#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ২১
.
“আরে ধূর!! নওশি আমার ছোট বোন, আমার আপন ছোট বোন!”
এটা বলেই রায়ান মোবাইলটা সানজানার কাছে দিয়ে চলে আসে।
রায়ান শান্ত স্বভাবের ছেলে কিন্তু যদি একবার রেগে যায় রাগটা প্রকৃতই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রাহাত হতভম্ব হয়ে যায়। নওশি রায়ানের বোন! তাই কি রায়ান কে চেনা চেনা মনে হতো? হয়তো ভার্সিটিতে দেখেছে।
কিন্তু এটা সে কি করল!
না বুঝে না ভেবে কি বাজে কথা গুলো বলল সে! ছিঃ ছিঃ
“ভাইয়া! কথা বলছ না কেন?”
সানজানা ফোনের ওপাশ থেকে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না রাহাত।
“ভাইয়া!!”
“হুম”
“রায়ানকে কোন মেয়ের কথা বলেছ?”
“নওশি!”
“কিহ!!!ভাইয়া তুমি নওশির কথা বলছ! আরে নওশি রোশনি ওর বোন!”
“ও, আমি না বুঝিনি!”
“তুমি বুঝবে না? না বুঝে কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলে?”
“রায়ান কই? ওকে দে সরি বলি…”
মেজাজ টা গরম হয়ে যায় সানজানার।
“তোমার সরির জন্য বসে নেই সে, চলে গেছে”
“ও” আহত স্বরে বলে রাহাত।
রাহাতের মনে ভয় কাজ করছে। ইতু জানেনা নওশিকে প্রোপোজ করেছিল সেটা। ইতুর কাছে রাহাত নিজেকে সেই সময় ফেরেশতার মত নিষ্পাপ পরিচয়ে প্রোপোজ করেছিল।
সানজানা জানেনা।
রায়ান জানে কি না বুঝতে পারছে না রাহাত। রায়ান যদি জানেই তবে তো সানজানাকে বলবে।
আর না হলে তাকে তো বলবে!
রায়ান কি সানজানার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দেবে! কিন্তু রায়ান কি আসলেই জানেনা!
তবে কি নওশি বাড়িতে বলেনি?
কিন্তু নওশি তো বলেছিল বাড়িতে বলবে!
সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার ভিতর।
ভাইয়ের সাড়া না পেয়ে ফোন রেখে দেয় সানজানা। সানজানা জানে যারা সব সময় শান্তশিষ্ট তাদের রাগ খুব ভয়ংকর হয়।
রায়ান নিজেও এ কথা বলেছে। ফার্স্ট টাইম এই সিচুয়েশান!
তার চেয়ে বড় কথা সানজানা এটাই বুঝতে পারছে না রাহাত এত রিএক্ট কেন করল!
রায়ানের মেজাজটা প্রচন্ডরকম খারাপ হয়ে আছে।
“ভাইয়া রাহাতের সাথে তোর কি কথা হয়?”
রুমে ঢুকতেই প্রশ্ন করে নওশি। নওশি নিজেও মনে মনে খুব রেগে ছিল।
“যা কথা হোক না কেন! তাতে তোর সমস্যা কি!” রাগে ফেটে পড়ে রায়ান।
থতমত খেয়ে যায় নওশি।
কি হলো বুঝতে পারছে না নওশি।
কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে রুমে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়ে।
এমন সময় সানজানা ফোন দেয় রায়ানের কাছে।
“কি সমস্যা তো সানজু! জ্বালাচ্ছিস কেন এভাবে আমাকে!”
প্রচন্ড ঝাড়ি দিয়ে ফোন কেটে দেয় রায়ান।
সানজানার খুব খারাপ লাগে। সে তো আর কিছু করেনি! তবে!
কিন্তু রায়ান আগেই বলেছিল ওর রাগ বেশি তাই কিছু মনে করে না সানজানা।
চুপচাপ বাসায় চলে যায়।
.
“বিউটি কুইন আজ বিকালে সময় হবে?”
“কেন হবে না?”
“তাহলে আমরা বের হবো বিকালে। ওকে?”
“ওকে”
“আচ্ছা আমরা কবে এক হবো?” আবার প্রশ্ন করে রিদিমা।
“এইতো” উত্তর দেয় আরিফ।
“কি এইতো আরিফ, আর আমার সহ্য হচ্ছে না আর কতদিন তুমি সায়ানের সাথে থাকতে!”
“আচ্ছা রিদিমা শান্ত হও, বিকালে দেখা করি ডার্লিং?”
“ওকে”
“ওকে সুইটহার্ট”
ফোন কেটে দিয়ে আরিফের কথা ভাবছে রিদিমা। সায়ানকে প্রচুর এড়িয়ে চলছে এই কদিন। সহ্য হচ্ছে না মোটেও।
সায়ানকে দেখলেই গা জ্বলে যায় রিদিমার।
শুধু মায়ার কথা ভেবে কোনো কিছু বলতে পারছে না রিদিমা।
কিছুক্ষণ অফিসের কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে।
এমন সময় সায়ানের কল তার মেজাজটা আরো গরম করে দিলো।
“হ্যাঁ বলো”
“খুব ব্যস্ত নাকি?”
“অফিসে নিশ্চয়ই আমি বসে থাকার জন্য আসিনা”
“এভাবে কেন বলছ?”
“উফ সায়ান আমার কোনো কথাই কি তোমার স্বাভাবিক মনে হয় না?”
“আচ্ছা বেশ, বিকালে মায়াকে নিয়ে চলো কোথাও ঘুরতে যাই?”
“সময় নেই আমার”
“ও”
“বাই”
সায়ান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে রিদিমার মন ভাল হয় কিন্তু সবসময়েই হিতে বিপরীত হচ্ছে।
আজও রিদিমার সময় নেই।
কিন্তু কেন! কি করে ও এত! বিজনেস তো সেও করে! তবে রিদিমার সময়ের এত কি অভাব!
সায়ান ঠিক করে আজ রিদিমার অফিসে যাবে।
মায়া এখন বাসায় থাকে।
সায়ানের মায়ের কাছে। মেয়েটা এত্ত মায়াবি! কিন্তু ওর মা কেন এমন করে এ কথা ভেবে পায় না সায়ান।
.
রায়ানের রাগ পড়লে বুঝতে পারে শুধু শুধু সানজানা আর নওশির সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। খুব খারাপ লাগছে তার। নওশিরই বা কি দোষ!
রাহাত বাজে কিছু বলেনি তো ওকে?
আস্তে আস্তে উঠে নওশির রুমে নক করে রায়ান।
“কে?”
“নাশু..?”
“খুলছি ভাইয়া”
শান্ত মুখে দরজা খুলে দেয় নওশি।
“সরি নওশি”
“ভাইয়া সরি বলার কিছু নেই, আমারই প্রশ্ন করা উচিত হয়নি। হতে পারত তোমার পারসোনাল বিষয়।”
অভিমানী নওশির শান্ত কন্ঠ শুনে আরো খারাপ লাগে রায়ানের।
“আসলে আমার ওভাবে রিএক্ট করা উচিত হয়নি”
“আরে ছোট ভাইয়া ঠিক আছে, কোনো ব্যাপার না”
“হুম”
রায়ান চুপচাপ নিজের রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ে।
কেমন একটা জগাখিচুড়ি মতো হয়ে গেল বিষয়টা। রায়ানের ভাবতে ইচ্ছে করছে না আর।
“আচ্ছা ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি।”
রাহাত কে আশ্বস্ত করে সানজানা কল দেয় নওশির কাছে।
“আপু বলো…”
“আমার সাথে দেখা করতে পারবে নওশি?”
“কেন আপু?”
“আসলেই বলি?”
“ওকে”
“এখন বের হও”
“এখনি?”
“হুম, বিকালে দেখা করি?”
“না রে আপু এখন আসো একটু প্লিজ”
“ওকে”
.
“ম্যাম তো অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে স্যার”
“তোমার ম্যামের আজ মিটিং ছিল না?”
“কই না তো”
“ও তাহলে মনে শপিং করতে গেছে” স্টাফদের সামনে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে বিব্রত লাগল সায়ানের।
“না স্যার শপিং এ নয়, ম্যাম আরিফ স্যার সাথে বের হয়েছেন।”
“মানে?” এবার আর কৌতুহল দমন করতে পারে না সায়ান।
“ম্যাম তো আরিফ স্যারের সাথে প্রায়ই বের হন”
রিদিমার কাজ অফিসের সব স্টাফ রাও মেনে নিতে পারছে না।
বিশেষত রিদিমার কথাগুলো যিনি সায়ানকে বলছেন, ফরিদ, তিনি রিদিমার বিজনেসের প্রথম থেকেই আছেন। তিনি জানেন আজকের রিদিমা হওয়ার পিছনে সায়ানের অবদান কতখানি।
নিজের স্বামী বাচ্চা ফেলে অন্যের সাথে অকারণে ঘোরাঘুরি করাটা মেনে নিতে পারছেন না।
এখানে কথা বলাটা অনধিকার চর্চা হলেও সায়ান প্রতিনিয়ত ঠকছে রিদিমার কাছে এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
সায়ান আর কিছু জানতে চাইল না। ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলো বাইরে।
বাড়িতে ফিরতে নওশির কথা গুলো বড্ড মনে হয়। নওশি জানতে চেয়েছিল বলে কম খারাপ ব্যবহার করেনি নওশির সাথে। আর আজ!
টলতে টলতে রুমে ঢুকল সায়ান।
“বা..বা…”
আধোস্বরে ডাকল মায়া।
“আমার মামনিটা….”
আদর করে কাছে টেনে নেয় মায়াকে।
বেশ কিছুক্ষণ মায়ার সাথে খেলাধুলার পর শান্ত হয় সায়ান।
‘যা হওয়ার তাতো হবেই’ মনকে প্রবোধ দেয় সায়ান।
“সায়ান কি হচ্ছেটা কি বলতো!”
“কেন মা?”
“তুই বুঝতে পারছিস না?”
“আরে মা চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে”
মাকে আশ্বস্ত করলেও নিজে আশ্বস্ত হয়নি সায়ান।
কিন্তু কি আর করা! দুটো পাড় যদি এক হতে না চায় তবে সেতুর কি প্রয়োজন!
তবুও চমকে উঠে সায়ান।
শক্ত করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সে।
.
“ওহ এই কথা! আরে কোনো সমস্যা না, আমি আঁচ করেছিলাম তোমার আর ছোট ভাইয়ার ব্যাপারে। কিন্তু এটা বলার জন্য আমাকে এত জরুরি তলব!”
হেসে উঠে নওশি।
“নওশি রাহাত আমার ভাই”
চমকে হাসি বন্ধ করে নওশি।
“আরে আগে পুরোটা শুনো..”
“বলো আপু”
“ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, আর আমার আর রায়ানের বিষয়টা ভাইয়া জানে, মেনে নিয়েছে সহজভাবেই, রায়ানের সাথে ভাইয়ার মাঝে মাঝেই কথা হয়”
হাফ থেকে বাঁচল নওশি।
“ও এই জন্যই বুঝি ছোট ভাইয়ার ফোনে কল দিয়েছিল রাহাত ভাইয়া?”
“হুম, কিন্তু নওশি আমি ভাইয়ার ব্যবহারের জন্য সরি”
“আরে আপু এরকম একটু হয়ই, যে কাউকে ভাল লাগতে পারে, তাতে কি! আর তোমার ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, এটা নিয়ে আমি তোমাদের বিয়ে বাঁধা দেব এটা ভেব না প্লিজ!
” আরে নাশু সেটা না”
ডাকনাম শুনে হেসে ফেলল নওশি।
“রায়ান সাহেব আমার ডাকনামটাও বলেছে?”
“হুম নওশি নওশি করে তো সারাদিন”
“হিহিহি তাই বুঝি! আচ্ছা বলো কি বলছিলে…”
“আসলে…..”
বলবে না বলবে না করেও রাহাত আর ইতুর বিয়ের আগের ঝামেলা গুলো বলল সানজানা। আর রাহাত নিজের ভুল বুঝতে পেরে মানসিকতা পরিবর্তন করেছে এটাও বলল।
“আরে আপু এটা তো খুশির খবর”
“হুম, ইতুকে খুব ভালবাসে ভাইয়া”
এটা শুনে ভীষণ খুশি হলো নওশি।
সানজানা আবার বলল,
“আজ একটা সমস্যা হয়ে গেছে”
“কি?”
“সকালে রায়ানকে ভাইয়া ফোন দিয়েছিল, আর তুমি ফোন ধরাতে ভাইয়া রায়ানকে উল্টাপাল্টা বুঝেছে, আর না বুঝেই রায়ানকে একগাদা ঝাড়ি দিয়েছে।
আর তোমার ভাইয়াও রেগে আছে”
“তারপর!”
“হুম পরে ভাইয়া ভুল বুঝতে পেরেছে, কিন্তু ভাইয়া এসব নিয়ে বেশি কথা বলতে পারছে না, ইতু জানেনা। আর আমি বা ভাইয়া কেউই চাচ্ছি না ভাইয়ার পিছনের ভুল গুলো নিয়ে ইতু আর ভাইয়ার মধ্যে ঝামেলা হোক”
“ও আচ্ছা তাই বুঝি ভাইয়া আমার সাথেও রাগারাগি করল! আচ্ছা আমি দেখছি”
“হুম, আমার মোবাইল তো তুলছে না। দেখ তুমি কিছু বলতে পারো কিনা”
“আচ্ছা আপু আমি বাসায় যাই, গিয়ে আপনার তাকে পাঠিয়ে দিব বিকালে।”
“তুমি না নওশি….!”
“আমি তোমার ননদ…ভাবিইইইই”
নওশির ইয়ার্কি দেখে হাসি পাচ্ছে সানজানার। এত সহজে মেয়েটা বুঝে যাবে আশা করেনি সানজানা।
রায়ান ঠিকই বলে বড্ড মায়াবি মেয়েটা।
চোখ দুটো মায়া মায়া!
“দাঁড়াও ঈশানের নাম্বার জোগাড় করছি!”
“ইশ!” লজ্জা পেয়ে যায় নওশি।
“এখন ইশ কেন ম্যাম!”
“ভাইয়া বলেছে তোমাকে!”
“আর কে বলবে! ঈশানকে দেখতে পারলে ভাল হত। ছবি আছে তোমার কাছে?”
“না আপু আমি নিজেই দেখিনি”
“মানে! তবে যে শুনলাম তুমি বিয়েতে রাজি!”
“হুম রাজি তো”
“না দেখেই?”
“হুম”
নওশিকে বড্ড রহস্যময়ী লাগল সানজানার।
এই সময়ে এসে কেউ না দেখে বিয়ে করতে রাজি হয় এটা বিশ্বাস করতে বাঁধছে সানজানার।
“নওশি তোমার সত্যিই দেখতে মন চায়নি?”
“না, কেউ কারোর প্রিয় জিনিসকে অপ্রিয় জায়গায় রাখে না আপু। তেমনি বাবা মা আমাকে তাদের অপ্রিয় কারোর সাথে বিয়ে দেবে না। আর তাদের পছন্দের উপর আমার বিশ্বাস আর আস্থা আছে।”
সানজানা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে লাগল নওশির কথা গুলো।
“সত্যি করে বলো তো নওশি তোমার অনুভূতিগুলো” কৌতূহল বোধ করে সানজানা।
“আরে বলব বলব, ওদিকে আমার ভাইটা কষ্ট পাচ্ছে হয়তো মনে মনে, আগে ভাইয়াকে বুঝায়, তোমার সাথে ঠিকঠাক হোক তারপর বলব”
“আচ্ছা”
“আচ্ছা আমি তাহলে যাই আপু?”
“ঠিক আছে যাও…”
সানজানার কাছে বিদায় নিয়ে বাসায় আসে নওশি।
এসেই সোজা রায়ানের রুমে চলে যায়।
“ভাবি খুব সুন্দরী, আমার পছন্দ হয়েছে, কথা বলেও ভালো লেগেছে”
“মানে!”
“ইশ এখন কিচ্ছুর মানে জানিস না তুই?”
“কি জানব!”
“তুমি তলে তলে তাল তলায় গিয়ে তাল পাড়বে, আর আমি তাল পড়ার শব্দ শুনলে দোষ!” হাসতে থাকে নওশি।
এড়ানো যাবে না জেনেই হেসে উত্তর দিলো রায়ান,
“সানজানার সাথে কথা হয়েছে তোর?”
“এইতো পথে এসেছিস!”
“বল তো…”
রায়ানকে সানজানার সাথে আজকের কথা আর রাহাতের সম্পর্কে সব খুলে বলে নওশি।
“আর শোন ভাইয়া তোদের আমি নাম বলিনি রাহাতের। তাই এই ভুল বোঝাবুঝি। শুধু শুধু ভাবিকে কষ্ট দিস না”
নওশির কথায় আশ্বস্ত হলো রায়ান।
“ওকে নাশু বাবু, আর শোন তোকে আবার সরি”
“নে আর ন্যাকামো করিস না, আমার ট্রিট দে!”
“ওকে পেয়ে যাবি সন্ধ্যায়”
“বিকালে আপুর সাথে দেখা করবি আর ফোন রিসিভ কর। অকারণে কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না”
“ওকে বড় আপু!”
রায়ানের ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলল নওশি!
.
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
“আমি অফিস থেকে ফিরলাম!” থতমত করে উত্তর দেয় রিদিমা।
“রিদিমা তুমি কি চাইছ!”
“মানে?”
“আমি তোমার অফিসে গিয়েছিলাম বিকালে”
চমকে উঠে রিদিমা।
সায়ান আবার বলতে থাকে,
“তুমি কি মনে করো রিদিমা? আমি কি কিছুই বুঝি না? আমি তোমাকে কিছুই বলিনা তার মানে এটা নয় যে আমি কিছুই বুঝিনা। তোমার কি নেই রিদিমা! মায়াকে দিকে তাকিয়েও অন্তত তোমার বুঝা উচিত।”
“জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করো তো সায়ান। আমার যা ইচ্ছে তাই করব! তো?
আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও”
সায়ান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।
চড় মারে রিদিমার গালে।
“কি বললে তুমি! ওই কি পেয়েছ কি তুমি!”
রিদিমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
“ওই তুই কি ভাবিস নিজেকে! আমার চাই না তোকে, ডিভোর্স চাই আমার ডিভোর্স!”
চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসে সবাই।
দুইবছর বয়সের মায়া একবার মায়ের দিকে আর একবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি ওকে কোলে নিয়ে যায় নওশি।
বেশ কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হতে থাকে।
“বৌমা চুপ কর, সায়ান চুপ কর!”
মায়ের কথা শুনে চুপ করে যায় সায়ান।
কিন্তু রিদিমা চুপ করে না।
উল্টো জাহরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আপনার কি? ছেলেকে আঁচলের তলায় রাখবেন যদি বিয়ে কেন দিয়েছেন!”
চমকে রিদিমার দিকে তাকায় জাহরা!
কিন্তু মুখে কোনো উত্তর জোগায় না তার।
ধীরে ধীরে নিজের রুমে চলে যান তিনি।
“আমি তোর কাছে থাকব না”
মায়ের উপর বাজে কথা বলতে দেখে সায়ানের মাথা উল্টোপাল্টা হয়ে যায়।
“যাও তুমি! যা খুশি করো গিয়ে”
কিন্তু পরমূহুর্তেই মায়ার ছবি ভেসে ওঠে সায়ানের মনে।
একটু নরম হয় সে। রিদিমার পাশে গিয়ে বসে সে,
“এমন করে না রিদিমা, প্লিজ মায়ার কথাটা একটু ভাবো”
কিন্তু রিদিমা কিছুতেই নরম হয় না।
সায়ান নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও রিদিমাকে বোঝাতে ব্যর্থ হলো।
আর রিদিমা সেই রাতেই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে পুরো বাড়ির মানুষকে অপমান করে মায়াকে রেখেই বেরিয়ে যায়।
“আরিফ তুমি কোথায়?”
রিদিমা যদিও জানে আজ বিকালে তার কাছে বিদায় নিয়েই তার বিজনেসের কাগজপত্র গুলো নিয়ে আরিফ কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে গেছে একটা বড় প্রোজেক্ট এর জন্য। আরিফের উপর তার বিশ্বাস তাই বেশি প্রশ্ন করেনি।
তার ইচ্ছে ছিল আরিফ আসলেই আরিফের কাছে চলে আসবে কিন্তু আজ সায়ান এত রাগিয়ে দিল!
“আমি কোথায় তুমি তো জানো”
“আরিফ আমি চলে এসেছি সায়ানের কাছ থেকে”
“মায়া কোথায়?”
“নিয়ে আসিনি সায়ানের মেয়েকে”
চমকে উঠে আরিফ! সত্যিই যে কোনো মা তার বাচ্চা কে ফেলে যেতে পারে তা হয়তো রিদিমাকে না দেখলে তার বিশ্বাস হতো না।
আরিফকে চুপ থাকতে দেখে রিদিমা বলে,
“চুপ করে আছ কেন? আমি কি করব? কোনো হোটেলে থাকব?? তুমি কবে ফিরবে?”
আরিফ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“রিদিমা তুমি তোমার বাবার বাসায় যাও, আমি তো মাত্রই আসলাম। ফিরতে দেরি হবে। এতদিন হোটেলে থাকতে হবে না।”
“বাবার বাসায়?”
“হুম”
“বাবা মা আমাকেই মেরেই ফেলবে”
“আপাতত বাবা মা কে উল্টোপাল্টা কিছু বুঝিয়ে দাও”
“ওকে, বাবা মাকে এমন বোঝানো বোঝাবো সায়ানের নামই করবে না!”
“হুম তা তুমি পারবে”
“মানে?”
“আরে মানে হলো আমি আসা পর্যন্ত তুমি সিচুয়েশান ম্যানেজ করতে পারবে”
“ও, ওকে রাখছি এখন”
“বাই”
“বাই”
রিদিমা চলে যাওয়ার পর সায়ান নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না রিদিমা চলে গেছে।
ভেবেছিল রিদিমাকে বুঝিয়ে পথে ফেরাতে পারবে।
কিন্তু!
একি হলো মায়ার জীবনে! এটা কি হলো তার জীবনে!
জাহরা খাতুন নিজের ঘরে শুয়ে আছেন।
সাহরাফ সাহেব বারান্দায় বসা। রায়ান নিজের ঘরে।
‘মায়া, ছোট্ট মায়া, বড্ড পোড়াকপাল তোর! অধিকার যা পাওয়ার কথা ছিল হারিয়ে ফেললি তুই! জগতে তোর কথা আলাদা করে কেউ ভাববে কিনা জানিনা। কিন্তু এটা হওয়া তোর সাথে মোটেই উচিত হয়নি!’
ঘুমন্ত মায়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছিল নওশি। নওশি ভালো মতো বুঝেছে ফিরে আসার জন্য যাইনি রিদিমা।
খুব বড় একটা ভরসা না পেলে বাড়ি ছাড়ার সাহস হতো না তার।
আস্তে আস্তে উঠে বড় ভাইয়ার রুমের দিকে এগোলো নওশি।
নওশিকে দেখেই বলতে থাকে সায়ান,
“নওশি আমি তো এটা চাইনি কিন্তু কি করব আমি বল, চেষ্টা তো কম করলাম না, কিন্তু রিদিমাকে ফেরাতে পারলাম না, বাবা মাকে একসাথে পাওয়ার যে আনন্দ টা তো মায়াকে দিতে পারলাম না, বড্ড অসহায় আমি!”
“শান্ত হও ভাইয়া”
“কিন্তু নওশি এর শাস্তি রিদিমা পাবেই”
“কিন্তু তুমি ভাবিকে ফিরিয়ে আনতে তো পারো, ভাবি ভুল বুঝেছে হয়তো”
“না!” কড়াস্বরে জবাব দেয় সায়ান।
“কিন্তু কেন?”
এমন সময় একটা মেসেজ আসে সায়ানের ফোনে,
“বিনা অপরাধে অপ্রিয় সত্যটাই ঘটে গেল তোর জীবনে, মানুষ চিনতে শিখিস পরেরবার থেকে, মায়ার দিকে খেয়াল রাখিস, আমি এসে কথা বলব তোর সাথে”
মেসেজটার দিকে তাকিয়ে আছে সায়ান।
সাথে সাথেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলো সায়ান রিদিমাকে আর এ বাড়িতে কখনোই আনবে না সে।
রিদিমা আর মায়ার মা নেই, আর তার স্ত্রীও না।
“কার মেসেজ ছিল ভাইয়া?”
“আর এস গ্রুপের মালিক আরিফের মেসেজ, আমার বন্ধু”
.
(চলবে)