#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০২
#Mst_Liza
পলক সরিয়ে হৃদ ভাইয়ার চোখের দিকে তাকালাম আমি। আমার চোখ যেন কিছুতেই সরছে না আজ এই দুটি চোখ থেকে।কত্ত মায়াবি লাগছে এই চোখ।যে দেখবে সেই প্রেমে পরে যাবে।বুঝতে পারছি না মানুষটা রেগে আছে নাকি কিছুই শোনে নি।আমি কিছু বোঝাতে যাবো তার আগেই পাশ ঘুরে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো সে।আমি ছুটলাম তার পেছনে।কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ভীরের মধ্যে মিলিয়ে গেলো সে।আমি তাকে পেলাম না পুরো অনুষ্ঠানে খুঁজে।মন খারাপ করে নিজের রুমে এসে বসে রইলাম। হঠাৎ আমার হাতে কারও স্পর্শ অনুভব হলো। আমি তাকিয়ে দেখতে পেলাম হৃদ ভাইয়ার মুখটা।খুব ইচ্ছা করলো ওই মুখটা ছুঁয়ে দিই আজ।যখনই ছুঁতে গেলাম পেলাম না তাকে।কি হয়েছে আমার? চোখ বন্ধ করলাম হৃদ ভাইয়ার মুখটা ভেসে উঠলো।চোখ খুললেও সে।যা করছি, যা বলছি সবকিছুর মাঝে শুধু তাকেই খুঁজে পাচ্ছি।তাহলে কি আমি…?
হঠাৎ দরজায় শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।তাকিয়ে দেখলাম হৃদ ভাইয়া সত্যি দাড়িয়ে আছে। অনেকটা রেগে আছে মনে হচ্ছে।আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর আমি সেটা দেখে দাড়িয়ে পরলাম।আমার সামনে এসে একটার পর একটা বকুনি দিতে লাগলো সে।আমি এক দৃষ্টিতে তার মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। যখন থেমে গেলো তখন বললাম আমি,
—“থামলে কেন হৃদ ভাইয়া আরও বলো? শুনতে খুব ভালোই লাগছে।”
আমার কথা শুনে হৃদ ভাইয়া যেন আকাশ থেকে পরলো।আমার কপালে হাত রেখে বলল,
—“ঠিক আছিস তুই?”
আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।ভয় করছে না আমার।শুধু তাকিয়ে রয়েছি ওই চোখের দিকে।আমার এই অবস্থা দেখে আমাকে দু’কাঁধে হাত রেখে শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
—“কি হয়েছে তোর?”
আমি বললাম,
—“আমাকে তুমি বিয়ে করবে?”
কথাটা শুনে হৃদ ভাইয়ার চোখদুটো বড়সড় হয়ে গেলো।আমার ধ্যান ফিরলো।নিজের মুখটা চেপে ধরলাম আমি।তাকে সরিয়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে জ্বী কামড়ে ধরলাম।আমার কাঁধে হাত রাখলো সে।আমি ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকালাম।তাকে বললাম,
—“ছরি।আ…আম..আমি..”
আমাকে আমতা আমতা করতে দেখে দিলো এক ধমক।কড়া গলায় শাসিয়ে বলল,
—“নস্ট হয়ে যাচ্ছিস তুই।না হলে তোর মধ্য এতো পরিবর্তন আসতো না।আজ থেকে ওই মেয়ে দুইটার সাথে মেশা তোর জন্য বারণ।”
আমাকে কথাটা বলে হুড়মুড় করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে।কিছুক্ষণ পরে নূর আপু রুমে ঢুকলো।দু’গাল ভর্তি হলুদ।আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।আমাকে আনমনা থাকতে দেখে পাশে এসে বসলো।আমার কাছে জানতে চাইলো আপু,
—“হৃদ কিন্তু তোর উপর খুব রেগে আছে। কারণটা কিরে?”
আমি মুহূর্তে আপুকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আপু আমার মাথায় হাত রাখলো।আমাকে বলল,
—“হৃদ শুধু আমার কাজিন নয় ফ্রেন্ডও।আমরা একসাথে বড় হয়েছি, লেখাপড়া করেছি।আজ আমি মেঘকে পাচ্ছি সেটাও হৃদের দৌলতে।হৃদ যদি হেল্প না করতো তাহলে হয়তো আমার মনের কথা মনেই থেকে যেতো।মেঘ হয়ে যেতো অন্য কারও।তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি না আমি।হৃদ তোর রুম থেকে রেগে কেন বের হলো? আমি এতো করে ডাকলাম পাত্তাই দিলো না।আমার এই পুচকে বোনটা কি এমন করলো যে হৃদ এতোটা রেগে গেলো?”
আমি আপুকে বললাম,
—“কিছুই করি নি আমি।তুমি তো জানোই হৃদ ভাইয়ার স্বভাব।শুধু শুধু রেগে যায়।”
আপু আমার গাল টিপে বললো,
—“হ্যাঁ এটাও ঠিক।তবে তুই কি জানিস হৃদ কেন তোর এতো পেছনে লাগে?”
আমি বললাম,
—“জানি তো।”
আপু খুব আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে মুখটা ঝুঁকে তাকালো।আমি আবার বললাম,
—“মজা নেওয়ার জন্য। আমার কোনো ভুল পেলে হৃদ ভাইয়া ভীষণ মজা পাই। একটা সুযোগও ছাড়ে না আমাকে নিয়ে হাসার।”
আপু শব্দ করে হেসে উঠলো। আমি তাকিয়ে পরতেই চুপ হয়ে গেলো। আমি কিছু বলবো এমন সময় আপুর ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলাম মেঘ নামটা ভেসে উঠছে।আমি রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম মেঘ স্যার কতো ভালো।আপুকে কতোটা ভালোবাসে।কখনো বকে না।কখনো টেনশনে ফেলে না।আপু খুব ভালো থাকবে মেঘ স্যারের সাথে।
___________
______
সন্ধ্যার সময় নূর আপুকে বধূ বেসে সাজানো হচ্ছে। আপু চলে যাবে বলে মনটা খুব খারাপ। মিনি, নিশি প্রথম গাড়িতে চলে এসেছে। ওদের সাথে কোনো কথা বলছি না আমি।যতদূর পারছি ওদের এড়িয়ে চলছি।ওদের খুব রাগ হচ্ছে আমার উপর।ওরা জোড় করে আমাকে এক কোণায় টেনে নিয়ে বলল,
—“ভাব দেখাচ্ছিস তোদের বাড়িতে এসেছি বলে?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না অর্থ বোঝালাম।ওরা বললো,
—“তাহলে তোর সমস্যাটা কি?”
আমি দূর থেকে হৃদ ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে ইশারায় বুঝালাম বারণ করেছে ওদের সাথে মিশতে।ওরা অসহায় ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“তাহলে কি তুই আর আমাদের সাথে মিশবি না?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না অর্থ বুঝিয়ে চলে আসতে লাগলাম। এমন সময় হৃদ ভাইয়া এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমার হাত ধরে টানতে লাগলো।আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসে শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
—“ওদের সাথে আবার কি?”
আমি বললাম,
—“ওরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
কথাটা শুনেই আমার এক হাত টেনে ধরে দাঁত কটমট করে বলল,
—“আর আমি? আমার কথার কোনো দাম নেই তোর কাছে?”
আমি বললাম,
—“আছে তো।তাই তো ওদের সাথে কথা বলি নি।তুমি বললে তাই বলবো।”
হৃদ ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে দিলো।আমাকে বলল,
—“ঠিক আছে।এবারের মতো ক্ষমা করলাম।নেক্সট টাইম যেন ওদের সাথে এমন প্ল্যান করতে না দেখি।”
আমি মাথা কাত করে বললাম,
—“তাহলে এখন ওদের কাছে যেতে পারবো?”
একটু ভেবে বললো,
—“যা।”
__________
___
ঘড়ির কাটায় রাত নয়টা ছুঁই ছুঁই। বিয়ে পরানো শেষ। আপুকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সকলের চোখে পানি। আপুকে ছাড়া কিভাবে থাকবো সেই টেনশনে কিছু খাওয়া হয়নি সারাদিন। আপু চলে যাওয়ার পর রুমে এসে বসলাম। বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এই রুমটা।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম রাতে।সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।উঠে দেখি আটটা বাজে। মা বললো হৃদ ভাইয়া হসপিটালে চলে গেছে। সাড়ে আটটায় তার প্রথম ক্লাস। আমি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নয়টার দিকে হসপিটালে চলে এলাম। এখন অফ পিরিয়ড।বসে থাকতে হবে।তাই আড্ডা দিচ্ছি ফ্রেন্ডের সাথে ক্যান্টিনে।আর ফাস্ট ক্লাসের সব পড়া বাবলুকে বলেছি লিখে দিতে।বাবলু পড়া লিখছে এরই মধ্যে একটা ছেলে এসে ওর হাতে কিছু টাকা আর একটা চিঠি গুজে দিয়ে বললো চিঠিটা আমার খাতার মধ্যে রাখতে।বাবলু টাকাগুলো নিজের পকেটে রেখে চিঠিটা আমার খাতার ভেতরে ভরে দিলো।ছেলেটা এতো বোকা কেন? যে যা বলে বলদের মতো সব করে।খাতাটা আমাকে দিয়ে চলে গেলো।এমন সময় ক্যান্টিনে হৃদ ভাইয়া আসলো।আমার নাম ধরে ডাকলে মুখটা ফ্যাকাসে করে উঠে দাড়ালাম আমি।এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলল,
—“আমার ক্লাসটা মিস করেছো তুমি। বুঝলাম কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো।এখন আমি ফ্রি আছি।আর তুমিও বসে আছো।যদি চাও আমার চেম্বারে এসে ক্লাসটা করতে পারো।”
আমি জট করে বলে উঠলাম,
—“চাই না আমি।”
হৃদ ভাইয়া রাগি দৃস্টিতে তাকালো আমার দিকে।আমার বই খাতা হাতে তুলে নিয়ে বলল,
—“আমি তোমাকে বলতে এসেছি।জিজ্ঞাসা করতে আসিনি।আমার সঙ্গে এসো।”
কথাটা বলে উল্টো ঘুরে হাটতে লাগলো।আর আমি মুখটা মলিন করে সবাইকে বাই বলে পেছনে ছুটলাম।
চলবে,,,