এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৪৩+৪৪

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৪৩.
________________
নিভ্রর জ্ঞান ফিরে চার ঘন্টা পরে।চোখ টিপ টিপ করে খুলেই চারদিকে চোখবুলায় সে।ডান পাশের ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে সামনের ছবির দিকে।নিভ্র উঠে বসে।বুকে এখনো ব্যথা তার।অভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র বলল,
—” এত দেখিস না আমার জিনিস নজর লাগতে পারে।”
অভ্র ভড়কে যায়।সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র হাঁসে। শুকোনো ঠোঁটের হাসি ঝুলে আছে তার ঠোঁটে।সব হাঁসিতে মনে হয় হাজারো কষ্ট লুকিয়ে।অভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগে এই কষ্ট দেখে।এতটা কষ্ট তার আগে কখনোই হত না।অভ্র জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি এনে বললো,
—” তোর জিনিসে আমার নজর লাগবে না।দেখার সময়ই চোখজোড়াকে বলেদি এটা নিভ্রর নজর দিবি না।তারাও দেয় না।”
নিভ্র অপলক তাকিয়ে হাঁসে। তারপর বলে,
—” ছবিটায় ওকে একদম জীবন্ত লাগে তাই না?”
অভ্র আর তাকায় না।না তাকিয়েই বলে,
—“হুম।নীল শাড়ি কানের পাশে জবা।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম।তুই সব দিকেই এগিয়ে।এত কিছু কিভাবে পারছ বলবি??”
—“ওকে দেখানো হয় নি ছবিটা।যখন দেখবে কি বলবে যানছ??বলবে আপনি এত কিছু কিভাবে পারেন একবার ভিলেন,একবার মডেল-ফডেল, একবার ডাক্তার, এখন আবার আর্টিস্ট।আমার মাথা ঘুড়ছে।হতে পারে সেন্সলেস হয়ে যাবে।এটা ও ভালোই পারে।

কথাটা বলেই নিভ্র প্রান কাড়া হাসি দেয়।সাফার কথা হলেই এভাবে হাসে সে।হাতে সেলাইনের নল দেখে সে বিরক্তি নিয়ে তা খুলে ফেলে।বাড়ির সবাই তাকে রোগী বানিয়ে ফেলেছে।জাস্ট বিরক্ত কর।অভ্র নিভ্রর পাশে এসে বসে।সেলাইন পাশের টেবিলে রেখে শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।নিভ্র প্রতিবারের মত হেঁসে বললো,
—” এভাবে দেখছ কা??পরে প্রেমে পড়ে যাবি।তুই তো আবার বিয়ে করবি না ঠিক করেছিস।মনে হয় তোরও হিরনের মত সমস্যা।এগুলো হলে দূরে যা।সাফা এগুলো শুনলে আর আমাকেও দোষি করবে।”
অভ্র চোখ গরম করে তাকায়।পিঠে চাপড় মেরে বললো,
—“ফাইজলামি ছাড়।এমন করলি কেনো বল??তুই এসব না করলে হয় না??”
নিভ্রর হাসি মুখ মুহুর্তেই রাগী হয়ে উঠে।চোখগুলো লাল লাল হয়ে উঠে।পাশের গ্লাস ছুঁড়ে ফেলে দেয়।সাথে সাথেই ঠাসস করে শব্দ হয়।অভ্র বুঝতে পেরেছে নিভ্রর রাগ হচ্ছে। তাই হাত ধরে রেখেছে।নিভ্র চিৎকার করে বললো,
—” ওই মেয়েকে আমার রুমে কেনো পাঠানো হলো??আম্মুরে জিজ্ঞেস কর??”
অভ্র শান্ত কন্ঠে বললো,
—” আচ্ছা সেই চাপ্টার ক্লোজ কর।আর পাঠাবে না।কিন্তু তুই এভাবে থাকলে কারোরই ভালো লাগে না।কাকিমার কি দোষ।ভেবেছে হয় তো তোর কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়ে যাবে আর জীবনে এগিয়ে যাবি।তাই তিনি এসব করেছে।এতে তার দোষ কোথায়??”
নিভ্র হঠাৎ করেই শব্দ করে হেঁসে উঠে।তারপর বললো,
—” কোনো মেয়ে আমার জীবনে জায়গা পাবে এটা ভাবলো কি করে?? আমি বুঝিনা।এই নিভ্রর সব জুড়ে শুধু সাফা। কারো জন্য কিছু অবশিষ্ট নেই আমার কাছে।কারো জন্যই নেই।সরি।এসব কথা আর হলে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।কেউ না।”

অভ্র দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।তারপর ঔষুধের পাতা থেকে ঔষুধ ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,
—” ঠিক আছে ।কিন্তু তুই কি সত্যি হার্টসার্জেন??
—” তোর সন্দেহ আছে নাকি??”
—” এত দিন ছিলো না এখন আছে।”
—” কেনো??”ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে নিভ্র।
—” তোর হার্ট দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। তুই এটা যানোছ?? ”
নিভ্র জবাব দিলো না।উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।এদিক সেদিক খুজে মদের বোতলটা পাশের শেল্ফ থেকে নিলো।টেবিলের উপড় থেকে সিগারেট নিলো।আজ বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। অনেক অনেক বেশি।নিভ্র হেটে বারান্দায় চলে গেলো।ব্যালকুনির আনাচেকানাচে সব সাদা গোলাপ আর সাদা গোলাপ।চারপাশে গাছ মাঝে গোল টেবিল তার পাশেই সোফা।নিভ্র টেবিলের উপড় এগুলো রেখে দিলো। সোফায় পা তুলে বসে পরে।ফুলগুলো একটু পর পর ছুঁয়ে দিচ্ছে। মদের বোতলটা খুলে চুমুক দেওয়া শুরু করে সে।সিগারেট ধরায়।মুখের ভিতরে নিয়েই একটান দেয় আর উপরে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে।অভ্র শুধু তাকিয়ে দেখে।নিভ্র ডান হাতে সিগারেট নিয়ে বাম হাতে ফুল ছুঁয়ে দেয়।অভ্র পাশে বসে।দুজনেই নিশ্চুপ। অভ্র নিভ্রকে পর্যবেক্ষণ করছে।সবুজ চোখগুলো কেমন ঘোলাটে হয়েগেছে। ঘুমের ঔষুধেও ঘুম হয় না।ইনজেকশন দিতে হয় প্রায়।মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে নিচেই শুয়ে পরে।চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়েগেছে। চুলগুলো আবার কেটেঁ দিতে হবে।নিভ্র আচমকা হেঁসে ধোয়াঁ উড়াতে উড়াতে বলে,
—” ভাই তুই আছস বলে আমি আজ এক বছর দশ মাস বিশ দিন পরেও হসপিটালে গিয়ে ওয়াওও নিভ্রনীল কত হেন্ডস্যাম কথাটা শুনেছি।”
অভ্র কিছু বললো না।নিভ্রর নিজের প্রতি বিন্দু মাত্র যত্ন নেই।সেই সব করে নিভ্রর হয়ে।নিভ্রকে সে নিজেই গুঁছিয়ে রাখে।তাই নিভ্র এগুলো বলছে।মদের বোতল এগিয়ে দিয়ে অভ্রকে বললো,
—” খাবি??”
অভ্র নিভ্রর হাত দেখেই আতঁকে উঠে।ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে থাকে নিভ্রর দিকে।নিভ্রর সেদিকে মনোযোগ নেই।সে সিগারেট, ফুল আর মদের দিকে বেশি মনোযোগী। অভ্র ভয়াত্নক গলায় বললো,
—” হাত কাটলি কবে নিভ্র??এগুলো কি??তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস এভাবে নিজের ক্ষতি করবি না তাহলে এগুলো কি??কবে কাঁটলি??নিশ্চুই আজ।তাঁজা রক্ত।”
নিভ্র বিরক্তির সাথে বললো,
—” এত হাইপার হসকা।কাটঁতে মন চেয়েছে কেটেঁছি এত চিল্লাস কা। ”
—” নিভ্র এবার কিন্তু তুই সিরিয়স হ।আর ভালো লাগছে না।দেবদাস হয়ে গেছিস জানি।ওর মত মরতে যাবি কেন??ভালোবাসা কি শুধু তুই যানোস আর কেউ যানে না?ফালতু। ”
—” এত চিন্তা করছ কেন??একটুই কেটেছি।দম বন্ধ লাগছিলো তাই এসব করেছি।শান্ত হ।”
অভ্র এবার জাপ্টে ধরে নিভ্রকে।নিভ্র ধরে না।সিগারেট একটার পর একটা শেষ করে সে।অভ্র ছেড়ে দেয়।তারপর বললো,
—” সিরিয়েস হবি না??”
—” আমি সাফাকে এটাই বলতাম।সিরিয়েস হবে না??ও হাসতো না হয় মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত।কত কিউট লাগতো।যানছ।ও তোকে যানতে হবে না।আমি জানলেই হবে।
অভ্র জবাবে কিছু বলে না।নিভ্র একটা ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলে,
—” ও শেট এটা কি করলাম।ফুলটা ব্যথা পেয়েছে।মানে সাফাও।তোর জন্য এসব হয়েছে।”
—” ফুলগুলোর মত নিজেরেও যে এভাবে ছিঁড়ছ, এটা সাফা দেখলে কষ্ট পাবে না??”
নিভ্র এবার শান্ত হয়ে বসে।তাচ্ছিল্য করে বলে,
—” ও কেনো কষ্ট পাবে??একটুও ভালোবাসে না।ভালোবাসলে ছেড়ে যেতে পারতো না।কখনোই না।ওকে সামনে একবার পাই তারপর দেখাবো নিভ্রনীল কি??”
অভ্র নিভ্রর মুখে ঔষুধ দিতে দিতেই বললো,
—” কি করবি?? থাপড়াবি নাকি ঘুষি দিয়ে নাক ফাটাবি??নাকি চড় মেরে গালের দু’পাশ লাল করবি??”
নিভ্র পানি খেতে খেতে হেঁসে দেয়।হাঁসতে হাঁসতেই বললো,
—” ওর তো গাল এমনেই লাল। চড় থাপ্পড় দেওয়া লাগে না।তবে কি করবো জানি না। ”
—” আজও ওদের বাড়িতে গেছিলি না??”
—” হুম।”
—” দিনে কয়বার যাওয়া হয়??”
—” জানি না।যদি ও আসে।তাই প্রতি ঘন্টায় একবার যাই।”
—” সারাদিন থাকলেই পারছ।রাতের দুইটা, তিনটা, চারটা, এভাবে যাওয়ার কি আছে।এত রাতে ও নিশ্চুই আসবে না।আর এত দিনেও ওই বাড়িতে ওদের দেখা যায় নি।তাহলে কেনো যাছ ভাই!!”
নিভ্র নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।উঠে দাড়াঁতে চায়।অভ্র বসিয়ে দিয়ে নিজেই রুম থেকে সাফার একটা ছবি নিয়ে এসে সামনে দেয়।নিভ্র ছবিটা কয়েক পলক দেখে তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে।অভ্র সোজা হয়ে বসে বলে,
—” তোর হার্টের প্রতি যত্নবান হতে হবে নিভ্র।”
নিভ্র চোখবুজে ছবি বুকে জড়িয়ে মাথা কাত করে সোফার পিঠে রাখে।তারপর বলে,
—” হৃৎপিন্ড তো আমার কাছে নেই??থাকলে অবশ্যই যত্ন নিতাম।”
অভ্র বিচলিত হয়ে বলে,
—” নেই মানে??”
—” ওটা তো সাফাকে দিয়ে দিয়েছি।ওর কাছেই আছে।আমার কাছে যেটা আছে সেটা হল যন্ত্র। আর এই যন্ত্র নিয়ে মহা মুশকিলে আছি বুঝলি।হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা করে।দম বন্ধ হয়ে আসে।মনে হয় মরে যাই।”
কথাগুলো বলতে বলতেই নিভ্র উঠে বসে।অভ্রর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
—” ভাই!আমার না সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে!!”
অভ্রর বুক কাঁপে।এটা নিভ্র বহু বার করতে চেয়েছে।কিন্তু এভাবে কখনোই বলে নি। অভ্র আতংকিত গলায় বললো,
—” এগুলো কেমন কথা নিভ্র?দেখ এসব করা মহা পাপ।আমাদের ধর্মে হারাম।এগুলো বললে সব শেষ হয়ে যাবে। আর বাড়ির সবার কি হবে??তোর সাফা যদি সত্যি ফিরে আসে তখন কি হবে??তোর সাফা এই জীবনে অন্যকারো হবে এটা তুই কিভাবে সজ্য করবি??”
অভ্র এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম ফেলে।নিভ্র হেঁসে দেয়।তারপর বলে,
—” সেটাই তো।সেই জন্যই বেচেঁ আছি।কিন্তু বিশ্বাস কর আমার না দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে।সব অন্ধকার লাগে।নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হয় ভাই।আমি কি করবো??আমার সাথেই কেনো এমন হয়??বল??ওকে এত ভালোবাসলাম কি ভাবে??জানি না??মনে হয় আমার রগে যে রক্ত প্রবাহ হয় তাও ওর নামে।এই চোখের পলকও পরে ওর নামে।আমি কি করবো?? আমার সব জুড়ে ও সুধুই ও।বাঁচতে পারছিনা।আচ্ছা ওর কি আমার কথা মনে পরে না??পড়লে কোথায়ও??এত খুঁজলাম তবুও পেলাম না কেনো??”
অভ্র কিছু বলে না।নিভ্র আবার বলে,
—” ওর সেই টোল পড়া গাল কতদিন ছোঁয়া হয় না।কত দিন দেখিনা ওকে??কত দিন ওর চুলগুলো কানে গুঁজে দিনা,কতদিন ওর কন্ঠ শুনি না।আমি এভাবে বাচঁতে পারছি না।সাফার কি আমার কথা মনে পড়েনা??বলনা অভ্র??”
নিভ্র কাদঁছে। অভ্র চোখবুজে আছে। এত কষ্ট সে নিতে পারেনা।নিভ্রর আর্তনাদ দিন দিন মনে হয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।কমছে না।অভ্র নিজেও অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। যেখানে নিভ্র পাচ্ছে না।অভ্র কিভাবে পাবে??নিভ্রর ফোন বাজে। অভ্র উঠে ফোনটা হাতে দিতেই নিভ্র উত্তেজিত হয়ে কল রিসিভ করে।অপর পান্ত থেকে এমন কিছু হয় তো শুনেছে যা নিভ্রর মোটেও পছন্দের ছিলো না।তাই চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—” খুঁজে পাওনি মানে কি??কত বার বলেছি খুঁজে বের করতে হবে মানে হবে।তোমাদের আমি শুধু শুধু টাকা দিচ্ছি। একটা দিনও ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছ না।সমস্যাটা কি?? কিসেট স্পেশাল ফোর্স তোরা।আমি লাস্ট বার বলছি আমার ওকে চাই।”

নিভ্র ফোন ছুঁড়ে দিয়েছে। রাগে তার হাত পা কাপঁছে। হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে উঠে সে।সোফায় বসে পরে আবার।অভ্র বুঝতে পারে এটা ইনফরমেশন দেওয়ার লোক ছিলো।এবারো নিরাশ করেছে নিভ্রকে।তাই তার রাগ হচ্ছে। নিভ্র কেঁদে দেয়।তার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।ইদানীং সে কান্না আটকাতে পারে না।ছেলেরা নাকি কাদেঁ না কিন্তু তাকে দেখলে কেউই এই কথাটা বলবে না।আগে নিভ্র কাদঁত না।ছোট বেলায় একবার কেঁদেছে বোনের মৃত্যুর কথা শুনে।আর কখনো কাদেঁও নি।কিন্তু এখন তার বুক ফেঁটে কান্না পায়।এভাবে কেনো তার জীবনটা সব সময় এলোমেলো হয়ে যায়?? কেনো ভালোবাসায় এত কষ্ট??নিভ্র চিৎকার করে কেঁদে উঠে।অভ্র ঝাপিয়ে ধরে তাকে।নিভ্র কাঁদতে কাদঁতে বললো,
—” আমি কি করবো বলে দে প্লিজজ??আমার বুক ছিড়ে যাচ্ছে। কলিজার খাঁজে খাঁজে যন্ত্রনা।আমি আর পারছিনা।আমি এত কষ্ট নিতে পারছি না।মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।দম আঁটকে আসছে।আমি ঘুমাতে পারিনা।চোখ বন্ধ করতে পারিনা।দম নিতেও পারিনা।এতটা কষ্টে আমি কখনো আগে পড়িনি।আমার ভালোবাসা কি মূল্য হিন??এতটা কেনো ভালোবাসতে গেলাম??কেনো?? কেনো সাফা এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাতে জড়িয়ে এখন হারিয়ে গেলো??আমার সব অন্ধকার লাগে অভ্র।সব।একটা সেকেন্ড ওকে ছাড়া আমার ভাবনার জগৎ কাজ করে না।”
—” শান্ত হ নিভ্র।প্লিজজজ।শান্ত হ।”
নিভ্রর ছন্নছাড়া জীবনটা কিভাবে ঠিক হবে তাই ভাবছে অভ্র।মনে প্রানে দোয়া করছে আল্লাহ কাছে যাতে সাফাকে ফিড়ে পায় নিভ্র।নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যজনের জন্য চাওয়া বড্ড কষ্টের।তবুও সে চায়। এমন পাগলা প্রেমিকের জন্য এটা না চেয়ে পারেনা সে।কতটা ভালোবাসে নিভ্র তা তার চেয়ে ভালো আর কে জানে।নিভ্রর প্রতিটা কান্নার সাক্ষী যে সে।এটাও বড্ড কষ্টের।অভ্র গোপনে কিছু দীর্ঘশ্বাস নেয়।জীবনটা সবার কেমন এলোমেলো হয়েগেছে।
________________________
—” তুমি দূরে যাবে শুনলেই খুব কষ্ট হয় আমার।মনে হয় দম বন্ধ হয়েগেছে। আমি মনে হয় না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো।”

কথাটা মনে পড়তেই সাফার চোখবেয়ে কয়েক ফোটা পানি নিজের অজান্তেই বেয়ে পরে।কত ভালোবাসার রাত ছিলো। ইশশ কত আবেগ নিয়ে উনি কথাগুলো বলতো।কত ভালোবাসায় মাখামাখি ছিলো কন্ঠ।পুরানো দিন আসলেই মধুর হয়।নিভ্র কেমন আছে??তার কথা কি মনে আছে??তাকে বিলিয়ে দেওয়া সেই বুক কি আদো তার নামেই আছে??নাকি সত্যি অন্যকারো হয়েগেছে?? সাফা ডুকরে কেঁদে উঠে।সামনে থাকা ছবিটা ভিঁজে যায় তার চোখের পানিতে।সাফা দ্রুত পানি গুলো ছবি থেকে মুছে নেয়।তারপর আবার তাকিয়ে থাকে সেই ছবির দিকে।দীর্ঘশ্বাস গুলো আসতে চেয়েও আসে না।দম বন্ধ করা সব অনুভুতি। সাফা এখন আর প্রেমের উপন্যাস পড়ে না।প্রেম কাহিনি শুনে না।প্রেমের গল্পে মনোযোগ দেয় না।এসব শুনলে তার ক্ষত আরো গভীর হয়।ভালোবাসা আসলেই বড্ড ভয়ংকর। কত কষ্ট এর প্রহারে।নিভ্রর বলা প্রতিটি কথা আজও তার মনে গেঁথে আছে।মনে পড়লেই সাফার গম্ভীর মুখে হাঁসে ফুটে।নিয়তি, ভাগ্য বড়ই বিচিত্র।সাফা জানালার পাশ ঘেঁষে বসে আছে।রাত গভীর।ঝুমা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকে।দরজার দিকে তাকিয়েই সাফা ছবি লুকাতে চায়।ঝুমাকে দেখে তা আর লুকায় না।ঝুমা সাফার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
—” অনেক দিন উনাকে নিয়ে কোনো ছবি দেয় না ম্যাগাজিন। তাই না??”
সাফা নিজের চুল সরাতে সরাতে বলে,
—” হুম।”
—” তুই প্রতিদিন খবরের কাগজে উনার ছবি খুঁজছ না??”
সাফা উত্তর দেয় না।ছবিটা যত্নে আলমারিতে রেখে দেয়।চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে ঝুমাকে বলে,
—” কাল ভার্সিটিতে পরীক্ষা আছে।তাই তাড়াতাড়ি ঘুমা।”
ঝুমা কথা বাড়ায় না।সাফা বালিশে মাথা রাখে।চোখে তার প্রতিদিনের মত পানি।নিয়তি কি আবার একবার দেখা করাবে তাদের??তাকে লুকানোর সুযোগই দিবে না।এমন ভাবে নিভ্র তার সামনে এসে হাজির হবে।যদি হতো।সরাসরি একবার তাকে ছুঁয়ে দিতো।ইশশ্ কত ভালো হতো।সাফা মুহূর্তেই নিজের ইচ্ছে ফিরিয়ে নেয়।নিভ্রর সামনে দাঁড়ানোর সাহস তার নেই।সে পারবে না।কিছুতেই না।দুজনের পথ আলাদা।তাই আলাদা হওয়াই ভালো।উনি না হয় ভালো থাকুক।
.
.
#চলবে________________

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখীত।

®হাফসা_________________

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৪৪.
______________
আরিফের আর নীলার বিয়ে আজ।নিভ্রকে একটানা কলের পর কল করে চলেছে দু’জনেই।ভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন ভাবে কল করছে তারা।কিন্তু নিভ্র??নিভ্র কোথায়??প্রতিদিনের মত আজও তার হৃদয় খালি বিষন্নতা নিয়ে উপুত হয়ে ফ্লোরে পরে আছে সে।সূর্যের কিরন উঠেছে ঠিকই কিন্তু নিভ্রর জীবনের আলো আসেনি।নিভ্র ফ্লোরে শুয়েই এদিক ওদিক মোড় ঘুড়িয়ে ফোন খুঁজে।ফোনটা তাকে প্রচন্ড ভাবে বিরক্ত করছে।ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়।নিভ্র হাতরে হাতরে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।সঙ্গে সঙ্গেই আরিফ চেঁচিয়ে বলে উঠে,
—” স্যার কল কাঁটবেন না প্লিজজজ।আজকে আমার বিয়ে আপনি আসবেন বলেছেন এখনো আসেন নাই।আমি কিন্তু সত্য বিয়েটা কবো না।এখন আপনার বাসায় এসে হাজির হবো।বলে দিলাম কিন্তু।”

নিভ্র চরম বিরক্ত। মাথা ভার ভার হয়ে আছে।মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে নিভ্র।বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে আসে তার।রাগও হচ্ছে খুব।বিরক্ত নিয়েই সে বললো,
—” দেখো আরিফ এখন তুমি আর আমার পিএ না।সো স্যার স্যার করে ঘেনঘেন করবে না।এত সকাল সকাল ফালতু কথা বলার জন্য ফোন দিলা কেন??তোমার বিয়ে করলে করো না করলে নাই আমার কি??আমি যাবো না ব্যস।”

নিভ্র কল কেটেঁ দেয়।আরিফের খুব কান্না পাচ্ছে।বলে তো দিয়েছে বিয়ে করবে না।কিন্তু এবারও যদি বিয়ে ভাঙে নীলা তার গলা টিপে মেরে ফেলবে নিশ্চিত। এ নিয়ে তিনবার বিয়ে করবে বলে সব ঠিক করেও নিভ্র আসে নাই বলে বিয়ে করে নাই।এবার নিভ্র আসবে বলেছে কিন্তু এখন এমন পাল্টি মারলে তো আরিফ শেষ।ভয়ে আরিফের শেরওয়ানীর গলার পাশ ঘামে ভিঁজে যাচ্ছে। সে পরেছে দোটানায়।নীলাকেও চাই সাথে নিভ্রকেও।আরিফ পাশে থাকা টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে ডগডগ করে খেয়ে নেয়।নীলা তো কিছু মনে করবে না।কিন্তু তার বাবা মা নিশ্চিত তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে।তখন তার কি হবে??কথাটা ভেবেই আরিফের গলা শুকিয়ে গেছে।তবুও সাহস নিয়ে আর একবার নিভ্রকে কল করে।নিভ্র রিসেভ করে না।কয়েক বার দিতেই আবার ঝাঁঝালো গলায় নিভ্র বললো,
—” আরিফ আমার এগুলো ভালো লাগে না।এত মানুষ, গিজগিজ করা,তার উপর মেয়ে,গায়ে হামলে পড়ে।এসব আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে।রং বিহিন দুনিয়া আমার।তাই বিয়ের মত রংমহল জায়গা আমার ভালো লাগে না।বুঝতে কেনো পারছো না??”
আরিফ বিনিত সুরে বললো,
—” স্যার সব বুঝলাম।তবুও আপনাকে ছাড়া নীলা বিয়ে করতে চায় না।তাই আর…”
নিভ্র আর বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
—” এই তোমাদের সমস্যা কি বলো তো??নীলা বলে আরিফ আমাকে ছাড়া বিয়ে করতে চায় না।আর তুমি বলো নীলা চায় না।আসল কারন বলো তো??”
আরিফ দীর্ঘ করে একটা শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললো,
—” আপনাকে ছাড়া আমরা দুজনেই বিয়ে করবো না।আপনি কি চান না আমরা বিয়ে করি?? প্লিজজ স্যার তিন তিনবার বিয়ে ভাঙছে আমার আর ভাঙিয়েন না।আসেন না প্লিজজজজ।আপনি না আসলে এবারো বিয়ে করবো না। শেষ কথা আমার।”

নিভ্র কিছু বলার আগেই আরিফ কল কেটেঁ দিলো।নিভ্রর মেজাজ চড়কগাছ। রাগে ফোন ছুঁড়ে দিয়ে আবার ভাবে তার জন্য আশেপাশের সবাই কত কষ্টে আছে।কিন্তু সে কি করবে তার এসব ভালো লাগে না।নিভ্র উঠে দাঁড়ায়।আরিফের বিয়ে এবার ভাঙ্গুক সে চায় না।নিভ্র সামনের রুম থেকে পর্দা ঠেলে ভিতরে যায়।আলমারি থেকে নিজের জামা কাপড় বের করে। হঠাৎ চোখ যায় সাফার সাদা একটা উড়নার দিকে।সাফার এখানে যত জামা কাপড় ছিলো সব নিভ্র নিজের আলমারিতে সুন্দর করে গুঁছিয়ে রেখেছে।নিজের আলমারির বেশিরভাগ জায়গা সাফার জন্য খালি করে ফেলেছে।সব সাফার শাড়ি দিয়ে ভড়াবে।নিভ্র উড়নাটা হাতে নেয়।ডুলো ডুলো পায়ে বিছানার সাথে ঠেসে বসে নিভ্র।উড়নাটা নিজের মুখের উপড় মেলে দেয়।চোখবুজে।চোখবুজেতেই সাফা তাকে হকিস্টিক দিয়ে বারি মেরে উড়না উড়িয়ে ছিলো সে দৃশ্য তার চোখের সামনে ফুটে উঠে।নিভ্র হাঁসে। নিজেকে উজাড় করে শ্বাস নেয়।সাফার গায়ের গন্ধ মেখে আছে উড়নায়।নিভ্র উড়না গুটিয়ে নেয়।আলমারিতে সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখে।একটা চুমুও দেয় উড়নার উপড়ে।তারপর ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায়।সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে বেড়িয়ে আসে।ইন করে না।এলোমেলো হয়েই সাফার ছবির সামনে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকে। তারপর বলে,
—” আরিফ বিয়ে করছে।আমাদেরও এতদিনে বিয়ে হয়ে যেতো তাই না??”
—” হাসছ কেনো??সত্যিই হয়ে যেতো।ফিরে এসো।তোমার সব দোষ ক্ষমা করে দিবো।এত কষ্ট দিয়েছ তাও মাপ করে দিবো।বিশ্বাস করো সব ভুল ক্ষমা করে দিবো।ফিরে এসো।তুমি যানো না?? তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে!!তবুও কেনো এত দূরে তুমি??আমার নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হয় সাফারানী।বড্ড বেশি এই কষ্ট।তুমি হীনা হৃদয় নামক যন্ত্রে ভাঙ্গচুর হয় প্রকট ভাবে।তুমি ছাড়া আমার সব অন্ধকার সাফারানী।ফিরে কি আসবে না??আবার আলোয় ভরিয়ে দিবে না??আমার আকাশ অন্ধকার তুমি নামক জোনাকির আলো ছাড়া।ফিরে এসো।”
নিভ্র সাফার ছবিতেই তার কপালে চুমু খায়।ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষন। বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।তারপর চাবি নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
__________________

—” আহ কি কপাল আমার কত ভালো ভার্সিটি রেখে এখন ন্যাশনালে পড়তে হচ্ছে।”

ঝুমার এমন কথা শুনে সাফা বিরক্তি প্রকাশ করে।মাথা পাশ ফিরিয়ে বলে,
—” তোকে কে আসতে বলেছে??আমি তো বলিনি।নিজেই কেনো পিছন পিছন আসতে গেলি।”
ঝুমা মন খারাপ করে বললো,
—” স্যরি দোস্ত। এমনেই মজা করছি।তোর কি আজকেও মুড অপ?”
সাফা টেবিল থেকে বইগুলো নিতে নিতে বললো,
—” আমার কখনোই মন খারাপ থাকে না।পরীক্ষা শেষ এবার চল।আরো কি থাকার ইচ্ছা আছে নাকি??আমার টিউশন আছে। চল।”
ঝুমা সাফার পিছনে পিছনে হাঁটে। তারা এখানে একটা সরকারী কলেজে পড়ে।প্রথমেই সাফারা এখানে এসেছিলো।পরে জায়গা পরিবর্তন করলেও কলেজ পরিবর্তন করে নাই।ঝুমার বাবা মা নেই তাই তার খবর রাখাও কেউ নেই।মামার বাসায় থাকতো এখন তো সাফার কাছেই থাকে।সাফা কলেজে তেমন আসে না।কারো সাথেই কথা বলে না।ঝুমা আর সাফা মাথা নিচু করে যায় আবার চলে আসে।সাফাকে কলেজে কেউ তেমন চিনেও না।আর সাফা সব সময় আড়ালে থাকতে চায়।ঝুমা বুঝে কিন্তু তার এসব ভালো লাগে না।কিন্তু মনে মনে ধীরভাবে চায় নিভ্র সাফার সামনে দাঁড়াক।রিকশায় উঠতেই পাশে ফুচকার দোকান দেখে ঝুমা বলে,
—” চল আজ ফুচকা খাই।”
প্রতিবারের মতই সাফার জবাব হয়,
—” না।তুই চাইলে খেতে পারছ।
ঝুমা মুখ ফুলিয়ে বলে,
—” চাচা চলেন।দরকার নাই খাওয়া।
সাফার কষ্ট লাগে ঝুমার জন্য তাই রিকশা থামাতে বলে ফুচকার দোকানে যায়।ঝুমা নাচতে নাচতেই দুই প্লেট ফুচকা দিতে বলে।সাফা খাবে না বলেছে তবুও ঝুমার ফারাফারিতে খেতে বসে।কিন্তু ফুচকা দেখেই পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে।একটা ফুচকা মুখে দিতেই সাফা কেঁদে দেয়।চোখের পানিতে আর ঝাঁলে সাফা লাল হয়ে যায়।আর খেতে পারে না।শেষবার নিভ্রর সাথেই সাফা ফুচকা খেয়েছে।লোকটাকে কি মারনা মেরেছে নিভ্র।কথাটা মনে পড়তেই সাফা হেঁসে দেয়।ঝুমা ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে,
—” একবার কান্দস আবার হাসোস।দোস্ত তুই কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস?”
সাফা নিশ্চুপ হয়েই হাঁসে।

দরজাটা খোলাই।সাফার ব্যাপারটা অবাক লাগছে।মাথার ঘাম মুছতে মুছতে সাফা ভিতরে ডুকে।তার পিছন পিছন ঝুমা।সামনের রুমেই চেয়ারে বসা এক সুদর্শন যুবকে দেখেই সাফার মাথা গরম।আগের জায়গাটা ছেড়েছে এই রকম ছেলেদের বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাওয়ার অভিযোগে।এবার আবার??সাফা রেগে এদিক সেদিক না দেখেই চেঁচিয়ে বলে,
—” বিয়ে করবো না আমি।”
ছেলেটা চমকে তাকায়।যেনো সে এমন কোনো প্রস্তাব আনেনি।উল্টা সাফার কথায় সে চরম অবাক।সাফার বাবা এগিয়ে এসে মেয়েকে চুপ করতে ইশারা করে।কিন্তু সাফা চরম রেগে আছে।তার মোটেও বিয়ে নিয়ে কিছু শুনতে ভালো লাগে না।তার উপড় ছেলেটা তার বাসায় চলে এসে বসে পরেছে।চিনানেই যানা নেই এভাবে বাসায় আসার মানে কি??সাফা বাবার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
—” বাবা তুমি চুপ করো।এসব বখাটে ছেলেদের আমি ভালো করেই চিনি।মহল্লায় নতুন দেখেছে তাই নাচতে নাচতে বিয়ের নাম করে ঘরে চলে এসেছে।বেরিয়ে যান এখনি!!আর যাতে ত্রিসীমানায় না দেখি।অসভ্য লোক কথাকার।”
সাফার বাবা চোখ কিটমিটিয়ে বললেন,
—” সাফা কি সব বলছ??তুমি যা ভাবছো তা না।উনি তেমন ছেলেই না।”
সাফা সারিকের কথায় পাত্তা দিলনা।আরো রেগে বললো,
—” তুমি চুপ থাকো বাবা।বয়স্ক মানুষ দেখলেই আরো আশকারা পায় এরা।আপনাকে দরজা দেখিয়ে দিচ্ছি দেখছেন না?অসভ্য লোক কোথাকার?”
ছেলেটা হেঁসে দেয়।মেয়েটাকে যতটা শান্ত ভেবেছে ততটা না।সাফার রাগ রি রি করে বেরে গেছে।কি অসভ্য লোক??এত অপমানের পরেও হাঁসে লজ্জা নাই নাকি??সাফা নাক মুখ ফুলিয়ে আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা বললো,
—” আপনি বুঝি খুব সভ্য??”
সাফা চুপসে যায়।এমন একটা কথা আশা করে নি সে।থতমত খেয়ে একটু দমে যায় সে।ছেলেটা ঠোঁটে হাসি রেখেই বললো,
—” আপনাদের বাসায় মেহমান এলে এভাবে আপ্যায়ন করেন বুঝি??”
সাফা একটা থাক্কা খায়।ছেলেটা আসলে কি বলতে চায় সেটাই সাফা বুঝতে পারছে না।সাফা নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি রেগে আছে।কাহিনী কি??ছেলেটা নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো।বললো,
—” বিয়ে তো করতে আসিনি।কিন্তু আপনার ভাব মূর্তি দেখে মনে হচ্ছে আমার জীবনেও এই কাজ করা উঁচিত না।”
সাফা আবার তার বাবার দিকে তাকায়।তিনি এগিয়ে এসে বললো,
—” আরে উনি আমার ক্লাইন্ড। এভাবে উল্টাপাল্টা কথা না বললেও হত তোমার।”
সাফা অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকায়।ছেলেটা আগের নেয় হাঁসে। সাফা কাচুমাচু হয়ে ছোট করে বললো,
—” স্যরি।
—” এতক্ষণ তোমাকে এটাই বলতে চেয়েছি। কথা না শুনেই আজেবাজে কিছু কথা শুনিয়ে দিলে।কিছু মনে করিয়েন না মিস্টার সিফাত।”
মিস্টার সিফাত মৃদু হেঁসে বললো,
—” না কিছু মনে করিনি।
সাফা ভিতরে চলে যায়।মাথা কাজ করে না তার। সব সময় উল্টাপাল্টা কাজ করে সে।কিন্তু এই সিফাতের মাঝে তার বিস্তর গাফলা মনে হচ্ছে। তা না হলে এত অপমানের পরেও রাগলো না!!অতি ভদ্র যারা দেখায় তারা কখনোই অতি ভদ্র হয় না।কি যেনো মিলাচ্ছে সাফার সাথে এমন চাহনি দিয়ে তাকিয়ে ছিলো ছেলেটা।হাসি তো সেটা আড়ল করার জন্য ছিলো।সাফা চিন্তায় পরে যায়।রহস্যময় মনে হচ্ছে তার লোকটাকে।
____________________
নিভ্র গেটে ডুকতেই তার সামনে হুমড়ি খেয়ে অনেকে পড়েছে।সবাই অবাক চোখে তাকে দেখছে।আজ অনেক দিন পরে নিভ্রর দেখা মিলেছে।অনেকেই এগিয়ে এসেছে।কিন্তু নিভ্রর রাগি মুখ দেখে কেউ এগিয়ে আসতে পারলো না।নিভ্র নিজের মত হেঁটে ভিতরে ডুকতেই আরিফ লাফিয়ে উঠে। সে ভাবতে পারছে না নিভ্র আসবে।খুশির ঠেলায় আরিফ এস্টেজ থেকে নেমেই নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে।নিভ্র ধরলো না।বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে সে কপলা কুঁচকে ফেলে।আরিফ ছেড়ে নিভ্রর মুখামুখি তাকায়।তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় নিভ্রর উপড় হামলে পড়ে চুমু খাবে।তার আগেই নিভ্র সরে এসে বললো,
—” একদম চুমু টুমু খাবে না বলে দিলাম।তোমার না বিয়ে।যাও তাড়াতাড়ি বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করো।”
আরিফ শুনলো না।খুশিতে নিভ্রর মুখ টেনে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।নিভ্র চেঁচিয়ে গাল মুছতে মুছতে বলে উঠল,
—” ছিইইইই। ”
আরিফের ভাবান্তর হল না।সে হেঁসে দিলো।খুশিতে তার কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবে না।তাই করে দেখালো।নিভ্রর ফ্যামিলির সবাই এসেছে।আরিফের কান্ডে সবাই অবাক হয়ে হেঁসে দিলো।নিভ্র পারছে না আরিফকে একটা লাথি দিয়ে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু আজ বিয়ে বলে কথা।তাই সব মাপ।নিভ্র আরিফকে ঠেলে বললো,
—” দূরে যাও।ছিইইইই। আমার পিচ্চি বউ ভাগ্যিস এখানে নেই থাকলে নিশ্চিত সেন্সলেস হয়ে পরতো।ডিজগাস্টিং। ”
আরিফ হেঁসে হেঁসে বললো,
—” সাফা যখন আসবে আমি না হয় আবার চুমু খেয়ে ওকে দেখিয়ে সেন্সলেস করবো।কিন্তু আজকের খুশি একটু বেশিই।তাই নো স্যরি স্যার।”
নিভ্র সোফায় বসে পরে।সবাই কত খুশি তার পরিবার আরিফের পরিবার সবাই।তার বন্ধুরাও।তাকে পেলে সবাই এত খুশি হবে এটা নিভ্র বুঝতে পারেনি।তবুও তার ভালো লাগছে না।এত জাঁকজমক তার ভালো লাগে না।এত আলোও তার চোখে বড্ড জ্বালা করে।নিভ্র পকেট থেকে একটা ফোন বের করে।সাফার ছবি জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।তার আর কোনো কাজ নেই।এই একটা কাজেই তার ভালো লাগে।সাফার মুখের রগ গুলোও সে খুজে নিয়েছে।কতটা দেখা যায় তাও যানে।এত নিখুঁত ভাবে দেখে জানারই কথা।

রুহি আরিফের মামাত বোন।নিভ্রকে প্রথম থেকেই সে নিখুঁত ভাবে দেখছে।এলোমেলো সিল্কি ভিঁজা চুল,ইন ছাড়া শার্ট,সবুজ চোখ।রুহি বিস্মিত হয়ে আরিফের বোনকে বলছে,
—” সামনের ছেলেটাকে আমি কোথাও দেখেছি??”
আরিফের বোন হেঁসে বললো,
—” আপু উনি নিভ্রনীল। শুধু তুমি না অনেকেই দেখেছে উনাকে ম্যাগাজিন,ছবি, ফাংশনে, ক্যাটওয়ার্কে করতে, আরো কত জায়গায়।আরে মডেল উনি।”
রুহি মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
—” আরে না।কোনো একটা মেয়ের কাছে ছবি দেখেছি।ডায়রির ভাঁজে। ”
—” আপু হাজারো মেয়ের ডায়রির ভাঁজে উনি মানে উনার ছবি থাকে।এমন কি আমারও আছে।তুমিও বিদেশে ছিলে তাই তোমার ডায়রিতে নাই।তবে কাল থেকে তুমিও রাখবে আমি নিশ্চিত। কত কিউট হেন্ডস্যাম বয় না??”
রুহি বিরক্তিতে বললো,
—” আরে ভাই সবইত বুঝলাম কিন্তু আমি একে সমুদ্রের কিনারে এক মেয়ের ডায়রির ভাঁজে দেখেছি।খুব যত্নে রাখা।কিছু স্পেশাল কথাও লিখা ছিলো কবিতা টাইপের কিছু হবে হয় ত।”
আরিফের বোন নাক মুখ কুঁচকে বললো,
—” এটাতে এত অস্বাভাবিক বিহেভ করছ কেনো আপু।সবই ত স্বাভাবিক কথা।এত হাইপার হচ্ছ কেনো বুঝলাম না।”
রুহির মন মানছে না।সে আরো আগ্রহের সাথে নিভ্রর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছ থেকে দেখার জন্য।সেদিন সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা মেয়ের সাথে রুহির ধাক্কা লাগে।তার হাতে টিয়া রং এর একটা ডায়রি ছিলো।সেখানেই নিভ্রর ছবি দেখেছে সে।রুহি বিদেশে থাকে।পড়ালেখা করছে সেখানে ছোট থেকে।আরিফের বিয়ের নামেই সে দেশে এসেছে।সমুদ্রেও কিছুদিন আগেই ঘুরতে গিয়েছে।নিভ্রর ছবিটা তার কাছে একটা অতিমাত্রায় আগ্রহের বস্তু।তাই সে বেশিই আগ্রহ দেখাচ্ছে।কিছু তো একটা ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার আছে ছবির মাঝে।কি সেটা??
.
.
#চলবে________________

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

®হাফসা_________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here