এক ফ্রেমে তুমি আমি পর্ব ১২+১৩

#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আপনাদের কথা।” ছেলেটি বিব্রত হয়ে বলল।

এবার নিলয় বলল”আরে মামু শোনো মাইয়া আগেই আরেক পোলারে ভালোবাসে।এখন যদি তুমি তারে বিয়া করো তাইলে সে পালায় গেলে কি তোমার ভাল্লাগবো?তোমার মান সম্মান কই থাকবো বলো।পরে সবাই কইবো হালায় বউরে সুখী করতে পারে নাই।এইজন্যই গেছে গা।এখন তুমি বলো তুমি কি করবা?”

“আচ্ছা আমি গিয়ে বলছি আমি বিয়ে করতে পারবো না।”

“এইতো গুড। আর শোনো ভুলেও বলবা না যে আমরা তোমারে এইগুলে বলছি।তুমি বলবা মেয়ে পছন্দ হয় নাই।”

“আচ্ছা।” বলে ছেলেটা চলে গেলো।আর ওরা সবাই হেসে দিলো।তারপর নিরব বলল”কি ছেলে আনছে তোমার জন্য একদম বাচ্চা ছেলে।আমার মতো ছেলে পাইতে কপাল লাগে।”

মিম মুখ ভেংচি দিয়ে বলল”আসছে হিরো।”এটা বলেই নিচে চলে গেলো।তারপর ওরাও পিছনে পিছনে নিচে গেলো।মিম নিচে গিয়ে দেখলো ছেলেটা সব বলে দিয়েছে ওর বাবা মা কে।ওর বাবা মা তো ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিম কিছু বলল না।ঠায় দাড়িয়ে রইলো।ওপর থেকে নিরব দাত কিড়মিড় করে বলল”দেখছিস কতো বড়ো বদ।বলছিলাম যাতে কিছু না বলে।সব বইলা দিছে।”

সায়ান্ত বলল”থাক বলছে ভালো হইছে আমাদের বুঝাইতে সুবিধা হইবো।”

তারপর ছেলে পক্ষ চলে গেলো।আর ওরা ওপর থেকে নেমে মিমের বাবা মায়ের সামনে দাড়ালো।মিম ওর বাবার সামনে এসে বলল”বাবা আমি নিরবকে ভালোবাসি।”

মিমের বাবা থমথমে মুখে বলল “তোমাদের মধ্যে নিরব কে?”

নিরব সামনে যেতেই বলল”কি করো তুমি?”

“এখনো কিছু করি না। আরেকটা সেমিস্টার বাকি অনার্সের।তারপর মাস্টার্সের পাশাপাশি জব করবো।”

“তোমার গ্রামের বাড়ি কই?”

“কুমিল্লা।”

“ভাইবোন কয়জন?”

“একটা বড়ভাই আছে আর আমি।”

“বাবা মা কি করেন?”

“আব্বুর নিজের কোম্পানি আছে।আর আম্মু প্রফেসর।”

“আচ্ছা।আমার মেয়ের সাথে সম্পর্ক কতোদিনের?”

মিমের বাবার এই প্রশ্ন শুনে নিরব সায়ান্তর দিকে তাকালো।সায়ান্ত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বোঝালো একবছর বলতে।

নিরব সায়ান্তর কথা মতো বলল”একবছর হবে।”

তারপর মিমের বাবা বলল”জব পেয়ে নিজের বাবা মা কে নিয়ে আসবে।”

এই কথা শুনে মিমতো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আসলেই ওর বাবা এটা বলেছে!মিম দৌড়ে গিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।ওর বাবা হেসে বলল”এখন খুশী তুই?”

মিম কিছু বলল না হেসে চলে গেলো।তারপর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে বাইরে বের হলো ঘুরতে।ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় বাসায় এলো।এই এতক্ষণ সময়ে নিরব একবারের জন্যও মিমের সাথে কথা বলতে পারে নি।বাসায় আসতেই মিমের মা আসমা বেগম বললেন”তোমরা ফিরবে কবে?”

“এইতো আন্টি কালই ফিরবো।সামনে পরীক্ষাতো তাই।”

মিমের বাবা বলল”আরেকদিন থাকলে ভালো হতো।”

“না আঙ্কেল মিমের বিয়ের সময় অনেকদিন থাকবো।” সাজিদ বলল।

তারপর ওরা সবাই খাওয়াদাওয়া করে যে যার ঘরে চলে গেলো।মিম,রিয়া আর আয়রা একরুমে আর ওরা চারজন একরুমে শুয়েছে।

মাঝরাতে নিরব ফোনের আওয়াজ পেয়ে উঠে পড়লো তারপর রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আয়রা বলল”দুলাভাই আমি আয়রা।মিমের যেনো কি হয়েছে।আপনি একটু ছাদে আসেন।”

নিরব তড়িঘড়ি করে ছাদে যেতেই দেখলো কেউ নেই ছাদে।পিছন থেকে মিম বলল”আরে আপনার কি হয়েছে ডাকলেন কেনো?সায়ান্ত ভাইয়া বলল আপনি নাকি ডেকেছেন।”

“কিহ!আমি আবার কবে ডাকলাম।তুমিই তো ডাকলা আয়রা ফোন দিয়ে বলল।”

“না আমি তো ডাকি নাই।”

“আমিও তো ডাকি নাই।”

“ওহ!এবার বুঝছি সায়ান্ত ভাইয়া আর আয়রা মিলে এই প্ল্যান করছে।”

নিরব হেসে বলল”যাক দোস্ত একটা ভালো কাজ করছে।ওরা ঢাকা গিয়া চকলেট খাওয়ামু।”

“ধূর আপনি থাকেন আমি গেলাম।” মিম বলল।

নিরব হাত ধরে বলল”এতো আনরোমমান্টিক কেনো তুমি?কই বলবে যে চলুন বসে একটু কথা বলি।তা না!সে চলে যাওয়ার জন্য লাফালাফি করছে।”

“আমার ঘুম পাচ্ছে তো।”

“বিয়ের পর কিভাবে ঘুমাও আমি দেখে নেবো।”

“কি করবেন আপনি?😒

” পাঁচদিন ঘুমাবোই না আর তোমাকেও ঘুমাতে দেবো না।”

“আল্লাহ কি করবেন আপনি পাঁচদিন না ঘুমিয়ে?😳

“সেটাও এখন ভেঙে বলতে হবে?না তুমি যদি চাও তাহলে আমি বলতে পারি।”

মিম তাড়াতাড়ি নিরবের মুখে হাত দিয়ে বলল”এই চুপ!বলা লাগবে না।”

নিরব হেসে দিলো।এভাবেই ওদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হলো তারপর দুজনেই ঘরে চলে গেলো।মিম ঘরে আসার পর আয়রা বলল”কি রে কি বলল?”

“কিছু বলে নাই?” মিম বলল।

“কিহ!তাইলে এতক্ষণ কি করছে?” রিয়া জিগ্যেস করলো।

মিম বলার আগেই আয়রা চোখ মেরে বলল”আরে জানিস না কি করছে।”

আয়রার কথা শুনে রিয়া বলল”ও এই ব্যাপার।দুলাভাই কতো রোমান্টিক।”

মিম ওদের কথা শুনে বলল”না না সত্যি ও ওইরকম কিছুই করে নাই।শুধু একটু কথা বলছে।”

রিয়া হাসতে হাসতে বলল”জানি জানি বলতে হবে না।”

মিম কোনোভাবেই ওদের দুজনকে বোঝাতে পারলো না।ওরা দুজন হাসতে হাসতে শেষ।আর মিম মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

এদিকে নিরব রুমে যেতেই সায়ান্ত বলল”কি দোস্ত কি অবস্থা?তোমার ঠোট গোলাপি গোলাপি লাগতাছে কেন?”

সায়ান্তর কথা শুনে নিলয় আর সাজিদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আর নিরব বিরক্ত হয়ে বলল”আরে তোরা যা ভাবছিস এমন কিছুই না।”

“ও আচ্ছা তাইলে তুই বল কি হইছে?” সাজিদ বলল।

“আরে একটু কথা হইছে আর কিছু না।” নিরব খাটে বসে বলল

“ও আমরাতো মনে করছি কতো কিছু হয়ে গেছে।” নিলয় হাসতে হাসতে বলল।

নিলয়ের কথা শুনে ওরাও হাসা শুরু করলো।আর নিরব সবগুলোর পিঠে কিল-ঘুষি দিতে লাগলো।কিন্তু ওদের হাসি বন্ধ হওয়ার নাম নাই।
#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

১৬.
সকাল সকাল সাতজন মিলে রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।নিরবকে ওরা মিমের সাথে বসতে দেয় নি।মিম,আয়রা আর রিয়া বসেছে একসাথে।সাজিদ,সায়ান্ত আর নিলয় একসাথে।একবারে সামনের সিটে নিরব বসেছে।এটা সায়ান্তর প্ল্যান ছিলো।ঢাকা পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেলো।তারপর যে যার ফ্ল্যাটে চলে গেলো।তারপর সবাই ঘুম।আজকে আর কেউ বাইরে যায় নি।

পরেরদিন নিলয় ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলো তিন চারটা ছেলে রিয়াকে টিজ করছে।আর একটা ছেলে ওর হাত ধরে রেখেছে।ও মোচড়াচ্ছে কিন্তু ছেলেটা ওর হাত ছাড়ছে না।নিলয় ওদের সামনে গিয়ে বলল”কি হচ্ছে এখান?”

নিলয়ের কথা শুনে ছেলে গুলো রিয়াকে টিজ করা বন্ধ করে দিলো।আর ওই ছেলেটা রিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”ভাই র্যাগিং চলছে।”

“আমাকে কি বলদ পেয়েছিস?আমি স্পষ্ট দেখলাম তোরা টিজ করছিলি ওকে।সবগুলো মাফ চা ওর কাছে।”

তারপর সবাই রিয়ার কাছে মাফ চেয়ে চলে গেলো।ওরা যেতেই নিলয় বলল”ওরা তোমাকে টিজ করছিলো তুমি কিছু বলো নি কেনো?”

“আমি কিছু বললে ওরা আমার ক্ষতি করবে।আর এখানে আমার কেউ নেই তাই দরকার কি ঝামেলা বাড়ানোর?”

“কিছু না বললে ঝামেলা কমবেও না।সো প্রতিবাদ করতে শেখো।”

এটা বলে নিলয় চলে গেলো।তারপর রিয়াও নিজের ক্লাসে আসলো।

ক্লাস শেষে রিয়া বের হতেই দেখলো নিলয় ওর ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে আছে।রিয়া বলল”আপনি এখানে?”

“হুম আসলে কিছু বলবো তোমাকে।”

“হুম বলুন।”

“এখানে না।চলো হাটতে হাঁটতে বলি।”

তারপর দুজনেই হাটতে লাগলো।হঠাৎ নিলয় রিয়াকে একটা গিফট বক্স দিলো তারপর বলল”এটা আজকে রাতে খুলবে।”

“এটাতে কি আছে?”

“আজ রাতে জানবে।আচ্ছা আমি গেলাম তুমি বাসায় যাও।”

রিয়া গিফট বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে গেলো।

রাত ১২ টা।আয়রা আর মিম শুয়ে পড়েছে।রিয়া গিফট বক্সটা খুলে দেখলো একটা চিঠি।রিয়া চিঠি খুলে পড়তে শুরু করলো।চিঠিতে লেখা ছিলো।

প্রেয়সী,

তোমার সাথে আমার প্রথম দিকে সাপ নেউলে সম্পর্ক ছিলো।তারপর আস্তে আস্তে আমাদের ঝগড়াঝাটি কমে যায়।আর একটা সময় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।এখন যদি বলো কবে থেকে ভালোবাসা শুরু করেছি?তাহলে আমি বলতে পারবো না।কারণ আমি নিজেও জানি না কবে থেকে শুরু করেছি।এখন তুমি বলো তুমি কি ভালোবাসো আমাকে?যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে ছাদে চলে এসো।আর যদি না হয় তাহলে এসো না।

রিয়া ছাদে গিয়ে দেখলো নিলয় দাড়িয়ে আছে।নিলয় তার বাহু মেলে ধরলো আর রিয়া তার বাহুতে নিজেকে আবদ্ধ করে নিলো।নিলয় মুচকি হাসলো।
.
.
.
.
.
.

ভালোই চলছিলো দুইজুটির প্রেম।প্রতিদিন কথা বলা।ক্লাস শেষ হওয়ার পর দেখা করা।ঘুরতে যাওয়া।কিন্তু আয়রা আর সায়ান্তর ঝগড়া লেগেই ছিলো।প্রথম প্রথম ওরা ভেবেছিলো আয়রা আর সায়ান্ত আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না ঠিক হওয়ার নাম নাই।যাইহোক আজ বিকেলে ক্লাস ছুটি হওয়ার পর আয়রা বাসায় যাচ্ছিলো।হঠাৎ একটা আন নোন নাম্বার থেকে কল আসলো।আয়রা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলল”হ্যালো আয়রা আমি হিয়া।তুমি একটু সাহায্য করতে পারবে আমাকে?”

“কি সাহায্য হিয়া?”

“তুমি প্লিজ কিছু করো নির্জন আসছে তোমাকে নাকি আজ তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে।”

“না ও এটা কখনোই পারবে না।তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার সংসারের অশান্তি হবো না।”

আয়রা ফোন রেখে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো সায়ান্ত আসছে।হঠাৎ আয়রার মাথায় কি ভূত চাপলো আল্লাহই জানে।সায়ান্ত ওর কাছে আসতেই ও চিল্লানো শুরু করে দিছে।রাস্তায় অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।আর সায়ান্ত বুঝতে পারছো ন আয়রা এমন করছে কেনো?রাস্তার মানুষগুলো জিগ্যেস করছে ও এমন করছে কেনো?আয়রা কান্না করতে করতে সায়ান্তকে দেখিয়ে দিয়ে বলল”ও আমার বয়ফ্রেন্ড।আমাদের দুইবছরের সম্পর্ক।কিন্তু ও এখন আমাকে বিয়ে করতে চায় না।”

আয়রার কথা শুনে সবাই সায়ান্ত গালি দিতে দিতে শেষ।তারপর ওদের দুজনকে কাজি অফিসে নিয়ে গেলো।এবং সবার চাপাচাপিতে ওদের বিয়েও হয়ে গেলো।তারপর সবাই চলে যেতেই সায়ান্ত রেগে বলল”এমন কেনো করলে?”

“আমি আপনাকে সব বলছি।আর আমার আপনাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু বিপদে পড়ে করেছি।”

“কিসের বিপদ?”

“নির্জন নামের একটা ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়।ওর হাত থেকে বাচতেই এমন করেছি।”

“এজন্য তুমি এমন কেনো করবে।স্টুপিড কোথাকার।”

আয়রা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই
হঠাৎ কোথা থেকে যেনো নির্জন এসে আয়রার হাত টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু করলো।আয়রা চিল্লিয়ে বলল”নির্জন আপনি কি করছেন?”

“চুপ আজ তোমাকে বিয়ে করবো।তারপর দেখবো তুমি কোথায় পালাও।”

আয়রা ওর হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল”আমি বিবাহিত।”

নির্জন ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল”কিহ!”

“হুম একটু আগে সায়ান্ত রহমানের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।”

আয়রার কথার মাঝ দিয়ে সায়ান্ত বলল”আমি তো তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি।”

“কিন্তু বিয়েটাতো হয়েছে।”আয়রা বলল।

নির্জন আবার ওর হাত চেপে ধরে বলল” এই ছেলে বিয়েতে রাজি ছিলো না। তাই এটা কোনো বিয়ে হতে পারে না।”

চলবে..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here