এখানে কোন বৃষ্টি নেই পর্ব শেষ

এখানে কোনো বৃষ্টি নেই
শেষ পর্ব ১৩
লেখিকা: তৃধা আনিকা
অভির ঝামেলার পর অামার একটা ব্রেক দরকার ছিলো,,
অাত্মীয়, বন্ধু -বান্ধব, অাদর শূন্য হয়ে পড়েছিলো অামার জীবন তখন।
সবছেড়ে দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিলো, দূরে কোথাও……..
অামি ডক্টর স্মিথকে চিঠি লিখে পাঠালাম, নিজের একাকিত্ব, সমস্যা, সব। তিনি সাদরে অামাকে তাঁর কাছে বেড়াতে যাবার অামণ্ত্রণ জানালেন।
বাবা অামাকে এক কাড়ি টাকা দিয়ে বললেন,
———যাও।। যতদিন খুশি বেড়িয়ে অাসো,….
অাসলে তিনি ও তো হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অামাকে নিয়ে। কি দিয়েছি অামি বাবাকে টেনশন ছাড়া??
ডক্টর স্মিথের কাছে বেড়াতে অাসার পর, অামার নতুন অসুস্থতা দেখা দিলো। প্রস্রাবের সাথে ইরেগুলার ব্লিডিং।
প্রথম কিছুদিন অামি এটা ইগনোর করলাম। পরবর্তীতে
ডক্টর স্মিথের সাথে অালাপ করলাম।
তিনি কিছু টেস্ট করালেন অাবার।
রিপোর্ট অাসার পর,
ডক্টর স্মিথ অবাক, অামায় বললেন,
———সানা, তুমি তাহলে অসুস্থ বলেই চেক অাপে এসেছো?? অথচ অামি ভেবেছি তুমি আমার সাথে হাসপাতালে কাজ করবে বলে এসেছো…….
অামি ও অবাক!
———অসুস্থ মানে?? অামি তো সুস্থই!
ডক্টর স্মিথ মাথা ঝাঁকালেন।
———–ঠিক অসুস্থ নয়, একটা অন্যরকম খবর!
তুমি কনসিভ করেছো!!
———-কনসিভ করেছি মানে???
———হু, থ্রি -মান্থস ওভার।
———কিন্তু অামি তো কোনো সাইকেল মিস করিনি! পিরিয়ডে অনিয়ম ছিলো, কিন্তু…. মিস হয়নি….
———- তুমি হয়তো একুরেট হিসেব রাখোনি সানা, একটু ও কি পার্থক্য ফিল করোনি??
———–করেছি, সেটা হলো অল্প গ্যাপে ই পিরিয়ড হয়ে যাচ্ছিলো। সেটা তো অনেক সময় অতিরিক্ত স্ট্রেস এর কারণেও হতে পারে…. যেরকম হরিবল কেটেছে অামার এ কদিন!।। তাছাড়া অন্য কোনো সিকনেস তো ফিল করিনি।শুধু পিরিয়ডের….. ..
————ওটা পিরিয়ডিক্যাল ব্লিডিং ছিলো না, সানা। তোমার জরায়ুতে অারো কিছু নিরীহ টিউমার হয়েছে।
কনসিভ করার সাথে সাথে, ওগুলোতে উইথড্র সিনড্রোম গুলো শুরু হয়ে গেছে। ওরা ভ্রুণকে একসেপ্ট করতে চাচ্ছে না।
ভ্রুণ ‘র কন্ডিশন ভালো না। যেকোনো সময় এবোর্ট করে যেতে পারে।
তবে অামার মনে হয়, কিছু এসেনশিয়াল স্টেপস নিলে বেবিটা রাখা যেতে পারে। এতে তোমার ক্ষতিটাই বেশি হবে।কারণ এবারে সার্জারিতে তোমার পুরো জরায়ুটা কেটে ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
তুমি এখন কি করতে চাও???
অামি হতবুদ্ধি। এটা কি অলৌকিক ঘটনা?? নাকি অভিশাপ??
এটা কি খারাপ খবর, নাকি ভালো খবর???এখন কি করা দরকার???
অামি ঢাকায় বাবাকে ফোন করলাম, কিন্তু কনসিভ করেছি বলার সাহস পেলামনা। অভির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম, কাজ হলোনা।
অঞ্জন ভাই
বললেন,ইউ অার এ প্রমিস ব্রেকার পরী। একদিন অনেক মানুষের সামনে করা প্রমিস তুমি নিজে ভেঙেছো।
———-অামার সত্যি সত্যিই অভিকে দরকার অঞ্জন ভাই!
জরুরি দরকার।
——–তোমার কোনো কথাই এখন অার অামার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না।যেটা জরুরি বলছো, সেটাও দেখা যাবে, শুধু। শুধু!
বাদ দাও, অভিকের বিয়ের কথা চলছে।
অামার তখন মাথা খারাপ অবস্থা।
অামি কি করি??অভি বিয়ে করতে যাচ্ছে???
ডক্টর স্মিথ বললেন,
——–এত টেনশন না করে অাগে ভাবো, তোমার মন কি বলছে???
এখনই কি সার্জারিটা করাবে তুমি??
———-অামি অাসলে বেবীটা এবোরশন করতে চাই না। এবং অামি নিজেও বেঁচে থাকতে চাই।
———তাহলে তুমি বরং অপেক্ষা করো সানা, এই বেবীটা যদি সাকসেসফুলি হয়ে যায়, তখন না হয় ভাববে।
অার যদি অাপনা অাপনি এবোর্ট করে যায়, সেটাও তখন দেখা যাবে, এখন বাদ দাও টেনশন, অপেক্ষা করো!
ডক্টর স্মিথ, একটা মেডিক্যাল বোর্ডের মত করে অামায় দেখাশোনায় রাখতে লাগলেন,, রেগুলার চেক-অাপ চলতে লাগলো….অার অামি???
অামি অপেক্ষা করতে লাগলাম। দিন দিন অামার শরীর খারাপই হচ্ছিলো,,ডক্টর স্মিথ শুধু ফিটাসটা পরিপূর্ণ হবার জন্য ওয়েট করছিলেন, অন্তত সাত-মাস, অন্তত ত্রিশ সপ্তাহের অাগে সিজারিয়ান সেকশন করানোর উপায় ছিলোনা……….
এর মাঝে খবর পেলাম অভি বিয়ে করেছে। কনের নাম অবনী!
অামার খুব ইচ্ছে করছিলো অভির বৌ দেখতে, সে কেমন??? গোলগাল চেহারার, অার বড় বড় চোখের??? নাকি সেঁটে থাকা ধারালো মুখ, যেখানে চোখের উপর ভ্রু দিগন্তের মত বেঁকে গেছে???সে রাতে কিভাবে ঘুমোয়?? দু-পা ভাঁজ করে গুটিসুটি মেরে?? নাকি হাতের উপর সিথান করে?? বৃষ্টির সন্ধ্যায় চা বানানোর সময় সে কি গুণগুণ করে গান গায়, নাকি বিষন্ন হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি দেখে ?????
ডায়েরিটা এতটুকু লিখবার পর শেষ! অার কিচ্ছু লিখা নেই।
কেনো নেই?? এরপর কি হলো???
পরী কেনো অার নিজের ডায়েরি লিখেনি?? নাকি লিখার মত সুযোগটাই সে পায়নি??
এতক্ষণ অামি পরীর ডায়েরিটা পড়ছিলাম!
এরপরের গল্পটা
অামি লিখবো, এখন প্রশ্ন হলো, অামিটা কে??
অামার পরিচয় গল্পটা পড়তে পড়তেই হয়ে যাবে!
তবে সেই গল্পে এই অভি অার পরী ছাড়াও অামি থাকবো, অারও বিশেষ একজন থাকবে।
পরীর ডায়েরির ঘটনার অনেক বছর পরের কথা।
অামি বাংলাদেশ থেকে পড়তে এলাম ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোতে।
ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোর’ জনএইচ ড্যানিয়েলস ফ্যাকাল্টিতে অামার প্রথমদিন। চমৎকার সকালবেলা।
ঝকঝকে পরিষ্কার অাকাশ!
টিচারদের সাথে অামাদের পরিচয় পর্ব শুরু হবে একটু পরেই….
অামি অাগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। একে একে হলরুমের বিশাল স্টেজটাতে অামাদের সব শিক্ষক এলেন। এর মাঝে বিশেষ একজন শিক্ষককে দেখে অামার দুনিয়া কেঁপে উঠলো, তিনি দেখতে অবিকল অামার বাবার মত। তাঁর সাথে পরিচয়ের সময়
তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে পরিষ্কার কিন্তু অনঅভ্যাসিত বাংলায় বললেন,
———স্বাগতম পারীন।অামি সোয়ান স্মিথ। তোমাদের ব্যাচ দিয়ে অামার শিক্ষকতা জীবন শুরু হচ্ছে!সুতরাং অামি ও নতুন। অামি জানি তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছো। এখানে তোমার শিক্ষাজীবনের সময়টা সুন্দর হবে অাশা করি।
অামিও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
———-পারীন নয়, অামার নাম পরীন। বাবা পরী রেখেছিলেন, অামি পরীন করে দিয়েছি।
———ওহো পরী! বিউটিফুল নেইম। অামার মায়ের নামের সাথে মিলে গেছে। তোমাকে অারেকবার স্বাগতম। স্থাপত্য প্রকৌশলে তুমি চমৎকার কিছু করো…
অামি অবাক ও বাকশূণ্য হয়ে বাকী সময়টা কাটালাম।
একজন কানাডিয়ান, ক্রিশ্চিয়ান। অথচ দেখতে অামার বাবার মত।কণ্ঠেও অনেক মিল।এটা কিভাবে হলো?? কেনো হলো?? পৃথিবীতে এরকমই কি ব্যাখ্যাহীন অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে থাকে?? নাকি এর ব্যাখ্যা অাছে??
অামি ব্যাখ্যা বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম।
সোয়ান স্মিথের সমস্ত পরিচয় জানলাম। তার বাবা এখানের নামকরা ডক্টর, ক্যারোন স্মিথ। মা স্টিভা স্মিথ। তার অারও দুটি ভাই-বোন অাছে। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলে অামার খটকা অারো বাড়লো।
অনেক ভেবে অামি
সোয়ান স্মিথের অফিস বক্সে চিঠি লিখে পাঠালাম।অামার নিজ ও পরিবারের সমস্ত পরিচয় ডিটেলে লিখলাম। পরিবারের প্রতিটি মানুষের ছবি কোলাজ করে বিবরণ দিয়ে পাঠালাম।
তিনি জবাবে অামাকে বাংলায় লিখলেন এরকম,(অাশ্চর্য তিনি বাংলা লিখতে এবং পড়তে পারেন)
সুপ্রিয় পরী””” ন
তুমি নিজের সম্পর্কে যা লিখেছো, তা পড়ে অামি ভীষণ অাশ্চর্য হয়েছি।হয়ত এইরকম একটি চিঠির জন্যই অামি বেঁচে থেকেছি।তোমার বাবার ছবি দেখে অামিও তাঁর সাথে দেখা করতে অাগ্রহ প্রকাশ করছি। কিন্তু এর অাগে অামার মনে হয়, তোমাকে অামার একটি ডায়েরি পড়তে দেবার অাছে। এটি অামার মায়ের ডায়েরি, তুমি কি দয়া করে তা অামার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেবে, পরী???
ডায়েরি পড়ার পর যদি মনে হয় অামরা দেখা করতে পারি তাহলে……
অার একটি বিশেষ কথা, সৃষ্টিকর্তা বোধহয় চমৎকার ঘটনা ঘটাতে পছন্দ করেন,অার সেইজন্যই তোমার সাথে অামার দেখা হয়েছে।
অামি ডায়েরি সংগ্রহ করতে গেলাম।
সোয়ান স্মিথ ডায়েরিটি অামার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে অার্দ্র গলায় বললেন,
———-অামি অনেকদিন যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম, এই ডায়েরিটা পড়তে দেওয়ার মত কাউকে একদিন খুঁজে পাবো অাশা করে! অবশেষে….
সোয়ান স্মিথ ঢোঁক গিললেন। অামি স্পষ্ট বুঝলাম তিনি কান্না অাটকাচ্ছেন।
ভিনদেশে এই প্রথম অামার মনে হলো, সোয়ান স্মিথ অামার খুব কাছের মানুষ। খুব কাছের সম্পর্কের । শুধু সেই সম্পর্কের নামটা অামি জানিনা।
সোয়ান স্মিথ গলা ঝারি দিয়ে বললেন,
———-তুমি একটা চমৎকার দেশ থেকে এসেছো তাই না???
অামি সোয়ান স্মিথের প্রশ্নের উত্তর দিলাম না।
———- অাপনি বাংলা কেনো শিখেছেন, স্যার???
———–তুমি যখন এই ডায়েরিটা পড়বে তখন এর উত্তর পাবে।
সোয়ান স্মিথ কফি বানাতে বানাতে বললেন,
———পরী তুমি কি তোমার বাকি দুই বোন সম্পর্কে কিছু বলবে?? মানে চিঠিতে তুমি কিন্তু অত ভালো করে বলোনি কিছু।
——-বিশেষ বলতে অামার এই যে পরী নামটা, বাবাও অামাকে ডাকেন। বাবা পরীন ডাকতে পছন্দ করেন না, এবং অামাদের তিন বোনকে তিনি পরীই ডাকেন, যেমন অামি জলপরী, অামার ছোটবোন অরিনকে ডাকেন, পদ্মপরী; অার সবার ছোট্ট ইশানকে ডাকেন রত্নপরী! বাবা যখন অাপনার সাথে দেখা করতে অাসবেন, ওরা ও অাসবে সাথে। অামাদের তিনবোনের অারও একটা মজার ব্যাপার অবশ্য অাছে, তবে অামি তা অাপনাকে এখন বলবোনা।
সোয়ান স্মিথ কফির মগ অামার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
———-অাসবেন কেনো??তুমি কি তোমার দেশে অামাকে নিয়ে যেতে চাও না????
অামি মনে মনে বললাম, হাজারবার নিয়ে যেতে চাই, লক্ষবার নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু মুখে বললাম,
———অামাদের বাবা অাপনাকে মিট করলে একদম থমকে যাবেন।
সব বদলে যাবে।
চলে অাসার সময় সোয়ান স্মিথ অামার দিকে হাত বাড়িয়ে করুন চোখে বলল,
———-অামি কি তোমাকে একবার “বোন” ডাকতে পারি????
অামি সেদিন সোয়ান স্মিথের কথার জবাব না দিয়ে চলে এলাম । এসে অামি ডায়েরি খুলে বসলাম, সুন্দর নীল মলাটে রুপোলি রংয়ে গুটিগুটি করে লিখা
“পরী’র প্রেমের কথাগুলো”
ব্যস,
একটি ডায়েরি অার অামি! নিমেষেই বদলে গেলো অনেক কিছু!
বাংলাদেশে এসে অামি অার সোয়ান স্মিথ যখন এয়ারপোর্ট গেট থেকে বেরোই, অফিসার অামায় জিজ্ঞেস করলেন,
ইনি কে হয় অাপনার???
অামি প্রায় চিৎকার করে অানন্দে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
———ইনি অামার বাবার ছেলে হয়, অার অামার ভাই!! অামার ভাই হয় ! অামার ভাই।তাঁকে অামি অনেক দূরদেশে খুঁজে পেয়েছি।
সোয়ান ছলছল চোখে তখন অামাকে দেখছে, বাংলাদেশের অামাকে দেখছে!
বাবা এগিয়ে এসে সোয়ানের সামনে যেনো দাঁড়াতে পারছিলেন না। কাঁপছিলেন থরথর করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাবার অবস্থা।
অামার দুই বোন বাবাকে শক্ত করে ধরে অবাক চোখে সোয়ানকে দেখছে। তাদের চোখেও পানি। পাশে মা বোকার মতো কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে সোয়ানকে বললেন,
———-তোমার মা, সন্তান হবে না বলে এই মানুষটাকে ছেড়ে চলে গেলেন, মানুষটার একটা ইচ্ছে পূরণ হবে না বলে,তাঁর সমস্ত জীবনের প্রধান ইচ্ছেটিকে অপূর্ণ রেখে চলে গেলেন। অথচ সেই তো…..
তুমি তো এলে…… অামার মৃত্যুর পর তোমার মাকে যখন পাবো, ধরবো তাঁকে?? কেনো তিনি অামার এত ভালো স্বামীকে কষ্ট দিলেন?? কেনো???
একসময় বাবা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
সোয়ান বাবার দু-কাঁধ শক্ত করে ধরে দাঁড় করিয়ে বললো,
———-বাবা, মা অামার নাম রেখে যাননি,
অাপনি অামায় অাপনার পছন্দের একটি নামে ডাকুন তো…. এই নাম বয়ে বেড়িয়ে অামি খুব ক্লান্ত!
বাবা এবার সোয়ানের কাঁধে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। অামরা তিন বোন অার মাও তাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলাম। এয়ারপোর্টে সবাই হা্ করে দেখছে অামাদের। কিছু অাগ্রহী সাধারণ মানুষ অামাদের ছবিও তুলতে লাগলো, তুলুক। অামরা কেউ তাদের বাঁধা দিলাম না।
অামরা অনেক অনেক অপেক্ষার পর এরকম একটি সুখের মুহূর্ত পেয়েছি। দেখুক সবাই, প্রাণভরে দেখুক…..
পরিশিষ্টঃ
****কোনো এক গভীর রাতে পরী ম্যাডামের ফুটফুটে একটি ছেলে হয়! কিন্তু উনার ইন্টারনাল ব্লিডিং অার ইনফেকশন এত বেশি ছিলো যে, তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেই ফুটফুটে সন্তানের দায়িত্ব নেন, ডক্টর স্মিথ। বাংলাদেশে এই খবরটা অারেকজন শুধু জানলো, তিনি হলেন পরী ম্যাডামের বাবা।
তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সেই শিশুটির একটি উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করেন। অার বাকিরা জানলো পরী ম্যাডাম হারিয়ে গেছেন, ইচ্ছে করে। এই এত বড় পৃথিবীতে কেউ ইচ্ছে করে হারিয়ে গেলে নিশ্চয়ই তা্কে খুঁজে পাওয়া যাবেনা???
কিন্তু অামি জানি, কি ভীষণ যন্ত্রণা নিয়ে অামার বাবা তাঁকে প্রতিমুহূর্তে খুঁজেছেন…..
****অামি পরীন রহমান । ডটার অফ অভিক রহমান । অার এই হলো অামার বাবার পরীর গল্প।
*****সোয়ান ভাইকে বাবা নাম দিয়েছেন পরীপুত্র!! অামরা তিনবোনও ডাকি, পরীপুত্র! তিনি এই নামে ডাকলে খুব লজ্জা পান। লজ্জা পেলে তাঁকে দেখতে অারও বেশি ভাইয়া লাগে।
*****অামাদের তিন বোনের মজার ব্যাপারটা হলো, অামাদের তিনবোনকেই বাবা দত্তক নিয়েছেন। অর্থাৎ অামরা তিনবোনই তাঁর পালিত কন্যা। নিঃসন্তান তিনি অামাদের বুকে করে বড় করেছেন। মা-বাবার সন্তান কেনো হলোনা?? এটি অামার কাছে রহস্যময় লাগে খুব!!
****অার এখন অামরা সবাই ভালো অাছি। বিশেষ করে পরীপুত্র! পরীপুত্র অামাদের সবাইকে নিয়ে একটি ডায়েরি লিখছেন। তাঁর ডায়েরির নাম,
-“”এখানে কোনো বৃষ্টি নেই ”
কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন,
যেখানে অামরা তিনবোন পরী, অাবার তিনি হলেন পরীপুত্র, তাহলে তো এটা নিশ্চয়ই পরীস্থান!
অার বাবা বলেছেন, পরীস্থানে বৃষ্টি হয়না।
অার অামরা তিনবোন বাবা-মায়ের সাথে মিলে পরীপুত্রের বিয়ে দেবার জন্য অারো একটা মিষ্টি পরী খুঁজে ঠিক করেছি। পরীপুত্র অবশ্য তা জানেনা। হুরররে…..
খুব শীঘ্রই মি.স্মিথ অার মিসেস স্মিথ বাংলাদেশে অাসছেন। তাঁরা এলেই পরীপুত্রের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে।
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here