এবং তুমি, পর্ব:১৭+১৮

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ১৭

” রিয়াজ রাজ চৌধুরী এবং রিপন রাজ চৌধুরীর গোপন কুকীর্তি ফাঁস। তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে, জনাব রিয়াজ নিজের মামাতো বোন মাধবি নামের মেয়েকে জোরপূ্র্বক ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনায় তার বাবাও শামিল ছিলেন। বিস্তারিত, ৪ পৃষ্টা কলাম ৫।”

পৃষ্ঠা-৪

|কলাম ৫|

মিস মাধবি, একজন সাধারণ নারী। ছোট বয়সে উনার মা চলে যান। এরপর থেকে ছোট বোনকে নিয়ে বাবার সাথেই তার বসবাস। স্কুল-কলেজের ছুটির দিনে তিনি প্রায়ই ফুফুর বাড়ীতে যেতেন। এমনই এক ছুটির দিনে তিনি যখন গেলেন, তখন তার ফুফা-ফুফু বাড়ীতে ছিলেন না। ছিলো শুধু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রিপন রাজ চৌধুরীর ছেলে রিয়াজ রাজ চৌধুরী। অর্থাৎ উনার ফুফাতো ভাই। এ বিষয়ের পুরো ফায়দা লুটে নেন মিস্টার রিয়াজ। তিনি জঘন্য ফন্দি এঁটে মিস মাধবির বস্ত্রবিহীন ভিডিও ধারন করেন। এবং এ ভিডিও’র হুমকি দিয়ে তার সাথে শারিরীক সম্পর্কে পর্যন্ত লিপ্ত হোন। মিস মাধবি এ বিষয়ে কাউকে জানাতে পারেন নি ভিডিও ফাঁশ হবার ভয়ে। সেই ঘটনার পর টানা কয়েক বছর তাকে এভাবেই শাসিয়ে রাখা হয়েছিলো। একদিন রিয়াজের মা অর্থাৎ মিস মাধবির ফুফুকে এ বিষয়ে মিস মাধবি জানিয়েয়ে দিয়েছিলেন। অতি মাত্রায় ডিপ্রেশনে এসে তিনি হাল ছেড়েই কথাটি জানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখন এ বিষয়টি রিপন রাজ চৌধুরীর কর্ণগোচর হয়। তিনি এ বিষয় শোনার পর-মুহূর্তেই মিস মাধবিকে হুমকি-ধমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন। এমনকি তার ফুফুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেন। ফলে আবারো চুপ হয়ে যান মিস মাধবি।
মিস মাধবির সাথে সেই সময় চুক্তি হয় যে, তিনি এ বিষয়ে যাতে কাউকে না জানান।তাহলে তার ভিডিও ডিলেট করা হবে এবং ফুফুর সংসার বেঁচে যাবে। কিন্তু এমন টা হয় নি। মিস মাধবির বিয়ের দিন পুনরায় মিস্টার রিয়াজ তাকে ব্ল্যাকমেইল করলেন। এবং ভিডিওর কথা বলে তাকে আবারো তাদের কাছে নিয়ে যান। বাধ্য হয়েই বিয়ের আসর ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। এমন কয়েকদিন কেটে যাবার পরপরই মিস মাধবি তার না হওয়া স্বামী অর্থাৎ ছোট বোনের স্বামীর সাহায্য নিয়ে আজ ২৬ শে এপ্রিল তিনি মুক্ত হোন। এবং পর্যাপ্ত প্রমানের মাধ্যমে রিয়াজ রাজ চৌধুরী এবং রিপন রাজ চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। এ ঘটনার ম……

আর পড়তে পারলাম না। হাত থেকে পত্রিকা টা পড়ে গেলো। আপার সাথে এতকিছু হয়ে গিয়েছে আর আমি এসবের কিছুই জানি না। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আপার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ততক্ষণে আপার চোখ দিয়ে তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। আওয়াজ তুলে কাঁদছেন। জীর্ণ, রোগা পাতলা শরীর। যেনো আপার সাথে ঘটিত তুমুল অত্যাচারের জলজ্যান্ত প্রতিচ্ছবি। আমার শরীর কাঁপতে লাগলো। ঠিকঠাক দাড়াতে পারছিলাম না। কান্নাভেজা কন্ঠে বললাম,

—এসব সত্যি আপা?

আপা মাথা নাড়লেন। সাথে সাথেই কেঁদে দিলাম। একদম বাচ্চাদের মতো। আপাকে জড়িয়ে ধরতেই যেনো কান্নার গতি হুরহুর করে তীব্র হয়ে উঠলো। হৃদপিন্ড বিষাক্ত সাপের ছোবলের ন্যায় ব্যাথা হচ্ছিলো। কাঁদতে কাঁদতে আমার হেচকি উঠে গেলো। নাক টেনে বললাম,

—-তুমি আমাকে বলো নি কেনো আপা? ওই কুকুর টা তোমার সাথে এত দিন থেকে এত কিছু করে আসছে আর তুমি আমাকে একটা কথাও বলো নি। তুমি খুব খারাপ,আপা! খুব খারাপ। আই হেইট ইউ।

আপা কাঁদছেন। আমি আবারো বললাম,

—এমন তো কথা ছিলো না আপা। মা চলে যাবার পর থেকে কিন্তু আমরা সব শেয়ার করতাম। তুমি হুট করে বদলে যাবার পরেও আমি তোমাকে সব বলতাম। অথচ তুমি আমাকে বলতে পারলে না। আমি কত কাঁদতাম যে আপা তুমি কেনো বদলে গেছো? কেনো একা একা থাকো, তুমি কিছুই বলতে না। উল্টো আমাকে বকা দিয়ে বের করে দিতে। তুমি তো জানতে আমি একা ঘুমুতে পারতাম না। তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম হতো না। অথচ তুমি কি করলে, আমাকে আলাদা বিছানা দিয়ে দিলে। সারা রাত জেগে কেঁদেও তোমার মন গলাতে পারি নি। জানো,আমি সারাক্ষণ ভাবতাম, কি এমন ভুল করেছি যে আপা এমন বদলে গেছে,কেনো আমার থেকে দূরে থাকছে। সবসময় নিজেকে দোষারোপ করে কষ্ট পেতাম। অথচ আমি জানতাম ই না তখন আমার থেকে দ্বিগুন কষ্ট তোমার হচ্ছিলো। আমাকে কেনো বললে না আপা।

আপা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

—কীভাবে বলতাম? আমার নিজের ই যে ঘেন্না হতো আমার শরীরের প্রতি। তুই যে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতি। আমি কীভাবে পারতাম তোকে আমার এই নষ্ট শরীর স্পর্শ করতে দিতে। আমি কখনো চাইতাম না তোর আশেপাশেও আমার নষ্ট শরীরের ছায়া পড়ুক। তাই সবসময় তোকে দূরে দূরে রেখে আগলে ছিলাম। আমিই কোনোদিন তোকে ফুফুর বাড়ীতে যেতে দেই নি। সবার কান ভরিয়ে দিতাম তোর নামে উল্টাপাল্টা কথা বলে। যাতে কেউ তোকে কোথাও না নিয়ে যেতে পারে। জানি তুই সেজন্য কাঁদতি। তবুও আমি শক্ত ছিলাম। কারণ ওই নরক যন্ত্রণা থেকে এই সামান্য কষ্ট ঢের ভালো ছিলো। তোর আমার উপর খুব অভিমান জমে গেছে না রে? আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি খুব খারাপ বোন। খুব খারাপ। আমার মতো কোনো বোন যাতে কোনোদিন কারো না হয়।

আপা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছিলেন না।বারবার তার গলায় আটকে যাচ্ছিলো। আমি তখন শব্দ করে কাঁদছি। আমার মনের দীর্ঘ অভিমান আর রাগ যেনো ধুয়ে মুছে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। কথা তো বলছিলাম কিন্তু শব্দ হচ্ছিলো না। গলা বোধ হয় ভেঙ্গে গিয়েছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে আপাকে বললাম,

—খবরদার এমন কথা আরেকবার বলো তো। তুমি সবচেয়ে ভালো বোন। সবচেয়ে ভালো। বেস্ট,বেস্ট,বেস্ট! তোমার মতো বোন যেনো ঘরে ঘরে থাকে। আমার মতো ভাগ্যবতী বোধহয় দ্বিতীয় টি নেই।কারণ আমি তোমার মতো বোন পেয়েছি। তোমার বোন হতে পেরেছি। তুমি হচ্ছো পৃথিবীর বেস্ট বোন।

আপা ততক্ষণে কেঁদে টেদে অস্থির। আমি আপার শরীরের সাথে একদম মিশে বললাম,

—এ শরীরের উপর যদি পৃথিবীর সব নিকৃষ্ট বস্তু আর জীবজন্তু রাখা হয় তবুও আমি নির্দ্বিধায় জড়িয়ে ধরবো। এ শরীর যদি আগুণে ধ্বংস ও হয়ে যায় তবুও আমি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো। এ শরীর যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিরি জিনিসের থেকেও বিচ্ছিরি হয়ে থাকে তবুও আমি জড়িয়ে ধরে থাকবো। খবরদার তুমি আরেকবার নিজেকে নিকৃষ্ট বলে থাকো তো!
নিকৃষ্ট ওই কুকুর রিয়াজের শরীর। নিকৃষ্ট ওই কুকুরের মন, নিকৃষ্ট ওই কুকুর।

রাগে আমার শরীর জ্বলছিলো। রিয়াজ ভাইকে নিশ্চই পুড়িয়ে ভষ্ম করে ফেললে রাগ টা একটু কমে টমে যেতো। লোকটার উপর ভীষণ রাগ উঠছে। যাকে বলে ভয়ংকর রাগ! আমার শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে যদি হালকা পাতলা একটা চড়ও দিতে পারতাম তাহলে একটু শান্তি মিলতো। বেয়াদপ টা ব্যাথা না পেলেও কিন্ত আমি আরাম পেতাম। স্বস্তি বোধ করতাম। আচ্ছা আমার কি এখন মারা উচিত? হু,একদম। আরেকবার যদি তাকে দেখি তাহলে ঠাডায় চড় দিবো। দরকার পড়লে স্যান্ডেল দিয়েও মারবো। আমার বাদামি রঙের জুতো জোড়া দিয়ে। ওটা পরলে ঠকঠক আওয়াজ হয়। এটা দিয়ে মারলে নিশ্চই জোরে লাগবে, আর বেশি ব্যাথাও পাবে।

কান্নাকাটির এক পর্যায়ে আপা বললেন,

—তুই তখন কি বলেছিলি? কিসের সম্পর্ক? তোর বোধহয় কোথায় ভুল হয়েছে, আ….

আপা বলতে চাইলো ইশান স্যারকে কীভাবে চিঠির মাধ্যম দিয়ে যোগাযোগ করে নিস্তার পেয়েছিলেন। কিন্তু আমি শুনতে চাইলাম না। মনে মনে তখন বিশাল অপরাধবোধ হচ্ছিলো। ছিঃ,আমার মেন্টালিটি এত খারাপ? সত্যিই খুব খারাপ। যা নয় তা বলে ফেলেছিলাম। কত আজেবাজে চিন্তা করে ফেলেছিলাম। এর জন্য নিশ্চই আমার শাস্তি পাওয়া উচিত! কঠিন শাস্তি। ইশান স্যার তো খুব ভালো একজন মানুষ। তার সম্পর্কে এত নিচু মানসিকতা রাখা রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি না জানি আমার সম্পর্কে কী ভাবছেন? উনার কথা মনে পড়তেই তাকে খুঁজতে লাগলাম। তিনি তখন জানালার পাশে দাড়িয়ে আছেন। তার মুখের উপর ধূসর রঙের ধোঁয়া উড়ছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম সিগারেটের ধোয়া। ইশান স্যার সিগারেট খান? কিন্তু কবে থেকে? আমি তো তাকে খেতে দেখি নি। নাকি আমার সামনে খান ই নি। উদ্ভট চিন্তার মাঝেই ইশান এসে বললেন,

—আপু, আপনার বাবাকে ফোন দেওয়া হয়েছে। তিনি হয়তো ঘন্টাখানেকের মধ্যেই চলে আসবেন।

আপু মাথা নাড়ালেন। আমি তখন ইশানকে সরি বলতে চাইলাম, কিন্তু বলা হলো না। ইশান আমাকে কথা বলতে না দিয়ে পুনরায় আপাকে বললেন,

—আপু, আপনার বোনের সাথে আমার খুব জরুরী কাজ আছে। তাই আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি প্লিজ এদিক টা একটু সামলে নিন। সাংবাদিকদের বলবেন, আমি কাল বাকি ইন্টারভিউ দিবো। আজ যেনো আমাকে খোঁজ না করা হয়, প্লিজ। আমি জানি এই মুহূর্তে আপনার বোনকে আপনার দরকার। কিন্তু তার থেকেও বেশি আমার প্রয়োজন। আপনি চিন্তা করবেন না, আমার কাজ হয়ে গেলে সরাসরি তাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিবো। প্লিজ একটু হ্যান্ডেল করে নিন।

আপা মাথা নাড়তে দেরী হলো ইশান স্যার আমাকে টেনে নিয়ে যেতে দেরী হলো না। আমি বললাম,
-‘কই নিয়ে যাচ্ছেন? আমি এখন কোথাও যাবো না। দেখুন আমার মন-মানসিকতা এখন ঠিক নেই। আমি আপার কাছে যাবো।’

ইশান স্যার কঠিন ধমক দিয়ে বললেন,-‘মন-মানসিকতা আমার ঠিক নেই। তুমি যদি এই মুহূর্তে চুপ না থাকো তাহলে আই সোয়ার আমি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবো। ‘
কথাটা শেষ করেই তিনি তার ফোন আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন। একটু বেসামাল হলে এতক্ষণে এটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতো। আমি রাগ দেখিয়ে স্মার্ট ফোনটার দিকে তাকালাম। যখন তাকালাম তখন ই বোধহয় আমার হুশ চলে গেলো। শরীরের সব শক্তি উড়ে গিয়েছিলো। বিষ্ময়ে আমার চোখদুটো বড় হয়ে গেলো। হাত-পা অটোমেটিক থেমে এলো। আমি মুখে হাত দিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আমার বাক-শক্তি হারিয়ে গিয়েছিলো। মুখ দিয়ে শব্দ ই বের হচ্ছিলো না।

#চলবে…..

®সোনালী আহমেদ

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ১৮

আমি রাগ দেখিয়ে স্মার্ট ফোনটার দিকে তাকালাম। যখন তাকালাম তখন ই বোধহয় আমার হুশ চলে গেলো। শরীরের সব শক্তি উড়ে গিয়েছিলো। বিষ্ময়ে আমার চোখদুটো বড় হয়ে গেলো। হাত-পা অটোমেটিক থেমে এলো। আমি মুখে হাত দিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আমার বাক-শক্তি হারিয়ে গিয়েছিলো। মুখ দিয়ে শব্দ ই বের হচ্ছিলো না।

—-এ্ এটা তো…

ইশান আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,

—-হু,তুমি।

স্ক্রিনের উপর ভাসমান ফটোর দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না। শরীর ঝিমিয়ে উঠলো। এটা কোনো স্বাভাবিক ছবি নয়, খুবই এলোমেলো ছবি। ছিঃ,এত বাজে ছবি কীভাবে ইশানের ফোনে? আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। তৎক্ষণাৎ ডিলেট করে দিলাম। ইশান হাসলেন। হেসে বললেন,

—ডিলেট করে লাভ নেই। আমার কাছে আরো অনেক অনেক কপি আছে।

—ছিঃ!

ইশান গাড়ী স্টেয়ারিং এর উপর হাত রেখে বললেন,

—-এত ছিঃ,ছিঃ করছো কেনো? লুক এট ইট, হোয়াট এ পিকচার ম্যান। আই জাস্ট লাভ ইট।
ওয়েট,জুম করে দেখাই…

আমি ফোন টা শক্ত করে চেপে রইলাম। বিষ্ময়ে বোধহয় মরে টরে যাবো। এ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড তো ইশানের বিছানার। অর্থাৎ আমার শশুড়বাড়ীর। কিন্তু আমি তো কখনো এমন ছবি তুলি না। অর্থাৎ ইশান তুলেছেন? কিন্তু কবে?কখন?কীভাবে?

ইশান ফোনটা টেনে নিতে চাইলেন। আমি শক্ত করে ধরে রাখলাম। কঠিন গলায় বললাম,

—আপনি এ ছবি কই পেলেন?

—কই পাবো মানে? আমার বউ এর নগ্ন ছবি অন্যকেউ দিবে কীভাবে? হাউ? অভিয়েসলি আমি তুলেছি… ইউ নো হোয়াট, এর বড় একটা ফটোকপি ও করিয়েছি। আমি তো ছবি-টবি আঁকতে পারি না তাই। উহু,টেনশন নট, আমার নিজের প্রিন্টিং মেশিনে, আমি নিজে প্রিন্ট করেছি।

আমি শক্ত গলায় বললাম,

—-আর কি করেছেন?

—-ছুঁয়েছি.. কিস করেছি। কতটা জানো? তুমি তো জানবে না,আমি বলছি..তুমি আমার কন্ঠনালিতে যতটা চুমু দিয়েছো তার ৪গুণ যোগ ২। কতটা হয়েছে বলো তো? অংকের হিসাব বুঝো তো? বুঝবে না কেনো, তুমি তো গণিতের বেস্ট স্টুডেন্ট। যাও,তবুও বলে দিচ্ছি, ৩০ টা। তুমি তো বলো আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখি নি।অথচ দেখো আমি ৩০ টা চুমু খেয়েছি।

—এসব কবে হয়েছে?

—তুমি বোধ হয় ভালো করে ছবিগুলো দেখো নি। দেখলেই বুঝতে কোনদিনের ছবি। দেখছো না বিছানা ভিজে আছে। সেদিন তো জামা-কাপড় না বদলে শুয়েছিলে। তাই আমি বদলে দিয়েছিলাম। তুমি আবার অজ্ঞান-টজ্ঞান ছিলে না, আমিই ইচ্ছে করে তোমায় ডাকি নি। কঠিন সাবধানতার সাথে করেছি। যাতে তুমি জেগে না যাও।

—আমি কেনো বুঝি নি?

ইশান আমার খুব কাছে এসে বললো,

— তুমি তো এগুলো বুঝবে না। বুঝবে কীভাবে আমাকে ছেড়ে দেওয়া যায়।

আমার শরীর অস্বাভাবিক কাঁপছে। যে কেউ দেখলে বলবে, রাবার স্প্রিং! ইশানের এত কাছে আসা আমার সহ্য হচ্ছে না। দম আটকে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা ও যেসব বলেছে তা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা নিশ্চই দুঃস্বপ্ন। হ্যা,মানছি আমার ঘুম ভারী। তাই বলে কেউ একজন আমার সাথে এতকিছু করে ফেলবে আমি বুঝি টেরও পাবো না? কিন্তু সে রাতের কিছু স্মৃতি বলছে সত্যও হতে পারে। কেননা ঘুমের মধ্যে একবার চোখে মেলেছিলাম, তখন ইশান আমার গালে চুমু দিচ্ছিলেন। আমি স্বপ্ন ভেবে আবারো চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম। কারণ আমার ধারনা ইশান কোনোদিন আমার এত কাছে আসবে না। যেখানে আমি নিজ থেকে গিয়েছিলাম ওর কাছে। সেখানে এটা নিচক একটি দুঃস্বপ্নই?
কিছুই ভাবতে পারছি না। মাথা ধরে যাচ্ছে। আজ কি কোনো চমকে যাবার দিন?এত চমকপ্রবণ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ভাবনা চিন্তার মাঝেই ইশান সরে গেলেন। পুনরায় গাড়ী টা চালু দিলেন। সাই সাই গতিতে গাড়ী সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ততক্ষণে আমার মাথায় চিন্তার আস্ত এক পাহাড় গড়ে উঠছিলো। আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,

—আপনি কেনো এমন করেছিলেন?

ইশান গাড়ী চালানো বহাল রেখেই বললেন,

— কোনটা? তোমাকে ছুঁয়ে…

—বারবার উচ্চারণ করা কী জরুরী?

— জরুরী নয় মানে? আলবাত জরুরী। আমার জীবনের বেস্ট একটা মোমেন্ট। বলবো না?আর তাছাড়া আমি তো তোমার মতো সবার সামনে খুল্লাম-খুল্লি আমাদের ভেতরের বিষয়গুলো ডিসকাস করছি না। জাস্ট তোমাকেই বলছি..

— আপনি কি ওখানের বিষয়গুলোর জন্য এভাবে কথাবার্তা বলছেন? তাহলে আমি দদুঃখিত। আসলে আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না। নাফিয়া আপা আপনাদের দুজনকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছিলো, আর তখন আশেপাশে এত মানুষ ছিলো যে আমি ভুল….

ইশান গাড়ী থামিয়ে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন,

— সিরিয়াসলি? জাস্ট মিষ্টি খেতে দেখে তুমি ভুলভাল ধারনা করে নিয়েছো। সাথে সবার সামনে আমাদের ভেতরের সম্পর্ক বর্ণনা করেছো। ডোন্ট ইউ নো,ওরা সাংবাদিক? ভালো,খুব ভালো। ওয়েট করো কাল সকালে খবরের কাগজের জন্য। দেখে নিও,কি কি লিখা থাকে। তখন প্রত্যেককে জবাবদিহি করো।

ইশান ভয়ংকর রেগে গেলেন। গাড়ীর স্পীড সাথে সাথে বেড়ে গেলো। অচেনা পথ,অচেনা স্থান পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি চুপ রইলাম। ইশান হঠাৎ ই বললেন,

— ওয়েট,ওয়েট…. আমি তোমার বোনের সাথে এমন কিছু করে ফেললেও তো তোমার সমস্যা হবার কথা নয়। তুমি কেনো রেগে গেলে? তুমি তো আমাকে ডিবোর্স দিবে তাই না? তাহলে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি বা না করি তাতে তোমার কি? তোমার মাথা কেনো খারাপ হবে? হোয়াই?

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। যাকে বলে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যাওয়া। ইশান তো জানেন আমার ফিলিংস। আমি কি করেছি না করেছি সব তো জানেন। ইনফ্যাক্ট তিনি নিজেই তো এসব বলে আমাকে লজ্জা দিয়েছিলেন। তিনি কি বুঝতে পারছেন না আমি উনার প্রতি দূর্বল।ভীষণ দূর্বল! নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। যাতে আমি নিজ থেকে বলি। আমি কথা ঘুরিয়ে নিলাম। উল্টো জোর দিয়ে বললাম,

—আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন। আমি প্রথমে প্রশ্ন করেছি। আগে সেটার উত্তর দিন।

—-কে কথা ঘুরাচ্ছে? আমি না তুমি?

—অভিয়েসলি আপনি। কারণ আমি আপনাকে প্রথমে বলতে বলেছি। এবার না ঘুরিয়ে বলে ফেলুন। কেনো করেছিলেন?

ইশান গাড়ী টা থামিয়ে দিলেন। বললেন,

—ওকে,ফাইন। আমি বলছি,- কজ ইউ আর মাই ওয়াইফ। আমি তোমার সাথে সব করতে পারি। সব মানে সব। এ টু জেড। আন্সার পেয়েছো? এবার তুমি বলো…

আমিও রেগে বললাম,

— আমার উত্তরটাও সেইম। আপনি আমার স্বামী। তাই আমি এত রিয়েক্ট করেছি।মানছি ডিবোর্স হবার কথা, কিন্তু এখনো তো হয় নি। তাই না।

ইশান সরে বসলেন। ক্লান্ত, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। যার আওয়াজ আমার কান পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। নিরবে কয়েক সেকেন্ড মৌনতা পালন করলেন।তারপর, আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

— তুমিও জানো,আমিও জানি কেনো তোমার এত ওভার রিয়েকশন ছিলো। তুমি আমাকে পছন্দ করো, হয়তো ভালোওবাসো। আমাকে নিয়ে তোমার পজেসিভনেস কিন্তু সেটাই বলছে। আমি জানি না কেনো তুমি আমাকে ছেড়ে দিতে চাইছো। কেনো আমাদের সম্পর্ক টা শেষ করতে চেয়েছো। কিন্তু এর কারণ যদি আমার মেনে না নেওয়া বা তোমার বোন হয়ে থাকে। তাহলে আমি বলবো প্লিজ,আমাকে একটা চান্স দাও। লাস্ট চান্স। মাধবি আপার সাথে যে আমার কিছু ছিলো না তা নিশ্চই তোমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। আর রইলো তোমাকে মেনে না নেওয়া? আচ্ছা,তুমিই বলো,আমার পরিস্থিতিতে তুমি থাকলে কি প্রথমেই সব মেনে নিতে? নিশ্চই না। তাহলে আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া ই যায় তাই না? দিবে কি লাস্ট একটা সুযোগ? ডিবোর্স কিন্তু সবকিছুর সমাধান নয়। তুমি চাইলেই সব ঠিক হতে পারে। প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও। কথা দিলাম, আমি সব ঠিক করে ফেলবো।

#চলবে…….

®সোনালী আহমেদ

ছবি-কালেক্টেড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here