কলঙ্ক পর্ব ১০

#কলঙ্ক
#১০ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



সারাটা রাত আমার ঘুম হলো না।ঘুম হবে কীভাবে? মানুষ সবকিছু সহ্য করতে পারলেও অপমান সহজে সহ্য করতে পারে না!
বালিশের পেটে মুখ ডুবিয়ে সারা রাত ভর কাঁদলাম আমি। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেল।মাথা ব্যথা হলো। সকাল বেলা বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখি আমি কিছুতেই উঠতে পারি না। শরীর দূর্বল লাগে। আমার হঠাৎ করে মনে হচ্ছে আর না।আজকেই এখান থেকে আমার সরে যাওয়া উচিৎ। এখানে আরেকটা দিন থাকলে আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবো। বাঁচবো না!

বাথরুমে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।জামাটা পাল্টে নতুন জামা পড়লাম। তারপর ব্যাগ থেকে কালো বোরখা টা বের করে পড়লাম। হাত পায়ে মুজো পড়লাম। হিজাব দিয়ে মাথা ঢেকে মুখে নেকাব পড়ে নিলাম। কাউকেই আর এই মুখ দেখাবো না।নিরবে নিভৃতে হোস্টেল ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াবো।চলে যাবো এখান থেকে চিরতরে।
কিন্তু তখন মনে কী যে এক খেয়াল এলো!মনে পড়ে গেল বাবার মুখটা।মার কথাগুলো।আমি বলেছি পারবো।পারতেই হবে যে আমায়!
তাছাড়া ট্রেনে বসে ভাইয়াকে কথা দিয়েছি আমি ভাইয়ার জন্য সব করতে পারি। এখন যদি হঠাৎ করে চলে যাই তবে ভাইয়া আর আমায় ভালোবাসবে না।আমার ছায়াটুকুও দেখতে পারবে না।বাবা মাকে কত বুঝিয়ে সুজিয়ে ভাইয়া রাজি করিয়েছে। এখন আমি বাড়িতে চলে গেলে ভাইয়া তো বাবা মার কাছেও ছোট হবে।আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম,যতো কষ্টই হোক আমি করতে রাজি আছি। তবুও ভাইয়াকে বাবা মার কাছে ছোট করবো না!

পরিহিত বোরখাটা আবার খুলে ফেললাম।হাত থেকে ব্যাগ নামিয়ে রেখে দিলাম জায়গামতো। তারপর বিছানায় শুয়ে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। বারবার এলোমেলো চিন্তা এসে যাচ্ছিলো মাথায়।আমি খুব চেষ্টা করছিলাম আমার ভ্রুণটাকে নিয়ে যেন কোন চিন্তা ভাবনা মনে না আসে! কিন্তু তবুও আসছিলো।আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এবং খানিক সময় পরেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

ঘুম ভাঙলো সিগারেটের ধোঁয়া নাকে নিয়ে। চোখ মেলে দেখি রাত হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ ধরে আমি ঘুমিয়েছি। গতরাতে এলিজার যে চারজন বন্ধু এসেছিল ওরা আজকেও এসেছে। এদের সাথে আরো নতুন দুজন। এই মেয়ে দুটোকে দেখতে কেমন ছেলে ছেলে মনে হচ্ছে।পোশাক আশাক ছেলেদের মতো। চুলের স্টাইল বাজে! চোখের ভুরু মাঝখানে টান টান করে দু বার কাঁটা। যেন ওরা পশ্চিমা দেশগুলোর ফুটবল প্লেয়ার!

ওরা সিগারেট খাচ্ছে।স্ল্যাং ভাষায় কথাবার্তা বলছে। একজন আমাকে দেখিয়ে কী একটা নোংরা কথাও বলেছে।বাকী সব আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাটা শোনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
আমি ভাবলাম আজ আর বিছানা থেকে উঠবো না। চুপচাপ ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকবো। তবে আর আমায় নিয়ে বেশি কিছু বলবে না। কিন্তু আমায় যদি একবার শুধু জাগ্রত দেখে তবে আমায় নিয়ে অনেক তামাশা করবে।কারণ ওরা সবাই জানে যে আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারবো না।কারণ প্রতিবাদ করলে ওরা সবকিছু প্রকাশ করে দিবে মানুষের কাছে।এটাই আমার দূর্বলতা।এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওরা এসব করছে!

কিন্তু ঘুমের ভান করেও রেহাই হলো না।ওরা একটা পরামর্শ করলো।চুল ছোট করে কাটা মেয়েদের একজন বললো,’দোস্ত,একটা গেইম খেলি চল!’
ওরা সবাই আগ্রহ ভরা গলায় বললো,’কী গেইম খেলবি?’
এলিজার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বললো,’তোর এই আপুকে একটু সাইজ করবো।তুই না বলেছিলে ও একদিন তোকে চড় মেরেছিলো।এর প্রতিশোধ নিবো।’
এলিজা বললো,’কীভাবে নিবি?’
‘তোরা ওর হাত পায়ে শক্ত করে ধরবি। একজন মুখেও চেপে ধরবি।আর আমি ওর সব জামা কাপড় টেনে টেনে খুলবো।’
ওর মুখ থেকে এমন কথা শুনে ওরা চোখ বড় বড় করে তাকালো। একজন বললো,’ধুর বা*ল!ওরে ন্যুড করলে কী হবে?ও কী ছেলে নাকি রে?নাকি আমরা ছেলে?’
চুল কাটা মেয়েটা হেসে বললো,’ওর কিছু পিক তুলবো। তারপর ওইগুলো মেমোরিতে রেখে ওকে প্রতিদিন জ্বালিয়ে মারবো। ওকে ব্ল্যাক মেইল করবো।দেখবি, তখন যা করতে বলবো স্ক্যান্ডাল ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে বেচারি সব করতে রাজি হবে!হি হি হি!’
ওদের প্রত্যেকেই কেমন করে যেন হেসে উঠলো। তারপর ওরা প্রস্তুত হয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো আমার বিছানার দিকে ‌। ভয়ে আমার গা কাঁপছে।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ওদের হাত থেকে আমার বাঁচার উপায় কী?আমি কী করবো এখন? আমার কী করা উচিৎ আসলে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here