কথা দিলাম পর্ব -২৪+২৫

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

হঠাৎই ওদের দুজনের নজর কাড়লো একজন ব্যক্তি যে সদ্য আধভিকের কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিটিকে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথেই সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ব্যক্তিটিও সিয়ারাকে দেখছে, সিয়ারাকে দেখার পরেই তাঁর ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। আধভিকের চোখের সামনেই সব কিছু হওয়ায় আধভিকের চোয়াল শক্ত হওয়ার সাথে সাথে হাত মুঠ হয়ে যায় রাগে। আধভিক একপ্রকার গর্জে ওঠে……

আধভিক: অভ্র!!

আধভিকের চিৎকার শুনে অভ্র সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কিন্তু সিয়ারার মুখ দেখলে বোঝা যাচ্ছে সে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত।

আধভিক: তুই এখানে কি করছিস?

অভ্র: কেন ব্রো? আমি আসতে পারি না নাকি?

আধভিক: তুই তো সব সময় ফোনেই যা বলার বলিস। হঠাৎ আজকে অফিসেই চলে এলি?

অভ্র: পাপা বললো তোকে একটু হেল্প করতে। তুই নাকি খুব চাপে আছিস। (সিয়ারার দিকে এগিয়ে) কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে অলরেডি তোকে হেল্প করার জন্য কেউ আছে।

অভ্র যেভাবে সিয়ারাকে মাথা থেকে পা এবং পা থেকে মাথা অবধি দেখছে তাতে সিয়ারা ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে। বার বার নিজের চুল ঠিক করার বাহানায় দু হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। অভ্র হঠাৎ করেই আরও এক পা সিয়ারার দিকে এগোতে গেলেই আধভিক পিছন থেকে অভ্রর কাঁধে হাত দেয়। এতে অভ্রের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলেও সেটা আধভিক দেখতে পায় না তবে সিয়ারা ঠিকই লক্ষ্য করে।

আধভিক: আমার কোনো হেল্পের প্রয়োজন নেই আর। তুই আসতে পারিস।

অভ্র: ওকেই দ্যান, তোর পার্টির কথা মনে আছে তো?

আধভিক পার্টির নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললে অভ্র বলে,

অভ্র: আহ পাপা ওয়াজ রাইট। তুই ভুলে গেছিস। পাপা তোর জন্য একটা পার্টি অর্গানাইজ করেছে আগামীকাল। অফিসিয়ালি তোকে প্রোডাকশন হাউজের নিউ ওনার হিসেবে অ্যানাউন্সড করবে। মনে পরলো?

আধভিক: হম।

অভ্র: আর এটাও বলেছে, (সিয়ারার দিকে ফিরে) তুই যদি কাওকে চাস তো ইনভাইট করতে পারিস। ওকেই? আমি আসছি।

অভ্র যাওয়ার জন্য ঘুরতেই আধভিক সঙ্গে সঙ্গে সিয়ারার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে ঢেকে দেয়। এতে অভ্র বিব্রত হয়ে পরে কারণ সে ঠিক করেছিলো আরও একবার সিয়ারাকে দেখবে। কিন্তু আধভিক এভাবে সামনে এসে পড়ায় সে বুঝলো আধভিক বিষয়টা আঁচ করে ফেলেছে তাই চলে যাওয়াই মঙ্গল। সে দ্রুত বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

অভ্র বেরিয়ে যেতেই আধভিক সিয়ারার দিকে ফেরে। সিয়ারা মাথা নীচু করে আছে। আধভিক ধীরে ওর নাম ধরে ডেকে ওঠে,

আধভিক: সিয়ারা?

সিয়ারা মাথা তুলে আধভিকের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নেয়। বলে,

সিয়ারা: আমি বাড়ি চলে যেতে চাই। আপনার প্রয়োজনীয় ডিজাইনস গুলো সময়ের মধ্যে করে আপনাকে পাঠিয়ে দেবো আমি।

আধভিক: হঠাৎ করে এমন একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে আমি ভাবিনি। আ’ম স্যরি ফর দ্যাট।

সিয়ারা: ইট’জ ওকে। আপনি আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিন। আমার, আমার ভালো লাগছে না।

আধভিক চুপ করে থাকলে সিয়ারা ওর দিকে তাকায়। দেখে আধভিক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ফলে দুজনের নজর একে অপরের উপর আবদ্ধ হয়।

আধভিক: একদমই কি থাকা যাবে না এখানে?

আধভিকের গলায় অনুরোধের সুর শুনে সিয়ারা মাথা নামিয়ে নেয়। ওর চোখ জলে ভরে উঠেছে। আধভিকের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় অভ্রের কথা মনে করে। তাঁর ইচ্ছা করছে এখনই সিয়ারাকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে নিতে। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে বাঁধা দিচ্ছে। তবুও সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, নিজের সীমা অতিক্রম করে সিয়ারার দিকে এগিয়ে গেলো। নিজের দু হাত সিয়ারার বাহুর উপর রাখতেই সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকালো।

আধভিক: আমি আছি তো? কথা দিচ্ছি এমন পরিস্থিতির শিকার আর হতে হবে না।

সিয়ারা আধভিকের “কথা দিচ্ছি” শব্দটা শোনার সাথে সাথে আধভিকের চোখের ভাষাতেও আশ্বাস খুঁজে পেলো। বুঝতে পারলো আধভিক চাইছে সে জানো এখানেই থাকে। তাই কথা না বাড়িয়ে সম্মতি জানালো মাথা নেড়ে এবং এগিয়ে গেলো নিজের জায়গায়।

আধভিক: (মনে মনে — আবারও আমাকে অভ্রের কাছ থেকে সিয়ারাকে দূরে রাখতে হবে। আর যাই হোক, অভ্রের খারাপ নজর সিয়ারার উপর পরবে আর আমি সেটা মেনে নেবো এটা হতে পারে না। ড্যাডের সাথে কথা বলতে হবে আমাকে।)

আধভিক আভাস বাবুকে ফোন করে জানায় যাতে অভ্র আর কখনও ওর অফিসে না আসে। কারণ জিজ্ঞেস করলে আধভিক জানায় যে, সে পরে সবটা জানাবে। তারপর ফিরে এসে নিজের জায়গায় না বসে সিয়ারার সামনে থাকা সোফায় বসে। কোনরকম রাক ঢাক না করেই সে সিয়ারাকে দেখতে থাকে।

আধভিক: (মনে মনে — এরকম দোটানায় আমাকে কেন ফেলেছো তুমি? তুমি দূরে থাকলে আমার মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে। অন্য কোনো ছেলের সাথে তোমাকে দেখলে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠছে। তাই তোমাকে নিজের চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করছি। এদিকে তুমি চোখের সামনে থাকলে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু যখন মেনে নিতে যাচ্ছি তখন সেই বিষহ অতীত আমাকে আটকে দিচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন আমার সাথে? কেন?)

আধভিক মুখ উপরে করে মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে। সিয়ারা সেটা আড় চোখে লক্ষ্য করে। ও এতক্ষণের সব কিছুই লক্ষ্য করেছে। আধভিককে চোখ বন্ধ করতে দেখে সিয়ারা এবার সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,

সিয়ারা: (মনে মনে — তুমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছো তাই না আভি? আমি জানি সেটা, কারণ আমিও যে ভীষণ ক্লান্ত। আর আমি এটাও ভালো ভাবে জানি, আমরা দুজনই শুধুমাত্র দুজনের এই ক্লান্তি দুর করতে পারবো। কিন্তু তার জন্য তো তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে? তুমি তো কিছুই শুনতে চাইছো না। আমারও ইচ্ছা নেই তোমাকে আবার পুরোনো কথা মনে করিয়ে কষ্ট দেওয়ার কিন্তু কি করবো বলো? ওগুলো না বললে যে তুমি আর আমি কষ্ট পেতেই থাকবো।)

সিয়ারা আধভিক কে নড়তে দেখে আবারও নিজের কাজে মন দেয়। দুপুর হতেই আধভিক খাবার আনায় ওদের দুজনের জন্য। সিয়ারা খেতে না চাইলেও আধভিকের কথার বাইরে যেতে পারে না। খাওয়া শেষ হতেই সিয়ারা আবার কাজ শুরু করতে গেলে আধভিক বাঁধা দিয়ে বলে,

আধভিক: চলুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। আপনি বাড়ি গিয়ে এখন একটু রেস্ট নিন তারপর আবার কাজ শুরু করবেন।

সিয়ারা: কিন্তু বেশি তো বাকি নেই? আর দু তিন ঘন্টার মধ্যে কমপ্লিট করে দিতে পারবো।

আধভিক: আমি এক কথা বার বার বলিনা জানেন নিশ্চই?

সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। আধভিক উঠে নিজের গাড়ির চাবিটা নিয়ে সিয়ারাকে বললো,

আধভিক: সব গুছিয়ে নিয়েছেন?

সিয়ারা: হ্যাঁ। যেগুলো কমপ্লিট হয়ে গেছে সেগুলো রেখে গেলাম এখানে। একবার চেক করে নেবেন।

আধভিক: ওকে, আসুন।

সিয়ারা: বলছি, আমি চলে যেতে পারবো। আপনি আবার কষ্ট করে…

আধভিক: নিয়ে যখন এসেছি আমি, তখন ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার কর্তব্য আমার। আসুন।

সিয়ারা আধভিকের সাথে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় দুজনে কথা বলে না চুপ করেই থাকে। যদিও আধভিক কথা বলার চেষ্টা করেছিল তবে সিয়ারার চিন্তিত মুখ দেখে আধভিক আর কিছু বলেনি। আধভিক তাঁর সৎ ভাইকে খুব ভালো ভাবেই চেনে। তাই সে আজ ঠিক কি দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাকিয়েছে সেটাও ভালো ভাবেই সে বুঝতে পেরেছে। এইটা নিয়ে কথা না বাড়িয়ে সিয়ারাকে একা ছেড়ে দেওয়াটাই ঠিক মনে করলো আধভিক।

কিছুক্ষণ পর,

সিয়ারার বাড়ি এসে পরতেই সিয়ারা নেমে যায়। আধভিক তাড়া হুরো করে নামে হঠাৎ কিছু মনে পরায়।

আধভিক: সিয়ারা!

সিয়ারা: (আধভিকের দিকে ফিরে) কিছু বলবেন?

আধভিক: আমার মাথা থেকে পার্টির কথাটা বেরিয়ে গেছিলো একদম। আমি চাই আপনি সুধাংশু স্যার আর দেবাংশু আমাদের পার্টি অ্যাটেন্ড করুন। আমি বাড়ি পৌঁছে স্যারকে জানিয়ে দেবো বিষয়টা।

সিয়ারা: আঙ্কেল চাইলে নিশ্চয় যাবো। আসছি।

সিয়ারা বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। আধভিকও গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হয়। বাড়ি পৌঁছতেই আভাস বাবু ওকে জানান যে, উনি সুধাংশু বাবুকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন পার্টির জন্য। এতে আধভিক খুশি হয় দেখে আভাস বাবু বুঝতে পারেন উনি ঠিক কাজই করেছেন।

আধভিক ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শরীর এলিয়ে দিতেই হঠাৎ করে ওর চোখের সামনে সিয়ারা এবং দেবাংশুর হাসি ঠাট্টার কথা মনে পরে যায়। চোখ খুলে ফেলে আধভিক।

আধভিক: সিয়ারা কি সত্যি বিবাহিত? যদি তাই হয় তাহলে কেন আমাকে মানানোর চেষ্টা করছে? নাকি প্রথমবারের মত এইবারও সিয়ারা আমাকে মিথ্যে বলেছে। হাহ! প্রথম থেকে সবকিছুই তো মিথ্যেই ছিলো। এখন কেন ফিরে আসতে চাইছে ও? আবারও কষ্ট দেওয়ার জন্য? ছেড়ে যাওয়ার জন্য?

আধভিকের পুরনো কথাগুলো মনে পরতে শুরু করে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে হুইস্কি আনতে চলে যায়। সিয়ারা চলে যাওয়ার পর থেকে সারাদিন সব ভুলে থাকলেও রাতে পারে না। সব স্মৃতিগুলো এসে ঘিরে ধরে আধভিককে। তাই তো মাঝে মধ্যে অফিসে কাজের মধ্যে ডুবেই সেই সময় কাটাতো কিন্তু তাও নিস্তার মেলেনি। সে সবাইকে এই জন্যেই বলে পুরনো কথা মনে না করাতে, তাহলে অন্তত দিনটা তো ভালো যাবে।

পরের দিন পার্টিতে,

আধভিক: সিরিয়াসলি সিয়ারা? এখন তুমি মনে করছো তুমি নিজের শরীর দেখিয়ে আমাকে মানাবে? মাই গড, এতোটা নীচে কবে নামলে?

সিয়ারা: আধভিক এসব তুমি..

আধভিক: জাস্ট শাট আপ! তোমার প্রতারণার পর আমার মন তো উঠেই গেছিলো। যা বেঁচে ছিলো আজকের পর সেটাও উঠে গেলো। এতক্ষণ পার্টিতে আমি বাদে অন্যান্যদের নিজের দিকে আকর্ষিত করছিলে, নাচ করছিলে আর এখন আমাকে শরীর দেখিয়ে নিজের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছো ওয়াহ!

সিয়ারা: আধভিক!!

আধভিক: একদম আওয়াজ উঁচু করে কথা বলবে না। তুমি ঠিক কি ধরনের মেয়ে আজকে আমি বুঝতে পারছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার মতো নোংরা মানসিকতার একটা মেয়েকে ভালোবাসা। আমি তো বুঝে পাচ্ছি না কেন এমন করছো তুমি? সুধাংশু স্যারের জন্যেই তুমি অনেক চান্স পেয়ে যাবে তাহলে কেন প্রোডিউসারদের এভাবে শরীর দেখিয়ে…

সিয়ারা: ব্যাস!! অনেক বলে ফেলেছেন আপনি মিস্টার রায় চৌধুরী। অনেক বলে ফেলেছেন।

আধভিক: ভাগ্যিস আটকালে। নাহলে এর থেকেও খারাপ কথা বলে ফেলতাম আমি। যাই হোক, নিজের রূপ, যৌবন দেখিয়ে অন্যান্য যেকোনো প্রোডিসারকে তুমি মানিয়ে নিতে পারো তবে আমাকে নয়। ভুলেও আমার সাথে এই জিনিসটা ট্রাই করো না।

আধভিক বেরিয়ে গেলে সিয়ারা ধীরে ধীরে কান্নায় ভেঙে পরে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বি: দ্র: কি হলো বলুন তো? আধভিকের এইসব কথা বলার কারণ কি? কি মনে হচ্ছে আপনাদের সিয়ারা সত্যি এমন কিছু করেছে? নাকি আধভিক একটু বেশিই বলে ফেললো? মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না জানো। শুভ রাত্রি।’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ২৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

ফ্ল্যাশব্যাক,

আধভিক আভাস বাবুর সাথে দাঁড়িয়ে গেস্টদের সাথে কথা বলছে। বলা উচিত, আভাস বাবু কথা বলছেন এবং আধভিক শুধু হেসে মাথা নাড়ছে। আধভিকের চোখ শুধু এদিক ওদিক ঘুরছে, মনে হচ্ছে কাওকে একটা খুঁজছে। নিজের হাতের ঘড়িটা দেখে সামনের দিকে তাকালো আধভিক।

আধভিক: (মনে মনে — অনেকটা সময় হয়ে গেলো, এখনও সিয়ারা এলো না কেন? সুধাংশু স্যার কি তাহলে রাজি হয়নি এখানে আসার জন্য? একবার ফোন করবো?…নাহ আমি কেন ফোন করবো? আমি কেন এত ভাবছি, আসুক না আসুক তা নিয়ে আমার ভাবার দরকার নেই। একটু বেশিই ভাবছি আজকাল।)

আধভিক মাথা থেকে সিয়ারার ভাবনা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। নিজেকে সবার সাথে ইনভলভ রাখার চেষ্টা করেও সে বার বার বিফল হয়ে যাচ্ছে। নিজের মস্তিষ্ক, মন, চোখ সবকিছুই কথা শুনছে না তাঁর। মস্তিষ্কে সিয়ারার ভাবনা ঘুরছে, মন বলছে সিয়ারার সাথে যোগাযোগ করতে আর চোখ শুধু সিয়ারাকেই খুঁজছে অবাধ্য হয়ে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আধভিক পকেট থেকে নিজের ফোন বার করে নিলো সিয়ারাকে কল করার জন্য কিন্তু হঠাৎই সামনে এন্ট্রেন্সের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আধভিকের।

সিয়ারা বলিউড স্টাইলে কালো রঙের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছে সাথে কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ। শাড়িটা সিয়ারার শরীরের সাথে সেঁটে থাকায় তাঁর শরীরের গঠন, প্রত্যেকটি কার্ভ ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে যার ফলে সে লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। মেক আপ সে তেমন একটা করেনি, চুলগুলোকে উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে বেঁধেছে। তাতেই আশেপাশের সব ডিরেক্টর, প্রোডিসারেররা, তাঁর থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না। এইসব আধভিকের মোটেও সহ্য হচ্ছে না। আধভিক সিয়ারার দিকে এগোচ্ছিল এমন সময় সে দেখে দিয়ারা তাঁর কাছে চলে গেছে।

দিয়ারা: দি!

সিয়ারা: আরে দিয়া, তোকেই খুঁজছিলাম আমি। বলছি, শাড়িটা ঠিক লাগছে? না মানে আমার কেমন একটা লাগছে এই শাড়িটা পরে।

দিয়ারা: দি? তুই এটা কি পরে এসেছিস?

সিয়ারা বোনকে আশে পাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করতে দেখলে সিয়ারা নিজেও আশে পাশে তাকায়। দেখে, সবাই কেমন জানো খারাপ দৃষ্টিতেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

সিয়ারা: আমি কি করবো? আধভিকই তো নাকি এই শাড়িটা পরতে বলেছে আমাকে।

দিয়ারা: হোয়াট? লাইক সিরিয়াসলি? ভিকি দা তোকে এসব পরতে বলবে? একবার ভালো করে চেয়ে দেখ আধভিকদার রিয়্যাকশনটা।

দিয়ারার দাঁতে দাঁত চিপে কথা শোনার সাথে সাথেই সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকালো। দেখলো আধভিক নিজের সবচেয়ে ভয়ানক লুক নিয়েই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

সিয়ারা: (ঘাবড়ে গিয়ে) কিন্তু আমি তো…

দিয়ারা: তুই চল আমার সাথে।

দিয়ারা সিয়ারাকে নিয়ে বার সাইডে আসে। তারপর জিজ্ঞেস করে পুরো বিষয়টা। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ারাকে জানায়,

সিয়ারা: আজকে বিকেল বেলায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার আমাদের বাড়িতে আসে। আমাকে বলে আধভিক ওকে পাঠিয়েছে আমাকে ড্রেস দেওয়ার জন্য। আর যে এসেছিলো সে আধভিকের অফিসের তাই আমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।

দিয়ারা: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তুই নাম জানিস?

সিয়ারা: না। নাম তো জানি না তবে কাজ করতে দেখেছি।

দিয়ারা: ঠিক আছে তুই থাক এখানে। আমি, আমি দেখছি বিষয়টা।

বোন চলে যেতেই সিয়ারা নিজেও ভাবুক হয়ে পরে। এদিকে দিয়ারা ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্কভাবে চলতে থাকলে হঠাৎই ওর ধাক্কা লেগে যায় একজনের সাথে এবং ও পরে যাওয়ার আগেই ব্যক্তিটি ওকে ধরে নেয়। ব্যক্তিটিকে দেখতেই ওর চেনা লাগে তাই তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাঁড়ায় ও।

দিয়ারা: আই অ্যাম স্যরি। আসলে আমি অন্যমনস্ক ছিলাম তাই খেয়াল করিনি।

__ইটজ ওকে! আমারও একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো। বায় দ্যা ওয়ে, ইউ আর লুকিং বিউটিফুল।

দিয়ারা নিজের প্রশংসা আগেও অনেক ইয়াং ছেলেদের মুখে শুনেছে তবে এই ব্যক্তিটির প্রশংসা শুনে ও ব্লাশ করতে শুরু করে।

দিয়ারা: থ্যাংক ইউ অ্যান্ড ইউ আর লুকিং হ্যান্ডসাম।

__উম, সেটা তো রোজই লাগে আমাকে। নতুন কিছু না।

দিয়ারা হেসে ফেলে ব্যক্তিটির কথা শুনে। ব্যক্তিটিও মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাঁকিয়ে হালকা হাসে। দিয়ারা নিজের হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,

দিয়ারা: আচ্ছা, আমি যদি খুব ভুল না হই তাহলে আপনি কি দেবাংশু গাঙ্গুলি? সান অফ সুধাংশু গাঙ্গুলি?

দেবাংশু: ইয়াহ ইউ আর রাইট!

দিয়ারা: (হাত বাড়িয়ে) আমি দিয়ারা, দিয়ারা সান্যাল। সিয়ারা সান্যালের ছোটো বোন।

দেবাংশু অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,

দেবাংশু: রিয়েলি? সিয়ার সাথে আপনার দেখা হয়েছে?

দিয়ারা: দেখা কথা দুটোই হয়েছে। তবে আমি চাইছি এই সময়টা আপনি একটু ওর কাছে থাকুন। ও বার সাইডে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার একটু কাজ আছে তো তাই আমাকে যেতে হবে।

দেবাংশু: ওকে ফাইন। আমি ওকে কোম্পানি দিচ্ছি গিয়ে।

দিয়ারা: থ্যাংক ইউ। আচ্ছা আমি আসি এখন?

দেবাংশু: (হাতটা ছেড়ে দিয়ে) ইয়াহ সিওর।

দিয়ারা চলে গেলে সেদিকে তাকিয়ে রইল দেবাংশু। ওইদিকে তাকিয়ে থেকেই মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,

দেবাংশু: (মনে মনে — মাই গড! মেয়েটার উপস্থিতি কতটা শক্তিশালী ছিলো যে আমি এখনও ওর কথাই ভাবছি। আমার চোখে দেখা প্রথম মেয়ে যে এতটা পারফেক্ট। যেমন দেখতে, তেমন ফিগার আর তেমনই সুন্দর পার্সোনালিটি। যখন কথা বলছিলো তখনই চোখ ফেরাতে পারছিলাম না তারপর যখন হাসলো। উফ! এই প্রথমবার কোনো মেয়ে আমাকে এতটা প্রভাবিত করলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝড় তুলে দিয়ে গেলো পুরো শরীর জুড়ে।) এই প্রথমবার দেবাংশুর মন কাওর উপর পরেছে। টেস্ট করে তো দেখতেই হবে।

দেবাংশু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সিয়ারা যেদিকে আছে সেদিকে চলে যায়। অন্যদিকে সিয়ারা যখন দাঁড়িয়ে আছে নিজের মতো করে তখন হঠাৎ করেই কেউ ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। সিয়ারা চোখ তুলে তাকাতেই দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সে ঘাবড়ে গেলেও প্রকাশ করে না।

অভ্র: (ভালো ভাবে সিয়ারাকে দেখে নিয়ে) কি ব্যাপার সিয়ারা? তুমি এখানে চুপচাপ একা একা দাঁড়িয়ে আছো যে? কোম্পানি দেওয়ার কেউ নেই বুঝি? বলতে পারো, আই অ্যাম অলয়েজ হেয়ার ফর ইউ। (বাঁকা হেসে)

সিয়ারা: বাট আই ডোন্ট নীড ইউ অভ্র। সো প্লিজ, লিভ মি আলোন।

কথাটা বলে সিয়ারা মুখ ঘুরিয়ে নিলে অভ্র আরো একটু কাছে এগিয়ে দাঁড়ায় সিয়ারার। এতে সিয়ারার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে কারণ ও বুঝতে পারছে অভ্র ঠিক কি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

অভ্র: তোমার মনে হয় ব্রো তোমাকে অ্যাকসেপ্ট করবে বলে? যে কি না তোমার খোঁজ জেনেও তোমার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেনি সে তোমাকে কেন অ্যাকসেপ্ট করবে সিয়ারা। তুমি ওর লাইফে এখন নেই, তুমি এখন অতীত ওর জীবনের।

সিয়ারা: ওর অভিমান হয়েছে তাই ও আমার কাছে যায়নি।

অভ্র: (হেসে) সিরিয়াসলি? তুমি বলতে চাইছো তোমার কখনও মনে হয়নি ব্রো কেন তোমার খোঁজ করলো না? কেন একবারও তোমাকে জিজ্ঞেস করলো না তুমি ওকে ছেড়ে কেন গেছো? এটাই বলতে চাইছো?

সিয়ারা কোনো উত্তর দিতে পারে না অভ্রকে। কারণ সত্যি ওর মনে এই প্রশ্নটা বার বার আসে। কেন আধভিক একবারও এলো না ওর কাছে ওর খোঁজ পেয়েও। একবারও ওর কেন মনে হলো না যে, সিয়ারা কেন ওকে ছেড়ে গেলো এই উত্তর ওর জানা দরকার। সিয়ারা এসবই ভাবছিল এমন সময় অভ্র হঠাৎই সিয়ারার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর গালে আঙুল ছুঁয়ে তা ধীরে ধীরে নীচে নামাতে থাকে। সিয়ারা সাথে সাথে পিছিয়ে যায়।

অভ্র: ডোন্ট ওয়েস্ট ইউর টাইম সিয়ারা। ব্রো তোমাকে অ্যাকসেপ্ট না করবে না তো কি হয়েছে? আমি আছি তো? আমাকে একটা চান্স দিয়ে দেখো, লাকি মনে করবে নিজেকে।

অভ্রের কথাটা শুনে সিয়ারা এক গালে হেসে আবারও এগিয়ে এসে নিজের জায়গায় দাঁড়ালো। কারণ সিয়ারা অনুভব করছে ওর শক্তি, সাপোর্ট সিস্টেম ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সিয়ারা নিজের কথা বলতে শুরু করার সাথে সাথে অভ্রের মতো ওর কপাল থেকে নিয়ে আঙুল নীচে নামানো শুরু করে।

সিয়ারা: থ্যাংক ইউ অভ্র আমাকে পুরো বিষয়টা এতো ভালো ভাবে বোঝানোর জন্য। থ্যাংক গড, তুমি আমাকে বোঝালে নাহলে আমি বড্ড বোকামি করে যাচ্ছিলাম। সো এর জন্য আমি তোমাকে গিফ্ট দিতে চাই।

কথাটা শেষ হতেই সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সিয়ারা অভ্রের গালে। অভ্র রেগে সিয়ারার দিকে তাকাতেই পিছনে আধভিককে দেখতে পায়।

অভ্র: ব্রো! তুই দেখলি? এই মেয়েটা আমার গায়ে হাত তুললো? (অতিরিক্ত রেগে)

আধভিক: হোয়াট? সিয়ারা তোর গায়ে হাত তুলেছে? কোথায়? আমি তো দেখিনি?

অভ্র: ওয়েট, ওয়েটার! তুমি দেখেছো তো এই মেয়েটা আমার গায়ে হাত তুলেছে?

ওয়েটার উত্তর দেওয়ার আগে আধভিকের দিকে তাকায়। সাথে সাথে একটা ঢোঁক গিলে বলে,

ওয়েটার: না তো, ম্যাডাম তো আপনার গায়ে হাত তোলেনি। কি বলছেন এসব?

আধভিক: সোহম? তুমি কিছু দেখেছো? দেখলে এক্ষুনি জানাও আমাকে।

সোহম: না স্যার! আমিও তো কিছু দেখিনি।

অভ্র সবটা বুঝে আর কিচ্ছু বলে না। শুধু সিয়ারার দিকে ক্ষিপ্র চাহুনি নিয়ে তাকায় আর চলে যায় সেখান থেকে। সিয়ারা হাসিমুখে আধভিকের দিকে তাকাতেই ওর হাসি নিমিষে গায়েব হয়ে যায়। আধভিক সেই ভয়ানক লুক দিয়েই ওখান থেকে চলে যায় অভ্রের পিছনে। ঠিক সেই সময় সিয়ারার কাছে দেবাংশু আসে।

দেবাংশু: বাহ! বেশ ভালোই সাপোর্ট পাচ্ছিস তো তুই আধভিকের থেকে। যা মনে হয়, ধীরে ধীরে বরফের পাহাড় গলতে শুরু করেছে। বাট ওয়েট আ মিনিট! তুই এটা কি পরেছিস সিয়া?

প্রথমে মজার ছলে কথা বললেও পরমুহুর্তে সিয়ারাকে পুরোপুরি দেখে দেবাংশু রেগে যায়।

সিয়ারা: দেব, বিশ্বাস কর আমি বুঝতে পারিনি এইভাবে আমাকে ঠকানো হবে।

সিয়ারা বোনকে যা যা বলেছিলো তাই তাই দেবাংশুকে বলতেই দেবাংশু বলে উঠলো,

দেবাংশু: লাইক সিরিয়াসলি সিয়া? আমি মেনে নিলাম এই ড্রেসটা তোকে আধভিক পরতে বলেছে বাট তুই এতে কমফর্টেবল ফীল করছিস না। তাও তুই এটা পরে আসবি? না তোর ইচ্ছার কোনো দাম নেই নাকি? ও পরতে বলেছে তাই পরতে হবে? শুধুমাত্র ওর অভিমান ভাঙাতে হবে বলে?

সিয়ারা: শুধুমাত্র আধভিককে আমি ভালোবাসি বলে। ওর ইচ্ছা, অনিচ্ছার দাম আছে আমার কাছে। ও শাড়ি পরা পছন্দ করে খুব তাই যখনই আমি দেখেছি শাড়ি তাও আবার লাল রঙের তখন আর অত কিছু ভাবিনি। একবার নিজে ভালোবেসে দেখ, তখন এগুলো বলতে হবে না আমায়।

দেবাংশুর হঠাৎ করেই দিয়ারার কথা মনে পরে যায় কিন্তু ও মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,

দেবাংশু: দরকার নেই আমার এসব ভালোবাসার মামলায় পরার। না ভালোবাসবো, না কষ্ট পাবো। তুই চল, একটু ড্যান্স করি আমরা।

দেবাংশু সিয়ারাকে টেনে ড্যান্স করতে নিয়ে চলে গেলে সিয়ারা বাঁধা দিতে পারে না। স্লো মিউজিকে ড্যান্স করতে করতে সিয়ারা দেবাংশুকে জিজ্ঞেস করে,

সিয়ারা: দেব তুই এমন কেন বল তো? ভালোবাসার নাম শুনলেই জ্বর চলে আসে তোর। তুই কি সত্যিই কখনও কাওকে নিয়ে সিরিয়াস হবি না? কাওকে ভালো লাগেনি তোর?

সিয়ারার প্রশ্নটা শুনে দেবাংশুর চোখের সামনে দিয়ারার কথা বলা, হাসিমুখ ভেসে উঠলো। দেবাংশু চোখ বন্ধ করে নিয়ে সাথে সাথে আবার খুলে বলে,

দেবাংশু: আমাকে দেখেই মেয়েরা এমন হাবুডুবু খেয়ে যায় যে আমার আর তাঁদেরকে পছন্দই হয় না। তাছাড়া আমি এইসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী না জানিসই তো তুই।

সিয়ারা: (হেসে) আধভিকও কিন্তু প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিল না, আর তারপরে ওর ঠিক কি অবস্থা হয়েছে সেটা তোকে বলতে হবে না নিশ্চয়?

দেবাংশু: ইয়াহ, তারপর কষ্টটাও তো ওকে পেতে হয়েছে তাই না? আমি সেই কষ্টটাই পেতে চাই না সিয়া। টাইম পাস করছি, ফ্লার্ট করছি এটাই ঠিক আছে। রিলেশনশিপের থেকে ফ্লার্টেশনশিপ মাচ বেটার। এটলিস্ট হার্ট ব্রেকের কোনো বিষয় থাকে না।

সিয়ারা: ভালোবাসা বিষয়টা বড্ড অদ্ভুত দেব। কখন কীভাবে কার প্রতি তুই ফীল করতে শুরু করবি, ভালোবাসতে শুরু করবি তুই নিজেই জানবি না। আর একবার যখন সেটা রিয়েলাইজ করবি তখন তোর মনে হবে সেই মানুষটাকে না পাওয়ার কষ্টটা তাঁকে হারিয়ে ফেলার কষ্টর থেকে অনেক অনেক বেশি। তখন তুই পারবি না নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে। বুঝলে চাঁদু?

সিয়ারা দেবাংশুর চুলটা একটু এলোমেলো করে দিলে দেবাংশু হেসে বলে,

দেবাংশু: সে যখন হবে তখন দেখা যাবে। এখন তো মজা করি।

সিয়ারা: সেই, খালি মেয়েগুলোর ফিলিংস নিয়ে খেলা তাই না?

দেবাংশু: অন গড বলছি আমি মেয়েগুলো কে প্রথমেই বলে দি আমি রিলেশনশিপে ইন্টারেস্টেড নই। মেয়েগুলো তারপরেও নিজে যেচে আমার সাথে ফ্লার্ট করে। আ, তুই জানিসই তোর ভাই কতটা হ্যান্ডসাম সো মেয়েরা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। (রোয়াব দেখিয়ে)

সিয়ারা: কিছুই না মেয়েগুলোর চোখ দেখানোর প্রয়োজন আছে।

দেবাংশু: (গাল ফুলিয়ে) তুই এভাবে বলতে পারিস না আমাকে সিয়া।

সিয়ারা দেবাংশুর মুখের অভিব্যক্তি আর কথা শুনে হেসে ওঠে। তারপর নিজের হাসি থামিয়ে ধীরে ধীরে দেবাংশুকে বলে,

সিয়ারা: ভালোবাসা খুব সুন্দর একটা অনুভুতি দেব। এটা এমন একটা অনুভুতি যা সবাই জীবনে একবার না একবার অনুভব করতে চায়। হ্যাঁ এটা ঠিক যে এর কারণে আমাদের কষ্ট পেতে হয়। কিন্তু একটু ভালো করে ভেবে দেখ? আমরা ভালোবাসার কারণে কি কষ্ট পাই? অনেক ক্ষেত্রে আমরা সঠিক মানুষকে ছেড়ে ভুল মানুষকে বেছে নিই। এখানে কি ভালোবাসার দোষ? অনুভূতি কখন কার উপরে আসবে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই দেব। কিন্তু যখন আমরা ভালোবাসি সেটা সঠিক হোক বা বেঠিক মানুষ হোক, অনুভূতিটা কিন্তু খুবই সুন্দর। যখন সুন্দরটা মেনে নিতে পারছি তখন কষ্টটাও তো মেনে নিতে হবে তাই না? আর যেক্ষেত্রে মানুষটা সঠিক হয় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির কারণে হয়তো কষ্ট পেতে হয়। একটা কথা কি জানিস? এই জীবনে সবার কপালে ভালোবাসা পাওয়া থাকে না। যাঁরা পায় তাঁরা অনেক ভাগ্যবান।

সিয়ারার কথাগুলো দেবাংশু মন দিয়ে শুনছিল। এমন সময়ে ওদের মিউজিকটা চেঞ্জ হয়ে হঠাৎই অন্য একটা মিউজিক বেজে উঠলো।

“হার কিসিকো, নাহি মিলতা
ইয়াহা প্যায়ার জিন্দেগি মেইন।
খুশ নসীব মেইন হাম, জিনকো হ্যান মিলি
ইয়ে বাহার জিন্দেগি মেইন।”

গানের লাইনগুলো বেজে উঠতেই হঠাৎই সিয়ারার চোখ আধভিককে খুঁজতে লাগে এবং সে পেয়েও যায়। বার সাইডের দিকে তাকাতেই দেখে আধভিক হেলান দিয়ে একই হাতে হোয়াইন আর সিগারেট নিয়ে বসে আছে। একবার করে হোয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর একবার করে সিগারেটে টান দিচ্ছে। চোখগুলো লাল হয়ে রয়েছে তাঁর। সিয়ারা নিজের অজান্তেই কখন যে দেবাংশুর থেকে সরে এসেছে সেই খেয়াল নেই ওর।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বিঃদ্রঃ আগামী পর্বের মধ্যেই আশা করছি ফ্ল্যাশব্যাক শেষ হয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here