#এখানে_আকাশটা_ভালোবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১১
.
“আপনি তো খুব ভাল রান্না করেন রিদিমা!… এক্সপার্ট!”
রিদিমা হাসল সায়ানের কথাতে।
“স্যার, একটা কথা…”
“সিউর”
“স্যার আমাকে প্লিজ আপনি করে বলবেন না।”
সায়ান একটু অবাকই হয়ে গেল রিদিমার কথায়।
“না মানে স্যার আমি তো আপনার জুনিয়র, তাই…..”
“ওকে রিদিমা”
“স্যার, আপনি তো এক্টিভ মানুষ… অনেক পরিশ্রমী!”
“আমি কি আমি জানিনা রিদিমা, তবে বাবার এত দিনের পরিশ্রম আমি নষ্ট হতে দিতে পারিনা। তাই আর কি! তবে তুমিও যথেষ্ট এক্টিভ মেয়ে রিদিমা, পরিশ্রম করো স্বপ্ন পূরণ হবে ”
“জ্বী, আচ্ছা স্যার”
এভাবেই নিজেদের পরিচয়ের পরিধি বাড়তে লাগল সায়ান রিদিমার।
.
আজ পুরো বাড়িটি সুন্দর করে সাজিয়েছে রায়ান, নওশি আর রোশনি মিলে।
প্ল্যানের মাস্টার মাইন্ড নওশি।
সায়ানের থাকার কথা ছিল কিন্তু অফিসে ইদানিং বিভিন্ন প্রোজেক্ট আর অফিসের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সে।
নওশির বেশ মন খারাপ হয়েছে, কিন্তু কিছু করার নেই।
“মা তোমার কি রান্না শেষ, আমি এদিক দেখতে গিয়ে তোমার হেল্প করতে পারলাম না”
“না রে নওশি ঠিক আছে”
জাহরা যদিও ঠিক আছে বললেন কিন্তু তার শরীরটা আজ একটুও ভালো লাগছে না!
তবুও কিছু বলছেন না।
“নওশি কল করে দেখ তো নিশিকারা বেরিয়েছে কিনা?”
“মা ওরা সন্ধ্যার পরপরই চলে আসবে, চিন্তা করো না”
“আচ্ছা”
রোশনি, রায়ান আর নওশি, নিশিকার ঘরটা বাসর ঘরে মতো করে সাজাচ্ছে, ফুল গুলো বাঁধতে বাঁধতে রায়ান বলল..
“ভাইয়া কখন আসবে কিছু বলেছে নওশি?”
“বড় ভাইয়ার তো বিকালে আমাদের সময় দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু বলল অফিসে বিজি থাকবে! সন্ধ্যার আগেই আসার কথা”
“নাশু সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ভাইয়া কে কল দে তো”
“আচ্ছা দিচ্ছি, রুশু এপাশে এসে ফুল গুলো ধর”
সায়ান ফোন তুলছে না, নওশি বারবার ফোন দিচ্ছে দেখে সায়ান মোবাইল টা সাইলেন্ট মোডে দিয়ে ড্রয়ারে রেখে, রিদিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তারপর… বল”
“স্যার আপনি কিন্তু অনেক স্মার্ট”
“তাই নাকি রিদিমা?”
“আচ্ছা রিদিমা, আজ দুপুরে তো তুমি আমাকে ট্রিট দিয়েছ, আমি সন্ধ্যায় দেই?”
“উমমম…. ওকে স্যার!”
“সন্ধ্যায় কোনো একটা রেস্টুরেন্টে… ”
“ওকে”
রিদিমার দিকে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ লাগছে সায়ানের। এত তাড়াতাড়ি রিদিমাকে ভাল লেগে গেছে যে সায়ান কিছু বোঝার সময় পাচ্ছে না। ও চাই রিদিমাকে মনের কথা বলতে আর সেটা আজই। কোনো ধৈর্য্য ধরা সায়ানের সহ্য হচ্ছে না। তবে এতটুকু বুঝেছে রিদিমাও তাকে পছন্দ করে।
সায়ান জানে নওশি ছোটখাটো আনন্দ গুলো পছন্দ করে, চাইলেই বিকালে বাসায় ফিরতে পারত, আজ অফিসে কাজ ছিল না, কিন্তু রিদিমার সঙ্গ তার ছাড়তে ইচ্ছে করছে না!
আজ যে তার বোন আসার কথা আর বাসায় তাড়াতাড়ি ফেরার কথা সেটা সায়ান ইচ্ছে করেই ভুলে গেল!
.
“সানজানা”
“জ্বি আম্মু”
“কি করিস?”
“এই তো মা পড়ছি, ২ দিন ভার্সিটি যাইনি, এসাইমেন্ট, এক্সামের পড়া…”
“নে নে বুঝলাম কিন্তু বেশি নয় আজ, আগে সুস্থ হয়ে নে তারপর…”
“মিস সানজানা সানহা…. কেমন আছেন এখন?”
মায়ের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই সানজানার ভাই রাহাত এসে বসল পাশে…
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া, আচ্ছা তুমি কোথায় থাক বলো তো ভাইয়া সারাদিন, দিনে একটুও তোমাকে পাওয়া যায় না! কেন?”
“এই তো আসলাম, আরে ক্লাস আছে, গ্রুপ স্টাডি, সরি রে”
“হুম ভাইয়া”
“তুই কি কাল ভার্সিটি যাবি নাকি? এত পড়াশোনা…. ”
“না ভাইয়া, নেক্সট ১ সপ্তাহ বাইরে বের হবো না”
“গুড ডিসিশন, আগে সুস্থ হয়ে নে”
যদি ভাইয়ের কথাতে মাথা নাড়ালো কিন্তু সানজানাই শুধু জানে সে কেন যাবেনা।
সানজানার রুম থেকে বের হয়ে ইতুকে কল করে কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেল রাহাত।
.
সবকিছুর মাঝেও ফাঁকা লাগছে রায়ানের কিন্তু সানজুর মোবাইল এখনো সুইচ অফ।
“নওশি ভাইয়া এসেছে?”
“নাহ!” বেশ রাগতস্বরে বলল নওশি…!
“আচ্ছা হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে”
“আজই এত কাজ? আর ভাইয়া তো ফোন তুলছে না। আর লাস্ট বার কল ডিস্কানেক্ট করে দিয়েছে।”
“আচ্ছা বাদ দে, নিশিকা আপুরা বেরিয়েছে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া”
“আচ্ছা তুই মাকে ডেকে বসার ঘরে নিয়ে আয়, আমি বাবাকে ডাকি, রোশনি একবার দেখ সব কিছু ঠিক আছে কিনা ”
বলে চলে গেল রায়ান।
“মা তুমি শুয়ে আছ, অসুস্থ নাকি?”
“আরে না রে একটু কষ্ট হয়ে গেছে তাই আর কি, এখন ঠিক আছি, বল কি বলবি”
মায়ের কথাতে পুরোপুরি বিশ্বাস আসলো না নওশির, গায়ে হাত দিয়ে দেখল জ্বর নেই। তবু মন কেমন করছে।
“মা ছোট ভাইয়া ডাকছিল, কিন্তু তোমাকে উঠে যেতে হবে না, আমি সবাইকে এখানে ডাকছি”
বলেই চলে গেল নওশি।
রায়ান আর নওশি মিলে বাবা মাকে প্ল্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে।
.
“কি রাতপরী, খুশি তো? এসেই গেছ তো প্রায়?”
“হুম ভীষণ”
“তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ম্যাম!”
“তুমি ভীষণ ভাল জয়, সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালবাসবে তো?”
জয়ের হাত শক্ত করে ধরে নিশিকা।
“নিশিকা, আমার রাতপরী….. আমি মুখে কিছু বলব না, শুধু তুমি দেখে নিও… তোমাকে খুব ভালবাসি আমি খুব”
“হুম”
“শুধু হুম? তোমাকে…..”
“এই এই আমার বাসা এসে গেছে”
একটু অভিমানের সুরে জয় বলল…
“ঠিক এই সময়েই পৌঁছাতে হল! আরেকটু পরে পৌঁছালে কি হতো??”
“হিহিহি”
“তোমার খবর আছে, এত হাসছ কেন?”
“এমনিইইইইই”
“আচ্ছা চলেন ম্যাম আপনার বাড়িতে, আমার শ্বশুরবাড়িতে….”
জয় আর নিশিকা কলিংবেল দেওয়ার আগেই দেখে রুমের দরজা খোলা…! তারা কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
“নিশিকা, দরজা খোলা কেন?”
মাথা নাড়ল নিশিকা, সে জানেনা।
দুজনে দরজা পার হয়ে ভিতরে পা দিতেই লাইট জ্বলে উঠল….
সামনে সুন্দর করে আর্ট করে লেখা “Happy Married Life”
“Joy And Nishika”
নওশির আর্ট দেখেই চিনতে পারল নিশিকা। খুব সারপ্রাইজড হয়ে গেল, মনে মনে প্রচন্ড খুশি হলো ও।
আস্তে আস্তে নিশিকা আর জয় ড্রয়িং রুমে গেল, লাইট জ্বালাতেই দেখল
সারা ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো আর একটা কেক রাখা সেখানে….
“কিন্তু সবাই গেল কোথায়?” জয় বলল।
“কি জানি পাগল গুলো আগে কোন রুমে”
এবার ড্রয়িং রুমের পাশেই নিজের রুমের দিকে গিয়ে দেখে দরজা লক করা।
এবার পর পর সবার রুমেই দেখে প্রত্যেক টা রুমেই কিছু না কিছু ছোট ছোট গিফট রাখা আছে জয় নিশিকার জন্য।
বাবা মায়ের রুমে সামনে আসল ওরা…
রুমের দরজা ঠেলতেই আলো জ্বলে উঠল, রায়ান নওশি রোশনি জোরে বলে উঠল “Happy Married Life আপু ভাইয়া”
নিশিকার এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী আর সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। প্রিয় মানুষগুলো থেকে এত ভালবাসা পাওয়া সবার ভাগ্যে থাকেনা।
নিশিকা দেখল তার বাবা মা মুচকি হাসছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
নিশিকা দৌড়ে গেল বাবা মায়ের কাছে… জয় নিয়ে বাবার পাশে বসাল রায়ান।
রোশনি আর নওশি চলে গেছে বসার ঘরে…. নওশি সায়ানকে আরেকবার কল করল…
ফোন রিসিভ করলো সায়ান,
“কেন বারবার কল দিচ্ছিস নওশি? আমি ব্যস্ত, ফোন রাখ, পরে কথা হবে”
নওশিকে কিছুই বলার সুযোগ দিল না সায়ান।
চোখে পানি এসে গেল নওশির। কিন্তু দ্রুত মন খারাপ আর চোখের পানি লুকিয়ে ফেলল, আজ একটা আনন্দের দিন।
.
“নওশি কি আপনার বোন স্যার?”
রেস্টুরেন্টে রিদিমার সাথে বসে আছে সায়ান।
“হুম, আমার মেজ বোন”
“আপনারা কয় ভাইবোন স্যার, পারসোনাল প্রশ্ন করে ফেললাম”
“আরে তাতে কি! আমরা ৫ ভাই বোন। আমি বড় সবার”
“ও আচ্ছা…” হাসিমুখে বলল রিদিমা।
“রিদিমা!”
“জ্বি স্যার”
“রিদিমা তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল, আমি জানিনা কিভাবে নেবে তুমি, এত ভণিতা আমি করতে জানিনা, তাই সরাসরি বলছি ভালবাসি তোমাকে, আর তোমাকেই বিয়ে করতে চাই আমি”
বসের কথা শুনে রিদিমার মনে মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল। এমনটাই চেয়েছিল সে। তবে সায়ান তাকে এত দ্রুত আর ভূমিকা না করে সরাসরি বলে দেবে। তবে উত্তরটা মনে মনে প্রস্তুত করে রেখেছিল সে। পারত আজকেই হ্যাঁ বলে দিতে।
কিন্তু আজই সে তা প্রকাশ করতে চাইল না।
সায়ানের মনে আরো জায়গা করে নিতে হবে…
“আমি একটু সময় নিতে চাই স্যার”
“ওকে রিদিমা”
কিছুটা হতাশ হলো সায়ান।
.
“সায়ান কই রায়ান?”
“ভাইয়ার অফিসের কাজ পড়ে গেছে আজ”
“ও আচ্ছা”
কেক কাটার পর কিছু আনন্দ করার পর সবাই গল্প করছে। সাহরাফ সাহেব পত্রিকা পড়ছেন। রোশনি, জাহরা আর নিশিকা গল্প করছে। রায়ান জয় ও বারান্দায়।
কেবল নওশি ওর ঘরে শুয়ে আছে। নওশি এই ব্যাপার টা মেনে নিতে পারেনি এখনো মন থেকে। ভাইয়া এমন না। তার ভাইয়ের এমন করা টা এখনো ভাল লাগছে না তার। এখনো ফেরেনি!
এসব ভাবতে ভাবতেই সায়ান এসে পড়ল, সবার সাথেই সায়ান সুন্দর করে কথা বলে সবাইকে ম্যানেজ করে নিলো, নওশির সাথেই কম কথা বলল একটু, কেমন যেন সায়ানের মনে হচ্ছে নওশি সায়ানের ইচ্ছেকৃত অবহেলা ধরে ফেলেছে। সায়ান কিছুটা কম গুরুত্ব দিচ্ছে নওশিকে।
কিন্তু এই বিষয়টা নওশিকে প্রচন্ড কষ্ট দিল।
রায়ান বিষয় টা খেয়াল করল।
.
.
(চলবে)