ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ১৫

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-১৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

শ্রেষ্ঠা নকল শ্রেষ্ঠার বেশে বাইরে বেরিয়ে গেলো…..আমার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে।কারণ আমাদের জানামতে বাবা এখন ওখানেই আছে।সেখানে গেলেই তাকে পাওয়া যাবে।

গ্রামের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল হয়ে গেলো।গ্রামের বাড়িতে একটা বড়ো ফার্ম আমাদের।বাবা সেটারই দেখভাল করে।আমাদের গ্রামটা শহরের অনেকটা কাছাকাছি, তাই চারপাশের পরিবেশে একটা শহুরে ভাব বিরাজ করে।

শ্রেষ্ঠা ফার্মের ভেতরেই বাবাকে পেয়ে গেলো।বাবা যথারীতি শ্রেষ্ঠাকে,আমার স্ত্রী অর্থাৎ নকল শ্রেষ্ঠা ভেবে ভুল করে।সে শ্রেষ্ঠাকে ঐ সময়ে গ্রামের বাড়িতে দেখে বেশ অবাক হয়।

—-কি ব্যপার প্রজ্ঞা,তুমি এখন এই সময়ে…???

—-(ওহ তার মানে বহুরূপীর আসল নাম প্রজ্ঞা, মনে মনে ভাবলো শ্রেষ্ঠা)হ্যাঁ,আমি!

—তুমি এখন এখানে কেন,আর সৌহার্দ্য কোথায়….??আমার সাথে এইভাবে দেখা করতে এসেছো কেন,ও জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছো?

—-আমি এতো কিছু ভেবে আসে নি এখানে?

—তো,কেন এসেছো??

—-এসেছি,একটা কাজ আছে তাই এসেছি।

—-পাগল হয়ে গেলে নাকি,আর তুমি আমায় অন্তত একটা ফোন তো করতে পারতে।এতো বড়ো একটা রিস্ক নেয়াটা কি ঠিক হলো!

—নাহ!সমস্যা নেই,কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না।

—সৌহার্দ্যকে চেনো না তুমি,ও যেকোনো সময়ে ধরে ফেলতে পারে।আচ্ছা ছাড়ো সেসব কথা।এখন কেন এসেছো এখানে বলো।

শ্রেষ্ঠা যদিও এখন পর্যন্ত আমার বাবার বিষয়ে কিছুই জানে না,খুব মেপে কথা বলতে হচ্ছে।একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলেই সন্দেহ করে বসবে।তখন হিতে বিপরীত না হয়ে যায়।তারপরেও বাবার পেট থেকে কথা বার করার জন্য কিছুটা হলেও ঝুঁকি তো নিতেই হবে।এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

—–আপনার সাথে কিছু কথা বলার আছে আমার?

—কথা,,কিসের কথা??

—বলছি,আর কতোদিন আমায় শ্রেষ্ঠা সাজার নাটক করে থাকতে হবে।আর পারছি না আমি, বড্ড হাফিয়ে যাচ্ছি।এবার রেহাই দিন আমায়।

—আরে…. বলে কি!?এগুলো কি বলছো তুমি, মাথা ঠিক আছে তো তোমার!

—আমার মাথা ঠিকই আছে,,

—আচ্ছা, কি এমন ঘটে গেলো এই কয়েকদিনের ভেতর বলো তো। হঠাৎ করে কেন এতো পরিবর্তন তোমার।ভুলে গেলে কতো কষ্ট করে সেদিন শ্রেষ্ঠার জায়গায় তোমায় বসিয়ে দিয়েছিলাম আমি,সৌহার্দ‌্য তো আমার ছেলে হয় তাই না।তারপরেও ওকে আমি ঘুণাক্ষরেও কিছু বুঝতে দেই নি।শুধু তোমার ভালোর কথা ভেবে।যাতে তুমি শ্রেষ্ঠা সেজে সংসারটা করতে পারো তার জন্য কতো ধরনের প্রচেষ্টা করেছি আমি, এখনো করছি। আর সেই তুমি কিনা এখন আমার কাছে এসেছো এই নাটকগুলো করতে।শোনো তোমার ফালতু নাটক দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

—-(তার মানে,নকল শ্রেষ্ঠা অর্থাৎ প্রজ্ঞাকেও এই বুড়ো নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে।ওনার কথাশুনে ভালোই বুঝতে পারছি,প্রজ্ঞা সৌহার্দ্যের পেছনে করা ওর বাবার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কিছুই জানে না।এই বুড়ো প্রজ্ঞাকে এটা বুঝিয়ে রেখেছে যে সে শুধুমাত্র প্রজ্ঞার কথা চিন্তা করে ওকে শ্রেষ্ঠা সাজিয়ে এনেছে,বাস্তবে ওনার যে আসল উদ্দেশ্য নিজের ছেলেকে খুন করা এটা প্রজ্ঞা জানে না।বুড়ো আমার সাথে সাথে এতোকাল ধরে প্রজ্ঞাকেও ঠকিয়ে এসেছে।ওকে সংসারের মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে দিনের পর দিন নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে।যাক,অন্তত বিনা বাধায় এইটুকু তো ক্লিয়ার হলো।এখন এর থেকে সৌহার্দ্যকে খুন করতে চাওয়ার আসল কারণ,আর প্রজ্ঞার আসল পরিচয় কি,এই দুটো প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে আমাকে।কিন্তু এনাকে সরাসরি প্রশ্নগুলো কিছুতেই করতে পারি না আমি।যেহেতু প্রজ্ঞা সৌহার্দ্যকে খুন করার বিষয়ে কিছুই জানে না, তাই এই টপিক নিয়ে এখন কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না।এখন যেকরেই হোক এই বুড়োকে ব্যবহার করে প্রজ্ঞার আসল ঠিকানা পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।হয়তো সেখানে গেলেই আমার রহস্যের জট আরো অনেকটা উন্মোচন হবে।এভাবেই আস্তে আস্তে এগোতে হবে আমায়। (কথাগুলো এতোক্ষণ মনে মনে চিন্তা করলো শ্রেষ্ঠা)

—কি হলো,এতো কি ভাবছো??আর একটা কথা বলো,তুমি কি সত্যি এই বেকার কথাগুলো বলার জন্য এখানে এসেছো।

—বেকার কথা মানে,কোনটা বেকার কথা?

—তোমার সমস্ত কথাই বেকার।কারণ তুমি এখন যেটা বলছো কিছুতেই সম্ভব না!

—হয়তো তাই,আসলে আমার নিজেরই মাথাটা ঠিক নেই।

—-কেন,কি হয়েছে আবার,আচ্ছা সৌহার্দ্য কি কোনোভাবে সন্দেহ করেছে তোমায়?

—নাহ, সন্দেহ করে নি।

—তাহলে কি হয়েছে,,

—আসলে বাসার লোকজনের কথা মনে পড়ছে সব।অনেকদিন দেখা হয় না কারোর সাথে (ঝোঁপ বুঝে কোপটা মেরেই দিলো শ্রেষ্ঠা)

—বাসার লোকজন মানে…মা ছাড়া আর কে আছে তোমার বাড়িতে।

—-(তার মানে প্রজ্ঞার মা ছাড়া কেউ বেঁচে নেই )ওই হলো…মায়ের কথাই বড্ড মনে পড়ছে।

—এই কথা,তো কয়েকদিনের জন্য তার সাথে দেখা করে আসতে।মায়ের কথা মনে পড়ছে, তার জন্য আমার কাছে এসেছো কেন?

—-হ্যাঁ, আমি আপনার ছেলের কাছে বলতাম যে আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে,সে আমাকে শ্রেষ্ঠার বাড়িতে নিয়ে যেতো।আর সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে যাই আমি।সেটাই চান আপনি?

—তাও তো ঠিক,এখন কি করতে চাইছো তুমি?

—কি আর করবো,একটা প্ল্যান করেছি। যাতে আমি নিজের বাড়িতে মায়ের সাথে দেখা করতে যেতে পারি। আর সৌহার্দ্য কিছু জানতেও না পারে।

—কি প্ল্যান করলে?

—আপনার ছেলে এই সময়ে একটু কাজের চাপে আছে, আমি এই সময়েই বাড়িতে যাবার কথা বললাম তাকে। আমি জানি সে যেতে পারবে না কিছুতেই,আমাকে বললো যেন আমি গ্রামের বাড়িতে আপনার কাছে চলে আসি। তারপর আপনিই এখান থেকে আমাকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন।

—বাহহহ…. জব্বর প্ল্যান করেছো দেখছি। তো এখন চলে যাও না নিজের বাড়িতে,সৌহার্দ্য তো আর দেখতে যাবে না।তুমি একা যাচ্ছো,না আমার সাথে!

—(এই সেরেছে,এখন আমি নিজে থেকে প্রজ্ঞার বাড়িতে কিভাবে যাবো?তখন কতো চেষ্টা করলাম প্রজ্ঞার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য,প্রজ্ঞা নিজে থেকে ওর ঠিকানাটা দিলে এতো কাঠখড় পোড়াতে হতো না আমায়।অবশ্য শ্রেষ্ঠাকে বিশ্বাসও নেই আমাদের।ওর কথা বিশ্বাস করা মানে যেচে বিপদ ডেকে আনা। এখন যেকরেই হোক সৌহার্দ্যের বাবাকে সাথে নিয়ে প্রজ্ঞার বাড়িতে পৌঁছতে হবে আমাকে।তারপরেই প্রজ্ঞার বিষয়ে সমস্ত গোপন তথ্য জানতে সক্ষম হবো আমি।কে এই প্রজ্ঞা,আমার সাথে ওর চেহারার অদ্ভুত মিল কিকরে?হয়তো এর সাথে সৌহার্দ্যের বাবার রহস্যের কোনো সম্পর্ক আছে…!সবটাই তখন জানতে পারবো আমি,যখন প্রজ্ঞার বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো আমি।এখন সৌহার্দ্যের বাবাকে যেকরেই হোক আমার সাথে যাবার জন্য রাজি করাতে হবে।)
নাহ,আমি একা যেতে পারবো না।আপনি চলুন আমার সাথে।

—কেন,আমাকে যেতে হবে কেন?তুমি কি নিজের বাড়ি চেনো না,নাকি?

—আমি চাই না, আপনার ছেলের মনে আমাকে নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি হোক।যে যদি জানতে পারে আমি গ্রামে এসেও আপনাকে না নিয়ে একা একা নিজের বাড়িতে চলে গেছে।তখন আবার সন্দেহ করে বসবে আমায়।

এরপর অগ্যতা বাবা শ্রেষ্ঠার সাথে যেতে রাজি হয়।শ্রেষ্ঠা নিজেও জানে না প্রজ্ঞার বাড়িতে কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য, শুধু এইকটুকু জানে ঐ বাড়িতে গেলে অনেকগুলো রহস্যের সমাধান হবে।।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here