূ।”
সাফা এবার দমে যায়।নিভ্র আবার হেঁসে বলে……
—–“দেখলে পানি খাওয়া লাগলো না।তার আগেই তোমার হিঁচকি গায়েব।”
সাফার হুশ হয়।নিজের গলায়, ঠোঁটে হাত দেয় সে।তারপর ভাবে সত্যিই তো তার হিঁচকি গায়েব।যেখানে পানি খেলেও ভালো হয়ে যায়।সাফা হেঁসে ফেলে।নিভ্র তাকিয়ে দেখে সে হাসি।সাফাকে আবার নিজের কোলে তুলে নেয়।সাফা ভাবে তার তো পায়ে না হাতে ব্যাথা তাহলে তাকে কোলে তুলে নেওয়ার মানে কি??সাফার নাকে নিভ্রর গায়ের মোহনীয় ঘ্রাণ বারি খায়।সাফার কাছে সে ঘ্রাণে নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে।নিজের অজান্তেই নিভ্রর বুকে মাথা রাখে।নিভ্র থামে।ভয়ঙ্কর কম্পোনের জন্ম হচ্ছে তার বুকে।ধুকপুকানিটা হঠাৎ করেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।ভায়াবহ শব্দ করছে বুক।সাফা সে শব্দ শুনে।তার নিজের বুকের শব্দও প্রহর করে দ্রুত গতিতে বারে।নিভ্র দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ওয়াসরুমে সাফাকে নামিয়ে দেয়।সাফার হুশ ফিরে।নিভ্রর বুকে এভাবে আলিঙ্গন করে থাকাটা তার কাছে লজ্জার মনে হচ্ছে। লজ্জায় সাফার মাথা নুয়ে আসে।নিজেকে নিজে মনে মনে বলে…….
—-“ছি..সাফা তোর কি লজ্জা নাই।এভাবে উনার বুকে জাপ্টে পরার মানে কি??না জনি উনি কি ভেবেছে।ছি…”
নিভ্রর মনে শীতলতা বিরাজ করছে।সাফা লজ্জায় লাল হয়ে ওয়াসরুমের দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে দেয়।হাতে ব্যাথা হয় তীব্র। তার চেয়ে তীব্র বুকের ব্যাথা।সাফা দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়ায়।নিভ্রও মুচকি হেসে বাহির থেকে ঠেস দিয়ে বুকে হাত দিয়ে ভাবে।ভালোবাসা আসলেই ভয়ঙ্কর জিনিস।নিউ জেনারেশনের চাইতে ওল্ড জেনারেশন এটা বেশি ভালো যানে।যেমন তার দাদা কাল রাতে কত সুন্দর করে বর্ননা দিয়েছে।তারা আসলেই সত্যি কারের ভালোবাসার সন্ধ্যানে প্রেমে পড়ে ছিলো।দেহের সন্ধ্যানে নয়।সাফা দরজায় ঠেস দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।দুজন দুজনের পিঠের সাথে লেগে আছে।দূরত্ব শুধু একটা দরজার দেয়াল।সাফা নিজেকে আয়নায় দেখে।লজ্জায় তার গাল লাল হয়ে আছে।হাত ভর্তি পানি নিতে হাতটা কাঁপে খুব।ব্যাথায় চোখে পানি আশে। কষ্টের সাথে সে ওযু করে হাতের ব্যান্ডেজ ভিঁজিয়ে ফেলে সম্পূর্ন।সাফা দরজা খুলে বাহিরে এসে নিভ্রকে পেলো না।বিছানায় তোয়ালে রাখা।হয় তো রেখে চলে গেছে।নিচে জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়েছে।সাফার খুশি লাগে এত সুন্দর করে জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়েছে দেখে।সাফা নামজ পড়ে। ব্যাথায় তার হাত থেকে রক্তক্ষরণ হয়।মুনাজাত করতে গিয়ে হাত খুব করে কাঁপে।সাফার হাত পড়ে যাবে এমন সময় নিভ্র রুমে আসে। সে ভেবেছে নামজ পড়া হয়তো শেষ।সাফার হাত পরে যাচ্ছে বার বার।সাফার ব্যাথা হয় খুব।নিভ্র চোখবুজে সাফার দু’হাতের মাঝে নিচে হাত দেয়।সাফা মাথা ঘুড়িয়ে তাকায়।নিভ্র চোখবুজে বসে আছে।সাফা হাঁসে। লোকটা চোখবুজলেও কত সুন্দর লাগে।ভাগ্যিস নামজ পড়া শেষ।তা না হলে নিভ্রকে এভাবে দেখার অভিযোগে তার যে কি হতো কে জানে।সাফার মুনাজাত শেষ হয়।নিভ্র সাফার হাত দেখে ভয় পেয়ে যায়।দুই হাতের ব্যান্ডেজ রক্তে ভরে উঠেছে।ব্যান্ডেজও ভিজেঁ গেছে।নিভ্র সাফার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে………
—–“পানি দিয়ে ওযু না করেও ওযু করা যায় সাফা।যেহেতু তুমি অসুস্থ আল্লাহ সব রকমের সুবিধা দিয়েছে আমাদেরকে।সমস্যা হলে ওযু করার নিয়মও আছে ভিন্ন তুমি যানো না??”
সাফা ভাবে। তারপর তায়াম্মুম করার কথা মনে পড়ে।এটা তার মনে ছিলো না।সাফা হেঁসে বলে…..
—-“করা তো শেষ এখন বলে কি হবে??”
—-“তুমি নিজের ক্যারলেস ভাব পাল্টাবে না?? এটাই প্রতিজ্ঞা করেছ মনে হয়।আজিব মেয়ে।উঠো।”
—-“বকেন কা??(সাফা গাল ফুলিয়ে বলে)”
নিভ্র হেঁসে মেনে মনে বলে…..বিয়ের পরে না হয় আদর করে দিবো।কিন্তু মুখে বলতে পারেনা কথাটা।মনেই রয়ে যায়।সাফাকে কোলে তুলে নিয়ে নিভ্র মজা করে বলে………
—–“এত বড় হয়েও কোলে উঠার সুযোগ পাচ্ছ তাই হাত ছাড়া করতে চাও না??মনে হয়।”

সাফা চোখ রাঙিয়ে তাকায়।নিভ্র সাফাকে বসিয়ে দেয়।হাতে ব্যান্ডেজ খুলে দিতে দিতে বলে…….
—-“ভয় পেয়েছি এবার আর এদিকে রাগি চোখে তাকাতে হবে না।চোখবুজ।তা নাহলে তুমি আবার সেন্সলেস হয়ে যাবে।চোখবুজতে বলেছিনা বুজো।”

সাফা চোখ বুজে।পাতা গুলো খিঁচে। নিভ্র তাকিয়ে থাকে কতক্ষণ টোলের দিকে।তারপর হাত ব্যান্ডেজে মন দেয়।সাফা কিছুক্ষণ পর পর মুখ কুঁচকে উঠে।নিভ্র ফু দিয়ে দিয়ে হাত ব্যান্ডেজ করে।রাফা মাত্র রুমে ডুকতে গিয়েই এই দৃশ্য দেখে।রাফা আকাশ থেকে পড়েছে মনে হয়।ভয়ঙ্কর চোখে সে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।নিভ্র এত সকালে সাফার রুমে??হাতে ব্যান্ডেজ করছে??ব্যান্ডেজ তো পরেও করতে পারতো??এত সকাল সকাল??রাফার রাতের কথা মনে পরে।মিটমিটিয়ে হেঁসে সে বাইরে চলে আসে।মনে মনে বলে ভাই তু তো গেয়া কামছে😂
.
.
ডাইনিংয়ে বসে আছে সবাই।বাড়ির সবাইকে ডাইনিংয়ে একসাথে দেখে মাহবুব চৌধুরীর বেশ ভালো লাগছে।নিভ্রও আছে টেবিলে।নিভ্র তার মায়ের সাথে এখন একটু একটু কথা বলে।আজকে নিভ্রকে টেবিলে দেখবে এটা মাহবুব জানতো।তাই তিনি হাসছে।রাজিব চৌধুরী প্রশ্ন করে…..
—-“বাবা একা একা হাসছ কেনো??আমাদেরকেও বলো আমরাও হাসি??”
—-“ভালোবাসী তাই খুশি খুশি থাকি সাথে হাসি।(মাহবুব হেঁসে হেঁসে বলে)”

সাথে সাথে নিভ্র কেশে উঠে।কারন সে আড়চোখ সাফাকে দেখছিলো আর মিটমিটিয়ে হাসছিলো।নিভ্রর এমন কান্ড কারো চোখেই ধড়া পরেনি মাহবুব ছাড়া।যদিও কথাটা তিনি এমনেই বলেছে তবুও নিভ্রর কাশি শুনে সবাই তার দিকে তাকায়।অভ্র পিঠ চাপড়ে পানি দেয়।নিভ্র পানি খেতে খেতে দাদার দিকে তাকায়।তিনি এবারো হাসছে।নিভ্র চোরের মতো চোখ নামিয়ে নেয়।সাফাকে ইফতেখার খাইয়ে দেয়।সবার খাওয়া দাওয়া শেষে মাহবুব সবার উদ্যেশে বলে…….
—-“সবাই সব গুঁছিয়ে নিবে।কালকে আমরা রওনা হবো।
সাফা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে……
—–“কোথায় যাবেন দাদাজান???”
—-“আমি না আমরা সবাই যাবো। সিলেটে। রাফার বিয়ে সেখানেই হবে।নিশানদের আর আমাদের গ্রামের বাড়ি সেদিকেই তাই সবাই মিলে সেখানে যাবো।বিয়ে আমাদের বাড়িতেই হবে।রাফার দাদিজানের ইচ্ছা ছিলো এটা।””
—-“আমাকেও নিবেন(সাফা খুশি হয়ে বলে)”
—–“তুমি ছাড়া তো আমরা যাবোই না।তুমিইত আসল।”
সবাই হাঁসে। নিভ্রর নিজেকে চোর মনে হচ্ছে। সবাই তার দিকে কেমন করেই তাকাচ্ছে।রাফা সাফাকে জড়িয়ে বলে………
—–“মিষ্টির দোকান ছাড়া তো আমি বিয়েই করবো না।”
অভ্র কাঁটাকাট বলে……
—-“তোর মুখে এটা মানায় না।যে নিজের বিয়ের ব্যবস্থা নিজে করে সে বুঝি একজনের জন্য বিয়ে করবে না?? এটাও বিশ্বাস করতে হবে আমাদেরকে।আহাম্মক নাকি আমরা??”
রাফা চোখ রাঙিয়ে চেঁচিয়ে উঠে…….
—–“ভাইয়া……..”
সবাই হাঁসে খিলখিল করে।
.
.
নিভ্র নিজের রুমে হুমায়ূন স্যারের বইয়ে ভড়িয়ে ফেলেছে।বারান্দা ভর্তি সাদা গোলাপের চারা লাগিয়েছে।সাথে কিছু আলাদা গোলাপও আছে।যেমন কালো,হলুদ,হালকা গোলাপি,লাল টকটকে।নিভ্র নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে সব ঠিকঠাক আছে কি না।নিভ্র বারান্দায় চোখবুলিয়ে হাঁসে। মুখে বলে…..
আসলেই সুন্দর লাগছে।ফুলগুলো তোমার মতই সুন্দর।শুধু তুমি আমার হলেই হয়??কিন্তু তুমি কি হবে আমার??নিভ্রর হাসি মিলিয়ে যায়।সাফা যদি তাকে পছন্দ না করে।তার মনে যদি অন্য কেউ থাকে??সে যদি কাউকে তার মত করেই ভালোবাসে।তখন কি করবে সে??নিভ্রর দম আঁটকে আসে।ভয় জাগে মনে।সে নিজের মন কে শান্তনা দেওয়ার জন্য ভাষা খুজে বেড়ায়।সাফার চাঞ্চল্যতায় তার মনের কথা খুঁজে বের করা কঠিন একটা কাজ।নিভ্র মনে মনে ঠিক করে সাফার মনের খবর আগে যানতে হবে।তারপর সে জায়গা করবে মনে।জুলুম করে নয়।ভালোবেসে জিততে চায় সে।
.
.
রাফা সাফার জামা কাপড় গুঁছিয়ে দিচ্ছে। সাফা পা গুটিয়ে বসে আছে।রাফা একবার সাফার দিকে তাকায় তো একবার জামা গুঁছিয়ে নিচ্ছে। সাফা খুশি। তার চোখে মুখে আনন্দ দেখার মতো।রাফা সাফার দিকে তাকিয়ে বলে……..
—-“মিষ্টির দোকান মনে হয় খুব খুশি??”
—-“হুম অনেক।বাবার সাথে কত দিন পরে দেখা করতে পারবো।আহ..কি মজা হবে।আপু তোমাদের বাড়িতে কে কে আছে??”
—-“অনেকেই আছে।তবে একটা ডেঞ্জারাস প্রানী আছে।তার থেকে একটু দূরে থাকবে।সে আসলেই ডেঞ্জারাস।”
সাফা অবাক হয়ে বলে…….
—-“আপনারা কি বাঘ পালেন বাড়িতে??”
রাফা হেঁসে বলে…….
—-“সে বাঘ না।হায়নার মতো।নেকড়ের মতো মারাত্মক। সব সময় হামলে পড়তে চায়।বিশেষ করে তোমার উপড় পড়বে।সুন্দর মেয়েকে তার পছন্দ না।তার উপর তুমি তো নি……..(আর বলতে চেয়েও বললো না।হেঁসে সাফার হা হয়ে আসা মুখ মিলিয়ে দেয়।)”
—–“বলেন কি আপু??এত ডেঞ্জারাস প্রানী বাসায় রাখার মানে আছে বলেন??চিড়িয়াখানায় দিয়ে দিচ্ছেন না কেনো???আর এগুলোও বাড়িতে রাখার মত প্রানী নাকি?? বাঘ নাহয় সুন্দর আছে তাই মানুষ সখে পড়ে কেউ কেউ পালে। কিন্তু নেকড়ে🙄এটা রাখার মত প্রানী নাকি??”
—-“কিছুই করার নেই।আমি তো চাইনা।মন চায় চিড়িয়াখানায় রেখে আসি কিন্তু মামার মেয়ে বলে কথা তার উপর বেস্ট বিজন্যাস ম্যানের মেয়েও।”

সাফা যেনো আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছে এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে রাফার দিকে।বলে কি এই মেয়ে??ভাইও সকাল থেকে কেমন কেমন বিহেভ করছে আর এখন বোনটাও কেমন পাগলের মত প্রলেপ বোকছে।সাফা হা করে প্রশ্ন করে……
—–“কি বলছো আপু??তোমার মামার মেয়ে একটা নেকড়ে😲তোমার মামি কি মানুষ???”
—-“হুম মামি মানুষ।”
—-“মানুষের পেট থেকে নেকড়ে কেমনে হয়??আপু কি সব বলছো মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের বাচ্চা নেকড়েও হতে পারে?? আল্লাহ কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার।তোমাদেরকে কামড়ে দেয় না??”
—-“না ভাইয়াদেরকে দিতে চায় বেশি।আমাকে দিবে না।তবে তোমাকে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বেশি।ভাইয়াদের চাইতেও তোমার ঝুঁকি বেশি।”

সাফা এবার ভয় পাচ্ছে।এরা কেমন মানুষ একটা নেকড়ের সাথে থাকে??আর নেকড়েটা আবার মানুষের বাচ্চা।সবাই পাগল নাকি??কি সব বলছে??সাফার মনে হচ্ছে সে নিজেই পাগল হয়ে যাবে এসব মানুষের মাঝে।সাফা নিজে নিজেই বলে…….
—–“সাফা তোকে তো গিলে খেয়ে ফেলবে মনে হয়??তুই বরং তোর বাবার কাছে চলে যাস।তাও তো নেকড়ের হাতে মরতে হবে না।আল্লাহ।শুনেছি নেকড়ে অনেক অসভ্য প্রানী হয়। দয়ামায়া বিহিন।”

রাফা হাসে শব্দ করে।সাফার মুখের চুপসানো ভাব দেখে তার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে।সাফা রাফার হাসির মানে বুঝতে পারছে না।তাই হা করে তাকিয়ে আছে।রাফা সাফার গাল টেনে বলে……….
—–“আরে নিভ্র ভাইয়া আছে না।ভয় কিসের। ভাইয়া এসব নেকড়ে, বাঘ,সাপ,কালসাপ,কুমির থেকেও ভয়ঙ্কর প্রানী সিংহ। আর রাজা রাজাই থাকে।বুঝলে।ভাইয়া বাঁচাবে তোমাকে নেকড়ে হোক আর সাপ হোক সব কিছু থেকে।ডোন্ট ওয়ারি ডিয়ার মিষ্টির দোকান।”
.
সাফা আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছে।এছাড়া তার কিছু করার নেই।তার মনে হচ্ছে সে ভুল করে চৌধুরী ভিলা ফেলে চিড়িয়াখানায় চলে এসেছে।তাও ভয়ঙ্কর প্রানীদের মাঝে ইনোসেন্ট বাচ্চা মেয়ে হয়ে।বেচারি সে😒
.
.
#চলবে_____________________________🍁

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here