এতো চাই তোকে পর্ব ৩

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৩
#Mst_Liza

হৃদ ভাইয়ার সামনে খাতা কলম হাতে বসে আছি।আমার চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ দেখতে পেয়ে উঠে দাড়িয়ে পরলো সে।ঘুরে এসে আমার পেছনের থেকে হাতের আঙুলগুলো কলমে বাঁধিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো।আমি ব্যাথা পেয়ে উহু বলে উঠলাম। আমার মুখটা চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলল,

—“লেখাপড়ায় মন নেই? ডাক্তার হওয়া এতো সোজা? আগের সেমিস্টারে টেনেটুনে পাশ করেছিলি।এখন কোনো ফাঁকি বাজি চলবে না।নূরও নেই। দরকার পড়লে সারা রাত তোকে আমি পরাবো।নে খাতা বের কর।আর যা বলি তাই নোট কর।”

আমার এখন কান্না পাচ্ছে খুব।এতো নিষ্ঠুর কেন এই মানুষটা? আমি পড়বো না তাও পড়াবে।বাইরে সবাই কত্ত আড্ডা দিচ্ছে।কত্ত মজা করছে।আর এই মানুষটা আমাকে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছে।এগুলো বই? মনে তো হচ্ছে এক একটা পাহাড়। যা আমার মাথার উপর ভেঙে ভেঙে পরছে।

আমাকে পিঠে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,

—“এখনো বসে আছিস তুই?”

আমি ভয়ে ভয়ে খাতা খুললাম। তারপর যেটা দেখলাম সেটা দেখে আমার হিচকি উঠতে লাগলো।খাতাটা বন্ধ করতে গেলাম আমি।আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো সে।এক টানে খাতাটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো।মনে মনে বলছি আজ আমি শেষ।কে করলো এমন একটা কাজ?

হৃদ ভাইয়া আমার হাত ধরে জোরে টেনে দাড় করালো।আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কাগজটা সামনে ধরে বলল,

—“কি এসব?”

হৃদ ভাইয়ার চোখদুটো রাগে গজগজ করছে।ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।কিভাবে বাঁচবো আজ? আমি আমতা আমতা করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—“কি এসব?”

আমাকে এক ধাক্কায় টেবিলের উপরে ফেললো।দুই হাত দিয়ে কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরলো।মুখের সামনে মুখটা এনে আস্তে করে বলল,

—“তুই কি ছেলেটাকে ভালোবাসিস?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না অর্থ বোঝালাম। আমাকে আবারও প্রশ্ন করলো,

—“পরে তো বাসতে পারিস।আজ চিঠি দিয়েছে পরে অন্য কিছু দেবে।এভাবে তোর মনে জায়গা করে নেবে ছেলেটা একদিন।তুই ভালোবাসবি ওই ছেলেটাকে? বল ফুল ছেলেটার প্রতি তোর মনে কোনো ভালো লাগা কাজ করে?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে আবারও না অর্থ বোঝায়।হৃদ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা উঠিয়ে এক কোণায় গিয়ে কার সাথে যেন কথা বলতে থাকে।আমি কাগজটার দিকে তাকায়।কাগজটায় লেখা আছে,

—“প্রিয় ফুল।আমার ফুল।তোমাকে আমি যতোই দেখি ভালো লাগে।আমি জানি তোমার মনেও আমাকে নিয়ে অনুভূতি কিছু আছে।তাই তো তোমার সামনে এসে দাড়ালে আমার বুকটা ধরফর ধরফর করে।তোমাকে আমি ফুলের মতোই ভালোবাসি।তুমিও যদি আমায় ভালোবাসো তাহলে বলোনা ভালোবাসি নাহিদ।তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়তমা।”

কাগজটা যতো পরছি মেজাজটা ততোই খারাপ হচ্ছে আমার।মনে মনে বলছি,

—“নাহিদের বাচ্চা নাহিদ।একবার এখান থেকে বের হই তোর পিরিতের গুষ্টি আমি উদ্ধার করবো।”

ফোনে কথা বলার পরে হৃদ ভাইয়া আমার পাশে দাড়ালো।আমার হাতটা ধরে বললো,

—“নূরকে ফোন করেছি ও চলে আসবে। আমাদেরকেও পৌঁছাতে হবে চল।”

আমি জানতে চাইলাম,

—“কোথায় যাবো?”

আমার কোনো কথার উত্তর দিলো না।অথচ আমাকে ধমক দিয়ে নিজের সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।গাড়িতে উঠেও অনেকবার জানতে চেয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর নেই।বেশি কথা বললে চোখ রাঙানো আর ধমক তো আছেই। গাড়িটা এসে কাজি অফিসের সামনে দাড় করিয়ে বলল আমাকে নামতে।আমি কথা মতোন নামলাম। ভয় পাই বলে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না।আপুকে দেখতে পেলাম। আপুর কাছে হৃদ ভাইয়ার সামনে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না আমি।আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলে কাজি বলে উঠলো বর, কনে কোথায়? আপু আমাকে আর হৃদ ভাইয়াকে দেখিয়ে দিলো।আমি অবাক। হা হয়ে আছি।আজ আমার কেমন করে বিয়ে?

একটা কথা বলারও সুযোগ দিলো না হৃদ ভাইয়া আমাকে।যা যা বলল অক্ষরে অক্ষরে মানলাম।বিয়ে সম্পুর্ণ হলো।আপু আমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেলো।গাড়িতে বসে আছি দুজনে।হৃদ ভাইয়া হঠাৎ করে বলে উঠলো,

—“আমাদের বিয়ের কথাটা যেন বাড়িতে কেউ না জানে ফুল।তাহলে সবাই খুব কস্ট পাবে।এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত সবাইকে না জানিয়ে কাজটা যখন করেই ফেলেছি।”

এখন আমার একটু সাহস জাগলো মনে।আমি সংশয় কাটিয়ে বলে উঠলাম,

—“বিয়েটা কেন করলে তুমি?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“তোর ক্যারিয়ারের কথা ভেবে।আমি চাই না তুই নস্ট হয়ে যাস।যে কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে নিজের সময়টা নস্ট করিস।তোকে একজন বড় ডাক্তার হতে হবে।ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে।ওইসব ছেলেরা শুধু প্রেম করবে সময় কাটানোর জন্য। কাল তোকে ভালো লাগবে না অন্য কাউকে নিয়ে সময় কাটাবে।তোর এই ছোট্ট মনটা একটা বারের জন্যও ভাঙুক সেটা আমি চাই না।”

আমি বললাম,

—“কেন চাও না? কেন তোমার জীবনের সাথে আমাকে জড়ালে তুমি?”

একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

—“তোকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয় তাই।”

আমি বললাম,

—“শুধু চিন্তা হয় বলে বিয়ে করে নিলে?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“হ্যাঁ।তোর কখনো ভালোবাসতে ইচ্ছে করলে আমাকেই বাসিস।আমি কখনো তোর মন ভাঙবো না।”

আমি বললাম,

—“ভালোবাসবো তোমায়?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“বাসিস।কাউকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়েই ভাবিস।”

কথাটা বলে হৃদ ভাইয়া গাড়ির পেছনের সিট থেকে একটা বই নিজের সামনে আনলো।বইয়ের ভাজে রাখা একটা ছবিতে আলতো করে হাত বুলিয়ে ছবিটা ছিড়ে টুকরো গুলো জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরে ছুড়ে মারলো।

ছবিটা কার ছিলো? আমার দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু সাহস হয় নি ছিড়ে ফেলার আগে হাত থেকে টান দিয়ে দেখে নিতে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here