এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ১০

#এখানে_আকাশটা_ভালোবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১০
.
আজ সানজানা ভার্সিটি আসেনি।
রায়ানের চোখ আজ ঘুরে ফিরে সানজানাকে খুঁজছে। কয়েকবার ফোন করেছে রায়ান, সুইচ অফ বলছে। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ ওর। কোথায় যেন একটা ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন? উত্তর খুঁজে পায় না সে।
ক্লাস করেই সোজা বাসায় এসে শুয়ে পড়ে রায়ান। কিচ্ছু ভাল লাগছে না তার।
“রায়ান, তুই অসুস্থ নাকি?”
ছেলেকে অবেলায় ঘুমাতে দেখে প্রশ্ন করেন জাহরা।
“না, আম্মু তুমি কি ব্যস্ত?”
“না রে, কেন?”
“আমার পাশে এসে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না মা”
“আচ্ছা বাবা দিচ্ছি।” ছেলের আবদারে অবাক হননি তিনি, অন্য ছেলেমেয়ে গুলো এমন না করলেও নওশি আর রায়ান এমনি… আদর ভালবাসা আদায় করে নিতে জানে।
“তোর লেখাপড়া কেমন চলছে?”
ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্ন করেন জাহরা।
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আম্মু”
“হুম, ভালো করে পড়াশোনা কর, জীবনে ভালো কিছু করে দেখাবি”
“আম্মু নওশিকে দেখছি না যে?”
“ভার্সিটিতে গেল তো, ফিরবে একটু পরেই”
“ও আচ্ছা”
“আচ্ছা তুই থাক আমার কিছু কাজ আছে।”
বলে চলে গেলেন জাহরা।
রায়ানের মন ঘুরে ফিরে সেই সানজানাতেই ঘোরাফেরা করছে।
‘আচ্ছা আমার আগে তো কখনো সানজুর জন্য এমনটা হয়নি, তবে এখন কেন!
সানজানা আমার মনে এমন প্রভাব ফেলে আছে আমি কখনো বুঝতেই পারিনি! আচ্ছা সানজানা কি আমাকে পছন্দ করে? মনে হয় পছন্দ করে, সেদিনের হাত ধরা থেকে মনে হচ্ছে। কিন্তু ভাল কি বাসে সানজানা আমাকে?
ও কি জানে যে আমি….! নাহ কি যা তা ভাবছি আমি! এমন হতেই পারেনা!’
নিজেই নিজেকে ধমক দেয় রায়ান।
“ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে
দিগন্তে কার কালো আঁখি
আঁখির জলে যায় ভাসি
ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি……..”
পাশের ঘর থেকে রোশনির গান ভেসে আসছে৷ খুব ভাল গান গাইতে পারে রোশনি।
“রুশু….. এই রোশনি..”
“জ্বি ভাইয়ায়ায়ায়ায়া…”
“কি করিস তুই?”
“কিছু না, কিছু বলবে?”
রায়ানের ইচ্ছে করছে কারোর সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অবশেষে বলল…
“না, আচ্ছা তুই যা, যা করছিস তাই কর”
“মানে?”
“মানে কিছু না”
রায়ানের কথায় অবাক হয়ে রোশনি আবার নিজের ঘরে চলে গেল।
রায়ানের কিছুই ভালো লাগছে না। অবশেষে নিজের মনের সাথে তর্কবিতর্ক করতে করতে সে ঘুমিয়ে গেল।
.
“স্যার আসব?”
শাড়িতে রিদিমা দেখে সায়ান অবাক হয়ে গেল, মেয়েটাকে শাড়ি ভীষণ ভালো লাগছে। কিছুটা ঘোর লাগা কন্ঠে উত্তর দেয় সায়ান,
“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই রিদিমা, আসুন”
মুচকি হাসল রিদিমা।
“বসুন”
“জ্বি স্যার”
“তারপর কেমন আছেন?”
“এইতো ভাল আছি, স্যার আপনার জন্য আমার একটা স্পেশাল ট্রিট আছে।”
“স্পেশাল ট্রিট কিন্তু কেন?”
“এমনিই কারণ খুঁজতে হবে তবে একান্তই যদি জানতে চান তবে আমি কারণ হিসেবে আপাতত প্রোজেক্ট টার কথা বলতে পারি, এটা ছাড়া আপাতত কিছু মাথায় আসছে না।”
বেশ গুছিয়ে উত্তর দিল রিদিমা।
“ও তাই নাকি! তো কি ট্রিট?”
“স্যার আজকের লাঞ্চ?”
“ওকে, কোথায়?”
“স্যার অফিসেই, আর সেটা আমার রান্না”
“ওয়াও, আপনি রান্না জানেন নাকি?”
“জ্বি স্যার, তাহলে স্যার লাঞ্চের ব্যবস্থা করি?”
“ওকে”
.
“এখন কেমন লাগছে মা?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভাল আছি, আর আমার এতটাও কিছু হয়নি বাবা, কেন যে তোমরা এভাবে পাগলামি করছ!”
বাবা সাহানিয়াত সাহেবের সাথে কিছুটা অনুযোগের সাথেই বলে সানজানা।
“মা রে, তোর ছেলেমেয়ে হলে বুঝিস”
“বাবা আজ বাসায় যাবো তো, আমার হাসপাতালে একদম থাকতে ইচ্ছে করছে না, প্লিজ না করো না, একদিন তো ছিলাম প্লিজ বাবা প্লিজ”
বাবাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই সানজানা একটানা কথা গুলো বলল।
“ঠিক আছে মা, বিকালে রাহাত এসে নিয়ে যাবে তোকে”
“মজিদ কাকু ভালো আছে তো, হাতের ব্যথা কমেছে?”
“হ্যাঁ ওকে রেস্ট নিতে বলেছি কয়েকদিন”
“আম্মু আবার কোথায় গেল?”
“ডক্টরের সাথে কথা বলছে। আচ্ছা মা আমার একটা মিটিং আছে, সাবধানে থাকিস আমি যাচ্ছি”
“ঠিক আছে বাবা”
স্ত্রী তানিয়ার সাথে কিছু কথা বলে চলে গেলেন সাহানিয়াত সাহেব।
বাবা চলে গেলে সানজানার মনে পড়ছে রায়ানের কথা। কেন জানিনা ভীষণ মনে পড়ছে ওকে। আচ্ছা রায়ান কি ওর কথা ভাবছে? নাকি না? রায়ান তো একবারো কল দিল না?
‘আমার মোবাইলটাই তো সুইচ অফ হয়ে আছে কাল থেকে’ মনে পড়ল সানজানার। মায়ের কাছে চাইলে দেবে না এখন অসুস্থ অবস্থায়।
উপায়ন্তর না দেখে ঘুমিয়ে গেল সানজানা।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here