এবং তুমি, পর্ব:২১+২২+২৩+২৪+২৫+শেষ

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২১

অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে নতুন চমক দেখবো আশা ই করি নি। ইশান অস্থির হয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো। চারদিকে তখন চলছে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। নার্স, ডাক্তার আর দু-তিনজন রোগী ব্যাতীত আর কেউ নেই। অথচ অন্যন্যা দিন হাট-বাজারের মতো মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। ইশানের কান্নামাখা মুখ দেখে ডাক্তার নিধি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। ধবধবে সাদা গোল বর্ণের মেয়েটি যে ডক্টর নিধি সেটা তার এ্যাপ্রনের উপরের ব্যাজ দেখে চিনতে পেরেছিলাম আমি। ইশান ফোনে ডক্টর নিধিকে যা বলেছিলো তখন তা স্পষ্ট বাজতে লাগলো আমার কানে। ডক্টর নিধির অস্বাভাবিক চাহনী আমার ভেতর নাড়া দিয়ে উঠলো। আজেবাজে চিন্তা মাথায় ভর করলো। মেয়েটির চেহারা এত সুন্দর দেখে আমার মনে হলো আমি বোধহয় হাজারো মানুষের মধ্যে এক পলকে তাকে চিনে ফেলবো। ইশান কেঁদে কেঁদে বললেন,

—ন্ নিধি নিধি…ওকে ওকে বাঁচাও।

ইশান অস্বাভাবিক কাঁপছিলেন। তার কন্ঠনালি দিয়ে স্বর ই বের হচ্ছিলো না। বারবার আটকে যাচ্ছিলো। আমি তখন পেটে হাত রেখে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টায় ছিলাম। ডক্টর নিধি ইশানকে বললো,

—রিলেক্স, ইশান। রিলেক্স প্লিজ। তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেনো? আর এভাবে কাঁদছো কেনো? হু ইজ সি? হোয়াই আর ইউ ক্রাইয়িং?

ইশান কোনোরকম নিঃশ্বাস টেনে বললেন,

— সি, সি ইজ মাই ওয়াইফ। প্লিজ, হেল্প মি। ডাক্তার ডাক্তার, ডাক্তার…

ইশান চিৎকার চেঁচামেচি করে ডাক্তার ডাকছিলেন। আমি তখন স্পষ্ট দেখেছিলাম নিধি মেয়েটা কেমন ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। সে একফোঁটাও নড়ছিলো না। কেমন পাথর পাথর! ওর দৃষ্টি বলছিলো, ওর মাথায় বোধহয় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। সে শক্ত গলায় বলেছিলো,

—তুমি বিয়ে করেছো?

ইশান বললেন,

—এখন কথা বলার সময়? ডোন্ট ইউ সি সামওয়ান ইজ গেটিং ডাই….আর ইউ ম্যাড? ড্যাম ইট!

ইশান ভয়ংকরভাবে ধমক দিলেন। নিধি মেয়েটা কেঁপে উঠলো। ডাক্তার -নার্সরা ঝড়ের বেগে ছুটে আসলো। আমি অবাক হলাম। ওরা নিশ্চই পূর্ব পরিচিত। ওদের কি কোনো সম্পর্ক ছিলো? মরতে বসেছিলাম আমি। আমার সেদিকে খেয়াল ছিলো না। আমি নিধি আর ইশানকে সন্দেহ করছিলাম। ইশান খুব খারাপ শব্দে ডাক্তারদের গালি দিলেন। হাত দিয়ে খুব জোরে পাশের পানির ফিল্টার বারি দিয়ে ফেলে দিলেন। আমি বুঝতে পারলাম ইশান খুব রেগে গিয়েছেন।

—রোগী মরে গেলে আপনাদের খবর হবে? হ্যা? কোথায় থাকেন আপনারা? কোন বালের ডাক্তার?

—কাম ডাউন এন্ড বিহেভ ওয়েল উইথ আস। এটা হাসপাতাল, চিৎকার চেঁচামেচির জায়গা নয়।

— তাতে আমার বাল চেঁড়া গেছে। কিসের হাসপাতাল? ওই কিসের হাসপাতল?রোগী মরে যাচ্ছে ডাক্তার কেবিন আটকে নতুন জামাই সেজে বসে আছে। অ

ঠিক তখনই আমি ইশান বলে ডাক দিলাম। সে খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো। উনাকে থামানো জরুরী হয়ে পড়েছিলো। ইশান সেখানেই থেমে গেলেন। দৌড়ে আমার কাছে আসলেন। আমি করুণ স্বরে বললাম, —প্লিজ। ইশান শান্ত হলেন।আমার কপালে চুমু দিয়ে ডাক্তারের কাছে ফিরে গেলো। সে এবার মাফ চেয়ে ডাক্তারকে বললো, আমার চেক আপ এর জন্য। আমি ফিঁকরে কান্না আটকাচ্ছিলাম। ব্যাথা টা কমছিলোই না। সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরছিলো। এত কষ্ট কেনো? কেনো এত কষ্ট? হৃদস্পন্দন বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছে আমি বোধহয় মরে যাবো।

ডাক্তার আমাকে দেখে উনাকে বললেন এখনই অপারেশন করাতে হবে।কিন্তু প্রথমে নাকি ৮০ হাজার টাকা সাবমিট করতে হবে। ইশান বললো সে দিয়ে দিবে, এই মুহূর্তে তার কাছে টাকা নেই। ডক্টর বললো, ‘বাট টাকা সাবমিট না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা অপারেশন স্টার্ট করতে পারবো না।’

ইশান তেড়ে এসে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তখনই ডক্টর নিধি তাকে থামিয়ে দিলো। বললো,

—-ডক্টর আপনি পেশেন্টের অপারেশনের ব্যবস্থা করুন। টাকার বিষয় চিন্তা করবেন না। আমি সাবমিট করে দিবো। আপনি প্রস্তুতি নিন আমি রেডী হয়েই আসছি।

ইশান দাঁত চেপে বললেন,— কেমন ইউজলেস ডক্টর? ঝড়-বৃষ্টি চোখে পড়ছে না,এদের টাকা চাই। টাকা চাই।

নিধি বললো,

— কাম ডাউন। এটা আমাদের রুলস। তুমি এখানে বসো। আমরা এক্ষুনি অপারেশন স্টার্ট করছি।

আমাকে কেবিনে শিফ্ট করা হলো। ইশান তখন রিসেপশনে ফর্ম ফিলাপ করছিলো। অপারেশন শুরু হওয়ার পাঁচমিনিট পূর্বে ইশানকে আমার সাথে কথা বলতে দেওয়া হলো। ইশান আমার কপালে কিস করে বললেন,

—ভয় পেয়ো না। একদম না। আমি এখানেই আছি তো।

আমি কেঁদে দিলাম। ইশান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

— প্লিজ, কেঁদো না পাখিটা। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়। ইট’স হার্ট মি। রিয়েলি হার্টস মি। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো। আমি আছি।

শোয়া অবস্থায় আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম তাকে জড়িয়ে ধরতে। বুকটা কেমন খা খা করছে। মনে হচ্ছিলো আর কোনোদিন বোধহয় তাকে দেখতে পারবো না। ইশান ঝুঁকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তার চোখের জলে আমার চিবুক ভিজে যাচ্ছিলো। তখন প্রথমবার.. প্রথমবার সে আমায় বললো, –আই লাভ ইউ। আই রিয়েলি লাভ ইউ। আই কান্ট লিভ উইথআউট ইউ।

মুহূর্তের জন্য আমার শরীর থমকে গিয়েছিলো। অদ্ভুত শিহরণে কেঁপে উঠেছিলাম। আমার মনে হলো আমার ব্যাথা গায়েব হয়ে গিয়েছে। আমি সুস্থ -সবল মানুষ। কেউ যদি বলে আমাকে উড়ে দেখাতে, আমি বোধহয় স্বাচ্ছন্দ্যে উড়ে দেখাবো। সেই মুহূর্তে কীভাবে যেনো আমার নিধি মেয়েটার কথা মনে পড়লো। আমি বললাম,

—স্যার

—হু

—ডক্টর নিধিকে আপনি চিনেন? তাই না? উনি কে হয় আপনার? আপনাদের কোনো সম্পর্ক ছিলো তাই না?

আমি চোখ বন্ধ করে কথাটি শেষ করলাম। পরক্ষণেই জোরে জোরে শ্বাস ফেললাম। দাঁত চেপে ব্যাথাটা সহ্য করছিলাম। ইশান নিশ্চুপ ছিলো। তার বুক বোধ হয় কেঁপে উঠেছিলো। সে শান্তভঙ্গিতে আমাকে জড়িয়ে রেখে বললো,

— সি ইজ মাই এক্স।

ইশান থেমে গেলেন। তার কান্না তখনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমার বুক তখন হু হু করে কেঁদে উঠলো। কি হতো? মিথ্যা বললে? খুব বড় ক্ষতি তো হতো না। সে কেনো মিথ্যা বললো না? হোয়াই? তার উচিত ছিলো মিথ্যা বলা। সে কি বুঝে নি,আমার কষ্ট হবে। খুব কষ্ট হবে। পলকেই পৃথিবীটা নিঃশ্ব লাগতে শুরু করলো। ইশান অবশ্য তখন আমাকে জড়িয়ে নানান কথা বলছিলেন। আমি শুনছিলাম না। আমার মাথায় তখন ওদের কথাই চলছিলো। মুহূর্তেই আমার ব্যাথা থেকে ওদের বিষয়ের উপর ফোকাস চলে গেলো। আমি শান্ত হয়ে গেলাম। এত তীব্র ব্যাথায়ও উহ্ বলেও শব্দ করছিলাম না। ইশানের উপর অভিমান চলে আসলো। কঠিন অভিমান। সে তার এক্সকে দিয়ে আমার অপারেশন করাবে?তার থেকে তো ভালো আমার মরে যাওয়া।

ডক্টর নিধি পূর্ণাং প্রস্তুতি নিয়ে আমাকে ওটিতে নিলেন। কিন্তু আমি অপারেশন করতে চাইলাম না। কাঠ লাঠ গলায় বললাম,

—আমার হাসব্যান্ড আমার পাশে না থাকলে আমি অপারেশন করাবো না।

ডক্টরসরা বললেন,

–সরি,ডিয়ার! অপারেশনের সময় আমরা কাউকে এলাউ করি না।

আমি চেঁচিয়ে বললাম,

—কেনো করেন না? কেনো? বিদেশে তো হাসব্যান্ডকে পাশা রাখা হয়। আপনারা কেনো পারবেন না? আমি অপারেশন কারবো না। এক্ষুণি চলে যাবো। এক্ষুণি যাবো।

আমি ক্যানেলার খুলে ফেলার চেষ্টা করলাম। ডক্টররা আমাকে থামানোর পূর্ণ চেষ্টা করলেন। এমনকি ইনজেকশন ও দিতে চাইলেন। কিন্তু আমার জন্য হয়ে উঠলো না। শেষমেশ বাধ্য হয়েই ইশানকে নিয়ে আসতে হয়েছিলো। উহু,এত সহজে ডুকতে দেয় নি। যখন শুনলেন, আমার ডায়বেটিস ও রয়েছে এবং এর জন্য অজ্ঞান করে অপারেশন করতে পারবেন না। ঠিক তখন তারা ইশানকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন।
ইশানকে আমার পাশে বসতে দেওয়া হলো। ছোট্ট একটি টুলে। ঠিক তখন আমি মেয়েটাকে দেখিয়ে ইশানের ঠোঁটে চুমু খেলাম। শব্দ করে চুমু! আশ্চর্যজনক হলেও আমার সেই মুহূর্তে একটুও লজ্জা লাগে নি বরং জেলাস ফিল হচ্ছিলো। নার্সরা বোধহয় লজ্জা পেয়েছিলো। তারা অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে রেখেছিলো। শুধুমাত্র নিধি মেয়েটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আমাদের দিকে। আমার এ কঠিন সময়ে ইশানের আর নিধি মেয়েটার উপর রাগ উঠলো। ভীষণ রাগ। দুনিয়ায় কি ছেলের অভাব পড়েছিলো যে আমার স্বামীর সাথেই সম্পর্ক রাখতে হবে? হিংসায় আমার সারা শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো। আমার মন-মষ্তিষ্ক তখন আমায় চেঁচিয়ে বলছিলো, ‘ তুই মরতে পারিস না প্রভাতি, মরতে পারিস না। তুই চলে গেলে এই চুড়েল তোর সংসার দখল করে নিবে। দেখে নিস।’ আমি কঠিন হয়ে গেলাম। যেভাবেই হোক বাঁচতেই হবে আমাকে। অতিরিক্ত হিংসা আর রাগে আমার শরীর বাঁচার সম্পূ্র্ণ ইচ্ছা পোষণ করছিলো। আমার ইচ্ছাশক্তি পুরো দমে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলো। একবারের জন্যও হাল ছেড়ে দেই নি, সব চেষ্টা করছিলাম বেঁচে থাকার। মেয়েরা মরতে বসলেও স্বামীর পাশে অন্য মেয়ে চিন্তা করতে পারে না। কক্ষনো না। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার জন্য উঠেপড়ে লাগবে। চাইবে তার সাথে যেনো স্বামী ও মারা যাক তবুও অন্যকারো না হোক। ঠিক যেমনটা এই মুহূর্তে আমি চাইছি। আমি যদি না বাঁচি তাহলে যাতে ইশানও না বাঁচে। ডক্টর নিধি না থাকলে বোধহয় আমার চিন্তা অন্যরকম হতো। একদম অন্যরকম!

#চলবে….

®সোনালী আহমেদ

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২২

আমার অপারেশন শুরু হলো। আমি কিছু অনুভব করতে পারছিলাম না। শরীরের নিচের অংশ যেনো প্যারালাইজড। ইশান আমার হাত টি শক্ত করেই ধরেছিলেন। সে একবারও সেদিকে তাকাচ্ছিলো না। সর্বক্ষণ আমার মুখের দিকেই তাকিয়েছিলো। তার শরীর অস্বাভাবিক কাঁপছিলো। তার ব্যাথাগুলো তীব্রভাবে অনুভব করছিলাম অথচ নিজের সাথে কি হচ্ছে তা বিন্দু পরিমাণ অনুভব করতে পারি নি। ইশানের অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে একবার ভাবলাম তাকে বাহিরে চলে যেতে বলা হোক। সে কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। তার চিন্তা,কষ্ট,ব্যাথা,উদ্বিগ্নতা, অশান্তি সবকিছু আমাকে ভেতর থেকে অস্থির করে তুলছিলো। কিন্তু ঠিক যখন যখন ডাক্তার নিধি ইশানকে শান্ত্বনা দিচ্ছিলো ঠিক তখন তখন আমার অস্থিরতা চলে গিয়ে একরাশ রাগ আর হিংসা এসে ভর করতো। জিদে আমি ফুলে যেতাম। গভীর ঘুমের রেশ চোখদুটো আচ্ছন্ন হয়ে আসা স্বত্ত্বেও বড়বড় করে মেলে ধরতাম। মন এবং মষ্তিষ্কে শুধু এটাই ঘুরতো আমি চোখ বন্ধ করলেই বুঝি নিধি আমার ইশানের সাথে কিছু করে ফেলবে। ওরা একসাথে চলে আসবে। ওদের চিন্তায় আমি জোরপূর্বক চোখ খোলা রেখেছিলাম। অতিরিক্ত দূর্বলতার জন্য চোখ ঠিকঠাক মেলে ধরতে সক্ষম হচ্ছিলাম না। তবুও আমি সম্পূর্ণ চেষ্টায় শেষ অবধি চোখ খোলা রেখেছিলাম। মনে মনে শুধু এই প্রার্থনা করেছিলাম, ‘হে উপরওয়ালা, প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। আমার স্বামীকে রেখে আমি যেতে চাই না।’ যেখানে কদিন আগেও আমি মৃত্যুর জন্য উতলা ছিলাম। পরিস্থিতি মানুষকে কত বদলে দেয়। তা আমার জীবনদশা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো। খুব ভালো করেই বুঝিয়েছিলো।

জীবনটা সমুদ্রের উথালপাতাল ঢেউয়ের মতো। হুটহাট শান্ত তীরকে ডুবিয়ে দেয় বাকাত্যাড়া ঢেউয়ের মাধ্যমে। আমার জীবনের শান্ত তীরকেও ডুবিয়ে দিলো টিউমার অপারেশন। ছিনিয়ে নিলো বিশাল খুশি। যেই খুশির জন্য আমি শতশত যুগ কাটিয়ে দিতাম। গভীর দুঃখ ও মুখবুজে সহ্য করতাম। রাতদিন এক করে অপেক্ষায় থাকতাম। সে খুশি কেড়ে নেওয়া হলো। আমার এ ছোট্ট হৃদয়ে বিশাল ক্ষতের সৃষ্টি হলো। মষ্তিষ্ক সুক্ষ ব্যাথার ফোড়ন কাটলো। আমার প্রতিবিম্ব বিশ্রি হেসে আমাকে বলছিলো,’ কোনোদিন,কোনোদিন তুমি মা হতে পারবে না। পারবে না পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অমৃত পান করতে।’ একটা সাকসেসফুল অপারেশনও সেদিন আমার নিকট আনসাকসেসফুল ছিলো। প্রাণে বেঁচে গেলেও জানে বাঁচে নি। মরে গিয়েছিলো আমার অন্তরাত্মা। পঁচাগলা দুর্গন্ধও যেনো আমার নাকে বাড়ি খাচ্ছিলো। বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো চারপাশে।

হসপিটালের বেডে শান্ত জলাধারের মতো নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি। উপরওয়ালার বিশেষ রহমতে আমি বেঁচে গিয়েছি। তবে এর জন্য কম খরচা-পাতি করতে হয় নি। ঔষধপত্র, ভিজিট সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লেগে গিয়েছে। কই থেকো জোগাড় হয়েছে এসব আমার জানা নেই। ঘন্টাখানেক আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি তাও জানা নেই। চারপাশ একদম শান্ত, প্রকৃতি যেনো আজ নিরব শান্তশিষ্ট বাচ্চা। কি সুন্দর ঝলমলে রোদ আমার কেবিনের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। ঝিলিক মেরে উচ্ছ্বাস দিচ্ছে। আমার ঠিক পাশেই ইশান ঘুমিয়ে আছেন। তার এক হাত আমার অন্য হাতে মুষ্ঠীবদ্ধ। আমার মনে আছে, চোখ বন্ধ করার পূর্বে আমি বিড়বিড়িয়ে ইশানকে বলেছিলাম সে যেনো না যায়। তখন ঠিক যেভাবে তার হাত ধরে রেখেছিলাম, এখনও ঠিক সেভাবেই আছে। ইশানের বোধহয় মাত্রই চোখ লেগে এসেছিলো। কেননা তার কপাল টা বেকে রয়েছে। আমাকে ওটি থেকে কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে। আমার সামনেই রয়েছে কিছু পরিচিত মুখ। সবাই কেমন কাতর দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। শুধুমাত্র আমি ইশারায় চুপ থাকতে বলায় তারা কথা বলছেন না। এরমধ্যে আমি ইশারায় বলেওছিলাম যে আমি ঠিক আছি। আমার বাবা কাঁদছেন, আপুও কাঁদছেন। তবে এ চোখের জল দুঃখের নয় সুখের তা স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম। আমার শশুড়বাড়ীর লোকজন কেউ আসেন নি। সবাই হয়তো এখনো এসে পৌঁছাতে পারেন নি।

.

মিনিট দশেক বাধে একহাতে রিপোর্ট নিয়ে কেবিনে আসলেন ডক্টর নিধি। তার চোখদুটো ছিলো ইশানের ঘুমন্ত মুখের দিকে। আমার জ্বলে উঠলো। তেল আর বেগুন একসাথে ভাজলে যেমন জ্বলে ঠিক তেমন। ইশান এই মুহূর্তে ঘুমে না থাকলে আমি তার এক্সের সামনে চুমু খেতাম। একটা না একশ টা। তাহলে নিশ্চই এই মেয়ে আর চোখ তুলেও তাকাতো না। আমার এত কেনো জ্বলে?হোয়াই?

ডক্টর নিধি মিষ্টি হেসে বললেন,

— মিস প্রভাতি, এখন কেমন ফিল করছেন?

আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

—আমি মিসেস প্রভাতি। ইশান আমার হ্যাজব্যান্ড।

অভদ্রমহিলার মুখশ্রী থমথমে পানসে হয়ে গেলো। যেনো তার বুকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। তাও লাইটার,ম্যাচকাটি দিয়ে নয় পাথরে পাথর ঘষে। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে বেশ করেছি। আমার বলা উচিত ছিলো আপনার প্রাক্তনের বর্তমান। আহা কি শান্তি শান্তি ফিলিংস হতো। কিন্তু বলা হলো না। একটা কথা আমি বলতে না চাইলেও বলতে হচ্ছে মেয়েটা খুব চমৎকার। কি সুন্দরভাবে আমার খোঁচাটাকে এড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললো,

—ওহ,ইয়েস। একচুয়েলী সবাইকে মিস মিস করে বলতে বলতে ভুলে তোমাকেও মিস বলে ফেলেছি। তোমাকে ‘তুমি’ বলছি কারন তুমি ইশানের বউ। আর ইশান যেহেতু আমার ক্লাসমেট ছিলো তাই তোমাকে তুমি বলে সম্বোধন করা ই যায়। আফটার অল আমার ফ্রেন্ডের বউ তুমি।

আমি সৌজন্যতামূলক হাসিটাও দিলাম না। মরতে এসেও শান্তি নেই। জামাই এর উটকো ঝামেলা নিয়ে টেনশন। নিধি ইশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— দেখোছো,এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। এখনো সেই জেদ রয়েই গেছে। কতবার বললাম আমার কেবিনে এসে রেস্ট নিতে শুনলোই না। থম মেরে এখানেই বসেছিলো। দেখো সাহেব গভীর ঘুমে। ইশশ কীভাবে যে শুয়েছে। এভাবে তো শোল্ডার ব্যাথা হয়ে যাবে।

আমি চোখদুটো বড় করে ফেললাম। সন্দেহবাতিক হয়ে বললাম,

—সত্যি যায় নি তো?

ডক্টর নিধি অপ্রস্তুতভঙ্গিতে হাসলো। কপাল খানিকটা কুচকে মাথা নাড়ালো। বুঝলাম সে হয়তো জানে না যে আমি তাদের ব্যাপারটা জানি। আমি কথাটা ঘুরিয়ে বললাম,

— মানে বলতে চাইছি,এভাবেই ছিলেন? কি বলেন তাহলে তো উনার শরীর খারাপ করবে। আমিই বা কি বলবো বলুন,লোকটা এমন পাগল যে আমার থেকে এক সেকেন্ডও দূরে থাকতে পারেন না। সারাদিন আমার পেছনে লেপ্টে থাকেন। আমি একটা কাশি দিলেও তার চিন্তার শেষ নেই। দিন-রাত মানে না, লাইট ফ্যান নিয়ে বসে থাকে আমার পাশে। ইদানীং তো উনি আগের থেকেও বেশি রোমান্টিক হয়ে গেছেন। সুযোগ পেলেই কিস করে বসেন। লজ্জার কথা কি আর বলি বলুন?

লজ্জায় যেনো পানিতে ডুবে মরছি। আমার রিয়েকশন ঠিক এমন। মুখ টা লাল,নীল,গোলাপি টোলাপি সব রঙের করে ফেললাম। অন্য হাত দিয়ে বারবার মুখ ঢেকে লজ্জা সংবরণের চেষ্টায় আছি। এমন ভান করলাম। মেয়েটা নিশ্চই জ্বলে পুড়ে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। হয়ে যাক। যদি নিরুদ্দেশও হয়ে যায় তাতেও আমার সমস্যা নেই। মোদ্দাকথা এ মেয়ে যেনো আমার ইশানের আশেপাশে না ঘেষুক। তাদের আগেকার সম্পর্ক আগেকার। এখন ইশান আমার, আমার স্বামী। হু হু! মাধবি আপা অবাক হয়ে আমার কাছে আসলেন। বাবা বাহিরে গেছে খাবার আনার জন্য। আমার আপা বোধহয় এই মুহূর্তে আমাকে এসে জ্ঞান দিবে। হলোও তাই। তিনি বললেন,

—তোর মাথা ঠিক আছে তো প্রভা? কিসব উল্টাপাল্টা বকছিস। চুপ কর।

আমি পাত্তা দিলাম না। ডক্টর নিধি বললেন,

—ইট’স ওকে। ও বোধহয় মিশুক টাইপের। সেজন্যই হয়তো মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। এত হেসিটেইট ফিল করবেন না প্লিজ। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কে?

—আমি মাধবি। প্রভাতির বড় বোন।

ডক্টর নিধি বললেন,—ওহ্।

কথাবার্তার মাঝখানেই ইশান জেগে গেলেন। আমাকে স্বজ্ঞানে দেখে তার চোখে খুশির ঝিলিক খেলে গেলো। সে উৎফুল্ল হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বললো,

—তুমি ঠিক আছো?জ্ঞান ফিরেছে কখন? এখন কেমন লাগছে? খারাপ লাগছে?

আমি মাথা নাড়ালাম। সত্যিই এই মুহূর্তে আমার শরীর একদম ফুরফুরে। কিন্তু পরক্ষণেই ডক্টর নিধির কথা মনে পড়তেই বললাম,

— একটু একটু খারাপ লাগছে। মাথাটাও যন্ত্রণা করছে। আর পেটেও কেমন গুডুর গুডুর করছে। ক্ষুধা লেগেছে বোধহয়।

প্রথম দুটি কথা মিথ্যা হলেও শেষের কথাটি নয়। আমার সত্যি ক্ষুধা লেগেছে। ইশান তড়িঘড়ি আমার কপাল টিপতে লাগলেন। মুখে কষ্টের ছাপ ফুটালেও মনে মনে খুশিতে নাচতেছিলাম। মেয়েটা কেমন ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আই উইশ, ওর যাতে কলিজায় লাগে। তখন আমার অন্তরাত্মা আরেকটু বেশি শান্তি পাবে হু,হু!

ডক্টর নিধি আটকে যাওয়া কন্ঠে বললো,

—আমি এতক্ষণ জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বললা না। আচ্ছা যাই হোক, আমি খাবারের ব্যবস্থা করেছি। তোমার জন্যও হেলথি ফুড নিয়ে আসার জন্য বলেছি। ড্রাইভার বোধহয় নিয়েও এসেছে। আমি কি..

আমি তৎক্ষণাৎ তাকে থামিয়ে বললাম,

—তার কোনো দরকার নেই। বাবা খাবার আনতে গিয়েছেন। আই মিন আপনার এত কষ্ট করার কি দরকার ছিলো? বাবা তো গিয়েছেনই।

ভাগ্যিস কথাটা ঘুরিয়ে অন্যভাবে বলেছি নাহলে সবাই কি ভাবতো। ডক্টর নিধি তবুও হাসিমুখে বললো,

—তোমার বাবাকে বারণ করে দাও। আমার ড্রাইভার খাবার নিয়ে অলরেডি চলে এসেছে। আর এখন তোমার হেলথি ফুড খেতে হবে, বাহিরের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

ইশান ও ফট করে বললেন,

—হ্যা,হ্যা তাই ভালো হবে। তুমি এখানে নিয়ে আসো। একসাথেই খেয়ে নিবো।

সর্বনাশ! ইশান তার এক্সের হাতের রান্না খাবে? যার অর্থ আমার অর্ধেক সংসার তার দখলে চলে যাবে। ইশান আমায় উঠতে বসতে বলবে, ইশশ নিধির হাতের রান্না কি মজা! তুমি এসব কি রান্না করো? এখনও নিশ্চই হাত চেটেপুটে খেয়ে ডক্টর নিধির সুনামের বন্যা বইয়ে দিবে।ইম্পসিবল! আমি তা কোনোদিন হতে দিবো না। নেভার!নেভার!
গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২৩.

ইশান, ডক্টর নিধির সাথে চলে যেতেই আপা এসে আমায় চেপে ধরলেন। তিনি বললেন,

—এসব কি ধরনের অভদ্রতা প্রভা? তুই ওভাবে রিয়েক্ট কেনো করেছিস? তোর ভাব কত বিরক্তিকর ছিলো তুই জানিস?

—তুমি জানো তিনি কে?

—হু, ইশান ভাইয়ের ফ্রেন্ড। মাত্রই তো বললো।

—নো,ইশান স্যারের এক্স।

আপা চোখদুটো বড় করে ফেললো। আমি বললাম,

—-ইশান স্যার নিজে বলেছেন।

—তো, তাই বলে তুই এভাবে কথাবার্তা বলবি? দুদিন আগেও তো আমার সাথে উনার রিলেশন /বিয়েটিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি করিয়ে দিচ্ছিলি তখন?

— তখন আমি ছোট ছিলাম।

—এখন বড় হয়ে গেছিস? মাত্রই তো ইশান ভাইকে যেতে দিতে চাইলি না। কেমন ন্যাকামি করেছিলি।

আমি শান্ত স্বরে বললাম,

— শুনো আপা, আমার হ্যাসব্যান্ডের এক্স নিয়ে আমার জ্বলবেই। আমি কোনো সাধু মেয়ে না যে এক্সকে দরদ দেখিয়ে স্বামীর সাথে হাত ধরাধরি করে চড়ে বেড়াতে দিবো। তোমার যদি মনে হয়, আমি ন্যাকা বা বিরক্তিকর কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করছি তাহলে হ্যা আমি করছি। কারণ আমি পরে বাবার মতো পস্তাতে চাই না। তুমি নিশ্চই মা-বাবার কাহিনী জানো? জানো না? কি ভুলে গেছো? মনে নেই কি হয়েছিলো -বাবা যখন আনোয়ার চাচার দরদকে প্রশ্রয় দিয়েছিলো। একসাথে খাওয়া,কথা বলা, আড্ডা দেওয়া এসবে যখন মাকে আর আনোয়ার চাচাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলো তখন দেখো নি,কীভাবে বাবার সংসার ভেঙ্গে মাকে নিয়ে চলে গেছিলো? তুমি কি চাও আমার লাইফে আমিও বাবার মতো সেই ভুল করি।

—ডক্টর নিধি আনোয়ার চাচার মতো নন।

—সেটাই তো সমস্যা। সে উনার মতো নন। যদি উনার মতো খারাপ হতেন তাহলে এত চিন্তা হতো না কারণ ইশান জানতেন তিনি খারাপ।তাই তাদের ২য় বার মিল হওয়ার সম্ভাবনা ই নেই।কিন্তু ডক্টর নিধির ব্যবহার বলছেন উনি যথেষ্ট ভালো যার অর্থ ইশান ২য়বার উনার প্রতি দূর্বল হয়ে যেতে পারেন। কি গ্যারান্টি আছে যে তিনিও মায়ের মতো ভুল করবেন না? শুনো আপু আমাদের প্রেমের বিয়ে নয়, জোরপূর্বক বিয়ে। যা জোড়া লাগতে যেমন সময় লাগে নি ভাংতেও সময় লাগবে না। তাই আমার সচেতনা বা অনুভূতি গুলো তোমার নিকট ন্যাকামি মনে হলো আমার সত্যিই কিছু করার নেই। এটা তোমার মানসিকতার সমস্যা। আমি কেনো তার জায়গায় নিজেকে বসাবো? হোয়াই? তার কর্মের জন্য সে দায়ী। আমি নিজের কথা বাধ দিয়ে উনার কথা কেনো ভাববো? সে করে কেনো প্রেম? তার দোষ, এর দায়ভার আমি কেনো নিবো? শুনো বিয়ের পর তুমি তোমার স্বামীকে তার এক্সের সাথে বিদেশে পাঠাই দিয়ো,দরকার পড়লে তাদের জন্য রান্নাবান্না করেও পাঠাই দিয়ো।

আপা পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—আচ্ছা শান্ত হও।এত উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিস কেনো? তোর শরীর খারাপ করবে তো। অপারেশনের গা এখনো শুকায় নি। এই নে পানি খা। রিলেক্স, এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো? আমি তো এমনিই বললাম।

— এমনি কেনো বলবা আপা? তুমি তো শুরু থেকেই জানো বাবা আর মায়ের কাহিনী। এরপরেও বলছো, আমি আমার হ্যাসব্যান্ডকে অন্য মেয়ের সাথে ধরাধরি করে চলে যেতে বলি? তুমি কেনো ওই মেয়ের স্থানে নিজেকে বসাচ্ছো? আমার স্থানে কেনো নয়? আমি একজন স্ত্রী, আর তিনি প্রাক্তন। তুমিও কারো প্রাক্তন তাই তুমি তার দিকটা ভাবছো, কেউ তোমার সাথে এমন করলে তোমার কেমন লাগতো সেটা ভাবছো। কিন্তু আমি? আমি কারো প্রাক্তন নই তাই আমি সেদিক ভাবছি না। আমি আমার দিকটা ভাবছি। আমার স্থানে নিজেকে বসালে দেখবে আমি একদম সঠিক।

আপা মাথা নাড়ালেন। আমি পানি টা খেলাম। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলো। আপার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। এটা আমার ভুল।খুব বড় ভুল। কিন্তু আমি এভাবে বলতে চাই নি, আপা ওইসব কথা বলায় আমার মাথা ঠিক ছিলো না। খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এবার এটা আমার ঠিক হয় নি। একদম ঠিক হয় নি। আমি অপরাধী কন্ঠে বললাম,

—-সরি আপা।আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমার সাথে এভাবে কথা বলতে চাই নি। একদম না। আমি সত্যি এভাবে বলতে চাই নি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। তুমি ওভাবে বলায়, জানি না কীভাবে মুখ দিয়ে এসব বেরিয়ে গিয়েছে। আমার মাথা টা একদম ঠিক নেই। হঠাৎ ই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ ই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছি। কেনো এমন করছি বুঝতে পারছি না। শরীর খুব খারাপ খারাপ লাগছে। সরি সরি আপা,প্লিজ মাফ করে দাও।

—মারবো একটা। তুই আজ এভাবে বলেছিস দেখেই আমি খুশি হয়েছি। তুই সবসময় চুপচাপ থাকতি, কোনোকিছুর বিপরীতে কথা বলতি না। জানিস, আমার কত চিন্তা হতো তোকে নিয়ে। আজ সে চিন্তা গায়েব করে দিলি। আই এম প্রাউড অফ ইউ!

মাধবি আপা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও আপাকে জড়িয়ে ধরলাম। অপরাধবোধ কাটছিলোই না। এবার একটু কম লাগছে। কিছুক্ষণ পরপরই ইশান , ডক্টর নিধির সাথে খাবার নিয়ে আসলেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আপা যদি মনে করে থাকে আমি ন্যাকামি করছি তাহলে যাও আর কিছুই বলবো না। ওরা একসাথে ঘুরঘুর করলেও কিছু বলবো না। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।

খাবার টা মুখে দিতেই তেতো ঠেকলো। খেতে চাইলাম না, রেখে দিলাম। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। আপার কথা গলায় আটকে আছে। এসব শুনলে কার ভালো লাগবে জানা নেই। আমি হয়তো সত্যি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলছি। ইশান কৌতুহল নিয়ে বললেন,

—কি হলো তুমি খাচ্ছো না কেনো?

ডক্টর নিধি বললেন,

— খাবার ভালো হয় নি? কিছু উল্টাপাল্টা হয়েছে?

আমি বললাম,

—উহু, খাবার খুব ভালো হয়েছে। তবে সমস্যা হলো এত ভালো আমি হজম করতে পারি না।

শেষের কথাটা বিড়বিড় করেই বললাম। কেউ বোধ হয় শুনতে পান নি। আমার মন-মেজাজ খুব খারাপ হতে লাগলো। মাথা ঘুরাচ্ছে, পেটে চিনচিন সুক্ষ ব্যাথাও হচ্ছিলো। কিন্তু কাউকে বললাম না। দেখা যাবে অন্য একজন এসে বলবে, এসব তো নরামালি হয়, এমন ন্যাকামি করার কি দরকার? জানি অন্য কেউ নেই। তবুও বলতে কতক্ষণ? কিছু কথার এত ধার থাকে যে সেটা কাউকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে সম্ভব। ব্রেইনের উপর বিরাট প্রভাব ছড়িয়ে ফেলে মুহূর্তেই। অনেকেই হয়তো অজ্ঞাত যে ‘কথার আঘাতেও মানুষের মৃত্যু হয়, যা চোখে দেখা যায় না।’

স্বাভাবিকভাবে যখন আমি হাল ছেড়ে মাথাটা এলিয়ে দিচ্ছিলাম,ঠিক তখন ডক্টর নিধি ইশানের প্লেটে চিংড়ি দিয়ে রান্না মিষ্টি কুমড়ো তুলে দিলেন। রিনরিন কন্ঠে বললেন,

—টেস্ট ইট, ইউর ফ্যাবারিট রেসিপি।

সাথে সাথে আমি উঠে গেলাম। পারলাম না আপার কথা গায়ে মাখতে। বেহায়া-বেলাজার মতো ইশানের প্লেট টা ছিনিয়ে নিয়ে নিলাম। হেসে বললাম,

—আমি এটা খাবো। কুমড়ো আমার খুব প্রিয়। দেখি, দেখি কেমন মজা? মুখে খাবার নিয়েই বললাম, ‘অসাধারণ।’

পরপর দুটো মিথ্যা কথা বললাম। প্রথমত মিষ্টি কুমড়া আমার পছন্দ নয়, তরকারী হবে ঝাল-ঝাল। আর মিষ্টি কুমড়া হলো মিষ্টি মিষ্টি। এটা নিশ্চই প্রিয় হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, খেতে মোটেও অসাধারণ নয়, আমার কাছে সেই প্রথমবারের মতো তেতো ঠেকেছে। মিস নিধি আর আপা হা করে তাকিয়ে রইলেন। ইশান মিষ্টি হেসে বললো,

—ভালো লেগেছে? দাও, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

আমি এক্ষুণি প্লেটে হাত ধুতেই নিচ্ছিলাম, কিন্তু ইশানের কথাশুনে পারলাম না। সে তার এক্সের সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে, এর থেকে মজার বিষয় কিছু আছে? ইচ্ছা না থাকা স্বত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলাম। হাসিমুখে তার হাত থেকে খেতে লাগলাম। গিলতে কষ্ট হচ্ছিলো তবুও ইশানের হাত চেটে খেতে ভুলিনি। ডক্টর নিধি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি গায়ে মাখলাম না। কি কষ্টের পরিস্থিতিতেও আমি হাসিমুখে খাচ্ছিলাম তা বোধহয় কোনোদিন ভুলবো না। ডক্টর নিধি হুট করেই উঠে বললেন,

— আই এম ডান। আমি যাচ্ছি।

সে চলে গেলো। তার নিশ্চই খারাপ লেগেছে। লাগুক। জনসেবা আর জামাইসেবা দুটো আলাদা জিনিস। ব্যাপারটা স্বামী নিয়ে না হলে আমি কখনো এমন করতাম না। মুখ ফুলিয়ে মুখ মুছে নিলাম। তখনই কোথা থেকে হড়বড় করে অনেকগুলো মানুষ ঢুকে পড়লেন। আমি বড়বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার শশুড়বাড়ীর একটা লোক বাদ রইলো না। ইভেন ফোনকোলে ফুফুমা আর দাদীও রয়েছেন। আমার ভয় লাগতে শুরু করলো। বড় ভাবী ডক্টর নিধিকে দেখতেই বললেন, ‘নিধি,তুমি?’ তার চোখদুটো অন্যরকম দেখাচ্ছিলো।

.গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২৪.

আমার শশুড়বাড়ীর প্রত্যেকটি লোক আমার স্বামীর এক্সকে চিনেন। অভদ্রমহিলার একটি নাম রয়েছে। নামটি খুব চমৎকার। নিধি! কিন্তু তাকে এ নামে সম্বোধন করতে আমার ভালো লাগে না। ইশানের এক্স বলতেই যেনো আলাদা মজা। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। অন্যদের ভালো নাও লাগতে পারে। স্বাভাবিক। খুব স্বাভাবিক। সবার এট্রাকশন আমার থেকেও বেশি অভদ্রমহিলার দিকে। তাকে দেখে প্রশ্নের ঝুলি আর অবাকতার শেষ নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবে শুধুমাত্র আমার শাশুড়ি আমার কাছে এসেছেন। আমার হাল-চাল প্রশ্ন করলেন। আমি জবাব দিলাম। অপারেশনের ১৮ ঘন্টারও বেশি চলে। শরীর টা একটু একটু ভালো লাগছে। এর মধ্যেই ইশানের ফুফুর ফোন আসলো। ফুফিমা ভিডিও কলে সর্বপ্রথম বললেন,

— বড় হয়ে গেছো? খুব বড় হয়ে গেছো না? মা,মা বলে জান দিয়ে দাও। অথচ এই মাকে একবারও অসুখের কথা বললে না। আমাকে দেশে আসতে দেও একবার, তোর অবস্থার রফাদফা না করলে আমিও হেলেনা নই।মনে রাখিস।
আমি হাসলাম। ফুফিমা বললেন,–তুই খুব খারাপ প্রভাতি।খুব খারাপ।

ফুফিমা কেঁদে দিলেন। চোখমুখ ফোলা ফোলা। এর আগেও কেঁদেছেন হয়তো।

—জানি তো। তোমাকে কে বলেছে এই খারাপ মানুষটাকে নিজের মেয়ে বানাতে? তুমি জানো না এরা কখনো কারো হতেই পারে না।

—আবার তর্ক করা হচ্ছে। গাল লাল করে দিলে তখন টের পাবি?

—কেঁদো না তো। এসব কান্নাকাটি আমার ভালো লাগে না। তোমাকে খুব বিশ্রি দেখাচ্ছে।

—আমি ইচ্ছা করে কাঁদছি নাকি? তুই এমন কাজ করিস কেনো?

—আচ্ছা,আর করবো না। দাদী কই? উনাকে দাও। উনি কেমন আছেন?

—দাদী শুয়ে আছে। উনাকে আর ভালো থাকতে দিলি কই? তুই এখানে না আসা পর্যন্ত শান্তি হবে না বোধহয়। তোর কাগজপত্র দ্রুত ঠিক না করলে আমার কঠিন মাইর হবে। কঠিন মাইর।বুঝলি?

— আচ্ছা। দাও তো উনাকে।

ফুফিমা ফোন দিলেন।দাদী কথা বললেন না। শুধু কঠিন কঠিন দৃষ্টিতে আমাকে শাসালো। আমি হাসলাম। হেসে বললাম,

—দাদী,তোমার নাতি তোমাকে এভাবে দেখলে নির্ঘাত হার্ট এট্যাক করবে। ব্যাটার আবার চরিত্রে সমস্যা আছে। পরে না জানি তোমাকে নিয়ে পালায়। তোমার কি এভাবে আমার কপাল পুড়ানোর চিন্তা?

দাদীমা কঠিন চোখে বললেন,

—একদম রসিকতা করবে না আমার সাথে। আর হাসছো কেনো? হাসা বন্ধ করো। বন্ধ করো।

আমি চুপ করে গেলাম। কেউ দেখলে নিশ্চই বলবে না আমাদের সম্পর্ক টা আপন নয়। বলার কথাও নয়। আজকাল সৎ মায়েদের সাথেই সু-সম্পর্ক থাকে না সেখানে সৎ দাদী তো দুঃস্বপ্ন। ইশানকে কখনো দাদীমার সাথে অসদাচরণ করতে দেখিও নি, শুনিও নি।শাশুড়িমাও খুব ভালোবাসেন দাদীমাকে। কেউ যদি বলে হেলেনা ফুফু ইশানের আপন ফুফু নয়। তখন ইশান রেগে যান। ভয়ংকর রেগে যান। খুব খারাপভাবে ওই লোকটার সাথে আচরণ করেন। একটু সহজ করে বলি, ইশানের দাদা দুই বিয়ে করেছিলেন। তখন অবশ্য দাদার তুলনায় দাদীমার বয়স অনেক কম ছিলো। ইশানের মায়েরও তখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছিলো। হেলেনা ফুফু কিন্তু ইশানের দাদার সন্তান নন, দাদীমার আগের ঘরের সন্তান। অবাক লাগে তাই না? আমারও লেগেছিলো, যখন শুনেছিলাম। এত প্যাচের সম্পর্কগুলোতেও মধুরতা থাকে তা দেখে আরো অবাক হয়েছিলাম। ইশানের বোন দুজনও ফোন দিয়ে খবর নিলেন। তাদের সাথে আমার কথাবার্তা হয় না। হলেও খুব কম। দুজনকেই বিয়ে দিয়ে স্বামীর সাথে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন শাশুড়িমা। আমি অবশ্য সরাসরি তাদের দেখি নি। ফোনেই যতটুকু দেখার দেখেছি। এ ফ্যামিলিতে চোখে লাগার মতো একটি বিষয় আছে। বিষয়টি হলো বি-দেশ। অর্থাৎ সবার ই বিদেশের জন্য এপ্লাই করা। অর্ধেকের বেশি আত্নীয়ও বিদেশে থাকেন। এমনকি ইশানও বিদেশে ছিলেন। ফুফিমার কাছে। এবার ফুফিমা আমাকেও লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। আমার অবশ্য ইচ্ছা নেই। কেনো নেই জানাও নেই। জানতেও ইচ্ছে করে না।

শেষ বিকালের ঝলমলে আলো ধীরে ধীরে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছিলো। সময়গুলোও হাওয়ায় মিলে যাচ্ছে। খাতিরযত্নের মাঝেই কেটে গেলো মাসখানেক। আমার অবস্থা এখন বেশ ভালো। বলতে গেলে একদম ভালো। এ অবস্থায় আমার পুরো ট্রিটমেন্ট করেছেন ডক্টর নিধি। হ্যা, ইশানের এক্স নিধি। কেননা তার সাথে এ সংসারের প্রত্যেকের বেশ সু-সম্পর্ক। সবাই ইশানকে তার ফ্রেন্ড হিসেবেই চিনেন। কারো জানা নেই,কখনো তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো কি না। ইশান বললেন,’তিনি কখনো তাদের এ বিষয়ে জানান নি।জানানোর পূর্বেই নাকি সম্পর্ক ভেঙ্গে গিয়েছিলো।’ তাদের সম্পর্ক ভাঙ্গার কারণ টা ছিলো সাধারণ। খুব সাধারণ। ডক্টর নিধির ‘ডক্টর’ পদবি ই এর কারণ। মিস নিধির জন্য তার ক্যারিয়ার ইম্পরট্যান্ট ছিলো। যা ইশানের সাথে থাকলে পসিবল হতো না। তাই তারা মিউচুয়াল ব্রেকআপ করে নেন। সেজন্যই এখন অবধি তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। ডক্টর নিধি ডিবোর্স প্রাপ্ত মহিলা। তার প্রথম বিয়ের ডিবোর্সের পর তিনি এখন পর্যন্ত বিয়ে করেন নি। ডক্টর নিধির ব্যাপারে এর বেশি কিছু আমার জানা নেই। জানার ইচ্ছাও নেই। এমন নয় যে আমার জানার কৌতুহল ছিলো না। ছিলো। এবং সেটা গায়েব হয়ে যায় যখন ইশানের অনুভূতি জেনেছিলাম। কীভাবে জেনেছি সেটা একটু বিস্তারিত বলি।এইতো কয়দিন আগে ডক্টর নিধি আমার শশুড়বাড়ী আসলেন। সে অবশ্য এসেছে আমাকে দেখার অজুহাতে। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। ইশান আমার পাশেই বসে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলেন। সে অবশ্য চায় নি, আমি জোরপূর্বক এভাবে করতে বলেছি। তার ধারনা ছিলো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি,কিন্তু তখনো আমি পুরোপুরি ঘুমাই নি। ডক্টর নিধির আওয়াজ পেয়ে কীভাবে যেনো আমার পুরো ঘুমের রেশ ই চলে যায়। ইশান তাকে দেখে নিজের অবস্থার কোনোরুপ পরিবর্তন ঘটান নি। ডক্টর নিধি কড়া আওয়াজে বললেন,

—‘ বাহ, বউয়ের দেখি ভালো সেবা করা হচ্ছে।’

—একমাত্র বউ। তার সেবা করবো না, কার করবো?

— একসময় কেউ একজন বলেছিলো, ‘তুমি বদলে যেতে পারো,আমি কোনোদিন বদলাবো না।’

ইশান জবাব দেন নি। ডক্টর নিধি তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে পুনরায় বললেন,

—তাহলে এখন কী? সে তো কোনোদিন বদলাবার ছিলো না। আজ কেনো বদলে গেলো? সে কি এক কথার মানুষ ছিলো না নাকি কচি মেয়ে বউ হিসেবে পেয়ে? অবশ্য বুড়ো ছেলেদের সামনে কচি মেয়ে ঘুরলে যার তার মাথা নষ্ট হয়ে যয,,,

ডক্টর নিধি কথাটা শেষ করবার পূর্বেই ইশান তার থুতনি চেপে ধরলেন। অটোমেটিক ডক্টর নিধি থেমে যান। আমার একটি চোখ তখন অর্ধেক খোলা ছিলো। তারা কেউ খেয়াল করেন নি। সেদিনের ইশানের মুখশ্রী মনে পড়লে আজো শরীরের লোমগুলো সজাগ হয়ে যায়। ডক্টর নিধি কি ভয় পাবেন আমি নিজেই ভয়ে তটস্থ ছিলাম। ইশান বললেন,

—তেমার এই নোংরা মুখ দিয়ে যদি আর একবার আমার বউকে নিয়ে বাজে কথা বের হয়, আই সোয়ার আমি তোমার চোয়ালের এমন দশা করবো যে জীবনে কোনোদিন কথা বলতে না পারো।

ডক্টর নিধি ভয় তো পেয়েছিলেন।কিন্তু দমে যান নি। পাল্টা জবাব দিলেন,

—সত্য কথা বললে সবার ই এমন গায়ে লাগে। আমি কি মিথ্যা বলেছি? তোমাদেরকে লোকে বলবে বাবা-মেয়ে। বলবে কি অলরেডি হাসপাতালে গসিপ চলছে।

ইশান বোধহয় কষ্ট পেয়েছিলেন। পাবার ই কথা। আমাদের সমাজের কিছু লোকেদের মেন্টালিটি লেভেল একদম নিম্ন পর্যায়ে। তারা কোনো কাপল, স্বামী-স্ত্রী জানা স্বত্তেও ইচ্ছা করেই এমন মন্তব্য করেন। এতে তাদের বিশেষ লাভ হলো অন্যকে খুচিয়ে কথা বললে তাদের কলুষিত অন্তর শান্তি পায়। তাদের জন্য একজন মানুষ শুধু গুণে কিংবা রুপে পারফেক্ট হলে চলে না। তাকে হতে হবে সুপার পারফেক্ট। শুধুমাত্র সে ধবধবে সুন্দর হলে চলবে না, তার কন্ঠও হতে হবে বাঁশির সুরের মতো। তার সব গুণ থাকলেও চলবে না, তাকে অবশ্যই লম্বা হতে হবে। এই যেমন আমার আপার কথা ই বলি। আমার ফুফু মাঝেমাঝেই বলতেন, —“ইশশ,মাধবি তোর নাকটা যদি আরেকটু চোখা হতো। কিংবা তোর হাইট যদি আরেকটু কম হতো। এত লম্বা আবার সুন্দর লাগে না। বুঝলি। সুপারি গাছ দেখায়। ” আরো কত কি যে বলেন। আপা অবশ্য মন খারাপ করে না। তার কাছে এসব স্বাভাবিক লাগে। কিন্তু আমার কাছে লাগে না। এটা কোনো কথা হলো? আমাকে যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, আমি তো সেরকমই হবো তাই না। আমি তো আর নিজে নিজেকে তৈরী করি নি। তাদের যে একশ দোষ থাকে সে বিষয় কিন্তু বলা যায় না, বললে হবে তুমি অভদ্র, বেয়াদপ। আর চুপ থাকলে তথাকথিত ভদ্র। ইশান কিন্তু ডক্টর নিধিকে কড়া কথা শুনিয়ে সেই বেয়াদপ পদবি টা লাভ করলেন। তার জবাব ছিলো,

— ঠিক আছে মানলাম। আমাকে বলো তো, তুমি আর তোমার স্বামী পারফেক্ট এন্ড জোয়ান দম্পত্তি হয়েও কেনো সংসার করতে পারলে না? না মানে লোকে তো তোমাদেরকে একদম পারফেক্ট কাপল বলতো তাহলে কেনো তোমাদের ডিবোর্স হলো? সুখী দম্পত্তিদের আবার ডিবোর্স হয় নাকি? হ্যান্ডসাম ছেলে আর সুন্দরী মেয়ে হয়েও কেনো তোমাদের কাপল টিকলো না? আন্সার মি?

ডক্টর নিধিকে চুপ দেখে ইশান পুনরায় বললেন,

লিসেন, কোন স্বামী-স্ত্রীকে বাবা-মেয়ে লাগে, কোন স্বামী-স্ত্রী কে দাদা-নাতিন লাগে সেসব না দেখে নিজের সংসারের দিকে তাকাও। পারফেক্ট বউ-স্বামী হয়েও কেনো সংসার রইলো না। কেনো ঝগড়া-বিবাদ করে ডিবোর্স নিলে? ডোন্ট ইউ থিংক তোমাদের থেকে আমরা পারফেক্ট? অভিয়েসলি। মনে রেখো, ‘শুধু বয়স দিয়ে কোনো দম্পতি পারফেক্ট হয় না, হয় তাদের বোঝাপোড়ার ক্ষমতার মাধ্যমে। ‘ তাই দম্পতি-দের বয়স নয় তাদের মানিয়ে নেওয়ার ধৈর্য্য দিয়ে বিচার করো। আশা করি, আজকের পর আমার সংসার নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস দেখাবে না!
গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২৫.

গুমট, নিস্তব্ধ আকাশে বিচরণ করছে কালো কালো মেঘের ভেলা। সে ভেলায় ইশানের সাথে আমি ভেসে বেড়াচ্ছি। চারদিকে বইছে শিরশিরে মৃদু বাতাসের আনাগোনা। বলতে গেলে ইশানের সাথে একপ্রকার লেপ্টেই ছিলাম আমি। বরফের মতো ঠান্ডা আমার শরীর। থেকে থেকে হালকা কেঁপে উঠছি। আমার কাঁপাকাপি রোগ টা আগে ছিলো না। ইদানীং ইশানের হালকা সংস্পর্শে আসলেই এই রোগ দেখা দেয়। ইশান বোধহয় তখন খুব মজা পান। তৎক্ষণাৎ আমাকে নিয়ে খিল্লি উড়ান। যা আমায় একরাশ অস্বস্তি আর লজ্জা ফেলে দেয়। সে কিন্তু সেই সময় টা বেশ উপভোগ করেন। আমি লক্ষ্য করেছি এর বেশ কিছু সময়পরেও তার মুখে লেগে থাকে হাসির জোয়ার। আমি উপরে উপরে রাগ দেখালেও মনে কিন্তু ভীষণ খুশি হই।এর পেছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। কারণ টা হলো তখন আমার মনে হয় সে আমার সাথে সুখী। আমার ভেতরের চাপা অশান্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাকে নিয়ে আমার নানান অভিযোগ থাকে। কিন্তু আমাকে নিয়ে তার কোনো অভিযোগ থাকে না। কারণ সে ইন্ট্রোভার্ট। কথা কম বলে। যে দু-চারটা বলবো সেগুলো হবে জরুরী কথা।
এইযে এই মুহূর্তে তার এত কাছে রয়েছি তার জরুরী কথা শুনতেই। সম্ভবত বাবার বিষয়ে বলবেন। এজন্য তার এত সংকোচ আর অস্বস্তি। আজ আমার বাবার বিয়ে। জোরপূর্বক বিয়ে। বাবা রাজি নন। কিন্তু আমরা দু-বোনের কারণেই বাধ্য হয়েছেন। বাবার নতুন স্ত্রী বছরখানেক থেকেই অপেক্ষা করে আসছেন। উনাকে অবশ্য আমাদের দু-বোনের পছন্দ। নম্রভদ্র, স্বভাব টাও ভালো। ভদ্রমহিলার শুধুমাত্র দুটো খুঁত রয়েছে। এক নম্বর তিনি ট্যারা। একদিকে তাকালে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে এমন মনে হয়। দু নম্বরে তিনি বন্ধ্যা।
বাবার অবশ্য এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো লোকলজ্জা। তিনি বলেন, ‘এ বয়সে বিয়ে লোকে কি বলবে?’ কিন্তু উনার কথার গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাই আজ ছোটখাটো বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন ও বলা যায় না। শুধু কাজি এসে বিয়ে পড়িয়ে খেয়ে যাবেন,ব্যাস এটুকুই।

—আপনি বলবেন নাকি আমি চলে যাবো?

ইশান বললো,

— বলছি তো। একচুয়েলী তোমার বাবা..

—তারপর

— তোমার বাবা বাড়ী বন্ধক রেখে যাদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন তারা এসেছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কথাটা উনাকে কীভাবে বলবো। একচুয়েলী উনার সামনে পড়লে আমার লজ্জা লাগে,উনারও লজ্জা লাগে। তাই তুমি যদি….

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—বাবা বাড়ী বন্ধক রেখেছেন? কেনো?

—হ্যা,পরপর দুবার। উনারাই তো বললো। আমি উনাদের ঘরের সামনে বসিয়েছি।

বিষ্ময়ে হতভম্ব আমি। বাবা বাড়ী কেনো বন্ধক রেখেছেন? বাসার সামনে তিনজন অর্ধ বয়স্ক পুরুষ দাড়িয়ে আছেন। আমি সরাসরি তাদের প্রশ্ন করলাম,

—আমার বাবা বাড়ী বন্ধক রেখেছিলেন কেনো?

— তোমার বাবা বলে নাই? অথচ দুবার টাকা আনলো। এজন্যই তো খোঁজ-খবর নেই। শুনো, সে একবার তোমার বইনের বিয়ের জন্য, আরেকবার তোমার অপারেশনের জন্য টাকা আনছে। বিয়ের টাকা পরিশোধ করছিলো, কিন্তু তোমার অপারেশনের টাকা বইলা যেগুলা নিছিলো ওগুলা দেই নাই।

আপা ঘরেই ছিলো। শোরগোল শুনে বেরিয়ে আসলো। লোকগুলোর সাথে ক্রমশই আমাদের তর্ক বেড়ে চললো। বাবা বেরিয়ে আসলেন। পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। বাবা হড়বড়িয়ে ঘর থেকে টাকা এনে তাদের বিদায় করলেন। তারা অবশ্য মানতে চাইলো না। উদ্দেশ্য ছিলো বাড়ী হাতিয়ে নেবার। কিন্তু সফল হলো না। ইশান নিতে দিলো না।
সেদিন রাগে, আমি বা আপা কেউই বাবার সাথে কথা বলি নি। সংসার চালানোর জন্য একে একে সব বেঁচে ফেলেছেন,এখন নাকি বাড়ীটাও বেচতে চলেছিলেন। আপা আর আমার চাকরী করার কারণ ই ছিলো যাতে বাবা আর কিছু না বেঁচেন। অথচ দেখো তিনি সেই আগের মতো রয়েই গেলেন। তখন আমার মনে হলো, বাবা বোধহয় টাকার ব্যবস্থা না করতে পারায় প্রথমে আমার অপারেশনের জন্য চাপ দেন নি। পরে যেহেতু আমার অপারেশনের সব কিছুই ইশান করেছেন তাই টাকাগুলো বেঁচে গেছে। বাবা জানতেন, আমি বা আপা এসব জানলে কখনই রাজি হতাম না। তাই দুজনের অগোচরে এ কান্ড করেছিলেন। সেদিনে আমাদের দু-বোনের ভয়ে মিনমিনিয়ে বিয়ে টা সেরে নিয়েছিলেন বাবা। ইশান সারাক্ষণ রুম বন্দি ছিলো। সে একবার ও বের হয় নি। আমি জানতাম বিষয়টা লজ্জাজনক তাই তাকে এখানে আসতে বারণ করেছিলাম, এমনকি আমার শশুড়বাড়ীর লোকজনকে আমি নিজেই বলেছিলাম বাবার বিয়েটা হয়ে গেলে পরের দিনই চলে আসবো। কিন্তু নাছড়বান্দা ইশান শুনলেন কই? আমাকে সে একা কোথাও যেতে দিবে না। এখন বুঝোক মজা। কত আশা করেছিলাম,আপার সাথে ঘুমাবো। আপাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদবো। রাগে হিশহিশ করতে শুতে আসলাম। নির্লজ্জ লোক একহাত মেলে শুয়ে আছেন। আমার রাগ টা আরো বেড়ে গেলো। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম। আজ আমি তার বাহুতে ঘুমাবো না।কিছুতেই না। রাগে এদিকওদিক চক্কর দেওয়া শুরু করলাম।

—কি হলো বউ? এভাবে হাটছো কেনো?লাইট নিভিয়ে শুতে আসো তো। অনেক রাত হয়েছে।

আমি রাগী রাগী চোখে তাকালাম। কঠিন গলায় বললাম,

— লজ্জা শরম কিছু নেই? ধেই ধেই করে শশুড়ের বিয়ে খেতে চলে এসেছেন। কত আশা করেছি আপার সাথে ঘুমাবো।

—বাড়ীতে না এ নিয়ে ঝগড়া শেষ হয়েছিলো?

আমি রাগ করে জানালার পাশে চলে গেলাম। আকাশের গুমটভাব টা কেটে গেছে। ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে এক থালা তারার মেলা। ইশান আমার সাথে এসেছেন এজন্য আমি খুশি।ভীষণ খুশি! সে না আসলে বোধহয় তার শূন্যতায় সারা-রাত ঘুম হতো না। এ তো শুধু তাকে দেখানোর জন্য মিছে রাগ আমার। আমি যে খুশি সে যাতে তা না বুঝে তার ক্ষুদ্র প্রয়াস। স্বামীর কোনো ব্যাপারে মুগ্ধ হলে তা প্রকাশ না করার আলাদা মজা থাকে। ইশান আমার পেছনে পাগল এ বিষয়টা অনুভব করতে চাই। ভীষণভাবে চাই।

—এভাবে মসৃণ পেট,কোমড় দেখিয়ে দাড়িয়ে থেকে আমাকে পাগল করতে চাও? হু,বলো? তুমি জানতে আমি এখন উঠবো না,তাই এই ট্রিকস করেছো তাই না? বলো?

ইশান হিশহিশিয়ে বললেন। তার ধীর কন্ঠস্বর আমার কানে কাতুকুতু দিলো। কেঁপে উঠে জানালার আরো পাশে ঘেঁষে গেলাম। ঠিক তখন ইশান আমার শাড়ী টা টেনে ঠিকঠাক করে দিলো। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম কি আর হলো কী?
তাকে খুবই বিশ্রি গালি দিলাম। ব্যাটা,বুড়ো, আনরোমান্টিক! খাটাস, তোকে গু খাইয়ে দেওয়া উচিত। একদম কাচা গু। তাহলে এত বড় অপরাধের শাস্তি হতো। রাগে গজগজ করলাম। বিরবিরিয়ে অস্পষ্টসুরে বললাম কিছু একটা বলেছিলাম, যা আমার কাছেই স্পষ্ট ছিলো না।

আমি ভেবেছিলাম, জানালার পাশে ঘেষে দাড়াবো তখন ইশান ভয়ংকর কাজ করবেন। বড্ড ভয়ংকর। আমার কোমড় হাত দিয়ে আকড়ে ধরে পিঠে নাক ঘষবেন। রোমান্টিক সুরে বলবেন,

—‘ বউ তুমি তো জানোই,আমার ক্যারেকটারে সমস্যা। তুমিই এ কথা বলো। তারপরেও এভাবো খোলামেলা হাটো কেনো? এভাবে তো নিজেকে কন্ট্রোল করা যায় না।’

কিন্তু হলো কই? আমার সাধের স্বপ্নে সমুদ্র সমান পানি ঢেলে তিনি হাসিমুখে দাড়িয়ে আছেন। ইচ্ছা করছে দাতগুলো ভেঙ্গে দেই। শালা, কাঠ-তক্তা কোথাকার। কি সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদার। মানুষ তো রোমান্টিক কথা শুনলেও হাইপার হয়ে যায়, আর আমার স্বামীকে দেখো। সে এত রাতে আমাকে তারই সামনে পর্দা করাচ্ছে। আরে তোর সামনে এভাবে থাকবো না তো কার সামনে থাকবো?

—বউ,তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি রেগে আছো। রেগে তো ছিলে কিন্তু এখন বেশি রেগে আছো মনে হচ্ছে। কিছু কি হয়েছে?

ইশান ভারী অসহায় কন্ঠে বললেন। যেনো তিনি নাদান বাচ্চা, আজ জন্ম হয়েছে। আমি রাগে গজগজ করতে ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। ইশান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। তারপর আপনমনে বিরবির করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমার সারা রাত ঘুম হলো না। কিন্তু ইশান ভেবেছিলেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। সে আমার কপালে চুমু খেলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরম কন্ঠে বললেন,

— আমি আনরোমান্টিক না বউ। সব বুঝি, কিন্তু কি করবো বলো? বুঝেও না বুঝার মতো থাকতে হয়। একবার তোমার কাছে আসায় তোমার কত কষ্ট হয়েছে। কত ঝড়ের সম্মুখীন হলে। দ্বিতীয়বার আর সেই ভুল করতে চাই না। কোনোদিন না। তাই তো যতবার তুমি আমার কাছে আসতে চাও,আমি এড়িয়ে যাই। তোমার শরীর নয় তোমার বেঁচে থাকা টা আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট। তার জন্য দরকার পড়লে আমি সারাজীবন তোমাকে স্পর্শ করবো না। শুধু তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে বাকী জীবন টা কাটিয়ে দিতে চাই। তুমি তো জানো না, আমি সেদিন তোমার কাছে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, একবার আমাদের মধ্যে কিছু হয়ে গেলে তুমি নিশ্চই আমাকে ছেড়ে যাবে না। অথচ দেখো সেদিন তুমি আমাকে নয় পুরো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে।

ইশান থামলেন। একহাতে চোখের জল মুছলেন। আমার মন টা মিইয়ে গেলো। আমাকে নিয়ে তার এত ভয়? কিন্তু আমি তো এখন সুস্থ। উনি নিশ্চই সেদিনের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবেন। সেজন্যই আমার কাছে আসতে চান না। আমি যখন অস্থিরতা আর অশান্তিতে ছটফট করছিলাম। ঠিক তখন ইশান আমার কানের কাছে মুখে এনে বললেন,

—‘বউ, তোমার জন্য একটা ছন্দ মিলিয়েছিলাম। তুমি জেগে থাকলে তো বলতে পারবো না,তাই তোমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছি। ছন্দ টা বলি কেমন?

কাঠফাঁটা রৌদ্দুরে একফালি বর্ষা তুমি। বাদলা দিনের ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গী তুমি।
আমার জগৎ-সংসারের রাণী তুমি।
সুখ-দুঃখের সাথী তুমি,প্রেমমোহিনী তুমি।
আমার স্বপ্ন তুমি-কল্পনা তুমি।
শুধু তুমি এবং তুমি!♥’

খারাপ হয়েছে না? বেশি খারাপ? আচ্ছা যাও, পরেরবার ভালো ছন্দ বলবো। তুমি সেটা পছন্দ করবে তো?’
গল্প— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
শেষ পর্ব

২৬.

বাবার বিয়ের পরের দিনেই আমি চলে আসি শশুড়বাড়ীতে। সেদিনের পর থেকে কম চেষ্টা করি নি ইশানের কাছে আসার। কিন্তু সে কখনো আমাকে সফল হতে দিতো না। অগত্যা নিজেই ঝগড়া-ঝাটি করতাম। তিনি কখনো জবাব দিতো না, শুধু শুনে যেতো। রাগারাগি করে খাবার খেতাম না। সে জোর করে খাওয়াতো।আমি বমি করে দিতাম, সে তখন আবার খাওয়াতো। আমি খুবই উত্তোজিত হয়ে যেতাম।নানারকম আজেবাজে কথা বলতাম, সে কিচ্ছু বলতো না। তার কথা ছিলো, যা ইচ্ছা করি, তবুও যেনো আমি শান্ত থাকি। কিন্তু এমনটা আমি হতে দিলাম না। নানা পরিকল্পনা করলাম। সফল হলাম না। অবশেষে একদিন কাঙ্ক্ষিত প্ল্যানে সফল হয়েই গেলাম। সেদিনের তারিখ আজো স্পষ্ট মনে রয়েছে। ২৭.৩.২০১৭ তারিখ সোমবার ছিলো। দিনটি কখনো ভুলবার ছিলো না। আমার জীবনের এক মধুময় জীবন্ত স্মৃতি। যা আজোও আমার চোখে স্পষ্ট। খুব ভোরেই বাড়ী থেকে বের হয়েছিলাম। অনেক ভোগান্তির পর সেই দিনের বাড়ীর সন্ধান খুঁজে পেয়েছিলাম। এটা ইশান তৈরী করেছিলো। সে যখন প্রথম লন্ডনে ছিলো, তখন ই এ বাড়ীটি বানিয়েছিলো। একদম লন্ডনের ঘর-বাড়ীর মতো। ঝড়-বৃষ্টিতে যতটা না সুন্দর দেখিয়েছিলো, ঝলমলো রোদে তার দ্বিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছিলো। আমি আবারো মুগ্ধ হলাম। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে চোখ মেলে দেখতেই থাকলাম। দীর্ঘ সময় পর আমার অবাকের ঘোর কেটে গিয়েছিলো, ইশানের কথা মনে পড়ায়। মনে পড়ে গেলো কেনো আমি এখানে এসেছি। বেডরুমের বিছানা আমি পূর্ণরুপে সাজালাম। সবকিছু খেটেখুটে তৈরী করলাম। ইশান যখন এখানে এসেছিলেন তখন সে সম্পূর্ণ অবাক ছিলো। সে রাগী রাগী গলায় বললো,

—‘হোয়াট ইজ দিস প্রভাতি? সারাদিন ফোন নেই,খবর নেই। বিজি, বিজি বলে সন্ধ্যা সাত টা পর্যন্ত তুমি আমার সাথে লুকোচুরি খেলেছো। আর কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়ে বলছো আমি যেনো এখানে আসি? তোমার কোনো কমনসেনস নেই? এই জনমানবশূন্য স্থানে তুমি একা একা? সিরিয়াসলি?’

ইশান আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। বলা হলো না। চারপাশে তাকিয়ে থমকে রইলেন। অবাক হয়ে বললেন,

—এসব কি? আর তুমি এত সেজোছো কেনো? এই তোমাকে না বলেছি লাল লিপিস্টিক দিবা না। এসব দিলে…

— শালিক পাখির পু** এর মতো লাগে। তাই তো? আমি জানি।বারবার বলতে হবে না।

ইশান থেমে গেলেন। সে এতক্ষণ ভয়ংকর রেগে থাকলেও এখন ভয়ংকর ভয় পাচ্ছেন। আমার উদ্দেশ্য বুঝে গিয়েছিলেন হয়তো।

—চলে,বাড়ী চলো।

আমি পাত্তাই দিলাম না। জোরপূর্বক তাকে নিয়ে খেতে বসলাম। আমি নিজ হাতে ছোট মাছ রান্না করেছি। আমার শাশুড়ি দেখিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিকাল পর্যন্ত আমার সাথেই ছিলেন। সে জানতো আমি তার ছেলে কে সারপ্রাইজ দিবো। তিনি বারণ করেন নি উল্টো খুশি হয়েছিলেন। প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,’ তুমি আমার ছেলের এত কেয়ার করবে, আমি কখন চিন্তা ই করি নি।’
যাবার সময় ফুফু আর দাদীমার সাথে কথা বলিয়ে দিলেন। সবাই আমাকে নিয়ে খুব খুশি ছিলো। কারন সবাই জানতো, অপরেশনের পর থেকে ইশান আমার সাথে কথাবার্তা বলে না। আমি তাকে আমার এত বড় সমস্যার কথা জানাই নি কেনো- সে নিয়ে ছিলো তার বিশাল রাগ। খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। ইশানের গা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। সে বারবার বলছিলো চলে যাবার জন্য। কিন্তু আমি গায়ে মাখলাম না। তখন তার
আমার দিকে তাকানোর বা আমাকে ছোঁয়ার বিন্দুমাত্র সাহস হচ্ছিলো না। আমার কাজ আরো সহজ হয়ে গিয়েছিলো। সে ভালো করেই বুঝেছিলো আজ সে আমাকে ফিরাতে পারবে না। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তক্তা স্বামীর কাছে যেতে পেরেছিলাম। ইশান ধীরে ধীরে অনেক স্বাভাবিক হয়েছিলেন। সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম হয়ে গিয়েছিলো তার। আমার হাত স্পর্শ করতেও তার নানারকম অসুবিধা হতো। সেদিনের পর ধীরে ধীরে তার ভয় দূর হয়েছিলো। আমরা সাধারন স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেলাম। আল্লাহর রহমতে এখনো একসাথেই রয়েছি। এ পর্যন্তই ছিলো আমার বিবাহের পূর্বের সুখ-দুঃখের গল্প। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ দর্শক শ্রোতা, ধন্যবাদ এবং তুমি কর্তীপক্ষ।

–*

প্রভাতি থামলো। ক্যামেরা বন্ধ করা হলো। সে পানি খেতে চাইলো। দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে বলতে তার গলা শুকিয়ে গিয়েছে। মিস সুস্মিতা তাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। উত্তেজনায় তার শরীর কাঁপছে। এত বড় নামকরা একজন ডক্টরের জীবনকাহিনী সে হোস্ট করছে-বিষয়টা তার জন্য বিষ্ময়কর। কোথাও কোনো ভুল করে ফেলছে কি না সেজন্য প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। এসির টেম্পারেচার হাই করা। তবুও তার কপাল বেয়ে তরতর করে ঘাম বের হচ্ছে। এতক্ষণ চুপ থাকলেও এই মুহূর্তে সে চুপ থাকতে পারছে না। মন-মষ্তিষ্কে নানান প্রশ্ন জেগে উঠছে।

সুস্মিতা খানিকটা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,

—ম্যাম, আপনি তো আপনার জীবনের শেষের কাহিনী বললেন না। আই মিন, আপনা…

প্রভাতি তাকে থামিয়ে দিলো। গ্লাস টা রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,

—আমি জানি। ইচ্ছে করেই বলি নি। এ বিষয়টা বললে আমার এবং আমার বাচ্চার সমস্যা হবে। সারোগেট মা বাংলাদেশে এখনো বৈধ নয়। তাই আমি এ বিষয়টি সর্বক্ষণ এড়িয়ে যাই। সারোগেট মা, টেস্টটিউব বেবি বুঝেন তো?

সুস্মিতা মাথা নাড়ালো। হড়বড়িয়ে বললো,

—জ্বি,ম্যাম। বুঝি। এক্ষেত্রে বাবা-মা এর শুক্রানু এবং ডিম্বানু টেস্টিটিউবে স্থানান্তর করে ভ্রুন তৈরী করা হয় এবং অন্য মহিলা গর্ভধারন করেন। তখন সন্তান হুবহু বাবা কিংবা মায়ের বৈশিষ্ট্য পেয়ে থাকে। ম্যাম আপনার ছেলেটাকেও একদম আপনার মতো দেখায়। তার ট্যালেন্ট ও একদম আপনার মতো। এজন্যই বোধহয় এত কম বয়সে সে ক্ষুদে আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত। আমার তাকে খুব ভালো লাগে। খুব ইচ্ছা ছিলো দেখা করবার। আপনি নিয়ে আসেন নি কেনো?

প্রভা মাথা নাড়িয়ে বললো,

— ইশমাম আর তার বাবা তো লন্ডনে। আমারও আজ যাবার কথা ছিলো, একচুয়েলী অপারেশনের জন্য যাওয়া হয় নি। অপারেশনের পর যথেষ্ট সময় রয়েছে দেখেই আপনাদের অনুষ্ঠানে চলে আসলাম। অনেকদিন থেকেই আপনারা রিকুয়েস্ট করছিলেন। তাই আজ সুযোগ করেই চলে আসলাম।

সুস্মিতা মাথা নড়ালো।কিছুক্ষণ বাদে মুখ কাচুমাচু করে বললো,

—-একচুয়েলী ম্যাম আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। এখন তো অফস্ক্রিন, প্লিজ আপনি যদি বলতেন।

প্রভাতি হেসে বললো,

— আচ্ছা বলুন।

সুস্মিতা ঘনঘন শ্বাস ফেললো। নিজেকে ধাতস্থ করে একনাগাড়ে বললো,

—ম্যাম প্রথমত, আপনি ডাক্তার কেনো হলেন আই মিন কীভাবে? দ্বিতীয়ত ইশান স্যার কেনো আপনার বোন কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। তৃতীয়ত আপনার শশুড়বাড়ীর লোকজন কই? উনাদের এখন কী অবস্থা? আপনার বাবা আর আপুর কি খবর? ডক্টর নিধি কই? আর আর..

সুস্মিতা থেমে গেলো। এতক্ষণ সে কত প্রশ্ন ভেবে রেখেছিলো অথচ দেখো এখন কিচ্ছু মনে পড়ছে না। আচ্ছা যা প্রশ্ন করেছে সেগুলো জানতে পারলেই এনাফ। বাকিগুলো সে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনে নিবে।

প্রভাতি হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,

— ওকে রিলেক্স। এগুলো বলে নেই। আমার ডক্টর হওয়ার পেছনের কারণ ছিলো ডক্টর নিধি। শুধু তাকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম স্বামী-সন্তানের সাথে থাকলেও ক্যারিয়ার গড়া যায়। অনেকের চিন্তাধারা এমন যে ক্যারিয়ার চাইলে পরিবার করা যাবে না, পরিবার চাইলে ক্যারিয়ার না। কিন্তু আমি তা ভুল প্রমান করে দিয়েছি। অবশ্যই এর পেছনে আমার স্বামী এবং শশুড়বাড়ীর লোকের শতভাগ সাপোর্ট ছিলো। উনারা না থাকলে কখনোই সম্ভব হতো না। কখনোই না। তাদের সবার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।

পরের প্রশ্ন ইশান কেনো আপুকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো? আমি বলছি, সেটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আপু যখন ইশানের কাছে প্রথম গিয়েছিলো। আমার চাকরীর ব্যাপারে কথা বলতে তখন ইশান প্রথমে বলেছিলো,
—‘ আপনি মিস মাধবি, রাইট? তৃষা আমাকে আপনার কথা বলেছে।

আপু তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিলো,

—‘ আর কিছু বলে নি? বলি নি আমার মা পর-পুরুষের সাথে পালিয়ে গেছে। আমাদের কথা জিজ্ঞেস করলেই তো এটা বলে। আপনি বললেন না যে?’

ইশান চুপ করে ছিলেন। কোনো জবাব দেন নি। কারন আপার ফ্রেন্ড তৃষা সত্যিই এমনটা বলেছিলো। সেদিন আপার প্রতি মায়া জন্মেছিলো ইশানের। এজন্যই আপাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
আর আমার আপা এখন শশুড়বাড়ীতে রয়েছেন। উনার একজন কলিগ উনাকে পছন্দ করতো। কিন্তু তিনি ডিবোর্সি হওয়ায় আপাকে বিয়ের কথা বলতে সাহস পান নি। আপার সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার অনেকদিন পর তিনি তার পরিবার সহ প্রস্তাব নিয়ে আসেন। আপা রাজি ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে দুলাভাইয়ের জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছেন। দুলাভাই আপাকে অনেক ভালোবাসেন।অনেক!
আমার আপার একটা মেয়েও হয়েছে। নাম মিনি। তার আড়াইবছর বয়স চলছে। কি মিষ্টি মিষ্টি কন্ঠে সে মনি ডাকে। দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে করে।
আর আমার বাবা নতুন মায়ের সাথেই আছেন। আমি কিন্তু প্রায়শই তাকে আমার সাথে লন্ডনে নিয়ে যাই। কিন্তু তিনি ওখানে থাকতে নারাজ। তাই ছ-মাস না হতেই আবার চলে আসেন।

আরো একটা প্রশ্ন ছিলো আমার শশুড়বাড়ীর সম্পর্কে,তাই না? আমার দাদীমা আর শশুড় বেঁচে নেই। আর বাকিরা বি-দেশে রয়েছেন। শাশুড়িমা আমার সাথেই থাকেন। ইশমাম দাদী ছাড়া কিছুই বুঝে না। তাই আমি আর ইশান কাজে চলে যাবার পর তাকে উনার কাছেই রেখে যাই। দাদী-নাতির বন্ডিং দেখলে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। ইশানের মা ইশমাম বলতেই পাগল।

প্রভাতি একটু জিরিয়ে আবারো বললো,

‘আই থিংক, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে? একটা অনুরোধ ছিলো, রেকর্ডিং এ কিছু সমস্যাজনক বিষয় বলে ফেলেছিলাম, আপনি প্লিজ সেগুলো কেটে দিয়েন।’

সুস্মিতা কৃতজ্ঞতার সুরে বললো,

— জ্বি, জ্বি। ধন্যবাদ ম্যাম।

—আচ্ছা,তাহলে উঠি? আজ বিকালের ফ্ল্যাইটে লন্ডনে যেতে হবে। ইশমাম আর ইশান স্যার নিশ্চই এয়্যারপোর্টে অপেক্ষা করবেন। থ্যাংকইউ ফর দিস বিউটিফুল ইন্টারভিউ। আপনাদের জন্যই আজ আমি আবারো সেই পুরানো দিনগুলি অনুভব করেছি। সেই কষ্ট দুঃখ,হাসি কান্না ফিল করেছি। আপনাদের টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনাদের “#এবং_তুমি” অনুষ্ঠানে আমার ‘তুমির’ কথা বলতে পেরে আমি সত্যিই ভীষণ আনন্দিত।

সুস্মিতা খুশিতে আটখানা হয়ে বললো,

— আওয়ার প্লেজার ম্যাম।

কুশল বিনিময় করে প্রভা বেরিয়ে পড়লো। তার হাতে এখনো একঘন্টা সময় আছে ফ্ল্যাইটের জন্য। সে চট করে মাধবিকে ফোন দিলো। বোনের মেয়েটার সাথে দেখা করার ইচ্ছা জাগলো। প্রভাতির ইশমামের কথা মনে পড়তেই হেসে ফেললো। ইশমাম মিনি বলতে পাগল। সে প্রতিবার গেলেই বলবে,–‘ mammam! why you don’t bring mini? I want to play with her.’
প্রভাতি তখন নানারকম বাহানা বানায়। ইশমাম কখনো সরাসরি মিনিকে দেখে নি। ফোনেই যতটুকু কথাবার্তা হয়েছে। সারাদিন মিনিকে ফোন দিয়ে তার নানান খেলনা দেখাবে, তার পুরো দিনের কার্যক্রম বলবে। অথচ মিনি একটা শব্দও বুঝে না। কারণ ইশমাম ইংরেজীতে কথা বলে। প্রভাতি আনমনে হেসে পা বাড়ালো। তার ফোন টুংটাং করে উঠলো। ইশান মেসেজ পাঠিয়েছে। ‘ সে অপেক্ষা করছে।’
প্রভাতি রিপ্লাই করলো,’ এত দ্রুত এসেছো কেনো?আর আসার ই বা কি দরকার? কয়েকঘন্টা পরেই তো আমি চলে আসবো। এ কতক্ষণ অপেক্ষা করলে কী এমন কষ্ট হবে?’

ইশান রিপ্লাই দিলো,— ‘ অপেক্ষা সর্বদাই কষ্টের। সেটা ক্ষণিকের হোক বা দীর্ঘসময়ের।’

প্রভাতির হাত থেমে গেলো। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো স্ক্রিনের উপর। যেনো কেউ তাকে হিপনোটাইজ করে ফেলেছে। সে উপলব্ধি করছে এত বছরের সংসারে তার প্রতি লোকটার ভালোবাসা একটুও কমে না। বরং বেড়েছে। প্রভাতি খোলা আকাশের দিকে তাকালো। সম্পূর্ণ ঝকঝক,পরিষ্কার আকাশ। একদম তার জীবনের মতো। এক জীবনে এত দুঃখ পার করেই আজ অজস্র সুখের দেখা পেয়েছে। তার চোখ গড়িয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। না এ দুঃখের অশ্রু নয়, সুখের অশ্রু। খুশির অশ্রু…..

.

~~~~সমাপ্ত

®সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here