কথা দিলাম পর্ব -৬৪+৬৫

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৬৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সিয়ারা: নোংরা খেলা?

আভাস বাবু: (হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে) তখন আমি বুঝিনি কারণ ও খুব সুন্দর ভাবে বিষয়টা সাজিয়ে আমাকে দেখিয়ে ছিলো যাতে আমি ভুল বুঝি। আমার আর শ্রীর মাঝে দুরত্ব তৈরি করার জন্য ও শ্রীকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল। ওর চরিত্র খারাপ প্রমাণ করেছিলো আমার কাছে। সেই সময় আমি মেনেও নিয়েছিলাম কিন্তু শ্রীকে কিছু বলিনি। মাসের পর মাস বাইরে থাকতাম কাজের জন্য। এটাই ধরে নিয়েছিলাম যে, আমি তো শ্রীকে কখনও সুখে রাখতে পারিনি। ও যদি অন্যকাওর সাথে সুখে থাকে তাহলে আমার আর কি দরকার ওর সুখের মাঝে বাঁধা হওয়ার? বাড়িতে ফিরিনি আর কখনও। মায়ের সাথে কথা বলতাম। মায়ের থেকেই জেনে নিতাম আর সুধাংশু তো ছিলোই।

সিয়ারা: ঠাম্মি কখনও ফিরতে বলেনি আপনাকে?

আভাস বাবু: বলতো কিন্তু আমি কথা ঘুরিয়ে দিতাম বা ফোন রেখে দিতাম। তবে অনেক বছর পর যখন বাড়িতে পা রেখেছিলাম তখন শ্রীকে দেখে সবার প্রথম এটাই মনে হয়েছিল ও অন্যকাওকে বেছে নিয়েছে। তাই না চাইতেও খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছিলাম। একদিন তাই নেশার ঘোরে বলেই ফেলি আধভিক একটা মিসটেক।

সিয়ারা: অতগুলো বছর পর হঠাৎই বা ওনাদের এই বাড়িতে কেন নিয়ে এসেছিলেন? তখনও কি বাধ্য করে..??

আভাস বাবু: হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো তুমি। তখনও বাধ্য করেছিলো আমাকে। আমি ঠিক করেছিলাম সবটা জানিয়ে দেবো নিজেই ওদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে। বেকার মিডিয়া জানা জানি হওয়ার থেকে জানিয়েই দি। শ্রীও তো অন্যকাওকে বেছে নিয়েছে। যদি বিশ্বাস করে তাহলে ভালো আর না করলে আমার কিছু করার থাকতো না। ডিএনএ টেস্ট করতে বলে দিতাম। কিন্তু মিডিয়াকে গিয়ে আগে জানালে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হতো তারপর গিয়ে যা প্রমাণ হওয়ার হতো। আমার ছেলে নিজের বাবার নামে এসব শুনুক লোকের কাছে সেটা চাইনি আমি। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর আমি বলার আর সুযোগই পাইনি।

আভাস বাবু থামলেন। সিয়ারা কিছুটা হলেও জানে এরপর কি ঘটেছে। আভাস বাবু একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে বললেন,

আভাস বাবু: শ্রী শুধু জিজ্ঞেস করেছিলো, রঞ্জিতা আমার স্ত্রী কি না? আমি হ্যাঁ বলতেই ও আর কিছু না শুনে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর শ্রীকে ওভাবে দেখে আমি কোনো কিছু বলা বা শোনার মত অবস্থাতে ছিলাম না। তার উপর মা! সব দিক দিয়ে একা হয়ে গেলাম। দোটানার মধ্যেই আমার পুরো জীবনটা শেষ হয়ে গেলো।

আভাস বাবুর চোখের কোণে জল জমেছে। গলার স্বর কেঁপে যাচ্ছে, কথাগুলো জড়িয়ে আসছে। সিয়ারা ভাবছে, মানুষটাকে কতই না ভুল বুঝেছে আধভিক। মানুষটার কিছু করার ছিলো না। কোনো না কোনো ভাবে সে দোটানায় পড়েছিল, বাধ্য হয়েছিলো। এই মানুষটাও যে কম কষ্ট পায়নি। আধভিক কি জানে? তাঁর বাবা কতটা খুশি ছিলো তাঁর এই পৃথিবীতে আসা নিয়ে? হয়তো না।

আভাস বাবু: শ্রী কে আগলে রাখতে পারিনি বলেই নিজেকে কথা দিয়েছিলাম, শ্রী আর মা কে কথা দিয়েছিলাম আধভিককে আগলে রাখবো। ওর থেকে দূরে রাখতেই আমি আধভিককে বিদেশে পাঠিয়ে দি। না জানি আমার ছেলেটার সাথে কেমন ব্যবহার করে। এরপর ধীরে ধীরে আমি ওর প্রত্যেকটা নোংরা খেলায় সম্পর্কে জানতে পারি। বুঝতে পারি সম্পত্তির জন্যেই এই নোংরা খেলাটা ও খেলেছিল, ভালোবাসেনি আমাকে কখনও। সেদিনই তাড়িয়ে দিয়েছিলাম ও’কে, যেহেতু প্রমাণ ছিলো আমার কাছে তাই কিছু করতে পারিনি।

সিয়ারা: তার মানে এতো কিছু শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে? ছিহ! আমি তো ভাবতেও পারছি না। দুটো মানুষের প্রাণ চলে গেলো এর জন্য।

আভাস বাবু: এই বাড়ি, এই সম্পত্তি মা আধভিকের নামে করে গেছিলো। এটা রঞ্জিতা জানত না, ও জানতো এই সম্পত্তি আমার নামে। কিন্তু একটা সময় পর ও জেনে যায় যে সব সম্পত্তি আধভিকের নামে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার কাছে নিয়ে আসি আধভিককে। কারণ আমি জানতাম না রঞ্জিতা কোথায় আছে, কি করছে। অভ্রকে আমার কাছে রেখেছিলাম, আমি চাইনি ওইটুকু বাচ্চাকে ও নিজের মতো তৈরি করুক। ও কিছু বলতে পারেনি কারণ ও নিজেই সবজায়গায় আমাকে অভ্রর বাবার পরিচয় দিয়েছিলো। তাছাড়া সম্পত্তির লোভও তো ছিলো, ভেবেছিলো নিশ্চই অভ্রর নামে আমি সম্পত্তি লিখবো কিছুটা হলেও তখন সেটা ও’ও পারবে ভোগ করতে।

সিয়ারা: কিন্তু আমার সাথে যখন পরিচয় হয়েছিলো আধভিকের তখন তো অভ্র ছিলো না? পরে এসেছিলো।

আভাস বাবু: হ্যাঁ, ও বাইরে গেছিলো পড়তে। জানি না ও রঞ্জিতার সাথে যুক্ত কি না। ভিকি আমাকে ভুল বুঝছে। আমি রঞ্জিতাকে লুকিয়ে রাখিনি, আমি জানি ও ভাবছে এটাই। তাই তো বার বার চিৎকার করে বললো “আমার ভালোবাসার মানুষ”। (তাচ্ছিল্য হেসে) সত্যি যদি জানত আমার ভালোবাসার মানুষটা ওর মা তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি আসতো না। আমি চাইলেই ও’কে জানাতে পারতাম এসব কিন্তু আমার মুখে ও কখনো ওর মায়ের নাম শুনতে চাইনি।

আভাস বাবু চুপ করে গেলেন। একটু সময় বাদে সিয়ারার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,

আভাস বাবু: ও’কে আগলে রাখিস মা। আমি কখনও আমার জীবনের চাইতেও বেশী প্রিয় ছেলেকে মিসটেক বলতে চাইনি। ও’কে সেদিন নেশার ঘোরে মিস্টেক বলাটাই আমার জীবনের অনেক বড়ো মিসটেক ছিলো। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে আমার মাথার ঠিক ছিলো না।

আভাস বাবু নিজের কথা থামিয়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করেন ঠোঁট দুটো একে অপরের সাথে চেপে রেখে। কিন্তু পারেন না। সিয়ারার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আর বলেন,

আভাস বাবু: অনেক ভালোবাসি আমি ও’কে, অনেক। আমার ছেলে আমার কাছে মিস্টেক না, আমার জীবন। আমার প্রাণের চাইতেও প্রিয় ও আমার কাছে। শ্রীকে হারানোর পর ওই একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন আমার কাছে। আমি চাই না ওর কোনো ক্ষতি হোক, ও কষ্টে থাকুক, ওর জীবন নরক হোক। আমি আগলে রাখতে চেয়েছি ও’কে কিন্তু পারিনি রে! আমি সত্যিই ব্যর্থ সবদিক দিয়ে। সত্যি ব্যর্থ!

সিয়ারা নিজেও চোখের জল ফেলতে থাকে আভাস বাবুর কান্না দেখে। কিন্তু থামায় না আভাস বাবুকে। একটু কাঁদুক উনি, কাঁদলে ওনার মনটা হালকা হবে। এই কথাগুলো আজ অবধি হয়তো কাওকে বলতে পারেননি উনি।

আভাস বাবু: আমি ও’কে জানাতে চাই, আমি যেমন ও’কে ভালোবাসি। ওর মাকেও ভালোবাসি। এখনও আমার মনে ওর মা’ই আছে। আমি কখনওই নিজের ইচ্ছায় ওর মা কে দূরে ঠেলিনি, খারাপ ব্যবহার করিনি। আমার পরিস্থিতিটাই এমন ছিলো যে আমি কিছু করতে পারিনি। শুধুমাত্র ওর জন্যেই বেঁচে থাকা নাহলে বিশ্বাস কর শ্রী কে ওভাবে দেখে আমার বাঁচার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না। আমি কখনও ওর মা কে অবিশ্বাস করিনি। নিজের কর্মফল মনে করে ওর মায়ের সুখের কথা ভেবেই সরে গেছিলাম। ওকেও দূরে রাখতে চাইনি, সময় দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। আমি এমন একটা মানুষ যে কি না কখনও নিজের চাওয়াটা পায়নি শুধু পরিস্থিতির শিকার হয়ে এসেছে। এতদিন যাও ছেলেটা আমাকে বাবা বলত, এখন হয়তো তাও বলবে না।

সিয়ারা: না আংকেল! আপনার ছেলে আপনাকে বাবাও বলবে, কথাও বলবে। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে! আপনি ঘরে গিয়ে রেস্ট নিন। আর চোখের জল ফেলবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবেন। (চোখের জল মুছিয়ে)

সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ মুছে নেয় আর আভাস বাবুকে দাঁড় করায়। তারপর উপরের দিকে আধভিকের ঘরের দিকে তাকায়।

সিয়ারা: আপনি যান, আমি আসছি।

সিয়ারা ধীরে ধীরে উঠে চলে যায়। পায়ের ব্যথাটাও এতক্ষণ বসে থাকায় লাঘব হয়েছে। আধভিকের ঘরে ঢুকতেই দেখে আধভিক বিছানায় একটু ঝুঁকে, দুই হাঁটুর উপর দুই কুনুই রেখে বসে আছে। এইবার আর সিয়ারার মনে কোনো ভয় কাজ করেনি, করছে না। সিয়ারা আধভিকের দিকে এগালেই আধভিক উঠে ওর দিকে পিছন করে দাঁড়ায়। পকেটে হাত গুঁজে গম্ভীর গলায় বলে,

আধভিক: সিয়ারা আমি তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছি। প্লিজ!

আধভিক বুঝতে পারে সিয়ারা এখনও যায়নি। তাই একপ্রকার চিৎকার করেই বলে,

আধভিক: সিয়ারা প্লিজ স্টে আওয়ে ফ্রম মি! কেন কথা শুনছো না তুমি আমার? চলে যাও এখান থেকে, একা ছেড়ে দাও আমাকে!! জাস্ট গো আওয়ে!!

সিয়ারা পিছন ফিরে চলে যায়। আধভিক সেটা দেখে একটা নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু দরজা বন্ধ করার আওয়াজ কানে আসতেই আধভিক সামনে ফেরে আর দেখে সিয়ারা দরজা বন্ধ করছে। আধভিক বিরক্তি সহকারে একবার চোখ বন্ধ করে নিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ে তারপর বলতে পারার আগেই সিয়ারা ওর কাছে এসে ওর শার্টের কলার দুটো শক্ত করে ধরে, পা ডিলকি দিয়ে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। ঘটনাচক্রে আধভিক হতভম্ব হয়ে যায়। সিয়ারা নিজের মতো করে আধভিকের ঠোঁটজোড়া পালা করে শুষে নিতে শুরু করলে আধভিকের আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওর সবটা মনে পরলে ও জোর করেই সরিয়ে আনে সিয়ারার থেকে নিজেকে।

আধভিক: সিয়ারা কি করছো তু…

আধভিক কথা শেষ করার আগেই সিয়ারা ধাক্কা মারে আধভিককে বিছানায় ফেলে দেয়। তারপর বিছানায় হাঁটুর ভরে উঠে আধভিকের দিকে ঝুঁকে ওর শার্টের কলার দুটো আবারও শক্ত করে ধরে আধভিকের চোখে চোখ রাখে।

সিয়ারা: মিস্টার আধভিক রায় চৌধুরী! আমাকে নিজের থেকে দূরে সরাতে চাইছেন আপনি? আমাকে? যাঁকে কি না আপনি প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছেন এমনটা বলেছিলেন? যাঁর জন্য সবরকম পাগলামি করতে রাজি ছিলেন, তাঁকে? আজ আমি আপনার কাছে সিয়ু থেকে সিয়ারা হয়ে গেছি তাই তো? এতো সহজে বলে দিলেন আপনি সম্পর্ক শেষ? এতো সহজে?

আধভিক একটু সময় নিয়ে সিয়ারার হাতের উপর হাত রেখে, চোখে চোখ রাখতেই দেখে ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। আর একটু হলেই জল গড়িয়ে পরবে। আধভিকের বুকের ভিতরটা হুহু করে ওঠে, বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারে না। অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে সিয়ারার দিকে। তারপর কিছু বলার চেষ্টা করতে গেলেই সিয়ারা বলে ওঠে,

সিয়ারা: আপনি আমাকে বলেছিলেন যা করবেন ভেবে চিন্তে করবেন, রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। তাহলে এখন? এখন কি করছেন আপনি? এই কথাটাও রাখলেন না আপনি। অবশ্য সম্পর্ক রাখার কথাই যেখানে রাখছেন না সেখানে এটা তো স্বাভাবিক। আমাকে খালি বলতেন আমি কথা রাখিনি এখন আপনি কি করছেন? এতো সহজে আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে দিচ্ছেন? যতটা সহজে সম্পর্কটা ভেঙে দিলেন ততটা সহজে আমাকে অন্যকাওর হয়ে যেতে মেনে নিতে পারবেন তো? তখন….

আধভিক সিয়ারাকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে নিজের শরীরের নীচে নিয়ে এসে মুহুর্তের মধ্যেই ওর ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে এলো। সিয়ারার একনাগাড়ে কথা বলার কারণে সে কিছুই বলে উঠতে পারছিলো না তাই এর শাস্তি স্বরূপ সে এখন সিয়ারাকে একনাগাড়ে চুমু খেয়েই দেবে বলে ঠিক করেছে। সিয়ারা প্রথমে বাঁধা দিলেও ধীরে ধীরে তা শিথিল হয়ে যায়। দুজনেরই যখন নিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় তখন একে অপরকে একটু রেহাই দিয়ে কিঞ্চিৎ সরে আসে। দুজনই হাঁপাতে থাকা অবস্থায় একে অপরের চোখের দিকে তাকায়। সিয়ারার কিছুক্ষণ আগে বলা শেষ কথাটা আধভিকের মাথায় আসতেই আধভিকের মধ্যে হিংস্রতা জেগে ওঠে। যেটা ওর চোখে দেখতে পায় সিয়ারা কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় পায় না। আধভিক সিয়ারার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে সিয়ারার দুটো হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। নিজের গলায় আধভিকের ঠোঁট ও জিভের স্পর্শ পেতেই সিয়ারা চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ও কুঁকিয়ে ওঠে আর ঠোঁট কামড়ে বলে,

সিয়ারা: আহঃ আভি..!!

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৬৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক সিয়ারার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে সিয়ারার দুটো হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। নিজের গলায় আধভিকের ঠোঁট ও জিভের স্পর্শ পেতেই সিয়ারা চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ও কুঁকিয়ে ওঠে আর ঠোঁট কামড়ে বলে,

সিয়ারা: আহঃ আভি..!!

আধভিক: আমাকে আটকানোর চেষ্টাও করবে না সিয়ু!

আধভিকের এমন শীতল, ভারী, ধীর গলার স্বর শুনে সিয়ারার কেমন জানো নেশা ধরে গেলো। উপভোগ করতে লাগলো আধভিকের ভালোবাসার ছোঁয়া। আধভিকও ধীরে ধীরে বন্যতা কাটিয়ে আদুরে হয়ে উঠলো। সিয়ারার দুই হাত ছেড়ে দিয়ে, ডান হাতের কুনুইয়ে ভর দিয়ে ডান হাত ওর গালে রাখলো। বাম হাত ধীরে ধীরে কোমরে নামিয়ে আনলো আধভিক। ওর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে কপাল, গালেসহ সারা মুখে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো। এরপরেই আবারও ওর চোখ গেলো সিয়ারার গলায়, লাল হয়ে রয়েছে জায়গাগুলো। সেই জায়গাগুলোয় নিজের ঠোঁট ও জিভ বুলাতে লাগলো আধভিক। আধভিকের এমন কাজে সিয়ারা শিউরে উঠে দুহাতে আধভিকের পিঠ খামচে ধরে। নিজেও আধভিকের ঘাড়ে, কানে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে দেয়। আধভিকের হাত সিয়ারার কোমরে ঘোরা ফেরা করতে করতে একটা সময় পর কোমর থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে। একে অপরকে ভালোবাসতে থাকে দুজন সব ভুলে।

কয়েক ঘন্টা পর,

আধভিকের বুকে মাথা রেখে সিয়ারা ঘুমিয়ে আছে। আজকের ধকলের ফলে সে ঘুমিয়ে গেছে। সিয়ারার মাথায় অনবরত হাত বুলাচ্ছে আধভিক, দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির। একটা নিশ্বাস ছেড়ে আধভিক সিয়ারাকে পাশে শুয়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কুনইয়ে ভির দিয়ে কানের উপরে হাত রেখে। অপর হাতটা দিয়ে সিয়ারার চুলগুলো সরিয়ে দেয় আধভিক।

সিয়ারার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায়। চোখ খুলে আধভিককে দেখে নিয়ে আবার চোখ বুজে ফেলে। সেটা দেখে আধভিক হাসে হালকা। তারপর আবার যখন সিয়ারা চোখ খোলে তখন ওর দিকে তাকিয়ে শুধু দুবার পর পর ভ্রূ উঁচু করে অর্থাৎ কি হয়েছে? সিয়ারা না বোধক মাথা নাড়ে হাসিমুখে আর আধভিক নিজের হাতটা সিয়ারার কানের পাশে রেখে ওর দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

আধভিক: রাত হয়ে গেছে, চলো বাড়ি পৌঁছে দেবো তোমায়।

সিয়ারা: কটা বাজে?

আধভিক: দশটা। ফ্রেশ হয়ে নাও একটু, আমি গাড়ির কাছে ওয়েট করছি।

আধভিক উঠে চলে গেলে সিয়ারা উঠে বসে নিজের জামাকাপড় ঠিক করে নেয়। সেটা করতে গিয়েই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরলে মনে মনে হাসে সিয়ারা।

সিয়ারা: ঢং! “আজকে থেকে সম্পর্ক শেষ!” হুহ! বললেই হলো? এদিকে অন্যকাওর হয়ে যাবে শুনেই মশাইয়ের রাগ সপ্তম গগনে চরে গেলো। (নিজের গলায় হাত দিয়ে) রাক্ষস একটা!

সিয়ারা হেসে ফ্রেশ হয়ে নিলো তারপর আয়নায় ভালো ভাবে একবার নিজেকে দেখে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় একবার আভাস বাবুর ঘরের কাছে গিয়ে দরজাটা আলগা থাকায় একটু খুলতেই দেখলো আভাস বাবু ঘুমিয়ে আছেন। সিয়ারা আর ডাকলো না, বেরিয়ে এলো চুপচাপ।

আধভিক: এতো দেরী হলো যে?

সিয়ারা: আংকেলকে বলতে গেছিলাম কিন্তু উনি ঘুমিয়ে পরেছেন।

আধভিক কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলে সিয়ারা মনে মনে ভাবে আজকে কিছু বলবে না। যা কিছু বলার আগামীকাল বলবে। আজকে যতটুকু হয়েছে সেটাই যথেষ্ট। সারা রাস্তা দুজনেই চুপ করে রইলো। দুজনেই দুজনের মতো করে ভাবছে সব কিছু। সিয়ারা একটু স্বস্তিতে আছে কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তের জন্য তবে সত্যিই কি সেটা স্বস্তির? আধভিকের শান্ত ব্যবহার কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস না তো?

সিয়ারার বাড়ি এসে গেলে সিয়ারা নেমে যায়। আধভিকও নেমে এসে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ায় গাড়িতে ঢেলান দিয়ে। সিয়ারা আধভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,

সিয়ারা: আসছি আমি।

সিয়ারা এগিয়ে গেলে হঠাৎ করেই পিছন থেকে হাত টেনে ধরে আধভিক। সিয়ারা হাতের দিকে তাকিয়ে আধভিকের দিকে তাকালে আধভিক নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে সিয়ারাকে। নিজের কাছে টেনে নিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে দু গালে হাত রাখে সিয়ারার। একভাবে তাকিয়ে থাকে সিয়ারার দিকে, জানো সিয়ারাকে শেষবারের মত দেখে নিচ্ছে। সিয়ারাও একভাবে তাকিয়ে আছে আধভিকের দিকে, চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে। ওর নিজের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা মাপার চেষ্টা করছে।

সিয়ারা: কি দেখছো এভাবে?

আধভিক: তোমাকে! মন ভরছে না কেন জানো আজকে দেখেও। তোমাকে কাছে পাওয়াটা খুব জরুরী ছিল আজকে।

সিয়ারা লজ্জা পেয়ে আধভিকের বুকে মুখ গুঁজে দেয়। আধভিক হেসে জড়িয়ে ধরে সিয়ারাকে। ধীরে ধীরে আধভিকের হাসিটা মলিন হয়ে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ওর অন্তর থেকে আর সিয়ারাকে সোজা করে দাঁড় করায়। হাসিমুখে সিয়ারার দিকে দেখে নিয়ে আধভিক ওর কপালে গভীর ভেবে ঠোঁট ছোঁয়ায় তারপর ওর চিবুক দুই আঙুলের মাধ্যমে উপরে তুলে ঠোঁটে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

আধভিক: যাও। রাত হয়ে গেছে।

সিয়ারা “হুঁ” বলে আস্তে আস্তে সরে আসে। তারপর বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে পিছন থেকে হঠাৎ করেই আধভিক ওর নাম ধরে ডেকে ওঠে,

আধভিক: সিয়ু!!

সিয়ারা দাঁড়িয়ে যায় নিজের জায়গায়। কিছুক্ষণ আগে অবধি যখন আধভিক সিয়ারা বলছিলো তখনও সিয়ারার এতটা হয়তো বুকে গিয়ে লাগেনি যতটা এই ডাকে হলো। আধভিকের ডাকটা সিয়ারার অন্তর আত্মাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। সিয়ারা পিছন ফিরে ইশারায় জিজ্ঞেস করতেই আধভিক হাসিমুখে বলে,

আধভিক: এমনি!

সিয়ারা আর কথা বাড়ায় না। বাড়ির ভিতর চলে যায়। বাড়ির ভিতরে গিয়ে দোতলায় লিভিংরুমের থাই গ্লাস দিয়ে দেখে আধভিক ওখানে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিয়ারা আসতেই ওর দিকে তাকিয়ে হাসে আধভিক আর হাত দেখিয়ে টাটা করে। সিয়ারা হেসে হাত দেখাতেই আধভিক একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। সিয়ারার হাসি আরও প্রশস্ত হয়। আধভিক হেসে মাথা নেড়ে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যায়। সিয়ারা পিছন ফিরতেই দেবাংশুর মুখোমুখি হয় যে ওর দিকে দুহাত ভাঁজ করে, ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

সিয়ারা: ক..কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন হ্যাঁ?

দেবাংশু: সেটাই তো আমারও প্রশ্ন। ক..কি হয়েছে?

দেবাংশু সিয়ারার কথার নকল করলে সিয়ারা দেবাংশুর মাথার মধ্যে টোকা মারে।

সিয়ারা: একদম নকল করবি না আমার।

দেবাংশু: বেশ করবো। এইবার বল, কি হয়েছে? সব ঠিক আছে তো? দিয়ু আমাকে জানিয়েছে ভিকি সবটা শুনে নিয়েছে আজকে হসপিটালে। তারপর নাকি রেগে বেরিয়ে গেছিলো।

সিয়ারা: হ্যাঁ। আর বলিস না। জানিসই তো নিজের বন্ধুর রাগ। সেই এক বিশাল কান্ড।

সিয়ারা আর দেবাংশু কথা বলতে বলতে সোফায় গিয়ে বসে। সিয়ারা সব কিছুই দেবাংশুকে খুলে বলতে শুরু করে। অন্যদিকে, আধভিক গাড়ি ড্রাইভ করছে। ওর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমে গান চলছে। তবে গানগুলো আধভিকের মাথায় যেসব চিন্তা ঘুরছে সেসবের স্থান দখল করতে পারছে না ওর মস্তিষ্কে। কিন্তু, কিন্তু হঠাৎই একটা গান আকর্ষণ করে আধভিককে, মনটা সেদিকে ঘুরে যায়। মিল খুঁজে পায় হয়তো গানের লাইনগুলোর সাথে কোথাও না কোথাও নিজের পরিস্থিতির।

“খিলেনগি জাহান বাহারেন সাভি,
মুঝে তু ওয়াহান..পায়েগা
রাহেনগি জাহান হামারি ওয়াফা
মুঝে তু ওয়াহান..পায়েগা
মিলুনগা মেইন ইস তারাহ ওয়াদা রাহা
রাহুনগা সাং মেইন সাদা ওয়াদা রাহা
তুঝে জীনা হেইন মেরে….”

বন্ধ করে দিল আধভিক মিউজিক প্লেয়ার। চোখটা বড্ড জ্বালা করছে ওর। হঠাৎ করেই একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিলো আধভিক কিন্তু গাড়ি থেকে নামলো না। সেই মুহুর্তে হঠাৎই কেউ একটা পিছন থেকে সজোরে ওর গাড়িতে ধাক্কা মারলো আর আধভিকের মাথাটা স্টিয়ারিংয়ে বারি খেলো। মাথাটা তুলে কিছু বলবে বলে মাথাটা ডান দিকে ফিরিয়ে দরজায় হাত দিতেই দেখলো সেদিক থেকে একটা গাড়ি আসছে। যাঁর হেডলাইটের কারণে আধভিক কিছু দেখতেই পাচ্ছে না তাই সঙ্গে সঙ্গে চোখ ঢেকে নিলো কিন্তু গাড়িটা তো তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে। মুহুর্তের মধ্যে বড়ো ট্রাকটা আধভিকের গাড়িতে ধাক্কা মারলো আর গাড়িটা উল্টে গিয়ে তাতে আগুন জ্বলে উঠলো।

এদিকে,

দেবাংশু সিয়ারার থেকে সবটা শুনে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর বললো,

দেবাংশু: আমি তো তোকে বলেছিলাম যে যেটা সামনে ঘটছে সেটা আসল সত্যি না। যাই হোক এখন কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে? ভিকি ঠিক আছে?

সিয়ারা: হ্যাঁ। তবে তোকে আমার একটা কথা বলার ছিলো দেব।

দেবাংশু: বল না, কি বলবি?

সিয়ারা: আজকে সকালেই আমার সুধাংশু আংকেলের সাথে কথা হয়েছে। আংকেল চেয়েছিলো তোর আর আমার বিয়ে দিতে।

দেবাংশু: হম, জানি আমি সেটা। সবার প্রথম আমাকেই বলেছিল পাপা এটা। তোকে যখন দুই বছর আগে পেয়েছিলো তখনই। আমিই বলেছিলাম আগে বন্ধুত্ব করি তারপর দেখা যাবে।

সিয়ারা: দেব, আমার মনে হয় তোর দিয়াকে নিয়ে কথা বলা উচিত আংকেলের সাথে। তোর ভয়টা দিয়া কাটিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আংকেলের? আংকেল তো দিয়াকে মেনে নিতে না’ই পারে তাই না?

দেবাংশু: হম। আমি কথা বলবো চিন্তা করিস না। পাপাকে মানানোর দায়িত্ব আমার। আমার বিয়ে করার হলে সেটা দিয়ুকেই করবো সিয়া। ও ছাড়া অন্য কেউ আমার জীবনে না আসবে আর না আমি আসতে দেবো। মানা না মানা পরের প্রশ্ন।

সিয়ারা: (হেসে) আশা করছি আংকেল মেনে যাবে। কারণ সব থেকে বড় বিষয় তোর খুশি থাকাটা।

হঠাৎই দেবাংশুর ফোনটা বেজে উঠলো। একইসঙ্গে সিয়ারার ফোনটাও বেজে উঠলো। দুজনের ফোন পর পর বেজে ওঠায় দুজনেই একটু অবাক হয়ে গেলো। দেবাংশু দেখলো পুলিশ অফিসার ফোন করেছে আর সিয়ারা দেখলো আভাস বাবু। দুজনেই তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে নিলো। ফোনের অপর পাশ থেকে কথাটা শুনে দুজনেই একে অপরের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে রইলো।

দেবাংশু: ক..কোথায় হয়েছি বললি অ্যাকসিডেন্টটা?

অপরপাশ: …….

দেবাংশু: আসছি আমি।

সিয়ারা: আংকেল, ও তো এক্ষুনি আমার এখান থেকে গেলো। কীভাবে কি…??

সিয়ারা: আ..আমি…

সিয়ারার হাত থেকে ফোনটা পরে গেলে দেবাংশু নিজের ফোন রেখে দিয়ে সিয়ারার ফোনটা তুলে নেয়। তুলে দেখে এখনও অভ্যাস বাবু লাইনে আছেন আর “হ্যালো” বলছেন।

দেবাংশু: আংকেল তুমি চিন্তা করো না একদম। আমি পৌঁছাচ্ছি ওখানে। তুমি একটু সাবধানে আসো, চিন্তা করো না ভিকির কিচ্ছু হয়নি। সব, সব ঠিক হবে।

দেবাংশু ফোন রেখে সিয়ারার দিকে তাকায় ভয়ে ভয়ে যে স্থির হয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে জল গাল গড়িয়ে পরছে। দেবাংশু একটা নিশ্বাস নিয়ে সিয়ারাকে তুলে দাঁড় করালো আর বললো,

দেবাংশু: আমাদেরকে যেতে হবে সিয়া। চল। শক্ত কর নিজেকে।

সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো শুধু। দেবাংশু চট করে দিয়ারাকে ফোন করে সবটা জানিয়ে বললো আভাস বাবুর কাছে যেতে। সাবধানে নিয়ে আসতে।

ঘটনাস্থলে,

সিয়ারা আর দেবাংশু আগে পৌঁছিয়েছে ঘটনাস্থলে কারণ সিয়ারার বাড়ি থেকেই আধভিক ফিরছিলো। সিয়ারা গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো আধভিকের গাড়িটা উল্টে পরে আছে। সাদা গাড়িটা প্রায় কালো হয়ে গেছে। তাহলে কি গাড়িটা বাস্ট করেছে? সিয়ারার পা টলে গেলো কথাটা ভাবতেই। ধীর পায়ে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই আধভিকের সাথে প্রত্যেকটা মুহুর্ত প্রথম থেকে ওর মনে পরার ফলে চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। ওদের দেখা হওয়া, আধভিকের পাগলামি, ওর দূরে যাওয়া, আধভিকের ভালোবাসা দেখে ফিরে আসতে বাধ্য হওয়া তারপর ওদের বিয়ে সেখান থেকে দুই বছরের বিচ্ছেদ। কত অপমান, কথা কাটাকাটির পর ওদের আবার এক হওয়া। সবশেষে কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তটা মনে পরতেই সিয়ারা আধভিকের নাম ধরে চিৎকার করে উঠলো,

সিয়ারা: আভিইই!!

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here