#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃনাইমা
#পর্বঃ ১২
.
“আচ্ছা জয় তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো?”
“কেন রে পাগলি! আমার ভালবাসাতে তোর সন্দেহ আছে নাকি রে?”
“বলোই না?”
“অনেক ভালবাসি তোকে। কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন রাতপরী?”
“এমনিই, বাবা মাকে দেখলে আমার খুব ভাল লাগে, কত্ত ভালবাসা তাদের মাঝে, অথচ এখনকার সমাজে ভালবাসা উঠেই গেছে!”
“হুম, সত্যিই”
“বাবা মাকে ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়াতে থাকতে খুব কষ্ট হবে”
“তাহলে কি রেখে যাব তোমাকে?” বলেই মুচকি হাসল জয়।
নিশিকা আর কিছু বলল না। কারণ সে জানে জয়কে ছেড়ে থাকতে পারবে না।
জাহরা খাতুনের শরীরটা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। খুব অসুস্থ লাগছে নিজেকে, চলাফেরা করার শক্তি পাচ্ছেন না।
বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে বিছানায় আবার বসে পড়লেন।
“কি হলো জাহরা? শরীর খারাপ লাগছে?”
জাহরা কোনোমতে বললেন “হুম”
সাহরাফ সাহেব তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এনে স্ত্রীকে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন করলেন।
সাহরাফ সাহেবের ঘরে ছেলেমেয়েরা সবাই আছে। জাহরা বেশ বিব্রত হচ্ছেন মনে মনে। এমন তো কিছুই হয়নি!
ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে বললেন “ভয়ের কিছু নেই, দুর্বলতা আর কি”
নওশি বলল, “মা তুমি রান্নাঘরে যাবে না, আমি সামলাব”
“তুই পারবি না”
“আমিও তো আছি মা” নিশিকা উত্তর দিলো।
জাহরা আর কিছু বললেন না।
নওশি আজ রান্না করছে, নিশিকা আসলে ঠেলে ঠেলে জয়ের পাশে বসিয়ে দিয়ে এসেছে। রোশনি আজ স্কুলে যায়নি, যদিও নওশি বারবার যেতে বলেছিল।
রায়ান ভার্সিটিতে, আর সায়ান অফিসে।
সাহরাফ সাহেব কলেজে যাননি আজ।
.
আজও সানজু নেই আবার মোবাইল ও বন্ধ করে রেখেছে। ‘কি পেয়েছে টা কি সানজানা! আমি মরছি ওর জন্য আর ও মোবাইল টাই অন করছে না’ রায়ানের এই চারদিনেই খুব ভালভাবে বুঝেছে সানজানা ওর কতটা অংশ জুড়ে রয়েছে। সানজানা ওর শুরু বন্ধুই নয় অনেক কিছু। রায়ান সানজানাকে ভালো বেসে ফেলেছে। জানে সে এর পরিনতি!
এই প্রথম রায়ান সবক্লাস করল না। একটা ক্লাস করেই বাসায় এসে শুয়ে আছে। সানজানাকে একটা মেসেজ করলো…
“কই তুই সানজু, আসছিস না কেন? কি হয়েছে?”
আর কি লিখবে ভেবে পাচ্ছে না রায়ান, এইটুকু লিখেই সেন্ড করল। সেন্ড হলো কিন্তু রিসিভ হলো না। মোবাইল সুইচ অফ।
.
বিকালে সায়ান বাড়িতে আসল, সাথে একটা মেয়ে।
নওশি দরজা খুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই সায়ান বলল,
“রিদিমা, আমার বোন নওশি”
“নওশি এটা রিদিমা, আমার অফিসের স্টাফ”
“হাই নওশি”
“হুম হাই, ভিতরে আসুন, রিদিমা আপু”
সায়ান আর রিদিমা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে সায়ান বলল, “রিদিমা মাকে দেখতে এসেছে”
“আচ্ছা ভাইয়া তাহলে মায়ের ঘরে নিয়ে যাও, আমি তোমাদের চা দিচ্ছি”
হাসিমুখে বলল নওশি।
মায়ের ঘরে নিয়ে রিদিমাকে পরিচয় করিয়ে দিল সায়ান। জাহরা খাতুন বেশ পছন্দ হলো মেয়েটিকে। রিদিমা খুব সহজেই সবার সাথে কথা বলল। আর সায়ানের কাছে সবার সম্পর্কে জেনেই এসেছিল, তাই সবাইকে প্রসন্ন করতে বেশি সময় লাগেনি।
সবার সাথে কথা বলছে এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল রিদিমার।
একটু দূরে গিয়ে রিসিভ করতেই রিদিমার মা বললো,
“তোর ছেলে চকলেটের জন্য কান্না জুড়ে দিয়েছে, চকলেট আনিস”
“ওকে” বলে মাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয় রিদিমা।
.
রাতে মায়ের পাশে এসে বসল সায়ান।
“আম্মু এখন কেমন আছ?”
“আলহামদুলিল্লাহ, তোর অফিস কেমন চলছে?”
“ভাল মা, মা একটা কথা”
“কি?”
“মা…মানে…”
“রিদিমা মেয়েটা বেশ ভাল, আমার আপত্তি নেই, তোর বাবাকে বলব আর সবাইকে”
সায়ান অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, কিভাবে বুঝে গেল মা!
“মা তুমি! কি করে বুঝলে!”
ছেলের কথা শুনে মুচকি হাসলেন জাহরা।
“মা একটা সমস্যা”
“কি, বল”
“আসলে মা শোনার পর তুমি যে কি ভাববে”
“আরে বাবা বলবি তো”
“মা রিদিমার আগে বিয়ে হয়েছিল, মাধ্যমিক দেওয়ার পরই, ওর একটা ছেলেও আছে চার বছরের, হাসব্যান্ডের সাথে মিল হয়নি, সে নাকি ভালো ছিল না… তাই আর কি…”
“আমাদের কথা বাদ দে, তোর এতে কোনো আপত্তি নেই তো?”
“না মা, থাকলে কি তোমাকে বলতাম”
“আচ্ছা তুই যা, আমি তোর বাবাকে বলব, আর নওশি রায়ানকে পাঠিয়ে দে আমার কাছে”
“আচ্ছা মা”
নওশি আর রায়ানকে সব বললেন জাহরা। ছেলেমেয়েদের মাঝে এই দুইজনের সিদ্ধান্তে অনেকটাই ভরসা রাখতে পারেন তিনি।
নওশি সব শুনে বলল, “মা রিদিমার ছেলেমেয়ে আছে কি নেই সেটা কথা না, তাতে আমাদের সমস্যা নেই কিন্তু একটা মানুষের সাথে প্রায় ৭ বছর সংসার করার পর ডিভোর্স! এই বিষয় টা আমাকে ভাবাচ্ছে!”
“নাশুর কথা কিন্তু বেশ যুক্তিপূর্ণ”
রায়ানও নওশিকে সমর্থন করলো।
জাহরা বললেন, “হুম তোদের বাবার সাথে কথা বলে দেখি, আর বাকি সবাই কি বলে”
“মা আমি যাই” বলে উঠে দাঁড়াল নওশি।
সাহরাফ সাহেব সব শুনে বললেন “অমত করার কিছু নেই, তবে নওশি যেটা বলেছে সেটা সায়ানে জিজ্ঞেস করে দেখো, তারপর না হয় ফর্মালি দেখাশোনা করা যাবে।
সায়ান যখন শুনলো শুধুমাত্র নওশিই তার আর রিদিমার বিপরীতে কথা বলেছে, প্রচন্ড রাগ হয়ে গেল সায়ানের। নওশি কি চায় না সায়ান ভালো থাকুক! কি মনে করে সে! সে নিজেই ঠিক আর সবাই ভুল?
এগুলোই শুনিয়ে দিয়ে আসলো নওশিকে।
সায়ান বুঝতে চেষ্টা করেনি নওশি কেন বলেছে!
সায়ান মাকে বলল, “মা আমাদের ভাল থাকার দায়িত্ব আমরাই নিতে পারব, নওশির কথা না শুনলেও হবে, তুমি বাবার সাথে কথা বলো!”
জাহরা খুব অবাক হয়ে গেলেন, কি বলে তার ছেলে!
আচমকা একটা ভয় এসে জমা হয় তার মনে, এই কি শুরু! তাদের সংসার টুকরো টুকরো হওয়ার? এভাবেই কি নষ্ট হয়ে যাবে আর দশটা পরিবারের মতো! যেভাবে এখন যাচ্ছে? তিলে তিলে একটু একটু করে তারা দুজনে মিলে সন্তানদের গড়ে তুলেছেন সবচেয়ে সুন্দর শিক্ষা দিয়ে।
আর ভাবতে পারেন না তিনি।
হয়তো তিনি বেশিই ভেবে ফেলছেন, নিজের মনকে বুঝালেন জাহরা।
সায়ান চলে গেলে আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লেন তিনি।
নওশির ইদানিং বেশ খারাপ যাচ্ছে দিনগুলো। বড় ভাইয়া অকারণে তাকে ভুল বুঝলো, কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল। অথচ তার মনে এমন কিছু ছিলই না। সে তো শুধু জানতে চেয়েছে।……..
.
(চলবে)