#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৬
#Mst_Liza
হৃদ ভাইয়া সারা রাত আমার রুমের সামনে বসে রয়েছে। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে ওপাশ থেকে আমার নাম ধরে ডেকেছে। আমাকে অনেকবার বলেছে একবার তাকে শুনতে।আমি শুনি নি।এপাশ থেকে কোনো শব্দ না করে আমিও দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি।মুখ টিপে কাঁদছি।খুব কাস্ট হচ্ছে আমার।এতোটা নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে পারলো আমার সাথে? আপুকে ভালোবাসতো।আপুর জন্য অনেক কেঁদেছে।এই কথাগুলো যেন মনে পরলে আমার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করছে।আপুকে বলেছে আমাকে ভুলে যাওয়ার চেস্টা করবে।এতো ভালোবাসে আপুকে যে আপুর কথায় আমাকে ভুলে যাবে?
সকাল হয়েছে। মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমার রুমের সামনে বসে আমাকে ডাকতে ডাকতে হৃদ ভাইয়া ওখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।মা জানতে চাচ্ছে হৃদ ভাইয়ার কাছে এখানে বসে কি করছে।চোখমুখ ফুলে আছে এটাও বলছে মা।আমি উঠে দরজাটা খুলে দিলাম। হৃদ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম চোখদুটো ফুলে লাল বর্ণ হয়ে আছে।আমি মাকে বললাম,
—“ঘুম থেকে মাত্র উঠেছে তাই হয়তো চোখমুখের ওই অবস্থা। ওদিকে খেয়াল দিও না। যেই ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে বাবা-মাকে পাঠিয়েছিলো তার কি খবর? তাকে বলো যতদ্রুত সম্ভব আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে।এবাড়িতে আমার আর এক মুহূর্তও ভালো লাগছে না।আমি কলেজের হোস্টেল চলে যাচ্ছি।যখন বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হবে আমাকে জানিয়ে দিও চলে আসবো।”
কথাগুলো বলে দরজাটা আমি ভেতর থেকে আবার বন্ধ করে দিলাম।মায়ের মনে সন্দেহ জাগলো।হৃদ ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই হৃদ ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো।নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম আমি। মিনি, নিশিকে সব বলে রাখলাম। ওদের সাথে আজ থেকে হোস্টেলে থাকবো আমি।
_____________
_______
হৃদ ভাইয়ার ক্লাস চলছে।প্রিয়া ঠিক সামনের বেঞ্চটাতে বসেছে।পাশ থেকে প্রিয়ার গ্যাং এর মধ্যে একজন বলে উঠল আজ প্রিয়ার জন্মদিন। যদি হৃদ ভাইয়া অনুমতি দেয় তাহলে আজ ক্লাসটা না করে ওরা সেলিব্রেট করবে।হৃদ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে ওদের সেলিব্রিট করতে বলে ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।প্রিয়া হৃদ ভাইয়ার হাতটা ধরে বসলো।মুহূর্তের মধ্যে পুরো ক্লাসে হৈ-হুল্লোর শুরু হয়ে গেলো।মিউজিক বাজলে প্রত্যেকে কাউকে নিয়ে ড্যান্স করতে লাগলো।মিনি, নিশিও জয়িন করলো এই সেলিব্রেটে।আমি লাস্ট বেঞ্চে বসে খেয়াল করলাম প্রিয়া হৃদ ভাইয়াকে টেনে টেনে ড্যান্স করার চেষ্টা করছে।নিজের কোমরে হৃদ ভাইয়ার হাত গুজে দিচ্ছে।হৃদ ভাইয়া ছেড়ে দেওয়ার পরও জোর করে হৃদ ভাইয়াকে জড়িয়ে কাছে ঘেঁষতে চাইছে।আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। একমাত্র আমি এইখানে বসে সবটা দেখছি।নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছি না এসব।উঠে এসে মিউজিক অফ করে দিলাম। সকলে ড্যান্স করতে করতে থেমে গেলো।প্রিয়া এখনো হৃদ ভাইয়াকে শক্ত করে ধরে আছে।এগিয়ে এসে প্রিয়াকে আমি এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিলাম। আঙুল উঁচিয়ে চিৎকার করে বললাম প্রিয়াকে,
—“স্যারকে স্যারের চোখে দেখও।ভদ্রতা সাপেক্ষে দুরত্ব বজায় রাখও।তোমার জন্মদিন।বন্ধুদের নিয়ে ইনজয় করও। উনাকে কেন টানছো? উনি কি তোমার ফ্রেন্ড না বফ হয় যে উনাকে নিয়ে তোমার ড্যান্স করতে হবে?”
আমি চুপ হলে প্রিয়া উঠে এসে খুব জোরে আমাকে একটা চড় মারলো।আমি গালে হাত রাখলাম।প্রিয়া বলল,
—“তোর সাহস হয় কি করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার? এই হসপিটালটা আমার বাবার।এখানে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো।দরকার পরলে হৃদ স্যারকে বিয়ে করবো।আজ আমার জন্মদিন আর তুই আমাকে ধাক্কা দিলি? তুই জানিস? আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে একটা টোকাও দেয় নি।নূর ভাবির বোন বলে এতোদিন দয়া করেছে মেঘ ভাইয়া তোকে।তবে আর না।আমাকে ধাক্কা দেওয়া? প্রিয়া চৌধুরীকে? এবার আমি শিওর মেঘ ভাইয়া আর তোকে ক্ষমা করবে না।আজই হবে এই হসপিটালে তোর শেষ দিন।তুই অপেক্ষা কর শুধু।”
আমি আমার গাল থেকে হাত নামালাম। হৃদ ভাইয়া আমার গালে প্রিয়ার হাতের ছাপ দেখতে পেলো।আর রেগে গিয়ে ঘুরে প্রিয়ার গালে একটা কষিয়ে চড় মারলো।চিৎকার করে বলল,
—“তোমার সাহস তো কম না।আমার সামনে তুমি ফুলের গালে হাত তুলেছো? তোমাকে ছোটবেলা থেকে শাসন করা হয় নি।যার জন্য এসব করছো।অহংকারী হয়েছো।তুমি কি বলবে? আমি নিজে তোমাকে মেঘের কাছে নিয়ে যাচ্ছি চলো।”
হৃদ ভাইয়া এক হাতে শক্ত করে প্রিয়ার হাতটা ধরলো।আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“প্লিজ এখন একটাবারের জন্য আমার সঙ্গে আয়।”
বলে প্রিয়াকে নিয়ে মেঘ স্যারের চেম্বারের দিকে আগালো।আমিও আসলাম পেছনে।প্রিয়াকে যেভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে হসপিটালের সকলে হৃদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদ ভাইয়া আর প্রিয়া অনেকক্ষন হয়েছে মেঘ স্যারের চেম্বারে ঢুকেছে। কিন্তু কি কথা হচ্ছে বাইরে থেকে জানা যাচ্ছে না।হসপিটালের সকল স্টাফ আর ডাক্তার নার্স মেঘ স্যারের চেম্বারের সামনে ভীর করে দাড়িয়ে আছে।আপু খবর পেয়ে নিজের চেম্বার থেকে ছুটে আসলো।আর ভীর ঠেলে মেঘ স্যারের চেম্বারের ভেতরে গেলো।ভেতরে কি হচ্ছে দেখার জন্য আমি একটু এগিয়ে আসলাম।আমাকে দেখে আপু দরজাটা বন্ধ করতে আসলো।হৃদ ভাইয়া আমি এসেছি বুঝতে পেরে আপুকে আটকালো আর আমাকে ভেতরে আসতে বললো।আমি ভেতরে আসলে আমার হাতটা ধরে আপু আর মেঘ স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“ফুলকে আমি বিয়ে করেছি ছাড়ার জন্য না।হারিয়ে ফেলার ভয়ে।আমি একবার নিজের ভালোবাসাকে হারিয়েছি। সে যাকে ভালোবাসে তার হতে তুলে দিয়েছে।এখন আমার মনে শুধুই ফুল।ফুলের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে বলেছিলাম ভেবে দেখবো।কিন্তু আমি একটা দিনও ওর থেকে দূরে থাকতে পারি নি।ওকে ছাড়া থাকা আমার জন্য খুব কস্টের।ফ্রেন্ড হিসেবে একবার আমি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।তোদের হাসিমুখে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেঘ তোর এই বদমেজাজি আর অহংকারী বোনের সক পালন করতে নূরকে দিয়ে আমার কাছে এমন কোনো আবদার পাঠাস না যেটা আমি করতে পারবো না।কারণ আমার দূর্বলতা এখন শুধুই আমার স্ত্রী ফুলের প্রতি।নূরের আবদারের চেয়ে ফুলের একটুখানি হাসির মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। তোদের যা করার করতে পারিস।ফুলকে আমি ছাড়বো না।সবাইকে জানিয়ে আবার ওকে আমি বিয়ে করবো।”
কথাটা বলে হৃদ ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।এতোক্ষণে আমি সবটা বুঝতে পারলাম। এতো ভালোবাসে এই মানুষটা আমাকে।এতো চাই আমায়।আর আমি কিনা কত কস্ট দিলাম।কাল রাতে একটু ছুঁতেও দিলাম না।সারা রাত আমার রুমের বাইরে বসে ছিলো।কেন করলাম এমনটা আমি? কেন একবার শুনলাম না কি বলতে চাচ্ছিলো? আমাকে কথা বলতে হবে।ক্ষমা চাইতে হবে।বলতে হবে আমিও কস্ট পেয়েছি।আমিও তোমাকে ভালোবাসি হৃদ ভাইয়া।
এক মুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে ছুটে হৃদ ভাইয়ার চেম্বারে আসলাম। ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। শব্দ পেয়ে মাথাটা তুললো হৃদ ভাইয়া।আমাকে দেখতে পেয়ে দাড়িয়ে পরল।আমি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।হৃদ ভাইয়া কেঁদে উঠে বলল,
—“আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।আমার জন্য তোকে প্রিয়ার চড় খেতে হলো।”
আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
—“তুমি কেন ক্ষমা চাইছো? সব দোষ আমার।আমি তোমার কোন কথা শুনি নি।আমি ভুল করেছি হৃদ ভাইয়া।খুব কস্ট হচ্ছে আমার।প্লিজ আমায় জড়িয়ে ধরো।”
হৃদ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলে বাইরে থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসলো।নূর আপু আর মেঘ স্যারের কন্ঠস্বর।হৃদ ভাইয়া আর আমি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকালাম।ভাবলাম কি হলো বাইরে?
চলবে,,