#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
—-কিন্তু এখন কি করবো আমরা,আমাদের যেকরেই হোক নকল শ্রেষ্ঠা পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।কারণ একমাত্র ওই জানে যে ও কে…ওর থেকে ওর আসল পরিচয় জানতে হবে আমাদের।
(আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো শ্রেষ্ঠা)
—-হ্যাঁ,কিন্তু ওকে খুঁজে বের করাটা কি এতো সহজ হবে…??
—না,সেটা সহজ হবে না।কারণ সে এখন আর আমাদের আওতার ভেতরে নেই।জানিনা এখন কোথায় আছে সে…??
—-আচ্ছা,এমনটা নয় তো।ও পালিয়ে আমার বাবার কাছে যাই নি তো…??
—তোমার বাবার কাছে…??
—দেখো শ্রেষ্ঠা,একটা কথা বলি।এতোদিন তুমি যেমন বাবার ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ছিলে,নকল শ্রেষ্ঠাও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়।এতোদিন বাবা ওকে কাজে লাগিয়েছে নিজের জন্য।আমাদের বিয়ের সময় বাবাই ওকে ষড়যন্ত্র করে তোমার আর আমার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমাদের ভেতরে সমস্ত ভুলবোবুঝির জন্য দায়ী একমাত্র বাবা,এটা তো ঠিক!
—হ্যাঁ,কিন্তু আমরা কেউ এই ব্যপারে নিশ্চিত নই যে ও ঠিক কোথায় আছে এই মুহুর্তে…,,ওকে আগে না ধরতে পারলে বাবার আসল রহস্যটা কখনোই জানা সম্ভব নয়।সে তোমাকে কেন খুন করতে চাইছে এটা আমাদের যেকরোই হোক জানতে হবে….
—-এই প্রশ্নের উত্তর আমিও যে খুঁজে বেরাচ্ছি, আমার নিজের বাবা কেন খুন করতে চাইছে আমায়…আমার ওপর তার এতো রাগ কিসের…কিসের এতো ঘৃনা।এটা না জানতে পারা পর্যন্ত আমার যে মুক্তি নেই..
—তোমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি আমি, আজ থেকে তোমার আর আমার উদ্দেশ্য একটাই হবে।নকল শ্রেষ্ঠার মাধ্যমে যেকরেই হোক তোমার বাবার মুখোশটা টেনে খুলে দেওয়া।আর নকল শ্রেষ্ঠা বাস্তবে কে…আমার সাথে তার চেহারার মিল কিকরে…এই প্রশ্নের উত্তর ওদের দিতে হবে আমাকে।একবার বাগে পাই,তারপর সব বের করে ফেলবো পেট থাকে।
—-আচ্ছা,সে তো বুঝলাম।এখন নকল শ্রেষ্ঠাকে ট্রেস করবো কিকরে আমরা,তার প্লান করো!
—আচ্ছা,এমনটা নয় তো কোথায়, ও বাড়িতেই আছে। অর্থাৎ তোমার বাড়িতে….??
—আমার বাড়িতে!!!আমার বাড়িতে কেন আসবে ও??
—কেন এটা আর অস্বাভাবিক কি,ও ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে একপ্রকার পালিয়ে গিয়েছিলো, তুমি যে তারপর ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছো সেটা তো জানার কথা নয় ওর।তোমাকে হাসপাতাল নিয়ে আসার সময়ে যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো তখন বুদ্ধি করে সবাইকে তোমার বেঁচে থাকার ব্যপারে কাউকে জানাতে বারণ করেছিলাম আছি।কারণ আমি জানি তুমি মরে গেছো,এটা নিশ্চিত হতে ও বাড়িতে নিশ্চয়ই আসবে।নাটক করবে সবার সাথে!নয়তো সবার সন্দেহের তীরটা যে ওর দিকেই যাবে সেটা কি জানে না ও।
—গুড পয়েন্ট,এটা ভালো বলেছো!!এখন আমাদের বাড়ির ওপরে সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য একজন লোক রাখা দরকার,যে আমাদের প্রতিমুহূর্তের আপডেট দিতে থাকবে।যাতে আমরা ঐ বহুরূপী আবার ফিরে আসার আগেই ধরে ফেলতে পারি।
—-তবে,ওকে ধরলেই যে বাবার মুখ থেকে আসল সত্যগুলো জানতে পারবো আমরা এমন নয়।
—-না,আমি তার জন্য অন্য একটা প্ল্যান রেডি করে রেখেছি।
—আমি হয়তো অনেকটাই আন্দাজ করতে পেরেছি।ঠিক কি করতে চাইছো তুমি?
—-হ্যাঁ,আগে বহুরূপীটাকে ধরি তারপর তোমার বাবার মুখ থেকে আসল সত্যিটা কিকরে বের করতে হয়,সেই দ্বায়িত্ব আমার।তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো…তোমাকে তোমার জীবনের চরম সত্যির মুখোমুখি দাঁড় করাবোই আমি,আর বেশিদিন এই চিন্তা নিয়ে দিন কাটাতে হবে না তোমায়।
—-আর আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমার বাবা
যে অন্যায় করেছে তোমার সাথে…. নিজের স্বার্থের জন্য অন্ধকার জগতে ঠেলে দিয়েছে তোমাকে।তোমার প্রতি হওয়া প্রতিটা অন্যায়ের উপযুক্ত জবাব দেবো আমি আমার বাবাকে।
এরপর আমি আমার বাসার পাশে একজন বিশ্বস্ত লোক সেট করে রাখি,সে আমাকে সার্বক্ষণিক আপডেট দিতে থাকে।দিন পেরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো।সেইরকম কোনো খবর পেলাম না।তবে আগুন নেভাতে কেউ ফায়ার সার্ভিস ডেকেছিলো সকাল বেলা,এরপর বাড়িতে পুলিশো আসে।তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়াতে ব্যপারটা নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামায়নি খুব একটা।এরপর সন্ধ্যার পরে একটা ফোন আসে আমার কাছে….
—-হ্যাঁ,বলো।
—-সৌহার্দ্য স্যার, একটা নিউজ আছে।
—কি নিউজ?
—-আপনার ওয়াইফকে দেখলাম এই মাত্র বাড়িতে ঢুকলেন!!
—-তুমি সিওর,সে আমার স্ত্রীই ছিলো।
—হ্যাঁ,আমি কনফার্ম।
ঠিকই তো,আমার বাড়িতে মহিলা বলতে আর কে আসবে,নকল শ্রেষ্ঠা ছাড়া।তার মানে শ্রেষ্ঠা ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছিলো।আমি দ্রুত শ্রেষ্ঠাকে ওর আসার কথা জানাই।তারপরে দুজনে মিলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বাসার সামনে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা,তার মানে ও সত্যিই আছে ভেতরে!!প্রথমে আমি কলিং বেল প্রেস করি।অনেকক্ষণ ধরে কেউ দরজা খুলছে না ভেতর থেকে।হয়তো একটা দ্বিধাদ্বন্দের ভেতরে পড়ে গেছে ও।তাই সিধান্ত নিতে পারছে না কি করা উচিত।অবশেষে দেখলাম ভেতর থেকে কেউ দরজাটা খুলতে লাগলো,আমি সরে গেলাম।শ্রেষ্ঠা গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়।শ্রেষ্ঠার মাথায় প্রচুর বুদ্ধি ধরে,,ও নকল শ্রেষ্ঠাকে প্রথমেই ভরকে দিতে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।যাতে সহজে তাকে কাবু করা যায়।
দরজা খুলতেই দেখলাম,আমাদের অনুমানই সত্যি।ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো নকল শ্রেষ্ঠা!!!
চোখের সামনে শ্রেষ্ঠাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো ও।এরপর আমি যখন শ্রেষ্ঠার পাশে গিয়ে দাঁড়াই যেন একটা হাই ভোল্টেজের শক খেলো সে।ভয়,আতংক আর বিষ্ময়ে পা কাঁপতে লাগলো তার।দরজা খুলে এতো বড়ো একটা দৃশ্য দেখতে হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।আমাদের দুজনকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফেইক শ্রেষ্ঠার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম।ভয়ে ভয়ে শ্রেষ্ঠাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো সে….
—-একি… তুমি এখানে….???তুমি এখন এখানে কেন,আর এখানে কি করছো?
প্রশ্নটা শেষ হতে না হতেই শ্রেষ্ঠা ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো ওর গালে।
—আমি এখানে মানে….এটা তো আমার সৌহার্দ্যের ঘর।এই জায়গায় আজ আমার থাকার কথা ছিলো।তুই এখানে কিকরে এলি সেটা আগে বল?তার আগে বল কে তুই!?
—-শাট আপ,জাস্ট শাট আপ।সৌহার্দ্য আমার হাসবেন্ড,তুমি আমাকে এতো প্রশ্ন করার কে হে?
—হাসবেন্ড!!!যাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে একটি বারের জন্য হাত কাঁপলো না,কোন মুখে তাকে নিজের হাসবেন্ড দাবি করছো।ঐ মুখে আর একবার সৌহার্দ্যের নাম উচ্চারণ করলে জ্বীভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি তোমার।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথাগুলো শুনছি।
—তুমি আমার কিছুই করতে পারবে না।আমাকে চেনো না তুমি…,।
—হ্যাঁ,চেনার জন্যই তো এসেছি,আগে বল তুই কে….???আমার আর সৌহার্দ্যের ভেতরে এলি কিকরে তুই?
—আমি কিছুই বলতে পারবো না।আমায় মেরে ফেললেও না।
—এতো সহজে তো মারবো না তোকে,তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো তোকে,আর এমন শাস্তি দেবো তুমি..বাধ্য করে ছাড়বো তোকে নিজের মুখে সবটা স্বীকার করতে।
—-আমাকে শাস্তির ভয় দেখিও না তোমরা।আমি ভয় পাই এসবে…সমস্ত হুমকি দুমকি শাড়ির আঁচলে গুজে রাখো। ওকে।
—-এতো কথা কেন বলছি এর সাথে,মোটা দেখে একটা দড়ি আনো তো,তারপর ওকে নিয়ে স্টোর রুমে চলো….ওর একটা পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করতে হবে(আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো শ্রেষ্ঠা)
আমি একটা দড়ি নিয়ে আসলাম।তারপর নকল শ্রেষ্ঠাকে স্টোর রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।শ্রেষ্ঠা দড়ি দিয়ে ওকে একটা চেয়ারের সাথে বাঁধলো।
—-জানতাম, তুই সহজে নিজের মুখে স্বীকার করবি না কিছুই।আর সেটা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।তুই তো চুনোপুঁটি,রাঘব বোয়ালকে ধরার পালা এখন।
—আমায় এখানে আটকে রেখে কি করতে চাইছো তোমারা,ছেড়ে দাও বলছি,ভালো হচ্ছে না একদম।
শ্রেষ্ঠা আবারো আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
—-ঘর থেকে ওর কিছু কাপড় নিয়ে আসো তো!
—এখন কাপড় দিয়ে কি হবে?
—আনতে বলছি আগে আনো,তারপর দেখো কি করি।
আমি কিছু কাপড় নিয়ে এসে শ্রেষ্ঠার হাতে দিলাম।ওর আমাকে বাইরে রেখে স্টোরের দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে দরজা খুললো।শ্রেষ্ঠার দিকে তাকিয়ে হতবাক না হয়ে পারলাম না,,
ও পুরোপুরি নকল শ্রেষ্ঠার মতো সেজেছে,,আর নকল শ্রেষ্ঠাকে অন্য পোশাক পড়িয়ে, সাথে কিছু খাবার রেখে স্টোর রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
—-এবার বুঝতে পারলে তো, কি করতে চলেছি আমি।
—হ্যাঁ,খুব বুঝতে পেরেছি।
—নকল শ্রেষ্ঠা বন্দী আছে,ও এখন আর কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।এই সুযোগে কিছুক্ষণের জন্য আমিই নকল শ্রেষ্ঠা,তোমার বাবার কাছে নকল শ্রেষ্ঠা হয়েই যাবো আমি।আর আশা করি তুমি তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর খুব শীঘ্রই পেয়ে সৌহার্দ্য……
শ্রেষ্ঠার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আমি, একসময় হাবাগোবা সহজ সরল প্রকৃতির সেই শ্রেষ্ঠাকে যেন চিনতেই পারছি না আমি।জীবনের ঘাত প্রতিঘাত ওর ভেতরটাই পাল্টে দিয়েছে একেবারে।
খুব শীঘ্রই সমস্ত রহস্যের সমাধান হবে,সবাই ততক্ষণ সাথেই থাকবেন।ধন্যবাদ।
চলবে…..