এখনো ভালোবাসি পর্ব ২০+২১+২২+২৩

“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২০|

“ঝিরিঝিরি করে অবিরাম বৃষ্টির পড়ছে বাহিরে।মাঝে মাঝে বাতাস ক্ষেপে উঠে বিশাল উঁচুতলা দালান গুলোকে আঘাত করছে।প্রকৃতি যেনো নারাজ আজ।বিদ্যুৎ চকমকানোর মাধ্যমে নিজের ঝংকার জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পরিবেশেকে।আর এই বর্ষণ রাতেই আয়ন অনেকক্ষণ অজ্ঞান থাকার পর বেশ রাতে আয়নের জ্ঞান ফিরে এলো।চোখ খুলেই মাথার উপরের সাদা সিলিং ফ্যানটির উপর দৃষ্টি পড়লো সর্বপ্রথমে।এরপর চোখটি সরিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে একবার পর্যবেক্ষণ করে যেনে নিলো ও কোথায় আছে বর্তমানে ।একটু নড়াচড়া করতে গিয়ে বুঝতে পারলো ডান হাতে গুলি লাগার কারণে হাতটি নাড়াতে পাড়ছে না।হাতটি ব্যান্ডিজ করা।”

-ঘড়ির কাটায় রাত তিনটে বাজতে দশ মিনিট।বেডের পাশের সিটে আয়নের বামহাতটি কেউ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আয়ন প্রথমে একটু অবাক হলেও পরক্ষণে বুঝতে পাড়লো কে সে?

“একচিলতি হাসি ফুটে উঠলো আয়নের সর্বমুখে এই কষ্টের মাঝেও।আয়ন হালকা করে হাতটি প্রিয়ু থেকে ছাড়িয়ে প্রিয়ুর মাথায় রাখলো।আর তখনই দেখতে পেলো প্রিয়ুর চোখের কিনারায় শুকিয়ে যাওয়া জলের ছোপ ছোপ দাগগুলো।আয়ন তার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে ছুঁয়ে দিলো প্রিয়ুর চোখের চারপাশের মসৃণ ত্বকটি।হালকা হেসে মনে মনেই বলতে লাগলো -লোকে বলে,
“ভালোবাসার মানুষের চোখের জল নাকি সহ্য করার মতো না,কিন্তু দেখ তোর চোখে জল দেখে আমার ভেতরে কেমন সুখ সুখ লাগছে।তার মানে কী?
আমি কী আসলেই অদ্ভুত প্রেমিক।যে প্রেমিকার জলে নিজের সুখ খুঁজে পায়।”

–অনিক কিছুক্ষন পর পরই দু’ভাইয়ের রুম চেক করছে।তিয়াশ সুস্থ তাই ওকে নিয়ে টেনশন নেই আর ওর সাথে সারাও আছে।কিন্তু আয়নের জ্ঞান ফিরেছে কী না তাই চেক করতে আসে একটু পরপর।আর এখনো এসেছে,আয়নের জ্ঞান ফিরেছে কী না দেখতে।আয়নকে সুস্থ দেখে,অনিক খুশিতে কিছুটা পেনিক হয়ে পড়ে।আয়নদা তুমি ঠিক আছো তো।কিছু লাগবে তোমার।দাঁড়াও,আমি এখনই ডাক্তারকে ইনফোর্ম করে আসছি। ওয়েট!

“আয়ন অনিকের এমন বাচ্চামো স্বভাবে কিছুটা বিরাক্ত হয়ে একটা হালকা ধমক দিলো।যেমন মিছেমিছি বাচ্চাদের দেয় শান্ত করতে,ঠিক তেমনই।
অনিক আমি ঠিক আছি।এতো উত্তেজিত হবার কিছুই নেই,রিলেক্স!তৎক্ষনিক অনিকের কাছে তিয়াশ কেমন আছে তাও জানতে চাইলো আয়ন।

“-ও ঠিক আছে দাদা,তুমি ওসব চিন্তা করো না।আর রবিন অদিকটাও সামলিয়ে নিয়েছে।তাই ডোন্ট ওয়ারি।”

–এবার আয়ন কিছুটা রাগ দেখিয়ে প্রিয়ুকে ইশারায় দেখিয়ে বলল,”ওকে এখানে থাকতে কেনো বলেছিস।জানিস না,ওর ঘুম খুব ভারী।আর হসপিটাল গুলোও এখন নিরাপদ না।ঘুমের মধ্যে কোনও অঘটন ঘটে গেলেও,কিছুই বুঝতে পাড়বে না এই মেয়ে”।

“আমি জানি দাদা,তাইতো কিছুক্ষন পরপর চেক করে যাই সব ঠিক আছে কী না।এছাড়া তোমার গার্ডরাও কেবিনের বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে।সো ডোন্ট ওয়ারি।শুধু ডাক্তার,নার্স ছাড়া কারো এই রুমে প্রবেশের পারমিশন নেই।আমি সেই ব্যবস্থা করেই দিয়েছি।আর এই ম্যাডাম মুখে যতোই বলে তোমাকে ঘৃণা করে,অথচ আজ তোমাকে এই অবস্থায় দেখে নিজেই সব থেকে বেশি কেঁদেছে জানো।আমিতো বারবার নিশেধ করেছি তোর এখানে থাকার প্রয়োজন নেই,আমি আছি তো।কিন্তু জানোই তো কতোটা জিদ্দি ও।তোমাকে ছাড়া নাকি কোথাও যাবে না।এখানেই নাকি থাকবে।তাই বাকি সবাই ওকে রেখেই বাসায় চলে গিয়েছে।সকালে আসবে দেখা করতে।

–অনিকের কথা শুনে আয়ন হাসলো।ওর ভালো লাগছিলো।খুব বেশিই ভালো লাগছিলো।যেমন তেমন ভালোলাগা না,কিছু প্রাপ্তির সুখ যেনো মনের ঘরে উকি দিয়ে গেলো।এ এক অন্যরকম শান্তি।এই শান্তিতে শরীরের কোনও চাহিদা নেই।তবে মনের ঘরে কেউ চুপি করে এসে সন্ধ্যার সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে হঠাৎ যেনো আলোয় ভরে তুললো এমন লাগছিলো।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে অনিকের দিকে তাকিয়ে, আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি ভাই।

“হুম,বলো।কী করবো?”

–এই পাগলিটাকে উঠিয়ে আমার বামসাইডে শুইয়ে দিয়ে যা।সারারাত এভাবে থাকলে,সকালে ঘাড়ের ব্যাথায় নিজে কান্নাকাটি করে আমাকেই জ্বালাবে।

“আমিই…..!কিছুটা বিস্মিত হলো আয়নের এমন আবদারে অনিক।কারণ আয়ন একটু ইনসিকিউর ফিল পারসন।তা যদি হয় প্রিয়ুর ব্যাপার তাহলে তো কথাই নেই। তাইতো নিজের ভাইদেরও খুব কম কম ঘেষতে দিতো প্রিয়ুর সাথে।আজ সেই ভাই বলছে তার বউকে কোলে তুলে তার পাশে শুয়ে দিতে।আশ্চর্য!”

–হুম তুই!তুই ছাড়া কী আর কেউ আছে এখানে।আর তুই কী মনে করিস আমি যাকে তাকে আমার বউকে টাচ করার অনুমতি দিবো।হাত না ভেঙ্গে ফেলবো।
শুধু তুলে আমার পাশে শুয়ে দিবি।ব্যাশ!তাও আবার বোন ভেবে নিজের।

“অনিক একটু কেশে দিলো।মাইরি,দুনিয়াতে আয়নদাকেই মনে হয় একপিস স্যাম্পল হিসেবে পাঠিয়েছে খোদা।তা না হলে কেউ নিজের আপন ভাইকে সন্দেহ করে।প্রিয়ু ঠিকই বলে,আস্ত একটা খারুস আমার ভাই।”
______________

“সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরই প্রিয়ু নিজেকে আবিষ্কার করলো আয়নের বুকের উপর। শুয়ে আয়নকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রিয়ুর নরম কোমল হাতদুটো দিয়ে।প্রিয়ু দ্রুত উঠে বসলো।কী আশ্চর্য!আমি এখানে কী করে এলাম।আমি তো,উফ!মনে হয় ঘুমের ঘোড়ে এখানে এসে পড়ছি।আমিও না ঘোড়ার মতো মরার গুম ঘুমাই।আয়নদা উঠে আমাকে এভাবে দেখলে কী ভাবতো।হয়তো বলতো,ছিঃ প্রিয়ু তুই কতোটা নির্লজ্জ।অসুস্থ ব্যক্তিকেও ছাড় দিস না।”

–হঠাৎ প্রিয়ুর আয়নের দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো, একটি নিষ্পাপ ঘুমন্ত মায়াভরা চেয়ারা।যা দেখে প্রিয়ুর ভীষণ মায়া হলো।আয়নকে নিষ্পলক ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো এই প্রথম।ঘুমিয়ে থাকলে আয়নদাকে ভারী সুন্দর লাগে দেখতে।চোখের পাপড়ীগুলো ঠিক মেয়েদের মতো ঘন ও বড়।নাকটা তোতাে পাখির ঠোঁটের মতো চৌকা।আর ঠোঁটগুলো নিকোটিনে পুড়ে কফিকালারের মতো হলেও কেনো জানি দেখতে বেশ লাগে।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে আরো একটু এলোমেলো করে দিলো প্রিয়ু।এমন অগোছালো আয়নদাকে দেখে একদম কলকাতার রসগোল্লার মতো লাগছে। মন তো চায় পুরোটা খেয়ে ফেলি।ইস!

এসব ভাবতেই প্রিয়ু একটা সাংঘাতিক কাজ করে ফেললো।টুপ করে আয়নের কপালে নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দিলো।আর নিজের এহেম কান্ডে প্রিয়ু নিজেই লজ্জায় লালনীল হয়ে গেলো।বলতে লাগলো,
“আমি ইহা কেমনে করিলাম।আমার ধারা এসব কেমনে হলো।হে খোদা আমি কী এই ছেলের রুপের জালে ফেঁসে যাচ্ছি।নো নো নো.. এতো তারাতারি হলে কেমনে হবে।এই খারুসটা আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে।কাল রাতেও এই মহান ব্যক্তিটির জন্য কান্নার সাগরে কতবার ডুব দিয়ে আসলাম।কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিলো এই অতল সাগরে হয়তো আমি নিজেও তলিয়ে যাবো।আর এই সাহেব কে দেখো কতোটা শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে এখন।অন্যের ঘুম হারাম করার ওস্তাদ।ফাজিল লোক কোথাকার!

“দরজার শব্দে প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে,আস্থে করে বেড থেকে নেমে দরজা খুলতে যায়।তাকিয়ে দেখে একটি অল্প বয়সী নার্স দাঁড়িয়ে আছে,মুখে তার মুচকি হাসি।
প্রিয়ু তার এই হাসির কারণ বুঝতে পারলো না,তবে নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,আসুন না, দরজাটাতো খোলাই ছিলো।

–নার্স মুখে মিষ্টি হাসি লাগিয়ে রেখেই বললো,”আমি জানি দরজাটা খোলা ছিলো।আসলে ডাক্তারের রাউন্ডের সময় হয়ে গিয়েছে।যে কোনও সময় এই রুমেও এসে পড়বে।কিন্তু কাল রাতে যখন আমি চেক করতে এসেছিলাম স্যারের জ্ঞান ফিরেছে কী না।তখন আপনাকে স্যারের পাশে শুয়ে থাকতে দেখলাম।স্যারও আপনাকে পরম যত্নে একহাত দিয়েই জড়িয়ে রেখেছিলো,যাতে আপনি পড়ে না যান।আমি কিছু বলতে নিলে তখনই স্যার আমাকে চোখের ইশারায় আস্তে কথা বলতে বললেন,যাতে আপনার ঘুম নষ্ট না হয়।আর এটাও straightly ভাবে বলে দিয়েছেন আপনি ঘুম থেকে উঠার আগে কোনও মেল ডাক্তার যাতে এই রুমে না আসে।তাই আমি দেখতে এসেছি আপনি ঘুম থেকে উঠেছেন কী না।একটা সত্যি কথা বলি,আপনি অনেক ভাগ্যবান।এমন ভালোবাসা আর কেয়ার আগে কখনো দেখিনি।আমি এই হসপিটালে এমনও দেখেছি অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে স্বামী একবারও আসেনি।আর সেখানে আপনার স্বামী নিজের কথা ভাবার আগে আপনার সুবিধা অসুবিধা গুলো খেয়াল করেছে।আমি দোয়া করবো আপনাদের দু’জনের জন্য।সুখে থাকুন।
নার্স চলে গেলো।আর প্রিয়ু আয়নের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,মানুষটিকে যতোটা খারাপ ভাবতাম ততোটা না।হয়তো পরিস্থিতি আর সময়টাই আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।কিন্তু মানুষটিতো আগেরই।”

–আয়নের ঘুম ভাঙ্গতেই প্রিয়ুকে দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলো।দু’জনের চোখের মিল হওয়ার সাথে সাথে,আয়ন প্রিয়ুকে একটু মুচকি হেসে শুভ সকাল জানালো।আয়নের মুখের এই অমায়িক হাসিতে কিছুক্ষণের জন্য প্রিয়ু যেনো ফ্রিজ হয়ে গেলো।
এতো সুন্দর কেনো আয়নদার হাসিটি।একদম মারাত্মক।বুকে গিয়ে লেগে কেমন খোঁচা দেয়। আগে কেনো আমি দেখি নিই এই হাসিটি।নাকি দেখেও দেখিনি।
__________
“সকাল হতে না হতে আয়নকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো পরিবারের সবাই।এমন কী তিয়াশও নিজের কেবিন ছেড়ে এখানেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।প্রিয়ু ব্যাচারী কী আর করবে কিছুই বুঝতে পাড়ছে না।অসহায়ের মতো দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া।সবার এমন হু হতাশ আয়নের একদম ভালো লাগছে না।আয়ন বরারবই একটু কঠিন ধাছের মানুষ।কান্না কাটি এসব একদম নিতে পারেনা।যার করণে আয়নের মেজাজ অনেক চটে গেলো এখন।
কী হলো তোমরা এমন ড্রামা করছো কেনো?আমি কী মরে গেছি।”
–আয়নের মা,আচল দিয়ে নিজের চোখ মুখ মুছে,কিসব বলছিস বাবু।মরুক তোর দুশমন।আর এখন কি শান্তিমতো কাঁদতেও পাড়বো না আমি।

“কাঁদো মন খুলে কাঁদো বাট এখানে না।বাসায় যাও সব।আমি এসব তামাশা একদম টলারেট করবো না।”

–আয়ন,কিসব বলছো।সবসময় এমন উগ্র মেজাজ ভালো না।নিজের পরিবারের ইমোশনকে একটু রিসপেক্ট করতে শিখো।

“বাবা তুমি জানো আমার এসব ইমোশন ড্রামা একদম পছন্দ না।তাই সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে যাও।এখানে তোমাদের আর কোনও প্রয়োজন নেই।সুস্থ হলে আমি নিজেই বাসায় এসে পড়বো।”

–আয়নের এমন ব্যবহারে প্রিয়ুও কিছুটা অবাক হলো।কিন্তু কিছুই বললো না।কিন্তু সবার সাথে যখন প্রিয়ুও বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কেবিন থেকে বের হতে নিলে,আয়নের একটা ধমকে থমকে দাঁড়ালো।
“তোকে আমি যেতে বলেছি,আগ বাড়িয়ে নাচতে নাচতে কোথায় যাস।বাড়ীতে কাকে রেখে এসেছিস ফাজিল মেয়ে যাওয়ার জন্য এতো ছটফট করছিস।”

–প্রিয়ুতো স্থদ্ধ হয়ে গেলো।কী বলে এই খবিস।কাল সারারাত কতো কান্নাকাটি করলাম জাতে এই লোকটার কিছু না হয়।আর এখন একটু সুস্থ হয়ে আমার উপরই তেজ দেখাচ্ছে।শালা হারামি একটা।মানুষ হবে না আর এই জীবনে।

“পুরো একসপ্তাহ পরে আয়ন বাসায় এলো।আর এতে বাসার সবাই অনেকটা খুশি।কিন্তু আয়নের মুখে টেনশন ভরপুর।কারণটা ছিলো,আয়ন এখনো জানতে পারেনি হামলাটা কে করিয়েছে।আর তিয়াশের সাথেই বা ওদের কী শত্রুতা।নাকি এটা জাস্ট শুরু।ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের উপর এ্যাটাক করে কেউ ওকে দূর্বল করতে চাইছে।আয়ন কিছুই বুঝতে পারছে না।পরবর্তী কি পদক্ষেপ নিবে তাও জানে না।তবে পরিবারের সবার কিছুদিনের জন্য বাহিরে অবিরাম চলাফেরায় আয়ন কার্ফু জারি করে দিয়েছে।প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ীর বাহিরে যাওয়া আসা করতে পারবে না।একটা জিনিস খুব ভাবাচ্ছে আয়নকে ওরা কেবল তিয়াশকে মারতে চেয়েছে।অথচ দিশাকে হাতও লাগায় নিই। স্ট্রেঞ্জ!”

–এসবের মাঝে একজনের হাল বেহাল হয়ে গিয়েছে।সে হলো আমাদের প্রিয়ু।আজকাল তো প্রিয়ু উঠতে বসতে খাইতে আয়নকে একটু বেশিই গালাগালি করে তবে তাও মনে মনে।যা একটু ক্রাশ খেয়েছিলো আয়নের উপর।কিন্তু এই কয়েকদিনে আয়নের অত্যাচারে সব যেনো চিপাগলি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে।আয়ন কখনো ইচ্ছা করে বা কখনোও অনিচ্ছায় প্রিয়ুকে খুব জ্বালিয়েছে এ কয়েকদিনে।আয়নের খাবার হতে শুরু করে সব কিছু প্রিয়ুকে করতে হয়েছে।সব থেকে বিপাকে পড়েছিলো,আয়নের শরীরটা মুছতে গিয়ে।আয়ন যখন শুধু তোয়ালটা পরে ওর সামনে বসে ছিলো।তখন প্রিয়ুর কলিজা গুর্দা মনে হয় সব শুকিয়ে গিয়েছে।এক বিশাল মরুভূমির তৃষ্ণা যেনো ওকে ভর করেছে।অথচ ও তিনগ্লাশ পানি খেয়েছে তবুও যেনো শুকনো জমিটা একটু উর্বর হচ্ছে না।আয়ন প্রিয়ুর কান্ডগুলো বসে বসে খুব এন্জয় করেছে।
একদিন রাতে তো প্রিয়ু মহা বিরক্ত হয়েছিলো আয়নের উপর।যখন হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুকে ঘুম থেকে ডেকে বলে,আমি বাথরুমে যাবো।প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হয়ে সেদিন বলেছিলো,তো আমি কী করবো।তোমাকে কলে করে নিয়ে যাবো।নাকি এখন আমাকে তোমার প্যান্টের চেনটাও খুলতে হবে,এরপর বড় কাজ সারার পর ধোয়ায় দিতে হবে।
আয়ন হাসতে হাসতে বলে,এখনো এতোটা করুন দিন আসেনি তোর। আর ডোন্ট ওয়ারি আমার বাম হাতটি মনে হয় তোর উপর দয়া করেই আল্লাহ সচল রেখেছে।তা না হলে ওটাও করতে হতো।
আয়নদা….।প্রিয়ু একটু চিৎকার করে উঠে।কতোটা বাজে তুমি।ছিঃ….

“সেদিন হসপিটাল থেকে যাওয়ার পর দিশা কেবল একদিন এসেছিলো তিয়াশকে দেখতে। এরপর এই মেয়ের আর কোনও খবর নেই।তিয়াশ অনেকটা হতাশ হয়ে গেলো দিশার এমন আচরণে।তিয়াশের সাথে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো,অথচ এই মেয়ের মনে কি একটুও কষ্ট হয় নাই।এতোটাই কী খারাপ আমি।সমস্যা টি বলতে হবে ওকে।পেয়েছে কী আমাকে।”
____________
“অনেকদিন বেড রেস্টের পর আয়ন নতুন উদ্দামে আবার অফিসে আসা শুরু করলো।এতে প্রিয়ুরও কিছু হাত আছে।এ কয়েক সপ্তাহ প্রিয়ু আয়নের অনেক সেবা করছে।আয়নও অনেকটা অবাক হয়েছিলো।কিন্তু মনে মনে খুশিও ছিলো।

–আয়ন অফিসে এসেই দিনেশকে ভিডিও কল দিলো।দিনেশকে কাজের জন্য ইটালি যেতে হয়েছে।তাইতো ও আয়নের এই অবস্থায় ও দেখতে আসতে পারেনি।তোর কাজ শেষ হবে কবে।

“আরো সময় লাগবে রে।আগে বল তুই কেমন আছিস এখন।”

–আলহামদুলিল্লাহ, দেখতে তো পাচ্ছিস।

“হুম,মনে হয় বউ আজকাল একটু বেশি সেবা করছে জনাবের।আগের থেকে আরো বেশি হ্যান্ডশাম হয়ে গিয়েছিস।”

–শালা,তুই আবার ইটালি গিয়ে জেন্ডার চেন্জ করিসনি তো।আমার তো সন্দেহ হচ্ছে তোকে নিয়ে।এমনেই অনেক কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে তোকে নিয়ে,দিনেশ স্যার বিয়ে করছে না কেনো।কোনও সমস্যা নয় তো।হা হা।

“ভাইরে,ভাই! মুখে লাগাম লাগা।কেউ শুনলে সত্যি মনে করবে।তাহলে আমার তিতির কী হবে।এমনেই মেয়েটা ধরা দেয় না।তার উপর এসব শুনলে ওর ত্রিসীমানায় ডুকতে দিবে না।”

–তাতে কী বেশি সন্দেহ হলে,বিয়ের আগে হানিমুনটা সেড়ে নিবি।তোকে চেক করাও হয়ে যাবে।

“হুম,সবাইকে কী নিজের মতো ভাবো।আর তিতির প্রিয়ু না।বুঝলি!”

–মানে কী তোর।প্রিয়ু খারাপ।আয়ন একটু রেগে গেলো।

“আরে ভাই তা বলছি না।প্রিয়ু মেন্টেলি অনেকটা স্ট্রোং।এতটুকু বয়সে ওর উপর কম ঝড় যায়নি।তার উপর তোর মতো ডেবিলের সব কিছু সহ্য করে মেয়েটি চুপচাপ।কিন্তু কখনো নিজেকে ভাঙ্গতে দেয়নি।বরং নতুন উদ্দামে আবার সামনে বাড়ে।কিন্তু তিতির একজন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে।সব কিছু করার আগে ওর ভয় হয়।খুব তারাতারি ভেঙ্গে পড়ে।মনের সাহস টা খুব কম ওর মধ্যে।”

–হুম,বুঝতে পাড়ছি।চিন্তা করিস না,একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

“আচ্ছা,হামলাকারী সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিস।”

–না রে!খুব স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার।এতো সাফাইয়ের সাথে কাজটি করেছে যে কোথাও কোনও ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
“ওকে,সাবধানে থাকিস।হয়তো আবারও হামলা হতে পারে।এখন দেখার বিষয় হচ্ছে,নেক্সট কার উপর হবে।”
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২১|

“আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই,তুমি তাই গো,
আমারো পরানো যাহা চায়।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই,কিছু নাই গো।
আমারো পারানো যাহা চায়….”

–আয়ন মুগ্ধা হয়ে তাকিয়ে আছে নীল শাড়ী পড়া মেয়েটির দিকে।বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে আসছে সেই মেয়েটির মুখের হাসির ঝিনিঝিনি শব্দ।কি মিষ্টি সেই হাসি।শুনলেই পরানটা জুড়িয়ে যায়।সকালের মিষ্টি রোদ্রও যেনো আজ তার সাথে হাসছে।হাওয়ায় উড়ে হঠাৎ যখন মেয়েটির শাড়ীর আঁচলটি পানিতে ছুতে নিলো,তৎক্ষনিক হাত দিয়ে ধরে ফেলে।আঁচলটি সামলাতে তখন কোমড়ে গুজে নেয় মেয়েটি।এতে করে তার ফর্সা পেটটি হালকা উকি দিয়ে একটু গভীর নিশ্বাস ছাড়ে এই গরমে।এ যেনো এক পরম তৃপ্তি।হাতে তার লাল চুড়ি যা শাড়ীর আঁচলের সাথেই মেচিং করে পড়া।ঠোঁটের লাল লিপস্টিক টা যেনো রক্ত জবাকেও হার মানাবে আজ।খোঁপায় বাধা তার চুলগুলো,কিছুটা রাগ করে যেনো বের হয়ে পড়ছে।আর তা বারংবার মুখে এসে সেই নারীটিকে বিরাক্ত করছে।চোখের নিচের কাজলটি এই হালকা গরমে ঘেমে কিছুটা লেপ্টে গেছে।আর এতে যেনো এই নারীটিকে আরো আবেদনীয় করে তুলছে।লাল শাপলা গুলোর মাঝে নীল শাড়ী পরিধান প্রিয়ুর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছে আয়নের আজ।
‘-সিগ্ধ সকালের হালকা গরমকে উপেক্ষা করে প্রিয়ু নৌকায় বসে আছে হাতে কিছু লাল শাপলা নিয়ে।এই বিলটি পুরো লাল শাপলা দিয়ে ভরা।যেদিকে চোখ যাবে চোখে পড়বে লাল সবুজের মাখামাখি।এ যেনো কোনও শাপলা জগতের স্বর্গ।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।লতাপাতা ভরা বিলের পানিতে ফুটে উঠা শাপলা গুলোর মাঝে নৌকায় ভাসতে ভাসতে শাপলার শোভা দেখার পাশাপাশি মন কেড়ে নেয় এই স্বচ্ছ পানিতে সাঁতরে বেড়ানো হাঁসগুলো।মাঝে মাঝে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি,কিছু ফড়িং এর লাফালাফি নিমিষেই মনটাকে প্রফুল্লতা ভরিয়ে দেয়।উদাসীন মনটাও যেনো আজ গাইতে থাকে।’

“দূর থেকে গাড়ীতে হেলান দিয়ে আয়ন একদৃষ্টিতে প্রিয়ুকে দেখে যাচ্ছে।তার স্থির চোখের দৃষ্টি যেনো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।মনের ভেতরের যন্ত্রপাতির ক্রিয়াগুলো যেনো থেমে থেমে চলছে,যদি না এখন একে সারানো হয় কি যে হবে আল্লাহই ভালো যানে।কিন্তু এই নীল শাড়ী পড়া প্রিয়ুসী কি বুঝবে আয়নের ভেতরের সেই জ্বালা।আজ অনেক দিন পর যে আয়নের ভেতর আবার তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে।যা এতোদিন আয়ন ধমিয়ে রেখেছিলো প্রিয়ুকে কিছুটা স্পেস দিতে।কিন্তু আজ প্রিয়ুকে এই রুপে দেখে আয়নের ভেতরের সুপ্ত চাহিদাটাও যেনো আবার নড়ে উঠলো।আয়ন আজ ভেতরে ভেতরে ভীষণ তৃষ্ণার্ত অনুভোব করেছে।ওর গলা শুকিয়ে ঠোঁটগুলো কাঠ হতে লাগে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে আবারও ধমানোর বৃথা চেষ্টা করে চলছে।
কিন্তু আজ আর না আজ তোকে চাই আমার প্রিয়ু,খুব করে চাই।তবে আমি আসবো না,তুই নিজেই আসবি।আজ নিজেই তুই ধরা দিবি এই আয়নের কাছে।আই প্রমেজ সোনা।আজ তোকে ধরা দিতেই হবে।তোর জীবনে রোহান নামের চ্যাপটারটা যাতে আর কোনও ভাবে এ্যান্টার করতে না পারে সেই ব্যবস্তাও করে দিবো।এটা বলেই আয়ন একটু বাকা হেসে,চোখে সানগ্লাসটা পড়ে নেয় সূর্যের তাপের উত্তাপের কারণে।আয়নের একদম সহ্য হয় না এই তাপটা।তাইতো প্রিয়ুকে একাই নৌকায় উঠতে হলো।সূর্যের এই তাপ আয়নের স্কিনে একদম সহ্য হয় না।কেমন লালচে বর্ণ ধারণ করে,প্রিয়ু তা আগেই যানে।তাইতো আয়নকে সাথে আসতে দেয়নি।
আয়ন জোড়ে চিৎকার করে ডাক দেয় প্রিয়ুকে।আর মাঝিকে বলে নৌকা ব্যাক করতে।টাইম শেষ।এখানে আর থাকা সম্ভব না।রোদ একটু বেশিই প্রখর হচ্ছে।আর এই তাপে প্রিয়ুর ফর্সা মুখটাও লাল হয়ে যাচ্ছে।যা আয়নকে বাধ্য করছে প্রিয়ু থেকে দৃষ্টি না সরাতে।”

গতকাল সকালে…

–প্রিয়ু কলেজ শেষ করে দিশাকে সাথে করে মাত্র বের হয়।আর তখনই তিয়াশের গাড়ী এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।তিয়াশকে দেখেই দিশা একটু ঘাবড়ে এদিক ওদিক তাকায়।হয়তো কাউকে খুঁজার চেষ্টা করছে।
তিয়াশ গাড়ী থেকে নেমেই ওদের সামনে দাঁড়ালে,দিশা প্রিয়ুকে বায় বলে চলে যেতে নিলো।কিন্তু তিয়াশ দিশার হাতটি ধরে ফেলে।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে দিশা।তাই এখানে কোনও সিনক্রিয়েট করবে না,অসুবিধা কিন্তু তোমারই হবে।চোখ পাকিয়ে বলে তিয়াশ।যা দেখে দিশা এমনেই ভয় পেয়ে যায়।
“এরপর প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করে গাড়ী আসবে নাকি আমি ড্রপ করে দেবো তোকে।”
–না ভাই,আমাকে নিতে আসবে,তোমরা যাও।I think you should speed time alone now..
“তিয়াশ একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুকে বায় বলেই,দিশাকে একটু জোড় করেই গাড়ীতে উঠালো।দিশা ব্যাচারী কিছুক্ষন প্রিয়ুর দিকে নিরিহ ভাবে তাকিয়ে ছিলো।চোখের ইশারায় বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছিলো প্লিজ দোস্ত আমাকে এই লোকটা থেকে আজ উদ্ধার কর।তুই না আমার প্রাণের দোস্ত।কিন্তু প্রিয়ু দিশার ভাবমূর্তি বুঝেও না বুঝার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলো।মুখে তার দুষ্ট হাসি।”

–তিয়াশের গাড়ী চলে যাওয়ার পর প্রিয়ু নিজের ফোনটা বের করলো ড্রাইভার কাকা কে কল দেওয়ার জন্য কিন্তু ঠিক তখনই আরেকটা গাড়ী এসে দাঁড়ালো প্রিয়ুর সামনে।তবে এই গাড়ীটি প্রিয়ুর চেনা না।তাই একটু বিরাক্ত হয়ে সরে যেতে নিলো,কিন্তু গাড়ী থেকে নামা ব্যক্তিটিকে দেখে কিঞ্চিত ভ্রুটা কুচকালো।কারণ মাথায় ক্যাপ,চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাস্ক পরিধান করা একটা লোক বের হলো গাড়ী থেকে।প্রথমে লোকটিকে চিনতে না পাড়লেও পরক্ষণে লোকটিকে চিনতে প্রিয়ুর একটুও সময় লাগলো না।মুখ দিয়ে বিরাক্তকর কন্ঠে বললো…রোহান।
_____________
“রোহানকে প্রিয়ু এখানে একদমই আশা করেনি।রোহানের আচানক এখানে আশার কারণটাও বুঝতে পারছে না।তবুও মুখে কিছু না বলে, প্রিয়ু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আর প্রচণ্ড রাগ উঠছে ড্রাইভার কাকার উপর।আজই কি সব একসাথে হওয়ার কথা ছিলো।প্রিয়ু ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রাইভার কাকা কে কল দিতে যাবে,আর তখনই রোহান প্রিয়ুর সামনে এসে দাঁড়ালো।”
–রোহানকে নিজের এতো কাছে দেখে,প্রিয়ু দুপা পিছনে চলে গিয়ে,বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,কি সমস্যা।আর আপনি এখানে কি করেছেন।আমার কলেজে আপনার কোনও কাজ আছে বলেতো মনে হয় না।আর এ কেমন বেশভূষা ধারণ করছেন।আপনি কি কোনও জঙ্গিবাদী দলের সদস্য নাকি।”
“রোহান চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে পকেটে ভরে নিলো।একটু মুচকি হেসে জবাব দিলো।পাবলিকের মধ্যে অনেকেই আমাকে চিনে,আর কোনও মিডিয়া দেখে ফেললে তোমার জন্যও সমস্যা হবে।তাই আর কি এমন লুক ধারন।যাই হোক কথা ছিলো তোমার সাথে একটু।এখানে পাশেই একটা নতুন কফিসোপ হয়েছে।কফি খেতে খেতে কি আমরা কথা বলতে পারি।”
–না!প্রিয়ুর সোজা উত্তর।আপনার আমার সাথে কোনও কথা থাকতে পারে বলে মনে হয় না।আর প্লিজ আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন।এটা আপনার জন্যই ভালো হবে।না হলে….প্রিয়ু কিছুক্ষন চুপ থাকলো।ছাড়ুন।
আশা করি আপনি বুঝে গিয়েছেন।এটা বলেই প্রিয়ু রোহানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,রোহান আবার বলে উঠে।আমি কি তোমাকে ড্রোপ করে দিয়ে আসতে পারি প্রিয়ু।প্লিজ।”
“প্রিয়ু ঘুড়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই,একটা পাজেরো এসে প্রিয়ুর গা গেষে দাঁড়ায়।এই গাড়ীটি প্রিয়ু চিনে।ভয়ে প্রিয়ুর আত্মাটা একটু কেপে উঠলো।এটারই ভয় পেয়েছিলো এতেক্ষণ।বলে না যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই রাত পোহায়। গাড়ীর দরজা খুলে বের হলো আয়ন।
“-রোহান আয়নকে চিনে,তবে বর্তমানে প্রিয়ুর সাথে আয়নের সম্পর্ক কি তা জানে না।তাছাড়া আয়ন মডেলিং জগতে নামকরা একজন লোক,তাকে না চেনার প্রশ্নই উঠে না।আর রোহান জানে প্রিয়ু আয়নের কাজিন।ব্যাশ।”
–আয়ন এসেই রোহানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রিয়ুর গালটা ধরে বলে,তুই ঠিক আছিস।প্রিয়ু নিজের নার্ভাসনেসটা লুকিয়ে হালকা মাথা নাড়লো।আয়ন প্রিয়ুকে একহাতে জড়িয়ে গাড়ীর দিকে নিয়ে যেতে নিলে রোহানের ডাকে তারা থেমে যায়।
‘-আর প্রিয়ুর তখন মন চাইছিলো রোহানকে ধরে কোনও গাড়ীর নিচে ফেলে দিতে।এ এক মহা ঝামেলা।আয়নদা সে দিনই আমাকে শাসিয়ে বলে ছিলো,রোহান থেকে দূরে থাকতে।তা না হলে রোহানের অবস্থা খারাপ করে ফেলবে।আর এই ছেলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনে বলছে।আয় ভাই আমাকে মার!শালা কুত্তা।যতো মরা আমার উপর পড়ে।’

–আয়ন পিছনে ঘুড়ে,রোহানের দিকে তাকালো।খুব politely ভাবে জবাব দিলো।কিছু বলার আছে আপনার মিস্টার রোহান।
“রোহান হেসে আয়নের কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে হাত মিলালো।আয়নও তা স্বাচ্ছন্দ্যে একসেপ্ট করলো।”
–প্রিয়ুর মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আয়নের এমন শান্ত রুপ সম্পর্কে খুব একটা পরিচিত নয়।
“আয়ন হাতদুটো প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে শান্ত ভাবে বললো,বলুন মিস্টার রোহান।কি বলবেন।”
–একচুয়েলি, আমার প্রিয়ুর সাথে কথা ছিলো।বাট আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেন নিই।কিন্তু প্রিয়ু আমাকে চিনে।
“আয়ন হেসে জবাব দিলো,আমি আপনাকে খুব চিনি।বরং আপনার থেকেও বেশি আমি আপনাকে চিনি।”
–মানে!আমি বুঝতে পারলাম না।
“ছাড়ুন ওসব।আপনি বলুন,হঠাৎ আমার ওয়াইফের সাথে আপনার কি এমন তলব পড়লো,যার কারণে আপনি ওর কলেজ পর্যন্ত ছুটে আসলেন।”
–ওয়াইফ!মানে!আমি যতোটুকু জানি আপনি প্রিয়ুর কাজিন হন।ঠিক।
“হুম,ঠিক বলছেন আপনি।তাতে কি।তাই বলে কি হ্যাসবেন্ড হতে পাড়বো না।প্রিয়ু বর্তমানে আমার ওয়াইফ।আর আমার ওয়াইফের সাথে আপনার কোনও কথা থাকতে পারে বলে মনে হয় না।আর এটা আমার পছন্দও না।কড়া জবাব আয়নের।”
–রোহান কিছুক্ষণ প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে এবার দৃষ্টি আয়নের দিকে আনলো।সেটা মনে হয় প্রিয়ুকে ডিসাইড করতে দিলে ভালো হয় মিস্টার আয়ন।কারণ ও আপনার ওয়াইফ।কোনও নিলামে কেনা প্রোপার্টি না যে,নিজের কোনও মর্জি চালাতে পারবেন না।
“আয়নের এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো,ও হয়তো ভুল শুনেছে।কারণ আজ পর্যন্ত আয়নের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কেউ করেনি।আর এখানে এই ছেলে দুদিন হলো স্টার হয়েছে,আর এখনই আয়নকে টেক্কা দিতে চায়।এসব ভেবে আয়নের রাগটা যেনো বাড়তে লাগলো।”
–পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রিয়ু আয়নের হাতটি ধরে ফেললো।আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,মিস্টার রোহান আমি আগেও বলেছি,আপনার সাথে আমার কোনও কথা নেই।প্লিজ দূরে থাকুন আমার থেকে।
“আয়ন তাচ্ছিল্য কন্ঠে রোহান কে বললো,আশা করি উত্তর পেয়ে গিয়েছেন মিস্টার রোহান।”
‘রোহান নিশ্চুপ।’
–আয়ন প্রিয়ুকে সাথে নিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়লো।পুরো রাস্তায় আয়ন আর কোনও কথা বললো না প্রিয়ুর সাথে।প্রিয়ু একদুবার চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু হাতে কিছুই আসে নিই।আয়ন প্রিয়ুকে বাড়ীতে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলো অফিসে।প্রিয়ু কিছুটা আপসেট হলেও মনে মনে ভেবে নিলো,রাতে বাসায় আসলে বুঝিয়ে বলবে সব।
“সেদিন রাতে আয়ন একটু দেরি করেই বাসায় এসেছিলো।আর এসেই প্রিয়ুকে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আয়ন একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুর পাশে দাঁড়ালো।আর তখনই টেবিলে উপরে রাখা একটা চিরকুট চোখে পড়লো আয়নের।আয়ন চিরকুটটা খুলে দেখে এতে কিছু লিখা আছে…

“আম সরি আয়নদা।আমি সত্য রোহানকে আসতে বলেনি।আমি জানি না,ও আমার কলেজের ঠিকানা কোথায় পেয়েছে।প্লিজ বিলিভ মি।”

–চিরকুট পড়ে,অনেকটা শান্তি লাগছে আয়নের।সত্য বলতে ও চেয়েছিলো এই ব্যাপারে কথা বলতে।কিন্তু তার আগেই প্রিয়ু ওর জবাব দিয়ে দিয়েছে।আয়নের মনটা খুশি হয়ে গেলো।তাই আয়ন ডিসাইড করলো প্রিয়ুকে কাল সারপ্রাইজ দিবে।সারাদিন ওর এই মিষ্টি পরীটিকে নিয়ে ঘুড়বে।অনেক আগে প্রিয়ু আবদার করছিলো আয়নের কাছে,শাপলা বিল দেখতে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তখন আয়ন প্রিয়ুর এমন আবদারকে একদম নাকচ করে দিয়েছিলো।আর তাই প্রিয়ুকে সকালে জোড় করে ঘুম থেকে তুলেই আজ শাপলা দেখাতে নিয়ে আসলো আয়ন।
____________
“তিয়াশ একটা লেকের পাড়ে গাড়ীটি থামালো।আশেপাশে তেমন কেউ নেই,তবে চারপাশটা গাছপালা দিয়ে ঘেড়া।পুরো রাস্তায় না দিশা কিছু বলেছে,না তিয়াশ।এখনো গাড়ীতে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।দিশার এমন আচরণ তিয়াশ নিতে পাড়ছে না।সবই তো ঠিক ছিলো।দিশাকে সেদিন রাজিও করে ফেলেছিলো।তাহলে হঠাৎ আবার কি হলো।”
–কথায় বলেনা,প্রত্যেক মানুষের সহ্যের একটা সীমা থাকে।আর মানুষটি সে পর্যন্তই নিজেকে আটকে রাখতে পারে।তিয়াশ কিছুটা রাগী কন্ঠে দিশাকে জিঙ্গেস করলো,সমস্যা কি তোমার।এমন অচেনা বিহেভ করছো কেনো।আর কোন সাহসে তুমি আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে দিয়েছো।তুমি কি মনে করো।নাম্বার ব্লক করলেই সম্পর্ক শেষ।আমি কিছু জিঙ্গেস করছি দিশা এন্সার মি ডেম।গাড়ীতে একটা বাড়ী দিয়ে।
“ছিঁচকাঁদুনী দিশা তিয়াশের এমন কঠোর আচরণ একদম নিতে পারেনি।তাই ভয়ে আবার কেঁদে দিলো।”
–ও গোড!দিশু তুমি এতো কান্দো কিভাবে বলবে।তোমার ট্যাংকি কি কখনো খালি হয়না।এতো পানি পাও কই।বুঝতে পারছি,এই তোমার কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনদিন পানির বিল বাড়াচ্ছে।গরীব মানুষের হায় লাগবে তোমার উপর।ওদের উপর একটু দয়া করো।
“তিয়াশের টিটকারি মারা কথায় দিশার মেঝাঝ আরো বিগড়ে গেলো।দুহাত দিয়ে তিয়াশকে মারতে নিলে,তিয়াশ ধরে ফেলে দিশাকে কাছে টেনে নেয় নিজের।হালকা ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে,প্লিজ দিশু একবার বলো,কি হয়েছে।না বললে জানবো কি করে।আমার কাছে এক্সট্রা কোনও পাওয়ার নেই তোমার মনের কথা জানবার।”
–দিশা এতোক্ষন পর শান্ত হয়ে তিয়াশকে বলতে লাগলো।আপনার মা আমাকে পছন্দ করে না।সেদিন হাসপাতালে আপনাকে দেখতে যাওয়ায় উনি অনেকগুলো কথা শুনিয়েছেন।আর এও বলেছে,আমার মতো এমন অনেক মেয়েই আপনার পিছে লেগে থাকে।কিন্তু তাতে কোনও লাভ নেই।কারণ আপনার মায়ের মর্জি না থাকলে আপনি কাউকে একসেপ্ট করবেন না।আর আমাকে উনার একদম পছন্দ হয় না।আমার মতো মিডেলক্লাশ ফ্যামেলি মেয়েকে উনি কোনো দিনও গ্রহণ করবে না।আমাকে আপনার জীবন থেকে সরে যেতে বললো।
“মায়ের এমন আচরণ সম্পর্কে তিয়াশ খুব ভালো করেই অবগতো।মায়ের এমন আচরণের কারণে তিয়াশকে প্রায়ই লজ্জিত হতে হয় সবার কাছে।যেমন আজ হলো।তিয়াশ দিশাকে নিজের থেকে সরিয়ে,দিশার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে উঁচু করলো।দিশু আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো।আমি মায়ের হয়ে সরি বলছি।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার হাতটি কখনো ছাড়বো না।কখনো যদি আমি বাধ্য হই তোমাকে ছাড়তে,তাহলে আমার লাইফে “এই তুমিটার জায়গা “অন্য কেউ পাবে না।আমি আসতেই দিবো না।এতোটুকু কি বিশ্বাস করতে পারো।”
–দিশা খুশি হয়ে তিয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।তিয়াশও যেনো আজ অনেকদিন পর মনে একটু শান্তি ফিরে পেলো।
“বেশ কিছুক্ষন সময় তারা একসাথে কাটালো।তিয়াশ দিশার চশমাটা নিজের সার্ট দিয়ে পরিস্কার করে পড়িয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো।আচ্ছা দিশু কারণটা কি এটাই ছিলো নাকি আরো কিছু আছে।কেনো জানি তিয়াশের বিশ্বাস হচ্ছে না,এই কারণে দিশা এতোদিন ওকে এভোয়েড করেছে।সব কিছু থেকে ব্লক করেছে।কারণ ওর মায়ের স্বাভাব সম্পর্কে দিশারও কিছুটা আইডিয়া আছে।তাহলে এতো রিয়েক্ট কেনো।এই ব্যাপারটাই ভাবাচ্ছে তিয়াশকে।”
–দিশা তিয়াশের দিকে তাকিয়ে, আস লে।
“হুম বলো কি?”
–সেদিন হসপিটাল থেকে বেড়াবার সময়, হসপিটালে বাহিরে নিশান্তের সাথে দেখা হয়।আর নিশাান্ত বলে,আপনার উপর হামলাটা নাকি ও করিয়েছে।আমি যদি আপনার সাথে ব্রেকআপ না করি তাহলে পরবর্তী হামলা আরো ভয়ানক হবে।আমি চাইনা,আমার জন্য আপনার কোনও ক্ষতি হোক।তাই আপনাকে একেবারে এভোয়েড করতে লাগলাম।আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।সরি!
“হুম, তাহলে এ ব্যাপার।তুমি চিন্তা করোনা।ও নিশান্ত কিছুই করতে পারবে না আমার।ও কেবল তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।একটা প্রমেজ করো দিশু।
–কি? ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে তিয়াশের দিকে দিশা।
“যতো যাই কিছু হোক তুমি কখনো এই সম্পর্কটাকে ভাঙ্গার চেষ্টাও করবে না।যদি কখনো তুফান আসে,তাহলে আমাদের সম্পর্কটাকে সময়ের হাতে ছেড়ে দিবে।দেখবে সময়ই সব ঠিক করে দিবে।”
দিশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।তিয়াশও খুশিতে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে।তবে নিশান্তের ব্যাপারটা তিয়াশকে ভাবাচ্ছে এখন।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২২|

“আপা কেনো বুঝতে পাড়ছেন না,আমি এটা পাড়বো না।আর আয়নও কখনো রাজি হবে না।আপনি তো নিজ চোখেই দেখতে পাড়ছেন ছেলেটা আমার প্রিয়ুকে কতোটা ভালোবাসে।আমি যদি ওকে বেশি বাধ্য করি তাহলে,ও সব কিছু ধ্বংশ করে দিবে।সাথে নিজেকেও।”
–আমি এতো কিছু শুনতে চাই না ইরফাত।তুই ওয়াদা করেছিলি,আমার মেয়ে এই বাড়ীর বউ হবে।আর এখন তুই পল্টি মারছিস ইরফাত।আমি আগেও বলেছি সারা এই বাড়ীর বউ না হলে তোদের জন্য ভালো হবে না।
-‘আর এই যে মহারানী, আসমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে।আপনি তো মনে হয় চানই না আমার মেয়ে এই বাড়ীর বউ হোক।তাই তো দেখছি আজকাল ওই মেয়েটাকে কিছুই বলেন না।একদম লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন।আপনার প্রশ্রয় পেয়েই মেয়েটি দেখি নিজের ইচ্ছা মতো চলছে ফিরছে ঘুরছে।আর আপনি ভাবমূর্তির মতো চেয়ে চেয়ে দেখছেন।আপনার কারণেই এই মেয়ে এতো সাহস পেয়েছে।আরে এই বাড়ীতে আসার পর পর যদি আপনি ওকে ওর যোগ্যতা দেখিয়ে দিতেন তাহলে এই মেয়ের এখনো এই বাসায় থাকার সাহস হতো না।কবে না উল্টা পায়ে দৌড় লাগাতো।কিন্তু আপনার তো সেই গুনটাও নেই।কেমন শ্বাশুরী আপনি।শ্বাশুরীদের নামই ডুবিয়ে দিলেন।
–আচ্ছা মহিনী আপা আমি বুঝতে পাড়ছি না,আপনার বীন কেনো এক জায়গায় এসেই বন্ধ হয় প্রতিবার।আপনি শুধু শুধু আমাকে দোষ দেন।আয়নকে চিনেন না আপনি।সামান্য সেদিন প্রিয়ুকে একটা বড় চিতল মাছ কাটতে দিয়ে ছিলাম।ম্যাডামের মাছ কাটতে গিয়ে একটু হাত কেটে গেছে বলে আয়ন এসে পুরো বাড়ী মাথায় তুলে ফেল ছিলো।এতো কাজের লোক থাকতে প্রিয়ুকে কেনো রান্না ঘরে যেতে হয়েছে কাজের লোকের সাথে সাথে আমারও ক্লাশ নিয়েছে।এরপর ও বলবেন আমার দোষ।আরে ছেলে আমার সারাদিন অফিসে থাকলে কি হবে,বাড়ীতে কি হয় না হয় তা কিভাবে যেনো ছেলের কানে চলে যায়।আর আয়নকে তো জানেন কতোটা রাগী।প্রিয়ুর ব্যাপারে ওর কাছে কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।এরপর আর কি বলতে পারি।ছেলেমেয়ে বড় হলে তাকে বুঝানো যায়।কিন্তু না বুঝলে তাকে তো মারার ভয় দেখিয়ে কাজ করা যায় না।

“হুম!হয়েছে,এতো ন্যাকা ড্রামা আর আমাকে দেখাতে হবে না।তুমি যে কতো কাজের তা জানা আছে আমার।এখন ভাবো প্রিয়ুকে কিভাবে তাড়িয়ে সারাকে আনা যায় এই বাড়ীতে।”

–মা এএএ।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশ আর অনিক।কি বলছো এসব।আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড।
“তিয়াশ,মুখ সামলিয়ে কথা বলো।আমি তোমার মা।ফ্রেন্ড নই।”
–আমিও জানি তুমি আমার মা।তাইতো অবাক হচ্ছি।আর তোমার কি লজ্জা করলো না কথাটি বলতে। কিভাবে ভাবলে আয়নদা প্রিয়ুকে ছেড়ে দিবে।এটা কখনো সম্ভব না।আর কোনও কারনে ছেড়ে দিলেও প্রিয়ুর জায়গা কাউকে দিবে না।
“ওটা পরে বুঝা যাবে।আগে একবার মেয়েটা আয়নের জীবন থেকে সরে তো যাক। তারপর দেখা যাবে আয়ন অন্য কাউকে গ্রহণ করে কিনা।আর তুই কেমন ভাই বলতো।কোথায় বোনের সংসার গোড়াতে সাহায্য করবি,তা না করে ওই মেয়েটার দালালি করছিস।তুই সত্যি কি আমার ছেলে।”
–মা,অন্যের সংসার ভেঙ্গে সেখানে নিজের জন্য তাজমহল গড়া যায় না।সংসার ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গার সমান।আর কেনো তুমি আয়নদার পিছনে পড়ে আছো।আমার বোন কোনও ফেলে দেওয়া জিনিস না যে ওকে কেউ বিয়ে করবে না বলে তুমি এসব করছো।

“তুই চুপ থাক।বড়দের মাঝে কথা বলতে আসবি না।তাছাড়া ইরফাত আমাকে ওয়াদা করেছে সারা এই বাড়ীর বউ হবে।বাবার ওয়াদা কি ছেলের পূরণ করা দায়িত্ব নয়।”
–তিয়াশ কিছু বলতে নিবে,ওকে থামিয়ে অনিক ওর বাবা মাকে জিঙ্গেস করলো কাহিনী কি এই ওয়াদার।

“ইরফাত সাহেব বলা শুরু করলো,আসলে অনিক সারা যখন ছোট ছিলো তখন ওকে আমার খুব ভালো লাগতো।আর আমি মনে মনে চেয়েও ছিলাম ওকে এই বাড়ীর বউ করবো একদিন।তাই আবেগের বশে আপাকে ওয়াদা করে ফেললাম।তখন সত্যি আমি জানতাম না পরিস্থিতি এমন হবে।তখন তো আয়ন আর প্রিয়ুর কোনও কাহিনীও ছিলো না।কিন্তু আয়ন প্রিয়ুকে পছন্দ করায় সারাকে নাকচ করে দিলো।তাহলে এখন আমি আর কি করতে পারি বল।আয়ন প্রিয়ুকে বিয়ে না করলে একটা উপায় বের করা যেতো।কিন্তু এখন!”
–অনিক কিছুক্ষন ভেবে,ফুফু আপনি কি চান সারা এই বাড়ীর বউ হোক তাইতো।
“হুম।মুখ ভার করে।”
–ওকে,তাহলে আমি বিয়ে করবো সারাকে।
“মানে।মহিনী বিস্মিত হয়ে।”
–মানে,আমি আমার বাবার ওয়াদা পালন করবো।আমি বিয়ে করবো।কিন্তু একটা শর্ত আপনি দাদা আর প্রিয়ুর লাইফ থেকে দূরে থাকবেন।ওদের সংসারের দিকে নযরও দিবেন না।
“আর ইউ সিরিয়াস অনিক।না মানে,আমি আ স লে।তুই কোনও চাপে পড়ে করছিস না তো।”
–নো তিয়াশ।দেখ আমার কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই।তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি কখনো কোনও রিলেশনেও নিজেকে জড়ায় নিই।তাহলে আমার সারাকে বিয়ে করতে কোনও সমস্যা নেই।আজ না হয় কাল বিয়ে তো করতেই হবে,তাহলে সারা কেনো না।
“না! এ কি করে হতে পারে।মহিনী একটু চিল্লিয়ে।”
–কেনো হয় না মা।তুমিতো চাইলে এই মাত্র সারাকে এই বাড়ীর বউ বানাতে।তাহলে সমস্যা কি এখন?অনিকও তো এই বাড়ীর ছেলে ।
“না মানে।আমি তো আ…”।
–ওই আশা বাদ দেও।সারার বিয়ে হলে অনিকের সাথেই হবে।তা না হলে এই বাড়ীর স্বপ্ন ভুলে যাও মা।

“ইরফাত সাহেব আর আসমা বেগম নিরবতা পালন করছে।কে কাকে বিয়ে করছে,কেনো করছে।এতো সব আজাইরা চিন্তা এখন তারা ভাবতে চায় না।এই ঝামেলা মিটতে পারলেই চলে।”
___________
“সারাদিন আজ প্রিয়ু অনেক আনন্দ করেছে।প্রিয়ুর সাথে থেকে আজ আয়নও যেনো তার শৈশব কালের পুরোনও স্মৃথিগুলো আরেক বার ফিরে পাওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছে।সময়ের আড়ালে ঢেকে যাওয়া স্মৃতিগুলো আজ আবার উকি দিয়ে উঠেছিলো।শৈশবের সোনালী রোদ্দুর আজ আবার সারা গায়ে মেখেছে আয়ন।ব্যস্ত নগরীর এই ব্যস্ত শহরে,চারদিকে ইট পাথরে ঘেরা চার দেয়ালের মাঝে এসি রুম থেকে বের হয়ে আজ যেনে মনটা প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছে।
প্রকৃতির হাওয়ার সাথে ভেসে আসা মিষ্টি ঘ্রানটা নাকে এসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে সকল ক্লান্তি দূর করে ফেলে নিমিষে।প্রত্যেকটি মানুষের মনের কোনে তার শৈশবকাল ঘাপটি মেরে বসে থাকে।অপেক্ষায় থাকে,একটু উকি দেওয়ার সুযোগ খুঁজে।”

–গাড়ী ছুটছে শহর থেকে দূরে।সারাদিনের ছুটাছুটিতে কিছুটা ক্লান্ত এসে ভিড় করছে শরীরে।তবে মনটা যেনো ফুরফুরে।প্রিয়ু রাতের শহরটিকে চোখ ভরে দেখছে।আয়নের ফোনটা বার বার বেজে বন্দ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আয়নের যেনো সেদিকে কোনও খেয়ালই নেই।
“আয়নদা ফোনটা ধরো।কখন ধরে বেজে চলছে।সমস্যা কি?”
–আয়ন আড় চোখে একবার প্রিয়ুকে দেখে আবার সামনে তাকালো।আজ ফ্রেন্ডসরা লেট নাইট পার্টির আয়োজন করেছে।সবাই হয়তো এসে পড়েছে, আমি এখনো কেনো আসি নিই।তাই ফোন করছে হয়তো।
“তাহলে তোমার ওখানে যাওয়া উচিৎ। তা না হলে সবার মন খারাপ হবে।”
–নাআআ,আমি যাবো না।লেট নাইট পার্টি হবে,তুই এমনেই টায়ার্ড ফিল করছিস।
“তাহলে তুমি আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে যাও।তাহলেই তো হলো।আয়ন কিছু বলবে তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠলো।এবার স্কিনে দিনেশের নামটি ভেসে উঠলো।আয়ন মুখে হাসি নিয়েই ফোনটি রিসিভ করে,কিরে শালা।তুই কবে আসলি।”
–আজ সকালে।কিন্তু তুই এখনো আসিস নিই কেনো।একবার আয় দেখ,চারদিকে কতো পরী ঘুরছে।দেখেই পাগল হয়ে যাবি।
“তাই নিই,তাহলে তো তিতিরকে একটা ফোন দিতেই হয় আমার কি বলিস।ওই পরী বাসায় থেকে কি করবে বল।পার্টিতে আসলে সবাই একটু দেখার সুযোগও পাবে।”
–হারামি!খুন করুম তোরে আমি।তুই আমার বন্ধু নামে দুশমন।
“আরে বাহ!তোমারটা দেখলে মানুষ খারাপ।আর তুমি পর নারী দেখলে কোনও সমস্যা নাই।মামু এটা কেমন আইন।”
–ওই বন্ধ কর তোর লেকচার,আসবি কখন ওটা বল।
“পসিবল না রে।আজ প্রিয়ুর সাথে বের হয়েছিলাম।এখনো ও আমার সাথে।”
–সমস্যা কি, ওকে নিয়ে আস।আরে এতোদিন কাজিন হিসেবে পরিচিত দিয়েছিস ফ্রেন্ডসদের সামনে।এখন আমাদের ভাবী হিসেবে দিবি।চিন্তা বাদ দিয়ে চলে আস কিছুক্ষনের জন্য।
“আয়ন ফোনটা কেটে,প্রিয়ুর দিকে তাকালো।সারাদিনের ক্লান্তির চাপ তো আসে মুখে।কিন্তু তবুও কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে প্রিয়ুকে।এই মেয়েটিকে সাধারণ মাঝেও অসাধারণ লাগে কেনো।আয়ন আজও বুঝতে পারেনা।তাই তো আয়ন বার বার না চাইতেও প্রেমে পড়ে যায়।আয়ন প্রিয়ুকে রাজি করে নিলো নিজের সাথে যাওয়া জন্য।অনিচ্ছা থাকা সত্যেও প্রিয়ু পার্টিতে যেতে রাজি হয়ে গেলো।”

–পার্টিতে ঢুকতেই প্রিয়ুর মাথা ব্যাথা আড়ম্ব হয়ে গেলো,এতো লাউড মিউজিক।আর চারদিকে বিভিন্ন রং এর লাইট জ্বলছে।
“প্রিয়ু তোর কি খারাপ লাগছে।তাহলে আমরা চলে যেতে পারি।”
–নাআআ,না। সমস্যা নেই।এভাবে চলে গেলে সবার মনটা খারাপ হবে।আমি বরং ওখানকার সোফাতে গিয়ে বসি তুমি সবার সাথে দেখা করো গিয়ে।
“আয়ন প্রিয়ুকে কর্ণারে একটা সোফাতে বসিয়ে দিলো।এখানে মিউজিকের সাউন্ড কম তাই।
তুই এখানেই থাকবি।আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবি না।ওকে!

“প্রিয়ুও মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ বসে রইলো।পার্টিতে সবাই একটু আড় চোখে দেখছিলো প্রিয়ুকে আর একটু হাসাহাসিও করছিলো।তাদের হাসার কারণটা সম্পর্কে প্রিয়ু খুব ভালো করেই অবগতো।কারণ প্রিয়ু সকালের নীল শাড়ীটি এখনো পড়া।আর এধরনের পার্টিতে শাড়ী কে পড়ে।তাই প্রিয়ু একটু আনকমফর্টেবেল ফীল করছে।তখনই আয়ন এসে আবার হাজির হলো।সাথে অর কিছু ফ্রেন্ডসদের নিয়ে।দিনেশকে প্রিয়ু আগে থেকেই চিনে।কিন্তু বাকি সবার সাথে তেমন পরিচয়ই নেই।”
–আয়ন সবার সাথে প্রিয়ুর পরিচয় করিয়ে দিলো।আয়নের বিয়ে সম্পর্কে অনেকেই জানে না।তাই প্রিয়ুকে দেখেই বন্ধুরা টোন মারা শুরু করে দিলো।
“ওই তুই বিয়া করলি কবে রে।আর আমাদের দাওয়াত দিলি না কেনো।এতো টাকা কমাই করোস,আর বিয়ে করেছিস চুপিচুপি।ভাই সব ঠিক আছে তো।”
–আরে তেমন কিছু না,এমনেই হঠাৎ এর উপর হয়ে গেলো।বলার সুযোগ পাইনি।বিয়ের দাওয়াত পাসনি তাতে কি,তোদের জন্য গ্র্যান্ট পার্টির আয়োজন করবো আমি।মন ভরে এন্জয় করিস।ঠিক আছে।
“আয়নের অন্য এক ফ্রেন্ড ফারদিন সন্দেহ দৃষ্টিতে আয়নকে প্রশ্ন করলো।আয়ন মাহমুভ বিনা করণে কোনও কাজ করে না।তাহলে বিয়ে!আর চোখে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে একবার,ভাবি আবার পেগনেন্ট নাতো।”
–আয়নের সব বন্ধুরা কেমন চাতক পাখির মতো আয়নের দিকে তাকিয়ে আছে,জানতে ঘটনা আসলে কি?
“আর ব্যাচারী প্রিয়ু এতোগুলো ছেলের লাগাম ছাড়া কথাবর্তা শুনে ওর ফুলা গালের অংশটুকু লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।কেনো যে ও আসলো এসব ফাজিল লোকদের সামনে।মনে মনে এখন নিজেকেই বকছে।”
–ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দিনেশ সবগুলোকে ধমক দিলো একটু,অই তোরা যাতো এখান থেকে।শুধু শুধু আমার পিচ্ছি ভাবীটাকে অস্বস্তিতে ফেলছিস।ভাবী কিন্তু কেঁদে দিবে এখন।
“সবাই একসাথে হেসে দিলো।আয়নও সুযোগ পেয়ে মিটমিটে হাসছে।”
–প্রিয়ুর মেঝাজ গরম হয়ে যাচ্ছে বলে,ফ্রেন্ডদের চোখ টিপ মেরে অন্যদিকে পাঠিয়ে দিলো আয়ন।প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে দেখে কেমন গাল ফুলিয়ে রাখছে।আয়ন প্রিয়ুর কাছে এসে রিলেক্স প্রিয়ু ওরা শুধু মজা করছিলো।এতো রাগ করার কিছুই নেই।”
“-আমি বাসায় যাবো।দাঁতেদাঁত চেপে।”
–ওকে,বাট ওদের বলতে হবে।তুই বস আমি বলে আসছি।প্রিয়ুর কাছে দিনেশকে রেখে আয়ন ফ্রেন্ডসদের বায় বলতে গেলো।
“দিনেশ ও প্রিয়ু চুপচাপ সোফায় বসে আছে।দিনেশ ওয়েটারকে বলে দুটো ড্রিংক ওর্ডার করলো।তবে নিজের জন্য ড্রিংক আনলেও প্রিয়ুর জন্য সোপ্ট ড্রিংকস এনেছে।ওয়েটার ড্রিংকস দুটো টেবিলে রেখে গেলো।”
–তো কেমন আছো প্রিয়ু।বৈবাহিক জীবন কেমন চলছে তোমাদের।
“এই তো ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ।ভালোই সব।”
–সব ভালো থাকলে আয়নকে একসেপ্ট করতে পাড়ছো না কেনো প্রিয়ু।
“প্রিয়ু কিছুটা চমকে গেলো।প্রিয়ু জানে আয়ন আর দিনেশ খুব ঘনিষ্ঠ। সবই শেয়ার করে দুজন দুজনার সাথে।কিন্তু এই মুহুর্তে এই প্রশ্নের উত্তর প্রিয়ুর নিজের কাছেও নেই।কেনো সে একসেপ্ট করতে পাড়ছে না আয়নকে।অতিতের কাজের জন্য আয়ন বারবার অনুতপ্ত হয়েছে কিন্তু প্রিয়ুর মন কেনো এতো দ্বিধায় পড়ে আছে,কিছুই বুঝতে পারছে না।”
–দিনেশের কথায় প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে পায়,এখনো সময় আছে নিজের জিনিসটি নিজের করে নেও।সময় থাকতে অধিকার খাটাও।না হলে হারিয়ে ফেলবে।এমনেই তোমার জিনিসের উপর অন্য কারো নযর পড়ে আছে।দিনেশ ইশারায় আয়নের দিকে দেখালে।

“প্রিয়ু পিছনে ঘুড়ে দেখে,একটা মেয়ে আয়নের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।ভালো করে একটু লক্ষ্য করার পর দেখতে পারে,মেয়েটি আর কেউ না নিলীমা।নিলীমা আয়নের হাত ধরে ওকে ডান্স ফ্লোরের দিকে টানছে।আয়ন না করার পরও শুনছে না।কিছুটা ড্রাংক হয়তো।তাইতো বারবার আয়নের বুকের উপর পড়ে যাচ্ছে।বাহানায় আয়নকে বারবার এখানে ওখানে স্পর্শ করছে।”
–প্রিয়ু নিলীমাকে আয়নের এতো কাছে দেখেই মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।মনে মনে বললো,এই ডাইনী এখানে কি করছে।আর ওর সাহস কি করে হলো আমার স্বামীকে স্পর্শ করার।শয়তান মহিলা,লজ্জা স্মরম কি নাই তোর।পুরুষ দেখলেই ঢলে পড়তে মন চায়।এইসব মহিলা গুলোর জন্যই সমাজ এতোটা নষ্ট হচ্ছে।
রাগের বশে প্রিয়ু টেবিলে রাখা দিনেশের ড্রিংকসটা একঢোকে খেয়ে ফেলে।
“আর দিনেশের হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না সেই মুহুর্তে ।”
__________
“প্রিয়ু একটা হিচকি তুলে,কেমন বোকা বোকা চেহারায় দিনেশের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো,এটা কি ছিলো ভাইয়া।আমার না কেমন কেমন লাগছে।”
–প্রিয়ু রিলেক্স, আই থিংক তোমার নেশা হয়ে গিয়েছে।দাঁড়াও আমি আয়নকে ডেকে আনি।
“আরে আমার এখনো নেশা হয়নি।কিন্তু কেনো।একটু কাঁদোকাঁদো ফেস বানিয়ে।”
–ও,মনে হয় কম খেয়েছো।আরো একগ্লাশ খাওয়া দরকার ছিলো।
“সত্যি!তাহলে আমি আরো খাবো।পাশ দিয়ে ওয়েটা কারো জন্য হয়তো ড্রিংকস নিয়ে যাচ্ছিলো।প্রিয়ু সেটা ছিনিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেললো।এবারও বড় একটা হিচকি তুললো।”
–এরপর চোখ ঘুড়িয়ে আয়নকে খুঁজতে লাগলো।নিলীমার সাথে আয়নকে দেখে প্রিয়ুর আবার রাগ উঠে গেলো।ঢুলুঢুলু পায়ে এগিয়ে গিয়ে,আয়নের সামনে দাঁড়ালো।
“আয়ন প্রিয়ুকে এ অবস্থায় দেখেই ৪২০ভোল্টেজ ঝটকা খেলো।আর ইউ ওকে প্রিয়ু।”
–প্রিয়ু,ঠোঁটটা উল্টিয়ে মাথা নাড়ে না।
“তুই ড্রিংক করেছিস।”
–এবারও মাথা নাড়িয়ে না বলে।আমিতো কোক খেয়েছি।তিতা কোক।কিন্তু আমি তোমাকে আমার তিতা কোকের হিসেব কেনো দিবো।আগে বলো,এই ডাইনী এখানে কি করে।
“প্রিয়ুর কথা শুনে নিলীমা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।হাউ ডেয়ার ইউ?আর তুমি আয়নের পিছনে পিছনে এখানেও চলে এসেছো।”
–সেট আপ!বেশরম মহিলা।
“কি?আমি মহিলা।তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে মহিলা বলার।ইউ স্টুপিট গার্ল।”
–বাহ রে,মহিলা কে মহিলা বলবো না তো কচি খুকু বলবো।ও আচ্ছা তাহলে নিজেকে কচি খুকু মনে করেই আমার জামাইয়ের কোলে বসার প্লানিং করছিস।সাহস কি করে হলো তোর।আর কখনো আমার স্বামীর আশেপাশে দেখলে কেটে কুচিকুচি করে শাক রেঁধে এলাবাসীকে মিলাদ পড়িয়ে খাইয়ে দিবো।

“আয়ন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আসলে বুঝতে পাড়ছে না কি বলবে ও।রাগ করবে প্রিয়ুর ড্রিংকস করার জন্য,নাকি খুশি হবে প্রিয়ু আয়নকে নিজের স্বামী বলে দাবী করছে শুনে।”
–আর এদিক দিয়ে দিনেশ সহ আয়নের বাকি বন্ধুরা প্রিয়ু আর নিলীমার ঝগড়াটা খুব এন্জয় করছে।
“আয়ন তুমি এমন হা হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো।তোমার বউ কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছে।”
–আরে রাখ তোর ইনসাল্ট।যার নিজের কোনও ইজ্জত নেই,তার আবার মান কি সম্মান কি।আর এই খবিশ(আয়নকে উদ্দেশ্য করে)।তুই ওর সাথে আজকাল অফিসে নিশ্চয়ই কোনও ইটিসপিটিস করিস।তাইতো বলি এখন আমার থেকে দূরে দূরে কেনো থাকিস।আগে তো সারাক্ষণ আমার পিছে পিছে ঘুড়তি।আর এখন আমাকে ভাও দিস না।কেনো?এই ডাইনীর জন্য।

“আমি সব বুঝতে পারছি এখন রাতে….আয়নের এতোক্ষণ পর হুস এলো।আর সাথেসাথে প্রিয়ুর মুখটা চেপে ধরে হাত দিয়ে।তা না হলে এই মেয়ে আজ ওর ইজ্জতের কাচ্চি বিড়িয়ানি বানিয়ে ফেলবে নির্ঘাত।দিনেশের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালে,দিনেশ ইশারায় সরি বলে।ইচ্ছে করে করিনি দোস্ত।”
এই আয়ন ছাড়না ভাবীকে,আমরাও শুনি তুই কি কি করিস না আজ কাল ভা….আয়ন আর বলতে দিলো না।
সেট আপ গাইস্।আর না।এমনেই আজ অনেক হয়েছে।তোরা আবার শুরু করিস না।তা হলে এই পাগলীকে সামলানো যাবে না।”

–আয়ন প্রিয়ুকে কোনও রকম মুখ চেপেই বাহিরে নিয়ে এলো।কিন্তু প্রিয়ুকে শান্ত করতে পাড়ছে না।হাত পা ছুটাছুটি করছে আয়নের আবদ্ধ থেকে মুক্তি পেতে।

“একে নিয়ে গাড়ী চালানো যাবে না।আয়ন বুঝতে পারছে না এতোটুকুতে এই মেয়ে এতো মাতাল কি করে হলো।আয়ন উপায় না পেয়ে দিনেশের গাড়ীতে উঠে দিনেশকে কল করলো।”
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২৩|

“হঠাৎ গভীর রাতে তারবিহীন মুঠোফোনটা বেজে উঠলো।তিতি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম চোখে না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে নিলো।ঘুমের মধ্যে বিরক্ত একদম পছন্দ না তিতির।কিন্তু কেউ যদি দরকারে ফোন করে থাকে তাই কিছু না ভেবেই আননোন নাম্বর সত্বেও রিসিভ করে নিলো।কানের কাছে ফোনটি নিয়ে কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বলার পরও যখন অপর পাশ থেকে কোনও রিসপনস পাচ্ছিলো না।তখন খানিকটা বিরক্ত হয়েই ফোনটা রেখে দিতে নিলো।কিন্তু তখনই কানে একটা চেনা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসলো।খুব পরিচিত এই কন্ঠ।তিতিরের ঘুমটা মুহুর্তেই উড়ে গেলো।নিশ্বাসটা ভারী হতে লাগলো।পরিচিত কন্ঠটি আরো একবার শুনার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহে ফোনটা কানের কাছেই সেটে ধরে রাখলো।মনটা চাতক পাখির মতো ছটফট করতে লাগলো আরো একবার তার কন্ঠ শুনতে।কিন্তু ফোনের অপর পাশের লোকটি খুবই নির্দয়।তিতিরকে জ্বালাবার জন্য একদম চুপ করে রইলো।”

–দিনেশ তিতিরের বাড়ীর সামনেই গাড়ী পার্ক করে বসে আছে।ফোনের অপর পাশে বসে থাকা তিতির এর অনুভূতির গভীর নিশ্বাসগুলোর এলোমেলো প্রতিধ্বনি এই নিস্তদ্ধ রাতে ফোনই বেশ অনুভোব করছে।ওর খুব ভালো লাগছে।তাইতো চুপ করে আছে।দিনেশ জানে দিনেশ ফোন না কাটলে তিতিরও কাটবে না।বরং সারা রাত অপেক্ষা করবে।তবুও এই মেয়ে মুখ দিয়ে এক ফোটাও কথা বলবে না।কিন্তু দিনেশের যে অনেক কিছু বলার আছে।অনেক কিছু বুঝার আছে।তাই নিরবতা ভেঙ্গে দিনেশই বললো,আমি নিচে ওয়েট করছি তোমার জন্য।নিচে আসো।ফোনের ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসছে না।দিনেশ অপেক্ষা করছে তিতির এর জবাবের।
“কিছুক্ষণ পর মিষ্টি কন্ঠে একটা মেয়ে বলতে লাগলো,অ অনেক র রাত হয়ে গিয়েছে।ক কেউ দেখলে।আ আমি এখন আসতে পারবো না।”
–দিনেশ মুচকি হেসে গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে একটু আড়ামে বসে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।এরপর আবার বলা শুরু করলো,আমি খুব ক্লান্ত তিতির।এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষগুলোর সাথে ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে পরিশ্রান্ত আমি।আমার এই ক্লান্ত রাতের প্রশান্তি তুমি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে…যানো তিতির ভেতরটা খুব জ্বালাপড়া করছে আজকাল।সইতে এখন খুব কষ্ট হয় তোমার থেকে দূরে থাকতে।আমি জানি না তুমি কিভাবে নিজেকে এতোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারো।কিন্তু আমি যে আর পাড়ছি না।আমার এই নিঃস্ব জীবনে তোমাকে খুব বেশি প্রয়োজন তিতির।তুমি নির্দয় হতেই পারো।কিন্তু আমি জানি আমার তিতির নির্দয় না।সে আসবে।তার একবিন্দু জল দিয়ে আমার ভেতরের সব কষ্ট গুলো নিবারণ করবে।আমি অপেক্ষা করবো তার জন্য এটা বলেই দিনেশ ফোনটা কেটে দিলো।চুপ করে বসে সময় গুনছে দিনেশ।ও জানে তিতির আসবে।নিজের জন্য না,দিনেশের জন্যও না।বুকের ভেতরে যে ছোট্ট মনটা আছে,তার জন্য।যা কারো কথা শুনে না।জাত,ধর্ম, উঁচু, নিচু কিছুই বুঝতে চায় না।ভীষণ বেহায়া এই মন।কেনো যে কথা শুনে না।তাহলে তো এতো কষ্ট পেতে হতো না।

“পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর তিতির আসলো।পড়নে তার এখনো রাতের পোশাক।ওড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে কোনও রকম তাড়াহুড়া করে বাড়ীর বাহিরে এসে দেখে বাড়ীর সামনেই দিনেশের গাড়ীটি দাঁড় করানো।তিতির ঝটপট গিয়ে গাড়ীর দরজাটি খুলে বসেই কোনও রকম ভনিতা ছাড়াই দিনেশ কে তারা করতে লাগলো,কি বলবেন তারাতারি বলুন।কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে।কিন্তু তিতির বুঝতে পারিনি দিনেশের মনে কি চলছে।
–দিনেশ তিতিরকে কিছু না বলেই গাড়ীটি স্টার্ট দিলো।যা তিতির একদমই আশা করে নিই।দিনেশের এহেম কান্ডে প্রচণ্ড রেগে গেলো তিতির।”

“-গাড়ী গিয়ে থামলো একটা লেকের পাড়ে।তিতির সারা রাস্তায় টেনশন আর রাগে আর একটা কথাও বলেনি দিনেশের সাথে।হঠাৎ গাড়ীর দরজা খুলার শব্দে তিতির সম্বিৎ ফিরে পায়।দিনেশ দরজা খুলে ওর সামনে একটা হাত দিয়ে ইশারা করছে,হাতটি ধরে গাড়ী থেকে নামতে।তিতিরের প্রথমে ইতস্তত হলেও পরে কিছু একটা ভেবে দিনেশের হাতে নিজের হাতটি রাখে।
পুরো লেকটি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।লেকের মাঝে বসার ব্যবস্তা করে খুব সুন্দর করে লাইটিংও করা হয়েছে।সাথে লাল সাদা লাভ সেপের বেলুন দিয়ে চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দিনেশ তিতিরের হাতটি ধরে হাটা ধরলো বাঁশ দিয়ে তৈরি রাস্তাটিতে।এটার চারপাশও একই ভাবে সজ্জিত।”

“তিতির যতই সামনে বাড়ছে ততই অবাক হচ্ছে।সামনে একটি গোল টেবিল রাখা।টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা।দুপাশে দুটো চেয়ার।একটু সামনে এগোতেই কেকটির উপরের লিখা চোখে ভেসে উঠলো তিতিরের।
-হেপি বার্থ ডে মাই ডিয়ার তিতির-।
তিতির অবাক হয়ে দিনেশের দিকে তাকালো।ও নিজেই ভুলে গিয়েছিলো ওর জন্মদিনের কথা অথচ এই মানুষটির সব মনে আছে।মূলত্ব দিনেশ এই কারনেই এতো তাড়াহুড়া করে দেশে ফিরেছে আজ।ও কিছুতেই আজকের দিনটি মিস করতে চায় নিই।ক্যান্ডেলটি জ্বালিয়ে তিতিরকে আরো অবাক করে পিছন দিয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে,তিতিরের হাতের উপর হাত রেখে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,হেপি বার্থ ডে মাই লাভ।
–আর এতেই তিতির যেনো শেষ।সামনের কোনো কিছুর প্রতি তিতিরের আর কোনো খেয়াল নেই।দিনেশ এতো কাছে আসায় তিতির কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।মনে মনে নিজেকে সব থেকে খারাপ গালিগুলো দিলো।কেনো বারবার এতোটা দূর্বল হয়ে যায় ও এই মানুষটাকে দেখলে।এতোটা বেহায়া কেনো আমি।কেনো আমি বারবার নিজেকে হারিয়ে ফেলি এই মানুষটির মাঝে।

“দিনেশ ও তিতির কেক কেটে দুজন দুজনাকে খাইয়ে দিলো।তিতিরকে অবাক করে দিয়ে,দিনেশ নিজের পকেট থেকে একটা সাদা পাথরের ডায়মন্ড রিং বের করে,তিতিরের সামনে হাটু গেড়ে বসে তিতিরকে প্রোপজ করে,ডু ইউ মেরি মি তিতি।আই কান্ট লিভ ইউদাউট ইউ।প্লিজ একসেপ্ট মি।দিনেশ রিং ধরে বসে আছে তিতিরের উত্তর জানতে।”
–অজানা একটা ভালোলাগা কাজ করলো তিতিরের মাঝে দিনেশের কথাগুলো শুনে।হাজার মেয়ের ক্রাশ এই ছেলেটি শুধু ওকে ভালোবাসে।ওকে পেতে চায়।যা ভাবলেই অবাক লাগে।নিজেকে খুব লাকি মনে হলেও মুহুর্তেই নিজেকে আবার সামলিয়ে ফেলে।কারণ তিতির জানে এই সম্পর্কের কোনও পরিনিতি হবে না।সমাজ ধর্ম কেউ ওদের মেনে নিবে না।সবাইকে উপেক্ষা করে এই সম্পর্কে জড়ালেও সম্পর্কটাকে কখনো একটা পবিত্র নাম দিতে পাড়বে না।অনেক কিছু ভেবেই চোখ দুটো বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে তিতির দিনেশকে না বলে দেয়।
“মুখের উপর এমন না তিতির আগেও বলছে।কিন্তু আজ যেনো একটু বেশি রুডলি লাগলো না টা দিনেশের।চোখমুখ শক্ত করে দিনেশ তিতিরের দিকে তাকালো।”
__________
“হোটলের সাদা ধবধবে চাদর বিছানো বেডের উপর পা দুটো ঝুলিয়ে প্রিয়ু অর্ধমাতাল হয়ে শুয়ে আছে।মাথায় ওর অদ্ভুট চিন্তা ভাবণা ঘুরঘুর করছে।সারা রাস্তায় আয়নকে প্রশ্ন করতে কারতে কান দুটো জ্বালাপড়া করে দিয়েছিলো।আয়ন রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই টুপ করে আয়নের গালে একটা কিস করে দেয়।সেই মুহুর্তে আয়ন নিজের সব অনুভূতিগুলো চেপে ধরে তাকিয়ে ছিলো প্রিয়ুর দিকে।আজ আয়নের রাগ উঠছে না,অভিমানও হচ্ছিলো না।প্রিয়ুর ছোঁয়ায় ওর শরীরটা বরং আবার যেনো জেগে উঠছিলো।”

–রাত বাড়ছে, চারদিকের নিস্তদ্ধতা তাই জানিয়ে দিচ্ছে। রাতের এই আধারের সাথে সাথে আয়নের ভেতরের অস্থিরতাটাও যেনো বাড়ছে।রুমের লাইটগুলো বন্ধ।চাঁদের আবছা আলোতে বালকানিতে দাঁড়িয়েই আয়ন প্রিয়ুর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাতাসে জানালার সাদা পর্দাগুলোও উড়ে এসে আয়নকে কিছুটা বিরক্ত করছে।

“প্রিয়ু হঠাৎ কি মনে করে উঠে বসলো।আর সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে কিছুটা ভরকে গেলো।হাত উঠিয়ে শাসিয়ে বলতে লাগলো,ওই কি দেখিস এভাবে।আমি কি পাগল নাকি জোকার।এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।চোখ উঠিয়ে তোর গুটি খেলবো আবার তাকালে আমার দিকে।প্রিয়ু মনে হয় নিজের মধ্যেই নেই,কোনও রকম ঢলতে ঢলতে আয়নের কাছে এসে দাঁড়ালো।চোখগুলো অলরেডি কেমন ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে প্রিয়ুর।আয়ন বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ু হার্ড ড্রিংকস করেছে।তাই নিজেকে সামলাতে পাড়ছে না।আর এখন আবলতাবল বকে যাচ্ছে।
–প্রিয়ু ঢুলে পড়ে যেতে নিলে আয়ন তৎক্ষনিক ধরে ফেলে,নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।আয়নের বুক থেকে নিজেকে তুলে প্রিয়ুর উষ্ণ হাত দিয়ে আয়নের গালদুটো ধরে খুব যত্নের সাথে।চোখে চোখ রেখে বলে,কেনো করলে আমার সাথে এমন।একটু কি আমাকে বুঝতে মন চায় নিই তোমার।একবার কি বিশ্বাস করা যায় নিই আমাকে।আমি ভাবতাম তুমি আমাকে সবথেকে বেশি জানতে।কিন্তু সেই তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে না।একবার বিশ্বাস করে,কাছে এসে ভালোবেসে আমাকে ডাকতে আমি সারা না দিয়ে কি পাড়তাম বলো।কিন্তু তুমি সব সময় তোমার জিদ আর ইগোর কারণে আমাকে কষ্ট দিতে।তাহলে বলো কিভাবে ভালোবাসি তোমায় এখন আমি।আমার ভয় হয় জানো,ভীষণ ভয় হয় তুমি যদি আবার আমাকে ছুঁড়ে ফেলো দেও।আবার আমাকে ভুল বুঝো।আবার আমাকে একা ফেলে চলে যাও।তাহলে আমি কি করবো বলো।অজান্তেই প্রিয়ুর কন্ঠে ভেসে উঠছিলো প্রিয়ুর ভেতরের কষ্টগুলো দলা বেধে।যা ও এতোদিন চেপে রেখে দিয়েছিলো নিজের মাঝে।আয়নকে বলতে সাহস পায় নিই।কিন্তু আজ প্রিয়ু নিজের না বলা সব অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ব্যস্ত আয়নের কাছে।আজ ও সব বলবে,নিজের অভিমানের ঝুড়িটি আয়নের কাছে সোপে দিবে।”
–আয়ন চুপ হয়ে প্রিয়ুর মুখের অভিব্যক্তগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলো।আয়নতো চাই প্রিয়ু বলুক,ওর নিজের মাঝে লুকানো না বলা হাজারো কথাগুলো বলুক।আয়ন শুনতে রাজি।আর আজ মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো যেনো আয়ন পেয়েও গেলো।কমপক্ষে জানতে তো পাড়ছে প্রিয়ুর ভেতরে চলছে কি।আয়নও নিজের শক্ত দুহাতের তলিতে প্রিয়ুর মুখটা ধরলো,একবার শুধু,একবার বিশ্বাস করে দেখ এবার।এই জীবনে আর কখনো তোর হাত ছাড়বো না।শুধু একবার সুযোগ দিয়ে দেখ ভালোবাসার।তোকে কখনো নিরাশ করবো না।শুধু একবার কাছে টেনে নেয় আমায় আমি তোর সব কষ্টগুলো নিজের মাঝে শুষে নিবো।কখনো তোকে একা ছাড়বো না সোনা।শুধু একবার আমাকে একসেপ্ট করে দেখ।তোর সব অভিযোগ দূর করে দিবো।তোর অভিমানের ঝুড়িটি আমি খালি করে দিবো।শুধু একবার আয়ন বলে ডাক।তোর মুখে নিজের নামটি শুনতে আমি অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছি।বল সোনা।একবার কি পাড়বি আমায় ক্ষমা করতে।আমি সব ঠিক করে দেবো।
“আয়নের ভেতরের পীড়াগুলোর সাথে ওর অনুতপ্তও যেনো প্রিয়ু দেখতে পাড়ছে আজ।তবুও কেনো জানি ভরসা করতে পাড়ছে না।হঠাৎ আয়নের হাতের বাধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো প্রিয়ু।ছাড়ো আমাকে,তুমি একটা বাজে,খবিশ লোক।নিজের যখন যা মন চাইবে তাই আমাকে করতে বাধ্য করো।কখনো আমার অনুভূতি জানার চেষ্টা করো নিই।ছাড়ো আমায়।আমি বলবো না কখনো ভালোবাসি।বলবো না।কি করবে খারুস!

“আয়ন প্রিয়ুকে আরো কাছে টেনে নিলো।এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে প্রিয়ু।”

–কি বেশি হে!কি? তুমি যা বলবে তাই হবে।না হবে না।কি করবে?

“আয়ন কিছু না বলেই প্রিয়ুর গলায় মুখ গুজে দিলো।প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে আরো কাছে টেনে নিলো।বল প্রিয়ু আমি যখন তোকে এভাবে স্পর্শ করি তোর ভালো লাগেনা।বল না।আমার স্পর্শ গুলো তোকে কি ভীষণ পিড়া দেয়।যেখানে ভালোবাসা না থাকে সেখানে শরীরের চাহিদাও থাকে না।তাহলে কেনো আমার স্পর্শে তুই কেপে উঠিস বারবার।আমাকে বাধা দেওয়ার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলিস।বল!আয়ন আস্তে আস্তে গলা ছেড়ে নিচে নেমে আসছে।আমি কি এগবো প্রিয়ু।তোর মন সায় না দিলে আমি থেমে যাবো।কিন্তু একবার এগলে আর বাধা মানবো না।”
–প্রিয়ু নিশ্চুপ।প্রতিবারের মতো এবারও প্রিয়ু কিছু বলতে পাড়লো না।তবে আয়নের ছোঁয়ায় প্রিয়ু পাগল হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে সামলাতে চেয়েও পাড়ছে না।এ কেমন অনুভূতি।কেনো এমন লাগছে।প্রিয়ুর নেশার ঘোর যেনো হঠাৎ ই কমে যেতে লাগলো।
“প্রিয়ুর চুপ থাকাকে হা মনে করে আয়ন প্রিয়ুকে দুহাতে তুলে নিলো।প্রিয়ু আজ আর বাধা দিলো না।সম্পর্কটাকে প্রিয়ু একবার সুযোগ দিতে চায়।ভুলগুলো শুধরিয়ে আয়নের হাতটি ধরে সামনে এগিয়ে যেতে চায়।নিজেও একবার হারাতে চায় আয়নের মাঝে।ভেতরের জমে থাকা কষ্টগুলো পুটলি বেধে দূরে ফেলে দিতে চায়।আয়নের অতিরিক্ত চাওয়া আর ভালোবাসাকে নিজের চাদর করে জড়িয়ে নিতে চায়।একবার সব কিছু ভুলে স্বাভাবিক হতে চায়।তাইতো আজ প্রিয়ু আর আয়নকে বাধা দিলো না।আজ ওদের ভালোবাসা একতরফা হবে না।দুটি মনের মিলন হবে,দুজনের সান্নিধ্যে।
__________
“আরভিনকে আয়ন অস্ট্রলিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।একটু আগেই প্রিয়ুর কথা হলো ছোট ভাইটির সাথে।প্রথমে প্রিয়ু এই নিয়ে খুব রাগ করেছিলো আয়নের সাথে।এতোটুকু একটা বাচ্চাকে কেনো এতেদূর পাঠালো।ও একা কিভাবে কি করবে।কিন্তু পরে আরভিনের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো আরভিন ওখানে ভালো আছে।হ্যাপি আছে।ওখানে আয়নের পরিচিত এক বাঙ্গালি পরিবারের সাথে আছে।তবুও প্রিয়ুর মন মানছিলো না।মায়ের আদর দিয়ে আরভিনকে বড় করেছে প্রিয়ু।তাইতো কষ্টটাও একটু বেশি পাচ্ছে ভাইকে ছাড়া।কিন্তু কি করবে?এখানেও আনা সম্ভব না।সবাই মানলেও আসমা বেগম যে ব্যাপারটা ভালো চোখে নিবেন না,তা প্রিয়ু ভালো করেই জানে।অশান্তি হবে সংসারে।তাই এই বিষয় এখানেই রাখলো।আয়ন কথা দিয়েছে,আরভিনের ভ্যাকেশন শুরু হলে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।পুরো ভ্যাকেশন ও এখানেই থাকবে।”

–আয়ন অনিকের রুমে দাঁড়িয়ে আছে।অনি আমি এসব কি শুনছি।
“কি আয়নদা?একটু বিস্মিত হয়ে।”
–তুই সারাকে বিয়ে করছিস।তুই জানিস না ও কেমন।ওর মা কেমন।
“আয়নদা আমি জানি ফুফু কেমন,কিন্তু তাই বলে যে সারাও মহিনী ফুফুর মতো হবে এমনতো নয়।হয়তো ও তিয়াশের মতোও হতে পারে।সারাকে আমরা চিনিই বা কতোটুকু।আর তুমি তো যানো আমি প্রেমটেম করতে পাড়িনা।তাই বিয়েতেই মত দিয়ে দিলাম।”
–কিন্তু…।অনিক আয়নকে থামিয়ে দিলো।দাদা তোমার সারার প্রতি বিশ্বাস নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমার প্রতি তো আছে।
“আয়ন আর কিছুই বলতে পাড়লো না।ভাই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।তাই আয়ন আর কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর তখনই সারার সাথেও দেখা হয়ে গেলো বাহিরে।সারা আয়নকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে, দাঁড়াও সারা বলে ডাক দেয়।”
–সারা আয়নের ডাক উপেক্ষা করার সাহস পেলো না।তাই আয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“আমি জানি না এমন কি হয়েছে,যার কারণে আমার প্রিয় ভাইটি আমাকে একবার না জানিয়ে এতোবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।যাই হোক।ও খুশি থাকলেই আমি খুশি।মনে রেখে সারা যদি কোন উল্টাপাল্টা কারণ বা তোমার মা আর তোমার মাথায় অন্যকোনও চিন্তা থাকে এই বিয়ে নিয়ে আর আমি যদি ভবিষ্যৎ এ এসব জানতে পারি তাহলে সেদিনই হবে তোমাদের শেষ দিন।আমি কিন্তু কাউকে ক্ষমা করবো না।মনে রেখো।”
–আয়ন চলে গেলো সারাকে ছোটখাটো একটা ওয়ার্নিং দিয়ে।আর সারা অগ্নি চোখে আয়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।এতোক্ষণ এই বিয়ে নিয়ে সংশয় ছিলো সারার মনে,কিছুতেই বিয়েটা করবে না বলে অনিককে না বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু আয়নের তিক্ত কথায় নিজের মত পাল্টিয়ে ফেললো সারা।এখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো ও এই বিয়েটা করবেই।আর এক ভাইয়ের মাধ্যমে আরেক ভাইয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে।

“আয়ন রুমে এসেই কোটটা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে।ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ উঠছে।সারা যে এতোকাল ওকে পছন্দ করে আসছে তা আয়ন খুব ভালো করেই জানে।কিন্তু রাতারাতি ওরই ভাইকে কোন উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে চাইছে তাই বুঝতে পাড়ছে না।নিজের রাগ টাইয়ের উপর ঝাড়তে গিয়ে যেনো আরো ফেঁসে গেলো আয়ন।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।অনেক জোড়াজোরিতে ও খুলতে পাড়ছে না।অস্বস্তি লাগছে আয়নের এখন।”

–প্রিয়ু বালকানি থেকে এসে আয়নের এমন অবস্থা দেখে হতোবম্ভ হয়ে গেলো।এ কি করছো তুমি ছাড়ো।এতে তো আরো ফেঁসে যাবে গলায় এটা।দাঁড়াও!প্রিয়ু তারাতারি কেঁচি দিয়ে টাইটা কেটে ফেললো।দেখলে সহয একটা সমাধান।অথচ এতোক্ষণ কতো কষ্ট না করলে।রাগ দেখিয়ে সব কিছু পাওয়া যায় না।মাঝেমাঝে ধৈর্য ধরে সময়ের আশায় ছেড়ে দিয়ে দেখতে হয় কি হয়।রাগ মানুষকে ধ্বংশ করে।

“আয়ন একটু শান্ত হয়ে প্রিয়ুকে টোন মেরে বলে,কিন্তু আমার রাগ তোকে আমার কাছে আসতে বাধ্য করেছে।দেখ এখন তুই আমার কতো কাছে।প্রিয়ুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।”
–আজাইরা কথাবার্তা তোমার।ছাড়ো বলছি।আমিও না পাগল কার কানে বীন বাজাচ্ছি।
“আজকাল ম্যাডামের একটু সাহস মনে হয় বেশি হয়ে গিয়েছে।ঈদানিং লেকচারটা একটু বেশি ঝাড়ছিস বলে মনে হয় না তোর।”
–হুম,উচিত কথা বললে,সবারই লেকচারই মনে হয় বুঝলে।এই যেমন এখন তোমার মনে হচ্ছে।
“তাই নাকি,এতো শেয়ানা কবে থেকে হলি শুনি।আজকাল উচিত কথাও বলা হচ্ছে।দাঁড়া!আয়ন প্রিয়ুকে শুড়শুড়ি দিতে লাগলো।প্রিয়ু আয়ন থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াতে লাগলো রুমের মধ্যে।”
–আয়নদা ভালো হবে না বলে দিলাম।
“ফাজিল মেয়ে আবার আমাকে আয়নদা বলছিস।তোকে না বলেছি শুধু আয়ন বলে ডাকবি।”
–উঁহু বয়েই গেছে,এতোবড় বুড়োব্যাটাকে নাম ধরে ডাকলে পাপ হবে পাপ।ঘোর পাপ।আমি তো পাবলিকের সামনেও তোমাকে আয়নদা বলেই ডাকবো।
“আচ্ছা, তাহলে দাঁড়া।পালাচ্ছিস কেনো।আমিও দেখি আমার পিচ্ছি বউটার কতো সাহস।”
–আমাকে কি তোমার নিলীমা মনে করেছো।বললেই লাফাতে লাফাতে কোলে এসে বসে পড়বো।
“এ কেমন অপবাদ প্রিয়ু। আমি কবে আবার নিলীমাকে কোলে বসালাম।আমিতো তোকেই কোলে নিয়ে বাঁচি না।কিন্তু মনে হয় এবার ব্যাচারীকে একবার চান্স দেওয়া দরকার।এমনেই সারাদিন আমার সাথে দেবদাস হারানো পারুর মতো মুখ করে থাকে অফিসে।দেখতে একদমই ভালোলাগে না।কিন্তু কোলে নেওয়ার কথা শুনলে নিশ্চয় খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিবে কাল অফিসে।দাঁড়া আমি ফোন করে এখনই খুশির সংবাদটা দিয়ে দিই।”

“প্রিয়ু দৌড়ে এসে আয়নের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে ছুড়ে মারে।প্রিয়ুর কান্ড দেখে আয়ন একটা বাকা হাসি দেয়।প্রিয়ু কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়ন ধরে ফেলে।আরে খুকুমনি কোথায় যাবে এখন।কোলে উঠার শখ না তোমার।চলো তোমাকে শুধু কোলে না,সাথে আদরও করে দেবো কেমন।বলো কোথায় কোথায় দিবো।আমি আবার অনেক ধরনের আদর দিতে পাড়ি।
–প্রিয়ু জোড়ে একটা চিৎকার করতে চায়,নাএএএএ।
কিন্তু!থাক আর বললাম না।

চলবে…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here