এক রক্তিম আলো পর্ব -০১

সদ‍্য বিবাহিত জামাইয়ের মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে গেলো অবনির। অবনি অবাক হয়ে বললো’ কি বলতেছো ধ্রুব ভাইয়া।’

ধ্রুব প্রচন্ড রেগে অবনির হাত চেপে ধরে বললো ‘ আমি তোকে ডিভোর্স দিবো।আমি তোকে ভালোবাসি না তোর বোনকে আমি ভালোবাসি সেটা তুই জানিস তারপরও এই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি কেনো?
ধ্রুব আবার হেসে বললো’ টাকার জন্য তুই এই বিয়েতে রাজি হলি? তুই যদি আগে বলতি তাহলে আমি তোকে এক কোটি টাকা দিয়ে তোর বোনকে বিয়ে করতাম।এই ধ্রুব চৌধুরীকে বিয়ে করার শাস্তি এখন থেকে পাবি তুই।’

হাত জোরে চেপে ধরার ফলে অবনির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। ধ্রুবের কথা শুনে অবনির চোখ দিয়ে অঝর ধারাই পানি পরতে লাগলো। অবনি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে ধ্রুবকে বললো’ হাত ছাড়ো লাগছে ভাইয়া।’

ধ্রুব তখন অবনিকে ধাক্কা দিয়ে বেলকনিতে ফেলে দিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো’ তুই আজ এইখানেই থাকবি। একদম রুমে আসার চেষ্টা করবি না।’ এই বলে ধ্রুব দরজা আটকে দিলো। ধাক্কা দেওয়ার ফলে অবনি ফ্লোরে পরে গেছে। অবনি দাঁড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে কান্না করে বললো’ অন‍্যর পাপের ফল কেনো আমাকে পেতে হয়? আমি তো চাইনি তোমাকে তাহলে কেনো আমাকে কষ্ট দিচ্ছো ধ্রুব ভাইয়া?
এই বলে আরো কান্না করতে লাগলো।

” আজ ধ্রুব আর অবনির বোন রাহির বিয়ে ছিলো কিন্তু বিয়ের কিছুক্ষন আগে রাহিকে খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছিলো না যার কারনে ধ্রুবের মা আর অবনির মা মিলে অবনিকে বলির পাঠা বানালো। ধ্রুব অবনির চাচাতো ভাই হয়। অবনি জানতো তার বোনকে ধ্রুব ভালোবাসে সেই জন্য রাজি ছিলো না কিন্তু অবনির মায়ের জোড়া জড়িতে অবনি রাজি হয়ে গেলো। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কিছুক্ষন পরেই রাহি বাড়িতে আসে। ধ্রুবের পাশে অবনিকে দেখে রাহি চমকে গিয়ে সবাই কে বলে’ ধ্রুবের পাশে অবনি বউ সাজে কেনো?

রাহির মা রাহির কাছে এসে বলে
‘ তুই কোথায় ছিলি?

রাহি তখন বলে’ আমি তো বাহিরে গিয়েছিলাম একটু। অবনিকে তো বলেছিলাম।’

রাহির মিথ্যা কথা শুনে অবনি বলে’ তুই তো আমাকে বলিস নাই তাহলে কেনো মিথ্যা বলছিস?

অবনির কথা শুনে রাহি কান্না করে ধ্রুবকে বলে’ ধ্রুব বিশ্বাস করো আমি একটা দোকানে গিয়েছিলাম অবনিকেও বলেছি কিন্তু এই অবনি কাউকে কিছু বলেনি আর মা তোমরা সবাই অবনির সাথে ধ্রুবের বিয়ে দিয়ে দিলে?

রাহির কথা শুনে ধ্রুব চিৎকার করে সবাই কে বললো’ আমি এই বিয়ে মানি না আমি রাহিকে বিয়ে করবো।’
এই বলে ধ্রুব বাহিরে চলে গেলো। আর রাহি মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিলো। বাড়ির সবাই অবনিকে দোষারোপ করতে লাগলো। ধ্রুবের মা মাথা নিচু করে অবনিকে নিয়ে ধ্রুবের রুমে নিয়ে গেলো”

অবনি কান্না করতে করতে ওইখানেই ঘুমিয়ে পরলো। ধ্রুব রুমে এসে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো’ কেনো আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো না?
ধ্রুব এইগুলো বলতেছে হঠাৎ পিছন থেকে রাহি বলে উঠলো
‘ আমাদের ভালোবাসাও পূর্ণতা পাবে। যদি তুমি আমার সাথে থাকো।’

রাহির কথা শুনে ধ্রুব বসা থেকে উঠে রাহিকে জড়িয়ে ধরে বললো’ ভালোবাসি তোমাকে অনেক।’

রাহি ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো’ লাভিউ ধ্রুব। তুমি কথা দাও তোমাকে বিয়ে করার শাস্তি তুমি অবনিকে দিবে? ওর জন্যেই আমাদের ভালোবাসা এক হতে পারলো না।’

ধ্রুব রাহিকে ছেড়ে রাগি কন্ঠে বললো’ তুমি চিন্তা করো না এই ধ্রুবকে বিয়ে করার ফল ও পাবেই।’

ধ্রুবের কথায় রাহি রহস্যময় হাসি দিয়ে মনে মনে বললো’ আমার প্লানমাফিক সব কিছু হচ্ছে। এইবার অবনির তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়ার পালা।’

রাহিকে ভাবতে দেখে ধ্রুব বললো’ কি এতো ভাবতেছো?

রাহি বললো’ কিছু না। আমি এখন যায়।’
এই বলে রাহি তার আম্মুর রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। রাহিকে দেখে তার মা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো’ এইবার দেখ অবনিকে কিভাবে ধ্রুব কষ্ট দেয়। আমরা ওকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে না পারলেও ওই ধ্রুব অবনিকে তাড়াবেই।’

রাহি হেসে বললো’ মা ধ্রুব কতটা বোকা ও বুঝতেই পারছে না আমি ওকে আমার কাজে শুধু ব‍্যবহার করছি।’

রাহির কথা শুনে রাহির মা বললো’ তুই কি করতে চাইছিস এখন?

রাহি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো’ দেখোই না আমি কি করি।’

রাহির মা বললো’ অবনিকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি তাড়িয়ে দিস। ওর মা তো কবেই মরে গেছে এখন আমাকে গিলে খাচ্ছে।’
রাহির বাবা ডাকতেই তিনি চলে গেলেন।

” অবনি ছোট থাকতেই তার মা মা’রা যায়। অবনির বাবা অবনিকে লালন পালনের জন্য রাহির মাকে বিয়ে করে। রাহি যখন জন্মগ্রহণ করে তারপর থেকে অবনিকে দু চোখে সহ‍্য করতে পারে না। অবনিকে দিয়ে নিজেদের সব কাজ করাই। অবনি মুখ বুঝে সব সহ‍্য করে নেয়।’ এই ছাড়া যে অবনির কোনো উপাই নেই।”

সকালবেলায়
অবনি ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ মুখে ঠান্ডা পানি পরাই ঘুম ভেঙ্গে গেলো অবনির। চোখ খুলতেই দেখে ধ্রুব মগ হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। অবনির আর বুঝতে বাকি রইলো না এই কাজ কে করেছে। ধ্রুব অবনিকে বললো’ তাড়াতাড়ি উঠ আর শুন কাল আমি তোকে যা বলেছি তা কেউ জেনো না জানে ঠিক আছে।’
এই বলে ধ্রুব চলে গেলো। অবনি দীর্ঘ শাস ছেড়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। অবনিকে দেখে ধ্রুবের মা চিন্তিত কন্ঠে বললো’ শরীর ঠিক আছে তোর? কালকে যা ধকল গেছে তোর উপর দিয়ে।’

ধ্রুবের মায়ের কথা শুনে অবনি শান্ত চাহনিতে বললো’ ঠিক আছি আমি।’
এই বলে অবনি রান্নাঘরে আসলো। অবনির পিছু পিছু ধ্রুবের মা আসলো। ধ্রুবের মায়ের অবনির হাতে চোখ পরতেই অবাক হয়ে বললো’ কি হয়েছে তোর হাতে?
অবনি কাপা কাপা গলায় বললো ‘ কিছু হয়নি।’
ধ্রুবের মা মলম এনে অবনির হাতে লাগিয়ে দিলো।
অবনি মুচকি হাসলো। ধ্রুব নিচে এসে সবাই কে ডাক দিলো। ধ্রুবের কথা শুনে সবাই ড্রয়িং রুমে আসতেই ধ্রুব অবনির দিকে তাকিয়ে বললো’ অবনিকে আমি ডিভোর্স দিতে চাই।’

ধ্রুবের কথা শুনে ধ্রুবের মা রাগান্বিত কন্ঠে বললো
‘ শুনো ধ্রুব অবনির সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। তোমরা একটা পবিত্র সম্পর্কে আছো। আমি চাই না তুই ওকে ডিভোর্স দিয়ে ওর বোনকে বিয়ে করো। এইটাই আমার শেষ কথা।’

মায়ের কথা শুনে ধ্রুব কিছু বলতে পারলো না কারণ মায়ের উপর দিয়ে ধ্রুব কথা বলে না। ধ্রুব হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বাহিরে চলে গেলো। অবনি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ধ্রুবের রুমে আসলো। অবনি ধ্রুবের রুমে এসে বিছানা গুছিয়ে টেবিলের কাছে এসে দেখে গ্লাস রাখা। অবনি গ্লাসটা হাতে নিয়ে অন্য পাশে রাখবে তার আগেই কিছুতে লেগে গ্লাসটা ফ্লোরে পরে ভেঙ্গে গেলো। অবনি মাথায় হাত দিয়ে বললো’ এখন ধ্রুব ভাইয়া যদি দেখে তাহলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না।’
এই বলে কাচ গুলো উঠাতে লাগলো। কাচ উঠাতে যেয়ে ভুল বসত হাতে লেগে হাত কেটে গেলো। ব‍্যথায় অবনি আহ্ করে উঠলো।

এদিকে
ধ্রুব ফোন নিতে রুমে এসে দেখে অবনি ফ্লোরে বসে আছে। ধ্রুব অবনির কাছে এসে দেখে অবনি হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ধ্রুব রেগ বললো’ কিভাবে গ্লাস ভাঙলি? তুই জানিস এই গ্লাসের দাম কত?

ধ্রুবের ধমক খেয়ে অবনি কেপে উঠলো। অবনি কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ধ্রুব অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#সূচনা_পর্ব

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here