এখনো ভালোবাসি পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯

“এখনো_ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-১৬|

“ষোল সতেরো বয়সটা অনেকটা অপরিণত বয়স।এই বয়সে মন খুব অল্পতেই অস্থির হয়ে উঠে।কোনও কিছুতে বাধা দিলে,মনে জিদ চেপে ধরে।কিন্তু কিশোরী মনের এই অপরিণত মনকে অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না।তাইতো মানুষ কিশোরী বয়সে জীবনের সব চেয়ে বড় বড় ভুলগুলো করে বসে।”
–এই বয়সে বালকানির খাঁচায় ঝুলে থাকা পাখিটির মতো নিজেকেও পরাধীন মনে হয়।তখন তার এই কিশোর মন উড়াল দিয়ে চায়।মুক্ত বিহঙ্গ হবার স্বপ্ন দেখে।জীবনের বড় হবার স্বাদ কেমন তা এই মনটা একেবারে পেতে চায়।বলতে গেলে ১৩ বছরের কিশোরী মনটা এক নিমিষে ৩০ বছরের পরিণত নারী হবার স্বাধ পেতে চায়।আর তখনই ভুল করে অনেক সময় ভুল মানুষের হাত ধরে ফেলে।হ্রদয়ের কাপানি,শরীরের উত্তেজনা আর মনের চাওয়া এসবের মাঝে ভালোমন্দটা এই মন বুঝতে চায় না তখন।সকল নিশেধ জিনিসের প্রতি থাকে একটা প্রবল আকর্ষণ।

“প্রিয়ুর অবস্থাটা ও তেমনি ছিলো।অল্প বয়সে প্রেমের স্বাধ নিতে গিয়ে সামনের মানুষটিকে প্রিয়ু যাচাই না করেই মন দিয়ে দেয়।আর প্রিয়ুর প্রয়োজনের সময় সেই মানুষটি উড়াল দিয়ে চলে গেলো কোথাও।
বাবার অকাল মৃতুও,ভালোবাসার মানুষটির হঠাৎ এমন উধাও হওয়া আর যাকে জীবনে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করেছিলো তার মুখেই নিজেকে নিয়ে এতো নোংরা কথা শোনা,এসব কিছু প্রিয়ু সহ্য করতে পারলো না।তাই মনের ভেতরে একটা জিদ আর অভিমান চেপে গেলো।”

–প্রিয়ু আশা করেছিলো আয়ন ওর সব কথা শুনবে,যা এতোদিন কেউ শুনেনি।যা ও কাউকে বলতে পারেনি।সব বলবে ওর আয়নদাকে।আয়নদা নিশ্চয়ই প্রিয়ুকে বুঝবে।অবশ্যই বুঝবে, কেনে বুঝবে না।কিন্তু তা হলো না।
“আয়নতো প্রিয়ুকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।তার আগেই লাগিয়ে দিলো চরিত্রহীনতার তাকমা প্রিয়ুর গায়ে।
অভিমানী প্রিয়ুও আর আয়নের ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো না।প্রিয়ু মনে করে, বিশ্বাস হচ্ছে কাচের মতো।একবার ভেঙ্গে গেলে,সহযে জোড়া লাগানো যায় না।আর জোড় করে জোড়া লাগালেও তার দাগ রয়ে যায় সারা জীবন।তাহলে কি প্রয়োজন এসব করে।তাই সেদিন প্রিয়ুও চেষ্টা করেনি আয়নের ভুল ভাঙ্গানোর।”

বর্তমান……
–জলন্ত সিগেরেটটি নিজেকে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে আয়নের হাতের দুআঙ্গুলকে উত্তাপ দিয়ে জানিয়ে দিলো,আমার যৌবনকাল শেষরে ভাই,এবার মুক্ত করে দে।আর কতো পুড়াবি,এখন তো রেহাই দে..
‘সিগেরেটের হালকা উত্তাপ আঙ্গুলে স্পর্শ করায় আয়ন অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলো।আর এসেই সিগেরেটের উপর মনে হয় আয়নের একটু মায়া হলো,তাই সিগেরেটটির শেষাংশ ছুড়ে ফেলে দিলো অনেক দূরে।
আয়নের ভেতর এখন খুব তোলপাড় চলছে।প্রিয়ুকে এভাবে কখনো ভাঙ্গতে দেখেনি আয়ন।এমনকি তখনও না,যখন প্রিয়ু সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলো।প্রিয়ু যে আয়নকে নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে,তা আয়ন খুব ভালো করেই বুঝতে পাড়ছে।প্রিয়ুকে পেতে হলে আয়নকে আবার প্রিয়ুর বিশ্বাস জিত্তে হবে।তা না হলে আয়ন প্রিয়ুকে একেবারে হারিয়ে ফেলবে।যা আয়ন হতে দিবে না।
অনেক কষ্টের পর সব ঠিক হয়েছে, সম্পর্ক আগে না বাড়ুক,প্রিয়ু ওর পাশে তো আছে।মন চাইলে দেখতে পাড়বে,ছুঁয়ে দিতে পারবে এটা কম কিসের।

“আয়ন গিয়ে ঘুমন্ত প্রিয়ুর পাশে এসে বসলো।প্রিয়ুর নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,কতোটা নিষ্পাপ তুই প্রিয়ু।আর আমি কিনা তোর সাথে কতো কিছু করলাম।আমার মতো জানোয়ারের কাছে তোর মতো নিষ্পাপ মেয়েকে মানায় না সোনা।কিন্তু কি করবো বল,মনের কাছে বন্ধি আমি।আমি খুব স্বার্থপর রে।নিজের স্বার্থের জন্যই তোকে ধরে রেখেছি।আমার সুখ যে তোর মাঝে,তোকে ছাড়া বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়।আমার অক্সিজেন যে তুই।আর আমার এই অক্সিজেন আমি হারাতে পারবো না।আয়নের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়।”

–আর তখনই আয়নের এসব চিন্তার অবসান ঘটাতে রুমের দরজায় টোকা পড়লো।দরজার শব্দ শুনে আয়ন ঘড়ির দিকে তাকালো।সকাল নয় টা এখন।নিশ্চয়ই ওয়েটার নাস্তা সার্ভ করতে এসেছে।আয়ন দরজা খুলে ওয়েটার থেকে নাস্তা নিয়ে প্রিয়ুকে আস্তে আস্তে ঘুম থেকে ডাকতে লাগলো।এর পর আয়ন নিজের হাতেই প্রিয়ুকে নাস্তা করিয়ে দিলো।
__________

“তিতিদের ড্রয়িংরুমের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে দিনেশ।আর নির্বিকারে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে।কিছুক্ষন পর অপেক্ষার ফোরন কেটে দিনেশ শান্ত গলায় বললো।
ক্ষুদা লেগেছে তিতির,নাস্তার জন্য কিছু করেছো।”

–দিনেশের এমন শান্ত মেঝাজ দেখে তিতির একটু চমকে উঠলো।তিতির ভেবেছিলো দিনেশ আজ মনে হয় সব কিছু ভেঙ্গে চূরমার করে দিবে।রাগ উঠলে জিনিষ ভাঙ্গার খুব পুরানো অভ্যাষ দিনেশের।আর সেই মানুষ এতোটা শান্ত,তাও আবার তিতিরের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে এটা শুনেও।ব্যাপারটা তিতিরকে খুব ভাবাচ্ছে।

“কি হলো,কিছু বলো।এমন ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছো কেনো।আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডশাম, আর তুমিও আমার উপর ক্রাশড খেয়ে বসে আছে।তাই এভাবে তাকিয়ে থেকে ইশারা করে বুঝাতে হবে না।”

–দিনেশের কথায় তিতির সম্বিৎ ফিরে পায় সাথে লজ্জাও।আর আমতাআমতা করে বলে।আসলে পরোটা,অমলেট আর সবজিভাজি করেছি।আপনি কি খেতে পারবেন এসব।
“দিনেশ হেসে ডায়নিং টেবিলের দিকে হাটা ধরে,কেনো পাড়বো না।আমাকে কি তোমার মানুষ বলে মনে হয়না।”
–না, মানে আপনার তো……।
“রিলেক্স তিতির, তোমার হাতে তো বিষও খেতে রাজি আমি।এর তুলনায় এসব তো কিছুই না।”
–মুহুর্তেই তিতির স্থির হয়ে গেলো।চোখের কোনায় কিছুটা জল জমে গেলো।দিনেশের ভালোবাসার প্রতি কোনও সন্দেহ নেই তিতিরের।দিনেশের এমন পাগলামি গুলোকেই তো না চাওয়া সত্যেও ভালোবেসে ফেলেছিলো তিতির।কিন্তু তিতির যে নিরুপায়।ধর্মের কাছে,সমাজের কাছে।

“তিতিরকে এখনো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কি হলো।না খাইয়ে মেরে ফেলার প্লানিং করছো নাতো।”

“তিতির আবারও কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।দিনেশের সামনে নিজের ইমোশনাল গুলো লুকাতে কেনো পাড়ছে না এসব ভেবে এখন নিজের উপরই রাগ উঠছে তিতিরের।এরপর আর কিছু না ভেবে চুপচাপ রান্না ঘরে চলে যায় নাস্তা রেডি করতে।”
………..
–ডাইনিং টেবিলে বসে দিনেশ খুব উৎফুল্লের সাথে নাস্তা করছে।নাস্তা নয়,যেনো অমৃতের স্বাধ নিচ্ছে।দিনেশকে এমন খোশ মেঝাজে দেখে তিতিরের গলা দিয়ে খাবার ডুকছে না।খুব কনফিউজড আজ তিতির।মনে হয়,সামনে বসা এই লোকটিকে তিতির একদম চিনে না।এখনতো তিতিরের আরো ভয় হচ্ছে, ভীষণ ভয়।

“তিতিরের চিন্তার মাঝখানে,দিনেশ তার প্রশ্ন ছুড়ে মারলো এতোক্ষন পর।তো তিতির তোমার হবু বর কি করে।
-তিতির চমকে গেলো,দিনেশের প্রশ্নে।তবুও নিজেকে কোনও রকম সামলিয়ে বললো,প প্রফেসার।ভার্সিটির প্রফেসার উনি।
“তাই নাকি,ওয়াও!তুমি একজন জ্ঞানী,তোমার হবু বর হলো মহাজ্ঞানী তাহলে তোমাদের ছেলেমেয়ে নিশ্চয়ই কোনও পন্ডিত থেকে কম হবে না।তোমাদের দেখি একদম পার্ফেক্ট ঝুটি।”

–তিতির কি বলবে বুঝতে পাড়ছে না,দিনেশের এমন শান্ত স্বাভাবের সাথে একদম পরিচয় না তিতির।কিন্তু দিনেশ যে মঝার ছলে তিতিরকে খোঁচা মেরে কথা বলছে তা তিতির খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

“তোমার হবু বর নিশ্চয়ই ফ্রি মাইন্ডের।ঠিক তো।”
–মানে!তিতির ভ্রুটা কিঞ্চিৎ কুচকিয়ে।ফ্রি মাইন্ড বলতে কি বুঝাতে চাইছেন।
“দিনেশ নিজের নাস্তাটা ফিনিশ করে, মুখটা মুছে,এক গ্লাশ পানি খেয়ে তিতিরের দিকে তাকালো।এটা যে তোমার হবু বরের তোমার ভার্জিনিটি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তো।”
–ম মানে!কি বলতে চাইছেন।ক্লিয়ার করে বলুন।তিতির কিছুটা রেগে গেলো।
“তুমি সেদিন হোটেলে আমার সাথে পুরো একরাত কাটিয়েছো, মানে আমরা দুজন একই হোটেলে,একই রুমে সারারাত…..।”
–দিনেশকে আর বলতে দিলো না তিতির,চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।আমার মনে হয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
“তার মানে কি তিতির তুমি অস্বীকার করছো।মানে আমি মিথ্যা বলছি।আমি মিথ্যাবাদ।দিনেশও উঠে তিতিরের সামনে এসে দাঁড়ালো।বল তিতির।”

“আমি সেটা বলছি না,আপনি বলেছেন সেই রাতে আমাদের মাঝে তেমন কিছু হয়নি।তাহলে!”

–তোমার কি মনে হয় সত্যিই কিছু হয়নি।

“তিতির স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,ও বুঝতে পাড়ছে না দিনেশ সেদিন মিথ্যে বলছে নাকি আজ।এটা হতে পারে না স্যার।আপনি মিথ্যা বলছেন।”
–দিনেশ মুচকি হেসে তিতিরের কানের কাছে গিয়ে বললো,তোমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গার লাল তিলটা কিন্তু ধারুন।মনে পড়লে এখনো নেশায় ধরিয়ে দেয় আমায়।এটা বলেই দিনেশ হাটা ধরলো ড্রয়িংরুমের দিকে।
–আর এদিক দিয়ে তিতিরের মাথা ঘুড়ে গেলো দিনেশের কথা শুনে।পা দুটো কাঁপতে লাগলো।শরীরটা অবশ হতে লাগলো।হঠাৎ কি হলো,তিতির দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়ছে না।
এটা হতে পারেনা।আমি কিছুই করেনি।তিতির নিজেই বিরবির করে বলতে লাগলো।
______________

“দিশাকে কলেজের সামনে নামাতেই,কোথা থেকে একটা ছেলে এসে,হুট করে দিশার হাতটি ধরে ফেললো।ঘটনার আকষ্মিক দিশা নিজেও চমকে গেলো।”
–প্লিজ দিশু,আম সরি।আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেও।আমি সত্যি অনুতপ্ত।আমি এমন ভুল জীবনেও করবো না।সত্যিই বলছি।তোমার কসম।

“দিশা ছেলেটি থেকে নিজের হাতটি ছুটানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু পাড়ছে না।কি করছো নিশান্ত।ছাড়ও আমার হাত।আশেপাশের সবাই দেখছে।”
–কিন্তু নিশান্ত তবুও ছাড়ছে না।আগে বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো।তারপর ছাড়াছাড়ি।

“তিয়াশ ব্যাপারটা বুঝতে একমিনিট সময় নিলো।তিয়াশ বুঝে গেলো এই সেই ছেলে যার সাথে দিশার রিলেশন ছিলো।এই ছেলেটিকে দেখলেই বুঝা যায়,কেমন লেম চরিত্রের।তা না হলে পাবলিক প্লেসে কেউ তার এক্স গার্লফ্রেন্ড এর সাথে এমন করে।কিভাবে যে এই মেয়ে একে এতোদিন সহ্য করেছে আল্লাহই জানে।তিয়াশ আর সহ্য করতে না পেড়ে,দিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।এনি প্রোবলেম দিশা।”

–ন নো প্রোবলেম।আপনি আসতে পারেন।এটা আমার আর আমার গার্লফ্রেন্ড এর ব্যাপার।নিশান্ত বলে উঠলো।

“তিয়াশ নিশান্তের সেই হাতটি শক্ত করে চেপে ধরলো যে হাত দিয়ে দিশাকে ধরে রেখেছিলো।ব্যাথায় নিশান্ত দিশার হাতটি ছেড়ে দেয়।মুখ দিয়ে অস্ফুটে বল,ওই মিয়া সমস্যা কি আপনার।”

–তিয়াশ নিশান্তের কথার তোয়াক্কা না করে,দিশাকে জিঙ্গেস করে, তুমি কি এখনো ওর সাথে রিলেশন কনটিনিউ করতে চাও।
“দিশা তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়ায়।তার মানে ও এই রিলেশনে ইতি করতে চায়।”
–বুঝে বলছো তো।পরে আবার পল্টি মারবে না তো।এর ইনোসেন্ট মার্কা ডায়লগ শুনে।
দিশা কিছুক্ষন নিশান্তের দিকে তাকিয়ে,তারপর মুখ “ঘুড়িয়ে বললো। নো,নেবার।আর কনটিনিউ করার তো প্রশ্নই উঠে না।”
–দিশা….নিশান্ত কিছুটা চিল্লিয়ে।

“রিলেক্স ব্রো,এতো হাইপার হচ্ছো কেনো।দিশা তুমি যাও, ক্লাশের দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি তোমার প্রাক্তনকে একটু সান্তনা দিই।গো সুইটহার্ট।
–দিশা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে আরো একবার পিছনে ঘুড়ে তাকালো।চলছে কি দুজনার মধ্যে আল্লাহই জানে।”

“হু আর ইউ।আপনি কেনো আমাদের মাঝে আসলেন।আমার গার্লফ্রেন্ড, রাগ করেছে আমিই তার রাগ ভাঙ্গিয়েও ফেলবো।প্লিজ স্টে ওয়ে।”

–তিয়াশ নিশান্তের এককাঁধে হাত রেখে বললো,তা কি করে হয় ভাই।তোমার প্রাক্তন এখন আমার গার্লফ্রেন্ড। আর আল্লাহ চাইলে কাল আমার ওয়াইফ হবে।তাহলে বলো আমি এসব থেকে দূরে থাকবো কিভাবে।

“কিসব, আবলতাবল বলছেন।এ হতে পারে না।আমরা অনেক বছর ধরে রিলেশনে ছিলাম।দিশু আমাকে এতো তারাতারি ভুলতে পারবে না।”

–ব্রো,সমস্যা নেই।আমার ভালোবাসায় সব ভুলিয়ে দিবো।আর রিলেশনের বয়স দিয়ে কি হবে,তখন তো ও নিজেই বাচ্চা ছিলো।আর একটা বাচ্চা মেয়েকে চকলেট,ললিপপ দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে প্রেমে ফেলেছো।মনে করছো,বাচ্চা মেয়েটি বাচ্চাই থাকবে।তোমার আসল চেহারা কোনও দিন দেখতে পাবে না।যেমনে নাচাবে তেমনি নাচবে।কিন্তু ভুলে গিয়েছো বাপের উপরও বাপ আছে।
তোমার যে কুকুরের মতো জায়গায় জায়গায় মুখ দেওয়ার স্বভাব আছে তা দিশা হয়তো কখনো জান্তেই পারতো না।কিন্তু কি করবো বলো।মেয়েটি খুব ইনোসেন্ট।প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম অনেক আগেই।কিন্তু তোমার সাথে রিলেশন চলছে বলে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু তোমার এতো এতো সুনাম শোনার পর রইতে পারলাম না,তাই সব সত্য দিশার সামনে তুলে ধরলাম।আর দেখো কি হলো কাল যে তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো আজ তোমার প্রাক্তন।

“দিনেশ এবার নিশান্তের কাধ থেকে হাত সরিয়ে সামনে এসে নিশান্তের কোলারটা ঠিক করতে করতে বললো,আর যদি দিশাকে ডিস্টার্ব করতে দেখি,বা দিশার ত্রি সীমায় দেখি তাহলে তোমার বংশে তোমার পর আর কেউ বংশ বৃদ্ধি করতে পাড়বে না।রাস্তাই রাখবো না আমি।”
–নিশান্ত চোখ গরম করে তিয়াশের দিকে তাকালো।
আর তিয়াশ চোখে সানগ্লাসটা পড়ে বাকা হেসে গাড়ীতে উঠে চলে গেলো।
……………
“ভাই পোলাটাকে চিন্তে পারছেন।কলেজেরই এক ছোটভাই নিশান্তকে জিঙ্গেস করছে।”
–নিশান্ত বিরাক্ত চোখে সোয়েল এর দিকে তাকালো।না!কেনো?কোনো গ্রহের প্রাইম মিনিস্টার যে চিনতে হবে।
“না,প্রাইম মিনিস্টার না।তবে কমও না।”
–মানে,কে এইডা।তুই চিনিশ।
“আপনে গাড়ীর পিছনের লগোটা মনে হয় খেয়াল করেন নাই।”
–কেনো?স্মিত চমকে।
“প্যান্টটা সাবধানে রাইখেন।না হইলে খুইলা নিয়া যাইবো।”
–হারামযাদা,মোশকারী করোস।আমি কি তোর বোনের জামাই লাগি রে।
“আরে ভাই চেতেন কে।আপনে যে ব্রান্ডের প্যান্টটা পড়ছেন না,এটা ওই পোলা গো।আর দেখেন আপনার প্যান্টেও ওই একই লগো দেওয়া।আর সব থেকে বড় কথা আয়ন মাহবুব এর ভাই হয় এটা।”
–কোন আয়ন রে।ওইটা না তো।
“হুম ঠিক বুঝছেন।তাই বলছি পানিতে থাইকা কুমিরের সাথে লড়তে যাইয়েন না।এই পোলার কথা জানি না,কিন্তু আয়ন মাহবুভ কিন্তু খাতারনাক লোক।”

–হুম,কিন্তু ভাবার বিষয়,আমার পোষা বিড়ালের পাতে,এতো বড় বোয়ালমাছ ধরা পড়লো কেমনে।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-১৭|

অতীত
“দিনটি ছিলো শুক্রবার।ঢাকার বিলাশবহুল হোটেল ওয়েস্টিনে একটা বিজনেস পার্টির ইনভাইটেশন পেয়েছিলো দিনেশ।দিনেশের পি এ হবার সুবাধে তিতিরকেও সেই পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে।আর দিনেশ তা আগেই তিতিরকে জানিয়ে দিয়েছিলো। ”

–তিতিরকে রেডি হয়ে দিনেশের জন্য অপেক্ষা করতে বললো।কারণ রাত আটটায় তিতিরের বাসার সামনে থেকে দিনেশ নিজেই পিক করে নিবে বলে।প্রথমে তিতির রাজি হয়নি।ও একাই যেতে পাড়বে বললো।
কিন্তু দিনেশের যুক্তির কাছে লাস্ট মুহুর্তে হারতে হলো তিতিরকে।
“কারণ তিতির হোটেলের লোকেশনটা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগতো নয়,এটা তিতিরের জন্য সম্পূর্ণ নতুন।আর তিতিরের বাড়ী হোটেল থেকেও অনেকটা দূরে তাই তিতিরের জন্য রাতের বেলা একলা ওখানে যাওয়া অনেকটা রিস্কের ব্যাপার।উপায় না পেয়ে দিনেশের সাথেই যেতে রাজি হলো তিতির।”

–দিনেশ গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিতিরের জন্য অপেক্ষা করছিলো।হঠাৎ দিনেশের চোখ আটকে গেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীর উপর।মনে হয় তখনই একটা হার্ট বিট মিস করলো দিনেশ।

“ব্লাক শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে রেখে,মুখে হালকা মেকআপের টাচআপ।ব্যাশ! এতেই মনে হয় এই নারী আজ খুন করার উদ্দেশ্যে রাতের আধারে নেমেছে।তিতিরের গোলাপি ঠোঁটে আজ লাল আভা পড়েছে যা তিতিরকে ব্লাকের মাঝে একদম ইউনিক লুক এনে দিয়েছে।হাতে বরাবরের মতো দুটো চুড়ি।নাকে স্টোনের একটা নাক ফুল তারার মতো জ্বলমল করছে।”

–দিনেশের মুখ দিয়ে অজান্তেই বের হয়ে গেলো,ওয়াও!ব্লাক এন্জেল।
আর এতেই বুকের কোনও একপাশে লেগেছে,খুব করে।একটা অসহ্য যন্ত্রনা করছে, যার অনুভূতিগুলো দিনেশের খুব ভালো লাগছে।দিনেশ মুহুর্তেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
‘মনের প্রজাপতি গুলো উড়ো উড়ো করছে,বাগানের ফুলগুলো হাওয়াতে দুলছে,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে দিনেশের ভেতরটাও তোলপাড় করছে।’
জীবনে কতো নারীর সস্পর্শে এসেছে দিনেশ।কিন্তু কখনো কোনও নারীকে দেখে দিনেশ এতোটা মুগ্ধ হয়নি।কিন্তু কেনো জানি প্রতিবার তিতিরকে দেখলে দিনেশ চোখ সরাতে পারেনা।দিনেশ বুঝতে পাড়ছে না।এটা কি তার চক্ষু সমস্যা নাকি অন্যকিছু।খুব শীঘ্রই যে তার ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন পড়বে,এই বিষয় নিশ্চিত সে। তাও আবার মনের ডাক্তার।
……………
“পার্টিতে সবাই সবার মতো ব্যস্ত।পরিচিত কেউ নেই বলে তিতিরও এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।”

–দিনেশ তার কিছু ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছিলো আর আড় চোখে তিতিরকে বারবার দেখছিলো।
তখনই সেখানে এন্ট্রি করেন দেশের গণ্যমান্য আরেক ব্যবসায়ী ফারওয়াদ খান।মাঝ বয়সই ভদ্রলোকটি এসেই দিনেশের সাথে হাত মিলিয়ে কুশলবিনিময় করেন।এরপর ব্যবসা সংক্রান্ত কথা বলার সময় দিনেশের চোখের দৃষ্টি বরাবর তাকায় ফারওয়াদ খান।”

–ফারওয়াদের লোভী দৃষ্টি পড়ে যায় তিতিরের উপর।তাই দিনেশকে জিঙ্গেস করেই ফেলে।
‘হু ইজ দিস প্রিটি লেডি।’

“পি এ আমার।দিনেশ বিনা সংকোচে মুচকি হেসে কথাটি বলে।”

–তাই নাকি!ইন্টেরেসটিং!ফারওয়াদ কিছুক্ষন ভেবে দিনেশকে একটা অফার করে।মিস্টার দিনেশ এখন থেকে আমার কোম্পানির সব প্রজেক্ট আপনার কোম্পানিই পাবে।
“তাই নাকি,এটা তো খুব ভালো খবর।শুনে খুশী হলাম।”
–তবে একটা শর্ত আছে আমার।
“দিনেশ ভ্রুটা কিঞ্চিত কুচকিয়ে কি?”
–ফারওয়াদ চোখের ইশারায় তিতিরকে দেখালো।ওকে আমার চাই।
আসলে ফারওয়াদ একটা মেয়েবাজ।মেয়েদের নেশায় থাকতে বেশি পছন্দ করে।তাইতো যেখানেই কোনও সুন্দর মেয়ে দেখবে সেখানেই তার লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।আর আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।ওর নোংরা দৃষ্টি পড়লো আজ তিতিরের উপর।

“দিনেশ প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না,তাই নিঃসংকোচ জিঙ্গেস করলো,মানে!”
–উফ!দিনেশ তুমিও না।এতোটা বোকা কেনো।দেখো আমার সব কোন্ট্রাক্ট তুমিই পাবে এখন থেকে, বিনিময় তোমার পি এ কে আমার বিছানায় যেতে হবে।আই হোপ তুমি বুঝতে পাড়ছো বাকিটা।”

–মুহুর্তেই দিনেশের মাথা গরম হয়ে গেলো।মাথার ফুলা রগগুলোকে দুআঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো।চোয়াল শক্ত করে দিনেশ ফারওয়াদকে ঠান্ডা মেঝাঝে বললো,
বয়স তো কম হয়নি আপনার তবুও ভিমরিতি যাচ্ছে না।এই বয়সে এতো উত্তেজনা কিন্তু শরীরের জন্য ভালো না তা কি জানেন।কখন কি হয়ে যাবে বুঝতেও পারবেন না।

“দিনেশ মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ।আর তোমার সমস্যা কি? বিজনেসে এসব তো চলেই।তুমিতো নতুন না এই জগতে।তাছাড়া আমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেড শেয়ার করার কথা বলিনি।She’s just your p.A।”

–দিনেশ মুখ দিয়ে কিছু বললো না,জাস্ট বাকা হাসলো।

“আর এই হাসির রহস্য ফারওয়াদ ধরতে পারলো না।
পরিচিত কারো ডাকে ফারওয়াদ চলে যায় ওখানে। আর দিনেশকে ভাবতে বলে ব্যাপারটা নিয়ে।”

–ফারওয়াদ চলে যাওয়ার পরই দিনেশ ফোন করে আয়নকে।
‘নাম ফারওয়াদ খান।আমি এই কোম্পানির সব ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাই।আর আজকের পর থেকে এই কোম্পানির সাথে আমাদের সকল পার্টনারশিপও বাতিল।
“-ফোনের ওপর পাশ থেকে আয়ন,কি করেছে।”
–আমার একটা মূল্যবান জিনিসে নিজের কুদৃষ্টি দিয়েছে।যা আমার একদম পছন্দ হয়নি দোস্ত।
“কতোদূর নিয়ে যেতে চাস বিষয়টি।”
–আমি ফারওয়াদকে ভিখারিতে পরিণত হতে দেখতে চাই।
“হয়ে যাবে।জাস্ট রিলেক্স। এন্ড এন্জয় ইউর পার্টি।”

–আয়নের সাথে কথা বলেই দিনেশ তিতিরের দিকে তাকলো।কিন্তু তিতির ওর জায়গায় ছিলো না তখন।তা দেখে দিনেশ একটু চিন্তিত হয়ে খুঁজতে লাগলো তিতিরকে।
তিতিরের সাথে এতোক্ষন ধরে কথা বলছিলো যে মেয়েটি তাকে জিঙ্গেস করে জানতে পারে তিতিরের নাকি হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছে তাই ও একটু ওয়াসরুমের দিকে গিয়েছে।

“দিনেশও কিছু না ভেবে লেডিস ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেলো।হঠাৎ কি হলো তিতিরের এসব ভাবতে ভাবতে।”

–তিতির সিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত ভাবে।
“দিনেশ তিতিরের সামনে দাঁড়িয়ে,আর ইউ ওকে তিতির।তুমি ঠিক আছো তো।”

–দিনেশকে দেখেই তিতির কাঁদতে লাগলো।
“দিনেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো।কি হলো কাঁদছো কেনো।”
“-আপনি এতো সুন্দর কেনো স্যার।ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই জানেন না।এতে করে মেয়েদের অসভ্যের পদবী পেতে হয়।”
–ওয়াট!কিসব বলছো তুমি।আর এভাবে কথা…মুখ থেকে বিশ্রি ঘ্রাণ আসছে দেখে দিনেশ চুপ হয়ে যায়।তুমি ড্রিংক করেছো তিতির।

“তিতির মুখ দিয়ে হা,মাথা নেড়ে না বলছে।দিনেশ যা বুঝার বুঝে গিয়েছে।তিতিরকে ওয়াসরুম থেকে বের করতে নিলে,তিতির না বলে দাঁড়িয়ে যায়।আমি যাবো না।”
–কেনো?
“আগে প্রমেজ করুন কাল থেকে বোরকা পড়ে অফিসে আসবেন।”
–দিনেশ হেসে বলে,কেনো?
“কারণ অফিসের সব মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে।আর তা দেখে আমার একদমই ভালোলাগে না।আপনার কাছে যাওয়ার বাহানা খুঁজে মেয়েগুলো।ইচ্ছা করে আপনাকে টাচ করে।আপনার কারনে অফিসের সব মেয়েগুলো দিনদিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।
ওরা কেনো এই যে আমাকে দেখুন আমিও তো আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।আপনার কারণে আমার মনটাও বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি জানি এসব একদম ঠিক না।তবুও আপনাকে একপলক চোখের দেখা দেখতে নিজেকে আটকাতে পারিনা।”

–দিনেশ অবাক হচ্ছে তিতিরের কথা শুনে।কি বলছে মেয়েটি।কিন্তু নেশায় পড়ে যে সব সত্য বলছে এটা খুব করে বুঝতে পাড়ছে দিনেশ।
‘তিতিরের একদম সামনে গিয়ে,কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখো আমায়।’
–জানি না,মনে হয় প্রেমে পড়ে গিয়েছি আপনার।ভালোবেসে ফেলেছি।
“মিথ্যে বলছো।”
–একদম সত্যি।
“ওকে প্রমাণ করে দেখাও।তারপর বিশ্বাস করবো।তা না হলে মনে করবো তুমিও বাকিসব মেয়েদের মতো একটা মিথ্যেবাদী।”

–হঠাৎ তিতিরের কি হলো কে জানে,এটা কি দিনেশের নেশায়,নাকি মদের নেশায় তিতির দিনেশের ঠোঁটদুটো নিজের ঠোঁটের সাথে চেপে ধরলো।কিছুক্ষন পর সরে যেতে নিলে,দিনেশ তিতিরের কোমড় ধরে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে ফেলে,ডিপলি কিস করতে থাকে।তিতির মদের নেশায় থাকলেও দিনেশের এখন তিতিরের নেশা ধরে গিয়েছে।আর ও এটাকে খুব পছন্দ করেছে।তিতির নামের এই মেয়েটি আজ থেকে ওর শুধুই ওর।সেই রাত তিতির বাসায় যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো না।তাই দিনেশ হোটেলের একটা রুম বুক করে।আর তিতির ও দিনেশ সারারাত এক রুমেই ছিলো।কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু হয়েছিলো কিনা তা শুধু দিনেশই জানে।তিতির সে সম্পর্কে মোটেও ভালোভাবে অবগতো নয়।

বর্তমান…..
“তাইতো দিনেশ টোপ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে সেই রাতটিকে তিতির নামের জলপরীটিকে তার জালে ধরতে।ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে হলে যা যা করার সবই করবে ও।দেখা যাক কতোদিন মনের সাথে লড়তে পারে এই জলপরী।”
____________

“ফোনে কথা বলতে বলতে আয়নের চোখ পড়লো প্রিয়ুর উপর।বালকানিতে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে মেয়েটি,হয়তো কিছু ভাবছে।”
‘-আয়নের মনটাও উদাসীন হয়ে পড়ে।আয়ন চায়, মন থেকে চায় সব ঠিক হয়ে যাক।প্রিয়ুর মুখের হাসিটি আবার যেনো ফিরে আসে।কিন্তু বার বার ব্যর্থ হতে হয়।কেনো যে সব ঠিক করতে গিয়ে আবার প্রিয়ুকেই কষ্ট দিয়ে ফেলে আয়ন নিজেও জানে না।কি করবে আয়ন বুঝতে পারছেনা।
–ওরও মন চায় সাধারণ কাপেলদের মতো চলতে।হাসিখুশি বাকি জীবনটা পার করতে প্রিয়ুর সাথে কিন্তু সুখ যেনো তার চির শত্রু ধরা দিতে গিয়েও ধরা পড়ে না।আয়ন এসব ভাবতে ভাবতেই প্রিয়ুর দিকে এগিয়ে গেলো।প্রিুর দৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের দৃষ্টিও সামনে নিক্ষেপ করলো।”

–দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে সামনের ঝিলে কিছু নতুন কপতকপতি একে অপরের হাত ধরে নৌকায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।আয়ন বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ুর হয়তো ওদের দেখে কিছুটা মন খারাপ লাগছে।প্রিয়ুর মন অন্যদিকে ঘুড়াবার জন্য,
জানিস এই ঝিলে অনেক মাছও আছে।আর অনেকে নাকি এখানে শুধু মাছ ধরতেই আসে।
“প্রিয়ু তখনো চুপ।”
–আয়ন আবারও বলে,এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবি।বাহিরে চল।পুরো রিসোর্টটা আরো সুন্দর। দেখলেই মন ভরে যাবে।চল,আয়ন প্রিয়ুর হাতটা ধরে।

“আমার ভালো লাগছে না আয়নদা।তুমিই যাও।আমাকে একটু একা ছেড়ে দেও।প্রিয়ু আয়নের কাছ থেকে নিজের হাতটি ছুটিয়ে বললো। ”

–আয়নের এখন রাগ উঠছে,ভীষণ রাগ।এই মেয়েটির কি আমার প্রতি কোনও মায়া হয়না।সব কাজকর্ম ফেলে ওকে নিয়ে এখানে এসে পড়েছি অথচ এর কোনও মূল্যই নেই ওর কাছে।আয়ন কিছু বলতে নিবে ঠিক সে সময় দরজায় কেউ টোকা দেয়।আয়ন প্রিয়ুর দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়,দরজা খুলতে।
“দরজা খুলার সাথে সাথে তিয়াশ,অনিক,দিশা হুমড়ি খেয়ে পড়ে আয়নের গায়ে উপর।”

–কি হলো তোদের।দরজায় কেউ এভাবে দাঁড়ায়।আয়ন কিছুটা রেগে।

“আরে ভাই,আমরা তো ভাবলাম তোমরা হয়তো হানিমুনে এসেছো।তাহলে তোমাদের হানিমুনে আমাদের কি কাজ।তোমরা আবার ব্যস্ত কিনা তা চেক করতেই দরজায় একটু কান পেতেছিলাম।আর ওমনেই তুমি দরজা খুলে দিলে।”
–আয়ন রাগান্বিত চোখে ভাইদের দিকে তাকায়।কারণ আয়ন আর প্রিয়ুর সম্পর্ক যে বর্তমানে দা কুমড়ার মতো তা খুব ভালো করেই জানে তিয়াশ, অনিক।তবুও এ ধরনের ফাইজলামির কোনও মানে হয়।
অনিক ও তিয়াশ ভাইয়ের এই রাগকে পাত্তা না দিয়ে একটা কেবলামার্কা হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে যায়।

“পরিচিত কন্ঠ শুনে প্রিয়ু বালকানি থেকে আস্তে আস্তে রুমে এসে, দরজার সামনে দিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই চমকে যায়।আর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে দিশাকে।কতোদিন পর দেখা বেস্টুর সাথে।তাই প্রিয়ু সামলাতে পারলো না নিজের আনন্দটাকে লুকাতে।”

–আয়ন জানতো এমনি হবে।তাই আয়নই তিয়াশ,অনিকে দিশাকে সাথে করে এখানে নিয়ে আসতে বলেছিলো।প্রিয়ুর মুখে হাসি কেবল এরাই এখন আনতে পাড়বে।

“কিরে বেঈমান, আমাদের কি চোখে দেখিস না।তিয়াশ প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো।”
–দেখছো আয়নদা আমরা তোমার বউয়ের জন্য সব কাজ কর্ম ফেলে চলে আসলাম এখানে ওকে এন্টার্টাইন করতে।আর ও আমাদের ননভেলু করছে।
অনিক ভাই আমার, বলতো বাইচা আছি কোন শালার লাইগা।আমার আরো আগে মরণ হলো না কেনো।একটু একটিং করে,উফ! এই যন্ত্রনা আর সইতে পারছি না।আমাকে একটু বিষ এনে দেও,বিষ।যা আমি খাইয়া মইরা যামু।
শোন অনিক আমি হা করি তুই ঢাইলা দিস।কৃপটামি কিন্তু একটুও করিস না ভাই আমার।
তিয়াশের কথা শুনে প্রিয়ু অট্টহাসিতে হাসতে লাগলো।আর আয়ন মুগ্ধ হয়ে প্রিয়ুর সেই হাসি দেখতে লাগলো।আজ অনেকদিন পর প্রিয়ুকে এভাবে হাসতে দেখেছে আয়ন।
_____________
“পূর্নিমা রাত,চারদিকে ঘন অন্ধকার।রিসোর্ট এর সব লাইটগুলো অফ করে রাখা হয়েছে,শুধুমাত্র রাতের পূর্ণিমাকে উপভোগ করার জন্য।মিটিমিটি করে আলো জ্বালিয়ে জোনাকিরাও বের হয়ে গিয়েছে নিজেদের সঙ্গী খুঁজতে।”

–মাথার উপরে একটা মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে।ঘাসের উপর শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই চাঁদটির সৌন্দর্য উপভোগ করছে আয়ন আর প্রিয়ু।আজ সারাদিন প্রিয়ু অনেক আনন্দ করেছে।তাই কিছুটা ক্লান্ত।

“তিয়াশ,অনিক কে সাথে নিয়ে মাছও ধরেছে।চারজনে মিলে ব্যাডমিন্টনও খেলেছে।তবে খেলায় প্রিয়ুবার বার হারার কারনে মন খারাপ করে বসে পড়েছিলো।কারণ প্রিয়ুর বিপক্ষ দল ছিলো তিয়াশ আর দিশা।ওরা দুজনই ব্যাডমিন্টনের মাস্টার বলতে গেলে।প্রিয়ুও ভালো খেলে,কিন্তু এই খেলায় অনিক কাচা।তাইতো প্রিয়ুর এই অবস্থা। রাগে গজগজিয়ে প্রিয়ু অনিকের দিকে তাকায়।”

–ভাই,তোমার কারনে আমাকে হারতে হচ্ছে বারবার।তুমি কেমন ছেলে সামান্য ব্যাডমিন্টন খেলা খেলতে পারোনা।তোমার থেকে ওয়ান-টুর বাচ্চারাও ভালো খেলে।

“উফ প্রিয়ু,জানিসই তো আমার ফেবেরেট খেলা ক্রিকেট। অন্য কিছুতেই আমার মন ভরে না।তুই ওদের ক্রিকেট খেলার চেলেন্জ কর।তারপর দেখ,এই অনিকের খেল।একেক টাকে ছক্কা মাইরা উড়াইয়া দিমু।”

–কই উড়াইয়া ফালাইবা,তোমার শ্বাসুর বাড়ী।হাদারাম কোথাকার।সবগুলো অপদার্থ ভাই পাইছি আমি।কোনও কাজের না একটাও।

“অনিক কিছুটা হতাশ হলো,প্রিয়ু ওর টেলেন্টটা বুঝতে পাড়লোনা বলে।কিন্তু প্রিয়ুকে তো জিতাতে হবে,তাই একটু ভেবে।শোন প্রিয়ু!

–প্রিয়ু অনিকের দিকে তাকিয়ে কি?

“আয়নদাকে রাজি করা।আয়নদা মাস্টারের মাস্টার এই খেলায়।তোকে দাদা একাই জিতিয়ে দিতে পারবে।আর তিয়াশেরও বারোটা বাজিয়ে দেবে।”

–কি হলো প্রিয়ু,হাওয়া ফুস।নাকি আরো খেলবি।আমার কিন্তু তোকে হারাতে বেশ ভালো লাগছে।কি বলো দিশা।

“দিশাও হেসে হা জবাব দেয়।”

–প্রিয়ুতো রেগে আগুন। অনিকের দিকে তাকিয়ে,তোমার ওই রোবটমার্কা ভাই কি খেলবে আমার সাথে।দেখনা,ছুটিতে এসেও লেপটপে বসেবসে কাজ করছে।

“তুই বললে,অবশ্যই করবে।কিন্তু একটু ভালোবেসে বলিস।তুই ভালোবেসে বললে তো ফাঁশিতে ঝুলতেও রাজি,আর এটা তো জাস্ট একটা বেডম্যান্টন খেলা।”

–প্রিয়ু কিছুক্ষন অনিকের দিকে তাকিয়ে,আয়নের দিকে তাকালো।ভালোবেসে তাও আবার আয়নদাকে।এই ব্যক্তি ভালোবাসার কি বুঝে।শুধু জানে মন ভাঙ্গতে।কিন্তু এখন জিতাটাই হচ্ছে ফরয কাজ।তাই বলতে তো হবেই এই খবিশটাকে।আর কোনও উপায় নেই প্রিয়ু তোর।বিপদে পড়লে গাধাকে বন্ধু বানাতে হয় এটাই নিয়ম।
………….
“প্রিয়ু গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আয়নের সামনে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে।কিন্তু কাজ পাগল আয়নের সেদিকে কোনও খবর নেই।তাই প্রিয়ু নিজের উপস্থিতি জানান দিতে খুকখুক করে কাশি দিলো।”
–আয়ন প্রিয়ুর দিকে না তাকিয়ে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো।
“প্রিয়ুর মেঝাজ বিগরে গেলো,আমার পানি লাগবে না আয়নদা।আমার তো এখন একটু তোমাকে লাগবে,প্রিয়ু একদম কাছে এসে আয়নের হাতটি পরম যত্নে নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে কথাটি মিষ্টি করে বললো।ঠিক যেনো আগের প্রিয়ু, যেভাবে আবদার করতো আয়নের কাছে।”

–আয়ন চোখের সানগ্লাসটা খুলে এবার প্রিয়ুর দিকে তাকালো।একটু মুচকি হেসে একহাত প্রিয়ুর গালে রেখে বললো,আমিতো পুরোটাই তোর তাহলে একটু কেনো,নিবি যখন পুরোটাই নে।আমি মাইন্ড করবো না।আর আমি তোর মতো নির্দয়ও না।
“আয়নদা,মজা করো না।সত্যিই বলেছি।”
–আয়ন নিজের হাসিটা আরো একটু প্রশস্ত করে বললো,আমিও মজা করছি না সোনা,আমিও সত্যিই বলছি।
“আয়নের ইশারা বুঝতে পেড়ে প্রিয়ু একটি লজ্জা পেলো।আর ইতস্থিত হয়ে আয়নের হাতটি ছেড়ে দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,হয়তো প্রিয়ুর মাঝেও অল্প হলেও অনুভূতির হওয়া বইছে।”
–আর আয়ন সে তো মনে হয় তার প্রিয়ুসীর সকল অনুভূতিগুলো যেনো চোখ দিয়েই শুষে নিচ্ছে।একদৃষ্টিতে আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হয় কি যেনো শান্তি খুঁজে পায় এই মুখটির মাঝে।আয়ন জানে না কেনো,শুধু জানে ওর খুব ভালো লেগেছে এই মুহুর্তে।যদি সময়কে বন্দি করা যেতো তাহলে হয়তো আয়ন বন্দি করে ফেলতো এই মুহুর্ত কে,এই সময়কে আর এই লজ্জাবতী প্রিয়ুকে।
………..
“অবশেষে প্রিয়ু আয়নকে ব্যাডমিন্টন খেলতে মানিয়ে নিয়েছিলো।তবে এতে করে আয়নেরও একটা শর্ত ছিলো।জিতলে আয়ন যা চাইবে প্রিয়ুকে তাই দিতে হবে।
‘প্রথমে প্রিয়ু ভয় পেয়েছিলো আয়নের শর্তে,পরে আয়ন আশ্বাস দিলো,ও লিমিট ক্রস করবে এমন কিছুই চাইবে না।তাই প্রিয়ুও রাজি হয়ে যায়।”

–তিয়াশ ও দিশাকে নাকের পানিতে ডুবিয়ে ছাড়ছে আয়ন আর প্রিয়ু আজ।লাস্ট মুহুর্তে তিয়াশ নিরাশ হয়ে খেলাই ছেড়ে দিলো। আর প্রিয়ু জিতে গেলো।ও এতো খুশি ছিলো যে আয়নকে আচানক জড়িয়ে ধরলো।
আয়ন এসব এই সময় মোটেও আসা করেনি, তাও আবার প্রিয়ুর থেকে।আয়নের ঘেমে যাওয়া শরীরটি প্রিয়ুর ঘার্মান্ত শরীরের সাথে একদম লেপ্টে গেলো। আয়নকে দিশেহারা করতে প্রিয়ুর শরীরের একটু স্পর্শই যথেস্ট ছিলো।আর সেখানে প্রিয়ুর সমস্ত ভার এখন আয়নের উপর।আয়ন সত্যিই বুঝতে পারছে না কি করবে।

” আসলে প্রিয়ু নিজেও বুঝতে পারেনি ও কি করছে।ঘটনাটা আচানকই হয়।ও নিজের এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারছিলো না।”

–এদিক দিয়ে তিয়াশ আর অনিক একে অপরকে চোখ টিপ মারলো।তার মানে তাদের প্লান সাকসেসফুল হয়েছে।প্রিয়ু স্বাভাবিক হচ্ছে।প্রিয়ু যতোটা স্বাভাবিক হবে আয়নের প্রিয়ুকে পেতে ততোই সহয হবে।যেমন আজ হলো।ভাইয়ের মুখের তৃপ্তিময় হাসিই বলে দিচ্ছে,ভাইয়ের মনের কথা।আর ভাইয়ের এই হাসির জন্য সবকিছু করতে রাজি ওরা।
……….
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি

সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি
এখন তো চান্দের চিনে না
আমারে সুর্যও চিনে না
চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
এখন তো চান্দের চিনে না

আমারে সুর্যও চিনে না

চিনবো কেমনে যে চিনাইব সেও তো চিনে না
চান্দের বাতির কসম দিয়া ভালবাসলি
সুর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি

“ঝিলের পাশের ছাউনি দিয়ে ঘেরা বৈঠকখানাতে বসে কয়েকজন ছেলেমেয়েদের গানের আসর চলছে।আয়ন নিজেও তাদের গান খুব উপভোগ করছে এই নিস্তদ্ব রাতে।মুখ ঘুড়িয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে দেখে,ওর প্রিয়ুসী ওর এক হাতের উপর শুয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আয়ন হেসে দিলো।চাঁদের আলোয় প্রিয়ুর সারামুখে পড়ে আরো বেশি সিগ্ধ লাগছে।মনে হয় এই মাত্র জ্যোৎস্না স্নান করে এই নারী ধরণীতে নিজের পদার্পণ করেছে।”
–রাত আস্তে আস্তে গভীর হচ্ছে,তাই আয়নও প্রিয়ুকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের কোটেজের দিকে পা বাড়ালো।দূর থেকে আয়ন আর প্রিয়ুকে এভাবে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করলো ছেলেমেয়েগুলো।পার্ফেক্ট জুটি।
“আয়ন হেসে দিলো।মনের ভেতর অনেক বাসনা তো জাগ্রত হচ্ছে এই পূর্ণিমা রাতে।কিন্তু আয়ন জানে প্রিয়ু এখনো রেডি না,মন থেকে আয়নকে সব সপে দিতে।তাই আয়নকেই নিজের অনুভূতিগুলো সামলাতে হবে।যতোদিন না প্রিয়ুকেও এই অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে।”

–তিয়াশ, অনিক আর দিশা চলে গেছে বিকেল হতেই।কিন্তু আয়ন প্রিয়ুকে নিয়েই রয়ে গেলো রিসোর্টে।কাল সকালে চলে আসবে বাড়ীতে সবাইকে বলে দিতে বললো।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-১৮|

“জীবন আর পরিবর্তন একে অপরের পরিপূরক। যেখানে জীবন আছে সেখানে পরিবর্তনও আছে।আর এই পরিবর্তনের সূত্রাকার অতিত কে ঘিরেই শুরু হয়।অতিতই হলো এই পরিবর্তনের চাবিকাঠি।তাই বলে অতিত নিয়ে পড়ে থাকলে তো চলবে না।অতিতে হয়তো তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস,ছ্যাকা খেয়ে বোকা হয়েছিস,পরীক্ষায় লাড্ডু পেয়েছিস,প্রিয়জনদের কাছে বারবার ধোকা খেয়েছিস।কিন্তু এটা কোনও সমস্যা না।সমস্যা হলো এসবের কারণে নিজেকে দমিয়ে রাখা।হতাশ হওয়া।সব কিছু শেষ এসব ভাবা।”

–যেখানে সব কিছু শেষ হয় সেখান থেকেই শুরুটাও হয়।আর তখনই ভুলগুলো শুধরানোর সুযোগ এসে পড়ে জীবনে।
‘জীবনে হেরে যাওয়া মানেই শেষ হয়ে যাওয়া না,প্রিয়জনগুলো চলে যাওয়া মানেই জীবন মূল্যহীন নয়।মনে রাখতে হবে,বিধাতা যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।উনি এক দরজা বন্ধ করলে রহমতের আরেক দরজা অবশ্যই খুলে দেয়।তাহলে হতাশ হয়ে কি হবে।’

“মনে রাখতে হবে,খেলার শুরুতেই চার উইকেট পড়ে যাওয়া মানে এ নয়,খেলা শেষ বা হেরে যাওয়া।পুরোটা খেলা ধৈর্যের সাথে দেখে হার বা জিত যাই হোক তাকে সদয় একসেপ্ট করা।
জীবনটা কোনও টিভি সিরিয়াল নয় যে, দু চার পর্বে কাহিনী শেষ করে দিতে পারবে।জীবন যতোদিন থাকবে, জীবনকে উপভোগ করে চালিয়ে যেতে হবে।যা-ই হোক জীবনে, অনাঙ্কাকিত বা কাঙ্ক্ষিত সব কিছু দৃঢ়তার সাথে মানিয়ে নিতে হবে।”

–জীবন কিন্তু একটাই প্রিয়ু,আর এই জীবনে কখন কার গাড়ী চলার পথে বন্ধ হয়ে যাবে কেউ বলতে পাড়ি না।এই ছোট জীবনে মান-অভিমান চলবে,তাই বলে তা সারা জীবন বহন করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
মানুষ মানেই ভুল।কোনও মানুষই পার্ফেক্ট না।আয়নদাও না। তাই হয়তো রাগের মাথায় অনেক ভুল করে ফেলেছে।তোকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু তোকে এটাও মানতে হবে,এই আয়নদাই তোকে সব থেকে বেশি আঘলেও রেখেছিলো।তোর চাওয়া কোনও কিছু অপূর্ণ রাখেনি।
‘কিন্তু হয়তো অপরিনত তুই আয়নদার চাওয়াটা,তার চোখের চোখের ভাষাটা কখনো বুঝিসই নিই।’

“ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো হতে দেখা সহয না।তাও আবার যেমন তেমন ভালোবাসা না।আয়নদা বরারবই তোর প্রতি অনেকটা অবসেসড,প্রোটেক্টিভ ছিলো, ইনসিকিউর ও ছিলো।তাই তো তোর আর রোহানের সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি।”
“-জানিস সেদিন তোর বাসা থেকে রাগ করে এসে আয়নদা নিজেকে তিনদিন ঘর বন্ধি করে রেখেছিলো।আমরা অনেক চেষ্টা করেও আয়নদাকে রুম থেকে বের করতে পারিনি।শেষ মুহুর্তে কিছু বুঝতে না পেরে তোর বাড়ীতে ছুটে এসেছিলাম।আমরা ভেবেছিলাম তুই পাড়বি এই মুহুর্তে আয়নদাকে রুম থেকে বের করতে।কিন্তু তোর বাড়ী তালা দেখে সব আশা শেষ হয়ে গেলো সেদিন।”

–তিনদিন পর ভাই যখন রুম থেকে বের হলো,তখন তার হাতে ছিলো একটা ল্যাকেজ।কারো সাথে কোনও কথা না বলেই আয়নদা সেদিন দেশ ছেড়েছিলো।শুধু যাওয়ার আগে মায়া আপুকে বলেগিয়েছিলো,’আমি ইতালিতে চলে যাচ্ছি দি।তোমরা আমাকে কিছুুদিন ফোন করে ডিস্টার্ব করো না।আর ভালো থেকো।’

-এর পর ছয়মাস আয়নদা বাড়ীর কারো সাথে কোনও কথা বলেনি।ফোনে অনেকবার আমরা কথাবলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বার বার ব্যর্থ হওয়া ছাড়া কিছুই পাইনি জানিস।
“শুধু তুই একা কষ্ট পাসনি প্রিয়ু, আয়নদাও পেয়েছে।হয়তো বলবি তোর থেকে কম।কিন্তু আয়নদার এই কষ্টটাই আয়নদাকে পুড়িয়ে শেষ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।ভুল শুধু একার দাদার ছিলো না তোরও সমান তালে ছিলো।তুইও তো একবার দাদার কথা চিন্তা করিসনি।খুলে বলার চেষ্টা করিসনি কোনও কিছু।রোহানের কথাও লুকিয়েছিস।তাহলে তোরও কোনও অধিকার নেই আয়নদাকে শাস্তি দেওয়ার।”

“প্রিয়ু নিশ্চুপ।”

–কিছুক্ষন চুপ থেকে তিয়াশ আবার বলা শুরু করলো,দাদা যেদিন তার ভুল বুঝতে পারে,সাথে সাথে বাংলাদেশে ব্যাক করে।আর এসেই তোকে খোঁজার চেষ্টা করে।কিন্তু এরপর তোর বারবার আয়নদাকে ফিরিয়ে দেওয়া এবার দাদা মেনে নিতে পাড়েনি।মনের ভেতর তোকে পাওয়ার একটা জিদ চেপে ধরে।তাইতো আবার একটা ভুল করে বসে রাগের মাথায়।

“প্রিয়ু এবার ছলছল চোখে তিয়াশের দিকে তাকায়।তার মানে তোমরা জানতে সেদিন আয়নদা হোটেলে….।”

–প্রিয়ুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে।না!আমরা আগে জানতাম না।পরে যেনেছি।সেটা যেভাবেই হোক।তাইতো অবস্থা বুঝে মায়াদি কে সেদিন আমরাই নিয়ে গিয়েছিলাম।

“কিন্তু আমি এসব ভুলতে পারছি না ভাই।প্রিয়ুর কান্না এসে গেলো।গলাটা ধরে গেলো।”

–ভুলতে না পাড়লে সামনে এগোবি কিভাবে।সারা জীবন কি সম্পর্কটাকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখবি।প্রিয়ু বোন আমার সময় মরিচিকার মতো।সঠিক সময় সঠিক কাজ না করলে পড়ে প্রস্তাতে হবে।

“কিন্তু আয়নদা যা করেছে সেটা গুনাহ। আমাকে অপবিত্র করেছে।”

–জানি!কিন্তু সেই আয়নদাই তোদের সম্পর্কটাকে পবিত্র নাম দিয়েছে।আমি আয়নদা হয়ে সাফাই করছি না।আয়নদা যা করেছে তা একদম অনুচিত।কিন্তু প্রিয়ু অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তো স্বয়ং আল্লাহ তাআালাও ক্ষমা করে দেয়।তাহলে তুই কেনো পাড়বি না।যেহেতু আয়নদা এখন অনুতপ্ত।

“প্রিয়ু কিছুটা বিস্মিত হয়ে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।”

–দাদাকে মাপ করে দে।নিজেদের সম্পর্ক টাকে আর একটা সুযোগ করে দে।দাদাকে একবার আপন করে নে।কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করতে হয়।আর পাপ পূর্ণের হিসাব রাখার আমরা কে।তার জন্য উপরওয়ালা আছে তো।আল্লাহর উপর ছেড়ে দে সব।আয়নদার ভেতর যদি কোনও ময়লা থাকে,তাহলে তার শাস্তি উপরওয়ালাই দিবে।তোকে ভাবতেও হবে না।
“প্রিয়ু নিশ্চুপ……।”
–বোন আমার, আমি তোর খারাপ চাই না।আয়নদাকে ভালোবাসি,তার মানে এ নয় তোর খারাপ চাইবো।তুই শুধু এক কদম বাড়া।আয়নদা নিজেই তোকে কাছে টেনে নিবে।তোর জন্য আয়নদার ভেতরের ছটফটানি আমরা দেখেছি প্রিয়ু।দয়া কর,আমার ভাইটার উপর।মাপ করে দে।
প্রিয়ু উত্তরে কিছুই বললো না,হঠাৎ দাঁড়িয়ে ঝিলটির আরো একটু কাছে চলে গেলো।তিয়াশ ও প্রিয়ু ঝিলের পাশে বসেই এতোক্ষন কথা বলছিলো।

“নিজের জীবনের এতোটুকু বয়সে এতোকিছু ঘটে যাওয়ায় প্রিয়ু কোনও সিদ্ধান্ত মন থেকে নিতে পারেনা এখন।অনেকটা দ্বিধায় ভুগছে প্রিয়ু।হঠাৎ কারো হাসির শব্দে প্রিয়ু পিছনে ঘুড়ে তাকায়,আর তখনি প্রিয়ুর চোখ পড়ে,লম্বা এবং সুবিশাল বডির অধিকারী সুদর্শন পুরুষ আয়নের উপর।প্রিয়ুর যেনো হঠাৎ থমকে যায়।নিজেই মনে মনে বলে উঠে,
‘-নিঃসন্দেহে আয়নদা একজন সুদর্শন পুরুষ।না জানি কতো মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই ছেলেটি।আর এই হাজার মেয়েদের ক্রাশ শুধু আমাকে ভালোবাসে।শুধু ভালোবাসে না,আমাকে কোনও রাজ্যের রাজকুমারীর মতো ট্রিট করে সর্বদা।প্রিয়ুর মুখের উদাসীনতা মুহুর্তে কেটে গেলো এসব ভেবেই,প্রিয়ুর মুখে একচিলতি হাসি এসে পড়ে।”

“আসলে কিছুক্ষন পর তিয়াশ,অনিক ও দিশা চলে যাবে।আয়নের কাছে বিদায় নিয়ে যখন প্রিয়ুকে খুঁজতে গেলো,তখনই তিয়াশ লক্ষ্য করলো প্রিয়ু ঝিলটির পাড়ে একা বসে আছে।অনিক আর দিশাকে আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে,তিয়াশ এসে বসলো প্রিয়ুর পাশে।আনমনা হয়ে বসে থাকার কারনে প্রিয়ু বুঝতে পারেনি প্রথমে। কিন্তু তিয়াশের শান্ত কন্ঠ প্রিয়ুকে সম্বিৎ ফিরতে বাধ্য করলো।
আর তখনই তিয়াশ প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে এসব বললো।
তিয়াশ জানে না প্রিয়ুর মাথায় কিছু ঢুকেছে কিনা।কিন্তু ভাইয়ের খুশির জন্য তিয়াশ বারবার চেষ্টা করে যাবে।
____________

“দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেলো।প্রিয়ু আর আয়নের সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীতে পরিণত না হলেও এ কয়েকদিনে প্রিয়ু অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে আয়নের সাথে।আয়ন কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার পর প্রিয়ুর লাইফটা ও আগের মতো নরমাল হতে লাগে।আয়ন যেনো ওর হারানো প্রিয়ুকে আবার ফিরে পাচ্ছে।অন্তত চেষ্টাতো করছে।”
‘তাইতো আয়নও একয়েক দিনে জোড় করে প্রিয়ুর কাছে যেতে একবারও চেষ্টা করেনি।যার কারণে প্রিয়ুও আয়নকে নিয়ে নতুন করে ভবতে বাধ্য হচ্ছে।’

–প্রতিদিন আয়নই প্রিয়ুকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে যায়।আর আসার সময় বাড়ীর গাড়ী নিতে যায়।প্রিয়ুর গাড়ীতে করে আসা যাওয়া একদম পছন্দ না,কিন্তু কি করবে,ব্যাচারী আয়নের ভয়ে কিছু বলতেও পারেনা।

“আজ প্রিয়ু আয়নকে বলে,দিশাকে সাথে নিয়ে কলেজ শেষ করে মার্কেটে এসেছে কিছু কেনাকাটি করার জন্য।বাকি সব মেয়েদের মতো প্রিয়ুরও মার্কেটিং করতে খুব ভালো লাগে।প্রিয়ুর মতে মার্কেটই এমন একটি জায়গা যেখানে প্রিয়ু ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিবে বিনা টেনশনে।
-দিশাকে নিয়ে লেডিস কর্ণারে ঘুড়তে ঘুড়তে হঠাৎ প্রিয়ুর চোখ পড়লো জেন্টস কর্নার সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলের উপর।মুহুর্তেই প্রিয়ুর মাথা গরম হয়ে গেলো ছেলেটিকে দেখে।সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললো।ছেলেটি আর কেউ না রোহান ছিলো।”

–মনতো চাইছে,সামনে গিয়ে থাপ্পড়াইতে থাপ্পড়াইতে এই শয়তানটার গাল ফাটিয়ে ফেলি।কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে ফেললো পরক্ষণে প্রিয়ু।
‘কারণ আয়নদা জানতে পাড়লে,আমাকে চিবিয়ে খাবে।তাও আবার নুন মরিচ ছাড়া।না না প্রিয়ু কেটে পর।এটা তোর অতিত।আর অতিত বর্তমানকে নষ্ট করতেই সামনে আসে।আর আমি কোনও অতিত আমার লাইফে চাইনা আর।’
-প্রিয়ু ঘুড়ে হাটা ধরলেই হঠাৎ কানে ভেসে আসে সেই পরিচিত কন্ঠ।আর তখনই প্রিয়ু থমকে দাঁড়িয়ে যায়।তার মানে রোহানও প্রিয়ুকে দেখে ফেলেছে।এই মুহুর্তে প্রিয়ুর কি করা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না।

“প্রিয়ুর চিন্তাশক্তির মাঝে বেগাত গঠিয়ে,আবারও পরিচিত কন্ঠটি কানে এসে বারি খেলো,তবে এবার অনেক কাছ থেকে।”
–প্রিয়ু আস্তে আস্তে পিছনে ঘুড়লো।দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ব্যক্তিটির উপর।সামনের ব্যক্তিটির চোখ দুটো প্রিয়ুর দিকেই তাকিয়ে আছে।
“কেমন আছো প্রিয়ু।”
–প্রিয়ু নিজেকে মুহুর্তেই শক্ত করে নিলো,অনেক হয়েছে আর পালানোর কোনও মানে হয়না।তাছাড়া আমি এমন কোনও অপরাধ করেনি যে আমাকে মুখ লুকিয়ে পালাতে হবে।অতিত যেমনই হোক তাকে ফেস করতে শিখতে হবে আমাকে।তাহলেই জীবনে হতাশ হতে হবে না।এসব ভবনা নিয়েই প্রিয়ু নিজেকে সামলিয়ে বললো,ভালো।আপনি?
“এই প্রশ্নের উত্তর রোহান আর দিলো না।আমরা কি বসে কথা বলতে পারি।”
–না,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,দ্রুতো উত্তর দিলো প্রিয়ু।আমি এখন আসি।
“আশাহত হলেও,তা প্রকাশ করলো না রোহান।প্লিস প্রিয়ু জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য।”
…………
“সোপিং মলের কফিসোপ সাইডে বসে আছে প্রিয়ু আর রোহান।দিশাকে বুঝিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রিয়ু।
প্রিয়ুর মুখে বিরক্ত আর চিন্তার ছাপ।কেনো?প্রিয়ু নিজেও জানে না।যে মানুষটিকে প্রিয়ু খুঁজেছে এতোদিন,আজ সেই মানুষটি ওর সামনে বসে আছে,অথচ প্রিয়ুর সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রিয়ু বারবার মোবাইল চেক করছে।কারণ আয়ন ম্যাসেজ করেছে,ও নিজে আসছে প্রিয়ুকে নিতে।তাই প্রিয়ু আয়নের ফোনের অপেক্ষা করছে।ওর আর কোনও দিকে মন নেই আপাততো।”

–রোহান ব্যাপারটা খেয়াল করেছে।কিন্তু কিছুই বললো না।কারণ সেই অধিকারটি যে আর নেই এখন।তাই নিরবতা ভেঙ্গে রোহানই বলা শুরু করলো।আম সরি প্রিয়ু।
“প্রিয়ু এবার রোহানের দিকে তাকালো।বিস্মিত চোখে প্রশ্ন করলো,কেনো?”
–রোহান মাথাটা নিচু করে,আমি জানি,আমি তোমার অপরাধী। তোমাকে না বলে হঠাৎ করেই আমার চলে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি।আসলে আমি নিরুপায় ছিলাম।তুমিতো যানো আমার একটা স্বপ্ন ছিলো,গায়ক হবার।হঠাৎ চোখের সামনে নিজের স্বপ্নটাকে পূরণ হতে দেখে কিছুই খেয়াল করেনি।অনেক বড়,মিউজিক ডায়রেক্টার আমাকে তার এলব্যামে গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো।কিন্তু তার শর্ত ছিলো,কন্ট্রাক্ট এর এই একবছর আমি না বিয়ে করতে পারবো,না প্রেম।তাদের সাথে আমার এই নিয়ে কন্ট্রাক্ট হয়।তাই ইচ্ছা থাকা সত্যেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তখন।কিন্তু একবছর পর আমি তোমার এলাকায় গিয়ে দেখি তুমি নেই।আশেপাশে জিঙ্গেস করেও তোমার খোঁজ পায়নি।এরপর তোমার সাথে কি কি হয়েছে জানতে পারি।আমি আসলেই মন থেকে দুঃখীত প্রিয়।

“প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে,রোহানের এমন দেবদাস মার্কা কথায়।কিন্তু কেনো?কিছুদিন আগেও প্রিয়ু রোহানের জন্য কিছু অনুভোব করতো।মন দ্বিধায় ভুগতো আয়ন আর রোহানকে নিয়ে।ওর মন বারবার জানতে চাইতো রোহান কেনো এমন করলো।অথচ আজ!আজ প্রিয়ুর এসব শুনতে একদমই ভালো লাগছে না।আজ তো রোহানের সাথে বসে কথা বলতেও অর্ড লাগছে প্রিয়ুর।কিন্তু কেনো?এতো পরিচিত এই মানুষটিকে অপরিচিত লাগছে।
প্রিয়ু আর রোহানকে টলেরেট করতে পাড়বে না,তাই কিছুটা বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,হয়েছে আপনার,নাকি আরো কিছু বাকি আছে।আর থাকলেও আমি শুনতে রাজি না।”
–আর তখনই প্রিয়ুর ফোনটা বেজে উঠলো,প্রিয়ু তড়িৎ গতিতে ফোনটা কানে ধরে।আ’ম কামিং,টু মিনিট।ফোনটা কেটে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে আবার থেমে যায়।পিছনে ঘুড়ে,রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ইউ নো রোহান,আপনি একটা স্বার্থপর, বেঈমান।ভালোই হয়েছে আপনার আর আমার সম্পর্ক আগে বাড়েনি।হলে ভবিষ্যৎ এ নিজের স্বার্থের জন্য আপনি আমার সাথে যে আর কি কি করতেন তা ভাবতেও ভয় লাগে।কিন্তু এখন আর আমার এসব নিয়ে কিছু যায় আসেনা।তবে আমার সাথে অন্যায় করার মূল্যও আপনি একদিন পাবেন, খুব করে পাবেন।আমি সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবো।

“-প্রিয়ু এসব বলেই,দৌঁড় দিলো,পার্কিং এর দিকে।কারণ আয়ন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।দেরি হলে,আয়ন নিজেই প্রিয়ুকে খুঁজতে চলে আসবে।তখন আরেক ভেজালে পড়তে হবে।তার আগেই প্রিয়ু আয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।
প্রিয়ুর মন আয়নের দিকে যে ঝুকে যাচ্ছে বোকা প্রিয়ু সেটার আভাষ এখনো পায়নি।
___________
“ঘুমন্ত দিশাকে দেখে তিয়াশ আরো একবার মনে হয় প্রেমে পড়ে গেলো।ডিনার শেষ করে ওরা গাড়ীতে উঠার কিছুক্ষণ পরই দিশার চোখ লেগে গেলো।গাড়ীর মিরর নামানো বলে,বাতাসে দিশার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে।আর তিয়াশ গাড়ী চালানোর ফাঁকেফাঁকে তার ঘুমন্ত পরীটিকে দুচোখ ভরে দেখে নিচ্ছে।”
–কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়তেই তিয়াশ মুচকি হাসলো।কারণ ডিনারের নিয়ে যাওয়ার জন্য দিশাকে এক প্রকার জোড় খাটিয়েই বাড়ী থেকে বের করতে হয়েছে তিয়াশকে।

“তিয়াশের সাথে ডিনার করতে দিশা কিছুতেই যাবে না তাও আবার এতোরাতে।যেখানে দিশা সন্ধ্যার পর বাড়ী থেকেই বের হয়না,সেখানে নাকি এই ফাজিলটার সাথে ডিনারে যাবে।অসম্ভব!
“-দিশার এখনো সেই করুন সময় আসেনি।নিজের সাথে নিজেই কিছুক্ষন বকবক করলো দিশা।”
–তাইতো তিয়াশকে মানা করেই দিশা বিছানায় উপুৎ হয়ে শুয়ে পড়তে লাগলো হুমায়ূন আহমেদ এর দারুচিনি উপন্যাসটি।গল্পের প্রতি একটু বেশি জোক দিশার।
বিভিন্ন রাইটারে গল্প উপন্যাসগুলো পড়তে দিশার খুব ভালো লাগে।বলতে গেলে এগুলোই ওর পরম বন্ধু।যা ওকে কখনো নিরাশ করেনা,ধোঁকাও দেয়না।তাই এদেরকে ভরসা করা যায়।”

–হঠাৎ দিশার অনুভোব হলো,রুমে ও ছাড়াও কেউ আছে।মুখ ঘুড়িয়ে দেখবে তার আগেই রুমের লাইট বন্ধ হয়ে পুরো রুমটি অন্ধকারে ছেয়ে যায়।দিশার যেহেতু অন্ধকারের ফোবিয়া আছে।তাই ও খুব বিচলিত হয়ে ফোন খুঁজতে লাগে।কয়েক সেকেন্ড সময়ই দিশার অবস্থা খুব খারাপ হতে থাকে।
“হালকা ঠান্ডা আবহাওয়া সত্যেও দিশা ঘামছে।ফোন না পেয়ে দিশা দরজার দিকে ছুটতে গেলো।কিন্তু দরজা খুলার আগেই একজোড়া হাত দিশাকে ধরে ফেললো।
মুহুর্তে দিশা ভীষন ভয় পেয়ে গেলো।হার্টটা দ্রুতো বিট করতে লাগলো।যা কিছুটা অস্বাভাবিক।দিশা চিৎকার দেওয়ার শক্তিটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে।মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে,সামনের ব্যক্তিটিকে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে থাকা সামান্য শক্তি দিয়ে আঘাত করতে লাগলো।
–কিন্তু হঠাৎ কিছু জ্বলে উঠলো,গ্যাসলাইটের হালকা মৃদ আলোতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিয়াশের মুখটা জ্বলজ্বল করছে।
“তিয়াশকে দেখে দিশা কিছুটা স্বস্তি পেলেও তা মুখে স্বীকার করলো না।তাই কপট রাগ দেখিয়ে, চোখগুলো বড় বড় করে তিয়াশকে একটা ধমক দিলো,সাহস করে।এটা কি ধরনের অসভ্যতা।এক্ষনি আমার হার্ট ফেল হয়ে যেতো।
আর একমিনিট আপনি রুমে আসলেন কি করে।আমিতো সব লাগিয়ে রেখেছিলাম।

–সেটা জানা কি খুব বেশি ইম্পোরটেন্ট দিশাপাখি।নো!আমি মনে করি না।ইম্পোরটেন্ট হচ্ছে তোমার এখন আমার সাথে থাকার কথা তাহলে তুমি এখানে বসে কি করছো।আমি এতো আশা করে দুজনের জন্য এতোকিছু আয়োজন করলাম,আর তুমি আমার আশার মাঝে পানি ঢেলে দিলে।খুব নির্দয় তুমি দিশা।খুব!
“দেখুন..।”
–দেখছি তো।এই দেখো আমি এখনো তোমার দিকেই তাকিয়ে আছি।
“উফ!দিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,কেনো বুঝতে পাড়ছেন না।আমার দাঁড়া আর প্রেম হবে না।একবার করেই স্বাদ মিটে গেছে।আর চাইনা আমার।”

–ওটা প্রেম ছিলোনা দিশাপাখি।ওটা জাস্ট তোমার আবেগ ছিলো।বাচ্চাকালে এমন আবেগে অনেকেই নিজেকে জড়িয়ে ফেলে,তাই এটাকে সিরিয়াস নেওয়া কোনও প্রয়োজন নাই।
দিশাকে টেনে নিজের কাছে এনে তিয়াশ,প্রেম কি?তা আমি তোমাকে বুঝবো।প্রেমের অমৃত স্বাধ আমি তোমাকে গুলিয়ে গুলিয়ে একটু একটু করে খাওয়াবো।আর তখন তুমি নেশায় পড়ে যাবে।
‘তিয়াশ আরো একটু কাছে এসে,দিশার কানে ফিসফিসিয়ে, এই তিয়াশের নেশা।’
আর তিয়াশের নেশা যখন মাথায় চড়বে না পাখি,তখন মাথা হ্যাং হয়ে যাবে।তখন না পাড়বে ছাড়তে,না পাড়বে ভুলতে।না চাইতেও ভালোবেসে ফেলবে তখন।
–দিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো,এক অদ্ভুত অনুভূতি ছুঁয়ে দিয়ে গেলো পুরো শরীরে।যা দিশা আগে কখনো পায়নি।নিশান্তের সাথে থেকেও না।তাহলে! তিয়াশের কাছে আসায় এমন লাগছে কেনো।দিশা নিজের ফিলিংসটা সম্পূর্ণ লুকানোর চেষ্টা করে,কাপাকাপা কন্ঠে বললো,ন নো চানন্স।

“সেটা দেখা যাবে সময় হলে,এখন রেডি হয়ে নেও তারাতারি।আমাদের যেতে হবে।তিয়াশ লাইটটা ততোক্ষনে জ্বালিয়ে দিলো।”
–দিশা এখনো ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কি হলো।যাও।
“আপনার উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো।আপনি আমাকে ভালোবাসেন,বা আমার উপর ক্রাশড খেয়ে বসে আছেন,এ কথাটি মানতে পাড়ছি না।দিশা নির্বিকারে প্রশ্নটি করলো।কারণ নিজের মনের কনফিউজড দূর করতে ওর।
“কেনো?কেনো মানতে পাড়ছো না।”
–এই শ্যামবর্ণ চশমা পড়া মেয়েটির মাঝে আপনি কি দেখলেন,যা এতো বছর নিশান্তের চোখেও পড়েনি।শুধু নিশান্ত কেনো।অন্য কোনও ছেলের চোখেও পড়েনি।জানেন আমার জন্য মা বিয়ের সমোন্ধ দেখছে,কিন্তু আমার ছবি দেখেই অনেকে মুখের উপর বলে দিয়েছে,তাদের কালো মেয়ে চালবে না।তাহলে আপনি কেনো নিজের টাইম নষ্ট করছেন।নাকি নিশান্তের মতো ভাবছেন,কিছুুদিন টাইমপাস করে ফেলে দিবেন।

“-দিশার কথায় তিয়াশের কিছুটা রাগ হলেও,তা প্রকাশ করলো না।কারণ তিয়াশ অবস্থা বুঝে ব্যবস্তা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পড়ে।যেখানে সেখানে রাগ দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করতে মোটেও ইচ্ছুক না।আর দিশার মনের অবস্থাটা খুব ভালো করেই বুঝতে পাড়ছে,তাই দিশাকে রাগ দেখিয়ে না,বুঝানো প্রয়োজন।”

“কৃষ্ণ কলি আমি তারে বলি
কালো তারে বলে গায়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।”

তিয়াশ মাথাটা নিচু করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা কৃষ্ণকলি কবিতার চারটি লাইন বলে দিশাকে উদ্দেশ্য করে।আবার দিশার কাছে এসে,
আমার কাছে গায়ের চামড়া কোনও মেটার করেনা দিশা।যদি করতো তাহলে বিদেশ গিয়ে কোনও ধলা মেয়ের সাথে প্রেম করতাম।আমিতো তোমার এই শ্যামবর্ণের মায়ায় পড়ে গিয়েছি।তোমার কাজলকালো আঁখি দুটোর মাঝে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে।তাইতো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোই লাগে না।কি করবো বলো।আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি তাও আবার গভীর ভাবে।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-১৯|

“নিস্তদ্ধ একটি রাত।চারদিক ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে,রাতের শহরটি।সাথে কিছুটা জনমানব শূন্য পরিবেশ।সারাদিন বৃষ্টি পড়ায় পিচঢালা রাস্তাটিও গাড়ীর লাইটের আলোয় কেমন পিচ্ছল পিচ্ছিল দেখাচ্ছে।হালকা ঠান্ডা বাতাস চলতি গাড়ীর জানালা দিয়ে এসে শরীরটাকে কেমন শীতল স্পর্শ করছে।আর বাতাসের এই স্পর্শ শরীরের সাথে মনটাকেও চাঙ্গা করে দিতে যথেষ্ট।
তবে এসব কিছু উপেক্ষা করে তিয়াশের স্থির দৃষ্টি এখন সামনে দাঁড়ানো সাদা মাইক্রোটির দিকে।
মাঝ রাস্তায় ওদের গাড়ী ওভারট্যাক করে থামানোর সাথে সাথেই তিয়াশের সন্দেহ হয়,অবস্থা যে ভালো না।তাই দেরি না করে তিয়াশ সাথেসাথে গাড়ীর জানালার গ্লাশ গুলো বন্ধ করে,গাড়ীর ভেতরের লাইটটাও নিভিয়ে দিলো।”

–আড় চোখে একবার দিশাকেও দেখে নিলো,মেয়েটি এখনো ঘুমিয়ে আছে।দ্রুতো পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে দিলো।আর এখন নিজেও অপেক্ষা করছে পরবর্তী কি হয় তা দেখার জন্য।তিয়াশ একবার ভেবেছিলো গাড়ীটি পিছনে ব্যাক করবে,কিন্তু এতে একটা সমস্যা ছিলো।ওদের সাথে রিভলভার আছে কিনা,তিয়াশের জানা নেই।আর তিয়াশকে পিছনে ব্যাক করতে দেখে যদি ওরা এলোপাতড়ী গুলি ছুড়ে তাহলে হয়তো কিছু একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।তাই তিয়াশ ওই অপশনটা বাদ দিলো আপাততো।ওটা অনেকটা রিস্কি ওদের জন্য।মিনিমাম দশ মিনিট লড়াই করে বেঁচে থাকতে পাড়লেই হবে।এরপর ব্যাকআপ এসে পড়বে ওদের বাঁচাতে।”

“তিয়াশ বসে আছে ওর টয়োটা এলিয়েন গাড়ীটিতে।কিছুক্ষন পর সামনের গাড়ী থেকে প্রায় সাত আটজন মুখশধারী লোক নেমে দাঁড়ালো।সত্যি বলতে তিয়াশ কিছুটা ভয় পাচ্ছে তবে নিজের জন্য না দিশার জন্য।তিয়াশ ভাবেছে ওরা সর্বাচ্চ আমাকে মেরে ফেলতে পারবে কিন্তু দিশা!দিশার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার চান্স বেশি আছে।তাই তিয়াশ একটু টেনশড! তবে তা সামনের লোকদের সামনে প্রকাশ করলো না।নিজেকে যথাসম্ভব অব্যক্ত করলো।”

–কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে গাড়ীর আয়নায় একটি কাগজ ধরলো,তিয়াশ লক্ষ্য করলো কাগজটিতে কিছু লিখা আছে,
“চুপচাপ গাড়ী থেকে নেমে পড়ো।আমরা মেয়েটিকে হার্ম করতে চাইনা।কিন্তু তুমি আমাদের কথা না শুনলে তোমার সাথে মেয়েটির অবস্থাও খুব খারাপ হবে।আর বুঝতেই পাড়ছো আমরা কি করতে পারি।তাহলে বলো কি চাও?”

–কাগজটি পড়ে তিয়াশ একবার দিশার দিকে তাকালো।কি নিষ্পাপ মুখখানি।মেয়েটি এই রাতে বের হতেই চায়নি।আমি বরং জোড় করে নিয়ে এসেছি।এখন আমার কারণে ওর সাথে কিছু হলে,এই অপরাধ বোধ আমাকে কুড়েকুড়ে খাবে সারাজীবন।আমি নিজেকে কখনো মাপ করতে পাড়বো না।তাই তিয়াশ সিদ্ধান্ত নিলো,ও একাই গাড়ী থেকে বের হবে।নিজের যা হওয়ার হোক তবুও দিশার একচুলও পরিমান ক্ষতি হতে দিবে না।

“সিট বেল্টা খুলে তিয়াশ গাড়ী থেকে বের হয়ে গাড়ীটি লক করে দিলো।যাতে দিশার ঘুম ভাঙ্গলেও বাহিরে বের হতে না পাড়ে।তিয়াশ দাঁড়িয়ে আছে মুখশধারী লোকগুলোর সামনে।নিজের ভয়কে সাইডে রেখে,নির্বিকারে প্রশ্ন করেই ফেললো কি চাই তোমাদের।”
–মুখশধারী থেকে একজন সামনে এসে,তোর লাশ।
“তিয়াশ মুখে কিছুটা হাসি টেনে,তাই নাকি।খুব ভালো কথা।কিন্তু তার আগে এটাতো বলো ভাই।কে পাঠিয়েছে তোমাদের।আর কতো টাকা দিয়েছে।”
–সেটা তুই যেনে কি করবি।তোর আজ মৃতুও নিশ্চিত এটাই শেষ কথা।
“আরে ভাই,এতো হাইপার হচ্ছো কেনো।দেখো তোমাদের সাথে আমার কোনও পারসোনাল দুশমনি নেই।তাহলে তোমাদের নিশ্চয় আমাকে মারার কোনও কারণ নেই।শুধু একটা কারণ ছাড়া।আর সেটা হলো টাকা!!
কতো টাকায় আমার জীবনটা কিনতে হবে সেটা বলো।”
–ওই আজাইরা প্যাঁচাল পারবিনা।আমরা একবার কথা দিলে কাজ না করে পিছুপা হই না।আর বেঈমানিও করিনা।এই কথা বলেই লোকগুলো এগিয়ে এলো তিয়াশকে মারতে।তাদের একেক জনের হাতে কিছু না কিছু ছিলো যা তিয়াশকে আঘাত করার জন্য যথেস্ট ছিলো।

‘কোনও কিছুর শব্দে দিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আর চকিতে চোখ খুলেই সামনে তাকাতেই দিশা–তিয়াশ বলে একটা চিৎকার করে…..।’
_________
“শোফাতে শরীরটা কিছুটা এলিয়ে পাগুলো সামনের ট্রি টেবিলের তুলে,কোলের উপর লেপটপটা রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু ইমেল চেক করছে আয়ন”।
‘চেয়ারায় তার গম্ভীরতা আর একটু টেনশড লাগছে।কিছুক্ষণ পর পর নিজের দুআঙ্গুল দিয়ে মাথাটাও চেপে ধরছে।’

–প্রিয়ু বিছানায় বসে আইস্ক্রিম খেতে খেতে আড় চোখে বারবার আয়নকে পর্যবেক্ষণ করছে।কিছু একটা বলতে মনটা উসখুস করেছে ওর।কিন্তু আয়নকে দেখে মনে হয় কোনও একটা বিষয় নিয়ে রেগে আছে বা টেনশড,কিন্তু এই দুটোর মধ্যে কোনটা ঠিক প্রিয়ু তা বুঝতে পাড়ছে না।
“প্রিয়ু আজকে রোহানের সাথে দেখা হবার কথা শেয়ার করতে চায় আয়নের সাথে।কারণ আয়ন যদি পড়ে জানতে পারে তাহলে খুব রাগ করবে,সাথে কষ্টও পাবে।প্রিয়ু ওদের মধ্যে আর কোনও কনফিউশন বা সন্দেহ চায় না।তাই নিজের জড়তা কাটিয়ে সাহস করে আয়নকে ধীর কন্ঠে ডাক দিলো ,আয়নদা।”

–আয়ন মুখে কিছুটা বিরাক্ত নিয়ে,হুম জবাব দিলো।কিন্তু প্রিয়ুর দিকে একটিবারও তাকালো না।

“আয়নের এমন ছন্নছাড়া বিহেভিয়ার দেখে,প্রিয়ুর কিছুটা রাগ উঠে গেলো।মানে কি আমাকে এভাবে ইগনোর করার।প্রিয়ু ঝটপট বিছানা থেকে উঠে আয়নের ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো।
–আয়ন তখনো তাকায় নিই একবারও প্রিয়ুর দিকে।কারণ একটাই আয়ন প্রিয়ুর উপর রেগে আছে।আজকে প্রিয়ুর রোহানের সাথে কফি হাউজে দেখা করার কথা আগেই যেনে গিয়েছে।আর তা জানার পর থেকেই আয়নের মনে আবার একটা চাপা রাগের সাথে,ইনসিকিউর অনুভোব করছে।প্রিয়ু আবার রোহান রোহান বাজনা বাজাবে না তো।পুরোনও প্রেম মনে আবার নতুন করে জেগে উঠলে এবার আয়ন কি করবে।নিজেকে কিভাবে সামলাবে।আবার না প্রিয়ুকে আঘাত করে ফেলে রাগের বশে।এসব ভয়ে প্রিয়ুকে যতোটা পাড়ছে এভোয়েড করে যাচ্ছে সেই তখন থেকে।”
–আয়নদা শুনছো।প্রিয়ু একটু জোড় গলায়।
“হুম,বল।শুনছি আমি।”
–কিছু বলার ছিলো তোমায়।কিন্তু তার আগে প্রমেজ করো রাগ করবে না।আর আমাকে বকবেও না।
“আয়ন এবার না চাওয়া সত্যেও প্রিয়ুর দিকে তাকালো।প্রিয়ুর শান্ত এই দৃষ্টি যেনো আয়নের কোথাও গিয়ে লাগলো খুব।মনটাও কু ডাকছে ওর।আয়নের ভয় লাগছে, ওর মনের ভাবনা আবার সত্য না হয়ে যায়।কিন্তু তবুও ওকে জানতে হবে প্রিয়ুর মনে কি চলছে।তাহলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।কিন্তু এটা সত্য যে আমি এবার তোর আর আমার মাঝে কাউকে আসতে দেবো না।কাউকে না।আয়ন নিজেকে কিছুটা শান্ত করে, অশান্ত দৃষ্টিতে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,বল কি বলবি?আমি রাগ না করার চেষ্টা করবো।কিন্তু প্রমেজ করতে পারবো না।আর যা বলার তারাতারি বল।আমি একটু ব্যস্ত এখন। ”

–প্রিয়ু কিছুটা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে রোহানের সাথে দেখা করার কথা সব বলে দিলো।এমনকি ওদের মধ্যে কি নিয়ে কথা হয়েছে তাও।যাতে করে আয়নের মনে প্রিয়ুর প্রতি কোনও নতুন সন্দেহ না আসে।প্রিয়ু বলেই আয়নের দিকে তাকায়।আয়ন রাগ করেছি কিনা জানতে।
‘কিন্তু বোকা প্রিয়ু আয়নের চেহারা দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না,তাই অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে আয়নের অভিব্যক্ত জানতে।’
–আয়ন আশা করেনি,প্রিয়ু যে ওর কাছে সত্যটা স্বীকার করবে।ভেবেছিলো প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলে হয়তো ও সত্যটা অস্বীকার করবে,এড়িয়ে যাবে।কিন্তু প্রিয়ু কি সহযে সব বলে দিলো,একটুও সংকোচন ওর মাঝে নেই,তার মানে কি?ও আবার আমাকে ভরসা করতে শুরু করেদিয়েছে। আবার আগের মতো সব শেয়ার করছে।আয়নের বিষণ্ণতা ঘেরা মনটা মুহুর্তেই ভালো হয়ে গেলো।
আয়ন ভেতরে ভেতরে খুশী হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না।তাই প্রিয়ুকে কিছু না বলে কোল থেকে লেপটপটা রেখে প্রিয়ুকে হাতের ইশারায় সামনে আসতে বললো।
“এবার প্রিয়ু ভয় পেয়ে যায়,ভাবে আয়ন আজ সত্যিই ওকে মনে হয় মাইর দিবে।প্রিয়ু একপা পিছিয়ে,মাথা নাড়ে।তার মানে ও আয়নের কাছে আসতে চায় না এখন।
-প্রিয়ু একটু ভীতু মুখে স্পষ্ট করে বলে,দেখও আয়নদা আমি সত্যি বলছি,আমি জানতাম না ওখানে রোহানও থাকবে।এটা জাস্ট একটা কোইন্সিডেন্ট। ব্যাশ!আমার মনে হলো,তোমাকে এটা বলার প্রয়োজন তাই বলছি।কিন্তু…।”
–প্রিয়ুকে চুপ থাকতে বলে চোখের ইশারায়,আবার ইশারা করে নিজের কাছে আসতে।
“এবার প্রিয়ু সাহস করে ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আয়নের কাছে আসতেই,আয়ন একটান দিয়ে প্রিয়ুকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়।এবার বল, কি যেনো বলছিস।”

–আ আমি ক কি বলছি।আর ত তুমি আ আমাকে এভাবে কেনো ট টানলে।ছাড়ো আমায়।
“আরে বা!আয়ন প্রিয়ুর কোমড়টা শক্তহাতে জড়িয়ে।ছোট বাচ্চাদের তো কোলেই রাখতে হয় জানিস না।আর আমিতো তোকে সেই ছোটবেলা থেকে কোলে পিঠে মানুষ করে এতো বড় করলাম।তাহলে আমার নযরে তো এখনো তুই সেই ছোট্ট প্রিয়ু,যে আমার সামনে হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুড়তো।”
–ছিঃআয়নদা।তুমি আসলেই একটা নির্লজ্জ লোক।কি সব বলছো।আর ছাড়ও আমায়।তোমার সাথে কোনও কথা নেই।প্রিয়ু আয়ন থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে।
“আয়ন প্রিয়ুকে আরো একটু শক্ত করে ধরে,এসব কি বলছিস।আমি তোর সাথে এই মুহুর্তে নির্লজ্জের কি করেছি।তোকে কি আমি চিমটি দিয়েছি নাকি চুমো দিয়েছি।তবে প্রথমটা দিতেই পারি,কিন্তু দ্বিতীয়টা!ওটা দিবো কি করে,তুই তো বাচ্চা একটা মেয়ে।তাই না!”
‘-এক কাজ করি কাল অফিস থেকে আসার সময় আমাকে ফোন করে মনে করিয়ে দিস, আমি একটা ফিটার নিয়ে আসবো তোর জন্য।ঠিক আছে লিটল গার্ল।’

–প্রিয়ু ভীষন রেগে গেলো,ওকে বারবার বাচ্চা বলে কি বোঝাতে চাইছে আয়নদা,ও কিছু বুঝে না।একদম না ও সব বুঝে,কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না।তাই রেগে হাতের কাছের কুশনটা দিয়ে আয়নকে মারতে লাগলো সমানে।
খারাপ আয়নদা!বাজে আয়নদা!কি বললে আমি বাচ্চা, উঁহু!কোন দিক দিয়ে বাচ্চা।চোখে দেখো না,কানা লোক বলে আয়নকে মারতে থাকে।

“হাসতে হাসতে হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুর হাত দুটো চেপে ধরে।আর সুযোগ পেয়ে আরো একটু কাছে টেনে আনে।এতে করে আয়নের গরম নিশ্বাস প্রিয়ুর মুখের উপর আছড়ে পড়ে।প্রিয়ু বিস্ময় দৃষ্টিতে আয়নের চোখের দিকে তাকাতেই,কেমন ঘোর ঘোর লাগে প্রিয়ুর।কেনো জানি আয়নের দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দৃষ্টি সরাতে পাড়ছে না প্রিয়ু।আয়নের কঠোর দৃষ্টি হয়তো প্রিয়ুকে অনুমতিই দিচ্ছে না।”
–আয়ন একদম ওর মুখটা প্রিয়ুর মুখের সামনে এনে বললো,বাচ্চাই তো,তাইতো আমার অনুভূতিগুলোর সাথে খেলা করতে মঝা লাগে তোর।আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে দূরে ঢেলে দিস বারবার।আমার চাওটাকে দেখেও না দেখার ভ্যান করিস।আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তোর,আমার মনের ভেতরের ছটফটানীতে তুই খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করিস।খুব মঝা লাগে তাইনা,আমাকে কষ্ট পেতে দেখে।সব বুঝিস তবুও সারাক্ষণ অবুঝের মতো থাকিস।তুই কি মনে করিস আমি কিছুই বুঝি না।তুই বাচ্চা হতে পারিস আমি না।

“প্রিয়ু কিছুটা ভীতু কন্ঠে বলে,এ এ ম ন ক কোন কিছুই না।তুমি ভুল বুঝছো।”

–তাই নাকি,তাহলে আজও আমি ভুল….আর কথা বলতে পাড়লো না।আয়নের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।আয়ন আড় চোখে মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো নামটি কার।নামটি দেখার সাথে সাথে আয়ন ফোনটি রিসিভ করলো।ফোনটি কানে রেখেই বললো,টেন মিনিট।জাস্ট টেন মিনিট ওয়েট কর।আম কামিং।
“সাথে সাথে প্রিয়ুকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আলমারি থেকে নিজের পারসোনাল রিভলভারটি বের করে নিলো।”
-“রুম থেকে বের হতে নিলে প্রিয়ু সামনে এসে দাঁড়ায়।তুমি এই সময় এটা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।”
–আয়ন খেয়াল করলো,প্রিয়ুর মুখে আয়নের জন্য চিন্তার চাপ।তা দেখে অদ্ভুত একটা সুখ লাগলো আজ আয়নের মনে।প্রিয়ুর গালে একহাত রেখে,একটু কাজ আছে সোনা,আমি তারাতারি এসে পড়বো।এটা বলেই আয়ন প্রিয়ুকে পাশ কাটিয়ে বের হতে নিলেই প্রিয়ু আয়নের একহাত ধরে ফেলে।
“-আয়ন পিছনে ঘুরে একটু হাসি দিয়ে,আমি একা যাচ্ছি না,অনিক, রবিন আর সাথে আমার গার্ডরাও আছে।চিন্তা করিস না।কিন্তু এখন আমাকে আর্জেন্ট এক জায়গায় যেতে হবে।”
–প্রিয়ুর মন মানছিলো না,তবুও হাতটি ছেড়ে দিলো।কিন্তু ওর মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিলো না,আয়নকে এভাবে ছাড়তে আজ কেনো জানি।
“আয়ন প্রিয়ুর অস্থিরতা বুঝতে পেরে,প্রিয়ুর কপালে একটি স্নেহময় আদর দিয়ে চলে গেলো।”
__________

“হসপিটালের করিডরে বসে আছে আয়নের পুরো পরিবার।প্রিয়ুও চুপচাপ বসে আছে,আর বারবার অপরেশন রুমের লাল লাইট এর দিকে তাকাচ্ছে।পাশে বসা দিশা ছিঁচকাঁদুনীদের মতো কেঁদে যাচ্ছে যা দেখে প্রিয়ুর আরো বেশি বিরক্ত লাগছে।কিছু বলতেও পাড়ছে না,কারণ প্রিয়ু এখন কিছু বললেই এই মেয়ের কাঁদার গতি আরো বাড়বে।তার থেকে ভালো চুপ থাকা।”

–এদিক দিয়ে মহিনী বেগম ছেলের দুঃখেকাতর কি হবে,সে তো বারবার দিশার দিকে সন্দেহ নযরে তাকিয়েই কুল পাচ্ছে না।কারণ দিশার এভাবে মরা কান্নার কারণ কি?আর সব থেকে বড় কথা কার জন্য কাঁদছে।আর এতোরাতে এই মেয়ে এখানে কি করছে।এসব হাজারো ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত করে রাখছে উনি।

“-তখনই হসপিটালের একজন নার্স এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,মিস্টার তিয়াশ এখন ঠিক আছে,উনার ইনজুরি গুলো তেমন মারাত্মক নয়।আপনারা চাইলে উনার সাথে দেখা করতে পারেন।নার্সের বলতে দেরি,মহিনী বেগম আর সারা তৎক্ষনিক কেবিনের ভেতরে চলে গেলো তিয়াশের সাথে দেখা করতে।সাথে আয়নের বাবা মাও।অনিক দিশাকে ইশারা করলো ভেতরে যাওয়ার জন্য।
–দিশা একবার প্রিয়ুর দিকে তাকালো।কারণ প্রিয়ুকে এই অবস্থায় একা ছেড়ে কিভাবে যাবে।
“প্রিয়ু ব্যাপারটা বুঝতে পারে,তাই দিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আমি ঠিক আছি দিশা।তোর তিয়াশ ভাইয়ের কাছে যাওয়া প্রয়োজন এখন।ভাইয়া তোকে দেখতে না পেয়ে হাইপার হবে।যা তুই।
প্রিয়ু অপরেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো।”

“-দেয়ালে পিঠটা হেলান দিয়ে বসলো প্রিয়ু।চোখ দুটো বন্ধ করার সাথে সাথে বেয়ে পড়লো কিছু না জানা অনুভূতির নোনা জল।যা অনেক কষ্টে এতোক্ষন আটকে রেখেছিলো প্রিয়ু।বুকের ভেতরে অস্বাভাবিক ব্যাথা করছে।নিশ্বাসটা নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে মনে নিজেই কয়েকবার বিড়বিড় করে বললো,আয়নদা ঠিক আছে।কিছু হবে না।”
–মন আর মস্তিষ্কের অসীম যুদ্ধে প্রিয়ু তার নিজের অব্যক্ত অনুভূতি গুলোকে খেয়ালই করছে না।ওর মন কাঁদছে,ছিনছিন ব্যাথা করছে,তাও আবার কার জন্য। আয়ন!
সেই আয়ন যে আয়নকে প্রিয়ু ঘৃর্ণা করে,পালিয়ে যেতে চায় সব সময়।আজ সেই আয়নের জন্যই প্রিয়ু বিচলিত হয়ে পড়েছে।প্রিয়ু নিজেও জানে না,ও কখন এই ঘৃর্ণা করা ব্যক্তিটির প্রেমে পড়ে গিয়েছে হয়তো।”

“কিছুক্ষন আগের কথা,

-“তিয়াশের উপর মুখশধারী লোকগুলো হামলা করে।তিয়াশও যথাসম্ভব প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।কিন্তু বলে না,একজন হলেও চলে,তবে সাত আট জন লোকের সাথে পাড়াটা এতো সহয না।আর তিয়াশতো কোনও ফিল্মের হিরো না যে একসাথে সবাইকে হিটপটাং করে দিবে।তিয়াশ অনেকটা ঘায়েল হয়ে পড়েছে।আর তখন দিশাও গাড়ীতে বসেই চিৎকার করতে থাকে তিয়াশের এমন অবস্থা দেখে।”
–কিছুক্ষন পরই আয়ন,অনিক আর রবিন এসে পড়ে ওদের গার্ড সহ।লোক আসতে দেখে একজন মুখশধারী দূর থেকেই তিয়াশের উপর গুলি চালালে আয়ন দ্রুতো গিয়ে তিয়াশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে।আর তখনই গুলিটি গিয়ে লাগে আয়নের ডান হাতে।
“আয়নকে আহতো হতে দেখে, আয়নের গার্ডরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায় মুখশধারীদের লক্ষ্য করে।

–আয়নও মাটিতে বসে পড়ে।অনিক গিয়ে দৌড়ে আয়নকে ধরে।এর পর গার্ডরা আয়ন আর তিয়াশকে ধরে গাড়ীতে বসিয়ে গাড়ী স্টার্ট দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।রাস্তা থাকা অবস্থায় পরিবারের সবাই
কে ইনফোর্ম করে দেওয়া হয়।

“এদিক দিয়ে রবিন নিকটস্থ থানায় ইনফোর্ম করে দেয় ব্যাপারটা।যেহেতু অনেক মুখশধারী গুলিতে মারা গিয়েছে।রবিন চালাকির সাথে কেশটা পুরো উল্টিয়ে দেয় যে এরা আয়ন মাহবুভ কে মারতে এসেছিলো।তাই পালা আক্রমণে গার্ডদের হাতে মারা যায়।এই ঘটনায় মিস্টার আয়নও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতো হয়েছে।তা না হলে,একটু ঝামেলা হতো এসব নিয়ে।রবিন সব কৌশলে সব ঝামেলা দূর করে ফেলে।”

–প্রিয়ুসহ পরিবারের সবাই খবর পেয়েই হসপিটালে চলে আসে।আর তখন থেকেই প্রিয়ু অপরেশন থিয়েটের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“অপরেশন থিয়েটারের লাল বাতিটি নিবে গেলো।ডাক্তার বেরিয়ে এসে প্রিয়ুকে উদ্দেশ্য করে বললো,মিসেস মাহবুভ।”
–ডাক্তারের গলা শুনে প্রিয়ু চকিতে তাকালো,আর সাথে সাথে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আয়নের অবস্থা জানতে।
“-মধ্যবয়স্ক ডাক্তার প্রিয়ুকে একটু ভালো করে দেখলো।ভাবছে,বয়স কতোই বা হবে এই মেয়ের,এতো অল্প বয়সে বিয়ের যে কি প্রয়োজন পড়ে বুঝি না।আজ পেশেন্ট এর যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে এই অল্প বয়সেই বিধবার পদবী লেগে যেতে জীবনে।”

–প্রিয়ুর ডাকে ডাক্তার সম্বিৎ ফিরে পায়।আর একটু সরল হাসি দিয়ে,আপনার হাসবেন্ড এখন ঠিক আছে।ভাগ্য ভালো গুলিটি হাতে লেগেছে, তা না হলে অনেক বড় ক্ষতি হতো।
“আমি কি দেখা করতে পারি একবার।প্লিস ডক্তর।”
–এখন না।আমরা আগে তাকে কেবিনে সিপ্ট করবো,তখন দেখতে পারবেন।
প্রিয়ুর সাথে কথা বলেই ডক্তর চলে গেলো,হয়তো অন্যকোনও রোগী দেখতে।

চলবে…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here