এক সায়াহ্নে প্রেমছন্দ পর্ব -১৭+১৮

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
একটা ছেলে দৌঁড়ে যায় একটা মেয়েদের গ্রুপের কাছে। গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

“ইনায়া আপু, শোনো।”

ইনায়া তাকালে ছেলেটা দ্রুত বলে,
“তাজা খবর আছে আপু।”

ইনায়া তখন চকোলেট খাচ্ছে। মুখ ভর্তি চকোলেট নিয়ে ভ্রুঁ কুঞ্চন করে হাত দিয়ে ইশারা করে বলতে বলে। ছেলেটা অতি উৎসাহী হয়ে বলল,

“কয়েকদিন ধরে দেখছি, রাফি ভাইদের একটা মেয়ের সাথে খুব ভাব!”

ইনায়া এবার আচমকা দাঁড়িয়ে যায়। সরাসরি প্রশ্ন করে,
“কার সাথে? কোন ব্যাচের? মেয়ের নাম কি?”

ছেলেটা ভড়কে যায়। আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে আপু, মেয়েটাকে চিনি না। কয়েকদিন ধরে দেখছি।”

ইনায়ার বান্ধবী আরভি বলে,
“নতুন ব্যাচ তো এখনও আসে নাই। তাহলে নতুন কে আসলো?”

ছেলেটা বলে,
“রণক, ইমরান ভাইদের সাথে দেখেছি দুইদিন। মনে হয় মাইগ্রেশন করে এসেছে।”

ইনায়া কিছু চিন্তা করে বলে,
“মেয়েটার নাম কিরে অনিক? দেখতে কি খুব সুন্দরী?”

অনিক নামের ছেলেটা থতমত খেয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,
“কি যে বলেন না আপু! আপনার থেকে সুন্দর হয় নাকি? আপনি তো হচ্ছেন ক্যাম্পাসের মিস ইউনিভার্স!”

ইনায়া বিরক্ত হয়ে বলে,
“অনিক, তোকে মানা করেছি না? অতিরিক্ত পাম দেওয়ার চেষ্টা করবি না। তুই একই পাম রিনি আপুকেও দেস। কয়দিন পর যদি জানতে পারিস, যেই মেয়েটার সম্পর্কে বলতে আসছিস, সেও তোর সিনিয়র! তখন তো তাকেও পাম দিবি। ”

অনিক মাথা চুলকে দাঁত দিযে জিভ কা*টে। তারপর বলে,
“ওই মেয়েটার জন্য রাফি ভাই তার ফ্রেন্ডদের সাথেও কাল ক্যান্টিনে ঝ*গড়া করেছে।”

ইনায়া এবার রেগে চকোলেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে যেতে যেতে বলল,
“বিকেলে ওই মেয়েকে আমার সামনে হাজির করবি। আমিও দেখব রাফির চয়েজ।”

ইনায়াকে চলে যেতে দেখে আরভি, দিয়া, তাইজুল, তাওহীদ এসে অনিককে ঘিরে ধরে। তাইজুল অনিকের মা*থায় চা*টা মে*রে বলে,
“তুই সব ক্লিয়ার না হয়ে এসে বলিস কেন? যদি খবর মিথ্যা হয় তাহলে তুই রাফি ভাইদের ও আমাদের দুই গ্রুপের কাছেই কে*লানি খাবি। যদি সত্যি হয় তবে আমাদের হাত থেকে বেঁচে যাবি কিন্তু..!”

রহস্য রেখে তাইজুল, তাওহীদরা চলে যায়। ওরাও চলে গেলে অনিক মা*থায় হাত দিয়ে বসে পরে।

________

আজকে মাশরিফ ময়মনসিংহতে যাবে না। আজ ঢাকায় হেডকোয়াটারে যেতে হয়েছে কিছু কাজের জন্য। বিকেলের মধ্যে ফিরতে পারলেও আজ যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আগামীকাল ৪ অক্টোবর, নিজের ছাব্বিশ তম জন্মদিন। তাই আগামীকাল যাবে ময়মনসিংহতে। কাল আবার অভী, রাতুল, রণিতরাও আসবে। সাত বন্ধু একসাথে হবে।

ভোরে বাসা থেকে বেরিয়েছিল। এখন বারোটার বেশি বাজে। ভাবলো বোনের বাসায় যাবে একটু। বোনের ছেলেটা ফোন করলেই আসার জন্য বায়না ধরে। বোনের ছেলের জন্য একটা ভিডিও গেম কিনতে একটা শপিংমলের টয় শপে যায়। সেখান থেকে পছন্দ মতো ভিডিও গেম কিনে শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসবে তখন একটা লেডিস শপে ঢুকলো। দোকানটা নরমাল স্টোন জুয়েলারি ও হিজাবের। চুড়ি ও দুলগুলো তার নজর কেড়েছে। নিজের পছন্দের লাল রঙের এক জোড়া ডিজাইনার রেশমি চুড়ি ও তিতিরের পছন্দের সাদা ডিজাইনার রেশমি চুড়ি নিয়ে নেয়। পাশেই হিজাবের কালেকশনে একটা সুন্দর হিজাবও পছন্দ হয়েছে। এগুলো নিয়ে নিজেই মুচকি হেসে বলে,

“জন্মদিন আমার কিন্তু গিফট পাবে তুমি। সাঁজবে তুমি। আমি নাহয় এখন দূর হতেই দেখব। তিতিরপাখির হাতে শোভা পাওয়া চুড়ির খনখন ঝংকারে আমি বারেবারে আ*হ*ত হবো। প্রাণে মা*রা যে দায়।”

সবকিছুকে সুন্দর করে রেপিং করে নেয়। গিফট বক্সের ভিতরে একটা ছোটো চিরকুট থাকবে যা সে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে লিখে দিয়েছে। এরপর শপিংমল থেকে বেরিয়ে বোনের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা করে।

বোনের বাসায় যেতে যেতে বেলা দেড়টা বেজে গেছে। কলিংবেল চাপলে রিতিকা দরজা খুলে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

“এখন সময় হলো তোর আসার? সেই কখন বলেছিস আসবি। এতক্ষণ কই ছিলি?”

মাশরিফ বোনের গাল টেনে হেসে বলে,
“জানিস আপু? তোকে রাগলে খুব কিউট লাগে। গা*ল গুলো টমেটোর মত লাল লাল হয়ে যায়। দুলাভাই তো তোকে কখন জানি ভুল করে টমেটো ভেবে না খে*য়ে ফেলে!”

রিতিকা মাশরিফের ফা*জলা*মিতে আরও রেগে যায়। বাহুতে মে*রে বলে,
“আমাকে না রাগালে তোদের হয় না তাই না? দুই বাপ-ছেলেতে তো সারাদিন জ্বা*লায়। এখন তুইও এসে হাজির।”

মাশরিফ মুচকি হেসে গম্ভীর হওয়ার ভাণ করে বলে,
“তাহলে চলে যাই?”

রিতিকা কপাল কুঁচকে মাশরিফকে টেনে বাসার ভেতরে আনে। মাশরিফ হাসতে থাকে। রিতিকার ছেলে রিয়ান ‘মামা’ বলে দৌঁড়ে আসে। মাশরিফ ওর হাতে ভিডিও গেমটা দিয়ে কোলে তুলে নেয়। বলে,

“কেমন আছে মেজর রিয়ান কবির?”

“গুড স্যার।”
রিয়ান নিজের হাত স্যালুটের মতো করে বলাতে মাশরিফ আবারও হাসে। রিতিকা ওদের দুষ্টুমি দেখে তাড়া দিয়ে বলে,

“রিয়ান, মামার কোল থেকে নামো। মাশরিফ যা ফ্রেশ হ। তোর দুলাভাই একটু পরেই চলে আসবে।”

এই বলে রিতিকা রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। মাশরিফ রিয়ানকে নিয়ে সোফায় বসে খেলতে থাকে। এই ফাঁকে রিতিকা জুস দিয়ে গেছে। মামা-ভাগ্নে মিলে গল্প করতে করতে আবার কলিংবেল বেজে উঠলে মাশরিফ গিয়ে দরজা খুলে দেখে তার দুলাভাই সায়ান এসেছে। সায়ান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“কেমন আছো মাশরিফ? তোমার বোন আমাকে ফোন করে করে পুরো পা*গ*ল করে ফেলছিল, তাড়াতাড়ি আসার জন্য। এখন তুমিই বলো, ক্লাস শেষ না হলে কিভাবে আসি?

রিতিকা রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে খাবার আনতে আনতে বলল,
“তোমার শুধু আছেই ক্লাস। আর কিছু না। যাও ঝটপট গোসল সেড়ে আসো আর মাশরিফ হাত-মুখ ধুঁয়ে আয়।”

“দেখলে? তোমার বোনের খালি তাড়া।”
“এই তুমি যাবে? গুনে গুনে পাঁচ মিনিটে টেবিলে এসে বসবে। তোমার দেরি করে আসার শাস্তি এটা। এখন যদি দেরি হয় তো দেখো শুধু।”

রিতিকার হু*ম*কিতে সায়ান দ্রুত চলে যায়।

_______

খাবার টেবিলে খেতে খেতে সায়ান জিজ্ঞেসা করে,
“মাশরিফ, বিয়ে করছ কবে?”

“পরে দুলাভাই। এখনি না।”

রিতিকা বলে ওঠে,
“কাশফা তো বিয়ের জন্য উতলা হয়ে আছে।”

মাশরিফ বিরক্ত হয়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তো তাকে বলো বিয়ে করে নিতে।”

“আরে ও তো তোকে বিয়ে করতে চায়।”

মাশরিফ ঘন নিঃশ্বাস ফেলে সরাসরি বলে,
“সরি আপু। তোমার সাথে যদি কাশফার কথা হয় তবে বলে দিও, ‘মাশরিফকে বিয়ে করার স্বপ্ন যেন বাদ দেয়।'”

রিতিকা অবাক হয়ে বলে,
“এভাবে বলছিস কেনো? মেয়েটা কতো ভালো জানিস। সবসময় নিজে থেকে খোঁজখবর নেয়।”
“যেমনি হোক। তাকে আমার পছন্দ না।”

সায়ান এই দুই ভাই-বোনকে থামাতে বলে,
“থামো তো তোমরা। আর রিতি, মাশরিফ পছন্দ করে না তাও কেনো তুমি ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখছ? মাশরিফের যাকে ভালো লাগে তাকে বিয়ে করবে। এই নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না।”

“হ্যাঁ! তোমরা তো নিজেদের দিকটাই ভাবো। ওদিকে কাশফা মেয়েটা কতো কাঁদে তা তো দেখো না।”

রিতিকার কথাগুলো মাশরিফের ভালো লাগছে না। দ্রুত খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে যায়। পেছোনে রিতিকা, সায়ান অনেকবার ডেকেও থামাতে পারে না। সায়ান বিরক্ত হয়ে বলল,
“কেনো রিতি? তোমার কিছু না বললে ভালো লাগে না নাকি? আজব তুমি!”

সায়ানও রাগ করে নিজের ঘরে চলে যায়। রিতিকা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় বসে থাকে।

_________

তিতির, জারিনরা বিকেলে সবে ক্লাস শেষে বের হয়ে ক্যান্টিন থেকে ওয়ান টাইম কাপে চা নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে বসেছে। গল্প করছে আর চা খাচ্ছে। তিতির বলল,

“বাসা ভাড়া পেয়েছি এইটা মাকে জানানো মাত্রই মা ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিয়েছে। মনে হয় কালকেই চলে আসবে।”

কথাটা বলেই তিতির হেসে ফেলে। লিরা জিজ্ঞেসা করে,
“টুমি হোস্টেল ছেড়ে দিবে?”

“না। আসলে বুঝতে পারছি না। যখন রাতেও ফরেনসিকের কাজ থাকবে তখন তো লাগবে। দেখি সামনে কী হয়।”

অনিক নামের জুনিয়র ছেলেটা তিতিরদের আড্ডার মাঝে এসে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম আপুরা, ভাইয়ারা।”

ইমরান বলে,
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছিস?”
“জি ভাই ভালো। আপনারা কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ্‌। তো হঠাৎ এখানে?”

অনিক বুকে সাহস সঞ্চার করে বলে,
“এই আপুটাকে(তিতিরকে দেখিয়ে) ইনায়া আপু ডাকছে।”

জারিন, নাদিয়া, ফাইজা, লিরা, জুলিয়া সবাই অবাক হয়ে গেছে। রণক কপাল কুঁচকে শুধায়,
“ইনায়া আপু হঠাৎ তিতিরকে কেনো ডাকবে?”

জারিন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করে,
“ইনু আপুকে তুমি কিছু বলেছ অনিক? ইনু আপু তিতিরকে ডাকবেই বা কেনো?”

অনিক পরেছে মহা ফাঁসাদে। সব সিনিয়াররা এবার তার ব্যান্ড বাজাবে। সারাজীবন সে এভাবেই ধো*লা-ই খেয়ে খেয়ে এসেছে। অনিক ক্যাবলার মতো হেসে বলল,

“হে হে। আমি আবার কী বলব? না তো। আমি তো কিছু বলিনি। আমি তো এই আপুকে(তিতিরকে উদ্দেশ্য করে) চিনিই না। আপু কি নতুন?”

ইমরান ধরে ফেলেছে অনিকের কাজ। তাই হাসার ভাণ করে বলল,
“না বাছা। সেও তোমার সিনিয়র। মাইগ্রেশনে এসেছে তো। তুমি বুঝতে পারোনি। তাই না?”

অনিক আমতা আমতা করছে দেখে রণক উঠে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
“সবাই তোর সিনিয়র। তুই কেনো এই ঝামেলাতে যাস?
“সরি ভাই। আমি বুঝি নাই এই আপুও আমার সিনিয়র। আর হবে না। মাফ করে দেন।”

অনিকের কাকুতি-মিনতিতে ইমরান হাই তুলে বলল,
“তোর যে আরও হবে সে জানি। যা এখান থেকে। তিতিরের সাথে আমরাও যাব।”

অনিক দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তিতির এবার জিজ্ঞেসা করে,
“ইমরান, ও কে?”
“আর বলিস না! এই ছেলের স্বভাবই এমন। জুনিয়র।রইনায়া আপুরা যা করতে বলে সব করে। এতো বাঁ*শ খায় তারপরেও শুধরায় না। এতো ব*ল*দ যে মানুষ কেমনে হয় তাই বুঝি না। অবশ্য সে নজর রাখে রাফি ভাইয়ের দিকে। আর কারও দিকে নজর রাখে না। ইনায়া আপুই রাখতে বলেছে।”

তিতির অবাক হয়ে শুধায়,
“তাহলে আমায় কেনো ডাকছে? আমি কী করলাম?”

জারিন গাল থেকে হাত সরিয়ে বলল,
“সেটা গেলেই দেখতে পারবি। চল এবার। ভয় পাস না। ইনু আপু একটু রাগী কিন্তু এমনিতে ভালোই।”

ওরা ইনায়াদের কাছে যাওয়ার জন্য ওঠে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিতির। ইনায়ার দুর্বোধ্য দৃষ্টি তাকে বারেবারে অপ্রস্তুত করে তুলছে। বুঝতে পারছে না তাকে এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখার কারণটা কী! তিতির নিজের একপাশে জারিন ও নাদিয়ার দিকে তাকালো তো আরেকপাশে ফাইজা, ইমরান, রণকের দিকে। ওরে কেউ দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে তো কেউ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় তিন-চার মিনিট হলো এভাবে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবার তিতিরের বিরক্ত লাগছে। ইদানীং তার বিরক্তি যেনো ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে। অল্পতেই মাথা গরম হচ্ছে। নিজের এই স্বভাবে সে নিজেও বিরক্ত। কিছুটা রুষ্টভাবাপন্ন হয়েই বলল,

“আপু, আপনি কি কিছু বলবেন? না বললে আমি হোস্টেলে যেতাম। শরীরটা ভালো লাগছে না।”

ইনায়ার বান্ধবী আরভি তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“কেনো হোস্টেলে তোমার কী কাজ? সিনিয়ররা ডেকেছে, কিছু তো নিশ্চয়ই বলবে। এতো অধৈর্য কেনো তুমি? রাফি ভাইরা ডাকলেও কি এমন করো?”

তিতির চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজের ফুসফুসকে স্বস্থি দিলো। বলল,
“না আপু। প্রায় অনেকক্ষণ হলো কিছু বলছেন না। তাই ভাবলাম হয়তো আমাকে দেখতে ডেকেছেন। আর আমাকে এভাবে সামনে দাঁড়া করিয়ে দেখাটা আমার কাছে একটু অস্বস্থিকর। শুধু আমি কেনো! যেকোনো মেয়ের কাছেই।”

তিতিরের কথায় ইনায়া মাথা নিচু করে হাসল। অতঃপর শুধায়,
“তোমার চুলের লেন্থ কতো?”

হঠাৎ এহেনো প্রশ্নে অবাকই হলো তিতির। জবাবে প্রশ্ন করল,
“বুঝলাম না আপু।”

“তোমার হিজাবের কারণে চুল দেখতে পাচ্ছি না। রাফির তো লং হেয়ার পছন্দ। লাইক দিস (নিজের চুল দেখিয়ে)! মানে হাঁটু ছুঁইছুঁই লম্বা চুল।”

তিতির হতবিহ্বল হয়ে বলল,
“কার কেমন চুল পছন্দ তা জেনে আমি কী করব? তাছাড়া রাফি ভাইয়ার কেমন চুল পছন্দ তা যেনে তো আমার কোন কাজ নেই।”

“এতো ভাব নিয়ো না বুঝছ। রাফির সাথে তোমার এতো কিসের খাতির? এখন যদি কমন ডায়লগ দাও যে, সিনিয়র হয়। তাহলে বলব, সিনিয়র কি আর নাই? এই তাইজুল, আসফি, তাওহীদরাও তোমার সিনিয়র হয়। আর ছেলে সিনিয়র ছাড়া মেয়ে সিনিয়রও আছে।”

তিতির জবাব কী দিবে বুঝতে পারছে না। কী এক ঝামেলায় পরেছে। মেয়েটা যে জে*লাস তা সে বুঝে গেছে। নিজের কপালে নিজেরই বা*ড়ি দিতে মন চাইল। সে নিজের বক্তব্য রাখল,

“আপু, আপনি যা মিন করছেন তার কিছুই না। উনারা আমাকে হেল্প করেছেন। চাইলে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ওয়েট,”

এই বলে তিতির হুট করে হাঁটা ধরল। হেঁটে কই যেনো যেতে লাগল। ইনায়া তিতিরের আকস্মিক চলে যাওয়াতে যারপরনাই অবাক হলো। ইনায়া বলল,
“ও এভাবে চলে গেল কেনো? আমি কি ওকে যেতে বলেছি?”

লিরা হাসি চেপে বলল,
“সি উইল বি ব্যাক। মেইবি, রাফি ভাইকে বলটে গিয়েছে।”

ইনায়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। হড়বড়িয়ে বলল,
“আজব! আমি কি ওকে বলেছি রাফিকে ডাকতে? আমাকে না বলে চলে গেল কেনো?”

ইনায়ার এবার টেনশন হচ্ছে। রাফি ওকে সহ্য করতে পারে না। এতোবার নিজে বে”হায়া সেঁজে প্রপোজ করল কিন্তু তাও লোকটার ভাব কমে না! বারবার নিরবে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়। ইনায়ার এখন নিজের চুলই নিজের ছিঁ*ড়তে মন চাচ্ছে। আরভি এসে কানে কানে বলে,

“দোস্ত ভয় পাস না। কিচ্ছু হবে না। রাফি ভাইকে বলবি যে…”

“কী বলব?”

“এইযে কী..!”

“কী?”

আরভি নিজেও মাথা চুলকে বোকার মতো বলল,
“কী বলবি? কিছুই বলবি না।”

ইনায়া এবার আরভির দিকে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আরভি হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আই লাভ ইউ বলে দিবি। ব্যাস! তারপর যা হয় হোক। দেখবি সে এবারও কিছু না বলে চলে যাবে।”

ইনায়ার দুঃশ্চিন্তা থামছে না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর তিতির রাফি, শুভ, অর্ককে নিয়ে এসেছে। আসলে ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় এদেরকে ক্যান্টিনের দিকে আসতে দেখেছিল। তারপর তিতিররা রাস্তা পরিবর্তন করায় আর দেখা হয়নি। এবার ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে তিতির রাফিকে বলল,

“ভাইয়া আমি এই মেডিকেলে এসেছি বেশিদিন হয়নি। শুরু থেকে আপনারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তার জন্য আপনাদের সাথে টুকটাক কথা বলি। আমি অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি। এখন ইনায়া আপু ভাবছেন, আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে! আপনি একটু আপুকে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দেন যে আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।”

রাফি ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে ইনায়ার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
“ইনায়া, তুমি…”

রাফিকে বলতে না দিয়ে ইনায়া হুট করে বলে ওঠল,
“আই লাভ ইউ!”

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রাফি! এক হাত নিজের কোমড়ে রেখে আরেক হাতে মুখ চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তিতিরেরও চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। এতো সাবলিল প্রপোজাল! উপস্থিত বাকিরা মুখ চেপে হাসছে। ইনায়াও মাথা নিচু করে ঠোঁট কা*ম*ড়ে হাসছে।

রাফি ফুঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
“দেখো ইনু! উফ সরি ইনায়া, তিতির আমার বোনের মতো। আমি ওকে বোনের নজরে দেখি। এখন তুমি প্লিজ সবসময় এসব ইউজলেস সন্দেহ করাটা বাদ দাও। তাছাড়া তোমার সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই যার দরুণ তুমি কোন জুনিয়রকে এসব প্রশ্ন করতে পারো!”

ইনায়া নিজের মুখশ্রীতে সরল ভাব এনে বলে,
“আমি কিভাবে বুঝব? ও আপনার বোনের মতো। আমার কি জানার কথা বলেন? তাছাড়া ও আপনার বোন সেটাও বা আমি প্রথমে কেনো ধরে নিব?”

রাফি বুকে দুইহাত গুঁজে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর বলে,
“কী করতে হবে বলো?”

ইনায়া এবার লাজুক হেসে বলে,
“বেশি কিছু না। আমাকে আই লাভ ইউ বলেন!”

এতক্ষণ অর্ক, শুভ হাসি চেপে রেখেছিল। এবার আর কন্ট্রোল হলো না। দুটোয় হাসতে হাসতে ঘাসের উপর বসে পরেছে। ওদিকে আসফি, তাইজুল, তাওহীদেরও একই অবস্থা। তিতিরেরও এবার হাসি পাচ্ছে। বা*ঘ যখন বি*ড়া*লের মতো আচরণ করে!

রাফি কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো। এবার বাকি যারা মুখ চেপে হাসছিল তারাও আর নিজেদের হাসি চেপে রাখতে পারল না। জায়গাটাতে মনে হচ্ছে কেউ লাফিং গ্যাস ছেড়ে দিয়েছে।

______

সুজনের দিন-রাত কাটছে মেডিকেলের গেইটের দুয়ারে! সন্ধ্যাবেলাতে ম*শার কা*ম*ড় খেয়েও অপেক্ষা করছে। হাসিব ও সাইফ এসব দেখে রিক্তা, ইতি, মৃদুলাকে বলে। রিক্তা কিছু একটা ভেবে বলল,

“শোন, দোস্ত আমি একটা প্ল্যান ভেবেছি।”
সাইফ জিজ্ঞেসা করে,
“কী প্ল্যান?”
“আমি এখন গেইটের বাহিরে যাব। তারপর..”

রিক্তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মৃদুলা রিক্তাকে একটা থা*প্প*ড় দিয়ে বলে,
“মা*থার কয়টা তাড় ছিঁ*ড়ছে? এখন সে গেইটের বাহিরে যাবে! ব*ল*দি জানি কোথাকার!”

রিক্তাও বিরক্ত হয়ে একটা লাগায়। তারপর বলে,
“কথা পুরোটা শোন। আগে থেকে মা*থা খাবি না।”

হাসিব তাড়া দিয়ে বলল,
“তুই বল তো। আমরা শুনতেছি।”

রিক্তা বলতে শুরু করে,
“আমি গেইটের বাহিরে গিয়ে রিকশা খুঁজতে থাকব। আমি মাস্ট শিউর সুজন ও পলাশ আমার কাছে আসবে। ভয় দেখাবে। তিতিরের লোকেশন বলতে।”

ইতি ভীত কন্ঠে বলল,
“তোর যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়? এই রিস্ক নিস না।”

“আরে শোন তো! তারপর বলিস।”
রিক্তার হতাশ স্বর শোনে ইতি মাথা নাড়ায়।
“আমি ওদেরকে ভুল ইনফরমেশন দিবো আর তিতিরের পুরান সিম তো ফেলে গেছে। তাহলে তো ওরা বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমি বলব, সঠিক ঠিকানা জানিনা।”

হাসিব কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
“উমম! আইডিয়া মন্দ না। কাজ করতে পারে। তবে তুই একা যাবি না। আমি ও সাইফ আড়ালে থাকব। উঁচনিচ কিছু দেখলেই খবর করে ছাড়ব।”

রিক্তা বলে,
“আচ্ছা ডান। চল এবার। দুই আপদ বিদায় করে আসি।”

রিক্তা, হাসিব, সাইফ চলল সেদিকে। ইতি ও মৃদুলাও ভাবল যাবে তাই ওরাও চলল।

________
পরিকল্পনা মতো রিক্তা মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে এসে রিকশা খোঁজার ভান করছে। তখনই সুজন ও পলাশের নজর যায় রিক্তার দিকে। সুজনের মনে পরে, এই মেয়েকেতো তিতিরের সাথে দেখেছিল। পলাশকে বললে পলাশও সায় দেয়। ওরা দুইজনে এগিয়ে এসে রিক্তার দুইপাশে দাঁড়ায়। রিক্তা ভয়ের ভাণ করে বলল,

“এই আপনারা কারা? আপনারা এভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন?”

সুজন দাঁত কে*লিয়ে বলল,
“আমরে তুমি চিনবা না গো। আমি সুজন। তয় আমি তোমারে চিনি। এখন কিছু জিগামু। সুন্দর কইরা কইয়া ফেলবা তারপর তুমি তোমার রাস্তায়, আমি আমার রাস্তায়।”

রিক্তার হাসি পাচ্ছে তাও ভয় ভয় ভাব করে তোঁতলানো স্বরে বলে,
“কী..কী বলবেন?”

“আমার ময়নাপাখিডা মানে তোমার বান্ধবী তিতির কই? কই গেছে?”

“আমি জানিনা বিশ্বাস করেন। আমি জানিনা।”

রিক্তার জবাবে সুজন রেগে গেলো। পলাশ এবার বলল,
“তুই মা* সব জানোস। ভালোয় ভালোয় বল। নয়তো..”

এসব অশ্রাব্য ভাষায় রিক্তার ঘৃণা চলে এসেছে। আড়াল থেকে হাসিব ও সাইফ রেগে বের হতে নিলে ইতি ও মৃদুলক আটকিয়ে ইশারায় থামতে বলে। সাইফ ও হাসিব দেয়ালের উপর রাগ ঝাড়ে।

রিক্তা এবার কাঁদো কাঁদো ভাবে বলে,
“আমার কোনো ক্ষতি করবেন না প্লিজ। তিতির ঢাকা গেছে জানি। মেডিকেল কলেজ ছেড়ে দিয়েছে। বাড়ি-ঘর সব বিক্রি করে রাতারাতি চলে গেছে। সিম কার্ডটাও বন্ধ। আপনি চাইলে আমি ওর নাম্বার দিতে পারি। বিশ্বাস করুন, আমাদের জানায়নি।”

সুজনের বিশ্বাস হয় না।
“সত্যি কইরা ক। তুই মিছা কথা কইবি না।”

রিক্তা কাকুতি-মিনতি করে বলে,
“আপনিই বলুন, ও নিশ্চয়ই চাইবে না, আপনারা ওর পর্যন্ত পৌঁছান! তাই না? আর আমরা তো এই শহরেব আছি। আপনারাও আছেন। তাহলে আপনারা যে আমাদের থেকে খবর নিবে তা কি বুঝবে না? তাহলে? ও আমাদেরই বা কিভাবে বিশ্বাস করবে? দুই বছরের পরিচয় মাত্র। আমরা তো আর ওর আপনজন না। আপনজন হলে কি আমাদের রেখে যেতো? আপনারা হিয়ার সাথে যা করতে চেয়েছিলেন! আর এলাকাবাসী কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসে নাই। তাহলে কোন হিসাবে থাকবে? তাই কাউকে না জানিয়ে নিরুদ্দেশ।”

সুজন ও পলাশ ভাবতে থাকে। ওদেরকে ভাবতে দেখে রিক্তা বোঝার চেষ্টা করল যে ওরা কি বিশ্বাস করছে কী-না? এবার মৃদু স্বরে বলল,
“ভাইয়ারা প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি যা জানি সব আপনাদের বলেছি। ও মেডিকেল ছেড়েছে আর আমাদেরও ছেড়েছে। বাবা, ভাই, স্বামী হারা মেয়ে কী-না! ওর আর বাহিরের সম্পর্কের প্রতি মায়া নাই।”

পলাশ ধ*ম*কে বলে,
“তোরে কি আমরা ধইরা রাখছি শা*? যা ভাগ। নাইলে তোরেই তুইল্লা লইয়া যামু।”

রিক্তা মানে মানে করে কিছুটা দূরের একটা দোকানের দিকে চলে গেল। কিছু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে সুজন ও পলাশও চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here