‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
“দো লাফজ কি হ্যান, বাতে কাহি হ্যান
কিউন দারমিয়ান ফির রুকি রুকি
কেহ ভি না পায়েন, রেহ ভি না পায়েন
কিউন বেওয়াজাহ হ্যা, ইয়ে বেবাসি”
আধভিক ড্রিংকসে চুমুক দিয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো গানের লাইন শুনে। তাঁর সত্যি একই অবস্থা। সে না থাকতে পারছে সিয়ারার সাথে আর না রাখতে পারছে।
“তুম মেইন হাম হ্যান, হাম মেইন তুম হো
তুমসে হাম হ্যান, হামসে তুম হো
কিসমাতোন সে মিলতে হ্যান দো দিল ইয়াহান
হার কিসিকো, নাহি মিলতা
ইয়াহা প্যায়ার জিন্দেগি মেইন।
খুশ নসীব মেইন হাম, জিনকো হ্যান মিলি
ইয়ে বাহার জিন্দেগি মেইন। ”
আধভিক সিয়ারাকে দেবাংশুকে ছেড়ে এগিয়ে আসতে দেখলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মনে মনে ভাবে,
আধভিক: আগে ভাবতাম আমার কপালেই মনে হয় ভালোবাসাটা লেখা নেই। তারপর যখন পেলাম তখন এখন মনে হয় না পেলেই ভালো হতো। ভালোবাসার থেকে কষ্টটাই বেশি ভোগ করতে হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে।
“পেয়ার না হো তো জিন্দেগি ক্যায়া হ্যা
ইয়ার না হো তো বন্দেগি ক্যায়া হ্যা
তুঝসে হি হার খুশি হ্যা
তেরে গাম সে আশিকি হে জান লে
মিল যায়ে হাম তো, সব কুছ সাহি হে
ফির ইস তারহা কিউ, হে আজনা বি”
হঠাৎ করেই আধভিকের মনে হয় ওর পিঠে কেউ হাত রেখেছে। আধভিক পিছনে ফিরতেই দেখে সিয়ারা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। সে সামনে ফিরলে, সিয়ারা আধভিকের দুই বাহুর মাঝে এসে তাঁর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তৎক্ষণাৎ আধভিক বাস্তবে ফিরে আসে আর দেখে সিয়ারা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারে কিছুক্ষণের জন্য একটা কল্পনার জগতে সে চলে গেছিলো। তাই মূহুর্তেই সেই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চায় কিন্তু…
“তু মহাব্বত হ্যা, ইশক হে মেরা
ইক ইবাদত হ্যা, সাথ ইয়ে তেরা
যব দিলসে দিল মিলে হে
ফির কিউ ইয়ে ফাসলে হ্যায় ইস তারাহ”
কিন্তু আধভিক পরে যেতে নেয় তবে পরে না। পরার আগেই সিয়ারা আধভিককে ধরে নেয়। সেই অবস্থায় দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকায়।
“আ বোল দে তু, ইয়া বোল দু ম্যা
কাব তাক ছুপায়ে ইয়ে বেখুদি
তুম মেইন হাম হ্যান, হাম মেইন তুম হো
তুমসে হাম হ্যান, হামসে তুম হো
কিসমাতোন সে মিলতে হ্যান দো দিল ইয়াহান”
সিয়ারার মনে পরে ওর আধভিককে অনেক কিছু বলার আছে। আজ ও বলবেই। আর সহ্য হচ্ছে না ওর আধভিকের সাথে এই দূরত্ব, আধভিকের এই অবস্থা।
“হার কিসিকো, নাহি মিলতা
ইয়াহা প্যায়ার জিন্দেগি মেইন।
খুশ নসীব মেইন হাম, জিনকো হ্যান মিলি
ইয়ে বাহার জিন্দেগি মেইন।”
সিয়ারা: ঠিক আছো তুমি?
আধভিক উত্তর দেওয়ার আগেই গান থামিয়ে দেন আভাস বাবু। আধভিক আর সিয়ারার দিকে এগিয়ে আসলে আধভিক সোজা হয়ে সিয়ারাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
আভাস বাবু: ভিকি! এইবার অ্যানাউন্সমেন্টটা সেরে ফেলা যাক?
আধভিক হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লে সিয়ারা ধীরে ধীরে ওখান থেকে সরে যেতে নেয় কিন্তু সে সময় হঠাৎ করেই অভ্র বলে ওঠে,
অভ্র: ওয়েট আ মিনিট পাপা! ব্রোয়ের পাশে ওই মেয়েটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে আমার। ও সেই মেয়েটাই না যে দু বছর আগে ব্রোকে রিজেক্ট করে চলে গেছিলো?
অভ্রের কথায় আধ ভিক চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে নেয় এবং আভাস বাবু অপ্রস্তুত হয়ে পরেন। এই সময় ওনার সাথে কিছু নাম করা প্রোডিসার এবং ডিরেক্টররা উপস্থিত রয়েছেন। ওনারা আভাস বাবুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার আগেই এই তরফ থেকে উত্তর এলো,
সিয়ারা: আপনি মনে হয় আপনার ব্রোকে ঠিক ভাবে চেনেন না মিস্টার.. হোয়াটএভার। আপনি জানেন উনি ঠিক কেমন ধরনের মানুষ? যদি জানতেন তাহলে এই প্রশ্নটা করতে পারতেন না। আপনার ব্রোয়ের মতো মানুষকে রিজেক্ট করবে এমন ক্ষমতা আমার মতো সাধারণ মেয়ের নেই। যেখানে সব মেয়েরা তাঁকে পেতে চায় সেখানে আমার মতো একটা অতি সাধারণ মেয়ে ওনাকে রিজেক্ট করে চলে যাবে? তবে হ্যাঁ, পরিস্থিতি সব কিছু করতে পারে।
কথাটা জোর দিয়ে বলার সময় সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকায়। দেখে আধভিক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিয়ারার করুন চাহুনি দেখে আধভিকের মনের ঝড়ের সৃষ্টি হয়। সিয়ারা নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বলে,
সিয়ারা: একটু ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনার ব্রোই হয়তো রিজেক্ট করছে প্রতিশোধ নেওয়ার চক্করে। আর সেটাই ওনাকে মানায় আফটারঅল আধভিক রায় চৌধুরী বলে কথা।
সিয়ারা সবাইকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে ওখান থেকে দূরে এসে দাঁড়ালো। পুরো বিষয়টাকে ঘুরিয়ে দিয়ে সিয়ারা চলে গেলে আভাস বাবু খুশি হন। উনি চট জলদি অ্যানাউন্সমেন্টটা সেরে ফেলেন। কিন্তু আধভিকের চোখ এখনও সিয়ারার উপরেই সীমাবদ্ধ। অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেলে সিয়ারা ওখান থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে সরে যায়।
“তু হ্যান তো মেইন হুঁ, তু হ্যান তো মেইন
তু হ্যান তো মেইন হুঁ, তু হ্যান তো মেইন…”
আধভিকের বুকের বাম পাশে কেমন একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব হয় সিয়ারাকে সরে যেতে দেখে। মনে হয় জানো সিয়ারা শুধু ওর চোখের সামনে থেকে নয় ওর জীবন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আধভিক ঠিক করে ও আর দূরে ঠেলে দেবে না সিয়ারাকে। আর পারছে না ও সিয়ারাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে ঠিক থাকতে।
সিয়ারা হলের একদম কোণে এসে দাঁড়ায়। দেখে উপরে একটা ফ্লোর আছে এবং সেখানে দরজা দেখা যাচ্ছে তার মানে ঘর আছে। ও ঠিক করে দিয়ারাকে বলে, আধভিককে সেই ঘরে ডাকবে। দিয়ারাকে ফোন করার জন্য নাম্বার ডায়াল করতেই হঠাৎ সিয়ারা নিজের হাতে একজনের স্পর্শ অনুভব করে। সেদিকে তাকাতেই দেখে একজন মধ্যবয়সী লোক হাতে ড্রিংকসের গ্লাস নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে ওকে আপাদমস্তক দেখছে।
সিয়ারা: কিছু বলবেন আংকেল? (হাসিমুখে)
__আংকেল? (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
সিয়ারা: হ্যাঁ। আপনি কি আমাকে নিজের মেয়ে ভেবে ভুল করে ফেলেছেন? না আসলে আমি তো আপনার মেয়েরই বয়সী তাই না? তাছাড়া এই বয়সে গার্লফ্রেন্ড আছে বলে মনে হচ্ছে না। (মিষ্টি ভাবে হেসে)
সিয়ারার কথা শুনে লোকটি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। সে সিয়ারার হাতটা শক্ত করে ধরে কাছে টেনে বলে,
__ভাবিস না আমি ইমোশনাল হয়ে তোর কথায় রেগে গেছি। আমি না বিয়ে করেছি আর না আমার মেয়ে আছে সো রাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। তুই আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিস তোকে আমি নিজের বিছানায় তুলবো। চিনিস না তুই আমাকে। আমি ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত।
সিয়ারা একবার ওনার হাতের দিকে তাকিয়ে ওনার দিকে তাকায় তারপর আবারও মিষ্টি করে হাসে। হেসে, ধীরে ধীরে সিয়ারা ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে যায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
সিয়ারা: মিস্টার ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত। আপনি এতক্ষণ যা যা বললেন, আমার ফোন সব রেকর্ড হয়েছে। আমি চাইলে দু মিনিটে এটা ভাইরাল করে দিতে পারি। তারপর আর বিয়ে, বাচ্চা, এসব করার মতো যোগ্য থাকবেন না।
সিয়ারা সরে এসে দেখে ইতিমধ্যে ওনার মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে গেছে। ঘামতে শুরু করেছেন উনি। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের রুমালটা দিয়ে ওনার কপালের ঘাম মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
সিয়ারা: এ কি? আপনি যে ঘামতে শুরু করেছেন আংকেল? কি হলো? আপনার বুঝি হাই প্রেসার, নাহলে এই এসির মধ্যেও ঘেমে যাচ্ছেন কীভাবে?
__দেখো ওই, ওই রেকর্ডটা তুমি ডিলিট করে দাও।
সিয়ারা: কেন? চলুন, আপনি কি জানো বলছিলেন? আমাকে নিজের বিছানায় তুলবেন।
সিয়ারা আবারও ওনার কানের কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বললো,
সিয়ারা: তাঁর আগেই আমি আপনাকে চিতায় তোলার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এই রেকর্ডটাও ভাইরাল করার প্রয়োজন হবে না। আপনি জানেনও না আপনি ঠিক কাকে এই অফারটা দিয়েছেন। এই রেকর্ডটা আমি শুধু একজনকে শোনাবো, তাঁর নাম আধভিক রায় চৌধুরী।
__আমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি এমনটা করো না প্লিজ। আমি, আমি আসলে নিজের থেকে এমনটা করিনি।
সিয়ারা: কে বলেছে আপনাকে এসব করতে?
__আধভিকের ভাই! অভ্র।
সিয়ারা চটজলদি নিজের রেকর্ডটা অফ করে দেয় পিছিয়ে গিয়ে। আগে সিয়ারাকে জানতে হবে কীভাবে অভ্র আর আধভিকের মধ্যে সবটা ঠিক হয়েছে এই দুই বছরে। তারপরে অভ্রের বিষয়ে কিছু বলতে পারবে, এখন বললে আধভিক রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে।
সিয়ারা: আপন যান।
সিয়ারা সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে যায় উপরের ফ্লোরে। ওখানে দাঁড়িয়ে ওর বোনকে রেকর্ডটা পাঠিয়ে রাখে। যদি ওর ফোন থেকে ডিলিটও হয় দিয়ারার কাছে ওটা থেকে যাবে। সিয়ারা বোনকে ফোন করে বলে দেয় জানো এই ঘরটায় আধভিককে পাঠিয়ে দেয়। বলে দিয়ে সামনে এগিয়ে এসে নীচের দিকে তাকালে সিয়ারা দেখে আধভিক একের পর পর এক ড্রিংকসের গ্লাস শেষ করছে।
সিয়ারা: (রেলিং ধরে) আভি এমন করছে কেন? হঠাৎ কি হলো? ও কিছু জানতে পেরে গেলো না তো?
সিয়ারা ঘাবড়ে যায়। ও নীচে নামতেই যাবে তখন দেখে দিয়ারা আধভিকের দিকে এগোচ্ছে তাই আর না নেমে ঘরটার ভিতরে ঢুকে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে আধভিকের।
হঠাৎই সেই সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেলে সিয়ারা সেদিকে তাকায়, ভাবে আধভিক এসেছে। কিন্তু নাহ! আধভিক না। অভ্র এসেছে। সিয়ারা ঘাবড়ে যায় যখন দেখে অভ্র দরজা বন্ধ করছে। অভ্র যে নেশায় আছে এটাও বুঝতে পারে ও। অভ্র ধীরে ধীরে নিজের শার্টের দুটো বোতাম খুলে এগিয়ে আসতে থাকে ওর দিকে। সিয়ারা পিছিয়ে গিয়ে বলে,
সিয়ারা: কি করতে চাইছ তুমি? দেখো অভ্র আমি কিন্তু চিৎকার করবো। আধভিক জানতে…
অভ্র থেমে গিয়ে সিয়ারার ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়াতে গেলে সিয়ারা সাথে সাথে আরো পিছিয়ে যায়। অভ্র মুচকি হাসে আর বেরিয়ে যায়। সিয়ারা বিষয়টা বুঝতে পারে না হঠাৎ কি হলো? অভ্র এলোই বা কেন আর এভাবে বেরিয়ে গেলোই বা কেন?
অন্যদিকে,
অভ্র ঘর থেকে বেরিয়ে দরজাটা লাগিয়ে পকেট থেকে একটা লিপস্টিক বার করে সেটা বুড়ো আঙুলের মাথায় লাগিয়ে নেয়। তারপর বুড়ো আঙুলটা বুকের মধ্যে ঘষে নিয়ে পিছন ফিরতেই দেখে আধভিক দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র লুকিয়ে লিপস্টিকটা নিজের পকেটে ভরে নেয়।
আধভিক: তুই এখানে কি করছিস?
অভ্র: আব আমি তো এখানে…
আধভিক: তোর এমন অবস্থা কেন?
অভ্র: আসলে, আসলে ব্রো আমি একটু আসছি।
বলেই অভ্র পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি নেমে যায়। আধভিক এদিকে ভীত চোখে ঘরের দিকে তাকায়। মনে মনে নিজেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে,
আধভিক: না, না। সিয়ারা এই ঘরে নেই। ও হয়তো বেরিয়ে গেছে। হ্যাঁ তাই হবে।
আধভিক ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ঘরে। ও ড্রিংক করলেও অলয়েজ নিজের হুঁশেই থাকে। এইসব ওর অভ্যেসে পরিণত হয়েছে, সহজে নেশা হয় না ওর। ও নিজেও মনে মনে ঠিক করেছে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা গুলো সিয়ারাকে জিজ্ঞেস করবে। এতো কি কথা বলছিলো ওই লোকটার সাথে যে ওকে হয়তো প্রথম দেখাতেই স্পর্শ করেছিলো? আবার হেসে হেসে, কাছে গিয়ে কথা বলছিলো। সর্বপ্রথম বিষয় এমন একটা শাড়ি কেন পরে এসেছে সে যাতে সবাই তাঁর দিকে খারাপ দৃষ্টি দিচ্ছে? এই ঘরে নিশ্চয় ও নেই, অন্য জায়গায় হবে। তাই একবার মনের খুঁতখুঁতানি মিটিয়ে নিতে আধভিক ভিতরে ঢুকলো আর স্তব্ধ হয়ে গেলো।
সিয়ারা ঘরে পায়চারি করছিল আর ভাবছিল আধভিককে সবটা জানাতে হবে। এইবার ওর ভয় লাগছে। অভ্রকে আর ছাড় দেওয়া চলবে না। হয়তো খুব বড়ো কিছু করতে চলেছে অভ্র। সিয়ারা নার্ভাস হয়ে ঘামতে শুরু করলে, শাড়ির আঁচলটা কাঁধে ভাঁজ করে নিয়ে চুলটা বাঁধতে শুরু করে। বেঁধে নিয়ে নিজের শাড়িটা ঠিক করতে থাকে সেই সময়ই সামনে তাকাতে দেখে আধভিক দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারা স্বস্তি পায়। কোনো কিছু না ভেবেই সিয়ারা গিয়ে আধভিককে জড়িয়ে ধরে।
সিয়ারা: আভি আমি তোমার…
আধভিক এক ঝটকায় সিয়ারাকে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে। সিয়ারা বুঝে উঠতে পারে না কি হলো। পরে বুঝতে পারে আধভিক হয়তো রেগে আছে তাই এমন করলো তাই বোঝাতে এগিয়ে যায়।
আধভিক: আমাকে মানাতে না পেরে শেষে আমার ভাইয়ের সাথে… ছিহ সিয়ারা। আমার তো তোমার নামটা মুখে নিতেও ঘেন্না লাগছে।
সিয়ারা: কি বলছো তুমি এসব? ভুল বুঝছো…
সিয়ারাকে থামিয়ে দিয়ে আধভিক নিজেই বলতে শুরু করে আবারও……
প্রেজেন্ট……………………………………
আধভিকের কথাগুলো সমানে সিয়ারার কানে বাজছে। আজ প্রথমবারের জন্য মনে হচ্ছে, আধভিকের কাছে ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ও অনেক বড়ো ভুল করেছে। যেই মানুষটা ওকে কখনও বিশ্বাসই করেনি, ওর কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি তাঁকে ভালোবাসাটাই ওর জীবনে ভুল হয়েছে। আর তার থেকেও বড়ো ভুল হয়েছে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে। সিয়ারা নিজের চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় আর মনে মনে ঠিক করে ও আর কিচ্ছু বলবে না আধভিককে। বলা তো দূর, আধভিককে দেখতেও চায় না এখনও। নিমিষের মধ্যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে এতো টা নীচে নামিয়ে দিতে পারলো আধভিক? ভাবছে সিয়ারা।
আজ দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে একে অপরকে ভুল একে অপরের থেকে বুঝে দূরে সরে যাচ্ছে। কি হবে এবার? সিয়ারা যে ঠিক করে নিল সে আর কিছু জানাবে না, তাহলে আধভিক কি কখনও আর সত্যিটা জানতে পারবে না? অন্যদিকে আধভিকও সিয়ারাকে ভুল বুঝে ওর থেকে দূরে চলে যেতে চাইছে। তাহলে কি এখানেই শেষ হয়ে যাবে ওদের প্রেম কাহিনী? কি মনে হচ্ছে আপনাদের?
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
আধভিককে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে আভাস বাবু ওর কাছে এগিয়ে যান। কিন্তু আধভিক নীচে নেমে এসে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওখান থেকে চলে যায়। আভাস বাবু চিন্তায় পরে যান আধভিককে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে সোহমকে ফোন করে সবটা জানিয়ে দেন। যাতে সোহম আধভিকের পিছনে যেতে পারে। কিন্তু এতক্ষণ ত সব ঠিকই ছিলো তাহলে হঠাৎ কি হলো এটাই ভেবে পাচ্ছেন না আভাস বাবু।
অভ্র: থ্যাংক ইউ মিস রিনা। এই যে, আপনার লিপস্টিক। এইটা না থাকলে আজকে আমি যেই প্ল্যানটা করেছিলাম সেটা সাকসেসফুল হতো না। (বাঁকা হেসে)
রিনা অভ্রের হাত থেকে নিজের লিপস্টিকটা নিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
রিনা: প্রসঙ্গ যখন সিয়ারাকে ভিকির থেকে দূরে সরানোর তখন আমি যেকোনো রকম হেল্প করতে রাজি। এটা তো খুবই সামান্য একটা বিষয়।
অভ্র: যাক, আমি তাহলে একটা পার্টনার পেয়ে গেলাম আমার। যে কি না আমাকে হেল্প করতে পারবে অলয়েজ।
অভ্র আর রিনা হাসতে থাকে। অন্যদিকে দিয়ারা ওদের দুজনকে এভাবে একসাথে হাসাহাসি করতে দেখে একটু অবাকই হয়। কিন্তু এই মুহুর্তে এইসব নিয়ে ভাবার সময় ওর নেই, ও এখন নিজের দিদিকে খুঁজতে ব্যস্ত। আধভিক কেন এভাবে বেরিয়ে গেলো তা সিয়ারাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ও’ই পারবে উত্তর দিতে। দিয়ারা সেই ঘরের দিকে পা বাড়ায় যেই ঘরে আধভিককে সে পাঠিয়েছিল সিয়ারার কথায়। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করার আগেই সিয়ারাকে বেরোতে দেখে সে।
দিয়ারা: দি? কি হয়েছে?
সিয়ারা: আমি বাড়ি যাবো দিয়া।
দিয়ারা: তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কিছুক্ষণ আগে ভিকিদা ওরকম রেগে বেরিয়ে গেলো। এখন তুই বলছিস বাড়ি যাবি? আবার কি কিছু হয়েছে? সবটা বলিসনি তুই ভিকিদাকে?
সিয়ারা: (তাচ্ছিল্য হেসে) কাকে সব বলতে বলছিস দিয়া? যে কি না কখনও আমাকে বিশ্বাসই করেনি? তাঁকে যে আজ এক নিমিষে আমাকে চরিত্রহীনের তকমা দিয়ে দিলো? এই মানুষটার জন্য নাকি আমি এতগুলো দিন ধরে গুমরে গুমরে মরছিলাম। আজ এক মুহুর্তে ও আমাকে পুরোপুরি শেষ করে দিয়ে চলে গেলো। আমি এসব নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না। আমি আসছি।
সিয়ারা আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে দিয়ারা কিছুই বুঝতে পারছে না কি বলবে। অন্যমনস্ক হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে ওর গাউনটা পেয়ে বেজে যায় আর ও পরে যেতে নেয়। কিন্তু সেই মুহুর্তে সামনে থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে দেবাংশু।
দেবাংশু: (রেগে) আপনি কি সবসময় অন্যমনস্ক হয়ে চলেন? এক্ষুনি তো পরে গিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেত।
দিয়ারা: (সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে) হ্যাঁ আসলে আমি…
দেবাংশু: কি এতো ভাবতে থাকেন বলুন তো সারাক্ষণ? বয়ফ্রেন্ডের কথা মাথা থেকে বেরোয় না নাকি?
দিয়ারা: (ভ্রু কুঁচকে) এক্সকিউজ মী? আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
দেবাংশু: (মনে মনে — রাস্তা ক্লিয়ার তার মানে।) তো কি নিয়ে ভাবছিলেন এতো?
দিয়ারা: দি’কে নিয়ে। আপনি, আপনি প্লিজ একটু আসবেন আমার সাথে?
দেবাংশু সিয়ারার নাম শুনতেই সিরিয়াস হয়ে গেলো। সে সিয়ারাকেই খুঁজছিল কিছুক্ষণ ধরে তবে মাঝ পথে দিয়ারা এসে যাওয়ায় মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো বিষয়টা।
দেবাংশু: কি হয়েছে সিয়ার? ঠিক আছে তো ও?
দিয়ারা: আমার মনে হচ্ছে সাংঘাতিক কোনো ঝামেলা হয়ে গেছে আবার ভিকিদা আর দিয়ের মধ্যে। কিছুক্ষণ আগেই ভিকিদা উদ্ভ্রান্তের মতো রেগে বেরিয়ে গেলো। তারপরে আমি দি’কে জিজ্ঞেস করলাম, কয়েকটা কথা বলে বেরিয়ে গেলো।
দেবাংশু: কি কথা বলেছে সিয়া?
দিয়ারা সবটা বলতেই দেবাংশু একপ্রকার ছুটলো। তবে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার আগে দিয়ারার দিকে তাকিয়ে বললো,
দেবাংশু: আপনি আস্তে আসবেন। আমি দেখছি সিয়া কোথায়। পেয়ে গেলে পার্কিংয়ের সামনে দাঁড়াবো। আপনি ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করুন।
দেবাংশু চলে গেলো ঠিকই কিন্তু দিয়ারার নজর ওর উপর থেকে সরলো না। অবাক হয়ে ও চেয়ে রয়েছে দেবাংশুর যাওয়ার পথে। ছেলেটা যেতে যেতে ওকে সাবধান করে গেলো? সিরিয়াসলি? দেবাংশু ওর কেয়ার করছে? কিছুক্ষণ আগের এবং এখনের ঘটনা ভেবে কথাটা মাথায় আসলে দিয়ারা ব্লাশ করতে শুরু করে। তবে সিয়ারার কথা মাথাতে আসতেই ও দেবাংশুর কথা মতো পার্কিং সাইটে চলে যায় ধীরে সুস্থে।
পার্কিং সাইটে যেতেই দেখে দেবাংশুকে জড়িয়ে ধরে আছে সিয়ারা। হঠাৎ করেই কেন জানো খারাপ লাগে দিয়ারার। ও ঠিক করে উঠতে পারে না এখন ওইদিকে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না। ও পিছিয়ে চলে আসবে সেই সময় দেবাংশুর সাথে আই কন্টাক্ট হয়ে যায় দিয়ারার। সে চোখের ইশারায় ওকে আসতে বলে এদিকে। দিয়ারা আর কিছু না ভেবে এগিয়ে গেলে দেখে সিয়ারা গাড়ির সিটে বসে আছে আর দেবাংশু ওকে গার্ড করে দাঁড়িয়ে আছে।
দিয়ারা বুঝতে পারে সিয়ারা দেবাংশুর জ্যাকেট ধরে ছিলো বলেই পিছন থেকে ওর মনে হয়েছে সিয়ারা দেবাংশুকে জড়িয়ে ধরে আছে। ভাগ্যিস দেবাংশু পিছন ফিরে চেয়েছিলো নাহলে ত দিয়ারা চলেই যাচ্ছিলো।
দেবাংশু: একটু সামলান ওকে। আমি, আমি পারছি না। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে।
দেবাংশু গাড়ির মধ্যে একটা ঘুষি মেরে ওখান থেকে দূরে সরে গেলে দিয়ারা বুঝতে পারে যে ওর ধারণাই সঠিক। ধীরে ধীরে নিজের দিদির কাছে গিয়ে দিদির কাঁধে হাতে রাখে ও। এইভাবে দিদিকে অঝোরে কাঁদতে দেখে একদম ভালো লাগছে না দিয়ারার।
দিয়ারা: দি, এই দি? এইভাবে ভেঙে পরলে হবে বল তো? তোকে তো শক্ত থাকতে হবে তাই না?
সিয়ারা: আ..আর কত দিয়া? আর কত? আর কত শক্ত হবো আমি? আমাকে, আমাকে সবার পাথর মনে করে। ভ..ভাবে আমার কোনো ক..কষ্ট হয় না। আমি আ..আর এসব নিতে প..পারছি না বিশ্বাস কর। ম..মরে যেতে মন চাইছে এবার। ভীষণ, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।
দিয়ারা জড়িয়ে ধরে সিয়ারাকে। ওর নিজেরও রাগ হয় আধভিকের উপর। ঠিক করে এইবার কথা বলতে হবে আধভিকের সাথে। বোঝাই যাচ্ছে সিয়ারার কথা আধভিক তো শোনেইনি বরং ওকেই কথা শুনিয়ে দিয়েছে। তাই এইবার শুনতে না চাইলেও আধভিককে সবটা শুনতে হবে।
দিয়ারা: (চোখ মুছিয়ে) এমন করিস না তুই। দেখ, আমি আছি তোর সাথে। এতদিন পর তোকে ফিরে পেয়েছি আমি আর তুই কি না একবারও আমার কথা ভাবলি না? এতো সহজে মরে যাওয়ার কথা বলে দিলি? শুধু ভিকিদাকে নিয়ে পরে আছিস, কই আমার কথা তো ভাবছিস না একবারও? আমার অভিমান হয় না বল? নাকি সেটা ভাঙানোর প্রয়োজন নেই?
সিয়ারা কান্নার মধ্যেও হেসে ফেলে দিয়ারার হিংসুটে স্বভাব দেখে। মনে মনে হাসে দিয়ারা। যাক, একটু হলেও মনটা ঘুরানো গেছে তাহলে।
সিয়ারা: তোর হিংসুটে স্বভাব যায়নি দেখছি। এদিকে আয়। (দিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে) বোন!
দিয়ারা হাসলো সিয়ারার মুখ থেকে “বোন” শব্দটা শুনে। আজ অনেকদিন পর শুনলো। “হম” বলে ছোট্ট উত্তর দিতেই সিয়ারা আবদার করে বললো,
সিয়ারা: আজ যাবি আমার সাথে আমাদের বাড়ি? থাকবি আমার সাথে?
দিয়ারা: অবশ্যই থাকবো। আমার দির আমাকে দরকার আর আমি থাকবো না এটা হতে পারে?
দেবাংশু: তাহলে আর দেরি কিসের? এবার যাওয়া যাক?
দেবাংশু ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলে সিয়ারা ভিতরের দিকে সরে যায় আর দিয়ারা উঠে পরে গাড়িতে। গাড়ি স্টার্ট করার কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ করেই সিয়ারা দিয়ারাকে জিজ্ঞেস করে,
সিয়ারা: বোন তুই দেবকে চিনতে পারিসনি?
দিয়ারা: ম..মানে? (থতমত খেয়ে)
সিয়ারা: মানে এটাই যে দেব সুধাংশু আংকেলের ছেলে। আমি যখন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে ছিলাম তখন ভাগ্যবশত সুধাংশু আংকেলের সাথে আমার দেখা হয়। আংকেল আমার বিয়েতেই আসছিলো। সেদিন আংকেল না থাকলে না জানি কি হতো আমার।
দিয়ারা: এক মিনিট সুধাংশু আংকেল মানে তো বাবার বন্ধু যে সে না?
সিয়ারা: হ্যাঁ। ছোটোবেলায় আমাদের বাড়ি আসতো যে সে’ই।
দিয়ারা: ওনার ছেলে? মানে বিলাতি চাম্পু? যে কি না ছোটোবেলায় একগাদা মাথায় তেল দিয়ে রাখতো? তারপর তো বিলেত চলে গেছিল শুনেছিলাম। (হাসতে হাসতে)
দেবাংশু: হোয়াট দ্যা…
দিয়ারা দেবাংশুর গর্জন শুনে মুখ দু হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে। ও ভুলেই গেছিলো ও যাঁর নামে বদনাম করছে সে গাড়িতেই উপস্থিত আছে। দিয়ারা দেবাংশুর দিকে তাকালে দেখে দেবাংশু লুকিং গ্লাস দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে রাগী লুক দিচ্ছে। দিয়ারা বোকা বোকা হেসে স্যরি বললে দেবাংশু মুখ ফিরিয়ে নেয়। এদিকে সিয়ারা জোরে জোরে হেসে ফেলে এসব দেখে। সিয়ারাকে হাসতে দেখে দেবাংশু আর দিয়ারা আবারও একে অপরের দিকে তাকায় তবে এইবার দুজনেই মিষ্টি হাসি উপহার দেয় একে অপরকে।
পরেরদিন,
দিয়ারা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বিছানায় এসে বসতেই কেউ ওদের ঘরের দরজায় নক করে। ও ভিতরে আসতে বললে দেখে, দেবাংশু এসেছে।
দেবাংশু: সিয়া ওঠেনি তাই না? কখন ঘুমিয়েছে কালকে রাতে?
দিয়ারা: বেশ দেরীতে। তবে আমরা আমাদের ছোটবেলা নিয়ে গল্প করছিলাম। ভিকিদা সম্পর্কিত কোনো কিছু মনে করতে দিইনি ওকে। (সিয়ারার দিকে তাকিয়ে) আপনি…
দেবাংশু: এখনও কি আপনি বলাটা খুব দরকারি নেকী সুন্দরী? (মুখ টিপে হেসে)
দিয়ারা: (চিৎকার করে) কি বল…(সিয়ারার দিকে একবার তাকিয়ে) আর একবার এই নামে ডাকলে খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
দেবাংশু: সেই রে। তুই আমাকে অজে বাজে নামে ডাকতে পারিস আমি ডাকলেই দোষ। আগে তুই বন্ধ করবি তারপর আমি বন্ধ করবো। বল রাজি?
দিয়ারা: (ভেংচি কেটে) হুহ! ঠিক আছে। এখন বলো, কি বলতে এসেছো?
দেবাংশু: ইয়াহ, আমি বলতে এসেছিলাম যে আজকে বিকালে আমাদের দার্জিলিংয়ের জন্য রওনা দিতে হবে শুটিংয়ের জন্য। বাগডোগরার ফ্লাইট, তারপর সেখান থেকে রাতের মধ্যে দার্জিলিং। রাতটা রেস্ট নিয়ে সকালে মিরিখের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। সিরিয়ালটার প্রোমো শুট মিরিখে হবে।
দিয়ারা: ওহ হ্যাঁ। আমিও তাই শুনেছিলাম। ঠিক আছে দি উঠলে আমি জানিয়ে দিচ্ছি ওকে। আমাকেও বেরোতে হবে, শুট আছে আজকে।
দেবাংশু: বাহ তো আমাদের নেকী সুন্দরী মডেল হয়েই দম নিয়েছে তাহলে?
দিয়ারা: আবার? এটা কিন্তু কথা ছিলো না। তুমি অলওয়েজ চিটিং করো। (গাল ফুলিয়ে)
দেবাংশু: তোর সাথে চিটিং করার মজাই আলাদা। (হেসে)
দিয়ারা: কথাই বলবো না ধুর!
দিয়ারা চলে যেতে নিলেই হঠাৎ করে দেবাংশু দিয়ারাকে হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দিয়ারার চোখে চোখ রেখে ধীর কণ্ঠে বলে,
দেবাংশু: আগের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস দিয়ু! অনেক বদলে গেছিস। চোখ ফেরাতে পারছি না আমি তোর থেকে।
দিয়ারা দেবাংশুর কথা শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। দিয়ারার মধ্যে দিয়ে একটা আলাদাই অনুভূতি সৃষ্টি হয় যখন দিয়ু নামটা সে দেবাংশুর মুখে শোনে। নিজের অজান্তেই বলে ওঠে,
দিয়ারা: শুধু আমি বদলে গেছি? তুমি বদলাওনি? এতোটাই বদলে গেছো যে চিনতেই পারিনি আমি তোমায় দেব দা।
দেবাংশু: দা বলাটা কি খুব জরুরী? না বললেই নয়!
দিয়ারা এর উত্তরে মুচকি হাসলে দেবাংশুর বুকে ঝড় উঠে যায় একপ্রকার। ছোটো থেকেই এই মেয়েটার হাসি মুখ সে বার বার দেখতে চায়। ভীষণ ভালো লাগে দেবাংশুর দিয়ারাকে হাসতে দেখলে আর সবথেকে বিরক্তির জিনিস যখন এই মেয়েটা কাঁদে। সহ্যই হয় না জানো সেই দৃশ্যটা ওর। আজ এতগুলো দিন বাদে সেই হাসিমুখটা দেখে দেবাংশুর চোখ ফেরানো সম্ভব হয়ে পরেছে।
দিয়ারা: কি দেখছো এভাবে?
দেবাংশু কি উত্তর দেবে বুঝতে পারে না। তবে এখনও দিয়ারাকে ছাড়েনি, না চোখ সরিয়েছে। কিন্তু দিয়ারা বুঝতে পারে সিয়ারার ঘুম ভেঙে গেছে তাই সরে আসে।
সিয়ারা: কি ব্যাপার দেব? তুই এখানে?
দিয়ারা সরে গেলে দেবাংশু প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে সিয়ারার প্রশ্ন শুনে বুঝতে পারে দিয়ারার সরে যাওয়ার কারণ।
দেবাংশু: আব হ্যাঁ। আসলে আমাদের আজকে দুপুরে বাগডোগরার ফ্লাইট। রাতের মধ্যে দার্জিলিং পৌঁছে যাবো। আগামীকাল সকালে মিরিখে আমাদের প্রোমো শুট করতে হবে। তাই রেডি হয়েনে ঝটপট।
সিয়ারার বিষয়টা মনে পরতেই ও উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সেটা দেখে দিয়ারা নিজের ব্যাগ নিয়ে গেলে দেবাংশু জিজ্ঞেস করে,
দেবাংশু: (হতাশ হয়ে) তুই যাবি না আমাদের সাথে?
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]